শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১৩+১৪

0
482

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
আরিয়ার সাথে দেখা করার পর আরিয়াকে চিন্তিত দেখে আর্শি জিজ্ঞাসা করে,
“কী হয়েছে? আবার কিছু করেছে?”

আরিয়া নিজের আশেপাশে আশিক ও নাহিদের কাজিনদের দেখে আর্শিকে হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। আশিকের এক কাজিন বোন শুধায়,
“কী হলো?”

“আপু, একটু আপুর সাথে কথা বলব। ওই কর্ণারের রুমটায় যাই?”

“আচ্ছা যাও। বেশি সময় নিও না। গেস্টরা তো তোমাকে দেখতেই এসেছে।”

আরিয়া মাথা নাড়িয়ে আর্শিকে নিয়ে কর্ণারের রুমটায় যায়। তারপর আরিয়া গতকালকের ঘটনা বলে। সব শুনে আর্শি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে,
“নাহিদের মা যদি তোর সাথে মিসবিহেভ করে? শোন, যদি করেও তুই জবাব দিস না। উনিই বা কী করবে বল? একমাত্র ছেলে উনার।”

“আরে না, আপু। আমি উনাকে কিছুই বলব না। তাছাড়া উনিও আমায় কিছু বলেন না। তবে উনি অনুষ্ঠানে আসেননি। উনার ছেলে আজ চলে যাবে। কাল রাতেই বাড়ি ছেড়ে নাকি হোটেলে ওঠেছে। আমি দুইবার বলেছিলাম আন্টিকে আসতে। কোনো জবাব দেয়নি। পরে আঙ্কেল বললেন আর না ডাকতে।”

আর্শি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন সবকিছু সঠিক হলেই হয়। চল এবার।”

আর্শি ঘুরলে আরিয়া ওর হাত টেনে ধরে বলে,
“আপু, শ্রাবণ ভাইকে দেখছি তোমার আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে। ব্যাপার কী হ্যাঁ?”

আরিয়ার কণ্ঠে স্পষ্ট রম্যতা ও দুষ্টুমি। আর্শি থতমত খেয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে,
“কই কিছু নাতো! উনি আমার পিছনে কেন ঘুরঘুর করছে সেটা আমি কীভাবে জানব?”

আরিয়া তার বোনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“অনেস্টলি আমাকে একটা কথা বলো তো, শ্রাবণ ভাইয়াকে তোমার কাছে কেমন লাগে?”

“কেমন লাগে?”
আর্শি কপাল কুঁচকে প্রশ্নের জবাবে ফের প্রশ্ন করলো। আরিয়া বলে,
“সেটা তো তুমি বলবে, যে শ্রাবণ ভাইয়াকে তোমার কাছে কেমন লাগে। আমি কিভাবে বলবো তোমার কাছে কেমন লাগে?”

“মানুষের মতোই লাগে!”

আর্শি অন্যদিকে ফিরে জবাবটা দিলো। আরিয়া তা লক্ষ্য করে আর্শির মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফের শুধায়,
“অন্যদিকে তাকিয়ে কেন বলছো? আমার দিকে তাকিয়ে বলো, কেমন লাগে?”

“কেন? তোর দিকে তাকালে বুঝি আমার জবাব বদলে যাবে? ”

“বদলাতেও পারে! বলা তো যায় না। তুমি নজর লুকাচ্ছো মিথ্যা ধরা পড়ে যাবে বলে!”

আর্শি আরিয়ার বাহুতে একটা ঘু*ষি বসিয়ে বলে,
“বেশি বুঝিস। স্টেজে সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে, আর তুই এখানে আছিস তোর আউল-ফা*উল প্রশ্ন নিয়ে।”

আর্শি ফের যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে আরিয়া বলে,
“আব্বু, আম্মু, ভাইয়া নাকি তোমার বিয়ে ঠিক করেছে? তুমি নাকি তাতে রাজিও হয়ে গেছো?”

আর্শি থমকে দাঁড়ায়। বোনকে থেমে যেতে দেখে আরিয়া এগিয়ে গিয়ে বলে,
“সত্যি করে বলোতো আপু, তোমার মনে শ্রাবণ ভাইয়ার জন্য একটুও জায়গা নেই?”

আর্শি জবাব দিতে পারলো না। আর্শিকে মৌন দেখে আরিয়া ফের বলল,
“তুমি কি বুঝো না? শ্রাবণ ভাই যে তোমাকে পছন্দ করে। শুধু পছন্দ না, তোমাকে ভালোবাসে। তোমাকে ভালোবাসে বলেই রাত-বিরেতে তোমাকে ফোন করে গিটার শুনাতো, বৃষ্টি নিয়ে ছন্দ শুনাতো। তুমি কিছুক্ষণ শুনে বিরক্ত হয়ে কল কে*টে দিতে। এগুলো কেন করতো?”

“চুপ কর। ওখানে স্টেজের কাছে মানুষ তোর জন্য অপেক্ষা করছে! আর তুই এখানে এসেছিস শ্রাবণ ভাইয়ার হয়ে গুনগান গাইতে আমার কাছে। চল।”

এই বলে আর্শি আরিয়াকে টেনে নিয়ে রুম থেকে বের হলো। রুম থেকে বেরোতেই দেখে আদিব ও শ্রাবণ রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। আর্শি সন্দিহান হয়ে শুধায়,
“তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

আদিব বলে,
“আরে বাবা আরুকে খুঁজছিল। তুই স্টেজের তোর ননদরা বলল তুই নাকি আর্শিকে নিয়ে এই রুমের দিকে এসেছিস। তাই আসলাম।”

“ওহ আচ্ছা।”

“লাঞ্চের টাইম তো পেরিয়ে যাচ্ছে। আরু ও আশিককে নিয়ে বসতে হবে। জলদি চল।”

আরু পেটে হাত দিয়ে করুণ স্বরে বলে,
“হ্যাঁ ভাইয়া, অনেক জোরে খিদে পেয়েছে। জলদি চলো। ”

আর্শি আরিয়াকে আরেকটা লাগিয়ে বলে,
“তোর খালি খিদেই পায়! তাই না? তুই যে বউ, সেটা তো লেহাজ কর।”

আরিয়া নিজের পক্ষের যুক্তি দিয়ে বলে,
“কেন? বউ বলে কি আমার খিদে লাগতে পারে না? আমিও তো মা*নুষ।”

“হ্যাঁ, তুই মা*নুষ। এবার তো চল!”

অতঃপর ওরা চারজন স্টেজের দিকে যায়।

_________

বউভাতের অনুষ্ঠান শেষে ফিরতে ফিরতে রাত। অতঃপর ক্লান্তিতে অবসন্ন কায়া বিশ্রামের খোঁজে নিন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আর্শি বাড়িতে তোড়জোড় দেখে মাকে শুধায়,

“আরু তো আজকে যাবে না। দুইদিন তো থাকবে। তাহলে তোড়জোড় কীসের?”

“আজকে তোকে দেখতে আসবে।”

“মানে! কখন ঠিক হলো সব? আমি তো জানতাম না।”

“গতকাল রাতে। তুই তো ঐখান থেকে এসেই টায়ার্ড হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিস। তখন ওরা জানিয়েছে যে আজকে আসতে চায়।”

“আর তোমরা রাজি হয়ে গেলে? আমাকে জিজ্ঞাসা তো করবে তাই না? ”

আর্শি কথাগুলো বলছে উত্তেজিত হয়ে। মিসেস আশালতা বড়ো মেয়েকে শান্ত করতে আরিয়াকে চোখের ইশারা করে। আরিয়া এসে আর্শির কাঁধে হাত ও থুতনি ঠেকিয়ে বলে,

“আরে আপু, সমস্যা কোথায়? দেখতেই তো আসবে। তাছাড়া তোমার তো অন্য কোথাও রিলেশন নেই যে তুমি এতো ভয় পাচ্ছ!”

আর্শি উত্তেজিত অবস্থায় আরিয়াকে নিজের থেকে সরিয়ে কোনো প্রত্যুত্তর না করে নিজের রুমে গিয়ে সজোড়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। মিসেস আশালতা ছোটো মেয়েকে ঘাবড়ানো স্বরে বলেন,

“যা না। দেখ তোর বোন কী করে? নাস্তাও তো করলো না।”

“আরে মা, চি*ল! আমি একটু পর কফি বানিয়ে নিয়ে যাব। মুড ঠিক হোক। আমি আগে পরোটা তিনটে ভেজে ফেলি। আশিককে নাস্তা দিতে হবে তো।”

আশিককে নাস্তা দেওয়ার কথা শুনে মিসেস আশালতা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তিনি ব্যাস্ত স্বরে বললেন,
“ওই কড়াইটাতে হাঁসের মাংস রান্না করে রাখছি। সাথে ডিম ভে*জে দে।”

আরিয়া মাথা নেড়ে পরোটা ভাজতে ফ্রাইংপ্যান নেয়।

________

আর্শি নিজের রুমে কিছুক্ষণ পায়চারি করে ফের বিরক্ত হয়ে ফোন হাতে নেয়। তারপর ডায়াল লিস্টে গিয়ে কয়েকবার শ্রাবণের নাম্বারটা ডায়াল করে আবার কে*টে দেয়। শেষমেশ কল করেই বসে। প্রথমবার কল হয়ে কে*টে যায়। তাতে আর্শির আরও মেজাজ খারাপ হয়। ফোন বিছানায় ছুঁ*ড়ে ফেলে আরও কয়েক দফা পায়চারি করতে থাকে। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর তার ফোন বেজে ওঠে। এবার আর্শি ফোনের কাছে গিয়ে বসে বসে দেখছে কিন্তু ফোন রিসিভ করছে না। সে বলতে থাকে,

“এবার আমি ফোন রিসিভ করব না। বাজুক।”

ফোন বাজতে বাজতে কে*টে যায়। অতঃপর আবার কল আসে। টানা তৃতীয়বারে আর্শি রিসিভ করে। রিসিভ করে চুপ করে থাকে। অপরপাশ থেকে শ্রাবণ নিঃশব্দে হাসে। সেও নিরব। কিছুক্ষণ আগে আরিয়া তাকে মেসেজ করে জানিয়েছিল যে আর্শি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। প্রায় আধ মিনিটের মতো পেরোলে শ্রাবণ গম্ভীর স্বরে বলে,

“এভাবে চুপ করে থাকতে বুঝি কল করেছিলে?”

আর্শি তৎক্ষণাৎ জবাব দেয়,
“আমি কল করলাম কই? আপনিই তো কল করলেন! না ধরাতে বারবার কল করেই যাচ্ছেন। তাই রিসিভ করলাম। এখন আপনি চুপ করে থাকলে আমি কি করতে পারি!”

শ্রাবণ ফোন কিছুটা দূরে সরিয়া মুখে হাত দিয়ে হাসলো। অতঃপর কন্ঠে আবার গাম্ভীর্যতা এনে পালটা প্রত্যুত্তর করে,
“ওহ আচ্ছা! প্রথমে আমি কল করেছিলাম? তাহলে তোমার নাম্বার থেকে কল বুঝি ভূ*তে করেছিল?”

“দেখুন ওটা আমি ইচ্ছে করে করিনি। ভুলক্রমে হয়ে গেছে। যদি ইচ্ছাকৃত করতাম তাহলে আপনাকে বারবার কল করতাম। কিন্তু করিনি। আপনি কিন্তু আমাকে তিন বার কল করেছেন।”
কথাগুলো বলে আর্শি লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লো। সে এখন কিছুতেই নিজেরটা বলবে না। শ্রাবণ বলে,

“তাহলে রাখছি। আমার তো কোনো কথা নেই।”

শ্রাবণ কল কা*টবে এমন সময় আর্শি দ্রুত বলে ওঠে,
“আজকে নাকি আমাকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসবে।”

শ্রাবণ মুখ টিপে হাসে। অতঃপর সিরিয়াস মুডে বলে,
“ওয়াও! কনগ্রেটস।”

আর্শি অবাক হয়ে যায়। শ্রাবণের থেকে অন্তত সে এরকম প্রতিক্রিয়াতো আশা করেনি। সেও রেগে বলে,
“ফাইন। থ্যাংকিউ। আমি আজকে বিয়েতে রাজি হবো। ছেলে যদি কা*না-লু*লাও হয়! তারপরও। আপনি আমাকে আর রাত-বিরাতে কল করবেন না। গুড বায়।”

এই বলে আর্শি খট করে ফোনটা কে*টে দেয়। অতঃপর ফোনটা বিছানায় রেখে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। অপরদিকে শ্রাবণও ফোন রেখে হাসতে হাসতে আর্শির নাম্বারটা দেখতে থাকে। তার বৃষ্টি যে এখন প্রচণ্ড রেগে আছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
পরিপাটি হয়ে তৈরি আর্শি। আরিয়া বলছিল একটু সাজতে। কিন্তু আর্শি চোখ রা*ঙালে সে আর জোড়াজোড়ি করে না। মুখ গোমড়া করেই মা ও বোনের সাথে ড্রয়িংরুমে যায় আর্শি। মায়ের কনুইয়ের ধা*ক্কা খেয়ে সালাম দিয়ে ফ্লোর থেকে নজর সামনের দিকে নেয়। ওমনি তার ঠোঁ*ট জোড়া একে অপরের সাথে দূরত্ব তৈরি করে। চোখের পলক ফেলাও যেন সে ভুলে গেছে। কয়েক সেকেন্ডের এই অবাক মিশ্রিত চাহনির অবসান ঘটে পাশ থেকে আরিয়ার ফিসফিস কথায়। আরিয়া বলে,

“শ্রাবণ ভাইয়াকে কি আজকে খুব বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে, আপু?”

আর্শি জলদি নজর সরিয়া আরিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। আরিয়া আবার বলে,
“কী হলো? তুমি আমাকে এভাবে দেখছো কেন?”

আর্শিও ফিসফিস করে বলে,
“তুই জানতি। তাই না? জেনেও আমাকে কেন বলিসনি?”

“আমি কি বলবো। তখন বললে বুঝি তুমি নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যেতে? ইগো নিয়ে ঢিট ধরে বসে থাকতে। তাই তোমাকে জানাইনি। স্বচক্ষেই দেখে নেবে।”

আর্শি চোখ ছোটো ছোটো করে কিছু বলতে মুখ খুলবে তার আগেই মিসেস আশালতা মেয়ের হাত ধরে টান দেন। আর্শি নিজেকে সামলে মায়ের সাথে গিয়ে শ্রাবণের বিপরীত পাশের সোফায় বসে। শ্রাবণের মা মিসেস সন্ধ্যা বলেন,

“ভাইজান, কথা আর কী বলব? মেয়ে তো আমাদের আগে থেকেই পছন্দ। এখন আপনারা বলেন। শুভ কাজে দেরি তো করা ঠিক না।”

আর্শির বাবা মিস্টার রিয়াজউদ্দীন বলেন,
“আমরাও তো চাই না দেরি করতে। এখন ছেলে-মেয়ে যা বুঝে।”

মিসেস সন্ধ্যা প্রত্যুত্তরে বলেন,
“বিয়ের অনুষ্ঠান তো এক বছর পরে করার ইচ্ছা। এখন আকদ হবে কী-না সেটা আপনারা বলেন।”

মিস্টার রিয়াজউদ্দীন মেয়ের দিকে তাকান। আর্শি অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। সে এখন সবার সামনে কী বলবে! সময় তো দিতে হবে। মিস্টার রিয়াজউদ্দীন দ্বিধান্বিত স্বরে বলেন,

“সেটা আমরা পরে আপনাদের জানিয়ে দেবো। আলাপ আলোচনা করে নেই।”

“তাহলে আজকে শুধু আংটি পরিয়ে দিয়ে যাই।”

কথাটা বলেই মিসেস সন্ধ্যা উঠে আর্শির কাছে আসেন। আর্শির হাত ধরে আংটি পড়িয়ে দেন। আর্শি বিপরীতে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে চুপ করে থাকে। অতঃপর আরিয়ার বদৌলতে শ্রাবণ ও আর্শির একা কথা বলার সুযোগ হয়। আর্শি শ্রাবণের সাথে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে শ্রাবণ দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আর্শি হা*ম*লা করে বসে! সে দাঁত কিড়মিড় করে শ্রাবণের শার্টের কলার ধরে বলে,

“আপনারা সবাই এতদিন যাবত আমার সাথে মজা নিয়েছেন? সবকিছু জেনেও না জানার ভান করেছিলেন। সকালবেলা তো বলেছিলেন, ওয়াও কনগ্রেটস! এখন বুঝতে পারছি কেন বলেছিলেন। ফা*লতু লোক একটা। এইজন্যই আপনাকে আমার সহ্য হয় না। আমার মন চাচ্ছে আপনাকে একটা ঘু*ষি মে*রে আপনার মুখের নকশা বদলে দেই!”

শ্রাবণ হাসতে হাসতে বলে,
“রাগলে কিন্তু তোমাকে দারুণ লাগে! একদম লাল টমেটো! ”

আর্শি আরও ক্ষেপে যায়। চোখ রাঙিয়ে বলে,
“আপনি আমাকে টমেটো বললেন? এই আপনার সাহস তো কম না!”

“তুমি বুঝি আজকে জানলে যে আমার সাহস কম না! মাঝে মাঝে তুমি এমন ফানি ফানি কথা বলো না বৃষ্টি! ভীষণ হাসি পায়।”

“আর আপনার কথা শুনলে আমার ভীষণ রাগ পায়! মন চায়, আপনার এই সিল্কি চু*লগুলো যদি আমি একদম টে*নে ছিঁ*ড়ে টা*কলা করে দিতে পারতাম! মনে অনেক অনেক অনেক শান্তি পেতাম!”

“ওকে! ছিঁ*ড়ে ফেলো। আমার তো তাতে কোনো সমস্যা নেই। তুমি একটা টা*কলা জামাই পাবে! তখন লোক সমাজে কিভাবে বলবে? যে আমার জামাই টা*কলা! মানে প্রেস্টিজে লাগবে তাই না?”

আর্শি এবার শ্রাবণের কলার ছেড়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রেলিংয়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে,
“এই আপনি এতো বিরক্তিকর কেন? এত অস*ভ্য কেন? সবসময় আমাকে ক্ষেপাতে হয় কেন আপনার?”

বলতে বলতে রেলিংয়ের কাছে পৌঁছাতেই শ্রাবণের দেহের উপরিংশ কিছুটা বাহিরের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অমনি আর্শি ভয় পেয়ে খপ করে শ্রাবণের শার্ট ধরে টান দেয়। শ্রাবণও রেলিং ধরে নিজেকে সামলে নেয়। আর্শি বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ে। অতঃপর শ্রাবণের দিকে তাকাতেই বোকার মতো বলে,

“আপনি হাসছেন? আপনার ধারণা আছে? এখান থেকে পড়ে গেলে আপনার কি অবস্থা হতো? চারতলার উপর থেকে পড়তেন আপনি। মরতেন কী-না জানিনা! কিন্তু বেঁচে থাকলে হাড়-গোর আস্ত থাকতো না।”

শ্রাবণ রসিকতার সুরে দুই দিকে দুই হাত ছাড়িয়ে বলে,
“শুনো হে দখিনা হাওয়া, আজ এক প্রেমিক তার প্রেয়সীর নজরে নিজেকে হারানোর ভয় দেখেছে। ধন্য তুমি দখিনা হাওয়া! ধন্য!”

আর্শি তৎক্ষণাৎ কোমড়ে এক হাত গুজে আরেক হাত দিয়ে শ্রাবণকে এক ঘা লাগিয়ে বলে,
“ইউ আর টু মাচ! আপনাকে কিছু বলাই বেকার। সরি। কিছু না, আপনার সাথে কথা বলাই বেকার!”

এই বলে আর্শি শ্রাবণকে ছাদে রেখেই নিজে একা নিচে নেমে আসে। শ্রাবণ সেখানে দাঁড়িয়ে হাসছে।

_________

শ্রাবণের পরিবার চলে যাওয়ার পর সবাই মিলে আর্শিকে ঘিরে ধরেছে। আদিব বলে,
“প্লিজ আর্শু, রাজি হয়ে যা বোন।”

আরিয়া বলে,
“রাজি হয়ে যাও না, আপু। শ্রাবণ ভাই কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসে।”

আশিকও বলে,
“রাজি হয়ে যাও, আপু। ভাইয়াটা কতো ভালো।”

এই তিনজনের কথা শুনে আর্শি এবার তার বাবা-মায়ের দিকে তাকায়। উনারা অসহায়ের মতো চেয়ে আছেন। আর্শি বলে,

“কী? তোমরা এভাবে চেয়ে আছো কেন আমার দিকে? আমি কি একবারও মানা করেছি যে আমি বিয়ে করবো না? শুধু বলেছি এক বছর পর।”

মিস্টার রিয়াজউদ্দীন এগিয়ে এসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন,
“বিয়ে তো শ্রাবণকেই করবে। সেটা এখন করো বা এক বছর পর করো। কিন্তু দেখো, এখন আমরা তোমার বিয়েটা দিতে চাইছি কারণ তুমি মানো আর না মানো, আগের তুলনায় আমরা এখন বেশি ভয় পাচ্ছি।”

মিসেস আশালতাও বলেন,
“ঠিক তাই। বলা তো যায় না কিছু। রাজি হয়ে যা, মা।”

আদিব হুট করে বলে ওঠে,
“দেখ আর্শু, রাজি হয়ে যা। তোর জন্য আমার বিয়েটাও পিছিয়ে যাচ্ছে! আমি কলিকে আর কতো বছর অপেক্ষা করাবো?”

ভাইয়ের কথা শুনে আর্শি দৃষ্টি সরু করে তাকায়। ফের তীক্ষ্ণ স্বরে বলে,
“আমি কি তোমাকে বিয়ে করতে মানা করেছি? আমার দোষ দাও কেন? নাকি তোমার আমাকে ঝ*গ*ড়াটে ননদ মনে হয়? যে কলিকে বিয়ে করে আনবে আর আমি প্রতিদিন কলির সাথে ঝ*গড়াঝা*টি করতেই থাকব! আরে ভাই, আমি তো এক বছরের জন্য চলে যাচ্ছি।”

“তুই বুঝতেছিস না। তোর আগে আরিয়ার বিয়ে হয়েছে। এখন যদি তোর আগে আমিও বিয়ে করি লোকে তো আরো খারাপ কথা বলবে। ”

“ফাইন! রাজি আমি। কিন্তু তোমার ওই বে*য়াদ*ব বন্ধুকে বলে দিবে, আমার সাথে যেন পা*ঙ্গা না নেয়। এর কাছে হাজারটা কারণ থাকে আমাকে বিরক্ত করার!”

আর্শির কথাতে সবাই খুশি হয়। আরিয়া বলে ওঠে,
“ওই বিরক্ত করতে করতেই তো তুমি তার প্রেমে এখন হাবুডুবু খাচ্ছো!”

আর্শি তৎক্ষণাৎ আরিয়ার কান ধরে শা*সায়,
“বড্ড বেশি পেকে গেছো তুমি। তোমার বড়ো কিন্তু আমি।”

আরিয়া নিজের কান ছুটানোর প্রয়াস করছে আর বলছে,
“হতে পারো তুমি বড়ো। কিন্তু তোমার আগে আমার বিয়ে হয়েছে। সো রেসপেক্ট মি!”

আর্শি হা হয়ে আরিয়ার কান ধরা হাত শিথিল করে দিলো। তার আগে বিয়ে হয়েছে বলে নাকি তাকে সম্মান করতে হবে! আরিয়া ছাড়া পেয়ে বড়ো বোনের মতিগতি দেখছে। এবার আর্শি ও-কে ধরতে উঠবে তার আগেই আরিয়া উঠে দৌঁড়! আর্শিও ওর পিছে! দুই বোন ডাইনিং টেবিলের চারিপাশে, খাট, সোফা সব ডিঙিয়ে ধাওয়া করে চলেছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে