শেষ ডাইরি পর্ব-০৪

0
620

#শেষ_ডাইরি
#লেখক_আরিফ_ইসলাম
#চতুর্থ_পর্ব

অন্ধকারে মুখটা ভালো মত দেখা যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে মেয়েটা বেশ সুন্দরী। দেহের গঠন মন্দ নয়। “_এই শুনশান জায়গায় এত সুন্দরী রমনি কোথা থেকে এলো?
ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছে সোহেল চৌধুরী।
বেশ খানিকটা কাছে যেতেই দেখে আধো আলোয় এক সুন্দরী রমণী সাদা রঙের ফ্রক পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ অবাক হয়ে গেছে সোহেল চৌধুরী।
ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে থাকে অচেনা রমনীর দিকে। মেয়ের নেশা কোন পুরুষের না আছে । সোহেল চৌধুরীর নাকে এক অদ্ভুত সুগন্ধি ভেসে আসে। সুগন্ধি নাকে আসতেই যেনো বেশামাল হয়ে গেছে সে। সুন্দরীর পিছন পিছন কখন যে মির্জা বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেছে বুঝতেই পারেনি।
ঘোর কাটতেই নিজেকে আরিফের রুমে দেখে মোটামুটি অবাক হয় সোহেল চৌধুরী। তার পাশেই আড় চোখে তাকিয়ে আছে ঈশিতা। “_তাহলে এতক্ষণ আমি ঈশিতা ভাবির পিছন পিছন আসছি?
বিড় বিড় করে বলছে আর মনে মনে লজ্জা পাচ্ছে সোহেল চৌধুরী। ঈশিতা গা ঘেঁষে বসে সোহেলের ভয় দূর করে দেয়।
“_ইয়ে ভাবী আমি ভাবছিলাম অন্য কেউ হয়তো।
আমতা আমতা করে ঈশিতা কে বলছে সোহেল চৌধুরী। ঈশিতা ভ্রু কুঁচকে খানিক নিরবতা পালন করে। “_কিন্তু তুমি যা চাচ্ছো সেটা আমি দিতে পারি।
ঈশিতার কথায় সোহেল অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। ঈশিতা কে ভালো মনে করে এসেছে সে। ঈশিতার দিকে তাকাতেও লজ্জা পাচ্ছে সোহেল চৌধুরী। লজ্জা ভেঙ্গে দিতে ঈশিতা সোহেলের হাত ধরে ফেলে। “_ এই নাও আমাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম।
সোহেল যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পেয়েছে এমন খুশি। তবুও মন বন্ধুর কথা ভেবে পিছিয়ে আসছে। ঈশিতা সোহেল কে ঝটকা টান মেরে বুকে জড়িয়ে নেয়। সোহেলের হৃদস্পন্দন বেড়ে চলছে ক্রমশ। ভয় আর লজ্জায় গ্রাস করে নিয়েছে সোহেল কে। ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয় সোহেল কে। ধীর গতিতে বিছানায় উঠে বসে ঈশিতা। সোহেলের চোখে মুখে কা*মুক অনুভূতি।
হঠাৎ বিছানার একপাশ থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে একনাগাড়ে বুকে ছুরিঘাত করে ঈশিতা। মুখে বালিশ চাপা দিয়ে দেয় যেনো কেউ আওয়াজ শুনতে না পায়। রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সারা ঘরে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে সোহেলের । এই বুঝি তার শেষ প্রহর। সোহেলের নিথর দেহের উপরে বসে আছে ঈশিতা ‌। সোহেলের রক্ত দিয়ে গোসল করেছে । হঠাৎ দরজা ধাক্কানির শব্দে তরিঘরি উঠে দাঁড়ালো সে । বাইরে থেকে আরিফ ডাকছে।
“_ঈশিতা দরজা খুলো তো ‌।
ঈশিতা সোহেলের র*ক্তাক্ত দেহ টানতে টানতে আলমারির কাছে নিয়ে আসে। আলমারিতে লাশ লুকিয়ে রেখে ফ্লোর ভালো মত মুছে দেয়। তৎক্ষণাৎ বিছানার চাদর পাল্টিয়ে দেয়।
“_ কী হলো, দরজা খুলো, ডাকছি তো তোমাকে!
রাগান্বিত কন্ঠে আরিফ বলছে একনাগাড়ে। ঈশিতা দরজা খুলে দিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে ‌।
“_কী হলো দরজা খুলতে এত সময় নিলে কেনো?
আরিফের কথায় ঈশিতা আমতা আমতা সুরে বলে “_ একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই ।
আরিফ বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে ঈশিতা কে মায়ের রান্নায় সাহায্য করতে বলে ‌। ঈশিতা মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি দেয়। “_ঈশিতার হাব ভাব ভালো ঠেকছেনা । ও আবার আগের রূপে ফিরে যায়নি তো ?
বিড়বিড় করে ভাবতে ভাবতে বিছানায় শরীর হেলিয়ে দেয় আরিফ । ঈশিতা ধীর পায়ে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।
সোহেল কে আসতে না দেখে আরিফ মোবাইল বের করে সোহেল কে কল দেয়। কিন্তু মোবাইল তো ঘরেই বাজছে। আরিফ অবাক হয়ে যায়। সোহেলের ফোন এখানেই কোথাও আছে। রিংটোনের আওয়াজ অনুসরণ করতে করতে আলমারির কাছে পৌঁছায় আরিফ। “_সোহেলের ফোনের রিং আলমারি থেকে বাজছে। কোথাও ঈশিতা সোহেলের কোনো ক্ষতি করে দেয়নি তো।
আরিফের শরীর ঘামতে শুরু করেছে। কাঁপা কাঁপা হাতে আলমারির দরজা খুলতেই ভয়ে কাতরে উঠে আরিফ। সোহেলের ক্ষত বিক্ষত লাশ আলমারির মধ্যে। আরিফ চিৎকার দিতেও পারছে না। যদি আশের পাশের লোকজন জেনে যায় তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে। আরিফ যানে এটা ঈশিতার কাজ। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে তার কী করা উচিত বুঝে উঠতে পারছে না। হঠাৎ দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে আরিফ ভয়ের শিহরণে কেঁপে উঠল। তাকিয়ে দেখে দমকা হাওয়ায় দরজা লেগে গেছে ‌।
আরিফ ভাবলো এই লাশটা এখানেই থাক ‌। সে দেখবে এই লাশটি নিয়ে ঈশিতা কী করে। আর কেনোই বা ঈশিতা অন্যদের ক্ষতি করছে। ও চাইলে তো আমাদেরও ক্ষতি করতে পারবে। কিন্তু কেনো আমার এবং আমার বাবা মায়ের ক্ষতি সে করে না ‌।
আলমারি পুনরায় লাগিয়ে দিয়ে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে ‌। এখনো আরিফের শরীর কাঁপছে। উত্তেজনায় হৃদস্পন্দন বেড়ে চলছে। হঠাৎ দরজা খুলার আওয়াজে আরিফ চোখ বন্ধ করে ফেলে।
ঈশিতা আরিফের কাছে এসে তাকে ডাক দেয়। আরিফ ঘুমের ভান করে থাকায় ডাকে সাড়া দেয় না। খানিক ঝাঁকিয়ে নিশ্চিত হলো আরিফ সত্যি ঘুমিয়েছে কি না। ঈশিতা ধীর পায়ে আলমারি খুলে সোহেলের লাশ বের করে।
আরিফ চোখ হালকা খুলে রেখে সব দেখছিলো। ঈশিতা সোহেলের লাশটাকে টানতে টানতে বেলকুনি তে নিয়ে যায়। হাতে একটা ধারালো ছুরি দিয়ে সোহেলের চোখ তুলে ফেলে। আরিফ সব চাক্ষুষ করছিলো ‌। “_ঈশিতা এই চোখ দিয়ে কী করবে?
আরিফের ঢের মনে আছে তাদের বাড়ির কেয়ারটেকারের লাশ যখন পুলিশ উদ্ধার করেছিলো , তখন তার দুই চোখ তুলে নেওয়া অবস্থায় পায়। আবার যখন সিয়াম ভাইয়ের লাশ পেয়েছিলো তখন তার মাথাটাই ছিলো না। হয়তো সিয়াম মির্জারও চোখ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছিলো। তাছাড়াও সেই দিন দরজার ছিদ্র দিয়ে দেখা লাশটারো চোখ উঠানো অবস্থায় ছিলো।
আরিফ বেশ আতঙ্কিত হয়ে যায়। ঈশিতা এই চোখ দিয়ে কী করে আজ যেভাবে হোক বের করতে হবেই। চোখ উঠানোর পর ঈশিতা পুনরায় আরিফের কাছে পর্যবেক্ষণ করে । আরিফ কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আবার লাশটার কাছে যায়। চোখ জোড়া একটা থলে তে ভরে কাছেই রেখে দেয় ঈশিতা। লাশটা টানতে টানতে পুনরায় আলমারির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে।
খানিক নিরবতা পালন করে স্বাভাবিক ভাবেই আরিফ কে ডেকে তুলে ঈশিতা। আরিফ এই বার জেগে উঠে।
“_ ঘুমিয়ে পড়লে চলবে? রাতের ডিনার করবে না?

আরিফ জেগে উঠার ভঙ্গিতে ঘোরে টলতে থাকে। “_ঈশিতা সোহেল আইছে?
আরিফের কথায় অস্থিরতার ভঙ্গিতে ঈশিতা এদিক সেদিক তাকায়। “_ কই সোহেল ভাই তো এখনো এলো না।
আরিফ ঈশিতার কথায় উঠে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে যায়। খাবার মুখ দিয়ে নামছে না। এখনো আতঙ্কিত হয়ে আছে আরিফ ‌। ভিতরে ভিতরে ভিশন উত্তেজনা কাজ করছে। ঈশিতা স্বাভাবিক ভাবেই খাওয়া শেষ করে ঘরে চলে আসে। রাত তখন গভীর। আরিফ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আজ ঘুমিয়ে গেলে চলবে না। যেভাবেই হোক বের করতে হবে এই মৃত মানুষের চোখের রহস্য ‌।
রাত তখন ১:৩০ মিনিট।
হঠাৎ আরিফ খেয়াল করে ঈশিতা চুপিসারে বিছানা থেকে উঠে যাচ্ছে। অন্ধকার ঘরে হালকা চাঁদের আলো জানালা দিয়ে ঢুকছে। সেই আলোয় দেখতে পায় ঈশিতার উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৫ ফুটের মেয়েটা নিমিষেই ৮ ফুটের উপরে উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। আলমারি খুলে সোহেলের লাশ বের করে দুই হাতে অনায়াসে তুলে ফেলেছে ।
“_ তাহলে কী ঈশিতা কোনো মানুষই নয় ?
আরিফের সারা শরীরে ঘামের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। উত্তেজনায় হৃদস্পন্দন কেঁপে উঠেছে। চোখ জোড়া কাঁপছে দৃশ্য দেখে। চোখের থলে টা হাতে নিয়ে ঈশিতা একবার আরিফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। আরিফ আলতো করে চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে।
সোহেলের লাশ আর চোখের থলে হাতে নিয়ে ঈশিতা সন্তর্পনে বেরিয়ে পরে মির্জা বাড়ি থেকে।
আরিফ লুকিয়ে ঈশিতাকে অনুসরণ করতে থাকে। মির্জা বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা পুরোনো বাড়ি । ঘন জঙ্গল ভেদ করে এগিয়ে চলছে ঈশিতা। জঙ্গলের এক কিনারে সোহেলের মৃত শরীর ফেলে দিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে আবার পথ চলতে থাকে ঈশিতা।
আরিফ না থেমে ঈশিতা কে অনুসরণ করে যাচ্ছে। আরিফের একটাই উদ্দেশ্য, আজ যেভাবে হোক এর রহস্য বের করতেই হবে। পুরোনো বাড়ির সামনে আসতেই থমকে দাঁড়ায় ঈশিতা। আরিফ বাড়িটার দিকে তাকিয়ে হতবাক হয়ে যায়। এই বাড়িটা সে আগেও দেখেছে। অনেক চেনা পরিচিত বাড়ি এটা। হঠাৎ সেই রাতের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যায় আরিফের।
“_আরে হ্যা এটা তো সেই বাড়িটা!
ঈশিতা ডানে বামে তাকিয়ে সদর দরজা খুলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। আরিফ দেরি না করে তার পেছন পেছন বাড়িতে প্রবেশ করে।
ঈশিতা একটা তালা বদ্ধ ঘর পুরোনো একটা চাবি দিয়ে খুলে ফেলে। আবারো সাবধানের সাথে এদিক সেদিক তাকিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। আরিফ ধীর পায়ে ঘরের দরজার কাছে আসে। দরজাটা আলগা হয়ে আছে। দরজার ফাঁক দিয়ে তাকাতেই আরিফের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
আরিফ দেখে ঈশিতার সামনে ___

চলবে __

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে