#শূন্যতায়_পূর্ণতা
#হীর_এহতেশাম
||পর্ব-৯||
★পার্টি শেষ হয়েছে অনেক্ষণ আগেই। ফারহিন ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে বসলো। মাথা থেকে টাওয়েল খুলে একপাশে রেখে ভেজা চুল পিঠের উপর ছেড়ে দিলো। ঠোঁটে লিপবাম দিলো। হঠাৎই চোখ পড়লো গলার দিকে। লিপবাম রেখে হলার থাকা লকেটটা স্পর্শ করলো। তীব্রের বলা সব কথা মনে পড়লো। তীব্রের কথা মনে করতেই মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। মানুষটা ফারহিনের ভালোবাসা, প্রেম! জীবনে যাকে প্রথমবারেই ফারহিনের মনে ধরেছিলো। যার পছন্দ-অপছন্দ ফারহিন নিজের মাঝে ফুটিয়ে তুলতে চাইতো। যেটা তার পছন্দ না সেটা বাদ দিয়েছে, যেটা পছন্দ সেটা আঁকড়ে ধরেছে। মনের কথা মনে যতদিন ছিলো ততদিনই ভালো ছিলো। মুখে এসে থামতেই ফারহিন প্রত্যাখানের শিকার হলো, চরম প্রত্যাখান। তীব্রের সেদিনের বলা কথা গুলো মনে করে ফারহিন অনেক কেঁদেছে। কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছে ফারহিন জানেনা। বাবাকে ফাঁকি দিয়ে যার সামনে নিজের মনের কথা প্রকাশ করলো সে মানুষটাই যে এভাবে সরিয়ে দেবে বুঝতে পারেনি ফারহিন। ফারহিন নিজেকে চরম ভাবে গুটিয়ে নিয়েছিলো। ফারহিনের চাল-চলনে বেশ পরিবর্তন এসেছিলো। চঞ্চল ফারহিন নিজের সমস্ত চাঞ্চল্য বাদ দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলো। আজ সেই মানুষটার সাথেই তার বিয়ে। মানুষটা নিজেই এসে প্রেম নিবেদন করছে। ভালোবাসা ছড়াচ্ছে। ফারহিনের অভিমান, অভিযোগের পাহাড়ে ধীরে ধীরে ভাঙন ধরতে শুরু করলো।
ফারহানা বেডে বসে অনেক্ষণ যাবত পরখ করছিলো ফারহিনকে। ফারহিন কে নিজে নিজে হাসতে দেখে বলল-
“-কি ব্যাপার! কি নিয়ে নিজে নিজে হাসা হচ্ছে শুনি?
ফারহিনের ধ্যান ভাঙলো। ফারহিন উঠে এসে ফারহানার পাশে বসলো। বলল-
“-মানুষটা আমাকে সত্যিই ভালোবাসতে শুরু করেছে ফারহা?
“-তুই এত তাড়াতাড়িই সায় দিস না। আরো কয়েকটা দিন দেখ। নাহয় বিয়েটা পর্যন্ত দেখ। বিয়ের পর এমনিতেই তোর হয়ে যাবে। তখন না হয় এমন কঠোরভাব আর না দেখালি।
“-ঠিক আছে।
“-হুম। এখন তাকে মোটেও বুঝতে দিস না যে তুই গলে গেছিস। দেখ তোকে মানানোর জন্য কি কি করে সে..
“-আইডিয়াটা মন্দ না।
“-হুম। শোন না তোকে কিছু বলার ছিলো..
“-হ্যাঁ বল?
“-আরশ ভাইয়া আছে না? ওনাকে না আমার কেমন যেন লাগে!
“-মানে ইউ লাভ হিম?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ফারহিন। ফারহানা দ্রুত দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো। চোখ মুখ কুঁচকে ফারহিনের মাথায় চড় বসিয়ে বলল-
“-গাধা। আমি কেন ওনাকে ভালোবাসতে যাবো? কত বড় উনি আমার..
“-তাহলে কি বলছিলি?
“-ওনার চাহনি, ওনার চলাফেরা কেমন না?
“-কেমন? আমার তো নরমালই মনে হয়েছে..
“-না, আমি তোকে বোঝাতে পারছিনা।
“-কি হয়েছে?
“-উনি তোর দিকে তাকালে শুধু তাকিয়েই থাকে। একটিবারের জন্যও পলক ফেলে না। আই থিংক…
বলেই থামলো ফারহানা।
“-ইউ থিংক??
ভ্রু নাঁচিয়ে প্রশ্ন করলো ফারহিন..
“-উনি তোকে পছন্দ করে।
“-এমন কিছুই না গাধা। তোর মনের ভুল। মানুষটা ভালো। কাদের আঙ্কেলের ছেলে আছে জানতাম কখনো দেখিনি। এইতো কয়েকদিন হলো জানলাম। তোকে বললাম না? ওইদিনই..
“-কিন্তু ফারহিন…
“-আজে বাজে না ভেবে শুয়ে পড়। আমাকেও ঘুমাতে দে।
ফারহিন শুয়ে পড়লো। ফারহানা নিজের কথা ফারহিন কে বোঝাতেই পারলো না।
★আরশের পাশে বসে আরশের মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে কাদের শিকদার। আরশ সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। হাতে তিন জায়গায় সেলাই হয়েছে। ক্ষত ভীষণ গভীর ছিলো। অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণ হয়েছিলো বলে কঠিন সমস্যায় পড়েছিলো। আরশের ব্যান্ডেজ করা হাতটা নিজের হাতে ধরে রেখেছে কাদের শিকদার। আরশ ধীরগতিতে চোখ খুলে তাকালো। বাবাকে অবাক হলো। চারপাশ একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে বাবার দিকে তাকালো। বলল-
‘-এখানে বসে আছো কেন?
“-তুমি একা যে, আমি কীভাবে তোমাকে ফেলে চলে যেতাম?
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই বলল কাদের শিকদার। আরশ হাসলো। তাচ্ছিল্যের হাসি! বলল-
“-তুমি কখনো আমার সঙ্গ দাওনি বাবা। আজ আমি একা বলে পাশে বসে আছো, অথচ সেই তুমিই…
“-আরশ! তুমি কেন এসব করলে? আমি জানি আমার অনেক ভুল আছে। আমি অনেক অপরাধী। নিজের কাজের প্রতি আমি লজ্জিত বাবা। কিন্তু তুমি কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছো নিজেকে?
“-আমি বার বার হেরে যাই বাবা। আমার কাছে কিছু থাকবেনা, কিছু পাবোনা, কিছু চাইলে তা হয়তো আমি সম্পুর্ণরুপে পাবোনা এই ভেবে আমি এই জীবনে কোনো জিনিসের দিকে হাত বাড়াইনি। ২৮ বছরের জীবনে এই প্রথম আমার কিছু ভালো লেগেছে বাবা। কিন্তু…
“-কিন্তু কি আরশ?
“-আমি যা নিয়ে আজীবন ভয় পেয়েছি তাই হলো। জিনিসটা পাওয়ার আগেই, আমি তার দিকে অগ্রসর হওয়ার আগেই মাঝখানে দেয়াল পড়ে গেল। বিরাট দেয়াল!
“-তুমি একবার বলো আমাকে তোমার যা লাগবে আমি এনে দেব আরশ। নিজেকে তারপরও এভাবে কষ্ট দিও না।
“-কষ্ট পাওয়াটা আমার ভাগ্যে খোদাই করা আছে বাবা। আমি না চাইলেও আমাকে কষ্ট পেতে হবে। যাও তুমি, আমাকে একা থাকতে দাও।
“-আরশ!!
“-যাও বাবা, প্লিজ যাও।
আরশ মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কাদের শিকদাত উঠে চলে গেলেন। বাহিরে গিয়ে আরশের সেন্স ফিরেছে সেটা তীব্র কে জানালো। তীব্র কেবিনে প্রবেশ করলো। আরশের পাশে বসে আরশের হাত ধরতেই আরশ ফিরে তাকালো। তীব্রকে দেখে আরশের প্রচন্ড রাগ হলো। আরশ রাগ দমন করতে অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে নিলো! তীব্র বলল-
“-কবে শোধরাবি তুই? কেন এভাবে নিজেকে আঘাত করলি? নিজেকে আর কত কষ্ট দিবি? এভাবে কি জীবন চলে?
আরশ এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার চুপ থাকতে পারলো না। দ্রুত শোয়া থেকে উঠে গেল। হাতের স্যালাইন টান দিয়ে খুলে উঠে দাঁড়ালো। আরশের এমন প্রতিক্রিয়ায় তীব্র ভয় পেল। আঁতকে উঠলো। আরশের সামনে গিয়ে আরশকে আটকে বলল-
“-কি করছিস?
আরশ তীব্রের কলার ধরে নেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“-আমার থেকে দূরে থাক। তোর চেহারাও আমাকে দেখাবি না। আমি তোর চেহারা দেখতে চাইনা। তোর না ইভেন আমি কাউকেই দেখতে চাইনা। আমাকে আমার মত থাকতে দে।
আরশের হাতে চাপ পড়ায় ব্যান্ডেজের বাহিরে রক্ত চলে এসেছে। তা দেখে তীব্র বলল-
“-শান্ত হ ভাই! এমন করিস না। তুই পুরোপুরি সুস্থ না।
“-এতটাও দুর্বল নই। বলেই তীব্র কে সরিয়ে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে যায় আরশ। কয়েকজন নার্স এসে সামনে দাঁড়ালো। আরশের রক্তবর্ণ চোখের চাহনি দেখে তারা সরে দাঁড়ালো। আরশ বেরিয়ে গেল। কাদের শিকদার কে কিছুই বলার সুযোগ দিলো না। তীব্র আরশের আচরণে হতভম্ব হয়ে রইলো। ওর উপর এত রাগ কেন ঝাড়লো আরশ? নিজের মনে এমন প্রশ্ন জাগলেও তীব্র তাকে প্রাধান্য দিলো না। নিজেকে বোঝালো, আরশের হয়তো মন মেজাজ ভালো নেই। সকালে গেলে আরশকে একদম ঠিক পাবে এই ভেবে নিজেকে শান্ত করে বসে পড়লো তীব্র।
★বিগত ২০ দিন আরশের সাথে কারো যোগাযোগ নেই। আরশের সাধের অফিস খালি পড়ে আছে। এহমাদ অফিসের যাবতীয় কাজ সামাল দিচ্ছে। আরশকে ফোনে পাচ্ছেনা। আরশ কোথায় কেউ তা জানেনা। তীব্রের বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে অথচ আরশ নিখোঁজ। আরশ ইচ্ছে করেই নিজেকে আড়াল রেখেছে তা তীব্র খুব ভালো করেই জানে। কি এমন বিষয় নিয়ে এত আপসেট তা বুঝলো না তীব্র। সব কিছু ছেড়ে আরশ এভাবে নিজেকে আড়াল কেন করে নিলো? কী এমন হয়েছে? তীব্র রোজ দুবার করে আরশের বাসায় যায়, অফিসে খোঁজ নেয় কিন্তু আরশের কোনো খোঁজ সে পায়নি। আজও যাবে, আজ আরশ কে না পেলে বিয়ের ডেট পিছিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তীব্র। আরশকে ছাড়া বিয়ে সে কিছুতেই করবেনা। আরশকে ছাড়া এত বড় একটা কাজ সে করবেনা। গাড়িতে বসে আরশের কথা ভাবতে ভাবতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো তীব্র। আরশের বাড়ি পৌঁছাতেই কাদের শিকদারের হাসি মুখ দেখে তীব্র অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো-
“-আঙ্কেল সব ঠিক আছে?
“-আরশ ফিরে এসেছে বাবা!
“-কি বলছেন? আলহামদুলিল্লাহ! আমি দেখে আসি।
“-চেহারা অনেক খারাপ দেখাচ্ছে। মনে হয় কোনো কিছু নিয়ে উদাস!
“-আমি দেখছি আঙ্কেল। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন…
তীব্র দ্রুত আরশের রুমে গেল। রুমে নেই আরশ। তীব্র বারান্দায় গিয়ে দেখলো ফ্লোরে বসে আছে সে। দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হাতে সিগারেট। চোখের নিচে কালচে দাগ পড়েছে। ফর্সা মুখটা মলিন হয়ে আছে। তীব্র তার পাশেই বসে পড়লো। দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে আরশের দিকে তাকালো, বলল-
“-কোথায় ছিলি এতদিন?
আরশ চোখ খুলে তাকালো। তীব্রকে দেখে তীব্রের দিকে ফিরে বসলো। বলল-
“-তুই? কখন এলি? কেমন আছিস?
“-তুই আমাকে এভাবে না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলি? চেহারার এ কি হাল করেছিস?
“-ছাড় ওসব! তোর কথা বল বিয়ে করে ফেলেছিস?
“-তুই কি রে? ভাবলি কি করে তোকে ছাড়া আমি বিয়ে করবো? আজকে তুই ফিরে না এলে আমি বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দিতাম।
“-কেন? আমার জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরাস না। সবাই সব পায় না তীব্র।
বলেই দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে সিগারেটে টান দিলো।
“-আমি তোর জন্য সব করতে পারি আরশ।
তীব্রের এই কথা শুনে আরশ তাকালো, হালকা হাসলো। সেই হাসি দেখে তীব্র শুধালো —
“-কি হয়েছে আরশ? তুই না বললে আমি কিভাবে বুঝবো? সেদিন তোর এই সমস্যা, আর তারপর এতদিন নিখোঁজ! কোথায় ছিলি তুই?
“-কোথাও না! নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছিলাম। আমি নিজেকে স্ট্রং রাখতেই সব ছেড়ে পালিয়েছিলাম।
“-কেন আরশ? কি এমন হলো যার কারণে তুই সব ছেড়ে পালিয়ে গেলি? এমন কাজ তো তুই কখনো করিস নি।
“-নিজের সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটা হারানোর মত ক্ষমতা আমি সহ্য করতে পারবো না। হয়তো এতদিনে হারিয়েও ফেলেছি।
“-মানে?
“-তোকে বলেছিলাম মনে আছে? আমি একজনকে পছন্দ করি..
“-হুম!
“-ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এতদিনে হয়তো হয়েও গেছে। জানিনা আমি। আমার এত কাছে থেকেও আমি কিছু করতে পারলাম না। আমি জীবনে প্রথম কিছুর দিকে হাত বাড়িয়েছিলাম তীব্র সেটাও আমি পেলাম না।
বলেই জলন্ত সিগারেট চেপে ধরলো হাতের মুঠোই। তীব্র তা দেখে চমকে গেল-
“-এসব কি? ফেল ওটা হাত থেকে। ফেল বলছি..
জোর করে আরশের হাত থেকে সিগারেট ফেলে দিলো তীব্র। তারপর বলল-
“-মেয়েটি কে আরশ? কোন মেয়ের জন্য তুই এভাবে ভেঙ্গে পড়লি?
“-বাবার বন্ধু দিদার আঙ্কেলের মেয়ে।
দিদার নাম শুনে তীব্র চমকালো। হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল হুট করেই। অস্থিরতা সৃষ্টি হলো বুকের মাঝে। নিজের সন্দেহ লুকিয়ে প্রশ্ন করলো-
“-কোন দিদার? মেয়েটির ছবি আছে?
আরশ পাশে পড়ে থাকা ফোনটা তুলে নিলো। স্ক্রিনের পাওয়ার অন করতেই ফারহিনের ছবি ভেসে উঠলো। তীব্র স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই কলিজা মোচড় দিলো। নিজেকে সবচেয়ে বড় অসহায়ের কাতারে দেখলো সে। আরশের দিকে তাকালো। আরশ ছবির দিকে তাকিয়ে বলল-
“-জানিও না আছে নাকি অন্যের হয়ে গেছে। আমি কখনো নিজেকে আর শক্ত করতে পারবো না রে। ও আমার কাছে না এসেও আমার সবচেয়ে আপন ছিলো। ওর কথা বার্তা,হাসি দেখলেই আমার একটা আলাদা শান্তি লাগতো। আমি হারিয়ে ফেললাম। আমি ভুলেই গেছিলাম সবার ভাগ্যে সব হয়না। আর আমার ভাগ্যে তো আরো না।
বলেই আরশ হাসলো। তীব্র অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলো। কি করবে সে? একদিকে আরশ অন্যদিকে নিজের ভালোবাসা! আরশের জন্য নিজের ভালোবাসা ত্যাগ দিলে আজীবন ধুকে ধুকে মরবে। আর আরশের কথা না ভেবে স্বার্থপর হয়ে উঠলে নিজের ছোট বেলার সঙ্গী, ছায়াকে হারিয়ে ফেলবে। আরশকে সে হারিয়ে ফেলবে এটা ভাবতেই তীব্র চরম ধাক্কা খেল। আরশের দিকে তাকালো। আরশের মলিন মুখ তীব্রকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাড় করালো। আরশের কাছ থেকে কেন একবার ফারহিনের ছবি দেখে নিলো না? তীব্র দেয়ালে মাথা ঠেকালো, মনে মনে বলল-
“-ফারহিন কে আমি আঘাত দিয়েছি, ফারহিনের অভিমান অভিযোগ আমি কমাতে পারিনি। আমি ব্যর্থ। কিন্তু আরশ? আরশ এত ভালোবাসে ফারহিনকে! আমার ভালোবাসা আরশের ভালোবাসার সামনে টিকতেই পারবেনা। আমি আরশকে খালি করে দিয়ে কিছুতেই নিজেকে পরিপূর্ণ করতে পারবোনা। আরশ ছোট থেকেই একাকিত্বের ঘানি টেনে এসেছে। আর না। ও এইটুকু সুখ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। আমার ভালোবাসা বিসজর্নে যদি আরশের মুখে চিরজীবনের হাসি ফোটে তবে আমি সরে আসবো। আমি করবোনা ফারহিন কে বিয়ে। করবো না…
তীব্র আরশের দিকে তাকালো। আরশের চোখ লাল হয়ে আছে। আরশের দৃষ্টি এখনো ফারহিনের ছবির দিকেই স্থির হয়ে আছে। তীব্র নিজের সমস্ত অনুভুতি চাপা দিয়ে, মৃদুস্বরে প্রশ্ন করলো-
“-খুব ভালোবাসিস তাই না?
“-নিজের চাইতেও বেশি। পুরো দুনিয়া এক পাশে থাকলে সে যদি অন্য পাশে থাকে তবে আমি তার দিকেই যাবো।
তীব্র আঁতকে উঠলো। বুকের মাঝে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছে। এখানে বসে থাকার মত অবস্থা তার নেই। সে অনেক কষ্টে চাপাস্বরে বলল –
“-খোঁজ নিয়ে দেখ, হয়তো বিয়ে হয়নি। আর বিয়ে না হলে তুই হাল ছাড়বিনা। শেষ পর্যন্ত! আমি কথা দিচ্ছি আমি তোকে সর্বোচ্চ হেল্প করবো। তুই ভেঙে পড়িস না। তোর ভালোবাসা তোরই থাকবে। আমি আসি? একটু দরকার আছে.. তুই ফ্রেশ হয়ে নে খেয়ে নে রাতে দেখা হবে।
“-আচ্ছা।
তীব্র দ্রুত উঠে গেল। লম্বা পা ফেলে বেরিয়ে এলো বাড়ির বাহিরে। গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। কিছুদূর এসে গাড়ি থামিয়ে ফোন বের করলো। ফোনের স্ক্রিন পাওয়ার অন করতেই ফারহিনের হাসোজ্জল মুখটা ভেসে উঠলো। তীব্রের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তীব্র গগন কাঁপিয়ে চিৎকার দিলো। স্টিয়ারিং এ মাথা ঠেকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো! পুরুষ মানুষ কাঁদে না কিন্তু তীব্র কাঁদছে! হয়তো ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে ফেলার শোকে!…
চলমান….