#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
দেখতে দেখতে চার-পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। আজ আরিয়ার মেহেদী অনুষ্ঠান হচ্ছে ঘরোয়া ভাবে। আরিয়ার মামা-চাচা, খালা-ফুফিরা এসেছে সব। বড়ো বোন হিসেবে আর্শির কাজও বেড়ে গেছে। মা, খালা, মামি, চাচি, ফুফিদের সাথে রান্নার দিকে টুকটাক দেখতে হচ্ছে। ভুনা খিচুড়ির সাথে কাবাব ও হরেক রকমের ভর্তা হচ্ছে। আবার আরিয়ার একহাতে মেহেদী পড়িয়ে এখন নাস্তা বেড়ে দিচ্ছে সবাইকে। আর্শি একটা বাটিতে আরিয়ার জন্য নুডুলস বেড়ে এনে ওর পাশে বসে ও-কে খাইয়ে দিচ্ছিলো তখন আরিয়ার ফোন ভাইব্রেটিং শুরু করে। আরিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,
“এই নিয়ে দশবার! এতোবার কল করার কী আছে? বিকেলে তো বললাম কল না করতে। তারপরও!”
“থাম না। নাহিদ কারও কথা শোনার বা বুঝার পাত্র নয়। তার নিজের যা ইচ্ছে হয়েছে তাই করছে। দে ফোন বন্ধ করে দেই।”
আরিয়া বাঁকা হেসে বলে,
“উঁহু। ফোন তো এখন বন্ধ করব না। করুক। যতো পারে কল করুক। ধৈর্যের পরীক্ষা দেক আজ। দেখি কতক্ষণ কল করতে পারে! আমি তো কল রিসিভ করব না। আমার মেহেদী পড়া হয়ে গেলে একবার কল করে বলে দিব যে খুব বিজি ছিলাম, ফোন কাছে ছিল না, তাই ধরতে পারিনি। আর এখন খুব ক্লান্ত, আমি ঘুমাব বলে কল কেটে দিব।”
আর্শি সহ ওর কাজিন ও ফ্রেন্ডরা হেসে ওঠে। কলি বলে,
“তুই পারিসও আরু! আর্শির উচিত তোর থেকে শেখা।”
“সেটা তুমি ঠিকই বলেছ। আপুর উচিত আমার কাছ থেকে শেখা। তবে তুমিও তো তোমার ফ্রেন্ডকে কিছু শিখাতে পারোনি, ভাবি! তুমি যে আমার ভাইকে কিভাবে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোড়াও! তোমার ফ্রেন্ড হয়ে আপু কিছুই শিখতে পারেনি। আপুর বিয়ের পর দেখবো আপু দুলাভাইয়ের কথায় উঠছে আর বসছে!”
আর্শি আরিয়ার মাথায় আলতো চা*টা মে*রে বলে,
“মোটেও না। বেশি কথা বলিস তুই। চুপচাপ খা। হাতের উলটো পৃষ্ঠাতে মেহেদী লাগানো এখনও বাকি।”
আরিয়া হাসতে হাসতে খেয়ে নিলো।
_________
নাহিদ কপালে হাত দিয়ে নিজের রুমে বসে আছে। সে আরিয়ার হঠাৎ বিহেভিয়ারের চেঞ্জটা বুঝতে পারছে না। আরিয়াকে তাকে ইগনোর করে চলছে। আগে এক বার কল করলে প্রথমবার কলেই আরিয়া রিসিভ করতো। ক্লাসে থাকলেও রিসিভ করে বলতো ক্লাসে আছে। কিন্তু এখন! এতবার কল করলেও কল রিসিভ করে না। যদিও অনেক সময় পর রিসিভ করে, তখনও ঠিকমতো কথা বলে না। এসব নাহিদকে খুব ভাবাচ্ছে। সে তো আরিয়ার মধ্যে এমন মনোভাব দেখতে চায়নি। সবসময় যেমন স্বভাবের মেয়ে চেয়েছে, আরিয়া ঠিক তেমনটাই ছিল। হঠাৎ কী হলো? এসবে আর্শির হাত আছে কী-না তাই ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে বিরক্ত হয়ে আর্শির নাম্বারে কল করলো। আর্শি তখন আরিয়াকে খাইয়ে নিজেও নুডুলস খাচ্ছে। এমন সময় নাহিদের নাম্বার থেকে কল আসতে দেখে ভ্রুকুঞ্চন করে তাকায়। আর্শির পাশে কলি বসা। কলিও ফোনটা দেখে বলে,
“তোকে কল করছে এখন?”
“তাই তো দেখছি। কে*টে দেই।”
আর্শি কল কাটতেই যাচ্ছিলো, কলি বাধা দেয়,
“এই না না। কা*টিস না। রিসিভ কর। দেখ কী বলে।”
আর্শি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“কী আর বলবে! বলবে যে, আমি আরুকে কোনো কানপ*ড়া দিয়েছি কী-না? এসবই।”
“তাহলে তো ভালোই হয়। এখানে আরুও আছে।”
অতঃপর কলি আরিয়াকে ডাকে,
“আরু, নাহিদ এখন আর্শিকে কল করছে।”
আরিয়া হেসে উঠে বলে,
“রিসিভ করো তো। দেখি কী বলে ”
আর্শি রিসিভ করলো। রিসিভ করে আর্শি হ্যালো বলতেই অপরপক্ষ থেকে বাঁজখাই কণ্ঠে ভেসে আসে,
“সত্যি করে বলো, তুমি আরিয়ার মা*থায় কী ঢুকিয়েছ?”
আর্শি হাসি চেপে রেখে গম্ভীর স্বরে বলে,
“মানে? আমি আবার কী বলব? আপনি এজন্য আমাকে কল করে চিৎকার করছেন?”
“ডোন্ট লাই, আর্শি। আরিয়া সাডেনলি আমাকে ইগনোর করা শুরু করেছে। ও এমন না। তুমিই কিছু করেছ।”
“রিয়েলি! আপনার মনে হয়, আরু আমার কথায় এসব করবে? আমি আপনাকে কী বলেছিলাম? আমার বোনকে আমি ভালো করে চিনি। ওর যখন যাকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজনীয় মনে হয়, ও তখন তাকে গুরুত্ব দেয়। এখন আপনাকে গুরুত্ব না দিয়ে ওর হাতে মেহেদীতে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে, তাই হাতের মেহেদীকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আপনাকে দিচ্ছে না। এটা নিয়ে এতো জলঘোলা করার কী আছে? আপনি কি জানেন না? আজকে ওর হাতে মেহেদী পড়ানো হচ্ছে। তাহলে বারবার কলই বা করছেন কেন? আপনাকে তো বিকালের দিকে আমার সামনেই কলে বলল।”
নাহিদ চুপ করে শুনে যায়। অতঃপর কোনো জবাব না দিয়ে কল ডিসকানেক্ট করে দেয়। আরিয়া সাথে সাথে বলে,
“এখন জবাব দেওয়ার মতো কিছু নেই তাই খট করে কল কে*টে দিয়েছে। নিজেরটা ষোলআনা। নিজেকে কোথাকার সম্রাট মনে করে, আল্লাহ জানে। আমাকে নিজের ইশারায় নাচাতে চায়! ভেবেছিলাম, মেহেদী শুকিয়ে গেলে নিজ থেকে কল করব। কিন্তু না। করব না। সে যদি কল করে তবে ভেবে দেখব রিসিভ করব কী-না!”
“যা ইচ্ছে হয় করিস। এর নাম্বার আমি ব্লক করব। বিরক্তিকর একটা।”
আর্শি নাহিদের নাম্বার ব্লক করে নিজের এক হাতে মেহেদী লাগাতে শুরু করে।
_____
পরদিন সকাল থেকে হলুদের অনুষ্ঠানের তদারকি শুরু। সন্ধ্যার মধ্যেই হলুদ দেওয়া সব শেষ করবে। তারপর আরিয়াকে রেস্ট করতে দেওয়া হবে। সকালে আশিকের সাথে ঘণ্টা খানেক ফোনে কথা বলে আরিয়া একটু ঘুমাচ্ছিল তখন আবার নাহিদ ফোন করে। ফোনের রিংটোনে আরিয়ার ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। সে বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে বিরক্তির স্বরে প্রথমেই বলে,
“কী সমস্যা? এতো কল করেন কেন? সারাক্ষণ আপনার জন্য আমার ফোনটাও রেস্ট পায় না।”
কথাটা শুনে নাহিদের মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায়। চোখ আপনাআপনি কুঁচকে যায়। সে শুধায়,
“কী হয়েছে তোমার? কিছুদিন যাবত তোমার মধ্যে অনেক চেঞ্জড দেখতে পাচ্ছি। তুমি আমাকে আগের মত ঠিকভাবে কেয়ার করো না। কথা বলতে চাও না।”
আরিয়ার চোখে মুখে অবজ্ঞা ফুটে ওঠলো। সে কৃতিম স্বাভাবিক স্বরে বলল,
“কই ঠিকি তো আছে। আমার মনে হয় আপনার মধ্যে একটু বেশি পাত্তা চাওয়ার স্বভাবটা আছে। তাই আপনি একটু বেশি এক্সপেক্টেশন রাখছেন আমার কাছ থেকে। এতো এক্সপেক্টেশন রাখতে নেই। জীবনে সবার সব এক্সপেক্টেশন পূরণ হয় না।”
নাহিদ অবাক হয়ে বলে,
“এভাবে বলছো কেন? আমাদের কাল বিয়ে।”
“কীভাবে বললাম? এখন রাখুন তো। ঘুমাচ্ছিলাম আমি। বায়। ঘুমাব। দুপুরের পর থেকে সাঁজগোঁজে সময় যাবে। সন্ধ্যায় হলুদের অনুষ্ঠান।”
নাহিদ প্রত্যুত্তরে কিছু বলবে তার আগেই আরিয়া কল ডিসকানেক্ট করে মোবাইল সুইচঅফ করে রেখে দিয়েছে। নাহিদ বিরক্তিতে চ সূচক উচ্চারণ করে ফোন বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে। আশিক নাহিদের রুমের বাহিরে দাঁড়ানো ছিল। আরিয়াকে কল করাতে তার নিজের কাছেও রাগ লাগছিল কিন্তু কালকের দিন ছাড়া তো নাহিদকে এই ধা*মাকাদার খবরটা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই সবটা চেপে দিয়ে হাসি মুখে নাহিদের ঘরে গিয়ে বলে,
“ভাইয়া, তোমার শেরোয়ানি এসেছে। সাথে আমারটাও।”
“তুই যা। আমি আসছি।”
“আচ্ছা।”
আশিক চলে আসে। অতঃপর নিজের জন্য অর্ডার করা সাদার ভেতরে সাদা কারচুপির কাজ করা শেরোয়ানিটা আগেই নিজের ঘরে নিয়ে যায়। নয়তো নাহিদ যদি দেখে আবার প্রশ্ন তোলে! বলাতো যায় না।
নাহিদ ড্রয়িংরুমে এসে শেরোয়ানি নিয়ে রুমের দিকে আবার চলে যাচ্ছিল তখন মিস্টার হাসান বলেন,
“সকালে তোমাকে একটু সিলেট যেতে হবে।”
নাহিদ ঘুরে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“হোয়াট? কাল আমার বিয়ে।”
“আমি জানি। জাস্ট হাফ এন আওয়ারের কাজ। তাছাড়া বরযাত্রী বের হবে দুইটার দিকে। তুমি এসে পৌঁছেও যেতে পারবে। তোমাকে তো গাড়িতে যেতে বলছি না।”
“তুমি চলে যাও। আমি যাচ্ছি না।”
“কাজটা তোমার বলেই বলেছি। ক্লায়েন্টরা কালকেই লন্ডন ফিরে যাবে। এখন দেখো কী করবে। আমার বলার দরকার ছিল বলে দিয়েছি।”
নাহিদ কিছু সময় দাঁড়িয়ে ভাবলো। এরইমধ্যে তার মাথায় একটা শ*য়তা*নী বুদ্ধিও এসেছে। বরযাত্রী দেরি করে গিয়ে আরিয়াদের চিন্তায় ফেলে দিবে। অন্তত তিন ঘণ্টা দেরি করে যাবে। তখন আরিয়ার পরিবারের চোখ-মুখের অবস্থা দেখার মতো হবে। এটা ভেবেই বাঁকা হেসে বাবাকে হ্যাঁ বলে দেয়।
চলবে ইন শা আল্লাহ,