শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-৩৫+৩৬

0
442

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৫
আরও কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেছে। আর্শি তার বাবা-মায়ের সাথে সময়টা বেশ ভালোই কাটাচ্ছে। শ্রাবণের সাথে এখন বেশি কথা হয় না। শ্রাবণই বলতে চায় না। কাজের চাপ, ব্যাস্ততা দেখিয়ে কথা তাড়াতাড়ি শেষ করতে চায়। কিন্তু আর্শি এখন ইচ্ছে করে গভীর রাত অবধি শ্রাবণের গিটার বাজানো শুনবে। বৃষ্টির রাতে দুজনে ফোনের দুই পাশে নিরব বসে থাকবে। কিন্তু শ্রাবণ ব্যাস্ত বলে সে তাও মেনে নিয়েছে।
অন্যদিকে শ্রাবণ অফিসে এখন চুপচাপ থাকে। বসকে বলে গ্রুপ চেঞ্জ করেছে। সে কোনোভাবেই ইরিনার মুখোমুখি হতে চায় না। কিন্তু ইরিনা হঠাৎ শ্রাবণের এই বদলের কারণ বুঝতে পারছে না। শ্রাবণ যেন তাকে দেখেও দেখে না এমন ভাব ধরে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। ইরিনা আজ ভেবেছে শ্রাবণের অফিসরুমে গিয়েই কথা বলবে। অতঃপর লাঞ্চের পরপরই গেলো। শ্রাবণ দরজায় নক পেয়ে ভেতরে আসতে বলে, তারপর ইরিনাকে দেখে ফাইলের দিকে মনোযোগ দিলো। ইরিনা চেয়ার টেনে বসে বলে,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড, সাবন(শ্রাবণ)?”

শ্রাবণ অনিচ্ছাসত্ত্বে প্রত্যুত্তর করলো কিন্তু তাকালো না।
“নাথিং। ”

“ইউ আর ইগোনোরিং মি? টেল মি হোয়াট হ্যাপেন্ড? ”

শ্রাবণ বুঝতে পারছে না, ইরিনা এতো স্বাভাবিক কীভাবে? শ্রাবণ জিজ্ঞাসা করলো,
“ইউ ডোন্ট রিমেম্বার এনিথিং? ”

ইরিনাও পালটা প্রশ্ন করে,
“রিমেম্বার হোয়াট?”

শ্রাবণ সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে ইরিনার দিকে চেয়ে আছে। ইরিনা হাত নাড়িয়ে শ্রাবণের দৃষ্টি ফেরালে শ্রাবণ বলে,
“ফরগেট ইট। আই হ্যাভ লটস অফ ফাইল টু চেক। ইউ প্লিজ গো।”

ইরিনা কিছু বলতে নিবে, তার আগেই শ্রাবণ বলে,
“প্লিজ!”

অতঃপর ইরিনা বেরিয়ে যায়। শ্রাবণের কেবিন থেকে বেরোতেই ইরিনার সামনে আসে ইরিনার বয়ফ্রেন্ড শার্লক। ইরিনাকে মন খারাপ করে দেখে শার্লক শুধায়,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

“ডোন্ট নো। হিজ বিহেভিয়ার ইজ সো মিস্টেরিয়াস। হি ইজ রুড টু মি।”

শার্লক বাঁকা হাসে। ফের নিজের মুখশ্রীতে চিন্তিত ভাব এনে বলে,
“মেবি হি ইজ আপসেট। লেট ইট গো। ইরিনা, অ্যাই হ্যাভ অ্যা সারপ্রাইজ ফর ইউ।”

ইরিনা জিজ্ঞাসু নয়নে তাকায়। শার্লক বলে,
“কাম উইথ মি।”

এরপর ওরা দুজন ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। শার্লক ইরিনাকে একটা ফাঁকা ফ্লাটে নিয়ে যায়। ইরিনা তা দেখে বলে,

“হোয়াই ডিড ইউ ব্রিং মি হেয়ার?”

শার্লক অ্যাপার্টমেন্টটার একটা জানালা খুলে বলে,
“ইটস আওয়ার অ্যাপার্টমেন্ট!”

ইরিনা অবাক হয়। ফের শুধায়,
“রিয়েলি? বাট হাউ? ইউ সেইড, আফটার ওয়ান ইয়ারস উই উড বাই অ্যা স্মল অ্যাপার্টমেন্ট।”

“ইয়েস। বাট আই ব্রট ইট নাউ। আরেন্ট ইউ হ্যাপি?”

ইরিনা হাসার চেষ্টা করলো। এতো টাকা শার্লক কোথায় পেল সেটাই তাকে ভাবাচ্ছে।

________
আজ ছুটির দিন। ছুটির দিনে আর্শি ও তার তিন বান্ধবী মিসেস আশালতার সাথে রান্না করছে। মিসেস আশালতাও আজ বাঙালি খাবারের বাহার করতে চাইলেন। লিসার রান্নার হাতের পারদর্শিতা দেখে মিসেস আশালতা অবাক। লিসা অনেক রান্নাই পারে। এমনকি ছোটো মাছ দিয়ে টমেটো ও বেগুনের ঝোল তরকারিটাও পারে। মিসেস আশালতা বলে,

“লিসা, হাউ ডু ইউ লার্ন ইট?”

লিসা হেসে বলে,
“আশিকে দেকেছি(দেখেছি)।”

“তুমি বাংলা বলতে পারো?”

“ট্রাইং বাট নট প্রপারলি।”

আর্শি ডালের তরকা দিতে রসুন কাটতে কাটতে বলল,
“মা, ও খুব জলদি শিখে। বাংলা অনেকটাই বুঝে তাও আমরা ওর সামনে ইংলিশে বলি। ও এমনিও কম কথা বলে।”

মিসেস আশালতা খুশি হয়ে বলেন,
“ভিষণ মিষ্টি মেয়ে।”

সোহা রান্নাঘরে বসে বসে চিপস খাচ্ছিলো। সে লিসার জন্য কমপ্লিমেন্ট শুনে বলল,
“আমি কেমন আন্টি? আমি একটু বেশি কথা বলি, তবে গুড গার্ল তাই না?”

সবাই হেসে ফেলল। মিসেস আশালতা বলেন,
“দুষ্ট মেয়ে তুমি।”

“নট ডান, আন্টি!”

আর্শি বলে,
“জানো মা, মোনা আমাকে মাঝেমাঝেই বলে আমি যেন ওর সাথে রুম এক্সচেঞ্জ করি। সোহার ননস্টপ কথা বলার জন্য মোনা নাকি তাল মেলাতে পারে না।”

মোনা বলে,
“সি ইজ সো টকেটিভ!”

আবারও হাসির ফোয়ারা বয়। তন্মধ্যে আর্শি ডালে তরকা দিয়ে সব খাবারের ছবি তুলে শ্রাবণকে পাঠিয়ে দেয়।

______

আরিয়ার সব পরীক্ষা শেষ। সে এখন অলস হয়ে ঘরে শুয়ে বসে থাকছে। আশিক এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একটা কোচিংয়ে পড়ায়। আর দুটো এইচএসসি দিবে ছেলেকে পড়ায়। আজ মুশফিকা সকাল থেকে আরিয়ার সাথে আড্ডা দিতে আসেনি। প্রতিদিন এসে গল্প করে, একসাথে কিছু নাটক দেখে। আজ না আসাতে আরিয়া নিজেই মুশফিকার রুমের দিকে যায়। মুশফিকা ও নাহিদের রুমে যেতে সিঁড়ি পেরোতে হয়। আস্তে আস্তে সিঁড়ি পেরিয়ে রুমের সামনে যেতেই দেখে দরজা চাপানো। নাহিদ বাড়িতে থাকলেই মুশফিকা দরজা লক করে। তাছাড়া ঘুমানো ছাড়া লক করে না। সার্ভেন্টরাও উপরে এদিকে আসে না। উপরের ফ্লোরে তিনটা রুম। একটাতে গেস্টের জন্য। আরেকটা মিস্টার হাসান লাইব্রেরি করে রেখেছে। আরিয়া নিঃশব্দে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে মুশফিকা রুমে নেই। আরিয়া ফিরে আসতে নিলে বারান্দার চৌকাঠের কাছে শাড়ির আঁচল দেখা যাচ্ছে। আরিয়া এগিয়ে যায়। বারান্দার কাছে যেতেই দেখে মুশফিকা হাঁটুতে মুখ গুঁজে আছে। কিছুক্ষণ পরপর তার শ*রীর কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে কাঁদছে। আরিয়া সাবধানে বসলো। তারপর মুশফিকার কাঁধে হাত রেখে বলল,

“আপু?”

মুশফিকা তৎপর হয়ে মাথা তুলে। অপ্রস্তুত হয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে,
“তুমি এখানে?”

“তুমি আজ আমার সাথে গল্প করতে গেলে না। আন্টিরও শরীর ভালো না বলে ঘুমাচ্ছেন। তাই আমিই এলাম। তুমি এই ঠান্ডার মধ্যে শীতের কাপড় ছাড়া বারান্দায় বসে আছো যে?”

“এমনিই। ভালো লাগছিল না। তুমি উঠো। ফ্লোরে বসেছ কেন? উঠো উঠো।”

মুশফিকা তাড়াহুড়ো দেখালে আরিয়া ওর হাত চেপে ধরে। ফের শুধায়,
“কাঁদছিলে তুমি? কী হয়েছে?”

মুশফিকা হাসার চেষ্টা করে বলে,
“কিছু হয়নি। কী হবে আর!”

“কিছু তো হয়েছে। নাহিদ কিছু বলেছে?”

“নাহিদ! না। সে তো আমাকে এখন কিছু বলতে চায় না।”

আরিয়া আবার শুধায়,
“একটা সত্যি কথা বলোতো, অনেকদিন যাবত জিজ্ঞাসা করব করব করে করিনি। নাহিদ তোমাকে বিয়ে করলো কেন? এক মাসের বেশি সময় যাবত নাহিদ সিলেটে আছে। সেটাই বা কেন? এর আগে নাহিদ আমায় বলেছিল, তার কাজ এসবে তেমন মন নেই। কিন্তু এখন ভিন্ন চিত্র।”

মুশফিকা উশখুশ করছে। তার খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু ভয়ও হচ্ছে। নাহিদ দিন দিন সা*ই*কোতে পরিণত হয়েছে। যদি জানতে পারে, সে আরিয়াকে বলে দিয়েছে, তবে কী যে করে বসে!
মুশফিকাকে অন্যমনা দেখে আরিয়া ফের ডাকে,
“আপু? বলো?”

মুশফিকা ঢোক গিলে বলে,
“শুনো, সবসময় আমরা যা দেখি, সব কিন্তু সত্যি হয় না। আমাদেরকে সত্যির মতো করে দেখানো হয়।”

আরিয়া বিভ্রান্তির দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর প্রশ্ন করে,
“এটা আমি জানি কিন্তু তুমি কী বুঝালে?”

“কিছু না। বাদ দাও। রুমে চলো। মায়ের কাছেও যাওয়া হয়নি আজ।”

মুশফিকা নিজে উঠে আরিয়াকে ধরে ওঠায়। তারপর মুশফিকা আরিয়াকে নিজের সাথে আসতে ইশারা করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৬(সত্য প্রকাশ)
ইটালিতে রাত প্রায় একটা। আর্শি রিসার্চের বিষয় নিয়ে ল্যাপটপ সামনে নিয়ে বিছানায় ঢেলান দিয়ে বসে আছে। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কাজ করার ফাঁকে একটু বিরতি নিয়ে ফোন হাতে নিয়েছে। শ্রাবণকে অনলাইন দেখে সরাসরি কল করে বসে। দুইবার রিং হতে শ্রাবণও রিসিভ করে। সালাম বিনিময়ের পর আর্শি জিজ্ঞাসা করে,

“কী করছেন?”

শ্রাবণ মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“জব খুঁজছি।”

আর্শির কপাল কুঁচকে আসে। সে সন্দিহান হয়ে শুধায়,
“মানে? জব খুঁজছেন কেন?”

শ্রাবণ আমতা আমতা করতে বলল,
“আসলে..”

“কী আসলে? এতো ভালো জব থাকতে আবার জব খুঁজছেন?”

“আমি চাইছি তোমার কাছাকাছি চলে আসতে। তাই খুঁজছি।”

আর্শি অবাক হলো যেন। সে বলল,
“আমার কাছে চলে আসতে হুট করে জব ছেড়ে দিবেন? আমি তো কয়েকমাস পর দেশে ফিরে যাব। সত্যি করে বলুন তো, কী হয়েছে? অনেকদিন যাবত আপনার কথা, আচরণে স্বাভাবিকতা নেই। কিছু তো হয়েছে। আপনি আমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারেন।”

শ্রাবণ মুখে হাত দিয়ে চুপ করে বসে আছে। আর্শি ফোন কেটে ভিডিও কল দিলো। শ্রাবণ রিসিভ করে নিরব হয়ে বসে আছে। আর্শি প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“কিছু লুকাচ্ছেন আপনি। প্রতিদিন আপনার এমন ক্লান্ত, তেজহীন মুখ দেখতে দেখতে এতোটুকু বুঝেছি, খুব বড়ো কিছু হয়েছে। বলুন না।”

শ্রাবণ এবার নিজেকে শক্ত রাখতে পারলো না। আচমকা কেঁদে ফেলল। শ্রাবণকে আচানক কাঁদতে দেখে আর্শি অবাক তো বটেই ঘাবড়েও গেছে। পুরুষ মানুষ নাকি অপরাগ না হলে কাঁদে না। আর্শি ভীতু স্বরে শুধায়,

“বলুন না। কাঁদছেন কেন?”

শ্রাবণ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে মাথা নিচু করে ভেজা কণ্ঠে বলে,
“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বিশ্বাস করো, আমার মনে অন্য নারী নেই। স্বজ্ঞেনে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য নারীকে নিয়ে অযাচিত কিছু চিন্তাও করি না।”

শ্রাবণের কথাগুলো অন্যসময় শুনলে আর্শি হয়তো মনে মনে প্রফুল্ল হতো কিন্তু এখন তার ভীতি কাজ করছে। অশনিসংকেতের আশঙ্কা করছে হৃদয়। যা সে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়, সেরকম কি কিছু? অস্থির হয় আর্শি। শ্রাবণকে আবার নিশ্চুপ দেখে অধৈর্য স্বরে বলে ওঠে,

“এসব কেন বলছেন? কিছু লুকাবেন না। আমি মিথ্যা পছন্দ করি না।”

শ্রাবণ দৃষ্টি নত করে অপরাধীর সুরে বলে,
“ওই রাতে পার্টিতে ডিনার শেষে কোলা খাওয়ার পর কী হয়েছে আমার মনে নেই। আমার শরীর খারাপ করাতে আমাকে শা*র্লক সাময়িক রেস্টের জন্য একটা রুম বুক করে সেখানে রেস্ট নিতে বলে। তারপর আমার কিছু মনে নেই। সত্যি বলতে কিছু মনে নেই। আমি জানিনা কিছু….”

“মেয়েটা কে?”

আর্শির নির্জীব স্বর যেন শ্রাবণের হৃৎপিণ্ডতে হা*তু*ড়ি পে*টা করছে। শ্রাবণ বলতে চাইল,
“আমি সত্যি কিছু….”

ফের একই প্রশ্নে থামতে বাধ্য হলো শ্রাবণ। দুই পক্ষেই এখন নিরবতা। লিসা পাশে ঘুমানো ছিল। সে আধখোলা চোখে চেয়ে বলে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

আর্শি মাথা নাড়ায়। শ্রাবণের থেকে জবাব না পেয়ে ফের ধীর স্বরে শুধায়,

“মেয়েটা কে, শ্রাবণ?”

“ইরি..না!”
শ্রাবণের থেমে থেমে বলা নামটা শুনে আর্শি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। শুধু বলল,
“ওহ! অনেক রাত হয়েছে ঘুমাব আমি!”

বলেই কল কেটে সুইচ অফ করে দেয়। অতঃপর কম্বল নিয়ে শুয়ে পড়ে। এই আঁধার রাত, নিরবতা, মাথার নিচের বালিশ ও কম্বলই সাক্ষী থাকবে নয়ন যুগলের বোবা যন্ত্রণা! কণ্ঠ দিয়ে বের হতে না পারা বোবা যন্ত্রণা।

_______

নাহিদের আগামীকাল ইটালি ফ্লাইট। সে আজ বাড়িতে এসেছে। ছেলেকে অনেকদিন পর হাসি-খুশি দেখে মিসেস নেহা আগ্রহ নিয়ে ছেলের পছন্দের রান্নাগুলো করছেন। আরিয়া নিজের ঘরে ঘুমাচ্ছে। মুশফিকা চুপি চুপি নিজের বেডরুমে ঢুকে নাহিদ ঘুমিয়েছে কী-না দেখে নিলো। সন্ধ্যায় কফির সাথে দুইটা ঘু*মের ঔ*ষুধ মিলিয়ে দিয়েছিল। কারণ সে জানে একটা টে*বলেটে নাহিদের ঘুম আসে না। এখন এসে নাহিদকে ঘুমন্ত দেখে কাঁপা কাঁপা হাতে নাহিদের ফোনটা নিলো। নাহিদের ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ফোন আনলক করলো। অতঃপর মেইল, হোয়াটসএপ, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম সব এপস খুঁজতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ খুঁজাখুঁজি করে মেইলে কয়েকটা মেইল পেয়েছে। আর হোয়াটসএপে একটা আ*পত্তিকর ভি*ডিও! মুশফিকা প্রথম একটু প্লে করে আর দেখার রুচি ও সাহস পেলো না। নিজের নতুন নাম্বারে নাহিদের ফোন থেকে ভিডিওটা সেন্ড করে। তারপর মেইল গুলোর স্ক্রিণশট নিয়ে সেগুলোও নিজের নতুন নাম্বারে নিয়ে নেয়। অতঃপর চ্যাট ডিলেট করে গ্যালারি থেকেও স্ক্রিণশট ডিলেট করে এপস হিস্টোরে অল ক্লিয়ার করে ফোন যথাস্থানে রেখে দেয়। কাজ শেষে মুশফিকা বিড়বিড় করে অসহায় স্বরে বলে,

“আমি জীবনে অনেককে ঠকিয়েছি। ঠকিয়েছি টাকার জন্য। আমার ছোটো বোনটার ট্রিটমেন্টের জন্য। কিন্তু এবার আমি একটা অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দিতে পারি না। মাফ করে দিও নাহিদ।”

অতঃপর মুশফিকা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

______

আর্শি পরশু রাত থেকেই কেমন নিরব হয়ে গেছে। মুখে হাসি নেই। কারও সাথে কথা বলতে আগ্রহী না। ভার্সিটি থেকে এসে ঘুম ও ল্যাপটপই তার সঙ্গী। মিসেস আশালতা এটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন। মেয়ে তো তাকে কিছু বলছেও না। কলি বা আরিয়া এখানে থাকলে ঠিক কোনো না কোনো ভাবে জেনে নিতো। তিনি কালও কয়েকবার জিজ্ঞাসা করে কোনো উত্তর পায়নি। তাই আজ বাধ্য হয়ে বিষয়টা আরিয়াকে জানায়। আরিয়া বলে,

“তোমার বড়ো মেয়ে দেখো আবার শ্রাবণ ভাইয়ার উপর রাগ করে বসেছে। দাও তো ফোন ও-কে।”

মিসেস আশালতা ফোন নিয়ে আর্শির ঘরে গেলো। আর্শি ফোন কানে নিতেই আরিয়া বলে,
“এই আপু, তুমি যদি এই সময় এতো রাগ করো তবে আমার ছেলের বউ তো রাগী হবে! হাসি-খুশি থাকো না কেন?”

আর্শি তাও হাসলো না। গম্ভীর স্বরে বলল,
“হুম। কেমন আছিস?”

“আমিতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কাল বিকেল থেকে ঘরের মধ্যে এক প্রকার বন্ধি ছিলাম। নাহিদ এসেছিল যে! আজ চলে গেছে। মুশফিকা আপু বলল ইটালি যাচ্ছে নতুন বিজনেসের কাজে! আমার কথা হলো, আর কোনো দেশ পেলো না! ইটালিতেই কেন?”

আর্শির ভাবান্তর হলো না। সে বলল,
“ওহ।”

আরিয়া আর্শির সংক্ষেপ জবাবে প্রসন্ন হলো না। সে বলল,
“এই আপু? কী হয়েছে? তোমরা সবাই এমন করছো কেন? তুমিও কিছু বলছো না, এদিকে একটু আগে মুশফিকা আপুকে বললাম লু*ডো খেলব, একটু আসো। সেও আসলো না।”

“আমার কিছু হয়নি, আরু। তুই নিজের খেয়াল রাখ।”

“আরে তুমি কি এখন কল কেটে দিবে নাকি? আরেকটু কথা বলো না।”

তখন আরিয়ার দরজায় নক হলে আরিয়া বলে,
“এক সেকেন্ড। মনে হয় মুশফিকা আপু এসেছে। একটু ধরো।”

আরিয়া উঠে দরজা খুলে দেখে মুশফিকাই এসেছে। তবে মুশফিকাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। সে জলদি করে দরজা লাগিয়ে আরিয়াকে হড়বড়িয়ে বলে,
“শুনো আরিয়া, নাহিদ খুব জঘন্য একটা প্ল্যানিং করেছে। সেই প্ল্যানের লাস্ট স্টেপ এক্সিকিউট করতেই সে ইটালি যাচ্ছে। আমি তোমাকে কিছু স্ক্রিণশট ও একটা ভিডিও দেখাব। তুমি দেখো। কাল আমি নাহিদের ফোন থেকে সাবধানে কালেক্ট করেছি।”

আরিয়ার ভ্রু কুঁচকে আসে। সে মুশফিকার ফোনে স্ক্রিণশট দেখতে থাকে। সেগুলো দেখে আরিয়া হতভম্ব হয়ে যায়। আরিয়া বলে,
“নাহিদ শ্রাবণ ভাইয়াকে কেন ফাঁসাতে চায়?”

মুশফিকা বলে,
“কারণ সে প্রতিশো*ধ চায়। শ্রাবণকে আর্শির কাছে খারাপ বানিয়ে তারপর আর্শিকে নিঃশেষ হতে দেখতে চায়। এরজন্য সে একটা ফে-ক ভি*ডিও বানিয়েছে এ*আই এর মাধ্যমে। ফে-ক ভি*ডিওটা আমি পাইনি। তবে রিয়েলটা পেয়েছি। এস শার্লক নামের হোয়া*টসএপ নাম্বার থেকে। ভি*ডিওর মেয়েটাকে নাহিদ কনভেনস করতে পারেনি বলে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে অন্য উপায়ে করিয়েছে।”

আরিয়া ভিডিওটা দেখতে চায়। মুশফিকা দেখাতেই আরিয়া জাস্ট কয়েক সেকেন্ড (ব্লার করা) দেখে বন্ধ করে দেয়। অতঃপর বলে,
“ছিহ্! নাহিদ এতো নিচে নেমে গেছে! আমার আপুর জীবন নষ্ট করতে সে আরও একটা মেয়ের জীবন নিয়ে খেলছে!”

কথাটা বলতে বলতে আরিয়ার নিজের ফোনের দিকে নজর যায়। এখনও কল কানেক্টেড। সে তাড়াতাড়ি ফোন কানে নিয়ে শুনতে পায় আর্শির অস্থির স্বর,

“আরু? আরু? কী-সের ভিডিও? নাহিদ কী করেছে শ্রাবণের সাথে? আরু বল?”

আরিয়া বলে,
“ওই ***** নাহিদ একটা মেয়ের এ*মএম*এ*স দিয়ে শ্রাবণ ভাইয়ার সাথে ফেক ভিডিও বানিয়েছে। তোমার সাথে শ্রাবণ ভাইয়ার সম্পর্ক খারাপ করতে। ছিহ্ কতো জঘন্য মানসিকতা।”

আর্শি যেন আরও অস্থির হয়ে পড়ে। সে শুধায়,
“কোন মেয়ে?”

“ইরিনা নাম। মেয়েটা রাজি হয়নি বলে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ডকে দিয়ে করিয়েছে। বয়ফ্রেন্ডের সাথে মেয়েটার ঘনিষ্ঠ মূহুর্তের ভিডিওতে আ*র্টিফিশি*য়াল ইন্টা*লিজে*ন্টের মাধ্যমে শ্রাবণ ভাইয়াকে বসিয়েছে।”

আর্শি ইরিনার নাম শুনে শ*ক খায়। তবে কী শ্রাবণকে সেই রাতে ড্রিং*ক স্পা*ইক করে ফাঁসাতে চেয়েছিল? এতো এতো চিন্তায় মাথা ঘুরছে আর্শির। সে ফোন হাতে থাকা অবস্থাতেই সে*ন্সলে*স হয়ে যায়!

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে