Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"স্বপ্ন হলেও সত্যিস্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১০

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১০

স্বপ্ন হলেও সত্যি পর্বঃ-১০
আফসানা মিমি

সেদিনের পর থেকে আমি একেবারে অন্যরকম হয়ে গেলাম। মানুষটার সামনে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। সে বাসায় থাকাকালীন নিচে যাওয়া হয় না একেবারেই। সবার খাওয়া শেষ হলে আমি খেতে যাই। ডিনারের সময় সবাই একসাথে হয়। কিন্তু আমি রুমে এনে খাই। শুধুমাত্র শ্রাবণের মুখোমুখি হবো বলে। ব্যালকনিতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারন সেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায় শ্রাবণ এদিকেই তাকিয়ে থাকে। যার জন্য রুমের পর্দাগুলোও সবসময় লাগিয়ে রাখি। এককথায় যাকে বলে ঘরবন্দী। শুধুমাত্র এই মানুষটার জন্য আজ আমি নিজেকে এতটা গুটিয়ে নিয়েছি। মাঝে মাঝে মন বলে ‘তার কাছে ছুটে যা। বুকে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়। বুকটা ভাসিয়ে দে তোর আঁখিজলে। তার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে চোখের কাজল লেপ্টে ফেল। অভিমানের যে পাহাড় বুকে বরফের মত জমাট বেঁধে আছে তা ভেঙে গুড়িয়ে ফেল।’ কিন্তু অবাধ্য মনটা তো আর জানেনা তার প্রতি আমার অভিমানের পাহাড় জমা নেই। জমা আছে সাত সমুদ্র তের নদীর চেয়েও অনেক বেশী পরিমাণ বোবা অভিমান। যা এত সহজে ভাঙার মতো নয়। তবে ক্ষণে ক্ষণে মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দিয়ে যায় ‘আচ্ছা মানুষটা কি আমাকে একটু হলেও ভালবাসে না? এক চিমটি পরিমাণও না?’

আমি তো পণ করেই রেখেছিলাম যে আর যতদিনই এ বাড়িতে আছি ততদিন কোনমতেই শ্রাবণের মুখ দর্শন করবো না। তার প্রতি সীমাহীন ভালবাসাটা মনের এক কোণেই চাপা পড়ে থাক। সব প্রণয়ের পরিণয় হয় না। আমারও আফসোস থাকবে না। তবে মাঝে মাঝে মানুষটার কথা মনে হলে বুকের বামপাশটায় একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করবো। যে ব্যথা বারবার আমাকে মনে করিয়ে দিবে মানুষটাকে আমি কতটা ভালবেসে ফেলেছিলাম।

যাইহোক আল্লাহ্ বোধহয় অন্যকিছু করার প্লান করে রেখেছে। আমার পণ করায় কিই বা এসে যায়? গত পরশুদিন বিকেলবেলা নিজেকে খুব একা লাগছিল। কারন বাসায় কেউ ছিল না। আঙ্কেল হাঁটতে বেড়িয়েছে। আর আন্টি এবং আপু শপিংয়ে গেছে। ভাবলাম কফি খাই। তাই কফি বানাতে নিচে কিচেনরুমে আসলাম। জানি মানুষটা আজ বাসায় নেই। আন্টির কাছে শুনেছি অফিসের কাজে কই যেন সাইট দেখতে গেছে। এজন্যই নিচে এসেছি নয়তো আসতাম না। কফির মগে কফিমেট মেশাচ্ছি সেই মুহূর্তে পিছন থেকে খুব পরিচিত একটা কণ্ঠ শুনে বুকের ভিতর হঠাৎ ধক করে উঠলো। মুহূর্তের মাঝেই চমকে উঠলাম। যাকে বলে বিষম খাওয়ার মতো। হাত পা কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেছে। হাত ছলকে গরম কফি এসে পড়ল বাম হাতের উল্টোপিঠে। চকিতে পিছন ফিরে তাকালাম। উফফ! যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যে হয়। আসার আর সময় পেল না? এখনই আসতে হলো?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


মানুষটার চুলগুলো উষ্কখুষ্ক, মুখখানা মলিন যেন সারা রাজ্যের মেঘ জমে আছে ঐ বদনখানিতে। ঠোঁটজোড়া শুষ্ক যেন বহুবছর যাবৎ খরা হচ্ছে ঐ কমলার কোয়ার মতো ঠোঁট দুটিতে। চোখের কোলে লম্বা লম্বা পাপড়ির ছায়া পড়ার দরুন বিষণ্ণতা জানান দিচ্ছে চঞ্চল আঁখিপল্লব, চোখদুটির কালো মনি বাদে তার চারপাশ লাল টকটকে তবে স্থির। গলার টাইটা ঢিলে হয়ে একপাশে ঝুলে আছে। ইন করা শার্টটা কোঁচকে আছে খানিক জায়গায়। বুকের উপরের দুই তিনটা বোতাম খোলা বিধায় কয়েকটা লোম উঁকিঝুকি মারছে খুব সন্তর্পণে, যেন এদের মালিক দেখে ফেললেই কড়া শাস্তি ভোগ করতে হবে তাদের। সামনে দাঁড়ানো মানুষটা খুব ঠান্ডা ও গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো

‘মানুষ এতো পাষাণী হতে পারে এ মেয়েটিকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। পৃথিবীতে এখনও কিছু নির্দয়া নিষ্ঠুর মানুষ বিদ্যমান। এই মুহূর্তে আমার সামনে দাঁড়ানো এ ঘন কালো ঢেউ খেলানো কেশের অধিকারী মেয়েটা। যার চুলের ওপর জীবনে প্রথমবারের মতো আমার চোখ আঁটকে গিয়েছিল। যার চিকন গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ওষ্ঠ্যদুটোর লোভে পড়ে গিয়েছিলাম প্রথম যখন তার দর্শন পাই। আর চোখটা তখনই আঁটকে গেছিল ঠোঁটের ডানপাশের নিচের লাল তিলকটার ওপর। যার কাজল কালো চোখে প্রথম দর্শনেই সেই যে ডুবে গিয়েছিলাম। এখনো সাঁতরে
তীরে ওঠতে পারিনি। এদের মালকিন তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ।’

আমার দিকে ডান হাতের তর্জুনি তুলে সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বললো। যা শুনে আমার বুকের ভেতর দ্বিতীয়বারের মত ধক করে উঠল এবং শিরদাঁড়া বেয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল বেশ কয়েকটা মুহূর্ত পর্যন্ত। আমার তখন কি হয়ে গিয়েছিল জানি না। দৌড়ে গিয়ে তার বুকে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। ঝাপিয়ে পড়তে দেরি হয়েছিল বাট ভেতরের বোবা অভিমানগুলো চোখের কোণা বেয়ে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়তে দেরি হয়নি। আমার এমন হঠাৎ আক্রমনে সে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। তার যেন বাকশক্তি হারিয়ে গিয়েছিল কয়েকটা মুহূর্তের জন্য। পুরোপুরি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে ধাতস্থ হয়ে আমাকে ধরার আগ মুহূর্তে তড়াক করে আমার হুঁশ হলো এ আমি কি করছি? এতো বোকা কেন আমি? যে মানুষটা আমাকে সহ্যই করতে পারে না, আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলতেও মুখে বাজে না। তার মুখের মিথ্যে বুলির জালে ফেঁসে তাকে কিনা জড়িয়ে ধরেছি? এতো অধঃপতন কিভাবে হয়ে গেল আমার?

অঘটন ঘটার বোধহয় আরো বাকি ছিল। তাই তো আবারও শ্রাবণের মুখোমুখি হতে হবে এখন। আন্টি বলছে শ্রাবণকে ডেকে দিতে। এখন আন্টিকে বলতেও পারছি না যে ওর সামনে আমি যেতে পারবো না। সেদিন ওর কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে আর এক মুহূর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে থেকে সোজা রুমে চলে এসেছিলাম দৌড়ে। কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু আমি সেই সুযোগ দেইনি। তার আগেই প্রস্থান করেছি তার চোখের সামনে থেকে। পিছন ফিরে তাকালে হয়তো দেখতে পেতাম একজোড়া চোখ গভীর দৃষ্টি দিয়ে হাজারো প্রশ্নভরা চোখে আকুল হয়ে তাকিয়ে আছে আমার যাওয়ার পানে। যা দেখে আমি হয়তো আবার দূর্বলও হয়ে যেতে পারতাম। এরপর আর তার মুখী হইনি। না সে আমাকে দেখেছে, না আমি তাকে দেখেছি।

এই প্রথম আমি তার ডেরায় আসলাম। বাহির থেকে যতটা না সুন্দর তার চেয়েও বেশি সুন্দর এর ভেতরের পরিবেশটা। ব্যালকনিতে সাদা অর্কিড, পার্পল রোজ, হোয়াইট রোজ, সূর্যমুখী ইত্যাদি আরো ভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ দিয়ে ভর্তি। রুমের ভিতরের পশ্চিমপাশ পুরোটা কাচের দেয়াল। তার সাথে সাদা পর্দা ঝুলানো। দেয়াল ভেদ করে ঐ পাশের একটা দিঘী চোখে পড়ছে। দিঘীর গোলাপি শাপলাগুলো ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে। দিঘীর পাড়টা রঙবেরঙ এর নুড়ি দিয়ে বাঁধানো। বিকেলে সূর্যের সোনালী কিরণ দিঘীর পানিতে পড়ে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়েছে। যে সৌন্দর্যের ভাষা আমার জানা নেই। আমি বাকরুদ্ধ। তবে যার জন্য আসা সে কোথায়? রুমের কোথাও তার ছিটেফোঁটাও নেই। গেল কই মানুষটা? তিনপাশের দেয়ালে বিভিন্ন আর্টিষ্টদের পেইন্টিং ঝুলানো। তার মধ্যে ভাস্কো দা গামা, পাবলো পিকাসো, জয়নুল আবেদীন প্রমুখের পেইন্টিংও রয়েছে। তবে রুমে কোন খাট নেই। ফ্লোরে বিছানা পাতা। আশ্চর্য! এমন নজরকাড়া একটা রুমে খাট নেই! তবে হয়তো খাট নেই বলেই এত সুন্দর দেখাচ্ছে। আচ্ছা খাট থাকলে কেমন হতো! যাক সেসব আমার ভাবার দরকার নেই বাবা। উম্ম… দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে ছাদের দিকে তাকালাম। ওয়াও! এত সুন্দর ছাদ জীবনে প্রথম দেখেছি। ছাদটা যেন পুরো আকাশের মতো। আকাশ যেমন সাদা আর নীলের কম্বিনেশন। তেমনি এই রুমের ছাদটাও সেভাবেই রং করা হয়েছে। মাঝে মাঝে আবার মেঘের কুণ্ডলী এঁকেছে। যেই এই রুমটা ডেকোরেট করেছে সত্যিই
তার প্রশংসা করতে হয়!

খয়েরী কালারের সোফাসেটের সামনের সেন্টার টেবিলটায় একটা লাইট ব্লু কালারের একটা ডায়েরি রাখা। আরে বাহ্! এ যে দেখি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! আমার আবার অন্যের ডায়েরির ওপর লোভটা একটু বেশি পরিমাণে কাজ করে। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে নিলাম আদৌ মানুষটার কোন অস্তিত্ব আছে কিনা। কিন্তু না, মনে হচ্ছে মানুষটার ছায়াও নেই আশেপাশে। তাই টুপ করে ডায়েরিটা নিয়ে ঐ ডেরা থেকে বেরিয়ে সোজা আমার রুমে চলে আসলাম চুপটি করে। আসার আগে আন্টিকে ইনফর্ম করে আসলাম যে শ্রাবণ ঐখানে নেই।

রুমের দরজা লাগিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলাম ডায়েরিটা নিয়ে। এটা যতক্ষণ না পড়বো ততক্ষণ আমার ভিতরের বিচ্ছুগুলো কিলবিল করবে।
—-‘আজকে একটি দৃশ্য দেখে আমার চোখ যেন ধন্য হয়ে গেল। কয়েক গজ দূরত্বে দুতালার ব্যালকনিতে আমার চোখ আঁটকে গেল। হঠাৎ করেই ঐদিকে চোখ চলে গিয়েছিল। অন্যদিকে তাকাতে গিয়ে আবারো সেখানেই চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো। সেদিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছিলাম। ফলস্বরূপ জিহ্বা পুড়িয়ে ফেলেছি। একটি অচেনা মেয়ে ঐ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে একটু ঝুকে চুল মুছছিল। মেয়েটার মুখে মেক-আপ এর আলগা প্রলেপ নেই। সবেমাত্র গোসল করে আসায় যেন ভোরে সদ্য ফোটা গোলাপের পাপড়ির মতো স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। মেয়েটার ন্যাচারাল লুক সত্যিই নজরকাড়া। আর তাছাড়া মেয়েটির ঘন কালো চুলগুলো আসলেই আকর্ষণীয়। কিন্তু এ মেয়েটি কে? আমাদের বাসায়ই বা কি করছে?’—-

—-‘মিমি নামের মেয়েটি যেন একটি মিমি চকলেট। চেহারাটা বাচ্চাদের মত কিউট। তবে খুবই শান্তশিষ্ট। প্রথম দেখাতেই তা বুঝে গেছি। এবং মেয়েটা খুবই কম কথা বলে। সারাক্ষণ গম্ভীর হয়ে থাকে আর কি যেন ভাবে। আচ্ছা একটুকুন পিচ্চি মেয়েটা কি ভাবে এতো? মাঝে মাঝে দেখি রাতের অন্ধকারে ব্যালকনিতে বসে থাকে। তবে একটা কথা স্বীকার করতেই হয়, মেয়েটাকে দেখলে কেন জানি আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। এটার কারন খুঁজে পাই না আমি।’—-

—-‘আচ্ছা মিমি নামের কেশবতী কি আমার মনে একটু একটু করে জায়গা দখল করে নিচ্ছে? নয়তো উঠতে-বসতে, খেতে, ঘুমাতে সবসময় ওর মুখাবয়বটা হঠাৎ করেই আমার চোখের পর্দায় ভেসে উঠে কেন।’—-

—-‘অবচেতন মনটা শুধু মিমিকে দেখতে চায় সবসময়। নিজের মনের সাথে নিজেই পেরে উঠছি না। দিন দিন যেন লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে মনটা। আমার কথা শুনতেই চায় না। সারাক্ষণ শুধু ওর মুখপানে চেয়ে থাকতে মন চায়। এরকমটা তো আমার সাথে হওয়ার কথা নয়। তবুও এরকম হচ্ছে। তবে ওর মুখের দিকে তাকালে ভিতরে খুব শান্তি অনুভব করি। করবো নাই বা কেন? ওরকম পবিত্র নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকালে যেকেউ শান্তি অনুভব করবে।’—-

—-‘আজকে বাসায় আব্বু আম্মু নেই। ফাল্গুনীকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে গেছে। এইই সুযোগ মিমির সাথে কথা বলার। মেয়েটা কেন যেন সবসময় আমার থেকে গুটিয়ে থাকে। আমার চোখের দিকে একদমই তাকায় না। তাকালে দেখতে পেত……! যাইহোক ইচ্ছে হলো আজ ওকে কোচিং সেন্টারে নিয়ে যাব। এই সুযোগে ওর সাথে একটু কথাও বলা যাবে। এটা আমার ইচ্ছা না। আমার অবাধ্য মনের স্পৃহা। আজকাল যাই করি নিজের মন যা বলে তাইই করি। নিজের মনের বিপরীতে কি যাওয়া যায়? তাই ওকে মিথ্যে বলে ওকে নিয়ে কোচিং সেন্টারে পৌঁছিয়ে দিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কোচিং শেষে ওকে একটা ছেলের সাথে হাসাহাসি করতে দেখে আমার কপালে কয়েকটা সূক্ষ্ম ভাঁজ পড়লো। এ আবার কোথা থেকে উদয় হলো? এ যে দেখি পুরান পাগলে ভাত পায় না, আবার নতুন পাগলের আমদানী। এ দৃশ্য দেখে রাগে আমার পিত্তি জ্বলে উঠলো। তবে পরক্ষনেই মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দিয়ে গেল। প্রশ্নটা মাথায় আসতেই যেন মাথার রগ ফুলে ফেঁপে ওঠার উপক্রম। ‘ছেলেটা কি মিমির বয়ফ্রেন্ড?’ কিন্তু হঠাৎ এটা কেন মনে হলো!’—-

—-‘অনেকক্ষণ যাবৎ শুয়েছিলাম কিন্তু ঘুম আসছিল না। এপাশ ওপাশ করছিলাম। মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে ‘ঐ ছেলেটা কে ছিল?’ হঠাৎ কারো এক মিষ্টি কণ্ঠের গানের আওয়াজ কানে প্রবেশ করলো। শুনামাত্র মুহূর্তেই মনটা ভাল হয়ে গেল। এত রাতে গান গাইছে কে?রুম থেকে বের হয়ে দেখি সামনের দিক থেকে আওয়াজ আসছে। সামনে তো মিমির ব্যালকনি। ব্যালকনিতে তাকিয়ে দেখলাম একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে। অন্ধকারের জন্য চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। তবে আমি সিউর ও মিমি। মেয়েটার এই গুণটা আমার জানা ছিল না। মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। দেখি মিমিকে রাগলে কেমন লাগে! যেমন ভাবা তেমন কাজ। দিলাম রাগিয়ে। ওকে রাগিয়ে বেশ মজা পেলাম। তবে ওর রাগী রাগী মুখখানা দেখার সৌভাগ্য হলো না।’—-

—-‘এতো পাজি মেয়ে আমি আমার লাইফে দেখিনি। আল্লাহ্! এই মেয়ে কি জুতো পরে আল্লাহ্ই ভালো জানেন। এমন গুঁতো কেউ কাউকে দেয়! মনে হয় মায়ার পানির ছিটেফোঁটাও আল্লাহ্ তার মাঝে দেননি। পা টা কিছুটা গর্ত হয়ে গেছে। তবে এর শোধ তো আমি নিবই দেখে নিও মেয়ে।’—-

—-‘আজ কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝলাম না। ওকে ভয় দেখাতে গিয়ে এ আমি কি করে ফেললাম! মাথাটা এখনো হ্যাং হয়ে আছে। মনের ছটফটানিটা কমছে না বরং ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আচ্ছা আমার এমন কর্মকান্ডের জন্য যদি ও আমার সাথে কথা না বলে! আমার তখন কি হয়ে গিয়েছিল আমি নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। আমি যেন তখন নিজের মাঝে ছিলাম না। অন্য এক দুনিয়ায় বিচরন করছিলাম যেন। যে দুনিয়াটা ভিন্ন ভিন্ন রঙে রাঙানো। সব দোষ ঐ মেয়েটার। ও আমার সামনে এলে বা আমি ওর সামনে গেলে আমি নিজের মাঝে থাকি না কেন? ও নিশ্চয়ই আমাকে কোন জাদুটোনা করেছে। নয়তো এমন হবার কথা নয়। কই আগে তো এমন হতো না। এমন হুটহাট মনটা আমার সাথে লুকোচুরি খেলতো না, এমন অবাধ্যও হতো না। ওকে দেখার পর থেকেই যেন আমি নিজের মাঝে নেই। উফফ… কিচ্ছু ভাল্লাগছে না।’—-

—-‘মাত্রই গোসল করে আসায় ওকে সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলের কলির মতোই আদুরে দেখাচ্ছে। মন চাচ্ছে গিয়ে একটু করে ছুঁয়ে দিই ওকে। এমন আনমনা হয়ে আকাশপানে তাকিয়ে কি দেখছে মেয়েটা? মুখটা কেমন রক্তশূন্য হয়ে ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর শরীর থেকে কেউ সব রক্ত শোষে নিয়েছে। কেমন যেন নিষ্প্রতিভ লাগছে এই মুহূর্তে। ওর গায়ে হাত তোলার কারনেই কি এমন দেখাচ্ছে? ও কেন বুঝতে চায় না যে ওকে যখন অন্যকোন ছেলের সাথে দেখি, তখন আমার মাথায় রক্ত চড়ে যায়! রাগে দিক্বিদিকশূণ্য হয়ে কি করতে মন চায় নিজেও বুঝে উঠতে পারি না! উফফ্….! ওর গায়ে হাত তোলাটা একদম ঠিক হয়নি। যার জন্য এখন ভিতরটা পুড়ছে আমারই। আমি বুঝে পাই না ঐ ছেলেটার সাথে ওর এত ঘেঁষাঘেঁষি কিসের? সে কি বুঝে না যে আমি ওকে অন্য কোন ছেলের সাথে দেখলে সহ্য করতে পারি না! কেন বুঝে না এই বোকা মেয়েটা?! কবে বুঝজ্ঞান দিবে আল্লাহ্ ওকে! আমার চোখে চোখ পড়ার পর যখন সে দৌড়ে রুমে চলে গেল, বুকটা আমার তখন হাহাকার করে ওঠল এক নাম না জানা কষ্টে।’—-

—-‘আজকে বাসায় ফেরার পথে দেখলাম একটা গাড়ি গেইট দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। একটু খেয়াল করে দেখলাম একটা ছেলের পাশে মিমি মলিন মুখে বাইরে দৃষ্টি রেখে বসে আছে। মুখটা দেখে মনে হচ্ছিল রাজ্যের অন্ধকার সব নেমে এসেছে ওখানে। প্রথমে বুঝতে পারিনি ও গাড়ি করে কোথায় যাচ্ছে! পরে দেখি সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে চলে যাওয়া গাড়িটার দিকে তাকিয়ে। আম্মুদের কাছে এসে দাঁড়ানোর পর আম্মু বলছে মিমি নাকি চলে গেছে। কথাটি কানে প্রবেশ করার পর হৃদয়ে একটা ধাক্কা লাগলো যেন দ্রুত গতিতে এসে। ও বলেছিল ওর মুখ নাকি আর আমাকে দেখাবে না। সত্যি সত্যিই আর দেখতে পাইনি ওর মুখটা যাওয়ার আগে। ও ওর কথা রেখেছে। ওকে বলেছিলাম ওর মুখ দেখলেও আমার ঘেন্না লাগে। আসলেই কি ঘেন্না লাগে ওর মুখের দিকে তাকালে!? ওর ওই মায়াবী মুখের দিকে তাকালে মনে ঘৃণা আসার কোন উপায় নেই। চুমুয় চুমুয় ভরিয়ে দিতে মনে চায় ওর সারা মুখে। তবে কেন এমন একটা কথা বলে ওকে কষ্ট দিলাম!? কি সুখ পাচ্ছি আমি এখন ওকে কষ্ট দিয়ে? আগে তো তবুও ওর মুখটা হলেও দেখতে পারতাম। এখন কিভাবে থাকবো ওকে না দেখে? আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়ে সে চলে গেল! আমাকে একা নিঃসঙ্গ করে দিয়ে চলে গেল সে। তুমিহীনা কি করে থাকবো আমি!’—-

চলবে…………

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ