শূন্যতায় পূর্ণতা পর্ব-০১

0
1109

#শূন্যতায়_পূর্ণতা
#হীর_এহতেশাম
||পর্ব-১||

★আচমকা ব্রেক কষলো আরশ। আর একটু হলেই এক্সিডেন্ট হয়ে যেত। গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। কয়েকজন মেয়ে গাড়ির সামনে এসে গিয়েছিলো। আরশ গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই একটি মেয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো। গায়ে কলেজ ইউনিফর্ম দেখে আরশের বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটি স্টুডেন্ট। মেয়েটি আরশ কে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। আরশের হাতের দিকে তাকিয়ে বলল-

“-একি! আপনার হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে।

আরশ নিজের হাতের দিকে তাকালো। ব্যান্ডেজ মোড়ানো হাতটা থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে। রাগের মাথায় দেওয়ালে ঘুষি দেওয়াতে হয়তো হাতের ক্ষত তে আবারো চাপ পরেছে। আরশ কিছু বলার আগেই মেয়েটি আরশের হাত ধরে নিজের রুমাল বের করে বেধে দিলো। আর বলল-

“-রুমালটা অনেক্ষণ কভার দিবে। দেরী না করে আশে পাশের কোনো হাসপাতাল বা ফার্মেসী তে যান।

আরশ চুপ করে রইল। মেয়েটি আরশের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল-

“-শুনেছেন? কি বলেছি আমি?
“-হ্যাঁ।
মেয়েটি গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল-
-আপনার গাড়িতে তো ড্রাইভার নেই! এই হাত নিয়ে কেন গাড়ি চালাচ্ছিলেন? এই ব্যাথা যুক্ত হাতে গাড়ি চালাতে গিয়েই এক্সিডেন্ট করতে যাচ্ছিলেন। আর একটু হলেই তো গাড়িটা আমার উপর উঠিয়ে দিতেন।
আরশ চুপ করে রইলো। মেয়েটি বলল –
“-দাঁড়িয়ে না থেকে যান। বেশিক্ষণ থাকলে ইনফেকশন হতে পারে। রক্তে ভেজা ব্যান্ডেজ নিয়ে বেশিক্ষণ থাকবেন না। আর হ্যাঁ দেখে শুনে গাড়ি চালাবেন। আমি মাফ করলেও অন্য কেউ কিন্তু মাফ করবেনা।

কথা শেষ করেই মেয়েটি হাটা দিলো। আরশ মাটির দিকে তাকাতেই দেখলো মাটিতে একটা সিলেবাস পড়ে আছে। মাটি থেকে সিলেবাসটি তুলে আরশ চোখের সামনে ধরলো। রুমাল বের করতেই হয়তো সিলেবাসটি পড়ে গেছে৷ আরশ গাড়িতে বসলো। দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো।

★পড়তে বসে সিলেবাস না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠলো ফারহিন। বান্ধবীকে ফোন করলো ভুলে তার ব্যাগে চলে গেল নাকি কিন্তু না সেখানেও নিরাশ হলো। সিলেবাস না পেয়ে মুখটা গোমড়া করে বসে রইল ফারহিন। মা এসে পাশে বসতেই ফারহিন বলল-

“-সিলেবাসটা পাচ্ছি না মা।
“-ব্যাগে দেখো, শেল্ফে দেখো।
“-নেই মা। আমি পুরো খুঁজেছি নেই কোথাও। হয়তো পড়ে গেছে কোথাও।
“-আচ্ছা কালকে একটা নিয়ে নিয়ো।
“-দিবেনা মা। তুমিতো জানোই। কলেজের এত কড়া রুলস। এত মাস পর এসে সিলেবাস চাইলে আমাকে ঘাড় ধরেই বের করে দেবে।
“-আচ্ছা কারো কাছ থেকে কপি করে নিও। ঠিক আছে?
“-আচ্ছা।
“-এখন পড়া শেষ করে নাও। আমি কাজ শেষ করে আসছি।
“-ওকে।

হাতে থাকা রুমালটার দিকে তাকিয়ে রইলো আরশ। জীবনে কত রক্ত ঝরিয়েছে হিসেব নেই। কখনো কেউ এত যত্ন করেনি। একটা অচেনা মেয়ের কাছ থেকে হুট করেই এমন আচরণ পাওয়াতে আরশ বুঝতেই পারছেনা কি করবে। ইতিমধ্যে আরশ মেয়েটির নামে অনেক খোঁজ নিয়েছে। মেয়েটির কলেজ, এড্রেস সব জানা। অন্য হাতে থাকা সিলেবাসটির দিকে তাকালো আরশ৷ এই সিলেবাস কি করবে? ফেলে দেবে? নাকি ফেরত দেবে? মেয়েটির সামনে যাওয়া কি উচিত? এসব ভাবতে ভাবতেই রুমের লাইট জ্বলে উঠে। আরশ দ্রুত সোজা হয়ে বসে। আরশের বাবা এসেছে। বাবাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। কাদের শিকদার এগিয়ে এসে সোফায় বসলেন। আরশকে বললেন-

“-তোমার হাতে আবার কি হলো?
“- কিছু না।
“-অফিস কেমন চলছে?
“-ভালোই।
“-ভালো চললে ভালো। আর কোনো সমস্যা হলে জানিও!
“-আমার সমস্যা নাকি অফিসে কোনো সমস্যা?
“-অবশ্যই তোমার। অফিসের সমস্যা কেন হবে?
“-আমি ছাড়া দুনিয়ার সব জিনিসের প্রতিই তোমার খেয়াল থাকে, তাই বলা।
“-তুমি এমন ভিত্তিহীন কথা বলা কবে বন্ধ করবে?
“-ভিত্তিহীন না বাবা।
“-ওকে ফাইন।
বলেই কাদের শিকদার উঠে চলে গেল। যাওয়ার সময় দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো। আরশের দিকে ফিরে বলল-

“-হাতের খেয়াল রেখো। কয়েকদিন নিজের রাগটা অন্তত দমিয়ে রাখো। নাহলে ঘায়ের উপর ঘা হবে।
আরশ তাকিয়ে রইলো। তার বাবা কথা শেষ করেই চলে গেল। আরশ বসে পড়লো। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো৷ হাত দুটোতে কাটাছেঁড়ার অভাব নেই। এত এত দাগের মাঝেও নতুন ক্ষতের উদয় হয়।

★অনবরত কলিং বেল বেজেই চলছে। দিদার হাসান বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতেই কাউকে পেল না। ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলো দরজায় একটি বিশাল ফুলের তোড়া। ফুলের তোড়া তুলে হাতে নিলো দিদার হাসান। কার্ড টা খুলে দেখলো বড় বড় অক্ষরে লেখা ””good morning farheen”!
ফুলের তোড়া নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখলো। ফারহিন তাকাতেই দেখলো বাবার হাতে লাল গোলাপের তোড়া। চোখ মুখে উত্তেজিত ভাব। হাসি মুখে প্রশ্ন করলো-
“–কে দিয়েছে বাপি?
“-আমাকে তো কেউ দেয়নি। তবে তোমাকে হয়তো কেউ দিয়েছে।
“-আমাকে? ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ফারহিন। দ্রুত উঠে এসে হাতে নিলো। কার্ডটিও দেখলো। নাহ্ কোথাও কোনো নাম বা ঠিকানা নেই। ভ্রু কুঁচকে বলল-
“-বাপি হয়তো কেউ প্র‍্যাংক করেছে। ডোন্ট ওয়ারি।
“-তাই যেন হয় ফারহিন।
“-উফফ বাপি ডোন্ট বি সিরিয়াস। কলেজ গেলেই জেনে যাবো কে দিয়েছে।
“-হুম।

প্রেম ভালোবাসার চরম বিরুদ্ধে দিদার হাসান। মেয়েকে এসব থেকে বিরত রাখতে গার্লস স্কুল, গার্লস কলেজেই আজীবন পড়িয়েছে। মেয়ের আশেপাশে কোনো ছেলের ছায়া তিনি সহ্য করেন না। ফারহিন আজ পর্যন্ত কোনো ছেলের দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি এই ভয়ে পাছে বাবা জেনে গেলে কেয়ামত হয়ে যাবে। ফুলের তোড়া পেয়ে ফারহিন নিজেও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো৷ কারণ ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ যে এটা দেয়নি তা ও খুব ভালো করেই জানে। তবে এসেছে কোথা থেকে এই তোড়া? তাও ফারহিনের পছন্দের ফুল দিয়ে বানানো। তরতাজা লাল গোলাপ দিয়ে।

ক্লাসে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে ফারহিন। হঠাৎ পিয়ন এলো। পিয়ন এসেই ফারহিন এর নাম ধরে ডাক দিলো। ফারহিনের বান্ধবী ফারহানা এগিয়ে গেল। বলল-
“-কি হয়েছে কাকা?
“-এটা নাও। তোমার জন্য।
উনি ফারহানা কে ফারহিন ভেবে বক্স দিয়ে দিলো। ফারহানা ওটা নিয়ে ফারহিনের কাছে এলো।
“-ফারহিন তোর জন্য!
“-এটা আবার কি?
“-খুলে দেখ না। পিয়ন কাকা দিয়েছে।
“-আচ্ছা ওয়েট।
বক্স খুলতেই দেখলো ফারহিনের সিলেবাস, আর পাশেই এক বক্স চকলেট। আর একটি ঘড়ি। ফারহিন রীতিমতো অবাক হলো। সিলেবাস টা কোথা থেকে এলো? কে দিলো এসব? সিলেবাসের পাতা ওল্টাতেই দেখলো ওখানে লেখা ”this is for you!! Thank you Again and again..”
ফারহিন চরম অবাক হলো। সকালের কার্ডটির সাথে মেলাতেই দেখলো দুটি হাতের লিখাই সেম। তারমানে দুজনই একজন। ফারহিন ফারহানা কে সন্দেহভাজন সুরে বলল-

“-এসব তুই করছিস না তো? দেখ এসব তুই করলে বাদ দে। বাপি কিন্তু আমাকে সন্দেহ করবে।
“-তুই সকাল বেলা ভাং টাং খেয়েছিস না কি? আমি কেন এসব দিতে যাবো? সেই স্কুল লাইফ থেকে আছি তোর সাথে কই জীবনে তো একটা চকলেট ও গিফট দিলাম না তোকে এখন আবার এসব। যত্তসব!!
“-সত্যিই তো! তুই তো কখনো এক গ্লাস পানিও খাওয়াস নি তোর মত কৃপণের কাছ থেকে এসব আশা করাটাই বোকামি। কিন্তু কে করছে এসব? কে দিচ্ছে? আমার সিলেবাস পেলো কোথায়?
“-পিয়ন কাকাকে জিজ্ঞেস কর।
“-আচ্ছা করবো। ব্রেক টাইম আসুক।
“-হুম।

★অফিসে নিজের কেবিনে বসেই আরশ হেসে দিলো। হঠাৎ কেবিনে প্রবেশ করলো তীব্র। আরশ কে হাসতে দেখে তীব্র অবাক হলো। বলল-
“- সিরিয়াসলি? তুই হাসছিস? তা কি কারণে হাসি ফুটলো বলা যাবে কি?
আরশ সোজা হয়ে বসলো। বলল-
“-হাসছিল না।
“-আমি দেখেছি আরশ। বল কেন হাসছিলি?
আরশ চুপ করে রইলো। আরশ কে চুপ থাকতে দেখে তীব্র বলল-
“-প্রেমে টেমে পড়লি নাকি?
ল্যাপটপে চলতে থাকা হাত থেমে গেল আরশের। ধীরগতিতে তীব্রের দিকে তাকালো। প্রেম? প্রেমের কথা তো মাথায় আসেনি আরশের। কঠিন গলায় বলল-
“-প্রেম আর ভালোবাসা কি এক?
“-উহু এক না। প্রেম তো আবেগে হয়। আর ভালোবাসা সেটা তো রুহ থেকে আসে, অন্তর থেকে অন্তর এ গিয়ে ডিরেক্ট আঘাত করে ঘায়েল করে দেয়।
“-হুম।
“-তুই কাউকে ভালোবেসেছিস?
আরশ আবারও থেমে গেল। ল্যাপটপ বন্ধ করে বলল-
“-কফি খাবি?
“-খাওয়া যায়।
“-লেটস গো।
“-কোথায়?
“-আগে চল।

বলেই উঠে হাটা দিলো আরশ। তীব্র চেঁচিয়ে বলল-
“-কথা ঘোরানোর মোক্ষম উপায়।

চলবে???

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে