শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৭+২৮

0
447

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৭
মিলানের অলিগলিতে ঘুরেফিরেই দুটো দিন যে পেরিয়ে গেছে শ্রাবণ ও আর্শির। তিন দিন থাকার কথা থাকলেও আজই ভেনিসে বেড়াতে যাচ্ছে ওরা। ট্রেণের জানালা দিয়ে ছবির মতো পিছিয়ে যাওয়া প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছে আর্শি। পাশ থেকে শ্রাবণের হাত জড়িয়ে শ্রাবণের কাঁধে মাথা এলিয়ে হাস্যজ্জল চাহনিতে প্রকৃতি দেখছে। শ্রাবণ জিজ্ঞাসা করলো,

“কফি খাবে?”

আর্শি মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলে শ্রাবণ উঠে কফি আনতে যায়।

ভেনিসে বিকেলের দিকে পৌঁছায় ওরা। আদ্রিয়াটিক সাগরের উপকূলে ইতালির এই ভেনিস শহরটি জলে ভাসমান। মূলত কতগুলো দ্বীপের সমষ্টিতে শরটিতে। শহরটিতে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড়ে কোলাহলিত থাকে। ভেনিসের শিল্প, সাহিত্য বেশ নজরকারা ও নান্দনিক। রং-বেরঙের কারুকার্য নিয়ে প্রাচীন প্রাসাদ গুলো নীল স্বচ্ছ জলের উপর মাথা উঁচু করে নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভেনিসকে ইউরোপের সবচেয়ে রোমান্টিক শহরও বলা হয়। ভেনিস শহরটি গড়ে ওঠার পেছনেও রয়েছে একটা ইতিহাস। জ*লদ*স্যুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রবাসীরা এখানে বসতি করে তুলেছিল। এখানে বাহন বলতে নৌকা। পুরো শহরে লতার মতো লেকে বেষ্টিত।
হোটেলে উঠেই ফ্রেশ হয় লাঞ্চ করে আর্শি ও শ্রাবণ একটু হাঁটতে বেরোয়। আজ ওরা খুব একটা ঘুরবে না। শুধু আশেপাশে একটু ঘুরবে। ভেনিসের দীর্ঘ খালের পাশ দিয়ে হাঁটছে। খালটির উপর চারটি ব্রিজ আছে। তারমধ্যে রিয়াল্টো ব্রিজটি বিখ্যাত। আর্শি হাঁটছে শ্রাবণের হাত জড়িয়ে। তার চোখে-মুখে আশেপাশের পরিবেশের মুগ্ধতা। এর আগেও একবার ভেনিসে আসলেও এবারেরটা সম্পূর্ণ আলাদা। এবার তার সঙ্গী তার আপন মানুষ। যাকে সে একটু একটু করে গভীর ভাবে ভালোবাসতে শুরু করেছে। যাকে দেখলে এখন তার মনে হারানোর ভয় কাজ করে। তাইতো হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।
আর্শি আশেপাশে চঞ্চল নজর বুলালেও শ্রাবণের বিরামহীন নজর আর্শিতে। এই দুইদিন যাবত মেয়েটার মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন সে লক্ষ্য করছে। পরিবর্তনটা হচ্ছে আর্শির চোখের ভাষার। লাজুকতা, প্রেমময়ে পূর্ণ এক অদৃশ্য অধিকারবোধে আচ্ছন্ন। শ্রাবণ প্রশান্তচিত্তে হাসে। অতঃপর ভেনিসের ফুটপাতে এক ফুল বিক্রেতার থেকে আর্শির মিষ্টি রঙের জামার সাথে মিলিয়ে সেই রঙেরই একটা গোলাপ কিনতে দাঁড়ায়। আর্শি তা দেখে মুচকি হাসলো। ফুলটা শ্রাবণ আর্শির কানের কাছে গুঁজে দিতে দিতে বলল,

“প্রপোজ না করে কানের পিঠেই গুঁজে দিলাম। লাল গোলাপের সামনে এই গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করলে যদি লাল গোলাপ অভিমান করে বসে আমাদের ভৎসনা দেয়?”

আর্শি এবার মুখে হাত দিয়ে হেসে ফেলে। ফের বলে,
“ফুলকেও ভয় পাচ্ছেন? দারুণ ভীতু তো আপনি!”

শ্রাবণ ঠাট্টার ছলে বলে,
“ভয় পাব না? ফুল পবিত্র। আর পবিত্র কিছুকে দুঃখ দিলে আমার কপালে শনির দশা পড়বে না, বলো? মাত্র মাত্রই তো বউয়ের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসার দেখা পাচ্ছি। বউ আমাকে কাঁধছাড়া করতে চাইছে না বলে বগলদাবা করে ঘুরছে! একটা ফুলের অভিশা*পে যদি এই সুখ হারিয়ে ফেলি?”

আর্শি থেমে হা করে শ্রাবণের মুখের দিকে চেয়ে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ আর্শির অবস্থা দেখে হেসে আর্শির থুতনিতে হাত দিয়ে মুখ বন্ধ করিয়ে দিয়ে বলে,

“মুখ বন্ধ করো। মা*ছি ঢুকতে পারে! প্রেমের শহর বলে কথা! যদি মা*ছি তোমাতে মুগ্ধ হয়ে তোমার মুখের ভেতর ঢুকে যেতে চায়? বলা তো যায় না। তখন তোমার….!”

আর্শি এবার ক্ষেপে গেলো। বলে,
“ত্যা*ড়া টাইপ ককথাবার্তা আপনাকে বলতেই হবে? কেন না বললে পেটের ভাত হজম হয় না?”

“না হয় না!”

আর্শি এবার অনবরত শ্রাবণকে কি*ল, ঘু*ষি মা*র*তে লাগলো। শ্রাবণ হাসতে হাসতে কিছু দূর দৌঁড়ে চলে গেলো।

_______

মুশফিকা নাহিদের পাশে বসে আছে। নাহিদ ফোনে কথা বলছে। অপরপাশ থেকে একজন বলছে,
“মেয়েটার সমস্ত ডিটেইলস আপনাকে ইমেইল করছি। মেয়েটা অরফেন। চার্চে বড়ো হয়েছে।”

নাহিদ বাঁকা হাসে। অতঃপর বলে,
“থ্যাংকস। ইউ উইল গেট ইউর মানি।”

ফোন কে*টে নাহিদ লম্বা করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“এটলাস্ট মেয়েটার খোঁজ পেলাম।”

মুশফিকা প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“কিন্তু তুমি…”

নাহিদের চোখ চোখ পড়তেই থেমে গেল। মাথা নিচু করে বলল,
“সরি!”

নাহিদ ফিচলে হেসে বলল,
“সেদিন রেগে থাকাতে বলেছিলাম। তুমি করেই বলতে পারো।”

মুশফিকা যেন আনন্দিত হলো। ইদানীং সে নাহিদকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। নাহিদ কোনোভাবে তারউপর অসন্তোষ থাকুক তা সে চায় না। যদিও এর আগেও কিছু পুরুষের সান্নিধ্যে সে ছিল কিন্তু কথায় আছে না, ‘শ*রী*র ছুঁ*তে পারলেও মন সবাই ছুঁ-তে পারে না।’ তেমনি মুশফিকা এর আগে কারও জন্য এতোটা গভীর অনুভব করেনি। সে চায় না, এক বছর পর তাদের সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাক কাগজের সম্পর্কের মতো। সারাজীবন সে নাহিদের সাথেই থাকতে চায়।
মুশফিকার অপলক চাহনি ও নিরব দেখে নাহিদ ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“কী হলো?”

মুশফিকা সাথে সাথে স্বাভাবিক হয়। নিজেকে ধাতস্থ করে শুধায়,
“ওই মেয়েটা যদি রাজি না হয়?”

নাহিদ আয়েশ করে বেডের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বলে,
“হবে হবে। টাকা ছাড়লেই হবে। মেয়েটা আবার অরফেন। টাকার দরকার তার হবে। নয়তো সেখানে একটা ছোটো অ্যাপার্টমেন্টে কিনে দিব। রাজি হবে।”

মুশফিকা হাসলো। নাহিদের মেয়েদের প্রতি চিন্তাভাবনা তারও খারাপ লাগে। সে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
“তোমার কেন মনে হয়, ওই মেয়ে লো*ভে পড়ে তোমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে কাজটা করবে? এমনও তো হতে পারে, মেয়েটা যেহেতু এতিম। সে নিজের দ্বারা অন্যের ক্ষতি করতে চাইলো না।”

নাহিদ তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“নিজের দিকে চেয়ে কথাটা বলো! তুমি করছো না, টাকার জন্য?”

এই বলে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মুশফিকা মলিন হেসে সেখানেই বসে রইলো। মুশফিকা নিজে নিজেই বলতে লাগলো,
“দাদী বলতো আমি আমার মায়ের চরিত্র পাব। মা যেমন অন্যের সংসার ভেঙে নিজেরটা গড়েছে। আমিও তো অন্যেরটা ভেঙে নিজেকে গড়তে চাইছি। দাদী সত্যিই বলতো। আমি কারও ভালো করতে পারি না। স্বভাবত প্রচণ্ড স্বার্থপর যে।”

অতঃপর সেখানেই অনড় বসে রইল।

_______

ক্লাস টেস্টের জন্য আরিয়া ও আশিক পড়ছে। তখন আশিকের ফোন বেজে উঠলে আরিয়া সতর্ক দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়। তার সন্দেহ, জেবিন মেয়েটা কল করেছে। ওদিকে আশিককে তার বন্ধু ক্লাস নোটের জন্য কল করেছে। আশিক ফোন কানে রেখেই আরিয়াকে বলে,

“তোমার খাতা থেকে পরশুদিনের ক্লাসের নোটটা ছবি তুলে একটু দাও তো আমাকে। জিদান চাইছে।”

আরিয়া নিজের চিন্তাকে ভুল প্রমান হতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে খাতা থেকে ছবি তুলে আশিককে মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে দেয়। বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
“নাহ্! এই জেবিনের একটা ব্যাবস্থা করতে হচ্ছে। কালই ওকে ধরব। কী চায় সে? আমার স্বামী, কয়দিন পর আমার বাচ্চার বাপও হবে! তার দিকে কী-না নজর দিয়ে বসে আছে! বে*হা*য়া মেয়ে! একদম গ*লার টু*টি চেপে ধরব! হুহ্!”

আশিক আরিয়াকে কলমেে নিভ দিয়ে খাতায় আ*ঘা*ত করতে দেখে সন্দিহান দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। তারপর শুধায়,
“তুমি এমন করছো কেন?”

“হু?”

“খাতায় কলম দিয়ে গু*তাচ্ছ কেন? কার উপর রাগ ঝা*ড়ছো?

আরিয়া এবার থতমত খেয়ে যায়। ফের আমতা আমতা করে বলে,
“কিছুতেই মনে থাকছে না। বারবার ভুলে যাচ্ছি। তাই…”

“ওহ! মনোযোগ দিয়ে পড়ো। মনের মধ্যে অবান্তর চিন্তা বাদ দাও। পড়াতে ফোকাস করো।”

আরিয়া মাথা দুলিয়ে পড়তে আরম্ব করলো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮
সময় কতো দ্রুত পেরিয়ে যায়। যেন চোখের পলকেই দিন পেরিয়ে সপ্তাহ কেটে যায়। সময়ের সাথে সাথে ব্যাস্ততাও যেন বাড়তে থাকে। তখন মনে হয়, ২৪ ঘণ্টার বদলে যদি দিনে ২৭ ঘণ্টা পাওয়া যেত! আর্শির বর্তমান অবস্থাও তেমনি। আগামীকাল কোর্সের মিড পরীক্ষা। তাই নাকেমুখে পড়ছে অবস্থা। কয়েকদিন ঘুরাফেরার কারণে অনেক পড়া জমে গিয়েছিল। তাইতো তিন-চার দিন যাবত শ্রাবণ আর্শিকে কল করেও পাচ্ছে না। পেলেও দশ-পনেরো মিনিটের বেশি আর্শি কথা বলতে পারে না। তারউপর কানাডা ইটালির থেকে ছয় ঘণ্টা পেছনে। সময়ের গ্যাপে দুজনের কথাবলার টাইমটেবিলও পরিবর্তন হয়েছে। আর্শি ভেনিস থেকে মিলানে ফিরেছে দুই সপ্তাহ হয়েছে। শ্রাবণও সেখান থেকে কানাডার ফ্লাইটে চলে গেছে।

আর্শি ও লিসা নিজেদের রুমে পড়ছে, তখন পাশের রুম থেকে সোহার চিৎকার শুনে দুজনেই হকচকিয়ে তাকায়। লিসা বলে,

“হোয়াই ইজ সি স্ক্রিমিং?”

“ডোন্ট নো।”

বলে আর্শি উঠে গেলো। পিছু পিছু লিসাও গেল। সোহার রুমে গিয়ে দেখলো সোহা ফোন নিয়ে এক প্রকার নাচছে! মোনাও অবাক হয়ে দেখছে। আর্শি ও লিসা, মোনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“হোয়াট হ্যাপেন্ড টু হার?”

মোনা জবাবে বলে,
“ডোন্ট নো। সাডেনলি সি স্টার্টেড বিহেভিং লাইক দিস।”

অতঃপর তিনজনেই কিছুক্ষণ সোহার পা*গলামো দেখতে থাকে। সোহা ওদেরকে এভাবে নিজের দিকে বিরক্তি ও কৌতুহলের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে দেখে শান্ত হয়ে বসে। ফের এক্সাইটমেন্ট নিয়ে বলে,

“রিক, জাস্ট সেন্ড মি এ মেসেজ, টুমোরো হি উইল কাম টু মিট উইথ মি! ইটস জাস্ট আনবিলিভেবল!”

ওরা তিনজন একে অপরের দিকে চেয়ে থেকে কোনো প্রত্যুত্তর না করে যে যার কাজে চলে যায়। সোহা তার বন্ধুদের এতো নির্বিকার দেখে আশাহত হয়ে যায়। তখন তার হঠাৎ খেয়াল হয়, কাল তার পরীক্ষা! আর সন্ধ্যা থেকে এক ঘণ্টা সে পড়তে বসেনি। রিকের সাথে কথা বলেছে!

_____

পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে আর্শি শ্রাবণকে কল করে। ক্যাম্পাসের একটা নিরব স্থানে বসেছে সে। সোহা গেছে রিকের সাথে দেখা করতে। সাথে করে লিসাকেও নিয়ে গেছে। মোনার পরীক্ষা সবেই শুরু হবে। কানাডায় এখন সকাল নয়টা। শ্রাবণ অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলো। এমন সময় কল আসে। সে কোট পড়তে পড়তে স্ক্রিণে আর্শির নাম দেখে রিসিভ করে বলে,

“পাঁচ মিনিট পর কল করছি। একটু ওয়েট করো।”

অতঃপর কল কেটে দেয়। আর্শি বুঝলো যে শ্রাবণ এখন অফিসের জন্য বেরোবে। ক্যাব হয়তো চলে এসেছে। আর্শি বসে বসে ফোনের গ্যালারিতে ভেনিসে ঘুরাঘুরির শেষ দিনের ছবিগুলো দেখছে। দুজনে একসাথে নৌকার এক সাইডে আগেপাছে করে বসে দুই হাত ছড়িয়ে তোলা ছবি। শ্রাবণ আর্শিকে নৌকাতেই লাল গোলাপের তোড়া দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে প্রপোজ করার ছবি। ক্যান্ডেল নাইট ডিনারের ছবি। আরও কিছু সুন্দর মূহুর্তের ছবি। মূহুর্তগুলো আর্শির দৃশ্যপটে ভেসে উঠে। অজান্তেই আর্শি লাজুক হাসে। আজ তার পরীক্ষা শেষ হলো। তিনটা সাবজেক্টের পরীক্ষা পরপর তিন দিনে দিয়েছে। এখন আগামীকাল ক্লাস নেই।
কিছুক্ষণের মধ্যে শ্রাবণ কল করে। আর্শি রিসিভ করে বলে,

“সরি, কালকে ইন্টারনেটে ছিলাম না। আপনি কল করেছিলেন।”

“পরীক্ষা কেমন হলো তাই বলো।”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“দুপুরে খেয়েছ?”

“না। খাব। আচ্ছা শুনুন না, আপনি তো বলেছিলেন স্নিগ্ধা আপুর সাথে কথা বলতে। আমি মাকে কল করলে আপুর সাথে কথা বলতে পারব? আসলে সরাসরি আপুকে কল করতে ভয় করছে। যদি রিসিভ না করে?”

শ্রাবণ খানিক ভাবলো। ফের বলল,
“করতে পারো। আপুতো মায়ের কাছেই আছে। ঝামেলা মিটিয়ে নিও।”

“হুম।”

“এখন অ্যাপার্টমেন্টে যাও। আমি অফিস থেকে ফিরে কল দিব। তারপর…”

বলতে বলতে শ্রাবণ ফোন কান থেকে নামিয়ে ক্যাব ড্রাইভারকে বলে,
“স্টপ স্টপ।”

ড্রাইভার গাড়ি থামালে শ্রাবণ অর্ধনমিত গাড়ির কাঁচ পুরোটা নামিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়ানো এক তরুণীকে ডাকে,
“হেই ইরিনা,”

মেয়েটি বারবার হাতঘড়িতে সময় দেখছিল। হঠাৎ নিজের নাম শুনতে পেয়ে সেটা অনুসরণ করে তাকায়। অতঃপর পরিচিত চেহারা দেখে এগিয়ে আসে। শ্রাবণ তাকে জিজ্ঞাসা করে,
“হোয়াই আর ইউ স্ট্যান্ডিং হেয়ার?”

মেয়েটি জবাবে বলল,
“একচুয়ালি, আই বুকড এ ক্যাব বাট আনফরচুনেটলি ক্যাব ড্রাইভার সাডেনলি গট সিক।”

“ওহ। সো ইউ আর গেটিং লেট। ইউ ক্যান কাম উইথ মি। উই আর ইন দ্যা সেম অফিস!”

ইরিনা খানিক বিব্রত হলো। তা দেখে শ্রাবণ বলল,
“কাম। ডোন্ট ফিল হেজিটেটিং।”

ইরিনা কৃতঙ্গতা স্বরূপ হেসে গাড়িতে শ্রাবণের পাশে উঠে বসলো। অতঃপর ধন্যবাদ জানালো।
এদিকে আর্শি এখনও কলে। সে দুই পক্ষের কথোপকথনই শুনেছে। শ্রাবণ ফোন কানে নিয়ে বলল,

“রাতে কল করছি। বায়।”

আর্শি মৃদু স্বরে ‘বায়’ বলে কল রেখে দিলো। অতঃপর ভাবতে লাগলো। শ্রাবণ তাকে ইরিনা নামের একটি মেয়ের গল্প বলেছিল। শ্রাবণ তাকে বলেছিল, মাস্টার্স করাকালীন ইরিনা নামের এক মেয়ে শ্রাবণকে একবার প্রপোজ করেছিল। মেয়েটি শ্রাবণের এক ইয়ারের জুনিয়র ছিল। তাহলে কি এই সেই ইরিনা? নাকি অন্য ইরিনা? কিন্তু ইরিনা যে শ্রাবণের কলিগ, এটা তো বলেনি! প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে আর্শির মস্তিষ্কে। নিজেকে শান্ত করতে নিজে নিজেই বলে,

“হোয়াটেবার! শ্রাবন তো বলেছেই, মেয়েটি তাকে প্রপোজ করার পর সে সাথে সাথে না করে দিয়েছিল। তারপর মেয়েটি আর কখনো তার কাছে প্রপোজাল নিয়ে আসেনি। তাহলে আমি অযথাই ভাবছি। ধুর!”

উঠে দাঁড়ালো আর্শি। লিসা ও সোহাকে খুঁজতে লিসার ফোনে কল করলো। লিসা জানালো তারা একটা ক্যাফেতে আছে। সেখানেই যেন সে আসে। আর্শিও সেই পথে যেতে লাগলো।

________

রাত প্রায় সাড়ে আটটা। আরিয়া ভয়ে ভয়ে চুপসে মুখ লুকিয়ে বিছানায় বসে আছে। আশিক টিউশনি থেকে এখনও ফেরেনি। ভার্সিটির থেকে ফেরার পর তার শরীর খুব খারাপ করেছিল। বমিও হয়েছে। তারপর কাজের মেয়েটা তাকে এমন এক কথা বলল, যা শুনে সে সত্যি ঘাবড়ে গিয়েছিল। তারপর নিজেরও কিছু মনে হওয়াতে কাজের মেয়েটাকে দিয়েই ফার্মেসি থেকে প্রেগন্যান্সি কিট কি*নিয়ে আনে। অতঃপর টেস্ট করে রেজাল্ট দেখে এখন দরজা লাগিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কাজের মেয়েটা রেজাল্ট জানতে কয়েকবার ডেকেও গেছে কিন্তু আরিয়া সাড়া দেয়নি। আরিয়া নিজেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তিত। যদিও তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় দুই মাস। কিন্তু এতো জলদি বেবি নেওয়ার ইচ্ছে তো তার ছিলো না। এখনও গ্রাজুয়েশনের কিছু মাস বাকি।

ঘড়ির কাঁটায় নয়টা বাজতেই দরজায় নক হলো। আরিয়ক জানে এখন আশিক এসেছে। সে দ্রুত উঠে এক প্রকার ছুটে গিয়ে দরজা খুলল। তার ধারনা সত্যি করে দরজার অপরপাশে আশিকই ছিল। আরিয়া দরজা খুলেই কোনো বাক্যব্যয় ছাড়াই আশিকের বুকে একপ্রকার ঝাঁ*পিয়ে পড়লো। আচমকা এমন হওয়াতে আশিক এক পা পিছিয়ে গিয়ে আরিয়াকে আগলে ধরে। আশিক বুঝতে পারলো না আরিয়ার এমন করার কারণ। এদিকে সিঁড়ি দিয়ে নাহিদ উঠছিল। দুই ভাই একসাথেই বাড়িতে ফিরেছে। নাহিদের নজর না চাইতেই আশিকের রুমের দরজার দিকে যেতেই সে পরিবেশ দেখে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়ায়। তার রাগ হচ্ছে। সিঁড়ির হাতলে মুষ্টিমেয় আ-ঘা*ত করার পর উঠে যেতে নিলেই একদম উপরের সিঁড়িতে দাঁড়ানো মুশফিকার সাথে নজরবন্দি হয়। অতঃপর নাহিদ মুশফিকাকে পাশ কাটিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

মুশফিকা কলিংবেলের শব্দে নিচে নামছিল। তার আগেই কাজের মেয়েটা দরজন খুলে দেওয়াতে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু পথিমধ্যে আরিয়ার আচমকা কাণ্ডও তার নজর কেড়েছে। সেই সাথে নাহিদের রাগের বহিঃপ্রকাশও। মুশফিকা কিছুটা সন্দেহ করে। আরিয়ার শরীর খারাপের ব্যাপারে সে জানে। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে জানতে পারে, আরিয়া প্রেগন্যান্সি কিট আনিয়েছে। তাই আরিয়ার আচরণে ধারণা করে নিয়েছে, মেয়েটা প্রেগন্যান্ট। মুশফিকা মৃদু হাসলো। কিন্তু পরক্ষণেই মুখ জুড়ে নেমে এলো কালোমেঘের ছায়া! ভয় হচ্ছে তার, নাহিদ ওদের কোনো ক্ষতি করবে না তো?

চলবে ইন শা আল্লাহ,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে