#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
“আমরা তোরও বিয়েটা এবার দিয়ে দিতে চাইছি। তুই বিয়েটা করে ইটালি চলে যাবি। এক বছর পর আসলে অনুষ্ঠান করাও হবে। তোর কোনো স্ট্রেস নিতে হবে না।”
মিস্টার রিয়াজউদ্দীন একদমে কথাগুলো বলে থামলেন। এবার মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে পরিস্থিতির অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু আর্শির মুখশ্রীতে অবাক বা উত্তেজিত হওয়ার কোনো লক্ষণ না দেখে স্ত্রী ও ছেলের সাথে ইশারায় ব্যাপারটা ব্যাক্ত করেন। আর্শি শান্ত স্বরে বলে,
“আমি তো পালিয়ে যাচ্ছি না। যদি পালিয়েই যেতাম, তবে এবারও আসতাম না। কারণ আমি তো জানি, আমি দেশে আসব আর তোমরা বিয়ের কথা বলবে না? তা আবার হয় নাকি? এই কয়দিনে, মা অন্তত চৌদ্দবার বিয়ের কথা তুলেছে। তাই হাইপার হওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছি। তোমরা যতোই বলো যে স্ট্রেস নিতে হবে না। এটা মিথ্যা। বিয়ে মানেই একটা আলাদা স্ট্রেস। এক বছর পর যখন অনুষ্ঠান করবেই, তাহলে তখনি বিয়ে দিও। যেদিন আমার মাস্টার্স ডিগ্রিটা হাতে দিবে, ওই দিনের টিকেট কেটেই চলে আসব। তাও এখন লং ডিস্টেন্স রিলেশন মেন্টেন করতে বলো না। প্লিজ!”
আদিব বোনের সামনে পড়ার টেবিলের চেয়ার টেনে বসে বলে,
“ছেলে ভালো। দেখতেও খুব হ্যান্ডসাম। তাছাড়া ছেলে তোকে পছন্দ করেছে এবং চাইছে এখন আকদটা হয়ে যাক। সেও এক বছরে নিজেকে গুছিয়ে নিবে। তারপর আনুষ্ঠানিক বিয়ে।”
“ভাইয়া, প্লিজ। আমি যে সন্দেহবাতিক! তুমি জানোনা? টেনশন করতে করতে দেখবে আমি আরও শুকিয়ে গেছি। চোখের নিচে কালি সুরমার মতো ডার্কসার্কেল পড়ে যাবে। বুঝেছ? চোখের সামনে থাকা আর হাজার হাজার মাইল দূরে থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে।”
আর্শির কথা শুনে ওর বাবা-মা, ভাই একে অপরের দিকে অসহায়ের মতো তাকাচ্ছে। আর্শি এদের চোখে-মুখের অসহায়ত্ব বুঝতে পেরে হতাশ স্বরে বলে,
“তোমরা চাচ্ছো, আমি ওই ছেলেকেই বিয়ে করি?”
তিনজন একত্রে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। আর্শি ফুঁস করে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“ওকে। তাকেই বিয়ে করব। আমি নিজে উনার সাথে কথা বলব। তাকে বুঝাব যেন আকদ এখন না করে।”
আদিব বিড়বিড় করে বলে,
“সে বুঝলে তো! ইটালি যাওয়ার আগে যা ঘটনা ঘটিয়ে গেছো! তা শুনে বান্দার মা*থা খারাপ হয়ে গেছে!”
আর্শি শেষোক্ত কথাটা আবছা শুনে ভাইকে জিজ্ঞাসা করে,
“কার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, ভাইয়া?”
আদিব থতমত খেয়ে মিথ্যে হাসি দিয়ে বলে,
“আমার! আসলে কী করব বুঝতে পারছি না!”
আর্শি বিভ্রান্তির দৃষ্টিতে চাইলে আদিব তড়িঘড়ি করে ফের বলে,
“আসলে ছেলের বাবা-মা যদি না মানতে চান! মানে সেজন্য আরকি! তোকে বোঝাতে পারছি না। তুই বরং নিজেই কথা বলিস।”
এই বলে আদিব জলদি করে সেখান থেকে সটকে পড়ে। তারপর আর্শির বাবা-মাও। আর্শি দরজা লক করে মাথায় হাত দিয়ে সটান হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।
_________
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নাহিদের ঘুম ভাঙে তাও অফিসের পিয়নের ডাকে। সে ঘুম থেকে উঠে কপাল কুঁচকে আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে পিয়নকে জিজ্ঞেসা করে,
“আমি ঘুমালাম কখন?”
পিয়ন জবাব দেয়,
“সেটাতো জানিনা, স্যার। আমি তো অফিস তালা লাগাতে আসছি। এসে দেখি আপনি ঘুমাইতেছেন। স্যারের কী শরীর খারাপ?”
“না।”
তখনি তার বিয়ের কথা মনে পড়ে। সে চট করে দেয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পিয়নকে শুধায়,
“এই ঘড়ি কি ঠিক? এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে?”
পিয়ন ঘড়ির দিকে চেয়ে বলে,
“হ স্যার। তাই জন্যেই তো আমি তালা দিতে আইছি।”
নাহিদ ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
“হোয়াট? আর ইউ কিডিং মি? এখন সাড়ে পাঁচটা বাজে?আজ আমার বিয়ে, গ*বে*ট! আর তুমি আমাকে এখন ডাকতে এসেছো? এতো সময় কী করছিলে? যখন দেখেছিলে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম ডাকলে না কেন?”
পিয়ন ভয় পেয়ে যায়। এক পা পিছিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলে,
“স্যার, আমি তো জানতাম না যে আজকে আপনার বিয়ে। আপনে বিয়ে রাইখা এখানে আসছেন, এটা জানলে আমি কি আপনারে আগে ডাকতাম না?”
নাহিদ টেবিলে জোড়ালো ঘু*ষি দিয়ে দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। ফোনে জলদি করে ঢাকার জন্য ফ্লাইটের টিকেট কা*টে।
———–
সন্ধ্যার একটু আগেই আরিয়াকে নিয়ে আশিক ও নাহিদের বাবা-মা, তাদের বাড়িতে পৌঁছেছে। নাহিদ ও আশিকের কাজিনরা আরিয়ার সাথে গল্প করছে। নাহিদের বাবা মিস্টার হাসান আহমেদ খবর পেয়েছেন, নাহিদ অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েছে। নাহিদ আসার আগে আরিয়াকে আশিকের রুমে রেখে আসতে হবে। বাড়ি ফিরতে নাহিদের কম করে সাড়ে নয়টা বাজবে। মিসেস নেহা স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে বেশ ভয় পাচ্ছেন, কী হতে চলেছে ভেবে।
আশিক আরিয়ার পাশে এসে বসে ফিসফিস করে বলে,
“ভাইয়া ঢাকার জন্য বেরিয়ে পড়েছে। তুমি আজকে ভাইয়ার সামনে যাবে না।”
“কেন? মা*রবে নাকি? এতো সাহস?”
আরিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে মৃদু স্বরে কথাটা বলে। আশিক কাজিনদের দিকে জোরপূর্বক হাসি বিনিময় করে আরিয়ার হাত ধরে ব্যালকনিতে নিয়ে যায়। যা দেখে কাজিন মহলে একপ্রকার হাসির রোল পড়ে যায়। আশিক বলে,
“ভাইয়ার মা*থা ঠিক থাকবে না। কী করতে কী করে ফেলবে জানিনা। খালামনি তো বলতেছে, আজকে কোনো হোটেলে গিয়ে থাকতে। দেখো ভাইয়ার রাগ কিন্তু অনেক খারাপ।”
“শোনো, তোমার ভাইকে আমি মোটেও ভয় পাই না। সে যা খুশি করুক। আমাকে কিছু বলতে আসলে আমি তো মুখের উপর জবাব দেবো। দেখি সে কী করতে পারে। বেশি হলে বলবে যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাও! তো যাব। তোমাকে নিয়েই তো যাবো। না?”
“তুমি বুঝতেছো না। ভাইয়া যদি জাস্ট বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে তাহলে তো সমস্যা নেই। আমার মায়ের নামে আমার নানু ভাই একটা ফ্ল্যাট রেখেছেন। ওটা সবসময় তালাবদ্ধই থাকে। বছরে তিন কি চারবার পরিষ্কার করতে একটু খোলা হয়। কিন্তু…”
আরিয়া হাতে তু*ড়ি বা*জিয়ে বলে,
“তাহলে তো হলোই। তোমার ভাই বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমরা সেখানে গিয়ে ওঠব। তবে তোমার ভাইকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। তার চোখের সামনে আমি তোমার বউ হয়ে ঘুরে বেরাব। যদিও আমি মন থেকে চাই, তার মুখটাও যেন আমায় না দেখতে হয়। গতকাল রাতে আমি ভাবলাম, ওই একটা লোকের জন্য আমি আমার মানসিক শান্তি কেন নষ্ট করব? তার সাথে যেচে গিয়ে আলাপ রচানোর আমার আর ইচ্ছা নেই। সে তার মতো যা খুশি করুক। সময় থাকতে যে আমি রেহাই পেয়েছি, তাতেই শুকরিয়া।”
“হুম। আচ্ছা, তোমার কি ক্ষুধা পেয়েছে? কিছু খাবে? খালামনি জিজ্ঞাসা করতে বলেছে।”
“না। এখন কিছু খাব না।”
“আচ্ছা। তাহলে শাড়ি বদলে রেস্ট করতে পারো। আমার রুম তো আর সেরকম ভাবে সাজাবে না। নাহিদ ভাইয়ার রুমটা সাজানো। রিংকি, সানি, মিয়ানরা বোধহয় ফুলের পাঁপড়ি ছিটিয়ে দিবে।”
আরিয়া মাথা নেড়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে যায়।
_______
ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে নাহিদ প্রথমে বিয়ের কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা করে। সেখানে গিয়ে জানতে পারে, বিয়ে হয়ে গেছে! নাহিদের মাথায় কিছু ঢুকছে না। সে যদি সবে এসে পৌঁছায়, তাহলে বিয়েটা কীভাবে হলো? দ্রুত সে তার বাবাকে ফোন লাগায়। মিস্টার হাসান এতক্ষণ যাবত ছেলের ফোনের অপেক্ষাই করছিলেন। তিনি ফোন রিসিভ করে নাহিদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রথমেই গম্ভীর স্বরে বলেন,
“বাড়ি এসো তুমি।”
“বাবা, এরা কী বলছে? বিয়ে নাকি হয়ে গেছে? বিয়ে কীভাবে হলো? আমি তো মাত্র এসে পৌঁছালাম। তাহলে বিয়ে কীভাবে হয়?”
মিস্টার হাসান ছেলের উত্তেজিত অবস্থা বুঝতে পারলেন। তিনি তাও শান্ত ও গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,
“সব প্রশ্নের উত্তর তুমি বাড়ি আসলেই পাবে। তোমাকে সবাই কতবার ফোন করেছে সেটা দেখেছ? ফোন তো মনে হয় সাইলেন্ট করে রেখে দিয়েছ!”
নাহিদ চিৎকার করে নিজের মা*থার চু*ল টেনে বলে,
“আমার মা*থায় কিছু ঢুকছে না, আমার মা*থায় সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। কী হচ্ছে? কী হয়েছে? ক্লিয়ার করে বলো।”
মিস্টার হাসান এবার ধমকে উঠে বলেন,
“বাড়ি এসো তুমি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছ কেন? সবাই তোমার মতো অভদ্র না। বাড়ি এসো।”
এই বলে মিস্টার হাসান ফোন ডিসকানেক্ট করে দেন। নাহিদ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে এপসের মাধ্যমে উবার ডাকে। অতঃপর দশ-পনেরো মিনিট পর উবার আসলে তাতে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।