Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহরশুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর পর্ব-১৪

শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর পর্ব-১৪

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর
লেখক- এ রহমান
পর্ব ১৪

শরৎ মানেই শুভ্র নীলের সমাহার। রোদ্রজ্জল ঝলমলে সকাল। এলোমেলো দখিনা হাওয়া। দোলনচাঁপা, শিউলি, বেলি আর কাশফুলের স্নিগ্ধতা। ঝকঝকে নীল আকাশে ঝাকে ঝাকে শুভ্র মেঘ। যেন কয়েক গুচ্ছ তুলোর পেঁজা। রোদ্র ছায়ার খেলার মাঝেই ছাদে ব্যস্ত ভাবে হাঁটছে ঈশা। গভির ভাবনায় নিমগ্ন। ভ্রু কুচকে নিচের দিকে তাকিয়েই হেটেই যাচ্ছে। অবাধ চিন্তা ধারা মস্তিষ্কে নানান রকম ভাবে হানা দিচ্ছে। এতো চেষ্টা করছে কিন্তু ইভান কে কিছুতেই মানাতে পারছে না। এতো কঠিন মানুষ হয়? এরকম অনেক কারনেই অনেক বার ইভান তার উপরে রাগ করেছে। সময়ের সাথে সেসব ঠিকও হয়ে গেছে। কিন্তু এবার তো পুরোটাই ভিন্ন। না সে ঈশার সামনে আসছে আর না তার সাথে কথা বলছে। কথা না বলুক। সামনে আসলে তাও তো মানানো যায়। সামনে আসছে কিন্তু সেই সময় কথা বলার মতো সুযোগ থাকছে না। কারন পুরো পরিবার তখন উপস্থিত থাকছে। আর সেটারই সুযোগ নিচ্ছে ইভান। অসহায় মুখ করে বিড়বিড় করে বলল
–সবার সামনে আদর্শ সামির দায়িত্ব পালন করছে কিন্তু পরে ঠিকই খারাপ ব্যবহার করছে। খারাপ আর কই ব্যবহারি তো করছে না।

–কিসব একা একা বিড়বিড় করছিস?

চমকে পিছনে ঘুরতেই দেখল ইরিনা দাড়িয়ে আছে। নিজের মুখভঙ্গি স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল
–কিছু না। তুমি কখন এলে?

ঈশার কথার উত্তর দেয়ার আগেই পাশের ছাদে চোখ গেলো তার। ইফতি আর ঈশান কি নিয়ে বেশ হাসাহাসি করছে। ইরিনার দৃষ্টি তাক করেই ঈশা সেদিকে তাকাল। তাদের কথার মাঝেই ইলু চায়ের কাপ নিয়ে ছাদে এলো। ঈশা একটু এগিয়ে গিয়ে গলা তুলে বলল
–তোমরা ওখানে কি করছ?

ঈশার কথা শেষ হতেই ইভান ছাদে এসে দাঁড়ালো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঈশার দিকে তাকাল। ঝাঝাল গলায় বলল
–আসতে কথা বলা যায়না?

ঈশা ভয় পেয়ে চুপ করে গেলো। কারন অপারেশন হওয়ার পর থেকে ঈশার জোরে কথা বলা শুনলেই ইভান রেগে যায়। আগেও কয়েকবার বলেছে। কিন্তু ঈশা ভুলে যায়। আর রাগ করার কি আছে সেটাই বুঝতে পারেনা। জোরে কথা বলতে তার তো কোন প্রব্লেম হয় না। তাহলে ইভানের সমস্যা কি। ইরিনা সিঁড়ির দিকে ঘুরে ঈশার উদ্দেশ্যে বলল
–চল। ঐ বাড়িতে যাই।

ঈশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইরিনার সাথে চলে গেলো। ছাদে উঠতেই ইলু বলল
–তোদের জন্য চা আনিনি। ঈশা তুই নিচে গিয়ে একটু কষ্ট করে চা নিয়ে আয় না।

ঈশা কোন কথা বলল না। সোজা নিচে চলে গেলো। ইভানের মা রান্না ঘরেই ছিল। পিছন থেকে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। তিনি একটু চমকে উঠে বলল
–আরে তুই কখন আসলি?

ঈশা ক্লান্ত গলায় বলল
–এই তো। উপরে চা নিয়ে যেতে বলল।

ইভানের মা আঙ্গুল তাক করে বলল
–ঐ যে গরম করে নে।

ঈশা চুপচাপ চা গরম করে কাপে ঢেলে নিলো। ইভানের মা ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–কি হয়েছে? মন খারাপ নাকি তোর?

ঈশা একটা শ্বাস ছেড়ে বলল
–না বড় মা। এমনিতেই।

ইভানের মা আর কথা বাড়ালেন না। ঈশা চা নিয়ে চলে গেলো ছাদে। ছাদে গিয়ে দেখে সবার হাতে চায়ের কাপ শুধু ইভানের হাতে নেই। ঈশা এগিয়ে গিয়ে ইভানের সামনে দাঁড়ালো। ইভান রেলিঙ্গের উপরে এক পা তুলে বসে আছে। তার মুখের এক পাশে রোদ পড়েছে। ঈশা ইভানের হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে নিজের কাপটা নিয়ে পিছনে এসে দাঁড়ালো। ইভান ঈশার দিকে তাকাল না। ঈশা পিছনে রেলিঙ্গে হেলানি দিয়ে ইভানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইরিনা ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–কি রে ঈশা তুই এরকম বিধবাদের মতো সাদা কামিজ পরেছিস কেন? মনে হচ্ছে তোর জামাই মরে টরে গেছে।

ইভান চায়ের মধ্যে বিস্কুট ডুবিয়ে কেবল মুখে দিয়েছে। ইরিনার কথা শুনেই গলায় আটকে গেলো। কাশতে লাগল। ঈশা ঈশানের হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে এগিয়ে দিলো ইভানের দিকে। ইভান সেটা নিয়ে পানি খেয়ে ইরিনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। ইরিনা বুঝতে পারল সে ভুল কিছু বলে ফেলেছে। একটু হকচকিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল। সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু কুচকে একটু ভাবল। ইভান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল
–আমি জলজ্যান্ত মানুষটা তোর সামনেই বসে আছি। আর তুই আমাকে মেরে ফেললি?

ইরিনা এবার বুঝতে পারল সে কি বলেছে। অপ্রস্তুত ভাবে হেসে বলল
–না মানে ভুলে বলে ফেলেছি। ভুলে গিয়েছিলাম যে তুমিই ওর বর।

সবাই ঠোট চেপে হেসে ফেলল। ইভান তীক্ষ্ণ চোখে সবার দিকে একবার তাকাল। ইফতি এবার একটু নড়েচড়ে বসে বলল
–ইভান ভাইয়া তুমি ব্যচেলর থেকে ম্যারিড হয়ে গেলে। সেই হিসেবে অন্তত একটা ট্রিট দেয়া উচিৎ ছিল। কি বল ভাবি আপু?

কথা বলে ঈশার দিকে তাকাতেই সে ভ্রু কুচকে বলল
–এটা কি ধরনের ডাক?

ইফতি দাত কেলিয়ে বলল
–ছোট বেলা থেকেই তোমাকে আপু বলে এসেছি। এখন বড় বেলায় ভাবি হয়ে গেলে। এখন আপু টা কিছুতেই ছাড়তে পারছিনা। তাই আর কি। আর বড় বেলায় যে ভাবি হয়ে যাবে সেটা তো বুঝতে পারিনি। তুমি ছোট বেলায় বলে দিলেই তখন থেকেই ভাবি বলে ডাকতাম। তাহলে আর আমার অসুবিধা হতনা।

ঈশা বড় বড় চোখে তাকাল। সবাই শব্দ করে হেসে ফেলল। ইভান ঠোট চেপে হাসল। কিন্তু ঈশা পিছনে থাকায় সেটা দেখতে পেলনা। ইফতির কথায় সে বেশ বিরক্ত হল। কিন্তু ঈশান তার কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল
–একদম ঠিক। তুই এভাবেই ডাকবি। শুনতে ভালই লাগছে। আন কমন নাম।

ঈশার দিকে তাকিয়ে বলল
–তোর এক মাত্র দেবর শখ করেছে। তুই বাধা দিস না।

বলে আবারো সবাই হাসতে লাগল। ঈশা সবার উপরে বেশ বিরক্ত হল। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই ইলু বলল
–তবে ইভান ভাইয়া ইফতি কিন্তু ভুল কিছু বলে নি। এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেলো। কি হল সবটা মাথার উপর দিয়ে গেলো। কিছুই বুঝতে পারলাম না। অন্তত বোঝার সুযোগটা তো দাও।

ইভান একটু চুপ থেকে বলল
–কোথায় যাবি? আজ রাতে চল।

সবাই খুশি হয়ে গেলো। জার জার পছন্দ মতো বলতে লাগল। সেটা নিয়ে বেশ কিছুক্ষন ঝগড়া চলল। অবশেষে একটা রেস্টুরেন্ট ঠিক করলো সবাই মিলে। ইভান সম্মতি দিতেই ঈশা ভ্রু কুচকে একটু ভাবল। তারপর মুখ বাকিয়ে বলল
–আমি যাব না। তোমরা যাও।

ঈশার কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকাল। ঈশান বলল
–তুই যাবি না মানে?

ঈশা মলিন কণ্ঠে বলল
–আমি যাবনা এটার আবার কি মানে হয়?

ইরিনা বিরক্তিকর গলায় বলল
–ঈশা এমন করিস না।

ঈশা কিছুতেই রাজি হল না। সবাই ঈশার উপরে বেশ বিরক্ত হল। সহজেই ইভান রাজি হয়ে গেলো। আর ঈশার নাটক শুরু হল। এখন যদি কোনভাবেই ইভান প্ল্যান ক্যান্সেল করে দেয়? সবার কথার মাঝেই ইভান সামনে ঘুরে বলল
–ঈশা যেতে না চাইলে জোর করিস না। ও তো এখনও পুরপুরি সুস্থ না। রেস্ট নিক।

ইভানের কথা শুনে সবাই থেমে গেলেও ঈশার মনে হল কেউ তার গায়ে ফুটন্ত গরম তেল ঢেলে দিলো। কারন সে ভেবেছিল যেতে না চাইলে সবার সামনে হয়তো ইভান তাকে জোর করবে। কারন সে তো সবার সামনে ভালো সাজে। কিন্তু এখানে তো পুরই উলটা ব্যাপার ঘটে গেলো। এখন কি হবে? কিভাবে বলবে সে যাবে? বিরক্ত হয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো। ঈশা নেমে যেতেই ইভান মুচকি হাসল। কারন সে বুঝতে পেরেছে ঈশার এমন নাটকের কারন। সবাই ঈশার এমন আচরন দেখে একটু অবাক হল। ইলু সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে বলল
–ঈশার কি কিছু হয়েছে?

ইভান শান্ত গলায় বলল
–তেমন কিছু না। মেডিসিনের কোর্স এখনও চলছে তো। পাওয়ার ফুল মেডিসিন নেয়ার ফলেই একটু মুড সুইং হচ্ছে।

————–
ভর সন্ধ্যা বেলা। রাস্তায় অনেক লোকজন। ল্যাম্পপোস্টের সাথে হেলানি দিয়ে দাড়িয়ে আছে ইভান। ঈশান হাতের ঘড়িটা দেখে নিয়ে বলল
–মেয়েদেরকে নিয়ে কোন জায়গায় যাওয়া খুব প্রব্লেম। কখনই সময় মতো বের হতে পারেনা।

ইভান মুচকি হাসল। কোন কথা বলল না। ঈশান বিরক্তিকর শব্দ করে বলল
–ইফতি কোথায়?

ইভান ফোন থেকে মুখ তুলে ঈশার বারান্দার দিকে তাকিয়ে বলল
–ঈশাকে আনতে গেছে।

ঈশান ইভানের দিকে ঘুরে তাকাল। বিস্ময় নিয়ে বলল
–ঈশা নাকি যাবে না?

ইভান ঠোট কামড়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল
–যাবে।

ঈশান সামনে ফিরতেই ইভান হাসল। ঈশা ইভানের উপরে রাগ করে বাসায় চলে গিয়েছিলো। কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে যাবেই না। কিন্তু যখন জানতে পারল যে শুধু তার কাজিনরা না ইভানের দুই জন মেয়ে বন্ধুও আসছে তখন থেকেই ঈশার মাথা আরও গরম হয়ে গেলো। সে কিছুতেই আর নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারল না। কারন ওর মধ্যে একজন মেয়ে ইভানের গায়ে পড়ে সেটা ঈশার জানা আছে। এভাবে নিজের জেদ আর আত্মসম্মান ধরে রাখতে গিয়ে নিজের বরকে বিসর্জন দেয়া কোন ভাবেই সম্ভব না। তাই সব কিছু ভুলে রেডি হয়ে নিলো। ইভানও জানতো এটা শোনার পর ঈশা কিছুতেই আর বাসায় থাকতে পারবে না। তাই তো ইফতিকে সেভাবে বলেই পাঠিয়ে দিয়েছে। বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর ইফতি সিঁড়ি দিয়ে নামলো। আর তার পিছনে ঈশা নিজের চুল ঠিক করতে করতে আসছে। এপাশে ইরিনা আর ইলুও এসে পড়েছে। ঈশান সামনে দাড়িয়ে রিক্সা দেখছে। সে রিক্সা থামাল। ঈশান ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–তুমি তোমার বউকে নিয়ে যাও আমরা আসছি।

ইভান নিশব্দে হাসল। ঈশার দিকে তাকিয়ে রিক্সায় উঠতে ইশারা করলো চোখ দিয়ে। ঈশা কোন কথা না বলে উঠে বসলো। ইভান তার পাশে বসে পিছনে ঘুরে বলল
–তোরা আয়।

বলেই চলে গেলো। এলোমেলো হাওয়া বইছে শিরশির করে। ঈশার আধ খোলা চুল গুলো হাওয়ায় উড়ছে। ওড়না এক পাশে উড়ে চলে যাচ্ছে। যে কোন সময় চাকায় ঢুকে যেতে পারে। ঈশা খেয়াল করেনি। ইভান ঈশার দিকে একটু ঝুকে গেলো। হঠাৎ এমন হওয়ায় ঈশা অপ্রস্তুত হয়ে ইভানের দিকে তাকাল। ইভান সেদিকে না তাকিয়েই ওড়নাটা ধরে কোলে তুলে দিলো। ইটের টুকরোর উপরে রিক্সার চাকা উঠতেই ঈশার দিকে হেলে গেলো। ঈশা ভয় পেয়ে ইভানের হাত চেপে ধরল। ইভান আর এক হাতে ঈশাকে ধরল। তাকে ধরে নিয়েই নিজে সোজা হয়ে বসলো। রিক্সা ওয়ালা মামাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আসতে চালাও মামা।

রিক্সার গতি কমে গেলো। সাথে ঈশার হাত আলগা হল। ছেড়ে দিলো ইভানের ধরে থাকা হাত। কোলে রাখা ওড়নাটা চেপে ধরল। ইভানের হাত আলগা হল না। সে আগের মতো করেই ধরে রাখল। সারা রাস্তা কেউ কোন কথা বলল না। মান অভিমানের মাঝেই শেষ হয়ে গেলো পথ। চলে এলো গন্তব্য। রিক্সা থামতেই ইভান ঈশাকে ছেড়ে দিলো। ঈশা নেমে গেলো। পর পর সব রিক্সা এসে থামল। ঈশা ইলুর কাছে এসে দাঁড়ালো। ইভানের বান্ধবীরাও এসে পড়েছে। দুইজনই ইভানের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। একজন বলল
–কিরে কতক্ষন থেকে ওয়েট করছি। এতো দেরি করলি যে?

ইভান কিছু বলার আগেই আর একজন বলে উঠল
–এখন আর ও কি আগের মতো সময়ে আসতে পারে? এখন তো অনেক কিছু মেইনটেইন করতে হয়। বিবাহিত বলে কথা।

বলেই দুজন হাসতে লাগল। হাসি থামিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে বলল
–তোর বউ কই?

ইভান ঈশার দিকে তাকাতেই দুজনি সেদিকে এগিয়ে গেলো। একটু হেসে বলল
–তুমি ঈশা রাইট?

ঈশা হেসে মাথা নাড়াল। তাদের মধ্যে একজন বলল
–তোমার বর কিন্তু বিয়ের আগে আমার ক্রাশ ছিল।

কথাটা শুনেই ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু কিছু বলল না। অপরজন বলল
–এখন এসব ভুলে যা। তোর ক্রাশ কিন্তু এখন বিবাহিত। এসব বলে ওদের সংসারে আগুন জালানর কোন মানেই হয়না।

ইভান পিছন থেকে বলল
–আমার বউ সেরকম না। অনেক ব্রড মাইন্ডের। আমি মেয়েদের নিয়ে ঘুরাফেরা করলেও কিছুই ভাববে না।

ইভানের কথা শেষ হতেই ঈশা তার দিকে তাকাল। ভীষণ অভিমান হল তার। চোখ ছলছল করে উঠল। ইভান বুঝতে পেরেও সেদিকে পাত্তা দিলো না। সামনে এগিয়ে গেলো। এবার লিফটে উঠার পালা। ঈশা সবার পিছনে দাড়িয়ে আছে। ইভান মেয়ে দুইটার সাথে লিফটের দরজার সামনে। ঈশা ভাবছে আগের বারের মতো ইভান তার ধরবে না। তাহলে উঠবে কিভাবে। এগিয়ে গিয়ে ইলুর পাশে দাঁড়ালো। লিফট এসে থামতেই ঈশার অসস্তি হল। ইলুর হাত চেপে ধরার আগেই ইভান বলল
–সবার এক সাথে লিফটে জায়গা হবে না। তোরা যা আমরা পরে আসছি।

সবাই এক এক করে লিফটে উঠে গেলো। শুধু ঈশা আর ইভান থেকে গেলো। লিফট চলে যেতেই ঈশা দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। চোখ বন্ধ করে নিলো। এখনও তার শারীরিক দুর্বলতাটা কেটে উঠেনি। একটু আগের ভয়ে মাথা ঘুরে উঠেছিল। জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিলো। নিজেকে শান্ত করে নিয়ে চোখ খুলে দেখল ইভান লিফটের দরজার সামনে দাড়িয়ে ভ্রু কুচকে ঠোট কামড়ে নিজের চুল ঠিক করছে হাত দিয়ে। ঈশা তাকিয়ে আছে তার দিকে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ছেলে মানুষ কি এতো সুন্দর হতে পারে? পারে তো! নাহলে তার সামনে দাড়িয়ে থাকা এই মানুষটাকে দেখে সে বারবার এভাবে মুগ্ধ হতোনা। তার সৌন্দর্য দেখে লজ্জার শেষ সীমাটুকু অতিক্রম করে তাকিয়ে থাকত না। ঈশার ভাবনার মাঝেই টুং আওয়াজ করে লিফট নেমে এলো। তার ঘোর কেটে গেলো। একটু নড়েচড়ে ইভানের পাশে এসে দাঁড়ালো। লিফটের দরজা খুলতেই ইভান ভিতরে ঢুকে গেলো। ঈশা দাড়িয়ে থাকল। ঢোক গিলে চোখ তুলে তাকাতেই দেখল ইভান অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এক হাত ঈশার দিকে বাড়িয়ে দিতেই সে হাত ধরে ফেলল। ঈশা ভিতরে ঢুকতেই ইভান হাত ছেড়ে দিলো। ঈশার হার্ট বিট বেড়ে গেলো। জোরে জোরে শ্বাস নিতেই দুর্বলতার কারনে মাথা ঘুরে গেলো। লিফটের দরজা বন্ধ হতেই খেয়াল করলো নিজের কোমরে হাতের স্পর্শ। কিছু বুঝে উঠার আগেই ইভান তাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। ইভানের চোখের দিকে তাকাতেই ঈশার পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠল। ইভানের হাত আরও গভির ভাবে কোমরে স্পর্শ করলো। ঈশা ঠোট কামড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ইভান আরও কাছে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো ঈশাকে। ঈশা লিফটের কথা ভুলেই গেলো। সে এখন চরম অসস্তির মাঝে ডুবে আছে। ইভান ঈশার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে মুগ্ধ চোখে। আবারো টুং আওয়াজ হতেই লিফট থেমে গেলো। ঈশা চোখ খুলে ফেলল। দরজা খোলার আগেই ইভান তাকে ছেড়ে দিলো। দরজা খুলতেই দেখল সবাই সামনে দাড়িয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ঈশা লিফট থেকে নেমে শুকনো ঢোক গিলে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলো। এতক্ষন যা হল সবটা ঈশার মাথার উপর দিয়ে গেলো। তার অবস্থা দেখে যে কেউ ভাববে এতক্ষন দম বন্ধ হয়ে ছিল। গলায় জমে থাকা ঘাম ওড়নার মাথা দিয়ে মুছে ফেলল। ইরিনা এগিয়ে এসে বলল
—কি রে ঈশা তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?

ঈশা মাথা নাড়িয়ে না বলল। ইভান পাশে দাড়িয়ে বলল
–শ্বাস রুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মাত্র ছাড়া পেল তো। ঘোর কাটতে একটু সময় লাগবে।

ইফতি এগিয়ে এসে ভ্রু কুচকে বলল
–মানে?

ইভান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঈশা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল
–আমার লিফটে ফোবিয়া আছে তুই জানিস না?

ইফতি মাথা নাড়িয়ে বলল
–ওহ! হ্যা। জানতাম। ভুলে গেছিলাম।

ইভান ঠোট টিপে হাসল। ঈশা চোখ নামিয়ে নিলো। তারা রেস্টুরেন্টের ভিতরে ঢুকল। নিজেদের মতো পাশা পাশি দুইটা টেবিলে বসে পড়ল।

———-
পরিষ্কার আকাশে এক ফালি চাঁদ। তারা গুলো জ্বলজ্বল করছে। ঈশা মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ রাত হওয়ায় রাস্তায় তেমন ভিড় নেই। রিক্সা চলছে প্রচণ্ড গতিতে। মাঝে মাঝে টুং টাং আওয়াজ কানে আসছে। ইভান ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিল এতক্ষন। পাশ ফিরতেই ঈশাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেও তাকাল। বেশ ভালো লাগছে। কি মনে করে হঠাৎ পিছনে ঘুরে দেখল। ইলু আর ইফতি এক রিক্সায়। তারা কি একটা কথা নিয়ে বেশ গম্ভির ভাবে আলোচনা করছে। যেন এই মুহূর্তে এটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইভান একটু গলা তুলে বলল
–ঐ ইলু। নতুন ব্রিজের ঐ দিকটায় ঘুরতে যাবি?
ইভানের কথা কানে আসতেই ঈশার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। মাথা নামিয়ে ইভানের দিকে ঘুরে তাকাল। সে ইলুর দিকে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছে। আর ইলু এমন ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে যেন ভুত দেখছে। ঈশা সাথে সাথেই মাথা বেকিয়ে ইলুর দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিতেই ইলু হেসে ফেলল। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ইভান সামনে ঘুরে দেখল ঈশা পিছনে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পেরে মুচকি হাসল। ঈশা সামনে ঘুরে ভদ্র মেয়ের মতো ঠিক হয়ে বসলো। দুজনের ঠোটের কোনেই চাপা হাসি। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ঈশা হঠাৎ করেই পায়েলটা সামনে ধরল। ইভান সেটার দিকে একবার তাকাতেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো এই ভেবে যে ঈশা পায়েলটা পরেনি। মুখ ফিরিয়ে নিলো আর একদিকে। ঈশা ইভানের মুখের দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলল
–নিজে হাতে পরিয়ে দিলে কি খুব ক্ষতি হতো?

ইভান কোন কথা বলল না। ঈশার হাত থেকে পায়েলটা ছিনিয়ে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিলো। আবার অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ঈশার চোখে পানি টলমল করে উঠল। সে কি আবারো না বুঝে ইভান কে কষ্ট দিয়ে ফেলল?

চলবে……

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ