শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-০৬

0
513

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৬
মিসেস নেহা ও মিস্টার হাসান এসেছেন আরিয়াদের বাড়িতে। উনারা এসেছেন তো খুশি মনে কিন্তু এখানে এসে নিজেদের ছেলের কীর্তিকলাপ শুনে মা*থায় হাত দিয়ে বসে আছেন। এবার আরিয়া সাফ সাফ জানিয়ে দেয়,

“আমি আপনাদের ছেলেকে বিয়ে করব না। কিন্তু তারই সামনে দিয়ে ওই দিনই বিয়ে করব!”

আরিয়ার কথা শুনে ঘরসুদ্ধ লোকজন অবাক হয়ে যায়। রিয়াজউদ্দীন নিজের মেয়েকে জিজ্ঞেসা করেন,
“কী বলতে চাইছো তুমি?”

“কেন? আর পাঁচদিন পর বিয়ের সব অনুষ্ঠান শুরু হবে। কার্ড ছাঁপানোর জন্যও দেওয়া হয়ে গেছে। এলাকাবাসীরা জানে যে কিছুদিন পর আমার বিয়ে। তাও আবার আমার বড়োবোনের আগে। নাহিদ আপুকে যেই ভয় দেখাচ্ছে সেটাতে আমি তাকে সাকসেসফুল হতে দিব না। আমি নাহিদের খালাতো ভাই আশিককে বিয়ে করতে চাই। আশিক যদি মানা করে তাহলেও সমস্যা নেই। ওইদিনই আমি কাউকে না কাউকে বিয়ে করব।”

অতঃপর আরিয়া তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“কার্ড ছাঁপানো বন্ধ করে দাও, বাবা। যা দাওয়াত যাবে সব মুখেমুখে। গুটিকতক আত্মীয় ছাড়া কেউ তো বরের নাম জানেনা।”

আরিয়ার উদ্ভট কথা শুনে আর্শির মাথা ঘুরাচ্ছে। সে আরিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
“এখন হুট করে কাকে বিয়ে করতে রাজি করাব আমরা? এর থেকে ভালো, তোর ভার্সিটিতে কথা বলে দেখ। ক্রেডিট ট্রান্সফার করা যায় কী-না? তুইও আমার সাথে চল।”

“না, আপু। এক বছর আগে তোমার উচিত ছিল আমাকে অন্তত সবটা জানানো। তাহলে আজ এসব হতোই না। তুমিও কিন্তু কিছুটা হলেও দায়ি। আই নো, তুমি হার্ট ছিলে। কিন্তু আমাকে অন্তত বলতে পারতে। ছোটো থেকে সবসময় তোমার সিক্রেট আমাকে বলতে। আমারও ভুল ছিল! সবসময় তোমার কষ্ট পাওয়ার কারণ জানতে আমি অনেক কিছু করি। কারণ তুমি নিজের হ্যাপিনেস স্প্রেড করতে ভালোবাসো কিন্তু….! যাইহোক, আমি যা ভেবে নিয়েছি তাই করব। তোমার মতো সবকিছু থেকে পালাব না।”

আর্শি মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। আরিয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে মিস্টার হাসানকে বলে,
“আঙ্কেল, আপনি আশিককে ফোন করবেন? নাকি আমি করব? আপনার নিজের ছেলের জন্য খারাপ লাগতে পারে। তাহলে ফোনটা আমিই করি।”

আরিয়া ফোন হাতে নিয়ে আশিককে কল করতে নিলে মিস্টার হাসান বাধা দেন। তিনি বলেন,
“আমিই কল করছি। আশিকের গার্ডিয়ানও তো আমরাই। ওর মায়ের মৃত্যুর পর খুব ছোটোবেলাতেই ও-কে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিলাম। ওর বাবা ওর খরচ দেয়।”

আরিয়া প্রত্যুত্তর করলো না। মিস্টার হাসান আশিককে কল করলেন। আশিক ক্লাসে ছিল বলে প্রথমে কল রিসিভ করেনি। অতঃপর স্যারকে বলে ক্লাসের বাহিরে এসে কল রিসিভ করে। মিস্টার হাসান প্রথমেই প্রশ্ন ছুঁড়েন,

“তুমি আরিয়াকে বিয়ে করবে?”

আশিক হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে হতবাক হয়ে যায়। প্রায় মিনিট খানেক উত্তর করতে পারে না। মিস্টার হাসান ফের শুধালে আশিক উত্তরে বলে,
“তোমরা কী চাও?”

“মান-সম্মান বাঁচাও, এটাই বলব। যদি রাজি থাকো তবে দুই ঘণ্টার মধ্যে আরিয়াদের বাড়িতে চলে এসো। আজকেই আকদ করানো হবে। অনুষ্ঠানের দিন নাহিদকে কৌশলে সরিয়ে দেওয়া হবে।”

আশিক ফোন কে*টে ক্লাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করলো। অতঃপর ক্লাসে ঢুকে স্যারকে ইমার্জেন্সির কথা বলে বেরিয়ে পড়ে।

_______

ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে সব রেডি। আশিক ও আরিয়া পাশাপাশি বসে আছে। কাজি সাহেব প্রথমে আরিয়াকে কবুল বলতে বলে। আরিয়া কবুল বলার পর আশিকও বলে। তারপর কাবিননামাতে সাইন করানো হয়। মিস্টার হাসান এবার বলেন,

“আপনারা ভাবছেন হয়তো কেন আমরা নিজের ছেলের বিপক্ষে গেলাম? আমাদের ছেলে তো! তার স্বভাব-চরিত্র জানা। ভেবেছিলাম, আরিয়াকে সত্যি ভালোবেসে শুধরে গেছে। কিন্তু ভুল ছিলাম। বুঝতে পারিনি এতোকিছু।”

আরিয়ার বাবা রিয়াজউদ্দীন বলেন,
“আমরাও বুঝতে পারিনি। জানলে বিয়ের কথাতেই আগাতাম না।”

“তাহলে আমরা এবার উঠি।”

মিস্টার হাসান, মিসেস নেহা ও আশিক উঠে দাঁড়ায়। আরিয়া বলে,
“বিয়ের ব্যাপারে কাউকে জানাবেন না। নাহিদকেও না। সে সহজ-সরল আরিয়াকে দেখেছে কিন্তু আমার খারাপ রূপ দেখেনি।”

মিসেস নেহা করুণ দৃষ্টিতে চাইলেন। আজ তাকে তার স্বামী, ছেলের হয়ে একটা কথাও বলতে দেননি। বিয়ের দিন ছেলের মনের অবস্থা ভেবে ভেতরে ভেতরে দুমড়ে-মুচরে যাচ্ছেন তিনি। তাও মুখে কিছু বলতে পারছেন না।

________

নাহিদের পরিবার চলে যাওয়ার পর আরিয়া নিজের রুমে গিয়ে বসে। আর্শি তার পাশে বসে উৎকণ্ঠিত হয়ে শুধায়,
“ওই বাড়িতেই বউ হয়ে যেতে হবে কেন তোকে? আমাদের কথা শুনতে পারতি।”

“কী শুনব? তুমি আমাকে জানালে না কেন?

“দোষটা কিন্তু তোরও। আমি তো আর জানতাম না, নাহিদ এই প্ল্যানিং করেছে। কিন্তু তুই কেন বিয়ের কথা চলাকালীন আমাকে ছেলের নাম-ছবি দেখালি না? এক্সসাইটমেন্ট, ফ্যান্টাসি এসবে ভালোর থেকে খারাপটাই বেশি হয়।”

“বাদ দাও, আপু। আমারটা আমি বুঝে নিব। তাছাড়া আশিক আমাকে পছন্দ করে। প্রপোজও করেছিল। দেরিতেই হোক, একসেপ্ট করে নিলাম। এখন এই টপিক রাখো। আমাকে ঠান্ডা মাথায় ভাবতে দাও।”

আর্শি হতাশ হয়ে বসে থাকে। আরিয়া বাহিরে বাহিরে চুপচাপ ও শান্ত স্বভাবের হলেও রেগে গেলে তখন বা*ঘিনীর রূপ ধারণ করে।

_______

সন্ধ্যার সময় প্রতিদিনকার মতো নাহিদ আরিয়াকে কল করে। কিন্তু ফোন ওয়েটিং বলছে। নাহিদ ভ্রুকুটি করে আবার ডায়াল করে। আবারও ওয়েটিং বলছে। তারপর আরিয়ার নাম্বারে মেসেজ করে। আবার পাঁচ মিনিট পর কল করে। তখনও আরিয়ার নাম্বার ওয়েটিং পায়। নাহিদের এবার রাগ ধরে যায়। সে নিজের মায়ের রুমে গিয়ে বলে,

“আরিয়ার মাকে কল করো।”

মিসেস নেহা শুয়ে ছিলেন। ছেলের কথা শুনে উঠে বসে বলেন,
“কেন?”

“আরিয়া কার সাথে ফোনে কথা বলছে? সেটা জানতে। আমি এতক্ষণ যাবত কল করছি কিন্তু ওয়েটিং!”

মিস্টার হাসান ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলেন। তিনি টিভি বন্ধ করে এসে বলেন,
“সে যার সাথে খুশি কথা বলুক, তাতে তোমার কী?”

নাহিদ হতবাক কণ্ঠে বলে,
“মানে কী? আমি তার উডবি হাজবেন্ড। আমার অধিকার আছে।”

“উডবি হাজবেন্ড। হাজবেন্ড তো না। বিয়ের এক সেকেন্ড আগ পর্যন্ত আরিয়ার উপর তোমার অধিকার নেই। সে তার সিদ্ধান্ত বদলাতে অধিকার রাখে।”

বাবার কথা পছন্দ হলো না নাহিদের। সে রেগে সেখান থেকে চলে আসে। রুমে এসে আবারও কল করে। কিন্তু এবারও একই অবস্থা। রাগে নাহিদ ড্রেসিংটেবিলের সামনের স্টিলের ফুলদানিটা ফেলে দেয়।
ছেলের ঘর থেকে ঝনঝন শব্দে মিসেস নেহা ঘাবড়ে ওঠেন। ছেলের কাছে যেতে চাইলে, মিস্টার হাসান বাধা দেন। বলেন,

“থামো। যা ইচ্ছা করুক। তুমি যাবে না। ওরকম ছেলে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো!”

“কী বলছো! আমাদের একটাই ছেলে।”

“একটা ছেলে বলেই তো আশকারা দিয়ে বিগড়ে দিয়েছ। বাবা-মায়ের মানসম্মানের কথা ভাবে না। মেয়েদের সম্মান করতে জানে না। এবার আরও বড়ো ঝড়ের জন্য প্রস্তুত থাকো।”

মিস্টার হাসান আবারও ড্রয়িংরুমে চলে যান। মিসেস নেহা ছেলের কথা ভেবে করে চিন্তায় পড়ে যান।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে