#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
বধূবেশে স্টেজে বসে আছে আরিয়া। ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন এঙ্গেলে ছবি তুলে চলেছে। আর্শিও এতক্ষণ বোনের সাথে থেকে কিছু লাগবে কী-না এবং ছবি তুলছিল। এবার সে মায়ের কল পেয়ে স্টেজ থেকে নেমে মায়ের কাছে যাচ্ছে। এদিকে যে কেউ তার দিকে অবাক ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে আছে তা সে জানেও না। সেই কেউ একজনের নাম শ্রাবণ! আজ সকালেই সে চার বছর পর কানাডা থেকে দেশে এসেছে। এসেই বন্ধুর বোনের বিয়েতে চলে এসেছে। আদিব মেহমানদের খাবারের দিকে দেখে এসে শ্রাবণের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“কী হলো? তুই দাঁড়িয়ে রইলি কেন? তুই না বললি ছবি তুলবি? যা ছবি তোল। এখন ফাঁকা আছে। এখনো আরুর কাছে সবাই এসে পৌঁছায়নি। মেহমানরা খাচ্ছে তো, ভীড়টা একটু কম। এখনই ছবি-টবি তুলে ফেল। পরে আর ফাঁকা পাবি কী-না!”
শ্রাবণ এখনও আর্শির যাওয়ার পানে চেয়ে আছে। আদিব লক্ষ্য করলো, শ্রাবণ অন্যদিকে তাকানো যেদিকে চেনা কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আদিব শ্রাবণের কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
“কই দেখিস?”
শ্রাবণ এবার হুঁশে ফিরে। সে হড়বড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“বিয়ে কার?”
“কেন? তুই সামনে দেখতে পাচ্ছিস না? কার বিয়ে।”
“আরুর?”
“হ্যাঁ। বউ সাঁজে তো আরুই বসা।”
“আমি ভাবলাম….! বড়ো বোনের আগে ছোটো বোনের বিয়ে? নাকি ওর বিয়ে আগেই হয়ে গেছে?”
শ্রাবণের কণ্ঠস্বরে উৎকণ্ঠার কারণ বুঝতে পেরে আদিব খানিক মশকরা করতে চাইলো। হাসি চেপে রেখে মুখ-চোখে গাম্ভীর্যতা এনে বলল,
“আর্শির বিয়ে তো….”
আদিব কথা শেষ করার আগেই শ্রাবণ হকচকিয়ে অস্থির হয়ে শুধালো,
“কার সাথে? তুই তো বলিসনি। ও তো ইটালি গিয়েছিল।”
আদিব এবার ফিক করে হেসে ফেলে। শ্রাবণ হতবুদ্ধির মতো আদিবের হাসি দেখছে। তার রাগও হচ্ছে প্রচণ্ড। আদিবকে ঘু*ষি মা*রতেই নিবে তার আগেই আদিব সরে গিয়ে বলে,
“রিল্যাক্স। আর্শির বিয়ে হয়নি। আর্শির আগে কেন আরুর বিয়ে দিচ্ছি সেটাও জানতে পারবি। এখন কি তুই আরুর সাথে ছবি তুলবি? নাকি….”
শ্রাবণ মাথার পেছনে হাত দিয়ে ঘাড় নুইয়ে হেসে বলে,
“একটু পর। আগে এই শ্রাবণের বৃষ্টিকে দেখে আসি।”
“যা যা। শুধু তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড বলে বেঁচে গেলি।”
শ্রাবণ হেসে আর্শি যেদিকে গেছে সেদিকে যেতে থাকে। আর্শি তার মাকে দেখে এসে এখন ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছে চুল ঠিক করতে। খোঁপার ফুলের মালাটা খুলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তার। হঠাৎ কেউ একজন তাকে হেঁচকা টানে একটা কর্ণারে নিয়ে যায়। আচমকা এমন হওয়াতে আর্শি আঁতকে উঠে চিৎকার করতে নিবে, তার আগেই আগুন্তকটি তার মুখ চেপে ধরে বলে,
“কেমন আছো, বৃষ্টি?”
আর্শি এবার তার মুখ ও হাত চেপে ধরে রাখা ব্যাক্তিটির দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো। তাকে দেখেই চোখ যেন পুরো ছানাবড়া! আরেক হাত দিয়ে শ্রাবণের হাত নিজের মুখ থেকে সরিয়ে তেজি স্বরে বলল,
“আপনি? আপনি এখানে কীভাবে এলেন?”
“সে যেভাবেই আসি। তবে এসে শান্তি লাগছে। তিন-চার দিন থেকে খুব অশান্তিতে ছিলাম। কিন্তু এখন তোমাকে দেখে সব অশান্তি দূর হয়ে গেছে।”
আর্শি কপাল কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কেন? আমি আবার কী করলাম যে আপনার অশান্তি দূর হয়ে গেছে?”
শ্রাবণ আর্শির হাত ছেড়ে দেয়ালে এক পা ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে পকেটে দুই হাত গুঁজে দাঁড়ায়। অতঃপর আর্শিকে উদ্দেশ্য করে চোখ মে*রে হেসে বলে,
“এইযে বিয়ে করছো না! তুমি এই শ্রাবণের জন্য রহমতের বৃষ্টি বুঝলে, বৃষ্টি?”
আর্শি ফের কপাল কুঁচকে শুধায়,
“আমি বিয়ে করছি, কে বলল? আর আপনি আমাকে একদম বৃষ্টি! বৃষ্টি! বলবেন না। আমার নাম ‘আর্শি হক’। বৃষ্টি না। আপনি চাইলে বার্থ সার্টিফিকেটও দেখিয়ে দিব।”
শ্রাবণ বাঁকা হেসে বলে,
“আমার কাছে তো তুমি ‘বৃষ্টি’, ‘আয়না’, ‘আর্শি’ সব। কিন্তু বৃষ্টি নামটা একান্ত আমার দেওয়া ছিল যে! আন্টির কোলে সদ্য জন্ম নেওয়া তুমিটাকে দেখে তেইশ বছর আগের ছোটো আমিটা তোমাকে প্রথম ‘বৃষ্টি’ বলেই সম্বোধন করেছিল। তুমুল বৃষ্টির সন্ধ্যায় শ্রাবণের শেষ শুক্রবার তোমার জন্ম হয়েছিল সেদিন। আদিবের কাছ থেকে ওর বোন হওয়ার কথা শুনে বৃষ্টির মধ্যেই তোমাকে দেখতে ভীষণ জেদ করে আম্মুকে নিয়ে হসপিটালে ছুটেছিলাম। তখন থেকেই তুমি বৃষ্টি। তুমি বৃষ্টির মতো স্নিগ্ধকর আমার জীবনে। শ্রাবণের বৃষ্টি!”
আর্শি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে,
“আপনাকে এখানে কেউ বৃষ্টি নিয়ে রচনা লিখতে বলেনি। আপনার বৃষ্টি ভালো লাগলেও, আমার মোটেও ভালো লাগে না। তাই আমাকে বৃষ্টি বলে ডাকবেন না। যদি ‘আর্শি’ নামে ডাকতে না পারেন, তবে আমাকে ডাকারই দরকার নেই।”
“তোমাকে আমি সারাজীবন ‘বৃষ্টি’ বলেই ডাকব।”
আর্শি বিরক্ত হয়ে বলে,
“উফ! এজন্যই আপনাকে আমার অসহ্য লাগে। দূর হোন এখান থেকে!”
আর্শি শাড়ি ধরে সেখান থেকে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। শ্রাবণ সেখানেই অনড়ভাবে দাঁড়িয়ে স্বগোতক্তি করে,
“আর না। এবার তোমাকে আর দূরে যেতে দিব না। ছাড়ও দিব না। মনের মধ্যে একবার যখন ভয় ঢুকে গেছে, সেটা না মেটা অবধি শান্তি নেই।”
অতঃপর শ্রাবণ আশেপাশে নজর বুলিয়ে স্থান ত্যাগ করে।
________
ওদিকে নাহিদ দুপুর একটার দিকে সিলেটের ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং শেষে কফি খেয়ে বেরোনোর চিন্তা করেছিল। কিন্তু কফি খেয়ে ডেস্কেই ঘুম! সেই ঘুম এখনও জারি রয়েছে। বেচারা জানেও না, আজকে তার জন্য কী সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে!
এদিকে আশিক, হাসান আহমেদ, মিসেস নেহা সবাই বরযাত্রী পৌঁছে গেছে। মিস্টার হাসান তার আত্মীয়দের সবাইকে বলেছে যে, ‘নাহিদের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনও নটরিচেবল। তাদের ছেলের জন্য একটা মেয়ের পরিবারের সম্মানহানি তো করতে পারে না।’ কেউ কেউ নাহিদের জন্য চিন্তিত হলেও মিস্টার হাসান সব সামলে নিয়েছেন।
কাজি সাহেব আবারও আরিয়া ও আশিকের বিয়ে পড়ায়। এবার বিদায়ের সময় উপস্থিত। আরিয়া তার বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে গাড়িতে ওঠে। নতুন জীবনের জন্য, নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছে সে। ভয়তো কিছুটা হবেই। মিসেস আশালতা, ছোটো মেয়ের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে পড়েছেন। আর্শি নিজের মাকে সামলে গাড়িতে ওঠায়। তারপর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করে।
_______
সন্ধ্যায় আর্শি বসে বসে ফোন দেখছিল তখন তার দরজায় টোকা পড়ে। আর্শি উঠে দরজা খুলতেই দেখে তার বাবা-মা, ভাই দাঁড়ানো। তিনজনকে একসাথে দেখো আর্শি জিজ্ঞাসু নয়নে তাকায়। আদিব বোনকে পাশ কাটিয়ে রুমে প্রবেশ করে বিছানায় বসে। আর্শি ঘুরে বলে,
“কী ভাইয়া?”
মিসেস আশালতা ও মিস্টার রিয়াজউদ্দীনও রুমে প্রবেশ করেন। আর্শি এবার তিনজনের সামনে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত গুঁজে শুধায়,
“কী হয়েছে তোমাদের? হঠাৎ তিনজনে মিলে আমার রুমে এসে হানা দেওয়ার কারণ কি জানতে পারি?”
মিসেস আশালতা খানিক হাসার চেষ্টা করে বললেন,
“কেন আমরা কি তোর রুমে আসতে পারি না?”
“সে তো পারোই কিন্তু তিনজনে একসাথে কেন? কোন কারণ তো আছেই। কোন কারণ ছাড়া তোমরা তিনজনে কখনোই আমার রুমে একসাথে আসো না। ব্যাপারটি কি বলতো? কোন সিরিয়াস কিছু? গন্ডগোল আছে কিছু?”
আদিব উঠে দাঁড়িয়ে বোনের মাথায় একটা চা*টা মে*রে বলে,
“তোর সব সময় এসব চিন্তা-ভাবনা কেন করতে হয়? আপনার নরমালি আসতে পারি না?”
“পারো তো। লাস্ট এসেছিলে যেদিন আমি ইটালি চলে যাব, তার আগের দিন রাতে তোমরা চারজনে মিলে এসেছিলে। কিন্তু আজকে আসার কারণটা বুঝতে পারছি না। কারণ কালকে আমি ইটালি যাচ্ছি না। আমি যাচ্ছি আরো পাঁচ-ছয় দিন পর।”
মিস্টার রিয়াজউদ্দিন মেয়ের হাত ধরে মেয়েকে নিজের পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“দেখ মা, আজকে তোর ছোট বোনের বিয়ে গেল। আত্মীয়-স্বজনরা তো বলাবলি করছে, কেন আমরা তোর বিয়ের আগে আরিয়ার বিয়ে দিলাম?”
আর্শি ভ্রু কুঁচকে জবাবে বলে,
“তো বলতে দাও না! আল্লাহ তাদের জবান দিয়েছেন, তারা তো বলবেই।”
“তুই বুঝতে পারছিস না। বলুক তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু আজ বা কাল তোকে তো বিয়ে দিতেই হবে তাই না।”
“দিও কিন্তু এখন না। আমি কি না করেছি যে আমি একবারেই বিয়ে করবো না?”
মিসেস আশালতা এবার মেয়ের পাশে এসে বসেন। অতঃপর বলেন,
“দেখ, একদিন না একদিন তো বিয়ে করবিই সেটা…”
“সেটা কী, মা?”
আর্শির পালটা প্রশ্নে মিসেস আশালতা, স্বামী ও ছেলের দিকে তাকান। আর্শিও উত্তর জানতে ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,