স্বপ্ন?পর্ব_২৮/২৯/৩০

0
839

স্বপ্ন?পর্ব_২৮/২৯/৩০
#অনামিকা_সিকদার_মুন
পর্ব_২৮
.
.
—তাহলে ধরে নাও তোমার সাজেক যাওয়া কনর্ফম ।
ফোনের অপর পাশ থেকে নিশি নিঝুমের হাসির আওয়াজ শুনতে পেলো । ওর ঠোঁটেও ফুটে উঠলো মিষ্টি একটা হাসি । মনটা যেন ওর আনন্দে ভরে গেছে । মনে মনে একবার বললো,
—স্বপ্ন আমার হবে সত্যি তোমারি জন্য ।
.
—ভাইয়া কি বলেছেন এগুলো? না আমি পারবো না । মাকে যদি আমি এই কথা বলি তাহলে আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে ঝাড়ু দিয়ে পিটাবে । আপনি কি চান আপনার এই নিঃপাপ শালিকাটা মার খাক??
—ভাইয়ার জন্য এইটুকু করতে পারবা না?? আমাকে যদি তুমি বলতে আমি যেকোনো মূল্যে তোমার কথা রাখতাম । মেনে নাও আপু প্লিজ ।
গত তিনদিন ধরে নিঝুম ভেবেছে যে অনুকে কিভাবে মানাতে পাবরে সাজেক যাওয়ার জন্য । অনেক ভেবে চিন্তে পরে কল দেয় অনুকে। তারপর থেকে গত একঘন্টা ধরে নিঝুম অনুকে সাজেক যাওয়ার জন্য মানাতে চেষ্টা করছে । কিন্তু অনু কিছুতেই মানতে চাইছে না । কারণ ও ভালো করেই জানে মাকে এই কথা বললে মা কিছুতেই রাজি হবে না । তাছাড়া মাকে একা রেখে কিভাবে যাবে?? তাও আবার একসপ্তাহের জন্য । এতদিন মাকে ছেড়ে থাকবে!!! আবার নিশি ইচ্ছেটাকেও তুচ্ছ করতে পারছে না । ও জানে যে নিশির ছোট্টবেলা থেকে স্বপ্ন সাজেকে মেঘের দেশে গিয়ে মেঘের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলার । হ্যালিপ্যাডে দাড়িয়ে সূর্যোদয় দেখার । ও চায় না নিশির কোনো স্বপ্ন অপূর্ণ থাকুক । এমনিতে হয়তো কখনোই ও নিশির এই স্বপ্নটাকে সত্যি করতে পারতো না । পারলেও অনেক কষ্ট হতো । আর এখন সুযোগ আসলেও মাকে একা ফেলে যেতে মন সায় দিচ্ছে না । তাছাড়া ওরা যদি নিঝুমের সাথে যায় তাহলে যদি কোনো সমস্যায় পড়ে তবে নিঝুম সবসময় পাশে থাকবে নিজের আপনজনের মতোই । এই কয়েক মাসে অনু নিঝুমকে যতটুকু চিনেছে তাতে বুঝতে পেরেছে যে মানুষ হিসেবে নিঝুম খুবই ভালো । সহজে যে কাউকে আপন করে নিতে পারে । অনেক ভেবেচিন্তে অনু নিঝুমকে বললো,
—আচ্ছা রাজি হতে পারি তবে দুইটা শর্ত আছে আমার ।
অনু রাজি হওয়াতে নিঝুমের মুখে খুশি ঝিলিক দিয়ে উঠলো । আনন্দিত কন্ঠে বললো,
—বলো বলো যেকোনো শর্তে রাজি আমি ।
নিঝুমের কথায় হেসে ফেললো অনু । বললো,
—ভেবে বলছেন তো ভাইয়া?
—আরে তুমি বলেই দেখো না ।
—আচ্ছা বলছি বলছি ।
—হুম।
—প্রথম শর্ত ট্যুরটা সাতদিনে না চারদিনের করতে হবে । আর দ্বিতীয় শর্ত আমাকে এত্তোগুলা চকোলেট দিতে হবে ।
নিঝুম হাসতে হাসতে উত্তর দিল,
—শুধু মাত্র এইটাই?? আচ্ছা আমি রাজি ।
আরো কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দিল নিঝুম । তারপর নিশির ছবি বের করে তাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল । বিশাল এক হাসি দিয়ে বললো,
—স্বপ্নকন্যা তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করবো আমি ।
নিশিকে ফোন দিয়ে আর জানালো না যে অনু যেতে রাজি হয়েছে । ভেবেছে কালকে একবারে সামনে গিয়ে বলে সারপ্রাইজ দিবে । হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল । নিঝুম ফোন রেখে উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই মাহি হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লো । পিছে নীলও এলো । নিঝুম দরজা ছেড়ে এসে খাটে হেলান দিয়ে বসলো । নিঝুম বসতেই মাহি প্রশ্ন করলো,
—দাভাই ভাবীরা রাজি হয়েছে?
নিঝুম হাসি হাসি মুখে জবাব দিল,
—হ্যাঁ হয়েছে । তবে ট্যুরটা চারদিনের করতে বলেছে ।
—ইয়াহুওও । তাও তো রাজি হয়েছে ।
মাহি খুশিতে লাফিয়ে উঠলো । হঠাৎ মাহির চোখ পড়ল নীলের দিকে । নীল কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে । সেটা দেখে মাহি ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—কি হয়েছে? ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো ভাই?
—তুই একটু আগে কি বললি?
—ইয়াহু বলেছি । কেনো?
—তার আগে কি বলেছিস?
—কি বলেছি?
মাহি বুঝতে পারছে বলে নিঝুম বললো,
—আরে মাহু তুই বললি না “ভাবীরা” সেটার কথাই বলছে । তাই না নীইইইল??
শেষের দিকে নিঝুম একটু টেনে টেনে বললো । মাহি চোখ সরু করে নীলের দিকে তাকিয়ে বললো,
—ভাইয়ের হবু জিএফ আর আর জিএফ কে কি বলবো? ভাবীই তো তাইনা?
নীল অবাক হয়ে বললো,
—জিএফ? ভাইয়ার সাথে নিশি আপুর রিলেশন হয়ে গেছে?
নীলের একথা শুনে মাহি যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো । বললো,
—ভাই একে তো তুই আমার থেকে কথা লুকিয়েছিস । তার উপর এখন আবার নাটক করছিস? পেয়েছিস কি তুই?
নীল যেন মাহির কথা কিচ্ছু বুঝতে পারছে না এমন একটা ভান করে বললো,
—মাহু আবল তাবল এসব কি বলছিস?
—আমি আবল তাবল বলছি তাই না? আজ তিনদিন হয়ে গেলো । অনু ভাবীর সাথে তোর রিলেশনের । তুই আমাকে বলিস নি লুকিয়েছিস । আচ্ছা মানলাম । তাই বলে এখনো ভাই? এমন একটা ভান করছিস যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না ।
এবার নীল চুপ হয়ে গেলো । বুঝে গেলো যে নিঝুম মাহিকে সব বলে দিয়েছে । চুপচাপ স্বীকার না করলে ওর খবর আছে । তাই মাহির কাছে এগিয়ে বসে ওর হাত ধরতে ধরতে বললো,
—বাবু শুন না….
মাহি হাত ঝাড়া দিয়ে বললো,
—সর । একদম কথা বলবি না তুই আমার সাথে । দাভাই যদি আমাকে না বলতো আমি তো জানতেই পারতাম না ।
নিঝুমও মাহির সাথে তাল মিলিয়ে মজা করে বললো,
—এটা তুই একদম ঠিক করিস নি নীল ।
নীল রাগী চোখে তাকালো নিঝুমের দিকে । আর নিঝুম তখন মুখ টিপে হাসতে ব্যস্ত । নিঝুম, নীল থেকে মাহি বয়সে অনেক ছোট হলেও পিঠাপিঠি ভাইবোন হলে যেমন করে ঠিক তেমনি ওদের মধ্যকার সম্পর্ক । তিনজন একসাথে আড্ডা দিবে, ঝগড়া করবে, ঘুরতে যাবে । বলতে গেলে তিনজনই যেন তিনজনের প্রাণ ।
নীল অনেক কষ্টে মাহিকে মানায় ওর রাগ ভাঙ্গায় । তারপর তিনজন মিলে প্ল্যানিং করতে থাকে সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার । এর মাঝেও ওদের খুনশুটি লেগেই থাকে । ওরা ঠিক করে যে আগামী পরশুদিন ওরা রওনা দিবে সাজেক ভ্যালির উদ্দেশ্যে । নীল রাগ করে যে ওকে কেনো আগে জানানো হয় নি ট্যুরে যাওয়ার কথা । তখন মাহি বলে যে ওর কাছ থেকে কথা লুকানোর শাস্তি এটা । নীল আর কিছু বলতে পারলো না । যখন শুনলো যে অনুও যাবে ওদের সাথে তখন ভেতরে ভেতরে খুশিতে আত্নহারা নীল । কিন্তু বাহিরে একদম স্বাভাবিক থাকলো । মনে মনে ভাবতে লাগলো পরশুদিন যখন অনু দেখবে যে নীলও যাচ্ছে তখন অনু কেমন সারপ্রাইজড হবে । নিশি অনু তো এখনো জানেই না যে নিঝুম নীল আপন ভাই । কথায় কথায় নিঝুম মাহিকে বললো,
—জানিস মাহু নিশি অনু এখনো জানে না যে নীল আমার ভাই ।
এটা শুনে মাহি অবাক হয়ে বললো,
—কিহহহ? সিরিয়াসলি দাভাই?
নিঝুম নীল দু’জনেই কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো । বললো,
—হুম ।
অনেকরাত পর্যন্ত তিন ভাইবোন মিলে আড্ডা দিল । তারপর যে যার যার রুমে চলে গেল ।
.
প্রতিদিনের চেয়ে আজ একটু আগে ঘুম থেকে উঠলো অনু । তারপর ফ্রেশ হয়ে নামায পড়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরে গেলো । সুন্দর করে এককাপ চা বানিয়ে নিয়ে মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো । মনে মনে কথা গুছিয়ে নিল যে মাকে কিভাবে কি বলবে । অনু জানে এত সকালেও ওর মা ঠিকই উঠেছে । নিশ্চয়ই নামায পড়ে বারান্দায় রাখা রকিং চেয়ারটায় বসে দুলতে দুলতে বাবার ছবি বুকে জড়িয়ে আছে । আর মনে মনে হাজারো না বলা কথা বলছে । এ নতুন কিছু না । আগে অনু ঠিক এই সময়েই এসে মায়ের পাশে বসতো । মায়ের সাথে কথা বলতো । কিন্তু হঠাৎ করেই কেনো যেনো মায়ের সাথে ওর দূরত্বটা বেড়ে যায় । ও ব্যস্ত থাকে ভার্সিটি পড়াশুনা নিয়ে । আর ওর মা ব্যস্ত থাকে নিজের কাজ নিয়ে । একটা অদৃশ্য দেয়াল গড়ে উঠেছে ওদের মাঝে । নিশি মাকে প্রচন্ড ভালোবাসলেও সেটা প্রকাশ করে না । চুপচাপ আড়ালে থেকে ভালোবেসে যায় । তাই মায়ের সাথে ওর সখ্যতা একটু কমই যেন । নিশি সবসময় বিভিন্ন কিছুর বাহানা দিয়ে নিজেকে ব্যস্ততার আড়ালে রাখে । বাবা মারা যাওয়ার শোক থেকে এমনটা হয়ে গেছে ও । কিন্তু তার আগে নিশি ওর মা পাশে বসে ঘুম পাড়িয়ে না দিয়ে গেলে ঘুমাতে পর্যন্ত পারতো না । সেই নিশিই আজ এতটা বদলে গেছে । এখন ও শুধুমাত্র অনুর কাছে নিজেকে মেলে ধরতে পারে । আর অনু হয়েছে উল্টোটা । ও কারো কাছেই নিজেকে মেলে ধরতে পারে না । নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারলেই যেন ওর শান্তি ।ওর চাওয়া ওর আপনজনদের ভালো রাখা । ওদের মুখের হাসি । তাতেই ও নিজের সুখ খুঁজে নেয় ।
দরজার কাছে এসে দরজা নক করতে গিয়ে দেখে দরজা খোলা । আগে অনু সকালে ওর মায়ের রুমে আসতো বলে ওর মা দরজা খোলা রাখত । এখনো রাখে এটা অনু জানতো না । একটা চাপা কষ্ট অনুভব হলো অনুর । দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলে নিল । দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে রুমে চোখ বুলালো । দেখলো রুম ফাঁকা । তার মানে ওর ধারণাই ঠিক । অনু গুটি গুটি পায়ে বারান্দায় এগিয়ে গেলো । দেখলো ঠিকই ওর মা বাবার ছবির ফ্রেমটা বুকে জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে রকিং চেয়ারে দুলছে । অনু নিঃশব্দে পাশে গিয়ে দাড়ালো ।
—দাড়িয়ে আছিস কেনো? বস ।
চোখ না খুলেই ওর মা বললেন । অনু হালকা হেসে বসলো । মনে মনে বললো,
—“তুমি কিভাবে টের পেয়ে যাও মা আমি আসলে!!”
কিন্তু মুখে আর একথা বলা হয়ে উঠলো না । চায়ের কাপটা মা’র দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
—চা টা নাও মা ।
চোখ খুলে চায়ের কাপটা হাতে নিলেন মা । কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপচাপ । প্রথম নিরবতা অনুর মা-ই ভাঙ্গলেন । চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বললেন,
—এখন আর আসিস না কেনো আমার কাছে?
অনু কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না । কি বলবে? কেনো আসে না ও? অনুর মা আবার বললেন,
—আচ্ছা বাদ দে । বলতে হবে না । একটু আমাকেও সময় দিস আগের মতো তাহলেই হবে ।
অনু মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো । হুট করে ওর কি হলো কে জানে । ও নিচে বসে মায়ের কোলে মাথা রাখলো । মাও পরম আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন । এটা সেটা বলতে লাগলেন অনুর কাছে । প্রায় অনেকক্ষণ পরে অনু ওর মা-কে বললো,
—মা একটা কথা বলার ছিল ।
—বল না কি বলবি । জিজ্ঞেস করে বলতে হবে নাকি!
অনু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
—মা আপি আযান আমি তিনজন মিলে সাজেক যেতে চাচ্ছি । তুমি যদি অনুমতি দিতে তাহলে যাবো । আর যদি…..
এতটুকু বলে অনু চুপ হয়ে গেলো । অনুর কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলো ওর মা । তারপর বললেন,
—কবে যাবি? আর কতদিনের জন্য?
—পরশুদিন যেতে চাইছি । চারদিনের জন্য যাবো ।
অনুর মা হাসি মুখে বললেন,
—আচ্ছা যাস । কিন্তু সাবধানে থাকবি । আর ঠিক চারদিন পরেই বাসায় ফিরে আসতে হবে কিন্তু ।
অনু খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরলো । তারপর বললো,
—আচ্ছা মা ।
মেয়ের খুশি দেখে অনুর মায়ের মনটাও ভরে উঠলো । তিনি জানে অনু নিশির জন্যই এত সাহস করে সাজেক যাওয়ার কথা বলতে এসেছে । এখন উনি যদি মানা করেন তাহলে অনু মুখের উপর আর রা করবে না । কিন্তু মনে মনে ঠিকই কষ্ট পাবে । তাই আর তিনি না করতে পারেন নি । মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে এসে অনু নিঝুমকে ম্যাসেজ দিল,
— “Vaia ma raji hoye giyeche….appi k kichu boilen na….appir Surprise hobe eta….”
.
নিঝুম রাতেই অনুকে ম্যাসেজ দিয়ে পরশুদিনের কথা বলে দিয়েছিল । অনুর ম্যাসেজ পেয়ে নিঝুম আর নিশিকে কিছুই বলে নি ।
দেখতে দেখতে কেটে যায় মাঝের একটি দিন । পরেরদিন সন্ধ্যাবেলা নিশি টিউশনিতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি তখন কোথাকে অনু এসে বললো,
—আপি রেডি হয়ে নে ।
হুট করে এভাবে এসে রেডি হতে বলায় অবাক হয়ে যায় নিলি । বলে,
—রেডি হব মানে? কোথায় যাব রেডি হয়ে? আমার মুমুদের (নিশির স্টুডেন্ট) যেতে হবে । এখন অন্য কোথাও যেতে পারবো না ।
একথা বলে নিশি চলে যেতে নিলে অনু পেছন থেকে নিশিকে টেনে ধরে । রাগী গলায় বলে,
—আপি তোকে আমার সাথে যেতে বলেছি মানে আমার সাথেই যাবি । ব্যস । মুমুকে কল দিয়ে মানা করে দে ।
তারপর অনু আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি থেকে একটা বেবি পিংক কালারের লং ফ্রক আর হোয়াইটের মধ্যে বেবি পিংক সেডের একটা স্কার্ফ বের করে নিশির হাতে দিয়ে বলে,
—আধঘন্টা টাইম দিলাম । এর মধ্যে রেডি হো আপি ।
একথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অনু । পিছে নিশি হা বোকার মতো করে তাকিয়ে থাকে………..
.
.
.
চলবে?
(ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)
.
#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_২৯
.
.
.
—আধঘন্টা টাইম দিলাম । এর মধ্যে রেডি হো আপি ।
একথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অনু । পিছে নিশি হা বোকার মতো করে তাকিয়ে থাকে ।
অনু ঘর থেকে বেড়িয়ে দরজার আড়াল থেকে তাকায় । দেখে নিশি হা করে তাকিয়ে আছে । অনু মুখ টিপে হাসলো ।
বাসা থেকে বেরোতে ওদের প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে যায় । অনু শ্যামলী যাওয়ার জধ্য সিএনজি নেয় । সিএনজিতে উঠতেই নিশি বলে,
—অনু বলবি প্লিজ কই যাচ্ছি?
—ওমা কই যাচ্ছি মানে? দেখলি না শ্যামলী যাওয়ার জন্য সিএনজিতে উঠলাম ।
নিশি বিরক্ত হয়ে বললো,
—এই রাতে তোর শ্যামলী যেতে হবে কেনো? আমাকে একটু বুঝা? আর মাও কিছু বললো না । কি হচ্ছে একটু বলবি??
অনু কোনো উত্তর দিল না । উল্টো রহস্যময়ী হাসি দিতে লাগলো । সেটা দেখে নিশির মেজাজ যেন আরো বিগড়ে গেল । বিরবির করে অনুকে বকা দিতে লাগলো । এতবার করে জিজ্ঞেস করেও একটা কথাও পেট থেকে বের করতে পারে নি । এমন কেনো মেয়েটা ।
—বিরবির করে বকতে হবে না । জোরেই বকতে পারিস । আমি তো আর কিছু বলবো না ।
নিশি বাঁকা চোখে তাকালো অনুর দিকে । সেটা দেখে অনু কিটকিটিয়ে হেসে উঠে । নিশি মুখ গোমড়া করে বসে থাকে ।
আগারগাঁ কাছাকাছি আসতেই অনু সিএনজি থামাতে বললো । সেটা দেখে নিশি বলে,
—আবার এখানে থামাচ্ছিস কেনো?
—হাওয়া খেতে ।
অনুর কাটা কাটা উত্তরে রেগে গিয়ে নিশি অনুর হাতে চিমটি কাটলো ।
—আউচ….চিমটি কাটছিস কেনো আপি? ব্যাথা লাগে না বুঝি ।
নিশি মুখ বাঁকিয়ে বললো,
—ব্যাথা লাগার জন্যই দিয়েছি ।
এর মধ্যই পিছন থেকে আযান এসে নিশির মাথায় গাট্টা মারলো । নিশি পিছন ঘুরে আযানকে দেখে অবাক হয়ে যায় । বিষ্ময় কন্ঠে আযানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
—তুই এখানে কি করছিস?
তারপর আযানের কাঁধে ব্যাগ দেখে আবার বলে,
—আর কাঁধে ব্যাগ কেনো? কই যাচ্ছিস তুই?
—তোর বিয়ে খাইতে যাই । হইছে?
নিশি এমনিতেই ক্ষেপে ছিল অনুর উপর । তার উপর আবার আযানের কথাও ওর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো । কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু ওকে থামিয়ে দিয়ে তাড়া দিতে দিতে বললো,
—ঝগড়া পরে করিস । পরে অনেক সময় পাবি । এখন চল আগে ।
নিশিকে আর কিছুই বলতে না দিয়ে অনু নিশিকে ঠেলতে ঠেলতে সিএনজিতে উঠালো । তিনজন সিএনজিতে উঠতেই সিএনজি ছেড়ে দেয় । রাস্তায় জ্যাম না থাকায় অনেক তাড়াতাড়িই ওরা শ্যামলী পৌঁছে গেলো । শ্যামলী স্ট্যান্ডে নেমে অনু কাকে যেন কল দিতে লাগলো । এদিকে নিশি আর আযান টম এন্ড জেরির মতো ঝগড়া করেই চলেছে ।
—আযাইন্নার বাচ্চা তোরে যদি আমি বুড়িগঙ্গাতে না চুবাইছি আমার নাম নিশি না মনে রাখিস ।
—কেনো আযান তোমাকে কি করেছে যে ওকে তুমি বুড়িগঙ্গার মতো এত ভালো নদীরতে চুবাবে???
কারো কথা শুনে চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকায় নিশি । পিছন ফিরে আরো চমকে যায় নিশি । নিঝুম দাড়িয়ে ।
— “ও এখানে কি করছে?? ”
নিঝুম মুচকি মুচকি হাসচে নিশির দিকে তাকিয়ে । নিশি অবাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে ।
—আপি…….
.
.
.
চলবে??
(বিঃদ্রঃ আজকের পর্বটা অনেক ছোট হয়ে গেছে জানি । চেষ্টা করবো রাতে আরেকটা পর্ব দেওয়ার ।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৩০
.
.
.
—আযাইন্নার বাচ্চা তোরে যদি আমি বুড়িগঙ্গাতে না চুবাইছি আমার নাম নিশি না মনে রাখিস ।
—কেনো আযান তোমাকে কি করেছে যে ওকে তুমি বুড়িগঙ্গার মতো এত ভালো নদীতে চুবাবে???
কারো কথা শুনে চমকে উঠে পিছন ফিরে তাকায় নিশি । পিছন ফিরে যেন আরো বেশি চমকে যায় ও । কারণ পেছনে নিঝুম দাড়িয়ে ।
— “ও এখানে কি করছে?? ”
মনে মনে বললো নিশি ।
নিঝুম মুচকি মুচকি হাসছে নিশির দিকে তাকিয়ে নিশি অবাক হয়ে যাওয়া মুখটা দেখে ।
—কিরে আপি এভাবে ভেবলীর মতো তাকিয়ে আছিস কেনো??
অনুক কথা শুনে নিশি নিঝুমের দিক থেকে অনুর দিকে তাকালো । অনুর দিকেও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নিশি । আপাতত ও কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না । তাই তাকিয়ে আছে শুধু ।
—বাদ দিন ভাইয়া । ওরে বোবায় ধরছে । বোবায় ছাড়লে এমনি এমনি মুখে খই ফুটবে ।
আযান এ কথা বলে শেষ করতে পারলো না তার আগেই নিশি আযানকে জোড়ে সরে একটা চিমটি দিয়ে দিল ।
—ওমা গোওওওও….
নিশির চিমটি খেয়ে আর্তনাত করে উঠলো আযান । তা দেখে অনু খিলখিল করে হসে উঠলো । নিশি শান্ত দৃষ্টিতে একবার নিঝুমের দিকে তাকিয়ে তারপর অনুর দিকে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো,
—আমাকে প্লিজ একটু বলবি যে ঠিক কোথায় যাচ্ছিস??
নিশি দিকে তাকিয়ে একটা দুষ্টু হাসি দিল অনু । তারপর নিঝুমের দিকে তাকালো । নিঝুম বাঁকা একটা হাসি দিল। মাথা খানিকটা নিচু করে ফেললো আর চুলে হাত বুলাতে লাগলো । নিশি নিঝুমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো । এতক্ষণ নিশি নিঝুমকে খেয়াল করে দেখে নি । কিন্তু এখন নিঝুমকে ভালো করে লক্ষ্য করতেই নিশির যেন শ্বাস আটকে যাওয়ার উপক্রম হলো । হোয়াইট গেঞ্জি ব্লু জিন্স । চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালের উপরে একটুখানি পড়ে আছে । কিন্তু এতেই যেন খুব বেশি মানিয়েছে নিঝুমকে । হাতে চেইনের ঘড়ি । কাঁধে একটা ব্যাগপ্যাক । আর মুখে ঝুলানো সেই ঘায়েল করা তেড়ি স্মাইল । এমন লুকে নিঝুমকে যে কতটা সুন্দর লাগছে । নিশির চোখের পলক পড়ছে না । পাশে যে ছোট বোন ফ্রেন্ড আরো দাড়িয়ে আছে সেদিকে নিশির কোনো খেয়ালই নেই । ও ওর মতো দু’চোখ ভরে নিঝুমকে দেখছে । হঠাৎ চোখের সামনে তুড়ি বাজতেই চমকে উঠে নিশি । তাকিয়ে দেখে আযান । লজ্জা পেয়ে যায় নিশি । কোনো কথাই বলতে পারলো । নিশিকে এভাবে লজ্জায় লাল হতে দেখে অনু মুচকি মুচকি হাসলো ।
—আপিইইইইই
—হু….. হ্যাঁ ব..বল ।
হুট করে অনুর জোরে ডাক দেওয়ায় চমকে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো নিশি ।
—তুই জানতে চাইছিলি না কোথায় নিয়ে যাচ্ছি??
শান্ত ভাবে নিশি বললো,
—হুম
অনু নিঝুমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—নিঝুম ভাইয়া বলে দেন।
নিঝুম একটু নিশির কাছে এগিয়ে এলো । মুখে সেই হাসিটা ধরে রেখে সোজা নিশির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—তোমার স্বপ্নের সাজেক ভ্যালিতে যাচ্ছি ।
নিঝুমের কথা শুনে নিশি পুরো থ । মাত্র কি শুনলো ও এটা!!! ও কি সত্যিই ঠিক শুনেছে । ওরা সাজেক যাচ্ছে!!! নিঝুম বুঝতে পারলো যে নিশির এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না । তাই অনু আর আযানের চোখের আড়ালে ও নিশির হাত ধরে । চমকে উঠে নিশি নিঝুমের দিকে তাকায় । নিঝুম মাথা দুলিয়ে ইশারায় বললো যে সত্যিই ওরা সাজেক যাচ্ছে । নিশির সেই মুহূর্তে কি হলো ও জানে না । নিঝুমকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ও। হঠাৎ নিশি এভাবে জড়িয়ে ধরায় নিঝুমসহ অনু আযানও চমকে উঠে। পরক্ষণেই অনু আর আযান মুচকি হেসে দেয় । কিন্তু নিঝুম এখনো থ হয়ে দাড়িয়ে আছে । ও ভাবতে পারে নি যে নিশি হুট করে এভাবে ওকে জরিয়ে ধরবে । নিশির মাথায় হাত রাখে নিঝুম । মাথায় নিঝুমের ছোঁয়া পেয়ে খেয়াল হয় নিশির যে ও নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে আছে । সাথে সাথে নিঝুমকে ছেড়ে ছিটকে দূরে সরে আসে নিশি । মাথা নিচু করে বলে,
—সরি
নিঝুম কিছু বলে না । শুধু মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকে নিশির দিকে ।
.
শ্যামলী থেকে কলাবাগান পর্যন্ত হাঁটতে হাঁটতে আসে ওরা । ওদের বাস কলাবাগান থেকে রাত দশটায় ছাড়বে । এখন প্রায় সাড়ে নয়টার মতো বাজে । শ্যামলী থেকে কলাবাগান আসার পথে নিঝুমের সাথে একটা কথাও বলে নি নিশি । এমন কি একবার তাকায় নি পর্যন্ত । বাসের কাছাকাছি এসে অনু নিঝুমকে বললো,
—ভাইয়া আপনার না এক ছোট বোন আর ভাই আসার কথা ছিল?? তারা কোথায়??
অনু একথা বলতে না বলতেই মাহি পিছন থেকে এসে বললো,
—এই যে আমি ।
অনু পেছন ফিরে তাকায়। মাহি এসেই নিশি আর অনু দু’জনকে একসাথে জড়িয়ে ধরে। ওরা দু’বোনই একে হকচকিয়ে উঠে হুট করে মাহি এভাবে জড়িয়ে ধরায় । ওরা মাহিকে কখনো সামনাসামনি দেখে নি । নিঝুমের ফোনে ছবিতে দেখেছে ।
নিঝুম মাহিকে দেখে একগাল হাসি দিল । যদিও মাহি আগে থেকেই নিশি অনুকে চিনি তবুও আবারো মাহিকে নিশি অনু আর আযানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নিঝুম । সৌজন্যমূলক আরো কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ওরা গাড়িতে উঠে পড়ে । বাস দশ’টায় ছাড়ার কথা কিন্তু গাড়ি ছাড়তে ছাড়তে প্রায় সাড়ে দশ’টার বেশি বেজে যায় । গাড়িতে উঠে যে যার যার সিটে বসে পড়ে । নিশির সিট পড়েছে নিঝুমের সাথে । মাহির পরেছে আযানের সাথে । অনু নিজের সিটে গিয়ে বসে পড়লো । মনে মনে ভাবলো যে ওর সিট হয়তো নিঝুমের ছোট ভাইয়ের সাথেই পড়েছে । আর মাহিও তাই বলছে । তখন মাহির সাথে আলাপ হলেও নিঝুমের ভাইয়ের সাথে দেখা হয় নি ওদের । নামও জানে না । ওরা নিঝুমের ভাইকে চেনে না । অনু নিজের সিটে গিয়ে বসে দেখলো ওর পাশে লোকটা মুখের উপর টুপি দিয়ে রেখেছে । নিজে থেকে সেধে কথা বলতে গেলো না ও । ভাবলো একসাথে যখন ঘুরতে এসেছে পরে এমনি পরিচয় হবে । তার থেকে ভাবলো নীলকে একটা ফোন দিবে । অনেকক্ষণ আগে ওর সাথে কথা হয়েছে । নিশ্চয়ই ও চিন্তা করছে । নীলকে জানানো দরকার যে ও ঠিক মতো এসেছে । সেই ভাবা সেই কাজ । ব্যাগ থেকে ফোন বের করে নীলের নাম্বারে ডায়াল করলো অনু । একবার রিং বাজতেই পাশের বসা লোকটা ফোন বেজে উঠে । সেই সাথে চমকে উঠে অনু । কারণ নীলের ফোনের রিংটোন বাজছে । ফোন কান থেকে সরিয়ে পাশে বসা লোকটার দিকে তাকাতেই অনু ভুত দেখার মতো চমকে উঠে জোরে “আআআআআআ” বলে চিৎকার করে উঠলো ।
নীল অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি দিচ্ছিলো । কিন্তু হঠাৎ এভাবে অনু চিৎকার করে উঠায় নীল একদম বোকা বনে গেলো । ওর মস্তিষ্ক যেন পুরো শূণ্য হয়ে যায় । অনুকে যে থামাবে সেটাও ভুলে গিয়েছে । এদিকে অনুর চিৎকারে বাস থেমে গিয়েছে । সব মানুষ হুমড়ি খেয়ে এসে দাড়ায় অনুর সিটের কাছে । নিঝুম ফিরে নীলকে এমন হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও যেন সব কথা ভুলে যায় । নিশি সিট থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে অনুকে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে দেখে……….
.
.
.
চলবে??
(ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)
.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে