শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১২

0
493

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১২
সন্ধ্যা নেমেছে কিছুক্ষণ হলো। আরিয়া বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ফোনে গেইমস খেলছে। তখনি হন্তদন্ত হয়ে রুমে আশিকের আগমন। আরিয়া একবার নজর উঁচু করে দেখে নিয়ে আবার গেইমে মনযোগী হয়। আশিক এসে ফট করে আরিয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয়। আরিয়া চমকে তাকায়। বিস্ময়ের স্বরে শুধায়,
“কী হলো? তুমি ফোন এভাবে নিয়ে নিলে কেন?”

“আরে রাখো তোমার ফোন! এখন যা তোমাকে বলব, তা শুনে তোমার আর এই ফোনের প্রতি ইন্টারেস্ট থাকবে না!”

আরিয়া সন্দিহান দৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড চেয়ে থেকে হাই তুলতে তুলতে বলে,
“ওহ বুঝেছি। তোমার ভাই! সে নিশ্চয়ই বলেছে, ‘হয় আমি এই বাড়িতে থাকব নয় ওরা! এখুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও!’ তাইতো?”

আশিক মাথায় হাত দিয়ে বসে চিন্তিত হয়ে বলে,
“আরে না। এটা বললে তো সলিউশন বের হতোই। কিন্তু ভাইয়া বলেছে, আমি যেন তোমাকে ডিভোর্স দেই। নয়তো সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে। খালামনি এখন কাঁদছে।”

আরিয়া ক্ষিপ্র গতিতে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর ক্ষিপ্ত স্বরে বলে,
“ডিভোর্স কি মগেরমুল্লুক নাকি! আজব! সে এসব বলার কে? লাগলে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাক। কই সে? এবার গিয়ে তার দুই গা*লে দুটো থা*প্প-র লাগাবো।”

আরিয়া যেতে অগ্রসর হতেই আশিক হাত টেনে ধরে ও-কে বসায়। অতঃপর শান্ত করার প্রয়াসে বলে,
“খালু ডিল করছে ব্যাপারটা। তুমি ব্যাগ গুছাও। আমরা নানুবাড়িতে যাব। ওখানে মামা-মামিরা আছেন। কালতো বউভাত। এই কয়েকদিনে সবটা ঠিক হয়ে যাবে আশাকরি।”

“কেন? তোমার নানুবাড়ি কেন যাব? তোমার বাবার বাড়িতে যাব। তোমার বাবার উচিত এই সময় তোমার পাশে থাকা। শুধু পড়াশোনার খরচ দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।”

আরিয়ার কথাগুলো আশিকের মনের পুরোনো ক্ষ*তকে যেন তাজা করে তুললো। সে আরিয়ার হাত ছেড়ে হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আমার প্রতিটা জন্মদিনে লোকমারফরত আমার জন্য কেক পাঠিয়ে, পড়াশোনার খরচ দিয়ে জন্মদাতার ভূমিকা পালন করেন তিনি। এগুলোই তো বেশি। উনি যদি এগুলো না করতেন, তাহলে তা আমার খরচ খালামণি ও খালুকেই তুলতে হতো। উনি এতোটুকু তো বুঝেন, এই বা কম কী?”

আরিয়া পাশ থেকে আশিককে নিজের সাথে আগলে নিলো। আশিক সবসময় চুপচাপ থাকে, এতোদিন দেখে বুঝেনি যে আশিক ভেতরে ভেতরে এতোটা একা।

ওদিকে মিস্টার হাসান, নাহিদকে বলেন,
“তোমার জন্য তবে আমি দুবাইয়ের ফ্লাইটের টিকেট কে*টে দিচ্ছি চলে যাও। আমি মনে করি, এটাই সবার জন্য ভালো হবে।”

মিসেস নেহা হকচকিয়ে ওঠলেন। স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“কী বলছো? আমাদের একমাত্র ছেলে ও। তুমি ও-কে চলে যেতে বলছো?”

“হ্যাঁ বলছি। তোমার ছেলের ছোটো না যে তার সব অন্যায় আবদার এখনো পূরণ করব! সে যথেষ্ট বড়ো হয়েছে এবং ম্যাচিউর। তার কাছ থেকে এসব বেহুদা ইমম্যাচিওরের মতো আবদার আশা করা যায় না।”

নাহিদ গর্জে উঠে বলে,
“আশিকের সাথে বিয়ে দেওয়ার সময় মনে ছিল না? যে এই মেয়ে এই বাড়িতেই এসে উঠবে। আশিক নিজেই এই বাড়িতে আশ্রিত! তারউপর আমার হবু বউকে বিয়ে করে এনেছে।”

মিস্টার হাসান রাগে ছেলের গায়ে হাত তুলতে চেয়েও নিজেকে সংযত করে নিলেন। তারপর বললেন,
“তোমার কী মনে হয়? আশিকের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই? বরং আমি যদি তোমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড সবকিছু নিয়ে নেই তাহলে তোমার কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না। আশিকের ঠিকি যাওয়ার জায়গা থাকবে।”

নাহিদ পা*গ*লের মতো রেগে কয়েকবার হাততালি দিয়ে বলে,
“বাহ! এখন তোমার কাছে নিজের ছেলের থেকে আশিক বেশি ইম্পরট্যান্ট হয়ে গেছে? ফাইন! আমিই চলে যাচ্ছি। পরের ছেলে পরই হয় এটা মনে রেখো।”

এই বলে নাহিদ নিজের আলমারি খুলে জামা-কাপড় বের করতে লাগলো। মিসেস নেহা কাঁদছেন। তিনি ছেলেকে আটকাতে যেতে চাইলে মিস্টার হাসান স্ত্রীকে টেনে নিয়ে যান।

__________

আর্শি ফোন হাতে নিয়ে আনমনা হয়ে কিছু ভাবছে। তার ইটালি যাওয়ার দিনও এগিয়ে আসছে। পরিবারের সবাই চাচ্ছে সে বিয়ে করে যাক। এদিকে শ্রাবণের ব্যবহারও তার কাছে কেমন যেন ঠেকছে। লোকটার মনে আবার নতুন করে আশা জাগাচ্ছে নাতো সে? বাবা-মাকে তো বলেছে, তাদের পছন্দেই বিয়ে করবে। তাহলে শ্রাবণ? সে শ্রাবণকে ভালো না বাসলেও শ্রাবণ যে তাকে ভালোবাসে, সেটা সে কিছুটা বুঝতে পারছে। কী করবে সে? এতোসব চিন্তা মাথায় তার জটলা পাকাচ্ছে, তখন রুহি, কলি, নিতুদের গ্রুপ ভিডিওকল আসে। আর্শি লম্বা নিঃশ্বাস ত্যাগ করে কল রিসিভ করে গল্পে মেতে ওঠে।

ওদিকে শ্রাবণ তার মায়ের সাথে মার্কেটে এসেছে। শ্রাবণের মা তার হবু ছেলের বউয়ের জন্য শাড়ি কিনবেন। বেনারসির দোকানে এসে একের পর এক শাড়ি বেরই করে চলেছেন। একটার থেকে একটা সুন্দর। শ্রাবণ গালে হাত দিয়ে মায়ের কার্যকলাপ দেখছে। শ্রাবণের মা মিসেস সন্ধ্যা কতোগুলো শাড়ি দেখিয়ে বলেন,

“তুই একটু পছন্দ করে দে না।”

“তুমি করছো তো। করো না।”

“সবগুলোই সুন্দর। তোর কোন ডিজাইনটা ভালো লাগে দেখ।”

শ্রাবণ শাড়ি গুলোর দিকে নজর বুলিয়ে বলে,
“সবগুলো তো লাল রঙের।”

“কই সব লাল রঙের? হালকা গাড়ো আছে তো। তোর যেটা ভালো লাগে বল। বিয়েরটা লাল নিব। বৌভাতেরটা যোকোনো কালারের শাড়ি বা ওর যা ভালো লাগে।”

“মা, এখন সর্বোচ্চ আকদ হতে পারে। তাই লাল বোনারসি নিও না। অনুষ্ঠানতো পরে হবে।”

“তোর লাল পছন্দ হচ্ছে না? এটাই এখানের সবচেয়ে বড়ো দোকান। দেখ আরও কতো শাড়ি আছে। যেটা পছন্দ হয় নে।”

শ্রাবণ শাড়ির তাকগুলোর দিকে আস্তে আস্তে নজর বুলাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর তার নজর পর একটা ডার্ক ওয়া*ইন রঙের বেনারসি শাড়ির উপর। শাড়িটা দোকানিকে বের করতে বলে। দোকানি শাড়িটা মেলে ধরে। খুব গর্জিয়াস কাজ না কিন্তু তামাটে সুতার সরু লতানো কাজ সাথে গুটি গুটি ফুল। শ্রাবণ তার মাকে বলে,

“এটা নাও।”

মিসেস সন্ধ্যা শাড়িটাতে হাত বুলিয়ে আশ্চর্য হয়ে বলেন,
“তোর পছন্দ তো অনেক সুন্দর! আমি তো লালের চক্করে অন্য রঙের দিকে নজরই দিইনি।”

শ্রাবণ চো*রা হেসে বলে,
“হয়েছে না? শাড়ি কেনার কাজ শেষ? বাড়ি চলো তবে।”

“দাঁড়া। তাড়া কীসের। কসমেটিকস, জুয়েলারি বাকি আছে তো।”

শ্রাবণ ক্লান্ত স্বরে বলল,
“মা! আগে সব ঠিক তো হোক। আর্শিরও তো রাজি হতে হবে।”

“ও হয়ে যাবে। তুই দাম মিটিয়ে আয়। আমি গোল্ডের দোকানে যাচ্ছি। এঙ্গেজমেন্ট রিং তো কিনতে হবে। আর্শির হাতের আঙুলের মাপ আমি জানি।”

এই বলে মিসেস সন্ধ্যা শাড়ির প্যাকেট নিয়ে উঠে দাঁড়ান। শ্রাবণ ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে দোকানিকে দাম মিটিয়ে মায়ের পিছু যেতে থাকে।

__________
পরদিন সকালে নাস্তা শেষে সবাই তৈরি হতে বসেছে। বৌভাতের অনুষ্ঠানের ভেন্যু প্রায় আড়াই-তিন ঘণ্টার পথ। তাড়াতাড়ি রওনা হতে হবে। আর্শির কাজিনরা ভেবেছিল পার্লারে যাবে কিন্তু সেখানে দেরি হবে বলে আগে আর বুকিং দেয়নি। নিজেরাই বাসায় তৈরি হচ্ছে। আর্শি হালকা গোলাপি রঙের গাউন পড়েছে। শাড়ি পড়বে ভেবেছিল কিন্তু সামলাতে কষ্ট হবে বলে গাউন পড়ে নেয়। জলদি করে হালকা মেইকওভার করে তৈরি হয়ে নেয়।

বৌভাতের ভেন্যুতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর দুইটা বেজে গেছে। আর্শি গাউন ঠিক করে গাড়ির নিজের পাশের দরজা খুলবে তার আগেই বাহির থেকে কেউ একজন দরজা খুলে দেয়। আর্শি সেদিকে চেয়ে দেখে শ্রাবণ হাস্যজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে। আর্শি মৃদু হাসি বিনিময় করে বের হতে নিলে শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে দেয়। আর্শি শ্রাবণের হাত দেখে আবার শ্রাবণের মুখের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকায়। শ্রাবণ ইশারায় হাত ধরতে বললে আর্শি ইতস্তত করে একাই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। অতঃপর বলে,

“দেখুন আপনি আমার বয়ফ্রেন্ডও হন না, আমার হাজবেন্ডও হন না। আপনি যে এভাবে গাড়ির কাছে এসে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন! এটা যদি আত্মীয়-স্বজনরা দেখে তাহলে তারা কী ভাববে?”

শ্রাবণ ফিচলে হেসে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
“কী ভাববে?”

“আপনি বুঝেন না কী ভাববে?”

“না! তুমি বুঝিয়ে বলো।”

আর্শি সহসা বিরক্ত হয়ে শ্রাবণের আর কোনো কথার জবাব না দিয়ে ও-কে রেখেই চলে যায়। শ্রাবণ সেখানে দাঁড়িয়ে মাথা নুইয়ে হেসে নিজেও আর্শির পেছনে যেতে থাকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে