#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১১
সকাল আটটার পর আরিয়ার ঘুম ভাঙে। চোখ খুলেই প্রথমে আশিকের চোখে চোখ পড়ে। আশিক এক হাতে ভর দিয়ে তারই দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে। আরিয়া হাত নাড়িয়ে আশিকের নজর হটানোর চেষ্টাতে বলে,
“গুড মর্নিং। এভাবে শুয়ে আছো কেন?”
আশিক অনড়ভাবে মোহিত স্বরে বলে,
“তোমাকে দেখছিলাম।”
আরিয়া মুখশ্রী ঈষৎ রক্তিম আভা ফুটে ওঠে। নজর অন্যদিকে ফিরিয়ে উঠে বসে বলে,
“আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসি।”
এই বলে আরিয়া দ্রুত পলায়ন করে। আশিক হাতের ভর ছেড়ে বিছানায় দুই হাত ছাড়িয়ে শুয়ে পড়ে আপন মনে বিড়বিড় করে,
“সি ইজ মাই ওয়াইফ নাউ! হাউ লাকি আই অ্যাম।”
এদিকে নাহিদ নিজের ঘরে বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে এক হাঁটু ভাজ করে বসে আছে। হাতে তার ফোমের বল। র*ক্তিম চক্ষু নিয়ে সম্মুখে নিষ্পলক নিরুদ্দেশ চেয়ে আছে। সারারাত ঘুমোয়নি সে।
মিসেস নেহা ছেলের জন্য নাস্তা নিয়ে দরজায় নক করে। নাহিদের তাতেও কোনো হেলদোল নেই। মিসেস নেহা বারকয়েক ডাকলেন। তাতেও সাড়া না পেয়ে খানিক ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি এবার চিৎকার, চেঁচামেচি করে মিস্টার হাসান, আশিক সবাইকে ডাকলেন। আরিয়া বাদে সবাই এসে উপস্থিত হয়। মিস্টার হাসান ও আশিকও ডাকাডাকি করে। কিছুক্ষণ পর নাহিদ নিজ থেকেই দরজা খুলে দেয়। নাহিদ বেশ শব্দ করে দরজা খোলাতে সেই শব্দ আরিয়া ডাইনিং টেবিল থেকেও শুনতে পেয়েছে। সে বলে,
“বলেছিলাম না? আপনারা অযথা চিন্তা করছেন। খুললো তো।”
আশিক তাড়াহুড়ো করে আরিয়ার কাছে গিয়ে বলে,
“দেখো, তুমি এভাবে বলো না। খালামণির খারাপ লাগে। খালামণির একমাত্র ছেলে। জানি তোমার মনে ভাইয়ের প্রতি অনেক তিক্ততা জমে আছে। খালামণির সামনে শো করো না। তুমি তোমার মতো থাকো।”
“আমার মতোই আছি, আশিক। এখন তোমার ভাই এসে কোন সিনক্রিয়েট না করলেই হয়।”
“করবে না। ভাইয়া এখানে আসবে না। তাইতো খালামণি ভাইয়ার জন্য খাবার নিয়ে ঘরে গেছে। ”
“তাহলে তোমরা কেন বসে আছো? নাস্তা করে নাও।”
আরিয়া চেয়ার টেনে বসে। একে একে আশিক ও মিস্টার হাসানও এসে বসেন। নাহিদ দরজায় দাঁড়িয়ে আরিয়ার কথাগুলো শুনে মায়ের হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। মিসেস নেহা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসে।
_________
আরিয়ার সাথে ফোন কলে কথা বলে নিশ্চিন্ত হয়ে বসলো আর্শি। বেশ চিন্তায় ছিল সে আরিয়াকে নিয়ে। এখন মিসেস আশালতা এখন ছোটো মেয়ের সাথে কথা বলছেন। আর্শি চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় বসলো। রাতে বৃষ্টির কারণে ফ্লোর ভেজা। আর্শি চেয়ারে পা উঠিয়ে বসে চা খাচ্ছে। এমন সময় গেইট দিয়ে শ্রাবণের বাইক ঢুকতে দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়। অতঃপর চায়ের কাপ রেখে রুমে প্রবেশ করে মাকে জিজ্ঞেসা করে,
“এই শ্রাবণ ভাই কেন আসছে? ভাইয়া তো বাসায় নেই।”
মিসেস আশালতা ইশারায় বলে যেন গিয়ে দেখে। তখনি কলিংবেল বেজে ওঠে। আর্শি দরজা খুলতে যায়। দরজা খুলে দরজা ধরে দাঁড়িয়ে চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,
“ভাইয়া বাড়িতে নেই। আপনি ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে আসেননি?”
শ্রাবণও কম যায় না। দেয়ালের সাথে পাশ হেলান দিয়ে বুকে দুই হাত আড়াআড়িভাবে গুজে জবাব দেয়,
“যদি বলি তোমার ভাইয়ার জন্য আসিনি! তবে?”
আর্শি থতমত খেয়ে দরজা থেকে হাত সরিয়ে বলে,
“তো কেন এসেছেন?”
শ্রাবণ হাই তোলার ভাণ করে বলল,
“এত লজ্জা পেতে হবে না। তোমার কাছে আসিনি। আদিবের জন্যই এসেছি। ও আমাকে বলেছে দশ-পনেরো মিনিট পর চলে আসবে।”
“ওহ আচ্ছা।”
“কী আচ্ছা? তুমি এখনো দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছো। আমাকে ঢুকতে তো দিবে! নাকি তোমার ভাইয়া আসা পর্যন্ত বাহিরেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে?”
আর্শি দ্রুত সরে দাঁড়ায়। শ্রাবণও ওর পাশ কাটিয়ে বাসার ভেতরে ঢোকে। অতঃপর আদিবের রুমের দিকে যেতে যেতে বলে,
“আমার জন্য এক কাপ চা বানাও তো!”
কথাটা বলে শ্রাবণ এক সেকেন্ডও দাঁড়ায়নি, ফিরেও তাকায়নি। সোজা আদিবের রুমে চলে গেছে। আর্শি মুখ ভে*ঙচি দিয়ে রান্নাঘরে চা বানাতে যায়।
______
“আরু, শোন না মা। তোর আপুরও বিয়ে ঠিক করেছি। তুই কাল এসে ও-কে আকদের জন্য রাজি করাবি।”
মায়ের কথা শুনে আরিয়া বসা থেকে এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়। কিছুটা জোরেই বলে ফেলে,
“কী বলছো? তোমরা আপুর বিয়েও ঠিক করে ফেলেছো? কখন? কীভাবে? কার সাথে বিয়ে ঠিক করলে? কই তোমরা আমাকে তো কিছু বলনি এই নিয়ে?”
“শান্ত হ তুই। এখনো সেরকম ভাবে ঠিক হয়নি। আমরা দিতে চাইছি আর কি। এখন তোর বোনকে তোকেই রাজি করাতে হবে।”
আরিয়া হতাশ স্বরে বলে,
“আমার মনে হয় না, আপু রাজি হবে! তাও যখন বলছো তবে বলে দেখব। দুলাভাইয়ের ছবি তো পাঠাও। আমার একমাত্র দুলাভাই বলে কথা! যদিও তার শ্যালিকার আগে বিয়ে হয়ে গেছে।”
মিসেস আশালতা মুচকি হেসে দরজার দিকে নজর দিয়ে দেখে নেয় আর্শির উপস্থিতি আশেপাশে আছে কী-না। তারপর গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“ছেলে তো ঘরের ছেলে। তোর ভাইয়ের বন্ধু শ্রাবণ আছে না? শ্রাবণের সাথেই বিয়ের কথা হচ্ছে।”
আরিয়া চোখ যেন বিস্ময়ে কোটরাগত হওয়ার দশা। সে বিস্মিত স্বরে বলে,
“শ্রাবণ ভাইয়া? আপু তো উনার নাম শুনলেই চিড়চিড় করে ওঠে।”
“সেটাইতো ভয়রে। তবে তোর বোন বলেছে আমরা যেই ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করেছি ও সেই ছেলেকে বিয়ে করবে কিন্তু পরে বিয়ে করবে। কিন্তু আমরা সবাই চাইছি ইটালি আবার যাওয়ার আগে আকদটা হয়ে যাক।”
আরিয়া হতাশচিত্তে বলল,
“শ্রাবণ ভাইয়ের নাম শুনলে আরও আগে চলে যাবে। দেখো কী হয়!”
মিসেস আশালতা ফের চিন্তায় পড়ে গেলেন।
_______
আর্শি চা বানিয়ে এখন চায়ে চিনি গুলাচ্ছে। ইচ্ছে করে চায়ে হাফ চামচ চিনি বাড়িয়ে দুই চামচ দিয়েছে। শ্রাবণ চায়ে দেড় চামচ চিনি খায় তা আর্শি জানে। কিন্তু ও একটু শিক্ষা দিতে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তারপর চা নিয়ে ভাইয়ের রুমের দিকে যায়। শ্রাবণ আদিবের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তাই আর্শি নক করে। শ্রাবণ দরজা খুলে চায়ের কাপ নিয়ে বলে,
“থ্যাংকিউ। ”
“ওয়েলকাম।”
আর্শি চলেই যাচ্ছিল। শ্রাবণ তাকে আটকায়। অতঃপর বলে,
“এই দাঁড়াও দাঁড়াও। চায়ে চিনি ঠিকমতো হয়েছে কি-না সেটা তো চেক করে নেই। বলা তো যায় না তুমি আমার উপর রাগ থেকে চায়ে চিনি কম-বেশিও দিতে পারো।”
আর্শি শ্রাবণের দিকে পেছন ঘুরা অবস্থাতেই দাঁত দিয়ে জি*ভ কা*টে। দ্রুত সটকে পড়তে নিলে শ্রাবণ খপ করে আর্শির হাত ধরে ফেলে। তারপর বলে,
“কী হলো? পালাচ্ছো কেনো? চা টেস্ট তো করে নিই।”
এই বলে শ্রাবণ আর্শির হাত ধরা অবস্থাতেই চায়ের কাপে চুমুক দেয়। আর্শি চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ রেখেছে। শ্রাবণ এক সিপ চা পান করতেই মুখ লটকিয়ে বলে,
“এটা চা? চিনি নেই একদম! এই মেয়ে, তোমার বাড়িতে কি চিনির অভাব পড়েছিল? চিনি দাওনি কেন?”
আর্শি চট করে ঘুরে তাকায়। অবাকমিশ্রিত স্বরে বলে,
“চিনি হয়নি মানে! চিনি তো বেশি হওয়ার কথা!”
“তাহলে কি আমি মিথ্যে বলছি? তুমি নিজেই টেস্ট করে দেখো। ”
আর্শি শ্রাবণের হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে সেটাতে ডান হাতের এক আঙ্গুল সামান্য ডুবিয়ে মুখে নিয়ে বলে,
“কই ঠিকই তো আছে।”
“এভাবে এক আঙ্গুল ডুবালে কি চায়ের স্বাদ পাওয়া যায় নাকি?”
আর্শি সরু দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“তো কি এখন আমি আপনার চায়ের কাপে চুমুক দিব নাকি?”
শ্রাবণ বাঁকা হেসে বলে,
“দিতেই পারো। আমার তাতে কোন প্রবলেম নেই।”
আর্শি তেজি কণ্ঠে বলল,
“কিন্তু আমার প্রবলেম আছে। আমি আপনার চুমুক দেওয়া চায়ের কাপে কেন চুমুক দিব? যদি চা খেতে ভালো না হয়, তাহলে আমি ফেলে দেই।”
এই বলে আর্শি চায়ের কাপ নিয়ে যেতে চাইলে শ্রাবণ খপ করে চায়ের কাপটা নিয়ে নেয়। যার দরুণ সামান্য চা শ্রাবণের হাতেও পড়ে। শ্রাবণ ‘আউচ’ করে উঠলে আর্শি কণ্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,
“পড়লো তো! এতো টানাটানি করেন কেন? জ্বা-লা করছে না?”
“না। কিছু হয়নি।”
“কী কিছু হয়নি? আপনি বসুন। আমি এখনই বা*র্নার ক্রিম নিয়ে আসছি।”
এই বলে আর্শি বার্নার ক্রিম আনতে ছুট লাগায়। আর্শিকে এতো বিচলিত হতে দেখে শ্রাবণ হালকা হাসে। অতঃপর চায়ের কাপে ফের চুমুক দেয় এবং বলে,
“মিষ্টি ইচ্ছা করেই বাড়িয়ে দিয়েছে মেয়েটা।”
চলবে ইন শা আল্লাহ,