শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-১৫(শেষ পর্ব)

1
1865

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১৫ এবং শেষ

সময় বয়ে চলে আপন ধারায়।কারো জন্য কেন?একটুক্ষণের জন্যও থামার অনুমতি নেই তার।সে গড়িয়ে যাবে।একটা দিন,একটা সপ্তাহ,একটা মাস,একটা বছর ঘুরে ঘুরে শেষ করে নতুন দিন বয়ে আনবে।
কুহুর জীবন থেকেও চলে গেছে একটা বছর।এই একটা বছর তার কাছে ১০ যুগ মনে হয়েছিল।সেইদিনের পর থেকে নাওয়া খাওয়া একদম ছেড়েই দিয়েছিল কুহু।তার আদ্র যে আর ফিরে আসে নি।কুহু অনেকটা ভেঙে পড়েছে।সে সত্যিই আদ্রকে শুরু থেকে আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছিল।কিন্তু সে বুঝে নি।আর আজ?আজ সে বুঝতে পারছে সেই শীতল অনুভূতি গুলো।কিন্তু বড্ড দেরি হয়ে গেছে।আদ্র যে সেসব শুনার জন্য আর নেই।
এই কয়দিনের মধ্যে ইহান আর ইকরার বিয়ে হয়ে গেছে।সবাই ঠিক আছে কিন্তু ঠিক নেই কুহু।আদ্র কুহুকে উলটপালট করে দিয়ে চলে গেছে।

গোধূলির পড়ন্ত বিকেলে নদীর পাড়ে হাতে মুখ ভর করে বসে আছে কুহু।শূন্য দৃষ্টিতে নদীর পানিতে তাকিয়ে আছে।গোধূলির আলোতে চিকচিক করছে মুক্তোর মতো পানিগুলো।আজ ঘরে তোরজোর চলছে।রুবিনার ভাই আসবে।যার সাথে ছোট থেকে কুহুর বিয়ে ঠিক।কুহু ব্যাপারটা শুনার পর আর নিজের মধ্যে নেই।সে আদ্র ছাড়া আর কাউকেই আপন করে নিতে পারবেনা।কখনোই না।কুহু ভাবছে এক বছর আগের কথা।এটা সেই দিন যেদিন আদ্র চলে গেছিল কুহুকে ফেলে।এই কয়দিনে হাসতে ভুলে গেছে কুহু।তার বাবা-মা ব্যাপারটা প্রথমে সন্দেহ করলেও পরে তাসনির বুঝানোয় গুরুত্ব দেয় নি।

“কেন চলে গেলেন আদ্র?কেন আমায় একা করে চলে গেছেন আপনি?আপনি নেই বলে অন্য কেউ আমায় নিজের করে নিচ্ছে।প্লিজ এভাবে অন্য কারো হতে দিবেন না আমায়।প্লিজ আদ্র!ফিরে আসুন।আমি অন্য কারো হতে চাই না।আমি আপনার হতে চাই আদ্র।আমি আপনার কুহুতান হতে চাই।আমি আদ্রের কুহুতান হতে চাই।”

আপন মনে বিড়বিড় করছে কুহু।তাসনি আর রুবিনা এসে তার পাশে বসল।রুবিনা বলল,

” কিরে!কি করছিস?আমরা কাজ করছি আর তুই এখানে বসে আছিস?”

কুহু সামনে দৃষ্টি রেখে বলল,

” এমনি বসে আছি।ভালো লাগছে না।”

” ১ বছর ধরে শুনে আসছি কথা-টা।কি হয়েছে টা কি তোর?”

” কিছু নাহ্!”

” আপু!আজ রুবিনা আপুর ভাইয়া আসবে।মানে আমাদের সবচেয়ে বড় ভাই।”

” তা-তো জানি।”

” উফ রে!তুই আমার ভাবী হবি?আমার বিলিভ’ই হচ্ছে না রে।হাহা!”

” উফ!চুপ করো আপু।যাকে চিনি না তাকে আমি বিয়ে করতে পারব না।”

” আরে বিয়ে কি এখন হয়ে যাচ্ছে নাকি?আস্তে আস্তে পরিচিত হবি।তারপর হবে প্রেম।”

” আপু!স্টপ প্লিজ।আমি কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না।”

” কেন?আজও ইশানকে ভালোবাসিস নাকি?”

” নাহ্!”

” তাহলে?”

” উফ রুবি আপু!কুহু আপুকে একটি শান্তি দাও তো।আপু বিয়ের জন্য প্রস্তুত না।আগে তোমার বিয়ে হবে তারপর।”

” এহ্!আমি করবো না।”

” নোপ!এট ফার্স্ট ইউ!হিহি!”

” এইরে!আম্মু কুহুকে ডাকতে পাঠিয়েছে আর আমি গপ্পো জুড়ে দিয়েছি।এই!চল চল!”

” কেন?”

” আরে!ভাইয়াকে আনতে যেতে হবে তো।”

” আমি যাবো না।”

” কেন?”

” আমার ইচ্ছা।বড় আম্মুকে বলো আমি যাব না আমার ইচ্ছে হচ্ছে না।”

” হুম আমারো যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।” তাসনি বলল।

” আরে তোরা একটাও যাবি না তো আমি কি সেখানে ড্যান্স পারফরম্যান্স করতে যাব নাকি?”

” শুভ আর নিরবকে নিয়ে যাও।”

” ধ্যাত!”

রুবিনা বক বক কর‍তে করতে চলে গেল।তাসনি কুহুকে বলল,

” কি করবে এখন?”

” জানি না।আমি উনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”

” হুম!পালিয়ে যাও আপু।”

” কি বলছিস এসব?রহমান বংশের মেয়ে এসব করতে পারে না তাসনি।”

” তাহলে কি করবে?আদ্র ভাইয়া আসবে না আর।নিজ দোষে আজ কপাল চাপড়াচ্ছো।এসবের জন্য দায়ী তুমি আপু।এখন এর মাশুলও তুমিই দিবে।বিয়ে করে নাও শিশির ভাইয়াকে।”

” উনার নাম শিশির?”

” হুম!শিশির রহমান।”

কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

” জানি না এর মাশুল আমি কিভাবে দেব।আদ্র কি আর ফিরে আসবে না?”

” হয়তো বা হয়তো না।”

” চল!”

দুজন মিলে হাটা ধরল।বাসায় পৌছাতেই দেখল হুরাদ্রি জাবিন দাঁড়িয়ে আছেন।তিনি বললেন,

” কিরে কুহু?তুই যাচ্ছিস না কেন?”

” ইচ্ছে করছে না বড় আম্মু।”

” কেন?”

” ভালো লাগছে না।আমি যেতে চাই না।”

” তাসনি তুই যাচ্ছিস না কেন?”

” আমারো ভালো লাগছে না বড় আম্মু।শরীরটা ভালো লাগছে না।”

” ওহ্!আচ্ছা ঠিক আছে।তোর মেঝ চাচা,ছোট চাচা,রুবিনা,শুভ আর নিরব যাবে।”

” ওহ্!”

কুহু রুমে ঢুকে গেল।তারপর মোবাইলটা হাতে নিল।সেইদিনে তুলা আদ্রের হাস্যজ্বল ছবিটা বের করল।সেই ছবি যেটা তাসনি তুলে দিয়েছিল।ক্রিকেট ব্যাট হাতে ইহানের সাথে কথা বলা অবস্থায়।কুহুর চোখ বেয়ে অশ্রুপাত হয়।কোথায় হারিয়ে গেছে সেই দিন গুলো যখন তারা ঝগড়া করতো।খেলতো হাসতো।
_______________

প্রায় ২ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে।তারা তাকে রিসিভ করেছে।এখন রওনা হয়েছে।কুহুর ভেতরটা ধুক পুক করছে।সে জানে না এখন তাকে কি ফেস করতে হবে।সে শুধু এটা জানে সে শিশিরকে কখনোই বিয়ে করতে পারবে না।যদিও করে নেয় তবু তাকে আপন করে নিতে পারবে না।কখনোই না।কুহুর খুব কান্না পাচ্ছে।গলা আটকে আসছে।সে ওই লোকটাকে দেখতে চায় না।যার জন্য আদ্রকে হারাতে হবে তাকে দে কিছুতেই দেখতে চায় না।লোকটা কেমন হবে?ভালো নাকি খারাপ?লোকটা কি তার উপর জোর জবরদস্তি করবে?তার উপর অধিকার খাটাবে?
এসব ভাবনা তাকে তাড়া করে বেরাচ্ছে।তাসনি এসে তার পাশে বসল।

” কি ভাবছো?”

কুহু কান্নায় ভেঙে পড়ল।কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,

” আ..আমি আর পারছি না তাসনি।আমি ওই লোকটার নাম আর শুনতে পারছিনা।পারব না আমি ওই লোকটাকে বিয়ে করতে।আমি আদ্রকে ছাড়া…এই জায়গা কাউকে দিতে পারব না।”

” কি করবে বলো?আদ্র ভাইয়া হয়তো আর আসবে না।”

” হ্যাঁ জানি আসবে না।কারণ তাকে কষ্ট দেওয়ার মতো কথাটাই তো বলেছি।”

” মানে?কি বলেছো তুমি?”

” আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।”

” হোয়াট!আপু!তুমি?ছিহ্!কি করলে এটা?এর কারণেই চলে গেছে আদ্র ভাইয়া।তিনি জানেন তুমি আর তার হবে না।তুমি অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছো তাকে।এবার মাশুল দাও এর।”

কুহু শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বাহিরে।তাসনি তার দিকে চেয়ে থাকে।তার নিজের’ই খারাপ লাগছে কুহু আর আদ্রের এই অবস্থায়।কলিং বেল বাজল।তাসনি আর কুহু তা শুনতে পেল।তাসনি কুহুর দিকে তাকাল।কুহুর বুক ধরফর করছে।তাসনি তার হাত ধরে বলল,

” চলো!”

কুহু করুণ দৃষ্টিতে দেখল তাসনির দিকে।

” চলো আপু!এভাবে বসে বসে শোক পালন করে লাভ নেই।চলো!”

কুহু দাঁড়াল।তাসনি আর কুহু ডাইনিং রুমে এলো।কিন্তু দরজা খুলল না।কলিং বেল বেজেই চলেছে।এদিকে রোদেলা আহমেদ,হুরাদ্রী জাবিন আর আশা ওয়াহিদ ডাইনিং রুমে এলেন।রোদেলা আহমেদ বললেন,

” কি ব্যাপার দরজা খুলছিস না কেন?”

তাসনি আমতা আমতা করে বলল,

” আমরা খুলতেই যাচ্ছিলাম।”

কুহু আর তাসনি এক কোণে দাঁড়িয়ে রইল।হুরাদ্রী জাবিন দরজা খুলে দিলেন।হুড়মুড় করে শুভ আর নিরব ঢুকল হাতে আইসক্রিম নিয়ে।তারপর রুবিনা ঢুকল।কুহু কাঁপছে।
পরে ছোট চাচা ঢুকলেন লাগেজ হাতে।তারপর মেঝ চাচা মানে আহান রহমান শিশিরের সাথে কথা বলতে বলতে ঢুকলেন।তারপর ব্যাগপ্যাক হাতে সেই কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটি ঢুকল।যাকে দেখে থমকে গেল কুহু আর তাসনি।হা হয়ে গেল দুজন’ই।দুজন অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে আছে ব্যাক্তিটার পানে।কেন যেন মনে হচ্ছে চোখটা তাদের ধোঁকা দিচ্ছে।অস্ফুট স্বরে কুহু বলে উঠল,

” আদ্র!”

হ্যাঁ!ব্যাক্তিটা আদ্র’ই ছিল।আহান রহমানের সাথে কথা বলতে বলতে ঢুকছিল।অবশ্য সে বলছে না।আহান রহমান এটা সেটা জিজ্ঞাস করছেন আর সে উত্তর দিচ্ছে।কিন্তু!আদ্র এখানে কেন?শিশির কোথায়?
তাসনি হা করে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

” এ,,এটা?এক্টর ভাইয়া?”

কুহু কেঁপে উঠে আদ্রের মুখশ্রী দেখে।আগের মত’ই তার চেহারার বেহাল অবস্থা।শুকিয়ে গেছে বেশ।আদ্র ঢুকতেই হুরাদ্রী জাবিন গিয়ে আদ্রকে জড়িয়ে ধরল,

” বাবা!কেমন আছিস?জানিস কত্ত মিস করেছি তোকে?”

আদ্র হেসে বলল,

” হুম জানি তো!আম্মু আমায় অনেক মিস করেছে।”

” জানিস’ই তাহলে আসিস নি কেন এতদিন?ফুফুর বাড়িটা এত মধুর হয়ে গেল?”

” আরে আম্মু!এসে তো গেছি তাই না?তবে?তোমার অসুখের কি হলো?মেডিকেয়ার হয়েছে?”

” আরে আমার ওষুধ হলি তুই।”

” তার মানে মিথ্যা বলেছো?”

” হাহা!আচ্ছা আয় ফ্রেশ হয়ে কিছু খা।রেস্ট নে।”

আদ্র রোদেলা আহমেদ আর আশা ওয়াহিদ এর সাথে কুশল বিনিনয় করে ভালোমন্দ জিজ্ঞাস করল।কুহু আর তাসনি এখনো হা করে তাকিয়ে আছে।তাসনি বলল,

” আমায় একটা চিমটি দাও তো।”

কুহু হাবা হয়ে তার মাথায় চাপড় দিল।তাসনি বলল,

” ইট’স নট এ ড্রিম।ওহ্ মাই গশ!”

হুরাদ্রী জাবিন,আশা ওয়াহিদ আর রোদেলা আহমেদ কিচেনে চলে যান আদ্রকে রুমে যেতে বলে।আর আহান রহমান আর জাওয়াত রহমান ফ্রেশ হতে গেলেন।এবার আদ্রের চোখ পড়ল কোণে দাঁড়িয়ে থাকা কুহু আর তাসনির দিকে।আদ্রর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল যেমনটি হয়েছিল তাসনি আর কুহুর ক্ষেত্রে।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল কুহুর দিকে।তার ভেতরটা কেঁপে উঠল কুহুর চেহারা দেখে।কি হাল হয়েছে মেয়েটার?চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।চেহারা শুকিয়ে গেছে।অধর দুটোও শুকিয়ে গেছে।এই মুহুর্তে দুজন দুজনকে দেখে কি রিয়েকশন করবে বুঝতে পারছেনা।তাসনি চিল্লিয়ে ‘এক্টর ভাইয়া’ বলে দৌড়ে আদ্রকে জড়িয়ে ধরল।আদ্র হতভম্ব হয়ে সেও তাসনিকে জড়িয়ে ধরে।

” ভাইয়া!কোথায় ছিলেন আপনি?জানেন আপনার সাথে কত্ত যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি?নাহ্ আপনি জানবেন কি করে?আপনি তো আমাদের ছেড়ে ভালোই ছিলেন ওই পাড়ে।”

আদ্র কিছুক্ষণ তাসনির দিকে তাকিয়ে রইল।ক্ষীণ হাসল।তারপর বলল,

” ওরে বাবারে!বোনটা বুঝি বেশ রাগ করেছে?”

” হুম খুব।”

” শেষে তুইই আমার চাচাতো বোন?আমার তো বিলিভ’ই হচ্ছে না।”

” আর আপনি আমাদের শিশির ভাই?কিন্তু আপনার নাম তো আদ্র তাই না?”

” আগে আমাকে আপনি বলা বন্ধ কর।হুম আমার নাম শিশিরও আদ্রও।”

” মানে?”

” শিশির রহমান আদ্র আমার নাম।”

” ওয়াও!হোয়াট এ কো-ইন্সিডেন্ট?”

” হুম।”

তারপর আদ্র কুহুর দিকে তাকাল।কুহু এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে হতভম্ব হয়ে।সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না আদ্র ফিরে এসেছে।

” ঠিক আছে।তুই যা।আমি ফ্রেশ হয়ে নিই।”

” হুম!”

আদ্র কুহুর দিকে একবার তাকিয়ে ব্যাগ নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।কুহু ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার দিকে।মনে মনে বলল,

” এখনো অভিমান জমে আছে আমার উপর?ভাঙবে না এই পাহাড় সমান অভিমান টা?”

তাসনি কুহুর দিকে তাকাল।তার কাছে গিয়ে বলল,

” এটা কি ছিল আপু?শেষ আদ্র ভাইয়াই আমাদের চাচাতো ভাই?আর..আদ্র ভাইয়া ফিরে এসেছে?”

” হুম ফিরে এসেছে।তবে নতুন আদ্র।আগের আদ্রের সাথে এই আদ্রের অনেক তফাৎ।”

” হয়তো ভাইয়া তোমাকে ইগনোর করছে এই কারণে যে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো।এটা জেনে।”

” হুম জানি।”

” মানিয়ে নাও।”

কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলে।তারপর ধিমিধিমি পায়ে সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেল।বিছানায় শুয়ে পড়ল।চোখ বেয়ে অনর্গল অশ্রুপাত শুরু হলো।সে কি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে?
________________

প্রায় ৭ টা দিন কেটে গেছে।আদ্র কুহু কেউই একে অপরের সাথে টু শব্দ টি করে কথা বলেনি।কুহু খুব কষ্ট পায়।আদ্র কি এখনো তার উপর অভিমান করে আছে?
এদিকে আদ্রর ভাবনা টা-ও প্রায় সেইম।কুহু কি আসলেই অন্য কাউকে ভালোবাসে?তবে চেহারার এই হাল কেন?আর তার সাথে কি একটু কথা বলা যায় না?
_________________

খানিকটা চোখ লেগে এসেছিল কুহুর।হঠাৎ মাথায় কারো কোমল স্পর্শ পেল।চক্ষুযুগল খুলে দেখল আশা ওয়াহিদ তার মাথার কাছে বসে আছে।

” কি হয়েছে আম্মু?এই অবেলায় শুয়ে আছো কেন?”

কুহু হেসে বলল,

” এমনি আম্মু ভালো লাগছিল না।”

” আসো ডিনার করবে।”

কুহু লাফিয়ে উঠল।

” ডিনার!”

” হুম।”

” কিন্তু…আমি তো সন্ধ্যায় শুয়েছিলাম।এত বেলা হয়ে গেল?আমায় ডাকলে না?”

” আমি জানতাম নাকি?”

” আচ্ছা চলো।”

আশা ওয়াহিদ বেরিয়ে গেলেন।কুহু মুখ ধুয়ে নিল।ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে বের হলো।ডাইনিং রুমে।যেতেই দেখল সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে।সাথে আদ্রও।কুহু তার দিকে এক নজর ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার সোজাসুজি একটা চেয়ারে বসে পড়ল।

” কি ব্যাপার আম্মু?এই অসময়ে ঘুমাচ্ছিলে কেন?”

কুহু একগাল হেসে বলল,

” ও এমনি বড় আব্বু।মাথা ব্যাথা করছিল তাই।”

সবাই খাওয়া শুরু করল।আদ্র এক নজর কুহুর দিকে তাকাল।কুহু নিচের দিকে তাকিয়ে প্লেটে আঁকিবুঁকি করছে।তাসনি এক নজর তাদের দিকে তাকাল।মন টা বিষন্নতায় ভরে গেল তার।এই দুটো কখনোই কি এক হবে না?
কুহু কয়েক লোকমা খেয়ে উঠে পড়ল।হুরাদ্রি জাবিন বললেন,

” আরে আরে কুহু কি করছিস?”

” কি করছি মানে?”

” না খেয়ে উঠে যাচ্ছিস কেন?”

” খেয়েছি তো!”

” আমার মাথা খেয়েছিস।এসব কি?সব তো রয়ে গেছে।”

” খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না বড় আম্মু।”

” কেন?”

কুহু একবার আদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,

” ভালো লাগছে না।”

তারপর দ্রুত সেই জায়গা প্রস্থান করল।আদ্র কুহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

খাওয়া দাওয়া শেষে আদ্র ছাদে গেল।কিন্তু ছাদে গিয়েই দেখল কুহু আগে থেকেই ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।আদ্র তার দিকে একবার তাকিয়ে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়াল।কুহু এখনো জানেনা যে আদ্র ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে।মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছে।রমণীর খোলা চুলগুলো উড়ছে।আদ্র নিজেকে সামলাতে পারছে না।গিয়ে কুহুর চুলগুলো বেঁধে দিল।কুহু চমকে গেল।তাড়াতাড়ি পেছন ফিরল।আদ্রকে দেখে একটু না অনেক বেশিই অবাক হলো।আদ্র কিছু না বলে আবারো অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়াল।কুহু কিছুই বুঝল না।কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আদ্রের দিকে।আদ্র মোবাইল স্ক্রল করতে ব্যস্ত।কুহু সামনে তাকাল।তারপর সামনে তাকিয়েই বলল,

” চুল বেঁধে দিলেন কেন?”

আদ্র কিছুক্ষণ চুপ থেকে মোবাইল চোখ রেখেই বলল,

” আশেপাশের বিল্ডিং এ অনেক ছেলেই আছে।তাদের চুল দেখানো টা রহমানদের মানায় না।”

কুহু কিছু বলল না।সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে।নিরবতায় কেটে যায় কিয়ৎক্ষণ।আদ্র চলে যেতে নিলেই কুহু তার দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে বলে উঠল,

” দাঁড়ান!”

আদ্র থমকে দাঁড়াল।কুহুর দিকে ফিরল।কুহু এখনো চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।তারপর আস্তে আস্তে অক্ষি দুটো খুলল।অধর দুটো ভীষণভাবে কাঁপছে।সাথে চোখের পাপড়িগুলোও।আদ্র নেশালো চোখে তাকিয়ে থাকে তার এই মুখটার দিকে।কুহু তার কাছে এলো।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

” কুহুতানকে…ভুলে গেছেন?”

আদ্র থমকে যায়।কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে বলল,

” মনে রাখি বা না রাখি এতে কার’ই বা কি?”

কুহু ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইল।ভাঙা গলায় বলল,

” আ..আমার তো অনেক কিছু!”

আদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকাল।

” কেন?তোমার কি?তোমার তো কিছুই হওয়ার কথা না।”

কুহুর চোখ বেয়ে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।আদ্র তা দেখে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল।তার কুহুর কান্নাটা সহ্য হচ্ছেনা।

” কান্না থামাও।”

কুহু ভাঙা গলায় বলল,

” আ..আমি ক..কোথায় কাঁদছি?”

আদ্র কিছু না বলে চলে গেল।কুহু কান্নায় ভেঙে পড়ল।নিচে বসে পড়ল।আজ খুব কান্না পাচ্ছে।নিজেকে সামলানো টা ভীষণ কষ্টকর তার কাছে।কান্নামিশ্রিত ক্ষীণ স্বরে বলতে লাগল,

” কেন আপনাকে ভুলতে পারছিনা?কেন আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিনা?ইশানের জন্য তো কখনোই আমার এমন লাগে নি।তাহলে আপনার জন্য কেন?কেন বিষাক্ত জীবনটাতে এলেন?কেন আবার চলে গেলেন?ফিরিয়ে দিয়েছি বলে চলে যেতে হবে?ফিরে এসেছেন তা-ও নতুন হয়ে?আসতেন না আর।কেন এলেন এমন নতুন আদ্র হয়ে?আগের ভাদ্র হয়ে আসতে পারলেন না?কেন?যদি না-ও পাই তো ভুলতে চাই আপনাকে।কিন্তু আমি ভুলতে পারছিনা।আমি আপনাকে ভুলতে পারছি না কেন?ইশানকে তো ভুলেই গেছি আপনাকে কেন পারছিনা?”

” কারণ ইশান মোহ ছিল।কুহুতানের আদ্র মোহ নয় ভালোবাসা ছিল।”

আচমকা আদ্রের গলা পেয়ে কুহু কান্না থামিয়ে উপরে তাকাল।আদ্র তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আদ্র কুহুকে টেনে তুলল।পূর্বের ন্যায় ফিঁচেল গলায় বলল,

” মনের ভাবটা প্রকাশ করতে পারলেনা?কেন একটা বছর নিজেও কষ্ট পেলে আমায়ও কষ্ট দিলে বলো?জানো?এই কয়টাদিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি?জানার চেষ্টা করেছো বলো?জানো যখন তুমি বললে তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো তখন আমার কেমন লেগেছিল?নিজের ভেতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছিলো।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যখন এখানে আমার অস্তিত্বই নেই তো আমি এখানে থেকে কি করব?আমি আগের জায়গায় চলে গেছি।আর এর মাঝে আম্মু অনেকবার চলে আসতে বলেছে কিন্ত আমি আসি নি শুধু তোমার জন্য।যে তোমাকে আমি অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারব না।তার উপর আম্মু বলেছে আমার চাচাতো বোনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক।এটা শুনে আমি আর আসবোই না পণ করে নিয়েছিলাম।আমার পক্ষে কুহুতানকে ছাড়া আর কাউকে মেনে নেওয়া সম্ভব না।কিন্তু আম্মু আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে নিয়ে এসেছে।এসেই জানতে পারি সেই কাজিন আর কেউ নয় তুমি।জানো এটস শুনে কত্ত খুশি হয়েছিলাম?কিন্তু খারাপ লেগেছিল তুমি তো অন্য কাউকে ভালোবাসো।কিন্তু সেইদিন তাসনি বলার পর থেকে শুধু তোমার বলার অপেক্ষায় ছিলাম।আমি কথা বলছি না বলে কি তুমিও বলবে না?”

কুহু অশ্রুসিক্ত নয়নে আদ্রের আঁখিদুটির দিকে তাকিয়ে রইল।মাথা নিচু করে কান্না টা লুকানোর অনেক চেষ্টা করল।তবু ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল।আদ্র বলল,

” কান্না থামাও কুহু প্লিজ।”

কিন্তু কুহু কান্না থামায় না।

” কুহু প্লিজ আমি সহ্য করতে পারছিনা।”

কিন্তু সে থামল না।সমান তালে শব্দ করে কেঁদে চলেছে।আদ্র তার বাহু ঝাকিয়ে বলল,

” কুহুতান থামো!”

কুহু কান্না থামিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল।আদ্র মোহনীয় কন্ঠে বলল,

” ভালোবাসি কুহুতান।অনেক ভালোবাসি।কারণ আমার প্রতিটা #শীতল_অনুভবে_তুমি।শুধুই তুমি ছিলে আর থাকবে।”

~সমাপ্ত~

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে