শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৯+৩০

0
436

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৯
আশিক নিজেকে সামলে নেয়। তারবর আরিয়াকে ওই অবস্থাতেই আগলে নিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে দরজা লাগায়। অতঃপর আরিয়াকে সোজা করে দাঁড়া করিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে জিজ্ঞেসা করে,

“কী হয়েছে, আরু? তুমি হঠাৎ এরকম করছো কেন? কেউ কি কিছু বলেছে?”

আরিয়া মাথা নিচু করে না বোধক মাথা নাড়িয়ে চুপ করে আছে। তাতে যেন আশিকের চিন্তা আরও বাড়লো। সে আরিয়ার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ উঁচু করে ফের শুধায়,
“কী হয়েছে বলো না? তুমি এমন চুপ করে থাকলে তো আমার চিন্তা বাড়বে।”

আরিয়া বেড সাইড টেবিল থেকে প্রেগনেন্সি কিটটা এনে আশিকের হাতে দেয়। আশিক কিটটা দেখেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। তার চোখ-মুখের অবস্থা দেখে আরিয়া ধারণা করতে পারছে না, আশিকের মনে কী চলছে? আরিয়া বিছানায় বসে বলে,

“আমরা দুজনেই এখনও স্টুডেন্ট। বিয়েটাও হয়েছে একটা কাহিনীর মাধ্যমে। তুমি বিয়ের জন্যও প্রিপেয়ার ছিলে না, এখন নিশ্চয়ই বাচ্চার জন্যও প্রিপেয়ার না। সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ না, আমি জানি। আমি নিজেও বুঝতেছি….”

আরিয়ার কথার মাঝেই আশিক বলে উঠে,
“কতো কিছু গুছাতে হবে। তোমাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। এই তুমি বাড়ি এসে কিছু খেয়েছ? চোখ-মুখ ফ্যাকাশে লাগছে।”

আরিয়া অবাক হয়ে আশিকের মুখপানে চেয়ে আছে। আশিক তবে মেনে নিলো? আরিয়াকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে আশিক এগিয়ে আসলো। অতঃপর হাঁটু গেড়ে ফ্লোরে বসে আরিয়ার গালে হাত দিয়ে বলল,

“টেনশনে খাওনি তাই না? একটু বসো, আমি খাবার নিয়ে আসছি। এই সময় এতো কেয়ারলেস হলে হয়? একটু নিজের খেয়াল রাখতে হবে তো। তুমি একটু রাখবে, বাকিটা আমি রাখব।”

বলতে বলতে আরিয়ার দুই গালে সামান্য বাচ্চাদের মতো টেনে দিয়ে উঠে গেলো। আরিয়া সেখানেই অবাক হয়ে বসে আছে। আশিক এতো সহজে মেনে নিবে তা নিয়ে তার সন্দেহ ছিলো। যতোই হোক, এখনও গ্রাজুয়েশন শেষ করেনি। অজান্তেই আরিয়া হেসে ফেলল। জলদি করে বিছানা থেকে ফোন উঠিয়ে নিজের মাকে কল লাগালো।

_____

আর্শি, সোহা ও লিসা অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেছে। সোহার মন খারাপ খুব। কারণ রিক আজ তাকে নিজের গার্লফ্রেন্ডের সাথে মিট করিয়েছে! রিক বুঝতে পেরেছিল, সোহা তার প্রতি মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই সোহাকে বুঝাতে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে সাথে করে নিয়ে এসেছিল। সোহা এখন মন খারাপ করে ফ্রেশ না হয়েই একদিকে মুখ করে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। আর্শি ও লিসা ওর মনের অবস্থা বুঝতে পারলো। লিসা বলল,

“সি রিয়েলি ব্রোকেন। টাইম উইল হিল হার।”

“ইয়াহ।”

দুজনেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। আর্শি কিনে আনা ফ্রোজেন ফুডগুলো ভাজতে কিচেনে যায়। রান্না করার এক পর্যায়ে আর্শির মনে পড়ে তার শাশুড়িকে কল করার কথা। সে লিসাকে ডেকে একটু রান্নার দিকটা দেখতে বলে কিচেন থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে যায় কল করতে। মিসেস সন্ধ্যা তখন নেটে না থাকাতে আর্শি ফিরে আসে। ভাবলো পরে কল করবে।

______

আরিয়ার প্রেগনেন্সির খবর শুনে মিসেস আশালতা বেজায় খুশি। তিনি তো এই রাতের বেলাতেই আরিয়ার শ্বশুরবাড়ি যাবেন বলে মনস্থির করেছিলেন। অতঃপর স্বামী ও ছেলের কথা শুনে আগামীকাল যাবেন বলে ঠিক করলেন। কিন্তু এখন থেকেই মেয়ের পছন্দের সবকিছু রান্না করবেন বলে কাজে লেগে পড়েছেন।
আরিয়ার খবরটা পেয়ে মিসেস নেহা ও মিস্টার হাসানও বেশ খুশি। তারাও দাদা-দাদী হবেন। খবরটা এখনও অবধি নাহিদের কান পর্যন্ত পৌঁছায়নি। খাবার টেবিলে আরিয়া বাদে সবাই উপস্থিত। তখনি মিসেস নেহা কথাটা তুললেন।

“শোন আশিক, কাল একবার আরিয়াকে নিয়ে হসপিটালে ডাক্তার দেখিয়ে আসিস। সব নরমাল কী-না, কোনো কম্পলিকেশন আছে কী-না জানা যাবে।”

আশিক খেতে খেতে মাথা নাড়ায়। তখন মুশফিকাও বলে উঠে,
“মা, আমিও সাথে যাই? আশিক একা পারবে? প্রথমবার বলে কথা। দুজনেই নার্ভাস থাকবে। সাথে আরেকজন থাকলে ভালো হয় না?”

মিসেস নেহা খুশি হলেন। ইদানীং উনার কাছে মুশফিকাকে ভালোই লাগছে। স্বামীর বলা চরিত্রের সাথে এই মুশফিকার মিল দেখছেন না। মানুষ বদলায়, কথাটা তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি বললেন,

“হ্যাঁ যাও। ওরা দুজনই ছোটো। এসব ব্যাপারে খুব একটা কিছু বুঝবে না। তুমি সাথে গেলে ভরসা পাবে।”

নাহিদ খেতে খেতে সবার দিকে একবার করে চোখ বুলাচ্ছে। সে সবার আরিয়াকে নিয়ে এতো কেয়ারের কারণটা ঠিক ভাবে ধরতে পারছে না। তখন মিস্টার হাসান বলে উঠেন,

“তুমিও সাথে যাও, নেহা। যাকে ভরসা করে পাঠাচ্ছো, তারও তো এসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই। তিনজনেই এসব বিষয়ে অনভিজ্ঞ। তুমি অভিজ্ঞ, সাথে গেলে আরও সাহস পাবে। বাড়িতে প্রথম নাতি-নাতনি আসতে চলেছে বলে কথা!”

নাহিদ এবার থমকালো। মুশফিকার দিকে তাকায় তো একবার মায়ের দিকে, তো আরেকবার আশিকের দিকে। মিস্টার হাসান সেটা লক্ষ্য করে বলেন,

“এভাবে তাকাচ্ছো কেন? তুমিও জেঠা হচ্ছো।”

নাহিদ অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“আরিয়া প্রেগন্যান্ট?”

মিসেস নেহা বললেন,
“হ্যাঁ। প্রেগনেন্সি কিট দিয়ে টেস্ট করে জেনেছে। কালকে মেডিকেল টেস্ট করলে একদম শিউর হওয়া যাবে।”

নাহিদ আবার খাওয়া শুরু করলো। তৎক্ষণাৎ কোনো প্রত্যুত্তর করলো না। খাবার টেবিলে উপস্থিত সবাই কিছুটা অন্যরকম দৃষ্টিতে চাইলো। নাহিদের খাওয়া প্রায় শেষের দিকেই ছিল। সে খাওয়া শেষ করে উঠে যেতে যেতে আশিককে বলল,

“কংগ্রাচুলেশনস। বেস্ট অফ লাক।”

অতঃপর উপরে উঠে চলে গেলো। নাহিদ যেতেই মিসেস নেহা বললেন,
“ও মেনে নিতে শুরু করেছে। যাক ভালো লাগছে।”

মুশফিকা বাদে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেও, মুশফিকা মনে মনে হাঁসফাস করছে। নাহিদের পরিকল্পনা তো সে জানে!

______

আর্শির কাছেও আরিয়ার খবরটা পৌঁছে গেছে। আরিয়াই কল করে বলেছে। আর্শি তো মহা খুশি। তার ছোট্টো বোনটা কী-না মা হতে চলেছে! তার খুশির তুলনা হয় না। আরিয়া কিঞ্চিত মন খারাপ করে বলে,

“আপু, ভেবেছিলাম আমি আগে খালা হবো। তোমার বাচ্চাকে নিয়ে কতো প্ল্যান ছিল আমার। কিন্তু দেখো তুমিই আগে খালা হচ্ছো। আর আমার খালা হওয়ার কোনো লক্ষণই আমি দেখতে পাচ্ছি না। এটা কি ঠিক বলো?”

আর্শি হেসে উঠলো। বলল,
“তোর দুলাভাই থাকে সুদূর কানাডায়। আর আমি থাকি ইটালিতে। তোর খালা হতে দেরি আছে।”

“তাই বললে হবে? তোমাদের এতো রোমান্টিক একটা হা*নিমু*ন ট্যুর ছিল। আর আমি খালা হবো না? নট ফেয়ার!”

আর্শি কিঞ্চিত রাগ দেখিয়ে বলল,
“চুপ! বড়ো বোনের সম্পর্কে এভাবে বলে? দিন দিন তুই ঠোঁ*টকা*টা স্বভাবের হয়ে যাচ্ছিস!”

আরিয়া সেসবে পাত্তা দিলো না। বলল,
“সে যাই হই। আমার ছেলের সাথে তোমার মেয়ের বিয়ে দিব! বুঝলে?”

আর্শি অবাক হয়ে বলল,
“তোর ছেলেই এখনও দুনিয়াতে আসলো না! আর তুই বিয়ের চিন্তা করিস! এই তুই ফোন রাখ। অনেক রাত হয়েছে।”

“না না। তুমি আগে বলো।”

“ঘুমা বোন। মানুষের ভাগ্য কি আমরা বলতে পারি? যা ভাগ্যে আছে হবে। ঘুমা। রাখছি।”

“আচ্ছা।”

আর্শি মুচকি হেসে বিদায় জানিয়ে কল কে*টে দেয়। বাংলাদেশে এখন রাত এগারোটা। তাহলে আজকে আর তার শাশুড়ি ও ননদের সাথে কথা বলা হলো না। এতো রাতে কল করাটাও নিশ্চয়ই ভালো দেখাবে না। তাহলে আগামীকাল সকালেই কল করবে। স্নিগ্ধা আপু কেন তার উপর রাগ, তা সে নিজেও জানে না। পূর্বে কোনো ভুল করেছে কী-না যে এর জন্য রাগ? তা তো তার জানতে হবে। ফুঁস করে ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে খানিক হাসলো। বোনের কথাগুলোই তার এই হাসির কারণ।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩০
দেখতে দেখতে প্রায় মাস খানেক সময় পেরিয়ে গেছে। আর্শির সাথে স্নিগ্ধার সম্পর্কও স্বাভাবিক হয়ে গেছে। হয়েছে সেটাও শ্রাবণের বদৌলতে। নয়তো স্নিগ্ধা তো আর্শির সাথে কথা বলবে না! কিশোরী বয়সের ছোটো কিছু কথার জের যে স্নিগ্ধা মনে গেঁথে রেখেছে! সেটাও আর্শি ঘুণাক্ষরে টের পায়নি। ছোটো কিছু কথাই তো আর্শি বলেছিল,
“আপু, তোমার ভাই এতো ছ্যাঁ*চড়া কেন? আমাদের বাড়িতেই সারাক্ষণ পড়ে থাকে! আবার আমার সাথে বড়ো মুখ করে তর্ক করে! আমার যে বিরক্ত লাগে, সেটা কি তোমার ভাই বুঝে না? তোমার ভাইকে না করে দিবে। আমার এসব মোটেও পছন্দ না। ভাইয়ার অন্য ফ্রেন্ডরা তো এতো ঘন ঘন আসে না! আর যারা মাঝেমাঝে আসে, তারা আমাকে বিরক্তও করে না। যেমন সুমন ভাই, সুমন ভাইয়াও তো ভাইয়ার ছোটো বেলার বন্ধু। কই উনি তো আমাকে রাগায় না। তোমার ভাইটাই এমন কেন?”

আর্শি তখন স্কুলে পড়তো। কিশোরী বয়সে অনেক কিছুই চক্ষুশূল হয়। আর স্নিগ্ধা তখন এইচএসসি দিয়েছে। দুজনের মধ্যে তখন থেকেই সম্পর্কের অবনতির শুরু। কিন্তু এখন দুজনের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই ননদ-ভাবির কথা হয়।

ইদানীং আর্শি শরীরও বেশ খারাপ করছে। ভার্সিটি থেকে ফিরে শরীর একদম নেতিয়ে যায়। ঘুমও বেড়েছে প্রচুর। খাওয়া দাওয়াতেও প্রচুর অনীহা। আর্শির এসব অসুস্থতার কথা শুনে মিসেস আশালতা ভীষণ চিন্তিত। উনি যা ভাবছেন, তা যদি হয় তবে ভীণদেশে তার মেয়েটা একা কীভাবে সামলাবে? এদিকে ছোটো মেয়েকেও নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন। আর কয়েকদিন পর ছেলের বিয়ে। উনার উপরও চিন্তার শেষ নেই। মিসেস আশলতা বললেন,

“কাল একবার ডাক্তারের এপোয়েনমেন্ট নিস।”

আর্শি মায়ের সাথে ফোনে কথা বলার সাথে সাথে শসার আচার ও লিসার বানানো চিকেন বিরিয়ানি খাচ্ছিলো। সকালে যে একবার বমি করে ভার্সিটিতে গিয়েছে সেটা আর মাকে বলেনি। এখন মায়ের কথা জবাবে বলে,

“আরে মা, একটু প্রেশারে আছি বলে শরীর খারাপ করছে হয়তো। ঠিক হয়ে যাবে। আর এখন তো খাচ্ছি।”

“তুই বুঝতে পারছিস না। একটু চেকআপ করিয়ে নিলেই বা কী হয়? না জেনে কোনো ঔষুধ কিন্তু খাবি না। শ্রাবণকে বলেছিস?”

মায়ের কথা শুনে আর্শির হাসি পেয়ে গেলো। সে বলল,
“তোমার মেয়ে জামাই ইদানীং অনেক ব্যাস্ত থাকে। কী একটা প্রজেক্টের কাজ পেয়েছে। ৫-৬ জন মিলে সেটা করছে। আর তুমি এমন ভাবে বলছো যেন আমি প্রেগন্যান্ট! তুমিও না, মা! আমার রিসার্চের লেখালেখিতে কিছুদিন যাবত রাত জাগতে হচ্ছে বলেই এমন হচ্ছে। তুমি তো জানোই, আমার ঘুম কত পছন্দের।”

মিসেস আশালতা তারপরও চিন্তিত। এরকম নজরআন্দাজ করাতো ঠিক না। তারপরও তিনি মেয়েকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু আর্শির খাওয়া শেষ হতেই আর্শি রিসার্চের লেখা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে বলে বেশি কথা বলা হয় না।

______

এদিকে নাহিদকে এতোদিন পর এতো খুশি দেখে মুশফিকাও খুশি হলো। কিন্তু সে মনে মনে সন্দিহান! নাহিদ এতো খুশি মানে নাহিদের মনে কিছু তো চলছেই। মুশফিকা কফি নিয়ে নাহিদের কাছে গিয়ে বসলো। অতঃপর কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলল,

“আজ তোমাকে অনেক খুশি খুশি লাগছে। কিছু কী হয়েছে?”

নাহিদ কফির মগ নিয়ে তাতে এক চুমুক দিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,
“আমি নিজস্ব একটা ছোটো কম্পানি খুলেছিলাম শেয়ারে। বাবা জানে না সেটা। সেটার একটা ব্রাঞ্চ ইটালিতে নেওয়া হয়েছে। আমরা ৭ জন পার্টনার। এতোদিন ৬ জন ছিলাম। সপ্তম জনকে কিছুদিন আগে এড করলাম। সে ইটালিতে সিটিজেন প্রাপ্ত। তাই এখন ব্রাঞ্চ সেখানেও হচ্ছে।”

মুশফিকা হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তুমি কি শুধু তোমার কোম্পানির জন্য হ্যাপি? নাকি অন্য কোনো কারণেও?”

নাহিদ বাঁকা হেসে বলে,
“তোমার কী মনে হয়? অবিয়েসলি আমি এই কারণ সহ অন্য কারণেও হ্যাপি। তুমি তো জানোই। আর হ্যাঁ, তুমি না বলেছিলে তোমার কিছু টাকা লাগবে। আমি পঞ্চাশ হাজার তোমার একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছি।”

এই বলে নাহিদ উঠে ব্যালকনিতে চলে গেলো। মুশফিকা হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বসে রইল।

_____

শরৎকালের আমেজ প্রকৃতিতে। মনোরোম আবহাওয়া। ক্যাম্পাসে একাকি বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে আর্শি। আজ পিটারের জন্মদিন। পিটার সবার জন্য নিজ হাতে রান্না করে নিয়ে এসেছে। তার আনা খাবার গুলোর মধ্যে সবই হাফ বয়েল। মাছের একটা আইটেম এনেছে হালকা তেল ও আঁচে গোলমরিচ দিয়ে রান্না করা। আর্শি কিছুদিন যাবত হাফ বয়েল কোনো মাছ-মাং*সই খেতে পারছে না। বেশি করে মশলাদি না দিলে সে খেতে পারে না। এইতো পিটার যখন আর্শিকে মাছের ওই আইটেমটা টেস্ট করতে বলল, আর্শি পিটারের মন রাখতে একটু মুখে নিতেই যেন তার মনে হচ্ছিলো, পেটের ভিতর সব উলটে আসছে। আর্শি ছুটে গিয়ে ডাস্টবিনের কাছে বমি করলো। আর্শিকে বমি করতে দেখে সবাই উদ্বিগ্ন। পিটার বার বার সরি বলেছে আর্শিকে। তারপর আর্শির জন্য ভ্যানিলা আইসক্রিম এনে দিয়েছে। আইসক্রিম খেতে খেতে আর্শি নিজেই ভাবলো একবার টেস্ট করেই দেখবে। যদি সত্যি সত্যি সে প্রেগন্যান্ট হয়? যদিও পিরিয়ড মিস করা নিয়ে সে তেমন একটা চিন্তিত ছিল না কারণ তার মাঝেমাঝেই দেরিতে হয়। কিন্তু গতকাল মায়ের বলা কথাগুলো এখন ভাবছে।

বন্ধুদের বলে নিজেই নিকটস্থ হসপিটালে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে টেস্ট করালো। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর টেস্টের রিপোর্ট তার হাতে আসে। আর্শি এখনও খুলে দেখেনি। ভীষণ ভয় করছে তার। ইতোমধ্যে লিসা, সোহা, মোনা, হ্যারি ও পিটারও হসপিটালে চলে এসেছে। সোহা বলছে,

“রিপোর্টটা খুলে দেখ?”

সোহার সাথে বাকিরাও তাল মেলালো। আর্শি ভীত স্বরে বলল,
“ইফ দ্যা রেজাল্ট ইজ পজেটিভ, দ্যান?”

“ইফ ইট ইজ পজেটিভ, দ্যান ইট উইল বি গুড নিউজ। ডোন্ট বি স্কেয়ার্ড।”

লিসার সাথে বাকিরাও তাল মেলালো। আর্শি লম্বা শ্বাস নিয়ে রিপোর্টটা খুলল। প্রথমেই নজর গেলো, “পজেটিভ” লেখাটার উপর। সাথে সাথে আর্শি রিপোর্টটা উলটে মুখে হাত দিয়ে বসে রইল। আর্শি প্রতিক্রিয়াতে সোহা বিষয়টা বুঝতে পারলেও বাকি চারজন এখনও উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সোহা আর্শির কাঁধে হাত রেখে নরম কণ্ঠে শুধালো,

“পজেটিভ?”

আর্শি হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো। সোহা সাথে সাথে হইহই করে বাকিদেরও খবরটা বলে দিলো। হসপিটালের অন্যান্য রোগীরা উৎসুক হয়ে এই ছয়জন ছেলে-মেয়ের গ্রুপটাকে দেখছে।

হসপিটালের বাহিরে এসে আর্শি চিন্তিত সুরে বলল,
“শ্রাবণ, এমনিতেই কতো টেনসড থাকে আমাকে নিয়ে। এখন ওকে কীভাবে বলি?”

লিসা এখন বাংলা অনেকটাই বুঝতে পারে। সেই সাথে মোনাও। লিসা বলে,
“রিল্যাক্স। উই আর হেয়ার উইথ ইউ। নাউ ইউ হ্যাভ টু বি রিল্যাক্স এন্ড এভরিথিং উইল বি ফাইন, ডিয়ার।”

আর্শি খানিক হাসলো। রিপোর্টটার ছবি তুলে শ্রাবণকে পাঠিয়ে দিলো। যদিও জানে শ্রাবণ লাঞ্চ ব্রেকের আগে দেখবে না।

_____

বড়ো মেয়ের প্রেগনেন্সির কথা শুনে মিসেস আশালতা খুশি তো হলেন কিন্তু সেই সাথে চিন্তার অন্ত নেই। ছোটো মেয়ের খেয়াল নে নিজে কাছ থেকে রাখতে পারছেন, কিন্তু বড়ো মেয়েতো সেই সুদূর ইউরোপে থাকে। তিনি বললেন,
“সাবধানে থাক, মা। তোর তো নিজের প্রতি যত্নই থাকে না। এসময় আবার ওখানে একা।”

“আমি খেয়াল রাখব, মা। তুমি চিন্তা করো না তো। ভাইয়ার বিয়ের আর কিছুদিন বাকি। চিন্তা করে প্রেশার বাড়িয়ে ফেলো না। সন্ধ্যা থেকে আমার তিন বান্ধবী একটু পরপর এটা ওটা নিয়ে হাজির হচ্ছে! জানো, হ্যারি কী করেছে? হ্যারি তার নানির বানানো আচার আমাকে এনে দিয়ে গেছে। হ্যারির মা নাকি পাঠিয়েছে। তারপরও বলো, এখানে আমার কেউ নেই? তুমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না। তুমি এতো চিন্তা করলে আমারও চিন্তা হবে। এদিকে তোমার মেয়ে জামাই কম? আমাকে চিন্তায় রাখতে! আর হ্যাঁ, আমার হবু ভাবি, মানে কলিকে বলবে, সে যেন তোমাকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলতে নিজেও বেবি নিয়ে বসে!”

বলেই আর্শি হাসতে শুরু করে। মিসেস আশালতাও হেসে ফেলে। পাশে বসা আরিয়া নুডুলস খাচ্ছে আর মা-মেয়ের বার্তালাপ শুনছে। সে এবার খানিক বিরক্ত হয়ে বলে,

“উফ মা! আমাকেও একটু কথা বলতে দাও! সব কথা কি তুমিই বলবে?”

“নে নে ধর। আমি তোর বাপকে মশারি টাঙিয়ে দিয়ে আসি। তোর তো এই রাতের বেলা নুডুলস খেতে মন চেয়েছে! ঘুমানোর নাম-গন্ধ নেই!

অতঃপর মেয়ের হাতে ফোন ধরিয়ে তিনি চলে গেলেন। আরিয়া ফোন কানে নিয়ে কেশে বলে,
“দেখ আপু, এবার কিন্তু কনফিউশন হয়ে গেলো!”

“কী রকম?”

“এই যে কার ছেলে হবে? যদি আমার মেয়ে হয়, আর তোর ছেলে হয়, তবে তো তোর ছেলে ছোটো হবে। তখন কেমন বেক্ষাপ্পা হবে না? যদিও তোর চলে সিক্স উইক। আর আমার টেন উইকস।”

আর্শি কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“তোর মাথায় সারাক্ষণ এসবই ঘুরে?”

“হ্যাঁ!”

“ফোন রাখ! তোর এই উদ্ভট হিসাব তুই নিজে নিজে মিলা। আমার মা*থা খারাপ করিস না। ঘুমা এখন।”

অতঃপর আরিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল ডিসকানেক্ট করে দেয় আর্শি। এখন সে অপেক্ষা করছে শ্রাবণের কলের। শ্রাবণের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে ভাবতেই অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে