#শেষ_ডাইরি
#লেখক_আরিফ_ইসলাম
#পঞ্চম_পর্ব
ঈশিতা একটা তালা বদ্ধ ঘর পুরোনো একটা চাবি দিয়ে খুলে ফেলে। আবারো সাবধানের সাথে এদিক সেদিক তাকিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। আরিফ ধীর পায়ে ঘরের দরজার কাছে আসে। দরজাটা আলগা হয়ে আছে। দরজার ফাঁক দিয়ে তাকাতেই আরিফের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
আরিফ দেখে ঈশিতার সামনে কফিন বদ্ধ দুটি লাশ পড়ে আছে। কফিনের পাশে বসে ঈশিতা বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফিন দুটি খুললো। বেশ দূঃখিত লাগছে তাকে। আরিফ আড়াল থেকে সব চাক্ষুষ করছিলো। কফিনের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়ে ঈশিতা। খানিক বাদে কফিন থেকে দুটি লাশ বের করে ফ্লোরে শুইয়ে দিলো। আরিফ অবাক দৃষ্টিতে সব দেখছে। লাশ দুটির মুখ অনেক চেনা। এর আগেও তাদের দেখেছে সে। তবে কী সেই স্বপ্ন সত্যিই ছিলো?
আরিফ ঘামতে শুরু করেছে। বাম হাত দ্বারা ঘাম মুছে যাচ্ছে বার বার। “_তবে কী স্বপ্নে দেখা সেই বাচ্চা মেয়েটা ঈশিতা নিজেই? যদি ঈশিতার সেই ছোট বেলায় ঈশিতার বাবা মা মারায় যায়, তাহলে এত দিন পর্যন্ত লাশ পচে যায় নি কেনো ?
আরিফের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পড়ে গেছে। ঈশিতা তার সঙ্গে নিয়ে আসা সোহেলের চোখের থলে বের করে। কফিনের পাশে থাকা একটা লাল রঙা বক্স হাতে নিয়ে অট্রো হাসিতে মেতে ওঠে। বক্স খুলে ভিতরে আরো কয়েক জোড়া চোখ বের করে। “_আরে ঈশিতার কাছে তো আরো অনেক চোখ আছে দেখছি? এই চোখ দিয়ে কী করে? আমাকে এর রহস্য বের করতেই হবে।
আরিফ নিজ মনে ভাবছে।
লাল রঙা বক্সটাতে সোহেলের চোখ রেখে দিয়ে পুনরায় অট্রো হাসিতে মেতে উঠেছে ঈশিতা। মায়াবী মুখ খানা নিমিষেই কত ভয়ানক হয়ে গেছে। চুল গুলো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। চোখের চাহনি ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। কিন্তু তার উচ্চতা এখন স্বাভাবিক আছে। ভাঙ্গা ঘরের কোনে কিছু মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয় ঈশিতা। মনে হচ্ছে আগেও এটা করেছে সব প্রনালী প্রস্তুত আছে সেখানে।
এই বার ঈশিতা জোরে জোরে বলতে থাকে “_ আমি এর প্রতিশোধ নিবো। আমাকে যারা এতিম করেছে তাদের কাউকে ছাড়বো না আমি।
আকাশে মেঘের গর্জন। বাইরে থেকে দমকা হাওয়া ভাঙ্গা বাড়ির ভিতরে তান্ডব চালাচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো। ভয়ে আরিফের গলা শুকিয়ে গেছে। এমন তান্ডবেও মোমবাতি গুলো নিভছে না। ঈশিতার চারিধারে মোমবাতি গুলো বসিয়ে দেয়। নিজে মাঝখানে বসে লাল রঙা বক্সটা সামনে রাখে। মুখ থেকে একনাগাড়ে অদ্ভুত অচেনা বাক্য উচ্চারণ করতে থাকে ঈশিতা। আবহাওয়া যেনো আরো বেশি ভুতুড়ে হয়ে যাচ্ছে। গা ছমছমে পরিবেশ বিরাজ করছে। মেঘের গর্জনে কেঁপে কেঁপে উঠছে আরিফের অন্তর।
ঈশিতা বাক্য গুলো পাঠ করে চলেছে একনাগাড়ে। খানিক বাদে ঝড় আরো প্রবল বেগে বইতে থাকে। পুরোনো পিলার ঝাপটে ধরে আরিফ কাঁচুমাচু মুখে বসে আছে। ঘরে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আরিফ নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। কেউ জোরে জোরে পা ফেলে ভাঙ্গা বাড়িতে ঢুকছে। তার ভয়ংকর পায়ের শব্দে পুরো বাড়িটা থর থর করে কাঁপছে।
ঈশিতার সামনে এক বিভৎস চেহারার লোক হাজির হয়। বেশ লম্বা লোকটা। গা থেকে পঁচা গন্ধ আসছে। লোকটার চেনা মুখ আগেও কী দেখেছে আরিফ। লোকটার চেহারা স্বপ্নে দেখা বন্দুক হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার মত ।
লোকটার আগমনে ঈশিতার মুখের কোনে হাসি ফুটে উঠে। “_যদি স্বপ্ন সত্যিই হয় তাহলে তো ঈশিতার বাবা মা কে এই লোকটা মেরেছে! কিন্তু ঈশিতার হাব ভাবে তো বুঝা যাচ্ছিল এই লোকটা তার অনেক কাছের কেউ।
লোকটার লালচে আভার ন্যায় চোখ জোড়া ঈশাতার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশিতা মায়াবী চাহনি তে লোকটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। লোকটাও ঈশিতা কে দেখে মুখের কোনে হাসির ফলক সৃষ্টি করেছে। বেশ খানিকক্ষণ দু’জনে দৃষ্টি আদান প্রদান করে।
“_কেমন আছো প্রিয়তম ?
লোকটার কন্ঠ কেমন অদ্ভুত রকমের। তার থেকে অবাকের বিষয় ঈশিতা কে প্রিয়তমা বলার কারন কী? কে এই লোকটা?
আরিফের মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে । ঈশিতা অদ্ভুত লোকটাকে দুই নয়ন ভরে দেখতে থাকে। “_ তোমারে ছাড়া কিভাবে ভালো থাকবো আমি বলো? তোমাকে এই নিষ্ঠুর অভিশাপ থেকে মুক্ত না করা অব্দি ভালো নেই আমি।
ঈশিতার চোখের কোনে সামান্য পানি জমে গেছে। অদ্ভুত লোকটা ঈশিতার সামনে নিজেকে উপস্থাপন করলেও কেনো জানি কাছে যেতে অনিচ্ছুক।
তবে কী তাদের পূর্বে কোনো গভীর সম্পর্ক ছিল? হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে আরিফের মাথায় । কী ঘটতে চলেছে কিছু বুঝতে পারছে না সে।
হঠাৎ আরিফ খেয়াল করলো ক্রমশ দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটির দেহ নীল বর্ণের হয়ে যাচ্ছে। ঈশিতা আগের ন্যায় এখনো মুখ থেকে অনবিরত বাক্য গুলো বলেই চলেছে। খানিক বাদে চোখ গুলো হাওয়ায় ভাসতে থাকে। অবাকের বিষয় চোখ গুলোও ধীরে ধীরে নীল বর্ণ ধারণ করেছে। চোখের বদলে সেগুলো নীল বৃত্তের আভার ন্যায় ভাসমান হয়ে আছে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার সামনে। হুট করেই নীল বৃত্ত গুলো দ্রুত বেগে লোকটার দেহের মধ্যে প্রবেশ করে। লোকটা কারেন্টে সখ খাওয়ার মতো ভঙ্গিতে কেঁপে উঠে।
ঈশিতার বচন ভঙ্গি দ্রুত হতে থাকে। সেই সাথে জোরে জোরে বাক্য জপ করতে থাকে। লোকটা মাটিতে হুমরি খেয়ে পড়ে যায়।
হঠাৎ পাশে পড়ে থাকা কফিন হতে আলোর রশ্মি বের হতে থাকে। আলোর রশ্মি গুলো পড়ে থাকা লোকটার সারা দেহ আলোকিত করে ফেলেছে। আরিফ চোখ বড় বড় করে সব দেখছিলো। লোকটার অচেতন দেহ শূন্য ভাসতে থাকে। ধীরে ধীরে ভাসমান অবস্থা থেকেই লোকটার অগ্নি শিখার মত চোখ খুলে তাকায়। মুখে বিকট হাসি। আরিফের হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে । বুক থরথর করে কাঁপছে। ঈশিতার মুখের বচন থেমে যায়। সেও হাসিময় মুখে লোকটার দিকে তাকায়।
“_আর মাত্র ১৫ জোড়া জ্যান্ত চোখ হলে আমি আবার তোমাকে ফিরে পাবো ।
মায়াবী হাসি দিয়ে ঈশিতা লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে।
পুনরায় লোকটার দেহ নিস্তেজ হয়ে যায়। মাটিতে হুমরি খেয়ে পড়ে যায় দেহ খানি। ঈশিতা হাতের নরম পরশে লোকটার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নিথর দেহের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে ঈশিতা।
“_তার মানে এই লোকটার এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। সে কী শুধুই মরা লাশ?
আরিফের মাথা চিন চিন করছে। হঠাৎ দেয়ালের দিকে চোখ পড়তেই আরিফ চমকে উঠে। দেয়ালে একটা ফ্রেমে ফ্যামিলি ছবি কাত হয়ে আছে। সেখানে স্পষ্ট ঈশিতা কে দেখা যাচ্ছে। সাথে এই লোক গুলো সবাই। ছবিতে দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল ঈশিতা এবং এই অদ্ভুত লোকটা অনেক কাছের কেউ। “_কোথাও ঈশিতার স্বামী নয় তো এই লোকটা?
আরিফের চোখের সামনে এসব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে। ঈশিতা সব আগের জায়গায় রেখে দিয়ে ফিরতে প্রস্তুত নিচ্ছে।
“_আমার এখান থেকে বের হতে হবে।
মনে মনে বলে আরিফ বাড়িটি থেকে বের হতে অগ্রসর হয়। অন্ধকার হওয়ায় হঠাৎ কিছুর সাথে হোচট খেয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়। তার পদঘাতে জোরালো শব্দ হয়। ঈশিতা বুঝতে পারে এখানে সে ছাড়াও অন্য আরেকজন আছে। দ্রুত ঈশিতা আরিফের কাছে চলে আসে।
“_আরিফ তুমি এখানে কী করছো ?
ঈশিতার কন্ঠে নিমিষেই আরিফের দেহ থেকে প্রান চলে যাওয়ার মত অনুভূতি পায়। ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ঈশিতার পানে তাকানো যাচ্ছে না। ভিষন ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তার চাহনি। রাগান্বিত ভঙ্গিতে আরিফের পানে এগিয়ে আসছে ঈশিতা ___
চলবে __