Monday, October 6, 2025







সুতোয় বাঁধা জীবন পর্ব-০৩

#সুতোয়_বাঁধা_জীবন
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – তিন

মেয়েকে পড়তে বসিয়ে রান্নাঘরে কাজ করছিল উষাদ। ফাঁক পেয়ে গুটিকয়েক পা ফেলে ছেলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন হোসনা বেগম। ছেলে হয়েও মেয়েদের কাজ সে অনায়াসেই করে যায় রোজ। মাঝেমধ্যে ছেলের দিকে তাকান আর ভাবেন, এমন হীরের টুকরো ছেলের জীবনে কেন ‘বিপাশা’ নামক অভিশাপকে টেনে এনেছিলেন? যার জন্য ছেলেটা আজ সংসারহীন! অবুঝ বাচ্চাটা আজ মায়ের আদর, ভালোবাসাহীন। মা’কে দেখে একগাল হেসে উষাদ বলল,

-‘কিছু কি লাগবে, মা? চা খাবে?’

-‘খাব। যদি আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনিস্, তবেই…।’

-‘আমি তো তোমার সব কথা শুনি। কোনটা শুনিনি বলো?’

হোসনা বেগম মন খারাপের সুরে বললেন,
-‘কই আর শুনলি? বললাম, আবার নিজের কথা ভাবতে, ভাবছিস্ না। কোনদিন যে আমি চোখ বুঁজে ফেলব…।’

উষাদ চুলায় বসানো তরকারি নেড়েচেড়ে, তার স্বাদ টেস্ট করে বলল,
-‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করো না। সবাইকেই একদিন মরতে হবে।’

-‘হ্যাঁ। কিন্তু একটা বাচ্চার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবেই…।’

-‘জীবনটাই তো অনিশ্চিত, মা। আজ আছি, কাল নেই। ক’দিনের দুনিয়া এটা! এখানে এত ভাবনার কী আছে? সময় আসলে যে কেউ উপরে লাফ দিবে। কেউ আগে, কেউ পরে, এটাই পার্থক্য।’

হোসনা বেগম এবার বেজায় রেগে গেলেন। থমথমে মুখ নিয়ে বললেন,
-‘ধর, কাল তুই থাকবি না। আমিও থাকব না। তখন উমার কী হবে? এই সমাজকে বোঝার মতো বয়স ওর হয়েছে? মানিয়ে নিয়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখার মতো মনের জোর ওর আছে? কী হবে আমরা না থাকলে?’

উষাদও দীর্ঘশ্বাসের সাথে বলল,
-‘যদি সৎ মায়ের হাতে ও’কে তুলে দিই-ও, তা-ও আমার মৃত্যুর পর মেয়েটা রাস্তায় নামবে। আপন মায়ের জায়গা নেয়ার মতো ধৈর্য্যশীল, কোনো সৎ মা হতে পারে না। যেখানে বিপাশা ওকে ফেলে গেল, সেখানে অন্য কাকে আমি ভরসা করব?’

-‘তাইবলে মেয়ের জীবনটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিবি? একবারও ভাববি না, ওর একটা মায়ের দরকার? এই ঘরে একটা কর্ত্রীর দরকার? তুই আমার ওপর এই শেষবার ভরসা কর, দ্যাখবি এবার একটা বিশ্বস্ত মেয়েকে খুঁজে এনে দেব। যে শুধু ঘর নয়, ঘরের সবাইকে নিজের আপন ভাববে। আমি আমার নাতনীটাকে খুশি দেখে মরতে চাই।’

উষাদ অসহায়ের মতো বলল,
-‘এটা যুক্তিহীন কথাবার্তা মা। সৎ মা কোনোদিন ভালো মা হয় না।’

-‘সব সৎ মা, সবসময় খারাপও হয় না। মানুষে মানুষে অনেক পার্থক্য আছে, এটা ভুলে যাস্ না।’

প্রতুত্তরে কিছু বলল না উষাদ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিজের কাজ করতে লাগল। থালাবাসন পরিষ্কার করে, টেবিলে খাবার সাজাল। হোসনা বেগম ছেলের এসব টুকিটাকি কাজ দেখে গম্ভীরমুখে বললেন,

-‘এসব কাজ করার জন্য ঘরে একটা মেয়ের দরকার।’

এবারও নীরব রইল উষাদ। আর কাউকে বিশ্বাস করতে মন সায় দিচ্ছে না। একবার তো যা হলো, তা কী পরিমাণ ভয়ানক ও বিদঘুটে, ঘৃণিত ও লজ্জার সেটা সে ব্যতীত আর কে ভালো জানে! হোসনা বেগমও দমে যাবেন না। তিনি কড়া স্বর ও আদেশের সাথে বললেন,

-‘মেয়ে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আমি মেয়ের মা ও ভাইয়ের সাথে এক্ষুণি ফাইনাল কথাবার্তা বলব। আগামী পরশু সন্ধ্যার দিকে যেভাবে পারি…। মেয়েটা এখানে আসলে উমা শুধু মা পাবে, সেটা নয়। অবুঝ একটা বাচ্চা, বাবার আদর-স্নেহও পাবে। তুই একটা ইয়াতিম বাচ্চার দায়িত্ব নিতে পারবি না? একটা বাচ্চার মাথার ছায়া হতে পারবি না? সর্বক্ষণের জন্য একটা মেয়ের বিশ্বাসের জায়গা হতে পারবি না?’

‘একটা ইয়াতিম বাচ্চার দায়িত্ব নিতে পারবি না?’ – উষাদের ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়ার জন্য মায়ের বলা এই একটা বাক্যই যথেষ্ট ছিল। সে কাজ ফেলে থম মেরে তাকিয়ে রইল মায়ের দিকে। হোসনা বেগম তাকে নিশ্চিত করতে উপরনিচ মাথা নেড়ে বললেন,

-‘বাচ্চাটার মাথার ওপর ছায়ার খুব দরকার, উষাদ। ওই মেয়েটারও শক্তপোক্ত একটা আশ্রয় দরকার।’

বাচ্চার দায়িত্ব নিতে তার অসুবিধা নেই, কিন্তু যে মেয়ের দায়িত্ব কাঁধে নিবে, সেই মেয়ে তার অবুঝ বাচ্চাটাকে কতটুকু ভালোবাসবে? আদৌ নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করবে তো? সে আরও কিছু জানার আশায়, এবং ওই মেয়েটা সম্পর্কে পজেটিভ-নেগেটিভ মনোভাব পোষণের আগে তাকে গোড়া থেকে চেনা-জানা ও বোঝার জন্য বলল,

-‘মেয়েটাকে কতটুকু চিনো? খোঁজ পেলে কোথায়?’

-‘ঘটকের মাধ্যমে খোঁজ নিয়েছি।’

-‘এরমধ্যে তুমি ঘটকও পেয়ে গেছো?’

-‘কেন পাব না? আমি কি খোঁজখবর রাখি না না-কি! শুধু উকিল কেন, জাফরও খোঁজ নিয়েছে।’

-‘তুমি কি নিশ্চিত, মেয়েটা উমার আপন মা হয়ে উঠবে? একদম পেটের সন্তানের মতো আমার বাচ্চাটাকে আগলে রাখবে? কারও বিষয়ে পুরোপুরি না জেনে তাকে নিয়ে পজেটিভ সিদ্ধান্ত জানাতে পারছি না, মা। ক্ষমা করো।’

হোসনা বেগম হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে চেয়ারে বসলেন। বললেন,
-‘মেয়েটাকে একদিন দ্যাখে এসেছি আমি। আমার পছন্দ হয়েছে। ওর বাচ্চাটা ভীষণ আদুরে। উমারও তাকে পছন্দ হবে নিশ্চিত।’

-‘উমা দেখেছে?’

-‘বাচ্চাটাকে দেখেছে।’

-‘কী বলো? চিনে?’

-‘ক্লাসমেট হিসেবে চিনে। তবে মেয়েটাকে দ্যাখেনি। তুই কনফার্ম করলে, এক্ষুণি আমি মেয়ের মায়ের সাথে আলাপ করে আগামীকাল তোর মামা-মামী, উর্মি, জাফর, উকিল সাহেব আর তুই একসাথে গিয়ে আকদের কাজটা শেষ করে ফেলব।’

হাত থেকে কাজ পড়ে যাওয়ার দশা হলো উষাদের। সে গালে হাত রেখে ভাবুক চেহারা নিয়ে নিশ্চুপে চেয়ারে বসে রইল। মা তাহলে সব কনফার্ম করে নিয়েছেন। কথা দিয়ে ফেলেননি তো? সর্বনাশ! কাউকে না জেনে আবারও কীভাবে নিজের জীবনে বিপদ সংকেতকে ডেকে আনবে সে? অসম্ভব! বিয়ে ও জীবন কি ছেলেখেলা না-কি? ইচ্ছে হলো, খেললাম। খেলা শেষ, ছুঁড়ে ফেললাম। নো, ওয়ে! কিছু একটা করবেই সে। মনে মনে প্ল্যান সাজিয়ে-গুছিয়ে জানতে চাইল,

-‘তুমি কি কথা দিয়ে ফেলেছ?’

-‘অনেকটা সেরকমই।’

-‘কবে করলে এসব?’

-‘সপ্তাহ খানেক আগে তোকে বলেছিলাম না, একটা জায়গায় ঘুরতে যাব?’

-‘হ্যাঁ, তো?’

-‘ওইদিনই মেয়েকে দেখে, পছন্দ করে, কথাবার্তা এগিয়ে এসেছি।’

-‘যাওয়ার আগে তুমি আমার অনুমতি নিবে না?’

-‘তুই অনুমতি দিতি?’

-‘এখন কি আমার অনুমতি নিতে চাইছ?’

-‘হ্যাঁ, শুধু তুই সম্মতি দিলে, বিয়ের কাজটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।’

-‘আর যদি আমি সম্মতি না দিই, তাহলে?’

-‘তওবা! কী বলিস্ এসব? কেন সম্মতি দিবি না? আমার মান-ইজ্জত মারবি না-কি? কথা দিয়ে এসেছি, মুখ দেখাতে পারব আর? লজ্জায় মাটিতে মিশে যাব তো!’

মায়ের এমন বেখেয়ালি আচরণে রাগে মেজাজের দফারফা ঘটে গেল উষাদের। ঝটপট টেবিল ছেড়ে উমামার কাছে ছুটে গেল। মেয়েটা তখনও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে। সে পাশে গিয়ে বলল,

-‘খাবার তৈরী, মামণি। খেতে এসো।’

উমামা গালভরা হাসি দিয়ে বই-খাতা ও প্রয়োজনীয় জিনিস নিজের স্কুলব্যাগে গুছিয়ে নিল। ছোটো ছোটো দু’খানা হাত বাড়িয়ে গলায় ঝুলে গেল। উষাদ তাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খেয়ে বলল,

-‘হোমওয়ার্ক হয়েছে?’

-‘হ্যাঁ।’

-‘গুডগার্ল।’

খেতে বসে আদুরে বায়না জুড়ে দিল উমামা। উষাদ তাকে যত্ন করে, মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছিল। সে আবদারের সুরে বলল,

-‘আমাকে একটা মা এনে দিবে?’

হোসনা বেগম মুখ টিপে হাসলেন। মায়ের হাসিমুখ দেখেই যা বোঝার, বুঝে গেল উষাদ। এরমধ্যেই উমামাকে শিখানো-পড়ানো শেষ। নয়তো আজ হঠাৎ বিয়ের গান তুললেন কেন তিনি? নিশ্চয়ই দাদী-নাতনী মিলে তলে তলে বুদ্ধি পাকিয়েছে! অলরেডি কথাবার্তা যেহেতু হয়ে গেছে, তারমানে এখানে উমামাকেও চুপিসারে ঠোকা মারা শেষ। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তার মাথায় মায়ের চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছেন। শুধু সে-ই টের পায়নি। মেয়ের আবদার শোনে হাওয়ার মাছি তাড়ানোর ভান করল উষাদ। বলল,

-‘মা কি কোনো খেলনাপাতি না-কি আবদার করলেই নিয়ে আসব? তোমার কোনো মায়ের দরকার নেই। আমি-ই যথেষ্ট।’

উমামা মুখভার করে খাবার প্লেট দূরে সরিয়ে দিল। গাল ফুলিয়ে চেয়ার ছেড়ে সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে মেয়ের পিছন পিছন ছুটে এলো উষাদ। বলল,

-‘তুমি আবার রাগ দেখাচ্ছ কেন?’

-‘একশোবার রাগব। আমার কি মায়ের আদর খেতে ইচ্ছে করে না? কেন মা নেই আমার? কেন আমি কাউকে মা ডাকতে পারব না?’

-‘কিন্তু এভাবে তো মা পাওয়া যায় না।’

-‘কে বলেছে পাওয়া যায় না? দাদী বলেছে, তুমি রাজি হলেই মা আসবে। তুমি রাজি হয়ে যাও না বাবাই। একটা মা আসুক। আমাকে কোলে নিয়ে আদর করুক। ও বাবাই, দাও না একটা মা এনে।’

মা ও মেয়ের এই মা নিয়ে আসার গান শোনে করুণ অবস্থা হলো উষাদের। কী করবে, ভেবে পেল না। কীভাবে সম্মতি দিবে? মেয়েটা কে? কেমন মানসিকতার এসব না জেনে সম্মতি দেয়া যায় না-কি? তাছাড়া দ্বিতীয়বার কাউকে মায়ার বাঁধনে বাঁধা যে কত কষ্টকর, সেটা তো সে-ই উপলব্ধি করতে পারছে। তিনমাসের ছোট্ট সংসারে ভালোবাসা কতটুকু ছিল কে জানে! তবে সেখানে মনের যে টান গড়ে উঠেনি সেটা এখন নিশ্চিত। কারণ একপাক্ষিক কিছুই হয় না। দ্বিপাক্ষিক যদি হতো, বিপাশা তাকে এইভাবে ফাঁকি দিত না। স্মৃতিগুলো মনে হলেই তিক্ততায় ভরে উঠে মন। কোথাও গিয়ে লুকিয়ে পড়তে মন চায়। অথচ মেয়েকে ফেলে রেখে কোথাও ঘাপটি মারতে পারে না সে। দিনশেষে ওর টানেই ঘরে ফিরতে হয়। ওর জন্যই বাঁচতে হয়, চলতে হয়, হাসতে হয়। মাঝেমধ্যে মনে প্রশ্ন জাগে উষাদের। ভাবে, একটা সম্পর্ক যদি মানুষের কাছে এত মূল্যহীন হয়, তবে সেই সম্পর্কে মানুষ কেন বাঁধা পড়ে?

উষাদ মেয়েকে কাছে টেনে নিল। কোলের ওপর বসিয়ে মুখে ভাত তুলে দিয়ে বলল,
-‘তুমি জানো, তোমার দাদী কার কথা বলছে? দেখেছ তাকে? কথা হয়েছে?’

-‘না। শুধু বলেছে, তুমি রাজি হলে একটা মা এনে দিবে। খুব ভালো মা হবে সে আমার। আমাকে অনেক অনেক আদর করবে।’

-‘বাবাইয়ের আদরে সন্তুষ্ট নও তুমি?’

উমামা কিছু বলল না, শুধু উষাদের বুকে লেপটে কেঁদে গাল ভাসাল। বাবা যতই আদর করুক, সন্তানের মায়ের আদরেরও প্রয়োজন পড়ে। মায়ের শূণ্যতা ও আদরের কমতি তারা অনুভব করতে পারে। এই অনুভূতিটাই তার শূণ্য মনের কোণে একটুকরো ইচ্ছা-আকাঙ্খা জাগিয়ে তুলেছে। উষাদ বুঝতে পারল না, তার কী সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তার চেষ্টা ও যত্নে ত্রুটি নেই ঠিকই, কিন্তু একজন বাবা শত চেষ্টায়ও মায়ের শূণ্যতা পূরণ করতে পারে না। মাতৃস্নেহ যে বড্ড আলাদা। ওই স্নেহটাই অন্যরকম, মায়াময় ও ভীষণ আদুরে। এই আদুরে মুহূর্ত কীভাবে মেয়েকে উপহার দিবে সে? অন্তহীন ভাবনায় ডুব দিল উষাদ। খুঁজে ফিরল স্মৃতিকে। বিশ্বাসঘাতক ও বিপাশা নামক পিছনের অধ্যায়কে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে বিড়বিড় করল,

-‘আমার মেয়েটাকে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে খুব সুখে আছো না, তুমি? ভাগ্য যদি কোনোদিন তোমাকে আমার চোখের সামনে এনে দাঁড় করায়, সব অপমানের শোধ তুলে ছাড়ব।’

উষাদের ফোন বাজল। তার বড়ো মামা মঈনউদ্দীন সাহেব ফোন করেছেন। রিসিভ করতেই বিয়ে নিয়ে একপ্রকার হুকুম করে বসলেন তিনি। উষাদ তাজ্জব বনে গেল। বলল,

-‘কী শুরু করলে তোমরা এসব?’ কেন এইভাবে ব্ল্যাকমেইল করছ আমায়?’

ওপাশ থেকে তার মামা বললেন,
-‘কথা না শুনলে আমার বোনকে আমি নিয়ে আসব উষাদ। তুই তোর বাচ্চাকে কীভাবে বড়ো করবি এটা তুই জানিস্। আমি আমার বোনকে এই বয়সে ওখানে খেটে মরতে দিব না।’

-‘বড়ো মামা…।’

-‘গলা উঁচাবি না উষাদ। যা বলছি শোন…।’

-‘শুনব না।’

-‘ঠিক আছে। কাল সকালে গাড়ি পাঠাব। আমি থাকতে আমার বোন কেন তোর কাছে থাকবে?’

-‘তোমার বোন এখন আমার মা। ভুলে যেও না মামা।’

-‘তোর মা হলেও সে এখনও আমার ছোটো বোন।’

-‘বড়ো মামা…।’

-‘আহ্লাদ দেখাবি না। মা’কে শান্তি দে এবার। দুঃশ্চিন্তায় তো অসুস্থ হয়ে যাবে। এমনিতেই বারোমাসি রোগী।’

পরবর্তী কল এলো উর্মির নম্বর থেকে। একগাদা অসুখ-বিসুখ ও দুঃশ্চিতার খবর শুনাল মেয়েটা। উষাদ বোনকে বকতেও পারল না, গালি দিতেও পারল না। শুধু শোনে গেল। উর্মির পর জাফরও রীতিমতো তার হাত-পা ধরে কাকুতিমিনতি শুরু করে দিল। সবার এতসব ইচ্ছা ও আদেশে উষাদের চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার জোগাড় হলো। পারল না শুধু বিপাশার প্রতি জমা হওয়া সবটুকু রাগ-ক্ষোভ সবার ওপর ঢালতে।

***

আতিকা জাহানের স্বামীর রেখে যাওয়া ছোট্ট দুই রুমের একটা ঘরকে বিশালাকার রূপ দিয়েছে রওনক। ভালো ব্যবসায়ী হওয়ার গুণে, একাধারে অনেকগুলো জমি কিনে ফেলেছে। তাই এই সম্পত্তির ভাগে তারই আধিপত্য বেশি। এজন্য সবকিছু থেকে রওনক দুইবোনকে বঞ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিছু বললেই ছেলে ও তার বউ উঠেপড়ে লেগে যায়। পান থেকে চুন কষলেই বকাঝকা শুরু হয়। এক গ্লাস্ পানি খেতে গিয়েও শান্তি নেই কারও। সেদিন দুর্বল শরীর নিয়ে পানি খেতে গিয়ে গ্লাস্ ভেঙে ফেলেছিলেন তিনি। অমনি শুরু হলো, শর্মীর গা জ্বালানো কথাবার্তা। একটা গ্লাস্ যে মানুষের চেয়েও দামী, এটাই প্রতি শব্দে, বাক্যে বুঝিয়ে দিয়েছিল সে। বলেছিল,

-‘ফুপি, চোখ কি কপালে নিয়ে হাঁটো? এত দামী গ্লাস্! কে দিবে এটার টাকা? আমার পুরো সেটটাই নষ্ট করে দিলে।’

শখ করে নিজের ভাইঝিকে একমাত্র ছেলের বউ করে এনেছিলেন। বুঝতে পারেননি, আপন মানুষই যে বুকে অস্ত্র চালাবে। রওনক তার বউয়ের হুকুমের গোলাম হয়ে থাকে সবসময়। মা-বোনেদের কোনো খোঁজই রাখে না সে। এতদিনে বাড়ি থেকে বের করে দিত, শুধু রুদিতার জন্য পারেনি। মেয়েটা রোজগার করে ভাইয়ের সংসারে টাকা দেয় বলেই, তিনি দু’বেলা দুমুঠো খেয়েপড়ে বাঁচতে পারছেন। আতিকা জাহান বুঝে উঠতে পারেন না, বয়স হয়ে গেলে সন্তানের কাছে বাবা-মায়েরা কেন এত বোঝা হয়ে যায়? শিক্ষা-দীক্ষা কী দেননি সন্তানদের? সবই তো দিয়েছেন। যখন যা চেয়েছে, তা-ই পেয়েছে সবাই। তবুও কেন একেকজন একেক মানসিকতার হলো? কেন রওনক, রুদিতা ও রুহামার মাঝে এত এত পার্থক্য? একজন লোভী, আরেকজন নরম ও শান্তশিষ্ট, অন্যজন স্পষ্টভাষী।

রুদিতার এই শান্তশিষ্ট স্বভাবটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। সবসময় অন্যের জন্য ভাবতে গিয়ে, নিজে মানুষের কটুবাক্য হজম করে দিন কাটিয়েছে। স্বামীর সংসারে তিক্ত কিছু স্মৃতি থাকে সাহসী ও আত্মোন্নতি করতে শিখিয়েছে। এখন সব কথা সহজেই হজম করে না, বরং অন্যায় দেখলে উচিত কথা ঠাস করে বলে ফেলে। যদি নিজেকে শক্ত ধাতুতে পরিণত না করত, তবে হয়তো সে আজ খড়কুটোর ন্যায় অথৈজলে ভেসে যেত। মেয়ের দুঃখ বুঝতে পারেন বলেই, পাশে এসে বসে খানিকক্ষণ গল্প করেন তিনি। তাকে ভরসা দেন। সাপোর্ট দেন। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। মনমরা মন নিয়ে রুদিতার রুমে এসে আলগোছে মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। মায়ের হাতের স্পর্শ পেয়ে পাশ ফিরে তাকাল রুদিতা। হাসিমুখে বলল,

-‘তুমি? ঘুমোওনি এখনও?’

-‘দুঃশ্চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে আমার। আর পারি না।’

মায়ের দুঃশ্চিন্তা যে তাদের দুইবোনকে নিয়ে সেটা জানে রুদিতা। তাই মা’কে একটু ভারমুক্ত রাখতে বলল,
-‘অকারণ চিন্তা করছ তুমি।’

-‘তোর কাছে এটা অকারণ মনে হবেই। রওনকের এই হাবভাব মোটেও ভালো লাগছে না আমার। কী যে চায় এই ছেলে, বুঝি না।’

-‘চিন্তা কোরো না তো। সব ঠিক হয়ে যাবে। সংসারে বাড়তি চাপ, এইজন্যই হয়তো ভাইয়ার মেজাজ সারাক্ষণ খিটখিটে হয়ে থাকে।’

নিশ্চুপে কিছুক্ষণ মেয়ের শিয়রের কাছে বসে রইলেন আতিকা জাহান। মাথা উঁচিয়ে মায়ের কোলে ভরসা খুঁজে নিল রুদিতা। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করল। মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে কথাগুলো মনে মনে গুছিয়ে নিলেন আতিকা জাহান। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বললেন,

-‘পরশু তো শুক্রবার। তোর অফিস্ নেই, তাই না?’

-‘নেই। কেন?’

-‘ভালোই হলো। পরশুদিন কয়েকজন মেহমান আসবেন বাসায়। একটু সময় দিতে পারবি?’

সন্দিহান চোখে মায়ের দিকে তাকাল রুদিতা। ভ্রু কুঁচকে বলল,
-‘কারা?’

-‘ওইযে, সেদিন একজন আপা এসেছিলেন না? উনি আসবেন। ওনার ভাই-ভাবী আর…।’

কথা শেষ করার আগেই গত সপ্তাহের কথা মনে পড়ল রুদিতার। পাংশুমুখে বলল,
-‘কেন এসব করছ মা? আমার কথা ভেবো না আর। রুহামার কথা ভাবো। ও বড়ো হয়েছে। বিয়ে দেয়া দরকার।’

-‘ওর কথা নাহয় পরে ভাবী, আগে তোর একটা গতি করি। রুহানকে নিয়ে এখানে আছিস্ দেখে, চারপাশের লোকজনও কত কথা শোনাচ্ছে। অবুঝ বাচ্চাটা…।’

-‘চারপাশের লোকজনের চেয়ে ঘরের মানুষজন কথা শোনায় বেশি, মা। বাদ দাও এসব। যেমন চলছে, চলতে দাও। এটা আমার বাবার ভিটা। এখানে আমাদের দুইবোনের হক্ব আছে। তোমার ছেলে আমাদের পথে নামানোর জন্যই এসব টালবাহানা করছে।’

-‘এজন্যই বলছি, রওনক বাড়াবাড়ি কিছু করার আগে তোদের দুইবোনকে সুখী দেখে যাই…। আমি মারা গেলে তোদের এখানে ঠাঁই হবে কি-না সন্দেহ।’

রুদিতা কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
-‘আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মা।’

-‘কী সিদ্ধান্ত?’

-‘আমার অংশেরটুকু ছেড়ে দেব, তবে একেবারে দলিলসমেত দেব না। আর আগামী সপ্তাহে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।’

আতিকা জাহান ভীষণ চমকালেন। রীতিমতো ঘাবড়ে গেলেন। ভয় পেয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে বললেন,
-‘কী বলছিস্ এসব? কোথায় যাবি?’

-‘একটা বাসা ভাড়া নেব। এখানে মাসে যা টাকা দেই, ওই টাকায় দিব্যি দুই রুমের একটা ঘর পেয়ে যাব। আমাদের চারজনের দিন আরামসে কেটে যাবে।’

-‘মরে গেলেও এখান থেকে পা সরাব না আমি। এটা আমার স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ। এখানে আমাদের সবারই অধিকার আছে। রওনকের সামান্য হুমকিধামকিতে নিজেদের হক্ব ছেড়ে দেব, এত সহজ সবকিছু?’

রুদিতা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলল,
-‘পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, একদিন রাস্তায় নামতে হবে।’

-‘আমার নিজেকে নিয়ে ভয় নেই রাহা। যত ভয় তোদের নিয়ে। বিয়েতে রাজি হয়ে যা মা। তোকে একটা ঘর দিতে পারলে, রুহানকে একটা শক্তপোক্ত আশ্রয় দিতে পারলে, রুহামার দিকটাও সহজে ভাবতে পারব। নয়তো লোকের মুখ বন্ধ করব কী করে? সবাই কানাঘুঁষা করে, ডিভোর্সি মেয়েকে ঘরে রেখে রুহামার জীবনের সুখ নষ্ট করছি। তোর একটা গতি না হলে…।’

একেই বলে কপাল! ভাগ্যদোষে আজ সে ডিভোর্সি। সবচেয়ে বড়ো কথা, যে মানুষটার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটেছিল, সেই মানুষটাই আর দুনিয়াতে নেই। অথচ একটা সময় কত জুলুম, কত চড়-লাতি পড়েছে কপালে। এজন্য ইফতির ওপর তার ঘৃণা হয়, কিন্তু মৃত বলে তাকে অভিশাপ দিতে পারে না। ভেতরের যন্ত্রণা দিনরাত তাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খায়। নিঃশেষ করে দেয়। শুধু আপন কিছু মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁচার জন্য আগ্রহ খুঁজে পায় সে। নয়তো কবেই এই দেহ, অন্ধকার কবরকে আপন করে নিত।

মা ও মেয়ের আলাপের মাঝখানে রওনক এসে নক দিল দরজায়। সে জানে, আগামী শুক্রবারে বাসায় ছোটোখাটো একটা অনুষ্ঠান হবে। বড়ো ভাই হিসেবে পাত্রের মা তার সাথেই যোগাযোগ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। এজন্য বোনকে জানাতেই এখানে আসা। যদিও সে নিশ্চিত, রুদিতা এত সহজে রাজি হবে না, তাই তাকে একটু দুর্বল করাই তার আসল উদ্দেশ্য। সে বাইরে থেকেই বলল,

-‘আগামী পরশু আকদ হবে। এক সপ্তাহ পর উঠিয়ে নিয়ে যাবে। তোর কোনো দ্বিমত থাকলেও গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ আমি ঘাড়ে বেশিদিন বোঝা রাখতে পারছি না। ঘরটাও ফাঁকা করা দরকার আর রুহামার জন্যও পাত্র খোঁজা দরকার।’

ভাইয়ের কথা শোনে ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটাল রুদিতা। বলল,
-‘একটা শর্তে রাজি হব।’

-‘কী?’

-‘মা আর রুহামার সাথে কোনোপ্রকার খারাপ ব্যবহার তুমি করতে পারবে না।’

রওনক দ্বিরুক্তি করল না। আগে একটা বোঝা হালকা হোক। পরবর্তীতে বাকীদের নিয়ে ভাববে। তাই সে সহসাই কাঁধ নাচিয়ে বলল,

-‘অসুবিধা নেই। এই দু’জনের জন্য আমি আছি।’

-‘সত্যি তো?’

-‘একদম। তুই চলে গেলে আমি-ই তো সবাইকে দেখব। আমি ছাড়া কে দেখবে শুনি? তোর হবু বর?’

ছেলের এই ধরনের কথাবার্তা ও আচরণে ভীষণ বিব্রতবোধ করলেন আতিকা জাহান। শাসনের স্বরে বললেন,

-‘এসব কী ধরনের কথা রওনক? দিনদিন তোর এত অধঃপতন হচ্ছে কেন, বলবি? এই দিন দ্যাখার জন্য তোকে পড়ালেখা করিয়েছি?’

রওনক হাসিমুখে বলল,
-‘অধঃপতন হলে এই ঘরে ঠাঁই পেতে না মা, এতদিনে বৃদ্ধাশ্রমে জায়গা হোতো তোমার।’

-‘রওনক, তুই, এসব কথা, ছিঃ ছিঃ লজ্জা হচ্ছে আমার …।’

খানিকটা চেঁচিয়ে উঠলেন আতিকা জাহান। রওনক ফের ঠোঁটে হাসি ধরে রেখে বলল,
-‘হ্যাঁ। আমি বললেই লজ্জা হয়। আর ডিভোর্সি মেয়েকে ঘাড়ে তুলে আদর করছ, এতে লজ্জা হয় না। দশজন দশ কথা বললেও কানে তুলো দিয়ে বসে থাকো।’

-‘আর একটা কথা বললে চ//ড়িয়ে তোর গাল ফা//টিয়ে দেব।’

-‘তাই না-কি? মেয়েদের জন্য এত দরদ কেন তোমার? একটা ডিভোর্সি তকমা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আরেকটা দিনদিন বয়স বাড়িয়ে চলেছে। বিয়েশাদীর নামগন্ধ নেই। শুধু ভাইয়ের কপালে দিন-রাত ঝাঁ//টার বাড়ি দেয়া। ওদের জন্য রাস্তায় বের হওয়াটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার। শীঘ্রই দুটোকে বিদায় করো মা। আর পারব না আমি এসব বোঝা টানতে।’

হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল রওনক। আতিকা জাহান মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলেন। এই ছেলে পেটে ধরেছেন তিনি? বিশ্বাস হচ্ছে না। এমন অ//মানুষ, জানো//য়ার কোথা থেকে এলো তার গর্ভে?

***

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ