Monday, October 6, 2025







সুতোয় বাঁধা জীবন পর্ব-১০

#সুতোয়_বাঁধা_জীবন
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – দশ

উমামা খুব ভাব জমিয়েছে পিকলু ও মৌমির সাথে। পুরো সন্ধ্যাতে তিনজন মিলে ছোটাছুটি করেছে। হৈচৈ করেছে। পড়াশোনাও করেছে। তিনজনকে একসাথে গাইড করেছে রুহামা। আতিকা জাহানও নাতি-নাতনীদের সাথে মিশে গল্প করেছেন। তাদের সময় দিয়েছেন। খেলাধুলা শেষে তিনজনকে একসাথে বসিয়ে রাতের খাবার খাইয়ে দিল রুহামা। খেয়াল করল, উমামার চোখদুটো ঢুলুঢুলু হয়ে আসছে। একাধারে চোখে আঙুল ঘষছে সে। খাবার শেষ করে তাকে নিয়ে নিজের রুমে এলো। বিছানায় শুইয়ে দিতেই উমামা বলল,

-‘মাম্মাম আসছে না কেন সোনামা?’

-‘হসপিটাল তো। একটু দেরী হবে। হয়তো আর কিচ্ছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে।’

-‘ভাইয়ার কী হয়েছে?’

রুহামা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-‘তেমন কিছু না। সামান্য অসুখ। সেরে যাবে।’

উমামা চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ঘুম আসছে না তার। এদিক-ওদিক করতে করতে বলল,

-‘কয়টা বাজে, সোনামা?’

রুহামা মোবাইলের স্ক্রিনে আলো জ্বেলে সময় দেখে নিয়ে বলল,
-‘ন’টা পঞ্চাশ। এখন যদি না ঘুমোও, সকালে কিন্তু উঠতে পারবে না। তুমি না গুডগার্ল?’

-‘হ্যাঁ, আমি গুডগার্ল।’

-‘গুডগার্লরা কি অলস হয়?’

-‘গুডগার্লরা কী হয়?’

-‘বুদ্ধিমতী হয়। জ্ঞানী হয়।’

-‘তাই?’

-‘হ্যাঁ।’

-‘মাম্মামও বলেছিল, আর্লি টু বেড্ এন্ড আর্লি টু রাইজ্। আমি এক্ষুণি ঘুমোচ্ছি। বাবাই আসলে বলো, আজ আমি এখানে থাকব। তোমার কাছে।’

-‘ঠিক আছে। বলব। এখন চোখ বন্ধ করো। আমি একটা গল্প বলি।’

উমামার চোখে ঘুম নেমে আসতে বেশি সময় লাগল না। উষাদ ফিরে দেখল মেয়ে গভীরঘুমে ডুবে আছে। ঘুমন্ত মেয়েটাকে পূণরায় জাগিয়ে, এতরাতে বাড়ি নিয়ে যাওয়াটা ঝামেলা। কিন্তু এখানে রেখে গেলে নিজেও পুরো রাত ঘুমোতে পারবে না। কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না সে। আবার এতরাতে মেয়ে জামাইকে না খাইয়ে ছাড়তে নারাজ আতিকা জাহান নিজেও। উষাদের পাশে এসে বললেন,

-‘রুহান, নানুর কাছে এসো। তোমার বাবাই এখন খাবে।’

উষাদ বলল,
-‘আমি কিছু খাব না মা। উমা ঘুমোচ্ছে না?’

-‘ও তো গভীরঘুমে। আজ এখানেই থাকুক, অসুবিধা কী?’

-‘একা থাকার অভ্যাস নেই তো। যদি ভয় পায়!’

-‘পাবে না। আমরা আছি। তুমি চিন্তা কোরো না।’

উষাদ যে কিছু খাবে না, সেটা রুদিতা আগেই বুঝতে পারছিল। আচমকা ওই মেয়েটার আগমন ঘটেছিল আজ। হয়তো এটা নিয়েই সে আপসেট আছে কিছুটা। তবে নিজের কথাবার্তা দিয়ে কিছু বুঝতে দিচ্ছে না কাউকে। এমনকি রুদিতার সামনেও যথেষ্ট হাসিখুশী থাকছে। বাহির থেকে যতই সে নিজেকে শক্ত বোঝাক, ভেতরে ভেতরে একটু তো দুঃশ্চিন্তায় ভুগছেই। শত হলেও প্রাক্তন স্ত্রী। বাচ্চার মা। সবকিছু কী আর স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করা যায়? রুদিতা শুধু এক কাপ কফি তৈরী করে উষাদের সামনে এনে রাখল। বলল,

-‘মেয়েকে আমার কাছে রেখে যেতে ভয় পাচ্ছেন? ভাবছেন, সৎ মা। হয়তো খেয়াল রাখবে না।’

-‘তুমি ভুল ভাবছ রাহা। সেরকম কিছু না।’

আতিকা জাহান চলে গেলেন। মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের কথার মাঝখানে তাঁর দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা বসে থাকা দুটোই বেমানান। তিনি চলে যাওয়ার পর রুদিতা বলল,

-‘আপনি আমাকে ‘তুমি’ করে বলছেন।’

-‘বুঝতে পারছ কোথায় জায়গা দিয়েছি তোমায়? তা-ও মাত্র কয়েকটা দিনে!’

-‘তাড়াহুড়ো হয়ে গেল না?’

-‘উঁহু, একদমই নয়। আমি স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কটা নিয়ে পজেটিভ ভাবনাকে মনে ঠাঁই দিচ্ছি।’

-‘তবে ভয় পাচ্ছেন কেন?’

-‘কীসের ভয়?’

বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করল উষাদ। রুদিতা বলল,
-‘মেয়েকে রেখে যাচ্ছেন না। বিশ্বাস নেই?’

-‘সেরকম কিছু নয়, রাহা। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। তবে প্রথমে একটু ভুল ধারণা ছিল মনে, এখন আর সেটা নেই।’

-‘তাহলে?’

-‘আমি ও’কে ছাড়া থাকতে পারি না। সেই ছোট্টোটি থেকে ও আমার কোলের কাছে মানুষ। আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোয়। আজ হঠাৎ…। রাতে ঘুম আসবে না। এইজন্য।’

-‘আচ্ছা দেখি, জাগাতে পারি কি-না।’

উমামাকে ডাকতে চাইল রুদিতা। উষাদ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-‘আরেহ্, ও’কে জাগাতে হবে না এখন।’

-‘না জাগালে বাড়িতে গিয়ে ঘুমোবেন কী করে? সারারাতই মেয়ের জন্য ছটফট করবেন।’

উষাদ চোখমুখ উজ্জ্বল করে বলল,
-‘অন্য একটা অপশন আছে।’

-‘কী?’

-‘তোমার সাথে দীর্ঘ বিস্তারিত ফোনালাপ হবে।’

-‘মানে!’

-‘হ্যাঁ। খুব জ্বালাব আজ। সহ্য করবে।’

রুদিতা চোখ ঘুরিয়ে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে প্রস্থান করল। উষাদ কফিতে চুমুক দিয়ে রুহানকে বলল,

-‘আজ রুহান মাম্মামের পাশে ঘুমোবে। কী তাই তো?’

-‘না।’

রুহান ছোটো শব্দে উত্তর দিল। উষাদ চমকে গিয়ে বলল,
-‘কেন?’

-‘আমি সোনামার পাশেই ঘুমোব।’

উষাদ খুব যত্ন করে কাছে টেনে নিল রুহানকে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-‘মাম্মামের থেকে দূরে থাকলে মাম্মাম কষ্ট পাবে। তোমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মাম্মাম অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। তুমি কি তাকে আবারও কষ্ট দিতে চাও? এইযে, তুমি দূরে দূরে থাকো, এজন্য মাম্মাম অনেক কষ্ট পায়। কিন্তু মুখফুটে বলতে পারে না। তোমার তো উচিত, মাম্মামের কষ্ট মুছে দেয়া। তুমি সেটা করছ না কেন?’

উত্তরে রুহান বলল,
-‘আমি তো মাম্মামকে ভয় পাই। যদি মারে?’

-‘কেন মারবে? মাম্মামের কাছে তুমি কত দামী, জানো? যেদিন বুঝতে শিখবে, সেদিন থেকে মাম্মামের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে। এখন থেকে মাম্মামকে বুঝতে চেষ্টা কোরো। যেন কোনোভাবেই তোমার দ্বারা মাম্মাম কষ্ট না পায়। বুঝেছ?’

-‘মাম্মাম আদর করবে?’

-‘খুব করবে। মাম্মাম তো রুহানকে অনেক ভালোবাসে। কেন আদর করবে না?’

-‘মাম্মাম সত্যিই আমায় ভালোবাসে?’

-‘হ্যাঁ। খুব বাসে। আর ডাক্তার কী বলেছেন, মনে নেই?’

-‘কী?’

-‘মাম্মামের কাছেপাশে থাকতে। এতে তোমার মনের ভয় দূর হবে তাড়াতাড়ি। থাকবে না?’

-‘থাকব।’

-‘যদি না থাকো, তাহলে কিন্তু আমিও খুব কষ্ট পাব। তুমি কি আমাকেও কষ্ট দিতে চাও?’

রুহান তার বাবাইকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-‘থাকব তো বললাম।’

-‘এইতো গুডবয়। মাম্মামকে কষ্ট দিও না।’

কফি শেষ করে উমামাকে রেখে বিদায় নিল উষাদ। রুহান গুটিকয়েক পা ফেলে রুদিতার রুমে এলো। বাবাইয়ের কথামতো কাজ করতে মনে সাহস সঞ্চয় করে রুদিতার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

-‘মাম্মাম…।’

বাইরের পোশাক ছেড়ে রুহানের ঔষধপত্র চেক করছিল রুদিতা। আচমকা মাম্মাম ডাকে চমকে গেল। নিজের রুমের ভেতর রুহানকে দেখে অবাক হয়ে বলল,

-‘তুমি! কিছু বলবে?’

-‘আমার ক্ষিধে পেয়েছে।’

রুদিতা চমৎকার এক হাসি ফোটাল ঠোঁটে। ঔষধপত্র রেখে চট করে রুহানকে কোলে তুলে নিল। গালে চুমু খেয়ে বলল,

-‘আজ রুহান মাম্মামের হাতে খাবে। চলো, আমরা একসাথে খাই।’

-‘আপু খেয়েছে? আইসক্রিম দিলাম না যে।’

-‘তোমার আপু এখন ঘুমোচ্ছে। সকালে দিও।’

-‘আচ্ছা।’

ডাইনিং টেবিলে বসে মা-ছেলে একসাথে রাতের খাবার খেল। খাওয়া শেষে রুহানকে ঔষধ খাইয়ে, রুহামার রুমে উঁকি দিল রুদিতা। মেয়েটা ঘুমোচ্ছে। প্রতিদিনের মতো পাশে বসে বিড়বিড়িয়ে নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে রুহামা। রাত জেগে পড়ার অভ্যাস তার। এজন্য রোজই নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত বইয়ের ভেতর ডুবে তাকে রুহামা। রুদিতা শব্দহীন পায়ে উমামার শিয়রের কাছে বসল। গালে, কপালে হাত বুলিয়ে চুমু খেল। রুহামাকে বলল,

-‘রাতে ওর বাবাইকে খুঁজবে নিশ্চয়ই।’

-‘অসুবিধা নেই। সামলে নিতে পারব। তুমি রুহানকে নিয়ে ঘুমোও।’

-‘কিছু প্রয়োজন হলে ডাকিস্।’

-‘আচ্ছা, ডাকব।’

রুম ছেড়ে বেরিয়ে শর্মীর মুখোমুখি পড়ল রুদিতা। রুহান মায়ের সঙ্গে সেঁটে গেল একদম। শর্মীকেও সে ভয় পায়। তাই কাছে যায় না। রুদিতাকে হাসিমুখে বের হতে দেখে শর্মী তাকে খুঁচিয়ে বলল,

-‘কী রে, আদিখ্যেতা জমছে ভালো? এত সহজে অন্যের বাচ্চার মা হয়ে গেলি যে! অবশ্য হবে না-ই-বা কেন? উষাদ ছেলেটাও তো সেরকম। কত তাড়াতাড়ি রুহানের বাবা হয়ে গেল। ইফতি তো পারল না। আচ্ছা, তোর ইফতিকে মনে পড়ে না? এত সহজে অন্য একজনকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারলি?’

রুদিতা থমথমে মুখে তাকাল প্রথমে। পরক্ষণেই দাঁত কটমট করে বলল,
-‘ইফতি আমার কেউ না। শুধু আমার বাচ্চার জন্মদাতা। যার সাথে আমার সম্পর্ক নেই, তার জন্য মনে কোনো টানও নেই। হ্যাঁ, একসময় সে আমার স্বামী ছিল। কিন্তু এখন সেটা নয়। আর যেহেতু সে মৃত, তাই তাকে নিয়ে অযথা কথা না বাড়ানোই ভালো। তুমি নিজের কথা ভাবো। নিজের সংসার আর বাচ্চাদের কথা ভাবো। আমার জন্য তোমাকে এত ভাবতে হবে না।’

-‘বাপরে, এত চটে যাচ্ছিস্ কেন? খারাপ কী বললাম?’

-‘খারাপ কিছু বোলোনি, ভালো কিছুও বোঝাওনি। তবে ইঙ্গিতটা খারাপ দিয়েছ।’

-‘দুইদিনে মুখে খই ফুটতে শুরু করেছে।’

-‘হ্যাঁ, ফুটবেই তো। মুখের ভেতর এখন সবসময় আগুন জ্বালিয়ে রাখি। যেন ওই আগুনে তোমাদের পোড়াতে পারি। অসহ্য। যাও তো, মাথা খেও না। ভালো ব্যবহার করি দেখে সবসময় খোঁচানো। এত ধৈর্য্য পাও কোথায় তুমি?’

প্রশ্ন করে আগুন গরম চোখে তাকিয়ে প্রস্তান করল রুদিতা। একছুটে ছেলেকে নিয়ে চলে এলো রুমে। রুহানকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে দরজা আটকে নিজেও একপাশে আধশোয়া হয়ে বসল। বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলল,

-‘ঘুমোও। মাম্মাম পাশে আছি।’

***

রাত এগোটার দিকে ফোনের স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠল। সাউন্ড না থাকায় রুদিতা শুনতে পেল না। রুহানকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে ফোনের দিকে দৃষ্টি ছিল না তার। বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর এক সময় ফোনের কম্পনরত আওয়াজ অনুভব করল সে। হাতটা ফোনের ওপর পড়েছিল বলেই, বুঝতে পারল একাধারে কল বেজে যাচ্ছে। চোখে আঙুল ঢলে ঘুমঘুম ভাবটাকে দূরে সরিয়ে কল রিসিভ করল। সালাম দিয়ে জানতে চাইল,

-‘কখন পৌঁছেছেন?’

-‘অনেকক্ষণ। খাওয়াদাওয়া শেষ করে এইমাত্র বিছানায় এলাম। ঘুমিয়ে পড়েছিলে? রিসিভ করতে এত দেরী হলো যে!’

-‘ফোনের দিকে খেয়াল ছিল না। ওটা ভাইব্রেশন মুডে ছিল।’

-‘বুঝতে পেরেছি। রুহান ঘুমিয়েছে?’

-‘দু’জনেই ঘুমোচ্ছে। আপনাকে টেনশন নিতে হবে না, আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমোন। সকালে এসে ওদের সাথে দেখা করবেন।’

-‘আমি কিন্তু বলেছিলাম, আজ সারারাত আমরা কথা বলব। ভুলে গেছো?’

আঙুল দিয়ে কপাল চুলকে নিল রুদিতা। সত্যি সত্যিই সে ভুলে গিয়েছিল। মনে পড়াতে প্রচণ্ড অস্বস্তি শুরু হলো তার। এভাবে কখনও রাত জেগে কারও সাথে কথা হয়নি। ইফতির তো সময়ই ছিল না তার জন্য। গভীররাত্রে বাড়ি ফিরত। শুরু করত অত্যাচার। মানসিক-শারিরীক সব ধরনের অত্যাচার শেষ করে ভোররাতে সে গভীরঘুমে ঢলে পড়ত। সেই ঘুম ভাঙত পরদিন দুপুরে কিংবা বিকেলে। আর সে, ন’টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই রওনা দিত পরের গোলামী করতে। তার এই বিদ্যা, তার এই যোগ্যতাই তাকে সংসার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ইফতিকে ভুলতে চাইলেও তার দেয়া আঘাতগুলো ভুলতে পারে না রুদিতা। সেসব আঘাত আজও বিছুটি পাতার মতো সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে দেয় মাত্রাতিরিক্ত ভয়াবহতা। নীরবতা দিয়ে যখন নিজেকে আড়াল করতে চেয়েছিল, তখনই ওপাশ থেকে উষাদ বলল,

-‘চুপ করে আছো কেন? জোর খাটিয়ে ফেলছি বেশি?’

-‘নাহ্…।’

-‘তাহলে?’

-‘ভাবছি…।’

-‘কী ভাবছ? পরপুরুষের কথা?’

-‘ছিহ্, না। পরপুরুষ কি-না জানি না, তবে ইফতির কথা মনে হলেই দমবন্ধ লাগে।’

ভীষণ মন খারাপ হলো উষাদের। অনধিকার চর্চা হলো কি-না বুঝল না। তবে এটা বুঝতে পারল, কারও মনে জোর করে প্রবেশ করা যায় না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

-‘মনে করতে যাও কেন?’

-‘চাই না, কিন্তু কীভাবে যেন মনে পড়ে যায়। ভুলতে পারি না।’

রুদিতার কণ্ঠে বিষণ্ণতা টের পেল উষাদ। প্রথম স্বামী, হয়তো প্রথম অনুভূতিও। ভালোবাসাও। ভুলে যাওয়া এত সহজ না। এসব ভেবে সে আগ্রহী হয়ে জানতে চাইল,

-‘ইফতি মানুষ হিসেবে কেমন ছিল?’

-‘ডাক্তারকে বলেছিলাম কিন্তু।’

রুদিতার কণ্ঠস্বরটা ভেঙে আসলো বোধহয়। উষাদ হসপিটালের কথা মনে করে, তার কষ্টটাও অনুভব করতে পেরে বলল,
-‘পুরো কথা বলোনি।’

রুদিতা চুপ হয়ে গেল। কিছু বলল না। উষাদ জানতে চাইল,
-‘কী হয়েছিল রাহা? আমাকে কি বলা যায় না?’

-‘বলে কী হবে?’

-‘হয়তো তোমার কষ্টটা কমিয়ে দিতে পারতাম।’

-‘সবাই কষ্টের কথা শোনে, একটু সহমর্মিতা প্রকাশ করে, হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য কষ্টটা কমিয়ে দিতে পারে, কিন্তু কেউ কষ্টের ভাগ পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারে না।’

-‘চেষ্টা তো করতে পারি। সুযোগ পাব না?’

-‘কী লাভ এতে?’

-‘তুমি আমার স্ত্রী। চন্দ্র-সূর্য, গ্রহতারকা যেমন সত্য, তেমনই সত্য তুমিও। আমাদের সম্পর্কটাও। তোমার অভিভাবক, সুখ-দুঃখের সঙ্গী কিংবা বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে চাইব, তোমার সামনে-পিছনে আসা সবটুকু দুঃখ-কষ্ট মুছে দিতে। আমাদের সম্পর্কটার জন্য তোমার ওপর জোর খাটাব না কোনোদিন। তবে সবসময় চাইব, তুমি হাসিখুশি থাকো। এইজন্য তোমার কষ্টের অধ্যায়টা জানা দরকার আমার। তুমি না বললে, জানতে চাইব না কখনও। তবে তোমাকে কষ্টে দেখলে, নিজেও কষ্ট পাব।’

কেউ তার জন্য কষ্ট পাবে? সত্যিই? তাহলে থাক্। দরকার নেই কাউকে কষ্ট দেয়ার। তার নিজের কষ্ট নিজের কাছেই গোপন থাক্। ওসব জানলে উষাদ হয়তো না চাইলেও কষ্ট পাবে। কিছু সত্য অজানাতেই সুন্দর। এইমুহূর্তে তার নিজের জন্য যত কষ্ট হচ্ছে, তারচে বেশি কষ্ট হচ্ছে উমামা ও উষাদের কথা ভেবে। যেভাবে ওই মেয়েটা নিজেকে প্রকাশ করল! হার্ট অ্যাটাক হয়নি এই ঢের। ভয়কে মনে আগলে নিয়ে বলল,

-‘ওসব বাদ দিন। উমার কথা চিন্তা করুন।’

-‘উমাকে নিয়ে আবার কী চিন্তা?’

কথাটা বলতে চাইছে না রুদিতা। তবুও ভয় থেকে জিজ্ঞেস করল,
-‘আপনার প্রাক্তন স্ত্রী যদি উমাকে নিয়ে যেতে চায়?’

উষাদ দৃঢ়কণ্ঠে বলল,
-‘পারবে না।’

-‘আপনি নিশ্চিত পারবে না?’

-‘হ্যাঁ। ডিভোর্সের সময় ও নিজেই উল্লেখ করেছিল, উমা তার সন্তান নয়। উমার ওপর তার কোনো দায়দাবী থাকবে না।’

রুদিতা মারাত্মকভাবে চমকাল। বিস্মিত স্বরে বলল,
-‘কী বলছেন? এমনটা হয়! কোনো মা কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে?’

-‘সে অনেক কাহিনী! আমারই ভুল জানো। তাকে বিশ্বাস করে আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স সবকিছুতেই তার অধিকার নিশ্চিত করেছিলাম।’

রুদিতা ফের চুপ হয়ে গেল। উষাদ বুঝতে পারল, মেয়েটা নিজের দুঃখের ভাগ কাউকে দিতে চাইছে না। কিছু দুঃখ, যন্ত্রণা কখনওই কারও সাথে ভাগ করা যায় না। একান্তই নিজের মনের গোপন কুঠুরিতে আটকে রেখে বাইরের দিক থেকে নিজেকে শক্ত ও সাহসী প্রমাণ করতে চায়। কেউ স্বেচ্ছায় না বললে, জোর করবে এতটাও সীমালঙ্ঘন করা হবে না তার দ্বারা। এজন্য নিজের ধ্বংস ও দুঃখের গল্প শেয়ার করতে বলল,

❝অনার্স শেষ করে বেশ কয়েকটা জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কোথাও চাকরি-বাকরি হয়নি। শ্যাষম্যাশ দেশের বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে আর্থিক উন্নতিটা দরকার ছিল। সেখানে টানা পাঁচবছর রুজিরোজগার করে নিজেদের একটা বাড়ি তৈরী করে তিন মাসের জন্য দেশে ফিরে আসি। মা বিপাশাকে পছন্দ করে রেখেছিল। দেশে আসার এক সপ্তাহের মধ্যে পবিত্র সম্পর্কে বাঁধা পড়ি আমরা।❞

এইটুকু বলে থেমে গেল উষাদ। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ফোন কানে ঠেকিয়ে বারান্দায় এসে বাইরের অন্ধকার, থমথমে পরিবেশের দিকে দৃষ্টি দিল। বলল,

❝বিয়ের রাতে ও’কে ছোট্ট একটা গিফট দিয়েছিলাম আমি। সেটা ও ছুঁয়ে দেখেনি। বলেছিল, ওর ডায়মন্ড সেট পছন্দ। সেটা যেন কিনে দিই। এরপর দুম করে জানতে চেয়েছিল, ‘এ্যাই তোমার ইনকাম কত? আমি শুনেছি দেড় লাখ টাকা। আমার অনেক স্বপ্ন আছে, জানো। তুমি পূরণ করবে আমার সব স্বপ্ন?’ ঠিক এইরূপ কথায় আমি প্রথমে অবাক হলেও পরে ভাবলাম, মেয়ে মানুষের কত চাওয়া-পাওয়াই তো থাকে নিজের স্বামীকে ঘিরে। হয়তো ওরও আছে। আমি ওকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছিলাম, ‘আজ থেকে তোমার সব দায়িত্ব যেহেতু নিয়েছি, তাই তোমার স্বপ্ন পূরণের সব দায়িত্বও আমি নিব।’ ভীষণ খুশি দেখাচ্ছিল বিপাশাকে। ওর খুশিতে আমিও খুশি ছিলাম।❞

আবারও কিছুক্ষণের জন্য নীরব রইল উষাদ। পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
❝দিনগুলো খুব ভালোই কাটছিল। বিয়ে যেহেতু করেছি, তার সব দায়িত্ব তখন আমার হয়ে গেল। প্রতিদিন তার আবদার থাকত, দামী ড্রেস, মেকাপ, জুতো, কসমেটিকস্ এসবকে ঘিরে। আমিও পূরণ করতাম। সিঙ্গাপুরে ফিরার এক সপ্তাহ আগে ওর নামে আলাদা একটা অ্যাকাউন্ট খুললাম। এরপর বিদেশের মাটিতে পা দিয়ে জীবনের সবচে বড়ো সুখটাকে দু’হাতের নাগালে পাওয়ার খবর জানলাম। বিপাশার প্রেগন্যান্সি আর উমামার আগমন আমার জীবনে সবচে সেরা পাওয়া ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমি বিপাশার মন বুঝতে পারিনি।❞

উষাদের বুকটা ভার হয়ে এলো। তবুও বলতে লাগল,
❝ওই সময়টায় মেয়েদের মুড সুইং হয় বেশি। সেটা আমি জানতাম, বুঝতাম। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করে, ক্লান্ত আমি বাসায় ফিরে ওর সাথে দু’মিনিট কথা বলতে চাইতাম। কিন্তু ও ফোন রিসিভ করত না। বলত, মেজাজ ভালো না। শরীর ভালো না। পরবর্তীতে ফোন দিলে বেশিরভাগ সময় ওর নম্বর ওয়েটিংয়ে পেতাম। জিজ্ঞেস করলে বলত, ওর কাছের বন্ধুবান্ধব। বিশ্বাস করেছিলাম। কার জীবনে বন্ধুবান্ধব নেই বলো? ওসব নিয়ে কি সন্দেহ করা যায়? সময়গুলো এভাবেই কেটে যেতে লাগল। প্রতিমাসে পঞ্চাশ হাজার ওর অ্যাকাউন্টে দিতাম, পঞ্চাশ হাজার মায়ের হাতে দিতাম। বাকি টাকা থেকে অর্ধেক নিজের অ্যাকাউন্টে রাখতাম, অর্ধেক টাকা নিজের হাতখরচের জন্য রেখে দিতাম। এভাবেই কয়েক মাস কেটে গেল অস্থিরতা আর অশান্তির মধ্য দিয়ে।❞

খানিকক্ষণ নীরব থেকে গভীর করে শ্বাস টানল উষাদ। বলল,
❝উমা যখন জন্ম নিল, সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল ও। বাচ্চাটাকে ছুঁয়ে দেখেনি। কোলে নেয়নি। এমনকি, ওর মুখে রিযিকটুকুও তুলে দেয়নি। পাষাণের মতো ব্যবহার করেছিল। এই নিয়ে ঝামেলা শুরু হলো। সিদ্ধান্ত নিলাম, সবকিছু ছেড়ে একেবারে দেশে ফিরব। কী হচ্ছে এসব, কেন হচ্ছে, সবটা জানব। এক সপ্তাহের মাথায় দেশে ফিরলাম আমি। আমাকে দেখে বিপাশা বলল, ‘এইতো বাচ্চার দায়িত্বশীল পিতা চলে এসেছে। সামলাও তোমার বাচ্চাকে। মুক্তি দাও আমাকে। আমি যাচ্ছি।’ এইটুকু বলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাড়ির সীমানা ত্যাগ করল। আমি তো জাস্ট হতভম্ব হয়ে গেলাম ওর আচরণে। বাবা সহ্য করতে পারলেন না। স্ট্রোক করে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন। এর এক সপ্তাহ পর ডিভোর্সের আলোচনা উঠল। জানতে পারলাম, ওর একটা রিলেশন ছিল। বিয়ের পরও সেটা কান্টিনিউ রেখেছে। আমাকে শুধু টাকার জন্য ব্যবহার করেছে। বাধ্য হয়ে উমাকে পৃথিবীতে আসতে দিয়েছে। যেন কয়েকটা মাসে অনেক টাকা জমাতে পারে। নয়তো বাচ্চাটাকে গর্ভে থাকা অবস্থাতেই মেরে ফেলত। ডিভোর্সের পর ব্যাংকের সব টাকা-পয়সা নিয়ে ওর প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ডের সাথেই সংসার শুরু করল।❞

এমন আশ্চর্যজনক ঘটনা শোনে স্তব্ধ হয়ে গেল রুদিতা। আপনা হতেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল পানি। বলা শেষ হলে, দু’পাশের দুটো মানুষই নীরব হয়ে গেল। অনেকক্ষণ কেউ কোনো কথা বলল না। উষাদের মনের ভেতর পড়তে না পারার এক অদ্ভুত শূণ্যতা এসে ভর করল রুদিতার সর্বাঙ্গে। ফোন হাতে নিয়ে রুম ছেড়ে বের হলো। রুহামার রুমে প্রবেশ করে দেখল, বেচারি রাত জেগে পড়ছে। সে আলগোছে উমামাকে নিজের কোলে তুলে নিল। পড়া থামিয়ে বোনের এই কাণ্ড দেখল রুহামা। বলল,

-‘তুমি এখনও ঘুমোওনি? ও’কে নিয়ে যাচ্ছ যে! কোনো সমস্যা হয়েছে আপু?’

-‘আরেহ্ না। ঘাবড়াস্ না। ও আমার কাছে ঘুমোক। তুই আলো বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়।’

রুহামা চিন্তিত ভাবভঙ্গিতে বলল,
-‘কী হয়েছে বলো তো?’

-‘কিছু হয়নি। তুই ঘুমা। রুহানকে কাছে নিয়ে ঘুমোব আর উমাকে দূরে রাখব? শান্তি পাচ্ছিলাম না। তাই ভাবলাম, মেয়েটাকে আমার কাছে নিয়ে যাই। আমরা তিনজনে একসাথে ঘুমোব।’

রুহামা হাসল। উমামাকে নিয়ে পূণরায় নিজের রুমে প্রবেশ করল রুদিতা। মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিল। দু’জনকে দু’পাশে রেখে মাঝখানে শুয়ে পড়ল। উমামার মাথায় হাত বুলিয়ে গালে-কপালে বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ওপাশের অপেক্ষমাণ ব্যক্তিকে বলল,

-‘মেয়ে মা’কে কাছে পেয়েছে তো। আর কোনো ভয় নেই। ঘুমিয়ে পড়ুন আপনি।’

উষাদ এতক্ষণ সব শুনছিল। দুই বোনের কথা শোনেই বুঝতে পেরেছে, রুদিতা মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে। এখন তার মুখ থেকে এই কথা শোনে মনের সবটুকু বিষণ্ণতাকে দূর করে নির্ভার, প্রাণোচ্ছল হাসিতে ঠোঁট ভরিয়ে তুলল সে। বলল,

-‘তোমার কাছে শুধু একটাই চাওয়া – যদি কোনোদিন আমি না থাকি, বাচ্চাদের দেখে রেখো। আগলে রেখো। কখনও বাবা-মায়ের আদর-ভালোবাসার অভাব বুঝতে দিও না।’

***

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ