সুতোয় বাঁধা জীবন পর্ব-০৯

0
680

#সুতোয়_বাঁধা_জীবন
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – নয়

ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নির্দিষ্ট সিরিয়ালের অপেক্ষায় আছে ওরা তিনজন। উষাদের কোলে রুহান। প্রথমে সে রুদিতার সাথে আসতে চাইছিল না। পরবর্তীতে উষাদকে দেখে রাজি হয়েছে। এরপর থেকে সে তার বাবাইয়ের কোলেই আছে। এখনও সিরিয়াল আসেনি দেখে অপেক্ষা করে করে সময় কাটাচ্ছে সবাই। আরও অসংখ্য রোগীদের লাইন পড়েছে। সবাই-ই অধৈর্য্য, অস্থির। রুহানও এক জায়গায় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হলো। একাধারে নড়াচড়া করতে লাগল। উষাদ তার বিরক্তি বুঝতে পেরে বলল,

-‘কী হয়েছে? কিছু লাগবে?’

-‘আমার ভালো লাগছে না এখানে। চলো না, ঘুরতে যাই।’

সম্পর্ক তুমিতে আসলেও রুহান এখনও উষাদকে বাবাই বলে সম্বোধন করেনি। এটা নিয়ে অনেক ভেবেছে উষাদ, কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পায়নি। জোরও করেনি। তবে রুহান যে তার সঙ্গ খুব উপভোগ করে, তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, এইটুকুই আপাতত স্বস্তির। ঘুরতে যাওয়ার বায়না শোনে বলল,

-‘ঘুরব পরে, আগে ডাক্তারের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ শেষ হোক, তারপর।’

-‘কতক্ষণ লাগবে? পায়ে ব্যথা করে তো।’

-‘বেশিক্ষণ লাগবে না।’

আরও দু’জন রোগীর পরই রুহানের ডাক পড়ল। রুহান কোনোভাবেই রুদিতার কোলে গেল না। বাধ্য হয়ে উষাদ তাকে কোলে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। সাইকিয়াট্রিস্ট একজন প্রৌঢ়া মহিলা। তিনি উষাদকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-‘রোগী কে? এইপাশে এনে বসান।’

হাতের ডানপাশে রুহানকে বসাল উষাদ। ডাক্তারের পাশাপাশি, কাছাকাছি। ডা. স্বর্ণালি স্টেথোস্কোপ হাতে নিয়ে তার বুকে-পিঠে চাপ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন, চোখমুখ ভালোমতো দেখে বললেন,

-‘কী সমস্যা ওর?’

-‘এ্যাকচুয়ালি, মায়ের সাথে ওর বন্ডিংটা খুবই খারাপ। কাছে যেতে চায় না, কোলে উঠে না। এক কথায় মায়ের সাথে ওর দূরত্ব এতটাই যে, চোখে লাগে এগুলো। অন্যান্য বাচ্চারা যেভাবে মা’কে দেখলে শান্ত হয়ে যায়, ও তেমন নয়। ও মায়ের থেকে দূরে থাকতেই ভালোবাসে।’

ডা. স্বর্ণালি একটু চমকে গেলেন উষাদের কথায়। রুদিতা পাশেই ছিল। তিনি তার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-‘আপনি-ই কি ওর মা?’

-‘জি, আমি-ই।’

-‘কবে থেকে দূরত্ব খেয়াল করছেন?’

রুদিতা একটু আমতা-আমতা স্বরে বলল,
-‘ও কখনওই আমার কাছে ছিল না। ওর বাবার কাছে ছিল।’

-‘আপনার কাছে কতদিন ধরে আছে?’

-‘ছ’মাস হবে।

-‘ওই সময় থেকেই কি দূরে?’

-‘হ্যাঁ। কাছে টানতে গেলে কান্নাকাটি করে। চিৎকার-চেঁচামেচি করে। জোর করতেও পারি না। অথচ বাসার বাকিদের সাথে ওর আচরণ স্বাভাবিক। শুধু আমার সাথেই উদ্ভট।’

-‘কেন এরকম হয় বোঝার চেষ্টা করেননি?’

-‘আমি তো ভেবেছি, হয়তো বাবার কাছে থাকাতে এরকম করছে। আস্তে-ধীরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এতগুলো মাস নোটিশ করলাম, তবুও কোনো পরিবর্তন দেখলাম না। এখন মনে হচ্ছে এটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যাচ্ছে।’

ডা. স্বর্ণালি চেয়ার ছেড়ে রুহানের পাশে এসে তাকে কোলে নিলেন। বেডে বসিয়ে দিয়ে বললেন,

-‘আমি তোমার সাথে একটু গল্প করতে চাই, করবে?’

-‘হ্যাঁ।’

সহজসরল স্বীকারোক্তি শোনে মুচকি হাসলেন ডা.। বললেন,
-‘তোমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে?’

-‘পিকলু ভাইয়া, মৌমি আপু আর উমা আপু।’

-‘তিনজন? দারুণ তো।’

-‘আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে, জানতে চাও?’

-‘হ্যাঁ।’

-‘আমার মা এবং বাবা। এই দু’জনে।’

রুহান ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থেকে বলল,
-‘আপনার বাবা-মা কি খুব ভালো?’

-‘হ্যাঁ। অনেক ভালো। কেন তোমার বাবা-মা ভালো না?’

রুহান একদৃষ্টিতে দু’জনের দিকে তাকাল। বলল,
-‘আমার মাম্মাম ভালো না।’

-‘ওমা। সেকী কথা! বাবা-মায়ের চেয়ে আপন তো আর কেউ হয় না। বাবা-মা হচ্ছে খুব ভালো বন্ধু ও ভরসায় জায়গা। বুঝেছ?’

রুহান উত্তর দিল না। ডা. স্বর্ণালি রুহানকে বসিয়ে রেখে তার হাতে কিছু খেলনা দিয়ে বললেন,
-‘তুমি খেলতে পছন্দ করো?’

-‘হ্যাঁ।’

-‘তাহলে এখানে একটু খেল। দেয়ালে দেখো, অনেক অনেক পশুপাখির ছবি আছে। এইপাশে অনেক টেডিবিয়ারও আছে। তোমার যেটা পছন্দ তুমি সেটা দিয়ে খেল।’

চেম্বারটা বড়ো হওয়ার কারণে বাচ্চাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস এখানে রেখে দিয়েছেন ডাক্তার। সেগুলো দিয়ে খেলায় মনোযোগ দিল রুহান। যতটুকু প্রশ্ন করেছেন, যথেষ্ট। এরবেশি প্রশ্ন করা উচিত হবে না। যদি অতীত স্মৃতি থেকে থাকে সেসব মনে পড়বে বাচ্চাটার। যার কারণে ভয়ভীতি তাকে আঁকড়ে ধরবে পূণরায়। এজন্য পিছনের তিতকুটে স্মৃতি ভুলিয়ে দিতে হবে। তিনি নিজের চেয়ারে এসে বসলেন। রুদিতার কাছে জানতে চাইলেন,

-‘আপনারা কি ওর সাথে খারাপ করেন?’

-‘না না। আমরা ওর যথেষ্ট খেয়াল রাখছি ‘

-‘পিছনে কোনো খারাপ স্মৃতি আছে?’

-‘জি, আছে।’

-‘অতীত হিস্ট্রিটা একটু পরিষ্কার করে বলুন। কবে থেকে এসব লক্ষ্য করছেন। কিচ্ছু বাদ রাখবেন না।’

-‘ওর জন্মের পর থেকেই, দূরত্ব আমাদের। আমার প্রাক্তন স্বামী কোনো চাকরি করত না। সংসারের খরচ চালাতে আমাকেই চাকরি করতে হতো। প্রেগন্যান্ট অবস্থায়ও আমি চাকরি করেছি। আমি বাইরে থাকলে, ওই সময়টা রুহান ওর দাদীর কাছে থাকত। আর ইফতি ডুবে থাকত আড্ডাবাজিতে। চাকরি করতে না চাইলে মারধর করত। এভাবেই চলছিল দিন। অফিস থেকে ফিরে আমি রুহানকে কাছে টানতে চাইতাম, কিন্তু ইফতি ও আমার শাশুড়ি ওকে আমার কোলে না দিয়ে, অন্য রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিতেন। আমি রাতের পর রাত দাঁড়িয়ে থাকতাম দরজার সামনে। ও যখন কাঁদত, আমি ছটফট করতাম। একবার ওকে আমার কোলে দেয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করতাম। অথচ ওই পাষাণ হৃদয়ের মানুষ বাচ্চা দেয়া তো দূর, দু’জনে মিলে যা অত্যাচার শুরু করল আমার ওপর। চড়, লাতি কিছুই বাদ রইল না। তাদের একটাই কথা, চাকরি করো। টাকা রোজগার করো। সংসার চালাও।’

উষাদ বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে রইল রুদিতার দিকে। বাচ্চার জন্য এই মেয়েটা আর কতকিছু সহ্য করেছে। ডাক্তার নিজেও হতবাক এইসব কথা শোনে। রুদিতা আবারও বলল,

-‘রুহানের যখন দু’বছর বয়স, তখন ইফতির সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যায়। অত্যাচার সহ্য হচ্ছিল না দেখেই ডিভোর্স নিতে বাধ্য হই। ভেবেছিলাম এতে রুহানকে কাছে পাব। কিন্তু হলো উলটো। রুহানকে জোর করে আটকে রাখে ওরা, আমাকে তাড়িয়ে দেয়। যেহেতু বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল, তাই ওই বাড়িতে থাকার অধিকার আমার ছিল না। তবুও রুহানের জন্য ওই এলাকাতে যাওয়া-আসা করতাম। নিজের বাচ্চা। পেটে ধরেছি ও’কে। কীভাবে ওই অমানুষটার হাতে ছেড়ে দিই? অনেক চেষ্টা করেছি, রুহানকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু পারিনি। মাম//লা করে আনতে চাইলে, আমাকেই মিথ্যে মাম//লায় ফাঁ//সিয়ে দেয়া হয়। শ্বশুর মারা গেলেন, ইফতির সাথে দ্ব//ন্দ্ব করতে গিয়ে। ইফতি নিজেই নে//শার ঘোরে মাতলামি করে নিজের বাবাকে মে//রেছিল। পুলিশ কে//ইস হলে, আমার শাশুড়ি নিজের সন্তানকে বাঁচিয়ে আমাকেই ফাঁ//সিয়ে দেন। মামলার আ//সামী হয়েছি ঠিকই তবে খুব বেশিদিন জে//লে থাকতে হয়নি। আমার মা, বোন আর পাড়ার কয়েকজন সাক্ষীর জোরে বেঁচে গিয়েছি। এরপর থেকে ইফতি-ই ওকে শিখিয়েছে, আমি খারাপ। আমি যখন ও’কে ধরতে যেতাম বা আনতে যেতাম, ইফতি তখন রুহানকে বুঝাত, ‘ওই মহিলা খারাপ, ওর কাছে যাবে না। ও তোমার কেউ হয় না।’ ইফতির কথাই রুহান শুনত। মানতও। এজন্য আমার কাছে আসত না। মা ডাকত না। দেখা করতে চাইলে, লুকিয়ে পড়ত। নয়তো ওরা কেউ ও’কে জোর করে আটকে রেখে দিত।’

-‘কতদিন আগের ঘটনা এসব?’

-‘খুব বেশিদিন না। আট থেকে ন’মাস হবে।’

ডা. স্বর্ণালি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেলেন এইটুকু কথা শোনে। রুহানের মানসিক অবস্থা ভালো করে আয়ত্তে আনতে পারলেন। জানতে চাইলেন,

-‘ও’কে নিয়ে আসলেন কীভাবে?’

-‘ইফতির মৃত্যুর পর, একপ্রকার জোর করেই নিয়ে এসেছি। পালটা মা//মলা করতে চেয়েছিলাম আমিও। তখন মা//মলা ও মান-সম্মানের ভয়ে আমার শাশুড়ি মা আর কোনো বাধা তৈরী করতে পারেননি। আমার নামে যে কেই//স ছিল, সেটাও উইথড্র করেন।’

-‘উনি মা//রা গেছেন কীভাবে?’

লজ্জাজনক ওই দুর্ঘটনার কথা এড়িয়ে গেল রুদিতা। শুধু বলল,
-‘অ্যাক্সিডেন্টে।’

-‘দেখুন, পারিবারিক ঝামেলা বাচ্চাদের উপর প্রভাব ফেলে বেশি। বিশেষ করে বাবা-মায়ের নেগেটিভ আচরণ, দূরত্ব, কার্যকলাপ, দ্ব//ন্দ্ব, ঝগড়া, এগুলো বাচ্চারা নোটিশ করে থাকে। ওইটুকু বয়সে তারা এসব মেনে নিতে পারে না। যেহেতু তারা বয়সে ছোটো এবং মস্তিষ্কও দুর্বল, তাই তাতে আঘাত লাগে বেশি। ফলে, বাবা-মায়ের ওপর একপ্রকার ভীতি তৈরী হয়। ওরা ধরেই নেয়, বাবা-মা ওদের মারবে, বকবে, শাসাবে। এজন্য কাছে যেতে চায় না। রুহানের ক্ষেত্রেও সেরকমটাই ঘটেছে। মেন্টালি ওকে টর্চার করা হয়েছে। চাকরিজীবী মা হওয়ার সুবাদে আপনার উচিত ছিল, বাচ্চাকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া। তার ভয় দূর করে দেয়া। তাকে সাহস দেয়া। তার সাথে বন্ধুত্বপরায়ণ আচরণ করা। তাকে সাপোর্ট করা। কিন্তু আপনি সেটা করেননি।’

-‘আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু পরিস্থিতি আমার হাতে ছিল না।’

-‘সেটাই।’

-‘এখন কী করব, ম্যাম?’

ডা. স্বর্ণালি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
-‘ওর ভয়টা দূর করতে হবে। ওর সামনে পজেটিভ থাকতে হবে। ঝগড়াঝাটি, দাঙ্গাহাঙ্গামা এগুলো করা যাবে না। ও’কে বেশি বেশি সময় দিবেন। হাসি-আনন্দে রাখবেন। ওর কাছাকাছি থাকবেন। খুব বেশি দূরে সরাবেন না। যদি দূরে সরে যেতে চায়, কাছে টেনে বুঝাবেন। আপনি যদি বাইরে যান, বলে যাবেন যে, আপনি আবার ফিরছেন। যখন ফিরবেন, ওর সাথে সময় কাটাবেন। বার বার অতীত স্মৃতি মনে করাতে যাবেন না। এতে ওর ভয় আরও বাড়বে। যেকোনো কাজে তাকে সাহস দিবেন, উৎসাহিত করবেন, সাপোর্ট করবেন।’

এরপর তিনি আরও কিছু সাজেশন দিলেন। ঔষধ লিখে দিলেন। বললেন,
-‘পনেরো দিন পর এসে দেখা করবেন। কমবেশি কোনো পরিবর্তন আসে কি-না নোটিশ করবেন। আই থিংক, এটা এখনও সাধারণ পর্যায়ে আছে। আপনারা ভালো করে ওর যত্ন নিন, ঠিক হয়ে যাবে ইনশা’আল্লাহ।’

-‘থ্যাংক য়্যু, ম্যাম।’

ডা. স্বর্ণালি এবার রুহানকে বলল,
-‘তোমার মা অনেক ভালো রুহান। মায়ের থেকে দূরে থেকো না। একটা মা, সন্তানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে। তুমি কি সেটা জানো?’

-‘আমার মাম্মাম ভালো?’

-‘খুব ভালো। যদি ভালো না হতো, তুমি অসুস্থ জানাতে তোমাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলত নিশ্চয়ই। কিন্তু মা কী করেছে? তোমাকে সুস্থ জীবন দিতে আমার কাছে নিয়ে এসেছে। মা যদি তোমার ক্ষতি চাইত, তবে কি এখানে নিয়ে আসত?’

রুহান কিছুটা বুঝল বোধহয়। জানতে চাইল,
-‘তাহলে বাবা কেন বলত, মাম্মাম খারাপ? কেন মাম্মামকে পুলিশ ধরে নিবে?’

ডা. স্বর্ণালি বাচ্চাটাকে আদর করে বললেন,
-‘তুমি ওসব ভুলে যাও। যারা ভালো মানুষ, তাদের সাথে বরাবরই অন্যায় হয়ে আসছে। তোমার মা-ও সেসবের শি//কার হয়েছেন। পুলিশ কিন্তু সবসময় খারাপ মানুষকেই শাস্তি দেয় না, ভালো মানুষকেও শাস্তি দেয়। কারণ তখন তারা ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য দেখতে পায় না। যখন দেখে, তাদেরও অনুশোচনা হয়। আচ্ছা, তুমি আমাকে একটা কথা বলো তো।’

রুহান জিজ্ঞাসু চোখে তাকালে তিনি বললেন,
-‘তুমি মায়ের সঙ্গ উপভোগ করো না?’

-‘আমি খুব ভয় পাই মাম্মামকে।’

-‘ভয় পাবে কেন? তুমি হচ্ছ মায়ের খুশির কারণ। এখন তুমি যদি হাসি-খুশি না থাকো, যদি মনমরা হয়ে থাকো, তাহলে চলবে? মাম্মাম চায়, তুমি তার কাছে থাকো, সবসময়। তুমি থাকতে চাও না?’

-‘চাই।’

-‘তাহলে মিছেমিছি ভয় কেন পাবে? ভয়ের কোনো কারণ নেই। মাম্মাম হচ্ছে তোমার ভরসা। তোমার খুব ভালো বন্ধু। যখন যা কিছুর প্রয়োজন হবে, মাম্মামকে জানাবে। দেখবে, মাম্মাম তোমার জন্য দু’হাতভরা আনন্দ সাজিয়ে রেখেছে।’

***

ডাক্তার দেখানো শেষে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বেরোবার সময় পিছন থেকে ‘উষাদ দাঁড়াও,’ এরকম একটা আওয়াজ শোনে থেমে গেল উষাদ ও রুদিতা দু’জনেই। ঘাড় ফিরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখল, খুব চেনা অথচ অনেক দূরের একজন নারী। তাকে দাঁড়াতে নারীটি এগিয়ে আসলো সামনে। অপরাধীর ন্যায় নতমস্তকে দাঁড়িয়ে রইল,

-‘তুমি বোধহয় আমাকে অভিশাপ দিয়েছ উষাদ! তোমার অভিশাপটা ফিরিয়ে নাও, প্লিজ। আমি অনেক চেষ্টা করছি মা হওয়ার, কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হচ্ছে না।’

এমন কথা শোনে ঠোঁট উলটে হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করল উষাদ। বলল,
-‘স্যরি। আমি কাউকে কোনো অভিশাপ দেইনি।’

-‘তবে কেন আমার জীবনটা এমন হয়ে গেল, বলবে?’

‘পাপ করলে পাপের সাজা ভোগ করতে হয়’ – শত চেয়েও এইটুকু বলতে পারল না উষাদ। শুধু বলল,

-‘রিভেঞ্জ অব নেচার, বুঝেন? এটাকেই বলে। সাত দিনের একটা বাচ্চাকে যখন মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে, টাকা আর প্রাক্তন প্রেমিককে মর্যাদা দিতে পবিত্র সম্পর্কটাকে অস্বীকার করে চলে গিয়েছিলেন, এসব হয়তো তারই ফল।’

বিপাশা ঠোঁট কামড়ে কেঁদে ফেলল। পাশে তাঁর স্বামী দাঁড়িয়েছিল। তাকে ভরসা দিতে কাঁধে হাত রাখছিল বেচারা। বিপাশা তবুও শান্ত হলো না, অশ্রুসিক্ত চোখে বলল,

-‘আমার মেয়েটা কেমন আছে উষাদ?’

-‘আপনার আবার মেয়ে এলো কোথা থেকে? আকাশ থেকে টপকাল বুঝি? মা শব্দটার ভাবার্থ বুঝেন আপনি? যদি বুঝতেন এত পাপ করতেন না!’

বিপাশা খেয়াল করল, উষাদ তাকে আপনি-আজ্ঞে সম্বোধন করছে। অথচ সম্পর্কটা তুমিতে ছিল। ছেড়ে চলে গিয়েছিল বলে, কত দূরের হয়ে গেছে আজ। সে ভাঙা গলায় বলল,

-‘পাপের মাশুল এখন দিচ্ছি উষাদ। ডাক্তার জানিয়েছেন, আমি আর মা হতে পারব না। তোমার কোলের এই ছেলেটা কে? ভীষণ কিউট দেখতে!’

দু’হাত বাড়িয়ে রুহানকে একটু ছুঁয়ে দিতে চাইছিল বিপাশা। উষাদ চট করে দূরে সরে গেল। মুহূর্তেই রুহানকে ধরিয়ে দিল, রুদিতার কোলে। রুদিতা নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছে। কিছু বলতে পারছে না। উষাদ তেজী স্বরে বলল,

-‘ও আমার সন্তান। একদম ছোঁবেন না ও’কে। আপনার মতো নোংরা মনের মানুষের কোনো অধিকার নেই, নিষ্পাপ বাচ্চাদের ছোঁয়ার।’

বিপাশা মনে ব্যথা পেল। ভালোমতো রুদিতা ও রুহানকে দেখল। খুব রাগ হলো তার। কষ্ট হলো। রেগেমেগে বলল,
-‘এই মেয়ে, তুমি একটু দূরে যাও তো। উষাদের সাথে আমার জরুরী কথা আছে।’

বুকের কাছে রুহানকে আগলে ধরল রুদিতা। উষাদ যে বিপাশার সামনে খুবই বিরক্ত ও বিব্রতবোধ করছে সেটা তার চেহারা দেখেই বুঝে নিল। হাসিমুখে বলল,

-‘দুঃখিত আপু। আমার স্বামীকে আমি এভাবে কোনো পরনারীর সামনে ছেড়ে যেতে পারব না।’

-‘কী বললে তুমি?’

-‘যা বললাম, শুনতে পেয়েছেন। আবার বলতে ইচ্ছে করছে না। এক কথা দু’বার বলতে ভালো লাগে না আমার।’

বিপাশা এবার ভয়ানক পর্যায়ের রাগ ফুটিয়ে তুলল চেহারায়। বলল,
-‘উষাদ, তুমি মুভ-অন করেছ?’

-‘আপনি কী ভেবেছেন? আপনি চলে গেলে আমি হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদব? জীবন এগিয়ে নিতে পারব না? ভুল ভেবেছেন। আমি কোনো ভুল মানুষের জন্য নিজের জীবনটাকে তুচ্ছ ভাবতে পারিনি কোনোদিন। পারবও না।’

-‘বিয়ে-বাচ্চা? তুমি আমার মেয়েকে সৎ মা এনে দিয়েছ? তুমি কি জানো না, সৎ মা কখনও আপন মা হতে পারে না?’

-‘খবরদার, আমার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবেন না। এই, কে আপনি? এত কৈফিয়ত আমি আপনাকে কেন দেব?’

-‘তুমি এত পালটে গিয়েছ, উষাদ! আমার বাচ্চাটা…।’

-‘আবার ওই মুখ দিয়ে আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চা করলে আপনার মুখ আমি টেনে ছিঁ//ড়ে ফেলব। উমা শুধু আমার মেয়ে। আমাদের মেয়ে। আমার ও রাহার সন্তান। উমার জীবনে কোনো বিশ্বাসঘাতকের ছায়া নেই। পড়তে দেবও না আমি।’

নিজের এই হারটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না বিপাশা। তার সংসার, তার সন্তান এখন অন্য একজনের দখলে। আর সে বিশ্বাসঘাতক। জ্বলন্ত চোখ দিয়ে সবাইকে গিলে ফেলতে চাইল সে। পারল না। তার আগেই উষাদ খুব শক্ত করে রুদিতার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

-‘এসো, দেরী হয়ে যাচ্ছে। রুহানের ঔষধ কিনে ফিরতে হবে।’

রুদিতা ঘাড় ফিরিয়ে পিছনে তাকিয়ে আবারও দুটো হাতের দিকে তাকাল। জীবন তাকে কোনোদিন সুখী হতে দিবে না বোধহয়। ভয়ে শরীর হীম হয়ে যেতে লাগল তার। তড়িঘড়ি পা ফেলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বাইরে চলে আসলো দু’জনে। হাতের মুঠোয় আগলে রাখা রুদিতার হাতের দিকে তাকিয়ে আঙুলের ভাঁজে আঙুল আটকে ভরসা দিয়ে বলল,

-‘এ্যাই, তুমি ভয় পাচ্ছ কেন? প্লিজ, ভয় পেও না। ও শুধু অতীত। আর কিচ্ছু না। আর কেউ আসবে না আমাদের মাঝখানে। বিশ্বাস করো।’

***

প্রয়োজনীয় ঔষধ কেনা শেষে একটা উবার ডেকে নিল উষাদ। এখান থেকে বাড়িটা অনেক দূরে। যেতে প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট লাগবে। এরপর আবার উমামাকে নিয়ে ফিরতে হবে তাকে। রাত অলরেডি নয়টার উপরে বেজে গেছে। আর দেরী করা চলে না। সে মা ও ছেলেকে গাড়িতে বসিয়ে বলল,

-‘রুহান, কী খাবে বলো? বাবাই কিনে দিই। আজ যেহেতু রাত বেশি হয়ে গেছে, তাই কোনো ঘোরাঘুরি হবে না। তবে তোমাদের এ্যাক্সামের পর থেকে টানা তিনদিন আমরা ঘুরব, ফিরব, মজা করব। হবে না? এখন বলো, পছন্দের খাবার কী? কী খেতে চাও?’

বিপাশার আচরণ ও কথাবার্তা ধরণ দেখে রুদিতার বুকের কাছে সেঁটে গিয়েছিল রুহান। কখনও এভাবে মা’কে জড়িয়ে ধরে না সে। এত কাছে আসে না। অথচ আজ, সামান্য ভয় তাকে মায়ের অনেক কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল। এখনও সে রুদিতার বুকের সাথে লেপটে আছে। ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছে না। রুদিতা ছেলের মাথায় চুমু খেল। বলল,

-‘ভয় পায় না, সোনা। মাম্মাম আছি তো।’

রুহান খানিকটা নড়েচড়ে উঠল। তার চুপচাপ আচরণ দেখে উষাদ বলল,

-‘কী হলো? কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না? মন খারাপ?’

রুহান মাথা নেড়ে না বলল। উষাদ বলল,
-‘তবে? কী খেতে চাও বলছ না কেন?’

-‘কিছু খাব না।’

রুহানের স্বরে স্পষ্ট অভিমান মিশানো ছিল। উষাদ তা টের পেয়ে হেসে ফেলল। হাত বাড়িয়ে বলল,

-‘এসো। আজ আমরা আইসক্রিম খাব। কারও নিষেধাজ্ঞা শুনব না। কেউ বকলে পাত্তাও দেব না। আমাদের কি পছন্দ-অপছন্দ থাকতে নেই, না-কি? কেউ রাগ দেখালে আমরা ভয়ে চুপসে যাব কেন? জলদি এসো। কাউকে ভয় পেতে হবে না।’

রুহান একবার রুদিতার দিকে তাকাল। কাচুমাচু ভাবভঙ্গিতে বলল,
-‘মাম্মাম বকবে তো।’

-‘বকলে আমিও তোমার মাম্মামকে বকে দেব। কাটাকাটি হয়ে যাবে।’

-‘তুমি বকতে পারবে?’

-‘কেন পারব না? আমি কি বকা দিতে জানি না না-কি? খুব জানি। ট্রেলার দেখাব?’

রুহান কিছু বলতে পারল না। আইসক্রিমের লোভে উষাদের কোলে চলে এলো। তার শার্টের বোতাম ও কলার ধরে খেলতে শুরু করল। রুদিতা শুধু চোখ পাকিয়ে তাকাল উষাদের দিকে। উষাদ ভ্রু নাড়িয়ে বলল,

-‘ওভাবে তাকাচ্ছ কেন? তুমিও আইসক্রিম খাবে? কোন ফ্লেভারটা পছন্দ বোলো? নিয়ে আসব।’

রুদিতা চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-‘আমি আপনার মাথা খাব। দিবেন?’

-‘ছিঃ ছিঃ। মানুষের মাথা আবার মানুষ খায় না-কি?’

-‘একশোবার খায়। আর কেউ না খেলেও আমি খাই। আসেন, দেখাই। কীভাবে মানুষের মাথা খেতে হয়!’

-‘ওসব তো রাক্ষস-খোক্কসদের কাজ! তুমি কি ওই দলে নাম লিখিয়েছ? যাহ্ বাবা, টেরই তো পেলাম না। কবে হলো এসব?’

-‘আপনি একটা বদ লোক। এরকম একটা সিচুয়েশনে কীভাবে হাসতে পারেন? মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার।’

রুদিতা এই ভয়মিশ্রিত কণ্ঠস্বরই বুঝিয়ে দিল, সম্পর্ক নিয়ে একটু একটু করে পজেটিভ ভাবনাকে মনে ঠাঁই দিচ্ছে মেয়েটা। আনন্দে মনের মণিকোঠায় লুকিয়ে থাকা হৃৎপিণ্ডটা গতি বাড়িয়ে দিল। ধুকপুক ধুকপুক আওয়াজ তুলে অনুভূতির সীমা-পরিসীমা বুঝিয়ে দিল। উষাদ নিঃশব্দে হেসে বলল,

-‘আইসক্রিম খেলে মেজাজ ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।’

-‘আইসক্রিমের মধ্যে পেয়েছেন কী আপনি? একগাদা বরফ খেয়ে কী শান্তি? সামান্য একটু ফ্লেভার মিশিয়ে দিলেই ওটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হয়ে যায় না।’

-‘মহা মুশকিল তো। তোমার সমস্যা, তুমি খেও না। আমরা বাপ-বেটা খাব। একদম মিস করব না। মেজাজ ঠাণ্ডা রাখতে, সতেজ ও ফুরফুরে রাখতে, আইসক্রিম চমৎকার পন্থা হিসেবে কাজ করবে। তুমি থাকো তোমার গরম মেজাজ নিয়ে। আমরা ওতে বাঁধা হব না।’

রুদিতা রীতিমতো হতবাক চোখে উষাদের কাণ্ড দেখল। তাকে বসিয়ে বাবা-ছেলে মিলে একটা ফুডকর্ণারে ঢুকে আইসক্রিম কেনায় মনোযোগ দিল। উষাদ মা ও মেয়ের জন্য স্ট্রবেরি ফ্লেভারের দুটো এ্যাক্সট্রা আইসক্রিম নিল। সেগুলোকে আলাদা প্যাকিং করতে বলে আরও কিছু স্ন্যাকস্ কিনে তারপর বের হলো। রুহান বেশ উৎফুল্ল মেজাজে আইসক্রিম খাচ্ছে। তার ঠোঁটের কোণে ছড়িয়ে পড়েছে হাসি। সেই হাসিটা মন ছুঁয়ে গেল রুদিতার। কাছে আসতেই ছেলেকে বলল,

-‘তুমি কি একা একা খাচ্ছ? বোনের জন্য আইসক্রিম নিবে না?’

-‘নিয়েছি তো। তোমার জন্যও নিয়েছি। বাবাইয়ের হাতে আছে, দেখো।’

চোখ ছোটো করে ছেলে ও তার বাবাইকে দেখল রুদিতা। রুহান এত সহজেই বাবাই ডাকছে। উষাদ বোধহয় চমকেছে এতে। তার চোখেমুখে বিস্ময় দেখা যাচ্ছে। সব বিস্ময়কে পাশ কাটিয়ে বলল,

-‘কী বললে তুমি?’

রুহান ঠোঁট উল্টাল। বলেছে তো অনেক কথা। এরমধ্যে কোনটা জানতে চাইছে তার বাবাই? সে বুঝল না পুরো কথা। বলল,

-‘তুমি আইসক্রিম খাচ্ছ না কেন, বাবাই?’

-‘আমার তো আইসক্রিম পছন্দ না।’

-‘একটু আগে না বললে, আমরা দু’জনে আইসক্রিম খাব।’

-‘ওটা তো এমনি-ই বলেছি। রুহান আইসক্রিম খেতে চাইছিল, এজন্য।’

-‘মাম্মামও আইসক্রিম পছন্দ করে না। তুমি যে কিনলে! মাম্মাম না খেলে আমি আর সোনামা মিলে সবটুকু খেয়ে ফেলব।’

-‘সেটাই করো। তবে আমার মনে হচ্ছে, তোমার মাম্মাম এই আইসক্রিমটা খাবে।’

-‘সত্যিই খাবে?’

উষাদ একপলক রুদিতাকে দেখল। মেয়েটার চোখে স্পষ্ট রাগ, বিরক্তি আর মেজাজ তো একদম চড়ে আছে, বোঝা যাচ্ছে। এই মেজাজে খানিকটা ঘি ঢেলে দেয়ার সুযোগ পাওয়াতে বলল,

-‘তোমার মাম্মাম তো যখন-তখন রেগে যায় এজন্য এই আইসক্রিমে আমি ম্যাজিক মিশিয়ে দিয়েছি।’

-‘ম্যাজিক! তুমি ম্যাজিক জানো বাবাই?’

-‘খুব জানি। এখানে এমন এক ম্যাজিক মেশানো আছে, যে ম্যাজিক তোমার মাম্মামের মেজাজকে মুহূর্তেই ঠাণ্ডা করে দিবে।’

-‘আমাকে দেখাবে ম্যাজিক কোথায় রেখেছ?’

-‘এটা তো দেখা যায় না বাবা। শুধু অনুভব করা যায়। আর এই ম্যাজিক শুধু তোমার মাম্মামই অনুভব করতে পারবে। যখন সে এই ম্যাজিকের ক্ষমতা অনুভব কর‍তে পারবে, তখন তার মেজাজ এমনিতেই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আর সে খুব সহজেই আইসক্রিমটা খেয়ে নিবে।’

-‘সত্যিই?’

-‘একদম। এখন চলো, আমরা যাই। দেরী হয়ে যাচ্ছে না?’

-‘হুম…।’

রুহান বুঝতেই পারল না পুরো কথাটা। শুধু ঘাড় নাড়ল। সে শুধু ম্যাজিক শব্দটাই বুঝল। রূপকথার গল্পে এমন ম্যাজিক দেখা যায়। সে-ও দেখেছে। তবে অনুভব কীভাবে করতে হয়, এটা জানে না। শুধু জানে, ম্যাজিকের মাধ্যমে অনেককিছু পালটে যায়। সে উষাদের কথায় সম্মতি জানিয়ে গাড়িতে উঠল। রুদিতার কোল চেপে বসে বলল,

-‘বাবাই ম্যাজিক জানে। তুমিও কি ম্যাজিক জানো মাম্মাম? আমাকে শেখাবে, কীভাবে ম্যাজিক করতে হয়?’

রুদিতার বিরক্তিভরা কণ্ঠে উষাদকে বলল,
-‘এখন বোঝান ওকে এই ম্যাজিকের অর্থ! যত্তসব ঢং। সব জায়গায় কেন ফাজলামি করতে হবে? বাচ্চাদের মন। যা দেখবে, তাই তো শিখবে। মুখের লাগাম টানা উচিত না?’

উষাদ শুনল। হাসল। বলল,
-‘ভুলে যাচ্ছ কেন, ডাক্তার কিন্তু ওর সামনে পজেটিভ থাকতে বলেছেন। সবসময় যদি অ্যাট//মব্যোমের মতো ব্লা//স্ট হতে থাকো, রুহান সুস্থ হবে?’

রুদিতা স্বাভাবিক হলো। ছেলের সুস্থতার জন্য সব করতে পারবে। রাগারাগি, ঝগড়াঝাটি, চিৎকার-চেঁচামেচি সব কমিয়ে দিবে। শুধু একবার ছেলে সুস্থ হোক, মায়ের কোলে নির্ভয়ে ফিরুক, সেটুকুতেই সে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। বাচ্চার কথা ভেবেই বিড়বিড়িয়ে উচ্চারণ করল,

-‘স্যরি। এরপর থেকে সচেতন থাকব।’

***

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে