স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-৭
আফসানা মিমি
—ভাইয়া আসব?
—তোর আসতে আবার অনুমতি লাগে নাকি?
এখনো ঘুমাসনি?
—আসলে ঘুম আসছিল না তাই তোমার কাছে আসলাম।
—কিরে আফু তোর কি কোন কারনে মন খারাপ?
—না ভাইয়া তেমন কিছু না। কি করছিলে তুমি?
—এইতো অফিসের কিছু কাজ ছিল তা শেষ করলাম এখন। আয় আমার কাছে এসে বোস।
—ভাইয়া তোমার কোলে একটু মাথা রাখি?
—তোকে এরকম লাগছে কেন সত্যি করে বল তো!
—আমার কিছু হয়নি ভাইয়া।
—আমার কাছে তো তুই কখনোই কথা লুকাস না।
তোর মুখ দেখেই বুঝতে পারি তোর কিছু হয়েছে
নাকি না। এবার সত্যিটা বল আমায় কি হয়েছে?
—তেমন কিছু না ভাইয়া।
—তাহলে কেমন কিছু? ঢাকা থেকে আসার পর থেকে দেখছি তোর মন খারাপ। আসার সময়ও দেখলাম কেমন মনমরা হয়ে আছিস।
—আসলে ভাইয়া……
—আফু সত্যি করে বল তো তুই কি সেখানে কাউকে ভালবেসে ফেলেছিস? যার জন্য তাকে ছেড়ে এসেছিস বলে তোর কষ্ট হচ্ছে!
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
ভাইয়ার কথা শুনে বুকের ভিতরটায় মোচড় দিয়ে উঠল। ভাইয়া কি তবে বুঝে গেল! কিন্তু যাকে ভালবাসলাম সেইই তো বুঝলো না। বুঝার চেষ্টাও করেনি কখনো। শুধু ভুলই বুঝে গেছে, সাথে অপমান পেয়েছি ফ্রীতে। এইই ছিল বুঝি আমার কপালে!
—কিরে কান্না করছিস কেন? দ্যাখ তোর কান্না কিন্তু আমি সহ্য করতে পারি না। আমি বেশ বুঝতে পারছি তোর সাথে কিছু একটা হয়েছে। তুই এখন বলতে না চায়লে থাক বলিস না, পরে বলিস। এখন তোর মাথায় আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি লক্ষ্মী মেয়ের মতো একটু ঘুমা তুই। কান্নাকাটি করবি না একদম।
ভাইয়া ঢাকায় চলে যাওয়ার পর আবারো সেই আগের মতো বোরিং লাইফ লিড করতে লাগলাম। সবকিছুর ওপরই যেন আমার অসহ্যের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে চায় সবকিছু ছেড়েছুড়ে কোথাও চলে যেতে। এত অশান্তি কেন এই জীবনে?
“আপনার কথা আমার এতো কেন মনে পড়ে শ্রাবণ? এই প্রশ্নের উত্তর কি আপনার কাছে আছে? জানেন সারাটাক্ষণ আপনার জন্য আমার এই বুকটা পুড়ে। বুকের ভিতর সারাক্ষণ অসহ্য যন্ত্রণা হতেই থাকে। আচ্ছা আমার রুমের ব্যালকনিতে কি আপনার চোখ আমায় খুঁজে? আমি চলে আসার পর কি আপনি খুঁজেছেন আমায়? একটাবারের জন্যও কি আমার কথা মনে পড়েছে?”
আসার পর এ পর্যন্ত আঙ্কেল-আন্টি, আপু বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে আমার খবরাখবর নিয়েছে। সত্যি কথা বলতে তাদেরকে আমি অনেক মিস করি। যখনই ফোন দেয় তখনই জিজ্ঞেস করে কবে ভার্সিটি খুলবে, কবে ফিরে যাব? কিন্তু সেই মানুষটা একদিনও খোঁজ নেয়নি আমার। অবশ্য নিবেই বা কেন? আমি তার কে? কেউনা!
উনারা খুব করে বলছে তাড়াতাড়ি যেন চলে যাই উনাদের কাছে। এমনকি আঙ্কেল তো বলেছে উনি আমাকে নিতেও আসবে। পরে আব্বু না করেছে। বলেছে ভার্সিটির ক্লাস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত যে কয়টা দিন বাকি আছে তারপরে আব্বুই নিয়ে দিয়ে আসবে নয়তো ভাইয়া দিয়ে আসবে। আসলে সত্যি কথা বলতে আঙ্কেল-আন্টি, আপুকে খুব মিস করছি। তাদের এতো করে বলার পর উনাদের কথা ফেলতে পারবো না। কারন ভাইয়া এখনো ফ্ল্যাট বাসা পায়নি তবে খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবে। উনারা যেহেতু বলেছে ভাইয়া বাসা পাওয়ার আগ পর্যন্ত উনাদের বাসায়ই থাকতে হবে তাহলে থাকতেই হবে।
আমি আঙ্কেল-আন্টির কথা ফেলতে পারবো না বিধায় উনাদের সাথেই থাকতে হবে। নয়তো ঐ বাড়ির মুখীও হতাম না কোনদিন যেখানে শ্রাবণ আছে। যে অপমানগুলো আমাকে করেছে তা কখনো ভুলার মতো নয়। সেদিনের বলা প্রত্যেকটি কথা এখনো আমার কানে বাজে। একেবারে স্পষ্ট হয়ে বাজে। কিভাবে পারলো এই কাজটা করতে সেদিন? আমার মুখ দেখতেও নাকি তার ঘেন্না লাগে! কিন্তু সে এতোগুলো কথা বলার পরও কেন আমি তাকে আমার মন থেকে সরাতে পারছি না? ভালবেসে ফেলেছি তাকে হয়তো
তাই। প্রচন্ড পরিমানে ভালবেসে ফেলেছি। মন থেকে সরানো কি আর মুখের কথা! কিন্তু কবে, কখন যে এতটা ভালবেসে ফেলেছি নিজেও বুঝতে পারিনি। ঐ বাসায় থাকাকালীন এটা মনে হয়নি যখনই শ্রাবণের কাছ থেকে দূরে চলে এসেছি তখন বুঝেছি। ভালবাসা আসলেই যন্ত্রণাময়। আমার ভিতরটা কুরে কুরে খাচ্ছে।
“How did I fall for you this much?
I don’t even know what should I do?
But I hope that someday you will realize.
You know Sravan, I am lost without you”
পরশু থেকে ভার্সিটি ক্লাস শুরু হবে। আজকে ভাইয়া আসবে। কালকে আমাকে নিয়ে ঢাকায় যাবে। আব্বু আম্মুকে ছেড়ে চলে যাব এইজন্য খারাপ লাগছে আর ঢাকায় আঙ্কেল, আন্টি, আপুদের কাছে গেলে ভালো লাগবে সেজন্য মন খারাপ কিছুটা লাঘব হয়েছে। অবশ্য আমি মনে মনে ঠিক করেছি যে শ্রাবণের সামনে একদমই যাব না। না মানে না!
ভাইয়া আমাকে গেট পর্যন্ত নিয়ে আসলো।
—তুই ভিতরে চলে যা আমি শুধুশুধু ভিতরে যাব না আর।
—এতদূর পথ এলে একটু রেস্ট নিয়ে তবে যাও!
বাড়িটার দিকে উদাস ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললো
—নারে ভালো লাগছে না তুই যা।
—ভাইয়া সত্যি করে বলো তো তোমার কি হয়েছে?
—কিছু হয়নি। ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হ তুই। আমি আরেকদিন আসবো।
—প্লিজ আসো না ভাইয়া!
—সানা কি হয়েছে?
পিছনে ফিরে দেখি ফাল্গুনী আপু এসেছে।
—ভাইয়াকে বলছিলাম ভিতরে আসতে কিন্তু ভাইয়া রাজি হচ্ছে না।
—কেন?
—কি জানি! একটু রেস্ট নিয়ে এক কাপ কফি খেয়ে গেলে ভাল হতো না তুমিই বলো আপু!
—আমরা তো আর বাঘ ভাল্লুক নই যে খেয়ে ফেলবো! আর তাছাড়া কফিতে বিষ মিশিয়ে তো আর মেরে ফেলবো না। ভিতরে আসলে কি হয়!
—যা মরে যাওয়ার আগেই মরে গেছি। একেবারে মেরে রেখে চলে গিয়েছিল আমাকে। আর অবশিষ্ট নেই। আসি আমি। ভালো থাকিস।
আমার গালে হাত রেখে বললো ভাইয়া।
এটা বলেই ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেল। আপুর দিকে তাকিয়ে দেখি গম্ভীর হয়ে ভাইয়ার চলে যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখের পলকও ফেলছে না।
—এই আপু তোমার আবার কি হলো?
—না না কিছু না। কেমন আছো সানা?
—এতদিন বেশি ভালো ছিলাম না। এখন তোমাকে
দেখে খুব ভাল লাগছে।
—ভিতরে চলো।
ভিতরে যাচ্ছি আর মনে মনে বলছি আল্লাহ্ শ্রাবণ যেন বাসায় না থাকে! আমি অবশ্য বোরখা পরেই এসেছি। চোখ দুটো ছাড়া পুরো ফেইসটাই হিজাবে আবৃত। তবুও কেমন যেন লাগছে! ডায়নিং রুমে এসে দেখি মিঃ খরগোশ কফি খাচ্ছে।
“যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।”
চেহারাটা কেমন যেন হয়ে গেছে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি গজিয়েছে। এক পলক দেখেই চোখ নামিয়ে নিলাম। আঙ্কেল নাকি বাসায় নেই। আন্টির সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে উপরে চলে আসলাম। আন্টির সাথে যতক্ষণ বসে কথা বলছিলাম ততক্ষনই শ্রাবণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। এটা আমি বেশ বুঝতে পারি। কিন্তু তার এতক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারন
খুঁজে পেলাম না। আচ্ছা সে কি আমার তাকানোর অপেক্ষা করছিল?
এতদূর পথ জার্নি করে এসে টায়ার্ড হয়ে গেছি। তার ওপর ঘেমেও গেছি। চট করে একটা শাওয়ার নিতে হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শাওয়ারটা নিয়েই ফেললাম। ক্লান্তি অনেকটাই দূর হয়েছে। তখনই আপু এসে ডেকে গেল বিকালের নাস্তা করার জন্য। কিন্তু নিচে যেতে মন সায় দিচ্ছে না। কারন সেখানে যদি শ্রাবণ থাকে! তাহলে তো তার মুখোমুখি হয়ে যাব
আমি! আমাকে যেহেতু ঘৃণাই করে তার সামনে যাওয়ার কোন মানেই হয় না। তাই ঠিক করেছি নিচে যাব না। কিন্তু হালকা ক্ষিদেও পেয়েছে। বাসা থেকে আসার সময় বেশিকিছু খেতে পারিনি। এই রুমে একটা ছোট ডিপ ফ্রিজ আছে। আসার সময় ভাইয়া চকোলেট আইসক্রীম, কোণ আইসক্রীম, আমের আচার, তেঁতুলের আচার, চালতার আচার ইত্যাদি কিনে দিয়েছে। এখন আপাতত আইসক্রীম খেয়ে ক্ষিদে মারা
যায়। তাই বাকি জিনিসগুলো ফ্রিজে রেখে একটা চকোলেট আইসক্রীমের বক্স নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম। তার আগে দেখে নিলাম শ্রাবণ আছে কিনা। নাহ্ নেই। যখন আসবে তখন নাহয় নিচে চলে যাব।
আইসক্রীম খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। তখনই খেয়াল করলাম শ্রাবণ তার ঘরটার দিকে যাচ্ছে। তাকে দেখেই আমি তাড়াহুড়ো করে রুমে চলে আসলাম। বক্সটা ফ্রিজে রেখে বসে আছি তখন আপুর আগমন।
—কি ব্যাপার সানা! তুমি নিচে যাওনি কেন নাস্তা করার জন্য?
—আসলে আপু মাথাটা একটু ব্যথা করছিল তাই যেতে পারিনি।
—তাহলে এখন আসো আমার সাথে।
—জ্বী আপু।
আসার পর থেকে শ্রাবণের কাছ থেকে এক প্রকার পালিয়ে বেরাচ্ছি। ভয়ে থাকি না জানি তার মুখোমুখি হয়ে যাই কখন। সকালের ব্রেকফাস্ট শ্রাবণ আসার আগেই করে ভার্সিটি চলে যেতে পারবো। দুপুরে দেরি করে ফিরবো যাতে তার সাথে বসে লাঞ্চ করতে না হয়।
সন্ধ্যায়ও নাহয় না-ই গেলাম নিচে। কিন্তু রাতের ডিনারটা তো সবাই একসাথেই করতে হয়। তখন
তো শ্রাবণের মুখোমুখি হতেই হবে। এসব ভাবছি
তখনই আন্টি এসে ডেকে গেল ডিনারের জন্য।
নামছি আর দোয়া করছি যাতে শ্রাবণ আগে এসে পরে। কারন আমি যেখানেই বসি না কেন সে ঠিক আমার সামনের চেয়ারটায় বসবে। তাই আজ সে যদি আগে এসে খেতে বসে থাকে তাহলে সে যে কাতারে বসেছে সেই কাতারে বসব।
আল্লাহ্ মনে হয় আমার দোয়াটা কবুল করেছে। নেমে দেখি শ্রাবন ডাইনিং টেবিলে মাথা নিচু করে বসে আছে। তার পাশে বসেছে আপু। এখন আমার কাজ হচ্ছে আপুর পাশে বসা। কারন শুধু দুইটা চেয়ারই খালি আছে। শ্রাবণের সামনেরটা আর আপুর পাশেরটা। তাই চট করে গিয়ে আপুর পাশে বসে পড়লাম।
আঙ্কেল আমাকে দেখেই হেসে জিজ্ঞাসা করলেন
—মামনি কেমন আছো?
—জ্বী আঙ্কেল ভালো। আপনি ভালো আছেন?
—এইতো ভালোই আছি। তা তোমার চোখমুখ
এরকম লাগছে কেন?
—কেমন লাগছে আঙ্কেল?
—চোখ কেমন যেন লাল হয়ে আছে। আর মুখ ফোলা ফোলা ভাব। সর্দি লেগেছে কি?
—আসলে আঙ্কেল সন্ধ্যায় শাওয়ার নিয়েছিলাম তো তাই।
—হালকা ঠান্ডা পড়ে গেছে কিন্তু! পরবর্তীতে আর কখনো সন্ধ্যায় গোসল করবে না নয়তো জ্বর এসে যাবে।
—জ্বী আঙ্কেল।
রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তখন আপুর আগমন।
—সানা আসবো?
—হ্যা আপু আসো।
—তুমি নাকি কি বলবে!
—হ্যা আপু বলছিলাম যে কালকে তো ভার্সিটিতে আমার প্রথম অরিয়েন্টেশন ক্লাস। তুমি আমার সাথে যাবে আপু? প্রথম দিন তো তাই আমার কাছে কেমন যেন লাগছে।
—ঠিক আছে যাব। গিয়ে একটু ঘুরেফিরে এলাম।
তা ক্লাস শুরু কয়টায়?
—সাড়ে নয়টায়।
—তাহলে তো একটু তাড়াতাড়িই রওয়ানা দিতে হবে।
—হ্যা আপু। সকালে তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করেই
বের হতে হবে।
—ঠিক আছে এখন তাহলে ঘুমাও। আমিও যাই।
—জ্বী আপু।
সকালে ব্রেকফাস্ট করা শেষে একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম। আপু রেডি হতে গেছে। আঙ্কেল এসে বললো
—কি ব্যাপার মামনি এত সকাল সকাল কোথাও
যাচ্ছো নাকি?
—হ্যা আঙ্কেল। আসলে আজকে আমাদের প্রথম অরিয়েন্টেশন ক্লাস তো সেজন্য ভার্সিটি যেতে হবে।
—তা তুমি কি একাই যাচ্ছো নাকি…….
—না আঙ্কেল আপুর সাথে যাব।
—সানা চলো নয়তো দেরি হয়ে যাবে।
—হ্যা আপু চলো।
—এই এই দাঁড়াও। তোমরা যাবে কিভাবে?
—আব্বু দুজনে রিক্সা করেই চলে যেতে পারব।
তখনই দেখলাম শ্রাবণ বাইরে থেকে রুমে ঢুকছে।
তাকে দেখেই চোখ নামিয়ে ফেললাম। শ্রাবণকে
দেখে আঙ্কেল বললো
—এত কষ্ট করে শুধু শুধু রিক্সা করে যাওয়ার
দরকার নেই। শ্রাবণ এদিকে আয় তো। ওদেরকে
একটু ভার্সিটিতে দিয়ে আয়।
আঙ্কেলের কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে গেল। কোনমতে আঙ্কেলকে বললাম
—না না আঙ্কেল আমরা চলে যেতে পারব। শুধু
শুধু কাউকে কষ্ট করতে হবে না। চলো আপু।
—এত তাড়াহুড়ো করছো কেন?
—অলরেডি নয়টা বেজে গেছে। এখন রওয়ানা
না দিলে দেরি হয়ে যাবে।
—একটু বসো। গাড়িতে করে গেলে বেশিক্ষণ
লাগবে না।
—আঙ্কেল প্লিজ আমার কথাটা রাখুন। হাতে
একদম সময় নেই।
—ঠিক আছে তাহলে যাও। আসার আগে ফোন
দিও। শ্রাবণ গিয়ে নিয়ে আসবে।
—তার কোন দরকার নেই আঙ্কেল। এখন আসি।
আঙ্কেল আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। আরেকটু হলে শ্রাবণের সাথেই পাঠাতো আঙ্কেল। আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত শ্রাবণের চোখের সাথে আমার চোখের দৃষ্টি বিনিময় হয়নি। অবশ্য হবেই বা কি করে? আমি সে সুযোগ দিলে তো! মাঝে মাঝে তার দিকে চোখ পড়ে যাওয়ার পর এক পলক তাকিয়ে থেকে অন্যদিকে চোখ সরিয়ে ফেলি সে তাকানোর আগেই। আমি খুব বুঝতে পারি
সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে থাকে। আমি অবশ্য ওড়না দিয়ে বেশিরভাগ সময়ই
মুখ ঢেকে রাখার চেষ্টা করি সে সামনে থাকলে। আচ্ছা সে নাকি আমার মুখ দেখতে চায় না তাহলে এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কি?
অরিয়েন্টেশন ক্লাশ শেষ হয়েছে প্রায় বারোটায়। সকল স্টুডেন্টসদের গন্ধরাজ আর গোলাপ ফুল দিয়ে বরন করেছে। মাথাটা খুব ধরেছে তাই আপুকে নিয়ে ক্যান্টিনে গেলাম কফি খাওয়ার জন্য। তখনই আপুর মোবাইলে ফোন আসলো।
—হ্যা বল ভাইয়া।
—
—এইতো ক্যান্টিনে আসলাম কফি খাওয়ার জন্য।
—
—তাহলে তুইও ক্যান্টিনে চলে আয়।
আপু বললো শ্রাবণ নাকি এসেছে আমাদেরকে বাসায় নিয়ে যেতে। ওনি আবার এখানে শুধু শুধু আসতে গেলেন কেন কষ্ট করে?
কফি খেয়ে এসে দুজনেই গাড়ির পিছনের সিটে বসতে গেলাম। তা দেখে মিঃ কাটখোট্টা গম্ভীরস্বরে বললো
—আমি কারো ড্রাইভার নই!
—সানা তুমি সামনে চলে যাও।
—সামনে ভালো লাগেনা আপু তুমিই যাও।
আপুকে জোর এক প্রকার জোর করেই সামনে পাঠিয়ে দিলাম।গাড়ি চলতে শুরু করেছে। হঠাৎ করেই ফ্রন্ট মিররে চোখ গেল। দেখলাম শ্রাবণ তাকিয়ে আছে। ঐ চোখজুড়ে এতো মায়া কেন? যতবার তাকাই ততবারই আমার চোখ আঁটকে যায় ঐ নেশাযুক্ত চাহনিতে। চোখ সরিয়ে নিলাম খুব দ্রুত।
চলবে……….