Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"স্বপ্ন হলেও সত্যিস্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১৯ এবং ২০

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১৯ এবং ২০

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১৯ এবং ২০
আফসানা মিমি

চোখ বন্ধাবস্থায়ই দুই ঠোঁটের ফাঁক গলে অস্ফুটস্বরে স্বপ্নে দেখা অবিশ্বাস্য মানুষটার নাম বেরিয়ে আসলো
—“আকাশ!”

বেশ কয়েকটা ক্ষণ এভাবে চোখ বন্ধ করেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনেপ্রাণে প্রার্থনা করেই যাচ্ছিলাম এটা যেন ‘আকাশ’ নামের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটা না হয়। স্বপ্ন যদি এভাবে সত্যি হয়ে সামনে এসে ধরা দেয়, তাহলে কী এমন অনুভূতিই হয়? স্বপ্ন স্বপ্নই থাক, সত্যি হয়ে বাস্তবে যেন তার প্রভাব না ফেলে। ভাগ্য বোধহয় এবার আমার সুপ্রসন্ন হলো না। দুরুদুরু বুকে চোখের পাতা খুলে মানুষটাকে দেখে আমার হুঁশ হারানোর মতো অবস্থা হলো। হৃৎপিণ্ডটাও যেন টুপ করেই গলায় এসে আঁটকে গেছে। এটা কীভাবে সম্ভব! সম্পূর্ন অচেনা একটা মানুষ যাকে স্বপ্নে দেখেছিলাম, চোখের সামনে তাকে দেখে আমার বারংবার দম আঁটকে যাচ্ছে যেন মনে হচ্ছে। কোথায় এসে পড়লাম আমি!? এতগুলো লোকের সামনে অজ্ঞান না হলেই বেঁচে যাই আমি।

মানুষটা কেমন অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রথমে তো আমি ভ্রম মনে করে তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন কেমন যেন অস্বস্তিরা দানা বাঁধছে ধীরে ধীরে। আমার ভিতর বাহির পুরোটা গ্রাস করে নিচ্ছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে! মেয়ে মানুষ কখনো দেখেনি নাকি?

—“এই আফসানা!”

হঠাৎই কেউ আমার নাম ধরে আচমকা ডাক দেওয়াতে সেই জায়গাটাতে যেন বাজ পড়লো। সেদিকে তাকিয়ে দেখি বড় মামী হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আবারও আগের জায়গাতে তাকিয়ে দেখি মানুষটা গায়েব। এদিক সেদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু নাহ্, কোথাও নেই। মামী আমার কাছে এসে বললো
—“এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছো নাকি?”
আমি আনমনা হয়ে প্রত্যুত্তর করলাম
—“হ্যাঁ।
—“কাকে?”
এতক্ষণে আমার হুঁশ হলো। মামীকে কী উত্তর দিব আমি! আমতাআমতা করে বললাম
—“না না, কাউকে না। এমনিই এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলাম। বাড়িটা দেখছিলাম আরকি। সাজানোটা খুব সুন্দর হয়েছে।”
—“হ্যাঁ, আসলাম ভাইয়ের একমাত্র মেয়ের বাগদান বলে কথা!”
মাথায় একটা প্রশ্ন তড়াক করে বারি খেয়ে গেল। মামী এখানে কী করে!? ফাল্গুনী আপুদের কোন আত্মীয় লাগে কী!? না পেরে প্রশ্ন করেই ফেললাম
—“আচ্ছা আঙ্কেল কী আপনাদের কোন আত্মীয় হয়? আপনি এ বাড়িতে যে!”
—“হ্যাঁ, আসলাম ভাই তো আমাদের খালাতো ভাই হয়। জানো না তুমি?”
আমি অবাক হয়ে বললাম
—“না তো।”
—“উনার মা আর আমাদের মা আপন দুই বোন ছিলেন। খালা আসলাম ভাইয়ের জন্মের সময়ই মারা যায়। উনার আর কোন ভাইবোন নেই। আর আমার মায়ের ঘরে আমরা তিন ভাইবোন। এক ভাই আর দুই বোন। আমার বড় ভাইয়ের সন্তানও তিনজন। দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আর ছোট বোন সপরিবারে সিঙ্গাপুর থাকে। ওর এক ছেলে ও এক মেয়ে। আর আসলাম ভাইয়েরও এক ছেলে, এক মেয়ে।”
আমি আস্তে ধীরে বললাম
—“ও আচ্ছা, সেই কথা! আমি তো আর আপনাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। তাই জানার জন্যই প্রশ্ন করলাম। কিন্তু উনাদের তো কখনো দেখিনি নানুবাড়িতে যেতে কিংবা আপনাকেও তো দেখিনি এ বাড়িতে আসতে। কারণ আমি তো বেশ কয়েকদিনই এ বাড়িতে ছিলাম।”
মামী হেসে বললো
—“আরে বোকা মেয়ে, এখন কী আর এত বেড়ানোর সময় আছে? যার যার সংসার নিয়ে সবাইই ব্যস্ত। ফ্যামিলি অকেশন ছাড়া আমরা কেউই একসাথে জড়ো হতে পারি না। একমাত্র কোন অনুষ্ঠান হলেই কেবল আমরা সবাই এক হতে পারি। তখন সবার সাথেই দেখা হয়। আর তুমি তো তোমার নানুবাড়িতে যাওই না। কালেভদ্রে গেলেও দুই এক দিনের বেশি মনে হয় না থেকেছো। তাহলে দেখবে কী করে? আর আমারও এ বাসায় আসা হয়নি অন্তি আর রিফার জন্য। ওদের পিছনে ছুটতে ছুটতেই আমার দিন কাবার।”
আমি আবারও প্রশ্ন করলাম
—“আচ্ছা আম্মু আব্বু কী জানতো যে আসলাম আঙ্কেল আপনার খালাতো ভাই হয়?”
—“হ্যাঁ, জানতো।” তারপর হেসে বললো “তোমার মামার জন্য তো সোহরাব ভাই-ই আমাকে পছন্দ করেছিলেন। উনার বন্ধুর বোন ছিলাম যেহেতু। আসলাম ভাই তো আমার আপন ভাইয়ের মতোই ছিল। আমার মায়ের কাছেই তো উনি মানুষ হয়েছেন। তাই তোমার বাবা যখন বললো যে মেয়ে খুঁজছেন তোমার মামার জন্য, তখন ভাই আমার মায়ের কাছে এসে বলেছিলেন যে উনার বন্ধুকে নাকি উনি কথা দিয়ে ফেলেছেন যে আমাকে উনার সুমন্দীর হাতেই তুলে দিবেন। এরপর কয়েকদিনের মধ্যেই তোমার মামার সাথে আমার আক্বদ হয়ে যায়।”

আসলে আমার এই বড় মামীর সাথে আলাদা একটা সম্পর্ক আছে। আমার মনের যত কথা সব উনাকে বলি একদম নিঃসঙ্কোচে। মানুষটা বড্ড সরল আর মমতাময়ী। খুবই আদর করেন আমাকে। তিন মামীর মাঝে একমাত্র উনার সাথেই আমার সখ্যতা বেশি। তাই অকপটে এমনভাবে নিজের বিয়ের কথাগুলো বলে ফেললো। আমি চোখ কপালে তুলে বললাম
—“বাপরে! এই হিস্টোরি তো আমার অজানা ছিল। যাক এতবছর পর তাহলে জানতে পারলাম! কিন্তু আব্বু আম্মু কখনো বলেনি যে আপনি আঙ্কেলের বোন হন সম্পর্কে।”
—“হয়তো মনে ছিল না বলতে।”
—“হুম হতেও পারে।” হঠাৎই আমার কাজিনদের কথা মনে পড়লো। তাই জানতে চাইলাম “নিবিড় ভাইয়া, অন্তি আর রিফা আসেনি?”
—“অন্তির তো সামনে এইচএসসি পরীক্ষা তাই ও আসেনি। নিবিড় আর রিফা মনে হয় আকাশের সাথে। আচ্ছা তুমি থাকো আমি একটু আপার সাথে দেখা করে আসি।”

কথাগুলো বলেই মামী দ্রুত পায়ে সে জায়গা থেকে প্রস্থান করলো। আর আমার ভিতর বাহির সবটা জুড়ে যেন তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে ফের ‘আকাশ’ নামটা শুনে। কী হচ্ছে এসব আমার সাথে? নিজেই যেন নিজেকে চিনতে পারছি না। ঐ নামটা শুনেই আমার হার্ট এভাবে লাফানো শুরু হয়ে গেছে কেন? স্ট্রেঞ্জ! নিজের এমন অদ্ভুত বিহেভিয়ারের হেতু খুঁজে পাচ্ছি না। উফফ্! মস্তিষ্ক মনে হয় লোড নিতে পারছে না। চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। বেশিকিছু না ভেবে ফাল্গুনী আপুর কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। নিশ্চয়ই আমার অপেক্ষায় বসে আছে।

—“সানা শুনো না! আমার না খুব চিন্তা হচ্ছে। দ্যাখো হাত পা কেমন ঘামছে! উল্টাপাল্টা যদি কিছু হয়ে যায়! ভেবে ভেবে মনে হচ্ছে আমি সেন্সলেস হয়ে যাব।”
আপুকে খুব চিন্তিত দেখালো। অবশ্য চিন্তা করার মতো ব্যাপারই এটা। আমার যে দুশ্চিন্তা হচ্ছে না তেমনটা নয়। তবুও আপুর সামনে নরমাল থাকতে হচ্ছে। আল্লাহ্ যেন রহম করে।
আপুকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম
—“রিলেক্স আপু। এত টেনশন করছো কেন? যা হবে ভালোই হবে। এত বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এতটুকু পর্যন্ত যখন আমার ওপর ভরসা রাখতে পেরেছো, শেষ মুহূর্তে এসে তা হারিয়ে ফেলো না। বললাম তো একদম টেনশন ফ্রি থাকো।”
—“তুমি ঠিক বলছো তো?”
—“হ্যাঁ, আর একটু ধৈর্য ধরো।”

আমাদের কথা বলার মাঝেই ডাক পড়লো নিচে যাওয়ার জন্য। টিস্যু দিয়ে আপুর কপালের ও গলার ঘামগুলো মুছে নিচে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলাম। আপুকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। ইচ্ছে করছিল কানের নিচে চোখ থেকে কাজলের কালি নিয়ে নজর টিকা দিয়ে দিতে। কিন্তু তা করা তো ঠিক না। তাই কারো নজর যেন না লাগে সেজন্য মনে মনে বদ নজরের দোয়া পড়ে ফুঁ দিলাম।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



ড্রয়িংরুমে সবাই একসাথে জড়ো হয়ে বসে আছে। অল্প কয়েকজন আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে খোশগল্পে মত্ত হয়ে আছে। আঙ্কেলদের সকল ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনেরা একত্রে রয়েছে। আপুকে নিয়ে নামার সময় সর্বপ্রথমে আমার চোখ গেল ভাইয়ার ওপর। ভাইয়া মাথানিচু করে বসেছিল। আম্মু যখন তার পাশ থেকে উঠে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল তখন তার চোখ পড়ে আমাদের ওপর। এবং চোখ পড়া মাত্রই সে থমকে যায় আপুকে এই রূপে দেখে। অন্তত ভাইয়ার আঁখিদ্বয় সে কথা-ই বলছে। কেমন একটা অবাক মুগ্ধতা পরিলক্ষিত করলাম ভাইয়ার চোখে মুখে। কিন্তু পরক্ষনেই কেমন একটা বেদনার ছাপ প্রকাশ পেল পুরো মুখজুড়ে। সেটা যে কেন তা ভালো করেই বুঝতে পারছি। ভালবাসার মানুষটা অন্যকারো হয়ে যাবে সেটা ভেবেই ভাইয়ার এই অবস্থা। স্বচ্ছ পানিতে টলমল করা চোখদুটো দেখে আমার কী যে খারাপ লাগছিল বলার ভাষা জানা নেই আমার। মাথাটা নিচু করে জুতোর ফিতা বাঁধার অজুহাতে চোখের পানিটা সবার অগোচরে মুছে নিল। তা দেখে আমার ঠোঁটের কোণে এক দুর্ভেদ্য হাসির রেখা দেখা দিল। ভাইয়া এখনও সেই আগের মতো করেই পাগলের মতো ভালবাসে আপুকে। অথচ দেখো, মুখ ফুটে কিছুই বলছে না। এত ইগো ছেলেদের মধ্যে আসে কোথা থেকে!?

আপুর কাছ থেকে সরে এসে ভাইয়ার কাছে আসলাম। ভাইয়া ফ্যাকাসে মুখ করে বসে আছে। সেইসাথে কিছুটা শক্তও দেখালো মুখের হাবভাব। ভাইয়ার পাশে বসে বললাম
—“আর কত স্বাভাবিক থাকার মিথ্যে অভিনয় করে যাবে ভাইয়া? দেখলে তো তোমার ইগোর জন্য আজ আপু কারোর জীবনের অংশ হতে চলেছে। তার সাথেই জুড়ে যাবে আপুর নামটা। এতদিন আপু পাগলের মতো তোমার পিছনে ছুটে চলেছিল। আজ বোধহয় তার অবসান হতে যাচ্ছে। এখন আর তোমাকে কেউ বিরক্ত করবে না। ভালবাসার দাবি নিয়ে কেউ সামনে আসবে না তোমার।”

ভাইয়া আমার কথাগুলো শুনে কোন রিয়েক্ট না করে উঠে দাঁড়ালো। কয়েক কদম এগোনোর পর পিছন থেকে আব্বুর ডাক শুনে থেমে যেতে বাধ্য হলো।
—“কই যাচ্ছিস? এখন অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে। এদিকে আয়।”

আব্বু, আম্মু, আঙ্কেল, আন্টি, মামী, রিফা সহ আরো বেশ কয়েকজন আপুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে সেখানে যেতে ইতস্ততবোধ করছে। তাই আমি ভাইয়ার হাত টেনে ধরে নিয়ে গিয়ে সেখানে দাঁড়ালাম। দাঁড়ানোর পর আম্মু আর আব্বু ভাইয়ার পাশে এসে দাঁড়ালেন। আর আপুকে ঘিরে আছেন আঙ্কেল, আন্টি, মামী, রিফা সহ আরো কয়েকজন। যাদেরকে আমি চিনিই না। সেই মুহূর্তে মামীর পাশে যে মানুষটা এসে দাঁড়ালো তাকে দেখে আমার হাত পা বরফের ন্যায় শীতল হয়ে আসলো। বরফ যেমন হালকা ধোঁয়া উড়ে উড়ে একসময় তা তরল পানিতে রূপান্তরিত হয়! তেমনি আমার শরীরও শীতল ভাবটা কেটে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে আসছে। যেন এক্ষুণি আমি ধপাস করে পড়ে যাব। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও মনে হচ্ছে যেন নেই। চোখ বন্ধ করে মাথাটা এদিক সেদিক কয়েকবার ঝাঁকি দিয়ে এবার ভাইয়ার দিকে তাকালাম।

ইতিমধ্যে ভাইয়া আর ফাল্গুনী আপুর এনগেজমেন্টের এনাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে। আমার ভাই বেচারার মুখটা হয়েছে দেখার মতো। এত বড় শক মনে হয় জীবনে এই প্রথমবার খেয়েছে। ভাইয়া নড়বার আগেই আব্বু আস্তে করে ভাইয়াকে বললো
—“এমন কোন কাজ কোরো না, যাতে করে আমার সম্মান আজ ধূলিসাৎ হয়ে মাটির সাথে মিশে যায়। যা করবে ভেবেচিন্তে করবে। মনে রেখো, উল্টাপাল্টা কিছু করলে এর ফল কিন্তু খুব একটা সুখকর হবে না। এটাই আমার শেষ কথা।”

আব্বুর রাগের সাথে আমরা সবাইই খুব ভালো করেই পরিচিত। তাই ভাইয়াও আর টুঁশব্দটিও না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। আপুর আঙুলে পরানোর জন্য ভাইয়ার হাতে যখন রিংটা দেওয়া হলো, তখন ভাইয়া আপুর দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিল। আপু ভাইয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল। ভাইয়ার এমন করে চোখ ফিরিয়ে নেওয়াটা আপুর কাছে যেন কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। আর কোন কথা না বাড়িয়ে ভাইয়া আপুর অনামিকায় রিংটা খুব সযত্নে পরিয়ে দিল। ভাইয়ার হাত ধরার স্টাইলটা আমার খুব ভালো লেগেছে। আপুও কাঁপা কাঁপা হাতে ভাইয়ার ডান হাতে রিং পরিয়ে দিল। ভাইয়া অপলক নেত্রে আপুর দিকে বেশ কয়েকটা ক্ষণ তাকিয়ে ছিল। পরক্ষনে দুজনেই চোখ ফিরিয়ে নিল।

আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এক জোড়া কৌতূহলী চোখ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যার জন্য চরম অস্বস্তিবোধ করছি। মেয়েদের ষষ্ট ইন্দ্রীয় এটা জানান দেয় শুনেছি। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে খুঁজার চেষ্টা করছি কোন মানুষটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার ধারনাই সঠিক হলো। মামীর পাশের সেই অচেনা ছেলেটা হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। স্বপ্নে দেখা একটা মানুষের সাথে এতটা মিল কী করে সম্ভব এই মানুষটার? সেই একই চুল, একই চেহারার ধরণ, একই নাক, একই ঠোঁট, একই হাসি, সেই একই চোখ….. না না চোখগুলো এক না। সেই ঘন, লম্বা লম্বা পাপড়ির নীল চোখের সাথে এই চোখের কোন মিলই নেই। বেমিল শুধুমাত্র এই একটা জায়গাতেই। তবে আরেকটা জিনিস চেক করার আছে। সেটা হলো কণ্ঠস্বর। আচ্ছা, আমি এত ইম্পোর্টেন্স দিচ্ছি কেন এই ছেলেটাকে। নো নো, আমার ভাবনায় লাগাম টানা উচিৎ।
‘কেমন বেহায়ার মতো হা করে তাকিয়ে আছে দেখো!’ এটা মনে মনে বলার সাথে সাথেই আমার মন আমাকে কষে একটা ধমক দিল ‘তুই কী কম বেহায়া নাকি? তুইও তো ঐ ছেলেটার চেয়ে দুই ডিগ্রী উপরে। দুইবারই এমন রাক্ষুসে দৃষ্টি মেলে ছেলেটাকে গিলছিলি তুই। তবে ছেলেটা তাকালে দোষ কোথায়? নিজের বেলায় ষোলআনা, তাই না রে?’

আমার বিরুদ্ধে মন এভাবে অন্যের পক্ষ নিয়ে কথা বলায় ওর সাথে নীরব যুদ্ধ লাগিয়ে দিলাম। কেমন অবিচার দেখেছো! আমার মন আমার কথা না বলে অন্যের পক্ষ নেয়। আমাদের নীরব যুদ্ধের অবসান ঘটলো আচমকা মামীর ডাকে। মনকে ইচ্ছেমতো শাসালাম এটা বলে যে ‘তোকে আমি পরে দেখে নেব। তুই আসলেই একটা নিমকহারাম। আমার সাথে থেকে অন্যের পক্ষপাতিত্ব করিস।’ আমার শাসানিতে কাজ হলো। মন আমাকে ভ্যাংচি কেটে নীরব হয়ে গেল।

মামীর কাছে যাওয়ার পর মামী বললেন
—” নিবিড়ের সাথে তো তোমার দেখা হয়নি, তাই না? দেখলাম ও খুঁজছে তোমাকে। এসো দেখা করে যাও। আমরা আবার বাড়ির পথে রওয়ানা দেব। অন্তিটা বাসায় একা।”
—“হ্যাঁ, যাচ্ছি। চলেন।”

গোলবৈঠকের নিকট গিয়ে উপস্থিত হওয়ার পর দেখি তিন পরিবারের সবাই সেখানে। একমাত্র আমিই দলছাড়া ছিলাম এতক্ষণ। এবার বোধহয় পরিপূর্ণ হলো। ঐ ছেলেটাও দেখি উপস্থিত এখানে। এবার তাকিয়ে সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। মনকে এবার কোন সুযোগই দেব না আমাকে বেহায়া বলার। সাহস কত বড়! বলে কিনা আমি বেহায়া! আমার ভাবনার মাঝেই আম্মু বলে উঠলো
—“কিরে এতক্ষণ তুই কই ছিলি? আমরা সবাই এখানে, আর তুই কই গিয়ে উধাও হয়ে গেছিলি?”
মিনমিন স্বরে জবাব দিলাম “আমি তো এখানেই আশেপাশেই ছিলাম।”

—“আপুটা কেমন আছে?”
নিবিড় ভাইয়া জিজ্ঞাসা করলো আমাকে। আমিও হালকা হেসে বললাম
—“আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি কেমন আছেন ভাইয়া?”
—“ভালোই আছি সকলের দোয়ায়। আমাদের কী ভুলে গেলে নাকি? ফুপীর সাথে মাঝে মাঝে যেতে পারো না?”
—“আসলে ভাইয়া পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি তো তাই খুব একটা যাওয়া হয় না কোথাও।”
আমার কথা শেষ হতে না হতেই মামী বললেন
—“তোমাকে তো আমার ভাইয়ের ছেলের সাথে পরিচয়ই করাইনি।” ছেলেটাকে দেখিয়ে “এ হচ্ছে আকাশ। পেশায় কলেজের প্রফেসর। আর আকাশ, এ হচ্ছে আমার একমাত্র ননদের একমাত্র মেয়ে আফসানা।”
এর মাঝেই নিবিড় ভাইয়া ধীরস্বরে দুষ্টুমি করে বললো
—“মিমি চকলেট।”

ভাইয়ার দিকে আমি রাগী চোখে তাকানোর আগেই ছেলেটা আমাকে বললো
—“হাই মিমি চকলেট।”
যদিও উনার ‘মিমি চকলেট’ বলা নামটা কেউ শুনতে পায়নি। আমি উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম বিধায় বুঝতে পেরেছি। আমিও দাঁতে দাঁত চেপে ভদ্রতাসূচক হেসে হালকা স্বরে বললাম
—“হ্যালো।”

আমার সবকিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কণ্ঠস্বরও একদম সেম। মানে এটাও কী সম্ভব! কেন যেন এ সবকিছু আমার কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে। ঘুম ভাঙলেই যেন সব আগের মতো হয়ে যাবে তেমনটা ভেবে যাচ্ছি। বেশিকিছু আর ভাবতে পারছি না। মনে হচ্ছে মাথার তার সব ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আল্লাহর লীলাখেলা বোঝা বড়ই দায়। আমার সাথে এসব কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। একটা জিনিস খুব ভালো করে যেটা বুঝতে পারছি সেটা হলো এসব কিছু আমি মেনে নিতে পারছি না। জাস্ট অসহ্য লাগছে আজকের এই দিনটা। মনে হচ্ছে সব ছেড়েছুড়ে হারিয়ে যাই একলা কোথাও। তবে যদি একটু শান্তির দেখা মেলে। শ্রাবণ তো আমাকে ভুলে সুখেই আছে। তেমন করে আমিও যদি ভুলে যেতে পারতাম সবকিছু! কেন এভাবে জড়ো হাওয়ার মতো আচমকা আমার জীবনে এসে আমাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে আবার সেভাবেই চলে গেল?! কান্না পাচ্ছে আমার, খুব জোরে কান্না পাচ্ছে। একটু চিৎকার করে কাঁদলে বোধহয় মনটা হালকা হতো।

চলবে…….

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ