#copywritealert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪
কিছুক্ষণ পর আর্শি তার মাকে গিয়ে বলে,
“মা, শোনো না, তুমি তো আরুর হবু শ্বশুরবাড়ির সবার সাথে পরিচিত না। তাই চাইছিলাম কি উনাদেরকে বাড়িতে ডাকো কাল। তোমরা তো আমাকে না জানিয়ে বিয়ের সবকিছু ঠিক করে ফেলেছো, জাস্ট ফর সারপ্রাইজ! যেহেতু আরুর বড়ো বোন হিসাবে ওর বিয়ে এটেন্ড করব তাহলে তো হবু শ্বশুরবাড়ির লোকদেরকে জানতে হবে।”
মিসেস আশালতা কিঞ্চিত ভাবলেন। ফের বললেন,
“তা তুই ঠিক বলেছিস। তাহলে এক কাজ করি তোর মামা-চাচাদেরকেও বলি। ওরাও তো তোর সাথে দেখা করবে।”
“বলো। তাহলে কালকে নাহিদের পরিবার আসছে?”
“আমি বলব ওদের।”
আর্শি মাথা নাড়িয়ে নিজের রুমে চলে আসে। আগামীকাল সে নাহিদের থেকেই জানতে চাইবে এতো কিছুর পর কী আর পরিবার ছিল না বিয়ে করার জন্য!
_________
মিসেস আশালতা কল করেন নাহিদের মা মিসেস নেহাকে। সপরিবারে দাওয়াত পেয়ে মিসেস নেহা দারুণ উৎফুল্লিত। তিনি নাহিদের বাবাকে ও নাহিদকে ডিনারের সময় দাওয়াতের কথাটা বলেন। নাহিদ প্রথমেই না করে দেয় কিন্তু নাহিদের বাবা হাসান সাহেব বলেন,
“দেখো নাহিদ, তোমার কথা শুনে আমরা ঘটক দ্বারা সম্বন্ধ পাঠিয়েছি। পরিবার ভালো দেখে আমাদেরও ভালো লেগেছে। এখন উনারা দাওয়াত দিয়েছেন, সেখানে না গেলে খারাপ দেখা যায়। কাল তোমাকে যেতেই হবে।”
“আমার কাজ আছে, বাবা। তোমরা গেলে যাও। আমি যাব না।”
এই বলে নাহিদ ডিনারের টেবিল ছেড়ে উঠে যায়। নিজের রুমে গিয়ে ভাবতে থাকে, হঠাৎ এই দাওয়াত কেন? এসব ভাবনা চিন্তার মধ্যে একটা আননোওন নাম্বার থেকে হোয়াটসএপে মেসেজ আসে,
“মিস্টার নাহিদ আহমেদ, আগামীকাল আপনার সত্য প্রকাশ করা হবে। আপনার মতো নিচু মানসিকতার লোকের সাথে অন্তত আমার বোনের বিয়ে হতে পারে না।”
মেসেজটা দেখে নাহিদ ঘাবড়ে যায়। সে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে চিৎকার করে বলে,
“তোমরা কেউ কালকে আরিয়ার বাড়িতে যাবে না।”
মিসেস নেহা, মিস্টার হাসান ও নাহিদের খালাতো ভাই আশিক অবাক চোখে চেয়ে আছে। মিসেস নেহা বলেন,
“আমি কথা দিয়ে ফেলেছি, নাহিদ। তাছাড়া আমাদের দুইদিন পর এমনিতেও যেতে হতো। তুমি তো জানো, আমাদের পরিচিত বেনারসির কারিগর থেকে বেনারসি শাড়ি আনাই। সেই কারিগর আমাদের জন্য আটটা বিয়ের শাড়ি দেখানোর জন্য রেখেছেন। আমি চাই, আটটা শাড়িই আরিয়ার গায়ে কোনটা মানায় দেখে বাছাই করতে। আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা।”
নাহিদ অস্থির স্বরে বলে,
“আরে মা, বোঝার চেষ্টা করো। আমি….”
মাঝ থেকে আশিক বলে ওঠে,
“কী হয়েছে, ভাইয়া? বিয়ের কয়েকদিন আগে এভাবে দাওয়াত রিফিউজ করাটা ভালো দেখায় না। শুনলাম আরিয়ার আপু এসেছে।”
“আরিয়া তোর ভাবি হয়! নাম ধরে কেন ডাকছিস?”
কথাটা নাহিদ রেগেই বলে। আশিকের মুখমণ্ডল নিমিষেই চুপসে যায়। সে মৃদু স্বরে বলে,
“অভ্যাস তো। ভাবি হওয়ার আগে আরিয়া আমার ক্লাসমেট। তুমি তো জানোই।”
“এখন সে তোর ভাবি হয়। মাইন্ড ইট।”
আশিক মাথা নাড়ায়। মিস্টার হাসান বিরক্তি নিয়ে বলেন,
“তুমি না যাও সেটা আমরা সামলো নিব। কিন্তু আমরা যাচ্ছি। তোমার মন-মর্জি সব জায়গাতে চালাতে চাইবে না।”
“বাবা…”
“তোমার কোনো কথা আমি শুনছি না। উনাদেরকে বিয়ের জন্য একপ্রকার জোড় করে রাজি করানো হয়েছে। উনারা তো চাননি, বড়ো মেয়ে রেখে ছোটো মেয়ের বিয়ে দিতে। কিন্তু তোমার কারণে আমরা রিকুয়েস্ট করে রাজি করিয়েছি।”
নাহিদ রেগে সেখান থেকে চলে যায়। মিস্টার হাসান এবার নিজ স্ত্রীর উপর রাগ ঝাড়েন। তিনি বলেন,
“ছেলেকে এতো আশকারা দিয়ে একগুঁয়ে বানিয়েছো। নিজের মনমতো কিছু না হলেই সব তছনছ করে ছাড়ে। এবার বাড়িতে বউ আনছো, স্বভাব বদলাতে হবে।”
এই বলে মিস্টার হাসানও খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যান। মিসেস নেহা হতাশ হয়ে বলেন,
“দুইজনের বিপরীতমুখী রাগ। কী করব আমি?”
আশিক খেতে খেতে বলে,
“রিল্যাক্স, খালামনি। কাল সকালেই দেখা যাবে। এখন তুমি খাও তো।”
এদিকে আর্শি আরিয়ার থেকে জানতে পেরেছে নাহিদের খালাতো ভাই আশিক, আরিয়ার ব্যাচমেট। দুজনে একই ভার্সিটিতে, একই ডিপার্টমেন্টে পড়ে। ফোর্থ ইয়ারে। আর্শি কৌশলে জানতে চেয়েছে নাহিদ আরিয়ার সাথে কেমন ব্যবহার করে। আরিয়া বলেছে,
“ভালোই। তার সাথে পরিচয় মাত্র দেড় মাসের। আমার পছন্দ-অপছন্দ জানতে চেয়েছে। ফ্রেন্ডশিপ করেছে। আমারও ভালোই লেগেছে।”
“তুই কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছিস?”
আরিয়া লাজুক হেসে বলে,
“কিছুটা। অনেক কেয়ারিং উনি। আমার প্রতিটা কথার খেয়াল রাখেন।”
আর্শি এবার অনেকটা চিন্তায় পড়ে যায়। যদি সে কিছু বলে তাহলে আরিয়ার মন ভেঙে যাবে নাতো? কীভাবে বলবে সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। আর্শিকে নিরব দেখে আরু ওর চোখের সামনে হাত নেড়ে বলে,
“কী হলো, আপু? কী ভাবছো?”
আর্শি জোরপূর্বক হেসে বলে,
“না। কিছু না। ঘুমা এখন। আমারও অনেক ঘুম পাচ্ছে।”
“আমারও ঘুম পাচ্ছে। আর শোনো, তুমি কিন্তু আবার ব্যালকনিতে গিয়ে বসে থেকো না। আকাশ ডাকছে মানে বৃষ্টি হতে পারে।”
আর্শি মিষ্টি হেসে আরিয়ার গালে হাত রেখে বলে,
“না যাব না। ঘুমা।”
এরপর দুই বোন ঘুমিয়ে পড়ে।
_______
সকাল থেকে রান্নার তোড়জোড় চলছে। আর্শি ও আরিয়া, তাদের মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করছে। একটু পর ওদের মামা-চাচারাও এসে পড়বে।
এদিকে সকাল ১০টায় ঘুম থেকে উঠে নাহিদ জানায় সেও যাবে। মিসেস নেহা এতে খুব খুশি হোন। তিনি বেনারসি বিক্রেতাকে ফোন করে জলদি শাড়িগুলো নিয়ে আসতে বলেন।
দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে নাহিদ তার বাবা-মা ও খালাতো ভাইকে নিয়ে আরিয়াদের বাড়িতে আসে। টুকটাক শরবত, নাস্তার পর নাহিদের মা আরিয়াকে কোন বেনারসিতে কেমন লাগে তা দেখার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়লে আর্শি নাহিদকে ছাদে আসতে বলে। নাহিদ বাধ্য হয়ে ছাদে যায়। আশিক আগামীকাল থেকে নাহিদকে ভীত দেখে আজকে আবার আরিয়ার বড়ো বোনের এক কথায় ছাদে যেতে দেখে সন্দেহ করতে শুরু করে। তাই চুপিচুপি সেও ছাদে যায়। সেখানে গিয়ে শুনতে পায়,,
আর্শি বলছে,
“তো, মিস্টার নাহিদ আহমেদ। কেমন আছেন?”
নাহিদ ঘাবড়ানো স্বরে বলে,
“তুমি কাউকে কিছু বলবে না। তোমার সাথে আমার রিলেশন ছিলো না। জাস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম।”
আর্শি হাসলো। ফের বলল,
“আপনার উদ্দেশ্যে কী বলুন তো? এমনতো না যে আপনি জানতেন না, আরিয়া আমার বোন। রেলস্টেশনে আমি পরিচয় করিয়েছিলাম। আমাকে রিফিউজ করতেই পারেন, নো ম্যাটার। কিন্তু হিউমিলেট করে আমারই ছোটো বোনকে বিয়ে করতে এসেছেন? চক্ষুলজ্জা বলেও কিছু হয়!”
নাহিদ অপ্রস্তুত হয়ে ইতস্তত করে বলে,
“দেখো, ভুলে যাও ওসব। বিয়ের মাত্র কিছুদিন বাকি। আমার ভুল হয়েছিল সেদিন। কারণ আমি তোমার বোনকে প্রথম থেকে ভালোবাসি। প্রথম দেখাতেই। তারপর তোমার প্রপোজাল! তখন আমার খুব রাগ ধরে গিয়েছিল।”
আর্শি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“রাগ ধরলে যে কারও ক্যারেক্টারে প্রশ্ন তুলতে হয়, ক্যারেক্টার নিয়ে বাজে কথা বলতে হয়, সেটা আবার কেমন রাগ? আপনার ভাষ্যমতে আমার ক্যারেক্টার খারাপ। তাহলে আমারই ছোটো বোনকে বিয়ে করতে যেয়ে মনে হচ্ছে না যে ও ওর বোনের মতোই হতে পারে?”
“না। কারণ আমি ও-কে ফলো করেছি। আরিয়া কোনো ছেলেদের সাথে চলাফেরা করে না। তোমার মতো ইগোয়েস্টিক না।”
“ওহ আচ্ছা! আমার বোন কী, সেটা আমি জানি। আপনার জন্য ভালো হবে যে মেয়েদের জাজ করা বন্ধ করুন। নয়তো…”
এই বলে আর্শি ছাদ থেকে চলে আসতে পা বাড়ালে নাহিদ বলে,
“তুমি যদি বিয়ে ভাঙতে চাও তবে মান-সম্মান তোমাদেরই যাবে। বড়ো মেয়েকে রেখে ছোটো মেয়ের বিয়ে ঠিক করা! আবার বিয়ে ভাঙা! সমাজে কী বলবে? তখন তো সমাজই বলবে তোমাদের চরিত্রে সমস্যা!”
আর্শির মুখশ্রীতে কাঠিন্য ভর করলো। এক ঝটকায় ঘুরে নাহিদের গালে ক*ষে থা*প্পড় মা*রে আর বলে,
“মুখ সামলে কথা বলবি। তোর মতো লো মেন্টালিটির মানুষ যে নিজের মনেই মিথ্যা ধারণা নিয়ে বসে থাকে, সেটা কেউ বদলাতে পারবে না।”
আর্শি সেখান থেকে রেগে হনহনিয়ে বেরিয়ে আসে। আশিক দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। আর্শির আগেই নেমে ফোন রেকর্ডটা সেভ করে নেয়। মনে মনে বলে,
“ভাইয়া এটা ঠিক করছে না। সত্যটা এখন আরিয়া জানতে না পারলে পরে জানতে পারলে ও ওর আপুকে ভুল বুঝবে। আর্শি আপু কি বলতে পারবে? আমি কি আরিয়াকে জানিয়ে দিব?”
ভাবনায় পড়ে গেলো আশিক।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।