স্বপ্ন?পর্ব_২৫/২৬/২৭
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_২৫
.
.
.
সকালে একফালি কাঁচা সোনালি রোদ এসে ঝপাৎ করে পড়ে নীলের মুখে । এতে পুরোপুরি ঘুমটা ছুটে যায় ওর । চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে কোনো একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে । ঘুম থেকে মাত্র উঠার জন্য চোখে হালকা ঝাপসা দেখছে ও । শোয়া থেকে উঠে আধশোয়া হয়ে বসে চোখ ডলে তারপর আবার তাকালো নীল । দেখে হাসি হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে নিহা । নিহাকে দেখে যেন একটু অবাকই হলো নীল । ভাবতে লাগলো,
— ” ও এত সকালে এখানে কি করছে!!! ”
কথাটা নিজের মাঝে চেপে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেলে নীল,
—তুই এত সকালে এখানে কি করিস?
নিহা নীলের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—তোমাকে না বলেছি আমাকে তুই করে বলবা না এখন থেকে । তারপরও তুই করে বলো কেনো?
নীল বিরক্তি ভাব নিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,
—নিহা তোকে সেই স্কুল লাইফ থেকে তুই করে বলি । তুই তো তাই বলতি । হুট করে তোর মাথায় কি ভুত চেপেছে আমি বুঝতে পারছি না । তুই থেকে এখন তুমি বলতে হবে । আজব । এটা নিয়ে অনেক জ্বালিয়েছিস । পারবো না আমি পুরানো অভ্যাস বদলাতে । আর তোকেও আমাকে আগের মতো তুই করেই বলতে হবে । দ্যাট’স ইট ।
নীল একটানা কথাগুলো বলে ফেললো কোনো থামাথামি ছাড়াই । নিহা চুপ নীলের কথা শুনলো তারপর বললো,
—নীল তুই কি সত্যিই বুঝিস না কিছু? নাকি….
নিহাকে কথার মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে নীল বললো,
—তুই এত সকালে এখানে কি করিস?
নিহা বুঝে গেল যে নীল ওর কথাটা এড়িয়ে গেছে । তাই এখন শত চাইলেও ওকে আর এই বিষয় নিয়ে কিছু বলানো যাবে না । তাই নিহাও ওটা নিয়ে আর কিছু বললো না ।
—এত সকাল কোথায়?? সাড়ে এগারোটা বাজে । এখনো সকাল আছে তাই না?
—কি বলিস? এত বেজে গেছে??
নীল তড়িঘরি করে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিল । নীল ফোনের স্ক্রিনের আলো জ্বালাতেই অনুর হাসি মাখা ছবি ভেসে উঠলো । ব্যাপারটা নিহার চোখ এড়ালো না । নিহাকে আবার রাতের সেই কষ্টটা চেপে ধরলো । মনে পড়তে লাগলো ওর এতবছরের তিল তিল করে সাজানো স্বপ্ন কিভাবে এক রাতেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে । সেই কষ্ট বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসে নিহার । তবে সেটা নীলের অগোচরে ।
—তুই নিচে যা । আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ।
নীলের কথায় নিহা ভাবনার থেকে বাস্তবে ফিরে আসে ।
—এখানেই থাকি প্রবলেম কি?
—প্রবলেম আছে । তুই যা ।
নিহাকে একপ্রকার জোর করেই নিচে পাঠিয়ে দিল নীল । দরজা আটকে ফিরে এসে অনুকে কল দিতে গিয়ে দেয় না । ভাবে যে একদম সামনাসামনি গিয়ে দাঁড়াবে । তারপর দেখবে প্রেমের শুরুর প্রথম দিনটায় আচমকা ওকে দেখে কি রিয়েকশন দেয় অনু । মনে মনে সেটা ভেবে হাসি পাচ্ছে নীলের । মাথার চুলে হাত বুলাতে বুলতে ফ্রেস হতে গেল নীল ।
.
নিজের রুমে বসে অফিসের ফাইলগুলো দেখছিল নিঝুম । তখনই কফি হাতে রুমে প্রবেশ করে নিঝুম নীলের মা মিসেস ফারুক । নিঝুম ফাইল দেখায় ব্যস্ত থাকায় খেয়াল করে নি যে কেউ রুমে এসেছে । টি টেবিলের উপর কফির কাপটা রেখে মিসেস ফারুক ছেলের পাশে বসলেন । তখন নিঝুম টের পায় যে তার পাশে এসে কেউ বসেছে । বুঝতে পারে যে ওর মা এসেছে পাশে তবুও ফাইলের থেকে চোখ সরিয়ে একবার দেখে নিল । মায়ের দিকে তাকিয়ে নিঝুম বললো,
—কিছু বলবে মা?
তিনি উত্তর দিলেন,
—কেনো কিছু বলা ছাড়া বুঝি এমনি তোর কাছে আসা যাবে না?
—আহা আমি কি সেটা বলেছি নাকি? মনে হলো কিছু বলবে তাই জিজ্ঞেস করলাম ।
—বলে আর কি হবে? তুই তো আর শুনবি না আমার কথা ।
—তোমার সব কথাই তো আমি শুনি মা । বলেই দেখ শুনি কিনা ।
নিঝুমের কথা শুনে ওর মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠে । তিনি বলতে লাগলেন,
—আব্বু তোকে তো কতবার করে বলেছি । তখন না এটা সেটা বলে কাটিয়ে দিয়েছিস । এখন তো উপযুক্ত সময় । এবার বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যা না আব্বু ।
—মা আবার শুরু করলে? এছাড়া কি আর কোনো কথা নেই নাকি?
—নিঝুম তুই কিন্তু আমার কথা শুনবি বলেছিস । আর তোর বাবাও তাই চাইছেন । তুই…..
নিঝুমের মা আরো কিছু বলতেন কিন্তু থেমে গেলেন কারো চিৎকার করে ডাক শোনাতে ।
—মাআআআআ….. মাআআআআআআ….. দাভাইইইইই….. ভাইইইইই ।
নিঝুম আর মা একে অপরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো । পরে দু’জনই প্রায় এক সাথে উঠে নিচের দিকে গেলো । নিচে নেমে দাড়াতেই ঝড়ের বেগে দৌড়ে এসে নিঝুমের মাকে জড়িয়ে ধরলো মাহি । মাহি হচ্ছে নিঝুমের ছোট চাচার একমাত্র মেয়ে । নিঝুমের ছোট চাচা আর চাচি দু’জনেই এক্সিডেন্টে মারা যায় । তখন মাহি অনেক ছোট । তাই নিঝুমের বাবা মাহিকে ওদের কাছে নিয়ে আসে । কারণ মাহিকে দেখার মতো অন্যকেউ নেই । তারপর থেকেই মাহি নিঝুমদের সাথেই থাকে । সবার খুব আদরের ও । আর নিঝুম নীলের তো চোখের মণি । ওর কোনো আবদার অপূর্ণ রাখে না নিঝুম নীল । ওকে কখনো চাচাতো বোন হিসেবে দেখে নি ওরা । সবসময় নিজের আপন বোন ভেবেছে । তার চেয়েও বেশি আদর দিয়েছে । ঠিক তেমনি নিঝুমের বাবা মাও নিজের মেয়ের মতো আদর দিয়েছে মাহিকে।
একমাসের একটা ট্যুরে গিয়েছিল মাহি । কিন্তু আজ মাত্র পনেরো দিন হলো । এর মধ্যেই মাহিকে ফিরে আসতে দেখে নিঝুমের মা আর নিঝুম দু’জনেই অবাক । কারণ মাহি কোনো ট্যুরে গেলে কখনোই সময় শেষ হওয়ার আগে ফিরে আসে না । কিন্তু আজ হঠাৎ এমন কেনো করলো সে । মাহি এবার এইচএসসি দিবে । এইটুকু বয়সেই যেন ও পাক্কা ট্রাভেলার হয়ে গেছে ।
—-মাহু……
.
.
.
চলবে??
(ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_২৬
.
.
.
একমাসের একটা ট্যুরে গিয়েছিল মাহি । কিন্তু আজ মাত্র পনেরো দিন হলো । এর মধ্যেই মাহিকে ফিরে আসতে দেখে নিঝুমের মা আর নিঝুম দু’জনেই অবাক । কারণ মাহি কোনো ট্যুরে গেলে কখনোই সময় শেষ হওয়ার আগে ফিরে আসে না । কিন্তু আজ হঠাৎ এমন কেনো করলো সে । মাহি এবার এইচএসসি দিবে । এইটুকু বয়সেই যেন ও পাক্কা ট্রাভেলার হয়ে গেছে । দেশের মধ্যে টুরিস্ট জায়গাগুলো প্রায় সব ওর ঘোরা শেষ । কাছাকাছি কোথাও গেলে একা একা যায় । আর বেশি দূরে কোথাও হলে নিঝুম অথবা নীলকে সাথে নিয়ে যায় । কিন্তু গত এক বছর ধরে ও একাই ট্রাভেল করে । বিভিন্ন গ্রুপের সাথে জয়েন করে যায় । আর সেফটির ব্যবস্থা করে দেয় নিঝুম । প্রথমে আপত্তি করলেও এখন ওরা মেনে নিয়েছে । আদরের একমাত্র বোন বলে কথা ।
—কিরে এত জলদি ফিরে এলি যে? ট্যুর শেষ হয়ে গেলো এত জলদি?
মিসেস ফারুক জিজ্ঞাসা করলেন ।
—কেনো জলদি আসাতে খুশি হও নি?? না হলে বলো আবার চলে যাই ।
—আমি কি সেটা বলেছি নাকি মাহু?
—হুহ বুঝি বুঝি ।
মাহি মিসেস ফারুককে ছেড়ে গাল ফুলিয়ে বললো । নিঝুম মাহিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে গাল টেনে বললো,
—হয়েছে আর গাল ফুলাতে হবে না ।
মাহি নিঝুমের চুল টেনে দিল ।
—অইই তুই আমার চুল আবার টান দিছিস ।
—তাহলে তুই আমার গালে কেনো টান দিলি দাভাই?
—বেশ করেছি । আরো দিব ।
—তাহলে আমিও তোর চুল টানবো ।
—মাহু তুই চলে এসেছিস?
নীলের কন্ঠ শুনতে পেয়ে মাহি পিছন ফিরে তাকায় । তারপর দৌড়ে গিয়ে নীলের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
—সারপ্রাইজ ভাইই ।
নীল মাহির কপালে একটা চুমু দেয় ।
—হুহ ভাইকে পেয়ে এখন আর আমাকে কেউ চেনেই না ।
নিঝুম মাহির দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো । নিঝুমের কথায় মিসেস ফারুক, নীল, মাহি তিনজনই একসাথে হেসে দেয় । মাহি নীলের কাছ থেকে নিঝুমের কাছে গিয়ে ওর বাহুতে হাত ঢুকিয়ে বলে,
—তোর সাথে কথা আছে । উপরে চল দাভাই ।
নিঝুম হেসে বললো,
—হু চল । নীল তুইও আয় ।
—আব ভাইয়া তোরা যা আমার একটু কাজ আছে । আমি একটুপর আসছি ।
নীল উত্তর দিল । মাহি দুষ্ট হাসি হেসে বললো,
—কাজটা কি ইউনিভার্সিটির সামনে ভাই?
নীল বড় বড় চোখ করে মাহির দিকে তাকালো । তারপর আবার মায়ের দিকে তাকালো । দেখলো ওর মা কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে । নীলকে যেন অথৈ পানিতে ফেলে দিয়েছে মাহি এই প্রশ্ন করে । কোনোরকমে বললো,
—নি…নিহার সাথে দেখা করতে হবে । কল দিয়েছিল । আমি আসছি ।
একথা বলেই আর একদন্ড না দাড়িয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল নীল ।
পিছে নীলের কান্ড অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো মিসেস ফারুক ও নিঝুম । আর মুচকি হাসছে মাহি । কারণ মাহি বাসায় আসার সময় নিহাকে দেখেছে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে । আর নীল যে এখন নিহার সাথে দেখা করতে যাবে না সেটাও জানে ।
.
—দাভাই তোর স্বপ্নকন্যা কেমন আছে রে?
—হুম আছে ভালোই ।
মাহি চোখ টিপে বললো,
—দেখা করেছিস তাহার সাথে?
নিঝুম বাঁকা চোখে মাহির দিকে তাকিয়ে বললো,
—খুব পেকে গেছিস না…..
—হুহ কথা লুকাবার চেষ্টা করে লাভ নেই । ভাই আমাকে বলেছে গতকাল তোমরা দেখা করেছ ।
—আচ্ছা তাই??
—হু
—তা আর কিছু বলেনি তোর ভাই?
মাহি ভ্রুজোড়া কিঞ্চিৎ বাঁকা করে বললো,
—আর কি বলবে?
—বাহ বাহ আমার কথা ঠিকই বলেছে । আর নিজেরটা লুকিয়ে রেখেছে । খবর আছে আজকে ওর ।
মাহি অবাক হয়ে বললো,
—কি লুকিয়েছে রে দাভাই?
—গেইস কর….
মাহি কতক্ষণ চিন্তা করলো । তারপর কপালে ভাঁজ ফেলে বললো,
—ভাইও কাল তার মিষ্টি অনুর সাথে দেখা করেছে??
—আরেকটু সামনে আগিয়ে ভাব…..
মাহি আরেকটু ভাবলো তারপর চোখজোড়া বড় বড় করে বললো,
—ভাই প্রোপজ করেছে অনু আপিকে??
নিঝুম হেসে দিয়ে হালকা মাথা ঝাকালো । মাহি তো এক লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে পড়লো ।
বললো,
—কিহহহহ!!! দাভাই এটা কি সত্যি?
—হ্যা রে ।
মাহি কাঁদো কাঁদো ফেস বানিয়ে বললো,
—আমার থেকে এত বড় একটা কথা ভাই লুকালো । ভাইয়ের খবর আছে আজকে ।
নিঝুম হাসতে লাগলো মাহির কথায় ।
—দাভাই শোন না ।
—হুম বল শুনছি ।
—গতকালকে তো নিশি আপুর সাথে দেখা করেছিস । ছবিও তুলেছিস নিশ্চয়ই আপুর ছবি দেখা না দাভাই ।
নিঝুম গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বললো,
—ছবি তুলি নি ।
মাহি সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
—ছবি তুলিস নি? আর একথাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
—সত্যি তুলি নি ।
—আচ্ছা তোর ফোনটা দে তো দাভাই।
—কেনো?
—আমি চেয়েছি তাই দিবি । দে….
নিঝুম পকেট থেকে ফোন বের করে মাহির হাতে দিল । মাহি ফোন হাতে নিতেই দেখে ফোন লক করা । মাহি নিঝুমের দিকে তাকায় দেখে নিঝুম মুখ চেপে হাসছে । মাহি মুখ ভেঙ্গচি কেটে নিঝুমের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফোনের লক খোলায় লেগে গেলো । প্রথম তিনবার ভুল হলেও পরেরবার ঠিক পেরে যায় । বিশ্বজয় করা একটা হাসি দিয়ে নিঝুমের দিকে তাকাতেই দেখে নিঝুমের মুখ খানিকটা হা হয়ে গেছে । সেটা দেখে মাহি হালকা হেসে দিল ।
—তুই লক কিভাবে খুললি??
মাহি ভাব নিয়ে বললো,
—হু হু বুঝতে হবে ।
মাহি ফোনের গ্যালারিতে ঢুকতে নিলে নিঝুম খপ করে ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে যায় । বলতে থাকে,
—আমি দেখাচ্ছি দে ।
—দাভাই তুই না ছবি তুলিস নি?
—ন…. না… তুলেছি তুলেছি ।
—তো মিথ্যে বললি কেনো?
নিঝুম কোনো উত্তর না দিয়ে ফোনে নিশির গতকালকের তোলা ছবি বের করে মাহির দিকে ফোন ধরলো । মাহি নিঝুমের হাত থেকে নিজের হাতে ফোন নিল । অনেকগুলো বাচ্চার মধ্যে একটা লাল শাড়ি পড়ে বসে আছে নিশি । ঠিক যেন একটা অপ্সরী । হাসিমাখা মুখটা থেকে যেন মায়া উপচে পড়তে চাইছে । ছবিটা দেখে মাহির মুখ দিয়ে আপনাআপনি “মাশাল্লাহ” বেরিয়ে এলো । ছবির দিকে চোখ রেখেই মাহি বললো,
—দাভাই মাকে বলেছিস নিশি ভাবীর কথা?
নিঝুম মাহির মুখে হুট করে আপু থেকে নিশিকে ভাবী ডাকতে শুনে চমকে উঠে । এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে ওর মুখে ।
—কি রে বল?
মাহি নিঝুমকে ধাক্কা দিয়ে বললো । নিঝুম খানিকটা মুখ লটকিয়ে বললো,
—যাকে নিয়ে বলবো তাকেই মনের কথা এখনো বলতে পারলাম না আর মাকে বলা ।
মাহি অবাক হয়ে বললো,
—মানে? ভাই তোর ছোট হয়ে প্রোপজ করে ফেললো । আর তুই কিনা বড় হয়েও পারলি না । আবার সেটা মুখ লটকে বলছিস?
নিঝুম অসহায় মুখ করে বললো,
—কাল ওর যেই রাগ দেখলাম রে বাবা । পুরো….
—ধানি লঙ্কা । তাই তো?
মাহি নিঝুমের কথা কেটে নিয়ে বললো ।
—দাভাই তুই নিশি ভাবীকে ভয় পাচ্ছিস? লাইক সিরিয়াসলি ভাই? এই কথাও আমাকে শুনতে হলো?
নিঝুম চুপ করে রইলো । মাহি আবার বললো,
—দাভাই মাকে নিশি ভাবীর রেখেছে । আর ফোন টিপছে । এত কিউট লাগছিল যে চোখ ফেরানো দায় । অনুর চোখও তাই আটকে গিয়েছিল নীলের উপর । কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে পড়লো ওর সাথে নিশি আছে । আর নিশি তো নীলকে দেখলেই যেন গরম তেলে পানির ছিটা পড়ার মতো জ্বলে উঠে । তখনই মাথা ভনভন করতে শুরু করে অনুর । এখন আবারও কালরাতের মতো ঝগড়া লাগুক সেটা অনু চাচ্ছে না । যেভাবেই হোক নিশি নীলকে দেখার আগেই ওকে সরিয়ে নিতে হবে । অনু নিশির দিকে তাকাতেই দেখে নিশি ওর পাশে নেই ।
— “আপি কোথায় গেলো? ”
মনে মনে ভাবতে ভাবতেই পাশে চোখ বুলাতেই দেখে আযান ওর দিকে তাকিয়ে আছে । অনুর চোখ আবার গেল নীলের দিকে যেতেই দেখে নিশি নীলের সাথে কথা বলছে । কিন্তু ওদের মনে হচ্ছে না যে কোনো ঝগড়া চলছে । বরং দেখলো নীল হাসি মুখে কথা বলছে । আর নিশিও । অনু ওদের দিকে এগিয়ে গেলো । অনু ওদের কাছে গিয়ে দাড়াতেই নিশি বললো,
—আরেহ অনু আযানকে ওখানে একা ফেলে আসলি কেনো? ওকে নিয়ে আসবি না ।
নিশির এত স্বাভাবিক আচরণ দেখে যেন অনু আকাশ থেকে পড়লো । কোনো মতে তোতলাতে তোতলাতে বললো,
—না…..মা…মানে……আপি..
—কি না মানে না মানে?? আচ্ছা বলা লাগবে না । শুন আমি আযানকে নিয়ে যাচ্ছি । তুই বাসায় চলে যাস । আমার একটা কাজ আছে। শেষ করে আমি বাসায় আসবো ।
অনুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিশি চলে গেল । আর অনু হতবিহ্বলের মতো দাড়িয়ে থাকে । অনুকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নীল মুখ টিপে হাসে ।
—আপি চলে গেছে । ওদিকে তাকিয়ে থাকলে আপিকে আর দেখা যাবে না ।
নীল অনুর কানের কাছে গিয়ে কথাগুলো বললো । হুট করে কানের কাছে কথা বলায় চমকে উঠে অনু । অনুকে চমকে উঠতে দেখে কিটকিটিয়ে হাসে নীল । অনুর হাত ধরে টেনে গাড়িতে উঠাতে উঠাতে বললো,
—চলো আর দাড়িয়ে দাড়িয়ে আর ভাবতে হবে না ।
অনু চুপচাপ নীলের সাথে গেলো । কিন্তু ওর মাথায় এখন একটা কথাই ঘুরছে ।
— “আপির কি হলো……. ”
.
.
.
চলবে?
(আজকে বড় করে দিয়েছি হু । ??
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)
.
#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_২৭
.
.
.
ধানমন্ডির রাস্তা ধরে ধীর গতিতে গাড়িটা চলছে । নীল ড্রাইভ করছে । পাশে চুপচাপ বসে আছে অনু । কারো মুখে কোনো কথা নেই । নীল আপনমনে ড্রাইভ করতে করতে মুচকি হাসছে । আর অনু আড়চোখে সেই হাসি দেখে তৃষ্ণা মেটাচ্ছে । সরাসরি তাকাতে খুব লজ্জা লাগে মেয়েটার । তাইতো সব সময় লুকিয়ে দেখার চেষ্টা করে । নীলকে দেখলে অনুর মনে হয় যেন কতদিনের চেনা এই মুখটা । কত যুগ যুগ ধরে একে অপরের হয়ে আছে । মনেই হয় না যে মাত্র কালকেই ওরা একটা সম্পর্কে বাধা পড়েছে । অনু নীলের চোখ এড়িয়ে সবসময়ের মতো খুব খুঁটিয়ে দেখছে ওকে । আর ভাবছে,
—” ছেলেটা এত সুন্দর কেনো? একেক সময় একেকরকম সুন্দর লাগে । ইচ্ছে করে তাকিয়েই থাকি । এত সুন্দর হওয়াটা কি খুব জরুরিই ছিল?? আমি কেনো একটু সুন্দর হলাম না । তাহলে ওর পাশে মানাতো আমাকে । ”
এই প্রথম নিজেকে নিয়ে আফসোস হচ্ছে অনুর । কেনো একটু সুন্দর হলো না ।
নীলের একটা জিনিস অনুর খুব বেশি ভালো । নীল সবসময় শার্টের কলারের বাটন অবধি লাগিয়ে রাখে । অন্যান্য ছেলেদের মতো স্টাইল করে শার্টের দু’টো বাটন খুলে রেখে নিজেকে মেয়েদের দেখিয়ে বেড়ায় না । নীলের এই স্টাইলটা অন্যদের থেকে আলাদা । মনে মনে হাজারটা ধন্যবাদ দিল নীলকে । ওর খুব জানতে ইচ্ছে করছে যে নীল কেনো সবসময় শার্টের কলারের বাটন অবধি লাগিয়ে রাখে । কিন্তু সেটা তো জিজ্ঞেস করতে পারবে না ও । লজ্জায় মরেই যাবে এটা জিজ্ঞেস করতে গেলে ।
—কি ভাবছো?
নীলের ডাকে অনুর ভাবনার সুতো কাটে । ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
—কই কিছু না তো ।
—তাহলে চুপচাপ যে??
—না এমনি ।
হঠাৎ করে গাড়ি ব্রেক করলো নীল । এভাবে ব্রেক করায় অনু কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লো । নীলের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখন দেখে যে নীল ওর দিকে তাকিয়ে আছে । কিছু বলতে যেয়েও আর বলতে পারলো না অনু । একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নীলের চোখের দিকে । তারপর হঠাৎ কি মনে পড়তেই ওর লজ্জা লাগতেই চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে । টের পাচ্ছিল নীল ওর দিকে আগাচ্ছে । এবার যেন লজ্জায় আরো কুঁকড়ে গেল অনু । নীল অনুর মুখে কাছে মুখ এনে হাত পিছনে দিয়ে ঘাড়ে চুলের মাঝে আঙ্গুল প্রবেশ করালো । এবার যেন অনু পাথর হয়ে গেল । কি হতে যাচ্ছে এটা ভেবে ভেতরটা যেন শিউরে উঠছে ওর । নিজেকে যে সরিয়ে আনবে সেটাও পারছে না । চোখ বন্ধ করে ফেলে অনু । কেমন জানি একটা অসস্থি লাগছিল । কিন্তু মুহুর্তেই মিলিয়ে গেল যখন ও স্পর্শ পেল কপালে । নীল অধরজোড়া চেপে ধরেছে অনুর কপালে । এবার আবেশে চোখ বুজে রইলো অনু । অসস্থি যেন কোথায় মিলিয়ে গিয়ে এক ভালোলাগা ছুঁয়ে গেল ওকে । নীল অনুর কপালে কপাল ঠেকালো । ফিসফিস করে বললো,
— ভালোবাসি আমার স্বপ্নের মিষ্টি অনু ।
.
.
—আমার সাথে ট্যুরে যেতে পারবে নিশি??
নিঝুম কোনো ভনিতা ছাড়াই সোজাসুজি জিজ্ঞেস করলো নিশিকে । একটু অবাক হয়ে নিশি বললো,
—ট্যুর??
—হ্যাঁ ।
—কিসের ট্যুর?
—সাতদিনের একটু ট্যুরে যাবো । সাথে আবার ছোট বোন আর ভাই থাকবে । তুমি যেতে পারবে?
—কোথায় যাচ্ছো?
—সাজেক ভ্যালিতে ।
সাজেকের কথা শুনে নিশির মন আনন্দে নেচে উঠলো । কারণ ওর অনেক দিনের স্বপ্ন ও সাজেক ঘুরতে যাবে । কিন্তু কখনো তেমন যাওয়া হয়ে উঠে নি । বলতে গেলে সুযোগ নেই যাওয়ার । প্রথমে খুশি হলেও পরে আবার সেই খুশি মিলিয়ে গেলো যখন মনে পড়লো ও তো একা যেতে পারবে না অনুকে ছাড়া । আর অনু রাজি হবে কিনা সেটাও ওর জানা নেই । তার থেকে বড় কথা হচ্ছে ওর মাকে কিভাবে মানাবে? মা তো রাজি হবে না । এসব ভেবেই ওর মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো । তাই মন খারাপ করেই নিশি বললো,
—সরি । যেতে পারবো না ।
নিশির উত্তরে নিঝুম কিছুটা আহত হলো । তারপরেও আরেকবার চেষ্টা চালাতে বললো,
—কেনো যাবে না? তোমার স্বপ্ন না সাজেক ঘুরতে যাওয়া? সেখানের হ্যালিপ্যাডের সূর্যাদয় দেখা না তোমার ছোটবেলার স্বপ্ন? তাহলে যেতে চাইছো না কেনো?
নিশি একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—হুম । কিন্তু কিছু প্রবলেম আছে । তাই যেতে পারবো না?
—কি প্রবলেম?
—বাদ দাও না ।
—না দিবো না বাদ । বলো নিশি প্লিজ?
—প্রথমত আমি অনুকে ছেড়ে কোথায় যেয়ে থাকতে পারি না । অনু হয়তো রাজি হবে না যেতে । দ্বিতীয়ত মা কখনো রাজি হবে না । আর তৃতীয়ত আমার ইচ্ছে ছিল আমার বেস্টু আযানকেও সাথে নিয়ে যাওয়া । কারণ আমরা যে যেখানেই যাই না কেনো সবসময় একসাথে যাই । আযানকে তো নিয়ে যেতে পারবো না । এই তিনটা কারণের জন্য যেতে পারবো না ।
নিশির তৃতীয় কারণ শুনে নিঝুমের মাথায় সর্বপ্রথম একটি কথাই এলো । সেটা হলো,
—” এই মেয়ে কি বলে!!! ফ্রেন্ড ছাড়া কোথাও একা যাবে না । তাহলে বিয়ের পর হানিমুনে গেলেও কি ফ্রেন্ডদের নিয়ে যাবে নাকি? ”
কথাটা নিঝুম মনে মনেই বললো । মুখে বলতে পারলো না । মুখে বললো অন্যকিছু,
—অনুকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার । আর আযানকেও সাথে নিয়ে যেতে পারো । খালি দ্বিতীয় কারণটার কোনো ব্যবস্থা আমি করতে পারছি না । ওটা তোমাকেই করতে হবে ।
—অনু রাজি হলে ও ই মাকে রাজি করাতে পারবে ।
—তাহলে ধরে নাও তোমার সাজেক যাওয়া কনর্ফম ।
ফোনের অপর পাশ থেকে নিশি নিঝুমের হাসির আওয়াজ শুনতে পেলো । ওর ঠোঁটেও ফুটে উঠলো মিষ্টি একটা হাসি । মনটা যেন ওর আনন্দে ভরে গেছে । মনে মনে একবার বললো,
—স্বপ্ন আমার হবে সত্যি…….
.
.
.
চলবে??
(ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)
.