Monday, October 6, 2025







সুতোয় বাঁধা জীবন পর্ব-০৪

#সুতোয়_বাঁধা_জীবন
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – চার

-‘আজ তুমি মাম্মামের সাথে স্কুলে যাচ্ছ। কী, তাই তো?’

রুদিতার কথা শোনে ফট করে মাথা নাড়িয়ে রুহান বলল,
-‘না, আমি তোমার সাথে যাব না।’

মুহূর্তেই দৌড় দিল রুহান। রুদিতা ভেবেছিল, অফিস যাওয়ার পথে রুহানকে সাথে নিয়ে যাবে, যেন স্কুলে নামিয়ে দিয়ে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের সাথে রুহানের ব্যাপারে আলোচনা কর‍তে পারে। কিন্তু তার সেই ইচ্ছে, ইচ্ছেই থেকে গেল। পূরণ হলো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অফিসের পোশাক পরে একেবারে পরিপাটি হয়ে খাবার টেবিলের সামনে আসলো। সবাই একসাথে খেতে বসেছেন, কিন্তু আতিকা জাহানের নড়চড় নেই। রুদিতা তার ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘মাকে ডাকোনি?’

কেউ কথা বলল না। রুদিতা বলল,
-‘এটা ঘর না-কি চিড়িয়াখানা? দিনদিন মানুষজন এমন পশুর মতো আচরণ করছে কী করে?’

কথা শেষ করতেই ধমকে উঠল রওনক। বলল,
-‘মুখ সামলে কথা বল, রাহা।’

-‘মুখ সামলে কথা বলি দেখে-ই সরলতার সুযোগ নিচ্ছ, ভাইয়া। একদিন খুব পস্তাবে তুমি। দেখো…।’

শর্মী তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
-‘শকুনের দোয়ায় কোনোদিন গোরু মর‍তে দেখেছিস্? ফাউ লেকচার দিস্ না রাহা। শুনলে বড্ড বিরক্তি আসে।’

-‘ঘর বুঝেছ, কিন্তু ঘরের মূল্য বুঝোনি। আফসোস…।’

নিজেই মাকে ডাকতে গেল রুদিতা। সেই ফাঁকে রুহান ও রুহামা একসাথে খেতে বসল। খাবারেও বাছবিচার করল শর্মী। নিজের বাচ্চাদুটোকে সিদ্ধ ডিম দিল, কিন্তু রুহানের দিকে ফিরেও তাকাল না। দু’পিস পাউরুটি দিল তাকে। শব্দহীন পায়ে টেবিল ছেড়ে, রান্নাঘরে গেল রুহামা। ফ্রিজ থেকে দুটো ডিম বের করে সিদ্ধ বসাল। শর্মী এসে কৈফিয়ত চেয়ে বলল,

-‘আশ্চর্য! ডিমে হাত দিলি কেন? তুই তো জানিস্, বাচ্চারা ডিম ছাড়া কিছু খেতে পারে না। দুইবেলা ডিম লাগে ওদের।’

-‘তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছ, ঘরে আরও একটা বাচ্চা ও একজন বৃদ্ধ মা আছেন। তাদের খাবারের ভাগেও ডিমটা তুলে দেয়া উচিত।’

-‘বড্ড বেড়ে গিয়েছিস্ তুই। অনুমতি ছাড়া ফ্রিজে হাত দিবি না আর। এটা আমার বাবার টাকায় কেনা ফ্রিজ। বুঝলি?’

-‘আলাদা করতে চাইছ না-কি? হয়ে যাও। এমনিতেও চাল-ডাল থেকে শুরু করে সবকিছুর খরচ আপু একাই দিচ্ছে। নিজের বাচ্চাটার জন্য দশ টাকা যে জমাবে, সেই সুযোগটাও তোমরা ওকে দিচ্ছ না। অথচ মাথার ওপর থেকে ছাদ কেড়ে নিতে চাইছ।’

-‘বেশি বকবক করিস্ না তো। তোকে বলেছি ফ্রিজে হাত না দিতে। তুই হাত দিবি না। ব্যস…।’

সকাল সকাল মেজাজটা ধরে এলো রুহামার। দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইল। শর্মী তক্ষুণি নিজের ঘরে গেল একবার। নিয়ে এলো ফ্রিজের চাবি। মিনিটের মধ্যেই লক করে দিল ফ্রিজ। বলল,

-‘এবার নে, কী নিবি।’

-‘হায়রে মানুষ। তুমি যে এত ছোটোলোক। আমার জানা ছিল না ভাবী।’

ডিম সিদ্ধ শেষ হলে তবেই রুহানকে নাশতা খাওয়াল রুহামা। দু’জনে একসাথে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। রুদিতা নিজেও ভ্যানিটিব্যাগ ও অফিসের ফাইলপত্র নিয়ে রাস্তায় আসলো। বলল,

-‘একসাথেই যাই। ওর স্কুলে যেতে হবে।’

-‘আচ্ছা।’

পাশাপাশি দাঁড়ানোতে রুহান তার মায়ের কাছেপাশেই ছিল। রুদিতা বাচ্চাটার কপালে আদর দিতেই রুহান একটু নড়েচড়ে দূরে সরতে চাইল। কিন্তু পারল না। রুহামা বলল,

-‘এমন করে না, রুহান। মাম্মাম কষ্ট পায়। তুমি আমার সাথে যত সহজে মেলামেশা কোরো, তত সহজে মাম্মামের সাথে কেন মিশো না?’

রুহান কাচুমাচু মন নিয়ে বলল,
-‘মাম্মামকে ভয় হয় আমার। মাম্মাম খুব খারাপ।’

-‘কী বলছ, রুহান? মায়েরা খারাপ হয় না।’

-‘বাবা বলেছে, মাম্মাম আমাকে ভালোবাসে না। এজন্যই আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।’

-‘কিন্তু, রুহান। ওসব মাম্মামের ইচ্ছেকৃত ছিল না। মায়েরা খারাপ হয় না, বুঝার চেষ্টা কোরো তুমি।’

-‘না, মাম্মাম ভালো না। মাম্মাম ভালো হলে তাকে পুলিশ কেন ধরবে? পুলিশ তো খারাপ মানুষকে ধরে। মাম্মাম খারাপ এজন্যই মাম্মামকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল।’

এইটুকু বাচ্চার মনে এখনও কয়েক মাস আগের ঘটনা স্পষ্টভাবে গেঁথে আছে ভেবে অবাক হলো রুদিতা। কাছে এসে রুহানকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-‘তুমি জানো, কেন ওসব হয়েছিল? জানো না, রুহান। তুমি ভুল জানছ আমাকে, ভুল ভাবছ। ওটা তোমার বাবার একটা ফাঁদ ছিল, বাবা। বুঝার চেষ্টা করো একটু।’

খানিকক্ষণ থেমে আবারও বলল,
-‘তোমার মনে আছে, তোমার বাবা কীভাবে মারা গিয়েছিল?’

স্মৃতি হাতড়ে সেইসব দিন খুঁজে ফিরল রুহান। শুধু দেখতে পেল, তার বাবার রক্তাক্ত দেহ ও দাদীর আহাজারি। আর কিছুই মনে পড়ল না। সেখানে তার মা কিংবা তার নানুবাড়ির কেউ ছিল না। সবাই কত বিলাপ করছিল, তার বাবার মৃতদেহ নিয়ে। কতজন কত বাজে কথাও বলছিল। সবকিছুর মধ্যে শুধু মনে আছে, তার দাদীর কান্নাটাই। মনে পড়াতে বলল,

-‘জানি না। দাদী খুব কাঁদছিল। তুমি কেন ছিলে না ওখানে?’

রুদিতা ওইদিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল, বাচ্চাটার মানসিক অবস্থার কথা ভেবে। শুধু বলল,
-‘যার সাথে বিচ্ছেদ হয়, তার সামনে কি আর যাওয়া যায় বাবা? যদি নিয়ম থাকত, আমি নিশ্চয়ই যেতাম।’

ওই সময়েই রুদিতার অফিসের গাড়ি এসে থামল। ডোর খুলে দিল ফাহাদ। বলল,
-‘দেরী হয়ে যাচ্ছে, ম্যাডাম। আসুন।’

আজ রুহামা ও রুহান বেরিয়েছে দেরী করে। নয়তো অন্যদিন এর আগেই চলে যেত। রুদিতা পাশে জায়গা বের করে বোনকে বলল,
-‘এইদিকে এসে বস।’

ফাহাদ সামনে চলে গেল। রুদিতা ও রুহামা পিছনে বসল। স্কুলের সামনে এসে রুহান গেটের ভেতর প্রবেশ করতে পারল না, ছুটে এলো উমামা। রুহানের হাত ধরে বলল,

-‘চলো, একসাথে যাই। আজ আমরা টিফিন শেয়ার করব। ঠিক আছে?’

***

রুহানকে পাঠিয়ে দুইবোন অফিসরুমে এসে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের সাথে দেখা করতে চাইল। রুদিতা নিজের পরিচয় দিতেই নওশীন আরা খানম বললেন,

-‘গতকাল পেরেন্টস্ মিটিং ছিল ম্যাডাম। আপনি আসেননি কেন?’

উষাদও অফিসরুমে প্রবেশ করে, লক খুলে ক্লাসের হাজিরা খাতা বের করল। অন্যপাশে রুদিতা প্রিন্সিপাল ম্যাডামের প্রশ্ন শোনে বলল,

-‘আ’ম স্যরি। আমার অফিসে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং ছিল।’

-‘বাচ্চার দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। ও পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো। কিন্তু কখনও কখনও একটুবেশি অন্যমনস্ক হয়ে যায়। আমার মনে হয়, আপনার ও’কে নিয়ে একটু গভীর ভাবনার প্রয়োজন আছে।’

-‘দেখুন, আমার দিক থেকে আমি কোনো ত্রুটি রাখছি না। চেষ্টা করছি।’

-‘তা বললে তো হয় না, মিসেস রুদিতা। বাচ্চাটা আপনার। খেয়াল রাখবেন আপনি। ওর কখন, কী প্রয়োজন, সেটাও জানতে চাইবেন আপনি। এ পর্যন্ত স্কুলের কোনো মিটিংয়েই আপনাকে পাওয়া যায়নি। রুহানের মা হিসেবে, আপনার উচিত ছিল না, সবগুলো পেরেন্টস্ মিটিংয়ে অ্যাটেন্ড করা?’

রুদিতা একটু গম্ভীর মেজাজে বলল,
-‘বাচ্চাটা যেহেতু আমার, ওর দিকটা সবসময় আমি-ই ভাবব। আপনার দায়িত্ব ওকে পড়াশোনা করানোর, আপনি সেটাই করুন। ওর মুড সুইংয়ের ব্যাপারগুলো আমি সামলে নিতে পারব।’

নওশীন আরা খানম চরম বিস্ময় নিয়ে উষাদের দিকে তাকালেন। উষাদও হতবাক চোখে মিসেস রুদিতাকে একবার দেখল। না চাইতেও বলল,

-‘আমার নাক গলানো উচিত নয়, কিন্তু একটা কথা বলি ম্যাডাম। আপনার বাচ্চা মানসিক চাপে আছে। আপনি মা হয়ে সেটা বুঝতে পেরেছেন কি-না আমরা জানি না। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ’র দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে ছাত্রছাত্রীদের দিকে আমাদেরকেও বিশেষ নজরে তাকাতে হয়। কোন বাচ্চার কখন কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেটা দেখতে হয়, যতক্ষণ সে আমাদের আন্ডারে থাকছে। তো, সেসব বিষয় থেকেই আমরা নোটিশ করেছি, মানসিকভাবে রুহান খুব একা। বাচ্চা আপনার, অবশ্যই তার ভালো-মন্দের দায়িত্ব আপনার হাতেই। এজন্যই আপনাকে সতর্ক করতে এসব বলা। বাচ্চার প্রতি আরেকটু মনোযোগ দিন। আমরা রুহানের ক্ষতি চাই না। চাই ও ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক। সর্বোপরি, ভালো একজন মানুষ হয়ে উঠুক।’

রুদিতা চোখ বন্ধ করে জোরেজোরে নিঃশ্বাস নিল বারকয়েক। এরপর বলল,
-‘নিজেদের মধ্যকার ব্যক্তিগত সব কথা, আমি এখানে বলব না। শুধু একটা কথা বলে যাই আজকে। রুহান আপনাদের স্টুডেন্ট হওয়ার আগে আমার সন্তান। একজন মায়ের কাছে সবকিছুর ঊর্ধ্বে তার সন্তান। রুহানের প্রতি, দায়িত্ব-কর্তব্য ও ভালোবাসা, কোনোকিছুরই কমতি নেই আমার। আপনারা আপনাদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করুন, আমাকে আমারটা করতে দিন।’

উষাদ নিজেও একটু ত্যাড়াব্যাঁকা আচরণের প্রকাশ ঘটিয়ে বলল,
-‘দায়িত্ব-কর্তব্য কেমন পালন করছেন, সেটা তো গতকাল দেখলাম-ই। সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে, ওইটুকু একটা বাচ্চার সাথে…।’

রুদিতা হেসে বলল,
-‘দুটো কারণে করেছি।’

উষাদ কৌতূহলী চোখে তাকালে রুদিতা বলল,
-‘তার আগে আপনি একটা কথা বলুন। আপনি কী চান, যেসব খাবার আপনার বাচ্চার ফুড পয়জনিংয়ের কারণ হয়, সেসব খাবার খেয়ে, আপনার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ুক?’

-‘সেটা চাইব না। বরং আমি চাইব, ওসব খাবার থেকে আমার বাচ্চাকে দূরে সরিয়ে রাখতে।’

-‘রাইট, আমিও সেটাই করেছি। এটা ছিল প্রথম কারণ। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, আপনি অচেনা। রুহানের নয়, আমার চোখে আপনি অচেনাই। অচেনা কেউ আপনার বাচ্চার হাতে খাবার তুলে দিবে। সেই খাবার খেয়ে চোখের সামনে আপনার বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে যাবে। আপনি সেটা দ্যাখেও চুপ করে থাকবেন? আপনার দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে একটু ভেবে বলুন তো, কোন বাবা-মা চাইবে – যে খাবার বাচ্চার ক্ষতির কারণ হবে জেনেও সেই খাবার বাচ্চার হাতে তুলে দিতে?’

উষাদ উপরনিচ মাথা নেড়ে বলল,
-‘রুহান কি ঠাণ্ডাজাতীয় খাবার একদমই খেতে পারে না?’

-‘খায়, খুব অল্প। লিমিট মেপে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন আবার তিন-চারদিন হসপিটালে অ্যাডমিট থাকতে হয়।’

-‘ওহ্, আ’ম স্যরি। পুরো বিষয়টা আমার জানা ছিল না। তবে আপনারও এতটা মেজাজ দেখানো উচিত হয়নি। রুহান ভীষণ ভয় পাচ্ছিল।’

-‘রুহান এমনিতেও আমাকে ভয় পায়।’

হাসিমুখে এইটুকু বলে, প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কাছ থেকে বিদায় নিল রুদিতা। উষাদ গভীরচিত্তে চেয়ে থেকে বলল,
-‘মেজাজে আগুন থাকলে যেকোনো বাচ্চা-ই তার মা’কে ভয় পাবে। মায়েদের হতে হবে কোমল, শান্তশিষ্ট, ধৈর্যশীল। তবেই তো বাচ্চারা নির্ভয়ে হাসতে শিখবে।’

শোনে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল রুদিতা। বলল,
-‘কথাটা কি আমাকে বললেন?’

শোনেও না শোনার ভান করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল উষাদ। রুদিতা দাঁত কটমট করে তাকাল। উষাদ বুঝতে পারলেও ফিরে তাকাল না। জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির দিকে ফিরে তাকানোর সময় কোথায় তার?

***

-‘আপু, তুমি চলে যাও। আমি এখান থেকে একটা রিকশা নিয়ে ভার্সিটি যেতে পারব।’

স্কুলের বাইরে এসে কথাটা বলল, রুহামা। রুদিতা তাকে আর জোর করতে পারল না। বলল,
-‘আচ্ছা, ঠিক আছে। ফেরার পথে রুহানকে বাসায় নিয়ে যাস্। আর কিছু লাগলে ফোন করে বলিস্।’

রুহামা ঘাড় নেড়ে সায় জানাল। যেহেতু দুটো রাস্তা দু’দিকে, তাই সময় ব্যয় হবে বেশি। এতে করে তার ও ফাহাদের অফিস পৌঁছাতে দেরী হবে। কিন্তু রুদিতার কথায় আহত হলো ফাহাদ। বলল,

-‘হোক একটু দেরী, অসুবিধা কী মিসেস রুদিতা? আপনার মন সায় দিচ্ছে, নিজের বোনকে এখানে ফেলে যেতে?’

ফাহাদের কথায় রুদিতা কিছু মনে না করলেও রুহামা ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে রইল। সে কী ছোটো বাচ্চা, তারজন্য কারও চিন্তা হবে? পরিবারের কাউকে চিন্তিত দেখলে মানা গেলেও অচেনা কেউ, তাকে নিয়ে মাথা ঘামাবে, ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারল না রুহামা। মুখে হাসি টেনে বলল,

-‘আমি একা যেতে পারব।’

-‘পারবেন না, সেটা তো আমি বলিনি। বাই অ্যানি চান্স, যদি রাস্তা হারিয়ে ফেলেন?’

-‘মানে! রাস্তা হারাবে কেন? আমি কি ছোটো বাচ্চা?’

ফাহাদ অসহায় চেহারা নিয়ে বিড়বিড় করল,
-‘এমন একটা সুন্দরী মেয়ে রাস্তায় যদি একা দাঁড়িয়ে থাকে, যে কারও নজর পড়ে যাবে। তোমার ওপর কেবল আমার নজর পড়ুক, সুন্দরী। আর কারও না।’

মনের কথা মনে রেখে বলল,
-‘তেমন কিছু না, মিস্। দিনকাল তো ভালো না, যেকোনো সময় খারাপ মানুষের নজরে পড়ে যেতে পারেন। বলা গেল না, এখান থেকে কেউ আপনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল আর আপনার পরিবারের লোকজনের তখন দিশেহারা অবস্থা হলো। তাই আরকি…। সবার কথা ভেবে যদি…।’

রুদিতা বলেছিল, ফাহাদ ভীষণ কৌতুকপ্রিয় মানুষ। সবসময় নিজে হাসতে ও অন্যকে হাসাতে পছন্দ করে বেশি। ছবিও দেখিয়েছিল। একই অফিসে চাকরি করার সুবাদে, অনেক ছোটোখাটো বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয় তাদের। সেই হিসাবে, ফাহাদ সবসময় রুদিতাকে সম্মান দেখিয়ে চলে। সে বোনের কথা মনে রেখে বলল,

-‘আপু, তুমি তো বলেছিলে, তোমার ফাহাদ ভাই সদা হাসতে জানা মানুষ। কখনও তো বোলোনি, তোমার এই ভাইয়ের মাথার দুটো নাট একটুবেশি-ই নড়বড়ে হয়ে গেছে।’

ফাহাদ আহত হলো এই কথা শোনে। উপকার করতে চেয়েছিল সে। চায়নি, পছন্দের মানুষটা এইভাবে কাঠফাটা রোদে দাঁড়িয়ে থেকে স্কিন নষ্ট করে ফেলুক। কিন্তু কেউ তো তাকে বুঝল না। তার কথার গুরুত্ব দিল না। সে-ও আর জোর করার আগ্রহ পেল না। কোনোকিছু না বলে সামনের সিটে বসে, ড্রাইভারকে বলল,

-‘অফিসে যাও। দেরী হচ্ছে।’

রুদিতা বোনকে বলল,
-‘কী রে, যাবি না? চলে যাব?’

-‘তুমি যাও আপু। অলরেডি অনেক দেরী হয়ে গেছে তোমার। আমার তো মাত্র দু’মিনিট লাগবে, ভার্সিটি যেতে। এইটুকু রাস্তার জন্য দুটো মানুষের অফিসে দেরী হতে দেয়া উচিত হবে না।’

গাড়ি চলে গেলে রুহামাও কাঁধ নাচিয়ে একটা রিকশা থামিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। গাড়িতে বসে ফাহাদ একগাদা অদৃশ্য বকা দিল রুহামাকে। রুদিতাকে বলল,

-‘আপনার বোন কি সবসময় দুই লাইন বেশি বুঝে?’

রুদিতা হাসতে হাসতে বলল,
-‘ও এমনই। আপনি কি কোনোভাবে ওর আচরণে বিরক্ত, ফাহাদ ভাই?’

ফাহাদ উত্তর দিল না। বিড়বিড়াল,
-‘বিরক্ত না ছাঁই, মেজাজের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। তোমার উপকার আমি জীবনেও করব না, মেয়ে। দেখে নিও।’

***

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ