Sunday, October 5, 2025







শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-১৩

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১৩

” এখন আমাদের সামনে আসবে আমাদের হবু বউমা।যে এক বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে আমার ছেলের সাথে।”

ইহানের বাবা ইরান স্পিকার অন করে বললেন।ইকরা অনেক আগেই সবার পেছনে চলে গেছে।ইকরা এবার ঐশিকার দিকে তাকাল।সে হাসিমুখে চেয়ে আছে ইহানদের পানে।ইকরা ঠোঁট চেপে কান্না আটকে রাখল।কিন্তু হঠাৎ তার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো।সাদা কিছু একটা তার চোখে বার বার রিফলেকশন হচ্ছে।ইকরা আস্তে আস্তে আঁখিদ্বয় খুলল।হ্যাঁ!তার উপর লাইট পড়েছে।ইকরা আশেপাশে তাকাল।আশেপাশে কোন দিকেই লাইট নেই।কিন্তু তার উপর রাউন্ড লাইটের আলো পড়ছে।আর সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে।ইকরা কিছুই বুঝল না।সে ইহানের দিকে তাকাল।ইহান,ইহানের বাবা ইরান মাহমুদ এবং তার মা শ্রেয়সী রহমান তার দিকে তাকিয়ে আছেন ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে।ইকরা ভ্রু কুঁচকে তাকায় সবার দিকে।ইরান মাহমুদ বললেন,

” স্টেজে চলে এসো আমার হবু বউমা।”

ইকরা হতভম্ব!তাকে বলছে?সে ঐশিকার দিকে তাকাল।সে-ও হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ইকরা আর ইহানদের দিকে।ইকরা ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।সে কি করবে বুঝতে পারছে না।হঠাৎ ঐশিকা নিজে এসেই তাকে টেনে নিয়ে স্টেজে দাঁড় করিয়ে দিল।ইকরার ঘোর এখনো কাটেনি।ইকরা বার বার নিজেকে বুঝাচ্ছে এটা শুধুই একটা স্বপ্ন।ঘোর কাটলেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।পাশেই ইহান দাঁড়িয়ে ছিল।সে তার কানে ফিসফিস করে বলল,

” এটা স্বপ্ন না পিচ্চি!এটা বাস্তব।”

ইকরা চমকে তার দিকে তাকাল।আসলে তার মনের কথা পড়েছে ব্যাপারটা তা-না।তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে নিজেকে স্বান্তনা দিচ্ছে।তাই ইহান তার পরিস্থিতি বুঝে তাকে কথাটা বলল।তারপর রিং পড়ানোর আগ মুহুর্তেই ইরান সাহেব বলে উঠলেন,

” এভাবে পড়ানো ঠিক হবে না।বেয়াইন সাহেবদের আসতে বলো এখন’ই।”

ইকরা দেখল তার আম্মু এবং আব্বুও উপস্থিত হয়েছে।ইকরা ছানাবড়া চোখে চারপাশটা লক্ষ করতে লাগল।কিছুই বুঝতে পারল না।তার বাবা আর মা তার কাছে এলো।তার মা বললেন,

” হয়েছে এভাবে তাকাস না।আগে আংটি পড়ানো শেষ হোক সব জানতে পারবি।”

তারপর তার কথা অনুযায়ী আংটি পড়ানো শেষ হলো।ইকরার ঘোর এখনো কাটছেই না।রাত প্রায় শেষের দিকে।সবাই ফিরে যাবে।কুহুরাও একটু পর চলে যাবে।তাই সবাই মিলে যাওয়ার আগে একটা আড্ডার আসর জমালো।ইকরার বাবা-মা রাও মুরব্বিরা মিলে ছোটখাটো আসর জমিয়েছে।
ইকরা এখনো কিছুই বুঝতে পারছে না।কুহু বলল,

” কিরে ব্রকেন হার্ট?এভাবে মুরগির মতো বসে আছিস কেন?”

ইকরা এবার মুখ খুলল,

” তোমরা কি কেউ আমায় বলবে এসব কি হচ্ছে?”

ইরা বলল,

” কি হচ্ছে আবার?বিয়ে হচ্ছে!”

সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।ইকরা রেগে গেল।

” আন্সার মি!”

” আমি বলছি পিচ্চি।” ইহান বলতে নিলেই ইকরা থামিয়ে বলল,

” আপনি চুপ থাকুন।একটা কথাও বলবেন না।জাস্ট শাট ইউর মাউথ।”

” ওকে আমি বলছি।” ঐশিকা বলল।

ইকরা ঐশিকার দিকে তাকাল।মেয়েটার মুখে হাসি লেগে আছে।ইকরা কিছুই বুঝল না।ঐশিকা কিছু বলতে নিলেই অহনা বলে উঠল,

” উহু ঐশি আগে আমি বলি।শুনো!ইহান তো তোমাকে সেই প্রথম দিন থেকেও পছন্দ করতো যখন তুমি তার সাথে ঝগড়া করেছিলে।মনে আছে?তোমার প্র‍্যাক্টিকাল খাতা টা নিয়ে ঝগড়া করেছিলে?আর পিচ্চি বলায় বেশ রেগে গিয়েছিলে?তারপর থেকেই তোমাকে ও পছন্দ করতো যা পরে ভালোবাসায় রুপ নেয়।ও তোমাকেই শুধু ক্ষেপাতো।তোমার সাথেই যেচে পড়ে কথা বলতো।কিন্তু তোমাকে কি করে বলবে বুঝতে পারছিল না।যদি তুমি রিজেক্ট করো?তাই একটা প্লেন করলো।তার বিয়ে সত্যি সত্যি ঐশির সাথে ঠিক ছিল।তাদের বাবা-মা’ই ঠিক রেখেছিল কিন্তু এতে তাদের দুজনের’ই মত ছিল না।পরে তোমার অনুভূতি বুঝার জন্য সে ঐশির সাথে সাহায্য চায়।আর সে রাজি হয়।যখন দেখল ঐশির সাথে কথা বলায়,জড়িয়ে ধরায় তোমার খারাপ লাগছে তাতে সে বুঝতে পারল তুমিও তাকে পছন্দ করো।তাই তা আরো প্রমাণ করতে সে বিষয়টা অ্যাঙ্গেজমেন্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়।আর তা তোমার সাথেই হওয়ার কথা ছিল ঐশির সাথে না।কারণ তোমার এই অবস্থা দেখে ধরেই নিয়েছিলাম আমরা যে তুমি ইহানকে ছাড়া ভালো নেই।তাই কুহু,বুশরা আর নাবিলা আন্টিকে জানায় এই ব্যাপারে।আন্টি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে।তারা বিষয়টি বুঝতে পারে আর আমরা সবাই মিলে ইহানের আব্বু আম্মুকে বুঝাই।আর ঐশিও যখন বলে সে এই বিয়েতে রাজি না।তাই তারাও রাজি হয়ে যায়।আর প্লেন মাফিক তোমাকে এখানে কুহু ব্ল্যাকমেইল করে নিয়ে আসে।কি?কেমন দিলাম?”

ইকরা হা করে চেয়ে রইল সবার পানে।ইহান বলল,

” কি?এখন কি স্বীকার করবে?”

ইকরা এবার মুখ ফুলিয়ে সেখান থেকে উঠে চলে এলো।আদ্র বলল,

” এই রে!রেগেছে!যা যা ব্রো!পিচ্চির রাগ ভাঙা।”

ইহান ঢোক গিলল।ইকরার অভিমান সম্পর্কে এই কয়দিনে অনেক ধারণা হয়ে গেছে তার।সে সেখান থেকে উঠে ধীরে সুস্থে এগিয়ে গেল।
নিশি আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,

” কিরে?ইহান রাহিন তো মেরেই দিল।তুই কি সিঙ্গেলই বসে থাকবি?”

রাহিন বলল,

” ওই বেডি ওই!আমি কি মেরেছি হা?”

” বুঝো না চান্দু?আমরা সব জানি।”

” শাট আপ!এখানেও শান্তি নেই?” ফারাবী বলল।

নিশি চোখ মুখ কুঁচকালো।সাথে রাহিনও।নিশি আবারো বলল,

” কি আদ্র?ইহান তো বিয়ে করেই নিয়েছে।তুই কবে করবি?আর আমাদের একটু খাওয়ার সুযোগ করে দিবি?”

আদ্র হাসল।বলল,

” ভাবি নি এখনো।তবে মনের রানী পেয়ে গেলে আর দেরি নেই।হয়তো বা পেয়েও গেছি।”

শেষ বাক্য ধ্বনিত হওয়ার সময় তার আঁখিদ্বয় কুহুর দিকে স্থির ছিল।কুহু আনমনে কিছু ভাবছিল তাই ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি।বাকিরাও বুঝেনি।ইরা বলল,

” ওয়াও!কবে পাবি?”

আদ্র আবার বলল,

” বললাম না?হয়তো পেয়ে গেছি।”

” কে সে?” সবাই একসাথে বলে বসল।

” পরে বলব!”

” যাহ্!” সবাই বিরক্ত হলো।

” কাল/পরশু নাহয় জানাবো।”

সবাই শান্তি পেল।এসব ব্যাপারে ইন্টারেস্ট থাকাটা তাদের কাছে অত্যন্ত স্বাভাবিক।

ইকরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মুখ ফুলিয়ে।ইহান তার পাশে এসে দাঁড়াল।

” এখনো রাগ করে থাকবে?”

ইকরা বলল,

” আপনি এখান থেকে যান।”

” হুম যাবো।তবে তোমাকে নিয়েই!”

” নাহ্!আমি যাব না।আমার চিন্তা কারো নেই।যান বলছি।”

” আচ্ছা?”

ইহানের কার্যকলাপে সত্যিই ঘাবড়ে গেল ইকরা।কারণ তাকে কোলে তুলে নিয়েছে সে।ইকরা বলল,

” আ…আরে!কি করছেন এসব?নামান আমাকে।নামান বলছি।প্লিজ নামান।”

” পিচ্চি!আমাকে রাগিও না।আমি কিন্তু রেগে গেলে খুব খারাপ।”

ইকরা ভাবল রেগে গেলে কি এমন হবে?

” রাগুন আপনি তাতে আমার কি?নামান আমাকে!”

এইবার ইহানের কাজে ইকরা হতভম্ব হয়ে গেল।মুখের ভাষা হারিয়ে গেল।কারণ?ইহান ইকরার অধর দুটি রাঙিয়ে দিল নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা।

একটু পর মুক্ত করে দিল নিজের বাধন থেকে।ইকরা বলল,

” এ….এ..টা ক..কি কর…লেন আপ..নি?”

” বলেছিলাম না আমায় রাগিও না।ফল স্বরুপ এটাই তোমার শাস্তি।”

ইকরা হা করে তাকিয়ে রইল।তারপর ইহান তাকে কোল থেকে নামিয়ে বলল,

” চলো নইলে আমার প্রেস্টিজ ঢিলা হয়ে যাবে।”

ইকরা কিছু না বলে ইহানের সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে লাগল।তারপর তাদের মাঝে বসল।আদ্র বলল,

” কিরে?রাগ ভাঙিয়েছিস?”

ইহান বলল,
” না ভাঙালে এখানে কি করে?”

ইকরা কিছু না বলে ইহানের দিকে আড়চোখে তাকাল।কিছু বলল না।এভাবে আড্ডা আসর শেষ করে সবাই রওনা দিল।ইকরা তার বাবা মার সাথেই চলে যায়।ইদ্রান,আবিদরা নিজেদের বাইকে করে চলে যায়।এদিকে ফারাবী,রাহিন আর নিশিদের বাসা একসাথে হওয়ায় তারা একসাথেই চলে যায়।আর অহনা আর ইরার বাসা ইহানদের দুই ঘর পরেই।বাকি রইল আদ্র আর কুহু।কুহুর ইকরাদের সাথে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আঙ্কেল আন্টি ব্যাপারটা জানতো না তাই তাকে না জানিয়েই বেরিয়ে পড়ে।এবার তাকে একাই যেতে হবে।এদিকে আদ্ররও ইকরাদের সাথেই যাওয়ার কথা ছিল।তার হোস্টেল সেখানেই।

” একা যাবে?”

” হুম তা-তো মনে হচ্ছে।”

” তো আমার সাথেই না-হয় চলো।একা যাওয়া টা ঠিক হবে না।”

” আচ্ছা!চলুন।”

দুজন পথ চলতে লাগল।আশেপাশে কোন মানুষ নেই।দোকানিরা দোকান বন্ধ করে ফিরে গেছে আপন নীড়ে।পথ পথ চলতে চলতে কুহু বলল,

” আচ্ছা আপনার ফ্রেন্ড বিয়ে করে নিচ্ছে।আপনি বসে আছেন কেন?”

” মনের মতো কাউকে পাই নি।তাই!”

” আচ্ছা?কবে পাবেন?”

” হয়তো পেয়ে গেছি।”

” তো বলে দিন।নয়তো হারিয়ে যেতে পারে।”

” বলতাম তবে ভয় করছে যদি সে ভুল বুঝে?”

” বলেই দেখুন।”

” হুম!তো!তুমি?”

” জানিনা।আর কাউকে আপন করতে পারি কি-না।”

” করে নাও।ইশানের জন্য তো তুমি বসে থাকবে না।ইশান বিন্দাস আছে তার বউকে নিয়ে।তুমিও থাকো।”

কুহু হাসল।বরাবরই দুই গালেই টোল পড়েছে।আদ্র অপলক মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে।কুহু বলল,

” হ্যাঁ আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি ওকে কখনো ভালোবাসিই নি।”

” কেন?”

” কারণ..এখন আমার কষ্ট হয় না ব্যাপার গুলো ভেবে।”

” তাহলে তো ভালোই।ধোকা মনে রাখার কি দরকার।”

” হুম!”

কথার মাঝেই ইকরাদের বাসার সামনে চলে এলো তারা।আদ্র বলল,

” তো তোমাকে পৌছে দিয়ে আসি চলো!”

” না না আমি যেতে পারব।”

” বিশ্বাস কি করে করব?যুগ টা খুব খারাপ।এভাবে তোমায় একা ছাড়তে পারিনা।চলো।”

আদ্র কুহুর সাথে হাটতে লাগল।কুহু অর্ধেক পথ এসেই বলল,

” এই যে এসে গেছি।আপনি ফিরে যান।”

” সত্যি তো?”

” হুম সামনেই তো।”

” আচ্ছা!কাল দেখা হবে।বায়!”

” বায়!”

আদ্র ফিরে গেল।যাওয়ার পথে কুহুর দিকে ঘাড় ফিরিয়ে দেখল।এদিকে কুহুও কি মনে করে আদ্রর দিকে তাকালো।ব্যস দুই আঁখি এক জায়গায় স্থির হলো কিছুক্ষণের জন্য।আদ্র হেসে হাত নাড়াল।কুহুও হাত নাড়িয়ে বিদায় নিয়ে ঝট করে সামনে ফিরে হাটতে লাগল।আদ্র হেসে ফিরে গেল।
_________________

” মেয়েটা তো মনে হয় আর আসবেই না।নাহ্!আমাকেই ওকে আনতে হবে।” ইশান মনে মনে বলল।

রুইয়া এখনো ফেরে নি।কাল যে গেছে আর আসেনি।ইশান জানে ও কোথায় গেছে।তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল রুইয়ার বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে।বাসায় তার বাবা মা নেই।তাই তাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে।

প্রায় আধা ঘন্টা শেষ।ইশান দরজায় টোকা দিল।কিন্তু কেউ দরজা খুলল না।ইশান রুইয়াকে কল দিল।রুইয়ার ফোন বন্ধ।ইশান এবার রুইয়ার রুমের জানালা দিয়ে তাকে ডাকার জন্য মনস্থির করল।কিন্তু কে জানতো তার জন্য কেমন দৃশ্য অপেক্ষা করছে।জানালার পাশে যেতেই কিছু কথা তার কর্ণকুহরে পৌছাল।ইশান জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তা-তে কান দিল।

একটা মেয়েলি কন্ঠ বলছে,

” আমরা এখন কি করব?আমার আর ইচ্ছে হচ্ছে না ওর সাথে থাকার।”

মেয়েলি কন্ঠ টা রুইয়ার তা বেশ ভালোই বুঝতে পারল ইশান।এবার তার কানে একটা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে এলো।সে বলছে,

” টাকা গুলো তো এনেছো তাই না?”

রুইয়া বলল,

” হুম।এখানে আরো ৪ লাখ টাকা আছে।বাকিগুলো আমি অনেক আগেই এখানে নিয়ে এসেছি।”

পুরুষালি কন্ঠটা বলল,

” যেহেতু টাকা হাতে এসেই গেছে তাহলে আর কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা বিয়ে করে নেব।তবে এখন না।তুমি ওর কাছে যাও আর ভুলিয়ে-ভালিয়ে আর আদায় করে নাও।”

রুইয়া বলল,

” হুম!সোহান!আমি প্রেগন্যান্ট!”

” কিহ্!”

” হুম!১ মাসের!আর সন্তানটা তোমার’ই!”

ইশানের মাথায় বাজ পড়ল।কাঁপাকাঁপা হাতে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিল।সামনে থাকা দৃশ্যটা দেখে তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেল।তার অতীব স্মার্ট,সুন্দরি প্রিয়তমা বউ আরেকজনের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত।ইশানের মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে।যার জন্য সে এক মূল্যবান জিনিসকে হারিয়েছে আজ সেই তাকে ধোকা দিয়েছে।ইশান এবার গলা ফাটিয়ে বলল,

” রুইয়াাাা!”

রুইয়া আর ছেলেটা চমকে উঠল।তারপর তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল।রুইয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ইশান চিল্লিয়ে বলল,

” এসব করতে রাগ করে এসেছিলি এখানে?একাউন্টের টাকা তুই আর তোর আশিক গায়েব করেছিস তাই না?আরো খাবি?ক্যারেক্টার লেস।কি দেখে তোকে বিয়ে করেছি আমি?”

রুইয়া এখনো চেয়ে আছে তার পানে।ইশান এবার গিয়ে তার চুলের মুঠি ধরে ঠাস করে চড় লাগিয়ে দিল।রুইয়া এতেই নিচে পড়ে যায়।আর ইশান গিয়ে ছেলেটার নাকে ঘুষি বসিয়ে দেয়।নাক ফেটে রক্ত ঝর‍তে শুরু করে।এদিকে রুইয়া ফ্লাওয়ার ভ্যাস নিয়ে তাকে মার‍তে আসলে ইশান তার মুখেও ঘুষি মেরে দেয়।আর দুজন’ই দূর্বল হয়ে যায়।আর ইশান রুইয়ার ব্যাগটা বের করলো যা সে আসার সময় নিয়ে এসেছিল।সেখানে প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো আছে।ইশান রুইয়ার আলমিরা খুলে দেখল সেখানেও একটা বড় ব্যাগ আছে যাতে ছয় লাখের মতন ছিল।ইশান পুলিশকে ফোন করে।
আর এদিকে ১০ মিনিটের মাঝেই তার পুলিশ ফ্রেন্ড হাজির।

” দোস্ত!এ আমার ওয়াইফ।ছিহ্!একে ওয়াইফ বলছি।এ আমার প্রাক্তন স্ত্রী।আমার থেকে ছলে বলে টাকা খেয়ে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার প্লান করছিল।আমি হাতে নাতে ধরে আমার টাকা গুলো আদায় করেছি।এদের শাস্তি এমন ভাবে দিবি,যাতে পরবর্তীতে এসব কাজ করতে ৭ বার ভাবে।”

ইশানের টাকা আর ক্ষমতার জোড়ে তার বন্ধু তাদের লকাপে পুরে দিল।ইশান বাসায় গিয়ে কাঁদতে লাগল।এর জন্য সুন্দর সম্পর্কটা সে ভেঙে দিয়েছে।আজ সে মা আর বাবাকে কি জবাব দেবে?
সে কি কুহুর কাছে ফিরে যাবে?কিন্তু কুহু তো বিবাহিত।সে আদ্রকে বিয়ে করে নিয়েছে।কি করবে এখন সে?দিশেহারা হয়ে পড়ল ইশান।
_____________________

রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল কুহু।পথেই ইকরার দেখা।

” কিরে?বধু?কি অবস্থা?”

ইকরা তার মাথায় বারি দিয়ে বলল,

” যাহ্ শয়তান!”

” হিহি!চল!”

” এই শোন শোন!জানিস আজ উৎসব হচ্ছে।ভার্সিটিতে।আজ ভার্সিটি বন্ধ।”

” কিহ্!কেন?”

” বুদ্ধু!জানিস না আজ নববর্ষ?”

” ওহ্ আচ্ছা!আমার তো মনেই নেই।আম্মু নিষেধ আসার জন্য।কেন এখন বুঝতে পারলাম।”

” হুম!”

” তো তুই এভাবে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তাহলে?”

” আরে যাব তাই।”

” কোথায়?উৎসবে?”

” হুম!”

” ঠিক আছে।যা আমি গেলাম।”

ইকরা কুহুর ব্যাগ টেনে ধরল।

” গেলাম মানে?কোথায় গেলাম?”

” বাসায়!?”

” উহু!চল আমার সাথে যাবি।”

” হোয়াট দ্যা…আমি যাব না।”

” যাবি না?ঠিক আছে আমিও যাব না।”

” আরে…আচ্ছা আচ্ছা চল।ধ্যাত!”

দুজন পথ চলতে থাকে।কুহু একটু সাবধানে গেল।ওইদিনের মতো পানি,রঙ মারামারি হলে পুরো ড্রেসটাই যাবে।ইকরা কোথায় হারিয়ে গেছে সেই জানে।কুহু এদিক সেদিক খুজল কিন্তু নেই।আর এদিকে তার বন্ধু আর আদ্রদেরও দেখা পেল না।কুহু একটা সাইডে বসে রইল।যাতে তার উপর কেউ কিছু না ফেলে।আর প্রায় ১০ মিনিট এভাবেই কাটে।হঠাৎ তার পেছন থেকে ইকরা বলে উঠল,

” ওই!”

কুহু চমকে গেল।পেছন ফেরে বলল,

” হুম?”

” চল!”

” কোথায়?”

” চল আগে!”

কুহুর হাত ধরে টানতে লাগল ইকরা।আর টানতে টানতে ভার্সিটির পেছনের বাগানে নিয়ে এলো।এখানে তেমন কেউ নেই।শুধু কুহুর ফ্রেন্ডরা আর আদ্রের ফ্রেন্ডরা আছে।কুহু অবাক হলো।সবাই এভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে কেন?ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে তাকাল।ইকরা তাকে ছেড়ে তাদের পাশে দাঁড়াল।

” কি হয়েছে?তোমরা আমাকে এভাবে দেখছো কেন?”

বুশরা বলল,

” পেছনে তাকা!”

কুহু ভ্রু কুঁচকে পেছন ফিরল।সামনের দৃশ্যটা দেখে তার আঁখি যুগল ছানাবড়া।বেশ অবাক হয়ে তাকাল সামনে থাকা প্রতীয়মান ব্যাক্তিটার দিকে।স্বয়ং আদ্র দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।হাতে এক গুচ্ছ জুঁই ফুল।কুহু হা করে তাকিয়ে রইল।আদ্র অধরে হাসি ফুটিয়ে বলল,

” কুহুতান!হ্যাঁ!এই নামটা আমার সবচেয়ে প্রিয় নাম।জানো?সেইদিন যখন তোমার সাথে ধাক্কা লেগেছিল,আমি শুধু তোমাকেই দেখছিলাম।অক্ষি দুটো আপনা-আপনি তোমাতে আটকে গেছিল।তোমার কথা বলার স্টাইলটা আমার খুব’ই ভালো লাগতো।তোমাকে রাগানোটাও আমার পছন্দ ছিল।প্রথম প্রথম অনুভূতিটাকে গুরুত্ব দেই নি।পরে আস্তে আস্তে তোমাতে আসক্ত হয়ে গেছি আমি কুহুতান।সত্যি খুব আসক্ত হয়ে গেছি।মনে জায়গা দিয়ে বসেছি তোমায়।আমার প্রতিটা #শীতল_অনুভবে_তুমি কুহু!শুধুই তুমি।খুব ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে কুহু।হবে কি এই আদ্রের কুহুতান?”

কুহু ঘোরের মাঝে আছে।পেছন থেকে বাকিরা চিল্লিয়ে বলছে,

” কুহু সে ইয়েস!এক্সেপ্ট হিম কুহু।”

কুহু কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

” সরি!”

” মানে?” আদ্র বলল।

” আমি আপনাকে গ্রহন করতে পারলাম না।সরি!”

” কিন্তু কেন?আমায় কি একটু ভালোবাসা দিতে পারবে না?দিয়েই দেখো তোমায় রাঙিয়ে দেব।”

” সরি আদ্র ভাইয়া!”

বলেই কুহু পেছন ফিরে চলে যেতে থাকে।বাকিরা অনেক অবাক হয়।ইকরা চিল্লিয়ে বলল,

” কুহু কি করছিস তুই?দাঁড়া!”

আদ্র ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।কুহুর এমন জবাব সে আশা করেনি।
চলবে,,,,,,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ