#শেষ_ডাইরি
#লেখক_আরিফ_ইসলাম
#তৃতীয়_পর্ব
বাসর ঘরে বধু সেজে বসে আছে ঈশিতা। বিয়েটা শুধু পরিবারের কয়েকজন সদস্য কে নিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আরিফ দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে। ঈশিতা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে খাটের মাঝ বরাবর। কাঁচা ফুলের বাসরে আরিফ আকর্ষিত না । তার একটাই উদ্দেশ্য এই মৃত্যুর খেলা তাকে বন্ধ করতেই হবে।
“_ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি সারা রাত?
ঈশিতার মিষ্টি কথাও আজ আরিফের কানে বিষ হয়ে ঢুকছে। ধীর পায়ে বিছানার এক পাশে বসে পড়ে সে। আতংকিত চাহনি তে বার কয়েক ঈশিতাকে দেখে। বেশ সুন্দর লাগছে আজ ঈশিতা কে। এক মূহুর্তে ঈশিতার প্রেম সাগরে ডুব দিতে মন চাচ্ছে আরিফের। চোখ যেনো আর সরছে না। এত সুন্দর মেয়ে কিভাবে এতটা ভয়ংকর হতে পারে। চোখ যেনো আরিফের সরছেই না। এভাবে কোনো দিনও ঈশিতা কে দেখে নি সে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে দু নয়ন ভরে দেখতে।
“_কী হলো এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
লাজুক কন্ঠে ঈশিতা বলে আঁচলে মুখ লুকায়।
“_ তুমি সত্যিই অনেক সুন্দরী । চাঁদ যেনো আজ লজ্জা পাচ্ছে তোমায় দেখে।
ঈশিতা আরিফের কাঁধ ধরে টেনে তার মুখের কাছে আরিফের মুখ নিয়ে আসে। এক অজনা সুখে ভাসতে থাকে দুজনে। ঘোর কাটতেই আরিফ নড়েচড়ে বসে।
“_আরে কী করতে যাচ্ছিলাম আমি? আমায় ভুলে গেলে চলবে না যে ঈশিতা কোনো সাধারণ মানুষ নয়।
বিড়বিড় করে বলতে বলতে শরীর ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে ।
“_কী হলো তোমার? আজ আমাদের বাসর রাত। আজ আমাদের মিলনের রাত। আজ তো তুমি আমায় আদর করবে, আর তা না করে ঘুমাচ্ছো ? উঠো বলছি!
গায়ে ধাক্কা দিতে দিতে বলছে ঈশিতা।
“_উফ ভাবী আমি এসব করতে পারবো না এখন । একটু সময় লাগবে বুঝে উঠতে।
রাগান্বিত কন্ঠে ঈশিতা আরিফের কলার চেপে ধরে।
“_তুই ভাবী কারে বললি? আমি তোর বিয়ে করা বউ! আগের হিসেব বাদদে এখন।
ঈশিতার রাগী কন্ঠে আরিফ ঘাবড়ে যায়। এই বুঝি তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা পিচাশ রূপ ধারন করে। আরিফ ভয়ে ভয়ে উঠে বসে।
ঈশিতা পুনরায় আরিফের ঠোঁটে তার ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দেয়। একহাত দিয়ে ড্রিম লাইটটা অফ করে দেয়। “বাকিটা শুনতে চাইলে ইনবক্সে আসেন”।
সকালে ঘুম ভেঙ্গে আরিফ নিজেকে একটা পরিত্যক্ত ভুমিতে আবিষ্কার করে।”_ এটা কীভাবে সম্ভব আমি তো বাড়িতে নিজের ঘরে ছিলাম।
ভাবতেই ঘাবড়ে গেছে আরিফ। বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোঁটা শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। “_ঈশিতা কোথায়, আমার বাবা মাই বা কোথায়? তাদের কোনো ক্ষতি হলো না তো।
ভয়ের শ্রোতে ভেসে বেড়াচ্ছে আরিফের দেহ। ভয়ের শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীরটা। দিশাহারা হয়ে দিক বেদিক ঘুরছে। ধু ধু প্রান্তরে কাউকে দেখছে পাচ্ছে না সে। এটা তো শহর হতেই পারে না । গ্রাম হলেও তো ঘর বাড়ি থাকবে । কিন্তু আরিফ আশে পাশে কোনো বাড়ি ঘর দেখতে পাচ্ছে না। ছুটে চলেছে এক হারানো পথিকের ন্যায় । বেশ খানিকটা দূরে এসে একটা অদ্ভুত বাড়ি দেখে থমকে দাঁড়ায় সে। দুতলা বিশিষ্ট বাড়ি । সদর দরজার কাছে উপস্থিত হতেই আপনা আপনি দরজা খুলে যায়। আরিফ বেশ ভালোই বুঝতে পারছে যা হচ্ছে সব অস্বাভাবিক।
ধীর পায়ে বাড়িটার মধ্যে প্রবেশ করতেই কারো কথার আওয়াজে চমকে যায়। একটা কক্ষ থেকে কয়েক জন মানুষের কথার আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। কক্ষের বাইরের জানালার ছোট ছিদ্র দিয়ে উঁকি মারতেই দেখে কয়েকজন লোক অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে থাকা লম্বা মত একটা লোক বন্দুক তাক করে আছে একটা মধ্য বয়স্ক লোকের দিকে । হয়তো পারিবারিক শত্রুতার জেরে প্রতিশোধ নিতে এসেছে লোকগুলো। তাদের কথা শুনে আরিফের এমনটাই মনে হচ্ছে। ফ্লোরে পড়ে থাকা লোকটার পাশে রক্ত মাখা একটা মহিলার লাশ । হতে পারে লোকটার স্ত্রী। লম্বা মত লোকটা বিকট হাসি দিয়ে বন্দুকের নল দিয়ে পড়ে থাকা লোকটাকে আঘাত করে।
আরিফ লুকিয়ে সব দেখছে কিন্তু কাছে যাবার সাহস হচ্ছিল না। হঠাৎ বন্দুকের শব্দে আরিফের হৃদস্পন্দন কেঁপে উঠে। পড়ে থাকা লোকটার বুক এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে গেছে। মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে তার স্ত্রীর লাশের পাশে। একটু পরেই একটা সাদা ফ্রক পড়া মেয়ে কান্না করতে সেখানে আসে। মেয়েটার মুখটা বড্ড চেনা চেনা লাগছে। বয়স আনুমানিক ১০ – ১২ বছর। মেয়েটা সম্ভবত খুন হওয়া দম্পতির মেয়ে । খুনি গুলো মেয়েটার আর্তনাদ শুনে ভিষন আনন্দ পাচ্ছিলো।
বন্দুক হাতে থাকা লোকটা মেয়েটার ছোট খোঁপা ধরে টেনে উঠায় । হঠাৎ বন্দুক তাক করে মেয়েটার দিকে। আরিফ নিজেকে আর আটকাতে পারে না।
এই অন্যায় সহ্য করার মতো নয়। দৌড়ে ভিতরে ঢুকতে যাবে তার আগেই বন্দুকের বিকট আওয়াজ ।
চিৎকার করে দিয়ে উঠে আরিফ।
“_কী হলো ঘুমের মধ্যে চিৎকার করছো কেন?
ঈশিতার কন্ঠ শুনে আরিফ হতভম্ব হয়ে যায়। নিজেকে সামলিয়ে নেয় আরিফ। “_ না একটা খারাপ স্বপ্ন দেখছিলাম।
ঈশিতা মুচকি হাসি দিয়ে বলে “_ এই স্বপ্ন আমি প্রতিদিন দেখি , আর মেয়েটার সাথে আমার অনেক মিল ।
বলেই ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয় ঈশিতা।
আরিফ ঈশিতার কথা শুনে চমকে উঠে । এতক্ষণে যে স্বপ্ন দেখছিলো ঈশিতা এই স্বপ্ন সম্পর্কে জানলো কেমন করে?
আর ওই মেয়েটার সাথে ওর কী সম্পর্ক থাকতে পারে? ঘামতে শুরু করেছে আরিফ। কী এই গোলক ধাঁধা?
নাস্তার টেবিলে বসে আছে আরিফ । মুখোমুখি বসে লাজুক ভঙ্গিতে হাসছে ঈশিতা । আরিফ বেশ লজ্জা পাচ্ছে, গত রাতে ঘোরের বসে ঈশিতার সাথে যা করেছে সে সব ভাবছে।
“_আরিফ কী হইছে খাচ্ছিস না কেনো ?
মায়ের কথায় খেতে শুরু করে সে। “_ আম্মা আপনার ছেলে তো সারা রাত খেয়েছে তাই এখন হয়তো খিদে নেই ।
ঈশিতার কথা শুনে আরিফ লজ্জায় ভ্রু কুঁচকে তাকায় ঈশিতার দিকে। “_ না মানে মা ঈশিতা বলতে চাচ্ছে আমি স্বপ্নে অনেক খাবার খেয়েছি সেই সব আর কী।
ঈশিতা লাজুক হাসি দেয় আরিফের দিকে তাকিয়ে। আরিফ যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। “_ এ কেমন মেয়েরে বাবা, কোন জায়গায় কী বলতে হয় জানেও না।
বিড় বিড় করে আরিফ অল্প অল্প রুটি মুখে পুরে। ঈশিতা আরিফের কান্ড দেখে ভিষন মজা পাচ্ছে। একটু পরেই সেখানে মির্জা হারুন সাহেব আসেন।”_ কী হলো তোমরা কী নিয়ে হাসা হাসি করছো?
“_তোমার ছেলে আজ কাল স্বপ্নে ভুল ভাল জিনিস খাচ্ছে তাই নিয়ে হাসছি।
মির্জা বাড়িতে শোকের ছায়া উঠে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। শুধু অশান্তি মনে আছে আরিফ। সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে কাটায়। ঈশিতা কে চোখে চোখে রাখে কখন কোথায় যায়।
কিছুদিন স্বাভাবিক ভাবে কাটার পর হঠাৎ একদিনের ঘটনা।
আরিফ প্রতিদিনের ন্যায় সেদিনও বেলকুনিতে দাড়িয়ে সিগারেট ফুকছিলো । হঠাৎ কারো স্পর্শে চমকে উঠে। বাবা মা জানে না আরিফ ধুমপান করে। তাই এই সতর্কতা। পেছনে তাকিয়ে দেখে তার বন্ধু সোহেল দাঁড়িয়ে আছে। শহর থেকে এসেছে।
“_কী ভাই বউ পাইয়া আমাদের ভুইলা গেসোস?
সোহেলের কথায় আরিফ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে”_ না ভাই ভুলবো কেনো। তুই কখন এলি?
“_ এই তো আজ সকালেই বাড়িতে আসছি। শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করছিস তাই বউ দেখতে চলে আসলাম।
সোহেল চৌধুরী আরিফ মির্জার ছোট বেলার বন্ধু। দুজনে একই এলাকায় থাকে পাশাপাশি। সোহেল চৌধুরী বাড়িতে আর আরিফ মির্জা বাড়িতে। পুরোনো বন্ধুকে পেয়ে আরিফ বেশ খুশি হয়। নিজের ঘরে গিয়ে বসে আড্ডা দিতে দিতে বলে”_ বন্ধু ভাবী কে তো আগে থেকেই চিনি । যায় হোক শুভ কামনা তোদের জন্য।
বলে সোহেল রাতের খাবারের দাওয়াত গ্রহণ করে সেখান থেকে চলে যায়।
দিন ফুরিয়ে রাত নেমে আসে। সোহেল কে আরিফ কল করে নিজের বাড়িতে ডাকে। “_ সোহেল তারাতাড়ি আয়। না হলে মা রাগ করবে, তোর জন্য রান্না করেছে মা।
সোহেল কল কেটে দিয়ে মির্জা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। গেটের সামনে যেতেই দেখে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে। অন্ধকারে মুখটা ভালো মত দেখা যাচ্ছে না। তবে মনে হচ্ছে মেয়েটা বেশ সুন্দরী। দেহের গঠন মন্দ নয়। “_এই শুনশান জায়গায় এত সুন্দর রমনি কোথা থেকে এলো?
ভাবতে ভাবতে এগিয়ে যাচ্ছে সোহেল চৌধুরী।
বেশ খানিকটা কাছে যেতে দেখে ___
চলবে __