Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতেশ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৩+২৪

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২৩+২৪

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৩
দেখতে দেখতে দুটো দিন পেরিয়ে গেলো। আরিয়া ক্লাস শেষে বাড়ি ফিরেছে সবে। আশিক গিয়েছে টিউশনিতে। আরিয়া পানি খেয়ে ফ্রেশ হতে যাবে তখনি দরজায় টোকা পড়ে। আরিয়া বসা থেকেই বলে,

“আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। পরে খাব।”

তারপর আর টোকা পড়ে না। আরিয়া ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরোয়। এখন বিকেল প্রায় পাঁচটা বাজতে চলল। ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে দেখে আরিয়ার পছন্দের খাবারে টেবিল ভরপুর! আরিয়া খানিক অবাক হয়। ভাবতে থাকে, সে তো মিসেস নেহাকে তার পছন্দের আইটেমের কথা বলেনি। আরিয়ার ভাবনার মাঝে মুশফিকা হাতে কাবাবের প্লেট নিয়ে হাজির। অতঃপর বলে,

“বসো বসো। কতো লেট করে এলে। ওভেনে সামান্য গরম করেছি।”

আরিয়া অবাক হয়ে মুশফিকার দিকে চেয়ে রয়। আরিয়াকে চেয়ে থাকতে দেখে মুশফিকা আরিয়ার হাত ধরে চেয়ারে বসায়। তারপর প্লেটে গরম গরম খিচুড়ি বাড়তে বাড়তে বলে,

“দুপুরে কি কিছু খেয়েছিলে? দেখে তো মনে হচ্ছে না খেয়েছ।”

আরিয়া মৌনতা ভেঙে প্রশ্ন করে,
“এগুলো আন্টি রান্না করেছেন?”

“না। আমি রান্না করলাম। মা তো বাতের ব্যাথার জন্য এতোকিছু করতে পারবে না। বুয়ার হাতের রান্নাই সবাই খায়। তাই ভাবলাম আজ আমি রান্না করি। নাউ, শুরু করো।”

আরিয়ার ভিমড়ি খাওয়া অবস্থা! তার বিশ্বাস হচ্ছে না যে মুশফিকা তার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে। আরিয়া কিছুটা কৌতুহলী হয়ে শুধালো,
“এগুলোই কেন রান্না করলে?”

“তোমার পছন্দের খাবার তো। খেয়ে দেখো, তোমার ভালো লাগবে।”

আরিয়ার সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন,
“তুমি কি করে জানলে, এগুলো আমার পছন্দের খাবার?”

এবার মুশফিকা চমকে যায়। থতমত খেয়ে কিছু বলতে নিয়েও সুর বদলে বলে,
“তোমার আন্টি বলেছেন। আমিও বা কিভাবে জানব, যদি মা না বলেন আমাকে এগুলো। তুমি কথা বলো না তো, খাও।”

আরিয়া বুঝতে পারলো যে মুশফিকা মিথ্যা কথা বলছে। কিন্তু সে আর কথা বাড়াতে চাইলো না। তার সত্যিই অনেক ক্ষুধা লেগেছে। খাওয়া-দাওয়া শেষে মুশফিকাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরিয়া নিজের রুমে রেস্ট নিতে চলে গেল।

আরিয়া যেতেই মুশফিকা নিজের ঘরে গিয়ে নাহিদকে কল করলো। নাহিদ কল রিসিভ করেই প্রথমে জিজ্ঞাসা করে,
“আরিয়া খেয়েছে?”

“হ্যাঁ। খুব মজা করে খেয়েছে।”

“গুড। ওর সাথে আরও বেশি বেশি করে মিশবে। ওর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবে।”

“ঠিক আছে।”

“আর শোনো, আরিয়া কিন্তু প্রচুর প্রশ্ন করে। তাই কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ করে নেবে সবকিছু। তাছাড়া তুমি ইন্টেলিজেন্ট। তাই আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।”

“ওকে। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। আর আমার একাউন্টে….”

নাহিদ মৃদু ধ*মক দিয়ে মুশফিকাকে থামিয়ে দেয়। অতঃপর বলে,
“সেটা তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না। সময়মতো সব পেয়ে যাবে।”

“ওকে।”

মুশফিকা কল কে*টে এবার তার শাশুড়ির ঘরে যায়।

________

এদিকে পরেরদিন সকালে শ্রাবণকে সারপ্রাইজ করে দিয়ে ওর ভিসা হয়ে যাওয়ার খবর জানায় ইরাদের বন্ধু। শ্রাবণ যদিও মাঝে বলেছিল ভিসা লাগবে না। কিন্তু ইরাদই তার বন্ধুকে বলেছিল যাতে শ্রাবণের কথা না শুনে। কারণ শ্রাবনের হুটহাট পরিকল্পনা বদল হয়। মন ভালো থাকলে এক, মন খারাপ থাকলে এক। ভিসা পেয়ে শ্রাবণ সবার আগে ইরাদকে কল করে। ইরাদ রিসিভ করেই বলে,

“ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমি জানি আমি তোর অনেক বড়ো উপকার করেছি। এইযে তোর মন বুঝে ভিসার কাজ চালিয়ে যেতে বলেছি।”

শ্রাবণ হেসে বলে,
“তুই আর আদিব, এই দুইজন যে আমার লাইফে কী, সেটা আমি বলে বুঝাতে পারব না।”

“হইছে এবার থাম। প্যাকিং শুরু কর। পরশু ফ্লাইট। আর্শির বার্থডের আগেরদিন।”

ইরাদের কথায় শ্রাবণ বলে,
“তোকে সামনে পেলে….”

“ছিহ্ শ্রাবণ! তুই এখন বিবাহিত। আমারও গার্লফ্রেন্ড আছে। এসব নষ্ট কথাবার্তা বলবি না।”
বলেই ইরাদ নিজেই ফিক করে হেসে ফেলে। শ্রাবণ বলে,

“আমি ট্রিট দিতাম বলতাম। যাই হোক। থ্যাংকিউ দোস্ত। আমি তো মানা করেই দিয়েছিলাম। তুই যদি না বলতি তবে…”

“ওকে ওকে। এতো মাখন লাগাতে হবে না। আমার মেয়ের সাথে তোর ছেলের বিয়ে দিবি এটা যেন মনে থাকে।”

শ্রাবণ হেসে হেসে সম্মতি দিয়ে ফোন রাখে। এবার আর্শিকে কল লাগায়। আর্শি ঘুমাচ্ছে। ইতালিতে এখনও সূর্য উঠেনি। ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে সবে। শ্রাবণের কথায় আর্শি ফোনের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে না। যদিও শ্রাবণ তাকে বলেছে অসময়ে কল করবে না। তাও এই ছেলের কখন মুড সুয়িং হয় বলা যায় না। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর্শি হঠাৎ ফোনের রিংটোনে ধড়ফড়িয়ে ওঠে! বুকে হাত দিয়ে কয়েকবার শ্বাস-প্রশ্বাস ছেড়ে ফোন উঠিয়ে দেখে শ্রাবণ কল করেছে। আর্শি সময় দেখে হতাশ হয়ে বিড়বিড় করে বলে,

“আমার ঘুমের সাথে এর সত্যি সত্যি শত্রুতা আছে। এটা আমার ঘুমও বুঝে গেছে! ঘুমের মাঝে ফোন বাজলেই হৃৎপিণ্ডটা যেন বের হয়ে আসার অবস্থা হয়।”

ফোন বাজতে বাজতে কেটে যায়। দশ সেকেন্ড পর আবার কল আসে। আর্শি রিসিভ করে,
“হ্যালো।”

“গুড মর্নিং। তুমি এখনও ঘুমাচ্ছিলে? নামাজ পড়েছ?”

আর্শি চোখ-মুখ কুঁচকে বলে,
“মাত্র ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে। আমার এলার্ম আরও ১৭ মিনিট পর।”

“তুমি তো তাহলে ঘুমিয়ে ছিলে।”

“হুম।”

“সরি। যেহেতু উঠেই গেছো, নামাজ পড়ে নাও। তারপর কথা বলব।”

“ওকে।”

আর্শি ফোন কেটে ওজু করতে যায়।
________

নামাজ পড়ে আর্শি ফোন নিয়ে কিচেনে যায়। চা বানাবে। মোনালিসা এখনও ঘুমাচ্ছে। পাশের রুমে সোহা ও মোনাও ঘুমাচ্ছে। আর্শি তাই রান্নাঘরেই কাজ করতে করতে শ্রাবণের সাথে কথা বলছে। চা বানিয়ে কিছু ভেজিটেবলও কে*টে রাখছে।
শ্রাবণ কথার ফাঁকে আর্শির প্রতিক্রিয়া জানতে জিজ্ঞেসা করে,

” তুমি তো এক বছর যাবত ইটালিতে আছো। তোমার গত বছরের জন্মদিনটাও ইটালিতে কে*টেছে। কেমন এন্জয় করেছিলে?”

আর্শির হাসি পেয়ে যায়। সে বলে,
“আমরা ভেনিসে ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমরা মানে আমরা চারজন ও দুইজন ছেলে হ্যারি ও পিটার। সেখানে ফাউন্টেন দেখে সোহার ইচ্ছে হয় শর্ট ভিডিওতে যে দেখায় ফাউন্টেনের সাথে ছবি তুলে, তেমনটা তুলবে। তো ও পিটারকে ক্যামেরার এঙ্গেল সেট করে দিয়ে দৌঁড়ে যায়। ও যেতে যেতেই ফাউন্টেন অফ হয়ে যায়। ও যতোবার যায়, ততোবারই এমন হচ্ছিলো। এদিকে আমি মোনা, লিসা ও হ্যারি হাসতে হাসতে রাস্তায় বসে পড়েছি। পিটার প্রথমে হাসছিল কিন্তু পরে ওরও একটা জেদ চাপে যে ও ছবি তুলেই ছাড়বে। দুজনের লাগাতার ধৈর্যে একটা ছবি তুলতে পারে তবে তখন ফাউন্টেন বন্ধ হবে হবে ভাব এমন।”

শ্রাবণ কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,
“তুমি তুললে না কেন?”

“সোহার মতো ধৈর্য আমার নেই। আমার তখন প্রচুর খিদে পেয়েছিল কিন্তু সোহার জন্য লেট হয়েছিল। তারপর যদি আমি আবার যেতাম তাহলে আবার লেট হতো।”

শ্রাবণ বিরস স্বরে বলে,
“তুমি এতো নিরামিষ কেন?”

আর্শি সাথে সাথে জবাব দেয়,
“নিরামিষ বেশি খাই তাই!”

“যাও! তুমি আসলেই নিরামিষ।”

“তাই ভালো। আপনি না বলেছিলেন, ছুটি ক্যান্সেল করেছেন। আপনার ফ্লাইট কবে?”

শ্রাবণ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,
“কালকে।”

আর্শি অবাক হয়। বলে,
“আপনি তো আমাকে জানালেন না। আপনার কথাবার্তায় তো মনে হচ্ছে না, আমি জিজ্ঞাসা না করলে আপনি আমাকে জানাতেন।”

“জানাতাম তো। তোমার কথা শুনতে শুনতেই মা*থা থেকে বেরিয়ে গেছে।”

“ভালো। ইশরাকরা কি তবে আজকে খুলনা থেকে চলে আসবে? পরশুই না গেল!”

“না। আমি মানা করেছি। পরশুই গেল। ভিডিওকলে কথা বলে নিব।”

“ওহ আচ্ছা।”

আর্শি ফোনে সময় দেখে ফের বলে,
“দেখলেন, কীভাবে কীভাবে ৫২ মিনিট হয়ে গেল। এবার রাখি। ওরা এতক্ষণে উঠে গেছে।”

“ওকে টেক কেয়ার।”

আর্শি মুচকি হাসে। বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে এতক্ষণ বানানো নাস্তা নিয়ে ছোটো টেবিলটাতে রাখে। শ্রাবণের সাথে কথা বলতে বলতে সে নিজেই আজকে নাস্তা বানিয়ে ফেলেছে।

শ্রাবণ ফোন রেখে অনলাইনে আর্শির জন্য কিছু অর্ডার করে। যাতে আজকের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়া হয় সেই ব্যাবস্থা করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৪
ইতালিতে এখন প্রায় দুপুর। আজ আগষ্টের ১২ তারিখ। আর্শি ও তার বন্ধুরা ক্যাম্পাসের রাস্তাতে হাঁটছে। এখানের রাস্তাটাও দারুণ সুন্দর। ইউনিভার্সিটির গার্ডেন থেকে চুপিচুপি কয়েকটা ল্যাভেন্ডার ফুল নিয়েছিল। এখন সেগুলোকে কানের কাছে খোলা চুলের সাথে ক্লিপ দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে। আজ তার সাঁজসজ্জাতেও আজ ল্যাভেন্ডারের ছাঁপ। একটা জর্জেটের ঘেরালো ও ফুল স্লিভসের ল্যাভেন্ডার রঙের গাউন ও কেডস। ল্যাভেন্ডার রঙের একটা শিফন ওড়না দুই প্যাঁচ দিয়ে গলায় সামনের দিকে ঝুলিয়ে রেখেছে। পিটার সামনে গিয়ে বলে,

“আশি, স্মাইল!”

পিটার ফটাফট আর্শির কয়েকটা ছবি তুলে আর্শিকে এনে দেখাচ্ছে। তখনি হুট করে একজন সামনে এসে এক মুঠো অর্কিড দিয়ে নিজের মুখমণ্ডল আড়াল করে হাঁটু গেড়ে বসেছে আর্শির সামনে। আর্শি সহ ওর বন্ধুরা খানিক চমকে ওঠে। কিন্তু সামনের ব্যাক্তিটি যখন মুখের সামনে থেকে ফুলগুলো নামালো তখন আর্শির মুখাবয়বে অবাক মিশ্রিত হাসি ফুটে ওঠে। আর্শি মুখে হাত দিয়ে বিস্মিত স্বরে বলে,

“শ্রাবণ!’

শ্রাবণ ফুলগুলো নিতে ইশারা করে বলে,
“হ্যাপি বার্থডে, বৃষ্টি।”

আর্শি ফুলগুলো নিয়ে মিষ্টি হেসে বলে,
“থ্যাংকিউ। বাট, আপনি এখানে?”

শ্রাবণ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“সারপ্রাইজ ছিল। তুমি খুশি হওনি?”

“হয়েছি।”

“মনে হচ্ছে না।”

আর্শির হাসি মিলিয়ে যায়। শ্রাবণ কি তবে আবার অভিমান করলো? সে তো সত্যি খুশি হয়েছে। এদিকে শ্রাবণ ভাবছে, ‘ও তো খুশি প্রকাশ করলো না!’ আর্শি শ্রাবণকে অণ্যমনা দেখে হাত ধরে বলল,

“আমি খুব খুশি হয়েছি, শ্রাবণ। আপনার কেন মনে হলো, আমি খুশি হইনি? আমি সত্যি জানিনা।”

শ্রাবণ মুখশ্রীতে হাসি ফুটিয়ে বলে,
“লেট ইট গো। তোমার ফ্রেন্ডের সাথে ইন্ট্রোডিউস করাবে না?”

“অফকোর্স।”

অতঃপর আর্শি সবার সাথে শ্রাবণের পরিচয় করায়। আর্শি বলে,
“আজকে আর আমি ক্লাস করছি না। সোহা, ক্লাস চুপিচুপি রেকর্ড করে নিস। যদিও লিসা আছে। তাও।”

শ্রাবণ বলে,
“ক্লাস করতে পারো।”

“উম.. না। চলুন তো।”

এই বলে আর্শি শ্রাবণকে নিয়ে কাছেরই একটা রেস্টুরেন্টে গেলো। নিরিবিল দেখে একটা টেবিলেই বসলো। ছিমছাম বেশ সুন্দর। আর্শি খাবার অর্ডার করে শ্রাবণের হাত ধরে শুধায়,
“আপনি আবার মন খারাপ করে আছেন? কিন্তু কেন? তাছাড়া আপনারই বা কেন মনে হল আমি খুশি হইনি?”

শ্রাবণ হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“তুমি এখনও আমাকে ভালোবাসতে পারোনি?”

আর্শি শ্রাবণের হাত ছেড়ে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। শ্রাবণ মনে মনে ছটফট করছে আর্শির বলার। মিনিট দুয়েক পর আর্শি মাথা উঠিয়ে বলে,

“আমি জানিনা, আপনার কাছে ভালোবাসার অর্থ কী? আপনার মনে নিশ্চয়ই এই ভয়টা কাজ করে যে, ও আমার থেকে অনেক দূরে আছে। যদি আমাকে ছেড়ে যায়? তাই না? কিন্তু কেন? আপনি বিয়ের আগে ভাবতেন যদি আমি(আর্শি) অন্য কাউকে বিয়ে করে ফেলি। তাইজন্য আমার পুরো পরিবারকে রাজি করিয়ে আমাকে রাজি করালেন। এখন বিয়ের পর ভাবছেন, যদি আমি ছেড়ে চলে যাই? কেন?”

শ্রাবণ নিজের দিকটা ব্যাখ্যা করতে চাইলো।
“তুমি ভুল ভাবছো। আমি…”

আর্শি বলতে দিলো না। থামিয়ে নিজে বলে,
“আমি সরল সম্পর্ক চাই, শ্রাবণ! আপনিই জটিল করছেন। আমি আপনার মতো অতিরিক্ত ভালোবাসতে না পারলেও ভালো যে বাসি না, এমনও না। ইউ আর মাই হাজবেন্ড। এন্ড আই লাভ ইউ। কিন্তু আপনি বুঝতে পারছেন না। ভয় যে আমার হয় না, এমনটাও না। আমি ভয়ের জন্য…. থাক বাদ দিন। আমার মনে হয়, আপনি যতো দ্রুত নিজের জবে ঢুকবেন, ততো আপনার মনের জন্য ভালো। আপনি সারাদিন ফ্রি থাকেন বলে আপনার ব্রেণ উলটা-পালটা চিন্তায় মশগুল থাকে।”

শ্রাবণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আই থিংক সো।”

ইতোমধ্যে অর্ডার করা খাবার এসে গেছে। আর্শি নিজের প্লেট থেকে চামচে করে রাইস ও মাশরুমের এক পিস নিয়ে শ্রাবণের মুখের সামনে ধরে। শ্রাবণ নিজের প্লেটের খাবার থেকে মুখে নিচ্ছিলো তখন সামনে আর্শিকে খাবার ধরে থাকতে দেখে মুচকি হেসে খাবারটা নিয়ে নেয়। অতঃপর নিজের হাতের খাবারটা আর্শির দিকে বাড়িয়ে দেয়। আর্শি মুখে নিয়ে নেয়। খেতে খেতে বলে,

“আমরা কি হোটেল বুক করব? নাকি পিটারের বাড়িতে উঠব। যদিও পিটারকে বলিনি।”

শ্রাবণ সাথে সাথে জবাব দেয়,
“হোটেলেই উঠি। কাউকে বোদার করার দরকার নেই।”

“ওকে।”

দুজনেই দুপুরের খাবার শেষে আর্শিদের ফ্লাটের দিকে গেলো। শ্রাবণ বলল,
“তুমি উপরে গিয়ে ব্যাগ প্যাক করে নিয়ে এসো।”

আর্শি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“আপনি যাবেন না?”

“মেয়েদের অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়াটা কেমন দেখায়। তুমি ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে এসো।”

“অ্যাপার্টমেন্টে এখন কেউ নেই। তাই আপনাকে এতো লজ্জা পেতে হবে না। লম্বা জার্নি করে এসেছেন। একটু রেস্ট নিবেন। আমি এর মধ্যে ব্যাগ গুছিয়ে নেব।”

“তুমি যাও। আমি এখানে ঠিক আছি।”

“উঁহু। আমি আপনাকে সাথে করে নিয়েই যাব। আমার ব্যাগ গোছাতে কম করে হলেও আধা ঘন্টা লাগবে। ততক্ষণ আপনি নিচে দাঁড়িয়ে থাকবেন? আশেপাশের লোকজন তখন কিছু ভাববে না? শুধু অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকলেই ভাববে? আমি দারোয়ানকে বলে যাবো তো।”

“আচ্ছা চলো!”

শ্রাবণ বাচ্চাদের মতো মুখ করে রাজি হয়। যা দেখে আর্শি হালকা হেসে শ্রাবণের গুছিয়ে রাখা চুলগুলো খানিক এলোমেলো করে দিয়ে দারোয়ানকে বলে উপরে গেলো।

_______

সন্ধ্যায় আরিয়া বিছানায় হেডবোর্ডের সাথে আরাম করে বসে পড়ছিল। আর আশিক নিজের ডেস্কে বসে। তখন দরজায় নক হলে আরিয়া বলল,
“উঠো। দরজা খুলে দেখো।”

আশিক উঠে দরজা খুলতে গেলো। দরজা খুলে দেখলো মুশফিকা দাঁড়ানো। হাতে একটা ছোটো ট্রেতে দুই মগ কফি। মুশফিকা হেসে বলল,
“দরজা ধরেই দাঁড়িয়ে থাকবে?”

আশিক হাসার চেষ্টা করে সরে দাঁড়ায়। মুশফিকা রুমে প্রবেশ করে আরিয়ার কাছে বসে। আরিয়াকে এক মগ কফি দিয়ে আরেকটা আশিককে নিতে ইশারা করে। ফের বলে,

“তোমরা পড়ছিলে, তাই ভাবলাম তোমাদের জন্য কফি করে আনি।”

আশিক আরিয়ার দিকে তাকায়, আরিয়া আশিকের দিকে তাকায়। তারপর আরিয়া ওষ্ঠকোণে কৃতিম হাসি টেনে বলে,
“তুমি কেন কষ্ট করতে গেলে, ভাবি। আমাদের দরকার পড়লে আমরা বানিয়ে নিতাম।”

“এটা আবার কষ্ট কী? আমি কি আমার দেবরের মতো ভাই, ও দেবরানীর মত বোনের জন্য এটুকুও করতে পারি না?”

“না পারো। তুমি তো সারাদিন রান্না করেছো। এখন রেস্ট নিবে। তিন-চার দিন যাবত তো তুমিই রান্না করছো। কতো কষ্ট করছো।”

“আরে তেমন কিছু না। চপিং সব তো মেইড করে দেয়। আমি শুধু দুটো আইটেম রান্না করি। ডালটা আবার মা রান্না করেন। ওটা নাকি বাবার খুব পছন্দের।”

“তাও তো করছো। আমি তো শুক্রবার, শনিবার ছাড়া সুযোগই পাই না।”

“তাহলে ওই দুইদিন তুমি রান্না করো। বাকি পাঁচদিন আমি রান্না করলাম। দুই জা তে মিলেমিশে রান্না করলাম।”

মাঝ থেকে আশিক বলে,
“এটা আপনি ঠিক বলেছেন, ভাবি।”

মুশফিকা খানিক মশকরা করে বলল,
“দেখেছ আরিয়া, আশিক চায় তোমার হাতের রান্না খেতে। তাই বলছে।”

আশিক মাথা নুইয়ে লাজুক হেসে ডেস্কের কাছে চলে যায়। আশিককে লজ্জা পেতে দেখে আরিয়াও লজ্জা পায়। মুশফিকা তাড়া দিয়ে বলে,
“আচ্ছা, তাহলে তোমরা পড়ো। আমি যাই এবার। তোমাদের আর ডিস্টার্ব না করি।”

আরিয়া বিপরীতে মুচকি হাসে। মুশফিকাও চলে যায়। আরিয়া দরজা লাগিয়ে এসে আশিকের ডেস্কের কাছে গিয়ে বলে,
“আমার না ভাবির মতিগতি কিছুই বুঝে আসছে না। উনি আমাদের সাথে যেরকম বিহেভ করছে, উনি কি আসলেই তেমনটা? আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।”

আশিক অভয় দিয়ে বলে,
“তুমি এত নেগেটিভ ভাবছ কেন? ভাবি আমাদের সবাইকে আপন করে নিতে চাইছে।”

“আরে, মা*থামো*টা!”

আরিয়া কথাটা বলা মাত্রই আশিক সরু দৃষ্টিতে চাইলে আরিয়া এক কানে হাত দিয়ে বলে,
“সরি! তোমার ভাইয়া যে হুট কর বিয়েটা করেছে। নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে। আবার তোমার ভাবি যে এত ভালোমানুষি দেখাচ্ছে এরও কোনো কারণ আছে। নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে, ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।’ এর পিছনেও কিছুতো আছেই।”

আশিক কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে,
“দয়া করে, তুমি এসব চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে পড়ো। তোমার না পরীক্ষা?”

“পাত্তা দিচ্ছো না-তো?”

“না দিচ্ছি না। যাও পড়তে বসো।”

আরিয়া গাল ফুলিয়ে নিজের জায়গায় এসে বসে। থেমে থেমে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর চিন্তা করছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ