#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১২
ভার্সিটির সামনে মাঠে বসে আছে ইহান,আদ্র,রাহিন,ফারাবী,ইরা,অহনা সহ কুহুর ফ্রেন্ডসরা।আড্ডা জুড়িয়ে দিয়েছে সিনিয়র জুনিয়ররা।এই কয়দিনে ভাবসাব বেড়েছে তাদের মাঝে আরো।
” আজ একটা সারপ্রাইজ আছে।” হঠাৎ ইহান বলল।
” তোর আবার কি সারপ্রাইজ?গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছিস নাকি?” রাহিন হেসে বলল।
ইহান রাহিনের মাথায় বারি দিয়ে বলল,
” ডায়েনের ভাই!নিজে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে আর আমাদের বলে বেড়ায় আই এম সিঙ্গেল ব্রো।মেক মি মিঙ্গেল।মন চায় থাপড়াই থোবড়া সাদা করে দিতে।”
রাহিন চোখ বড় বড় করে বলল,
” তুই কিভাবে জানিস?”
তার এ-কথা শুনে বাকিরা চিল্লিয়ে বলল,
” তার মানে ইহানের কথা সত্য?”
রাহিন জিভে কামড় দিল।আর হঠাৎ তাদের কথার মাঝেই কিছু একটা হুট করে ইহানকে জড়িয়ে ধরল।ইহান,আদ্র সহ কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিল।তার মাঝেই ঝড়ের গতীতে ইহানকে জড়িয়ে ধরল।ইহান প্রথমে কিছুই বুঝতে পারল না।বাকিরাও হতভম্ব।সবাই দেখল একটা মেয়ে।বেশ স্মার্ট বলা যায়।কিন্তু ইকরার ব্যাপারটা কেন যেন ভালো লাগল না।ইহান মেয়েটাকে ছাড়িয়ে বলল,
” ঐশি তুমি?”
মেয়েটা বলল,
” হুম জানস!”
বাকিরা ভ্রু কুঁচকে বলল,
” জানস?”
ইহান বলল,
” আহ্ গায়েস এ হলো আমার ফুফাতো বোন ঐশিকা।”
আদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
” শুধুই কাজিন নাকি অন্য কিছু?”
ইহান চোখ বড় বড় করে বলল,
” মানে?আরে না।”
ইকরা দাঁড়িয়ে বলল,
” তো কি?জানস তো আর সবাই এমনি এমনও বলে না তাই না?”
মেয়েটা মানে ঐশিকা বলল,
” রাইট!হাই গায়েস আমি ঐশিকা।সবাই ঐশি বলেই ডাকে।আমি ইহানের কাজিন + হবু বউ।”
” হোয়াঠ!” সবাই লাফিয়ে উঠল।
ইহান হাসল।ইকরা হা করে তাকিয়ে রইল তাদের পানে।অধর দুটো ভীষণ ভাবে কাঁপছে তার।আপনা-আপনি!রাহিন বলল,
” তলে তলে তাহলে এসব চলছে?”
ইহান হেসে বলল,
” তুমি পারো আমি পারিনা?”
কুহু বলল,
” এসব কি সত্যি নাকি শুধুই মজা?আপনি কি মেয়েটার সাথে ফ্লার্ট জাতীয় কিছু করছেন নাকি?”
ইহান বলল,
” আরে না!কাজিনের সাথে কেউ ফ্লার্ট করে?”
ইকরা বলল,
” করে না?সত্যি করে না?আমি তো অনেক জায়গায় দেখেছি করে।”
ইহান ইকরার দিকে তাকাল।এখনো ইকরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।ইহান বলল,
” অনেকে হয়তো করে।কিন্তু আমি এসব কখনোই করিনি আর করবোও না।”
ইকরা ভেবেছিল ইহান হ্যাঁ বলবে।কিন্তু এ কথা শুনে তার খুব খারাপ লাগতে শুরু করল।কিন্তু কেন?
ইহান ইকরাকে লক্ষ করে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
” কি পিচ্চি?কি হয়েছে?”
ইকরা চমকে বলল,
” ক,কই?কিছু না তো।আ….”
তার ফোন এলো।ফোনটা কানে লাগাল।
” আ…আমি আসছি তাহলে।আম্মু যেতে বলেছে।”
বলেই কথা বলতে বলতে দৌড়ে চলে গেল।বাকিরা তার এমন ব্যাবহারে হতভম্ব হয়ে গেল।তারপর কি হলো কে জানে?হঠাৎই সবাই ফিক করে হেসে দিল।
__________________
” এমন কেন লাগছে আমার?কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?তার বিয়ে ঠিক তাতে আমার কি?আমার তো খারাপ লাগার কথা না?ক,,কিন্তু তার বিয়ে ঠিক?কথাটা কি আসলেই সত্য?হোক সত্য আমার কি?কিন্তু এটা ঠিক হচ্ছে না।”
একা একাই বিড়বিড় করছে ইকরা।তার মানতে ইচ্ছে হচ্ছে না যে ইহানের বিয়ে ঠিক।কেন মানতে পারছে না সে?তা তার অজানা।মন টা বার বার খারাপ হয়ে যাচ্ছে।এদিকে হঠাৎ দরজায় করাঘাত হলো।ইকরা নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দিল।
” কি হয়েছে তোর?কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি রিসিভ করছিস না।সমস্যা টা কি?”
কুহু ভেতরে প্রবেশ করে বলল।ইকরা নিজের মোবাইল হাতে নিল।সাইলেন্ট করা।কুহুর প্রায় ১২ টা ফোন এসেছে।ইকরা বলল,
” সরি রে!সাইলেন্ট ছিল।”
কুহু ব্যাগটা বিছানায় রেখে বসে বলল,
” সাইলেন্ট কেন থাকবে?আর এভাবে চলে এলি কেন?”
” আম্মু আসতে বলেছিল।”
” মিথ্যা!লায়ার!আন্টিকে আমি জিজ্ঞেস করেছি।আন্টি তোকে আসতে বলেনি।ইভেন ফোনও করেনি।”
ইকরা কিছু বলল না।তখন তার মা ফোনই করেনি।সেখান থেকে চলে আসার জন্য ফোন কানে লাগিয়ে এভাবে এক্ট করে চলে এসেছে।সেখানে থাকাটা তার পক্ষে কেন যেন খুব কষ্টকর ছিল।কুহু আবার বলল,
” কি?বল!”
” আব….আসলে খারাপ লাগছিল তাই…”
” খারাপ লাগছিল?তো বাহানা করতে গেলি কেন?”
ইকরা কি বলবে ভেবে পায় না।আমতা আমতা করে বলল,
” ওই একচুয়ালি আমি….”
” বললেই তো পারিস ইহান ভাইয়ার বিয়ের খবর শুনে ধাক্কা খেয়েছিস?”
ইকরা চোখ বড় বড় করে ফেলল।
” ম,মানে?”
” সত্যি করে বলতো তুই কেন চলে এসেছিস এভাবে বাহানা দেখিয়ে?”
ইকরা নিজেই নিজের মাথায় বারি দিল।
” স্বীকার করলেই তো হলো তুই ইহান ভাইয়াকে পছন্দ করিস।এভাবে আমাদের থেকে লুকানোর কি আছে?”
” কি বলছিস এসব কুহু?আমি কেন তাকে পছন্দ করতে যাবো?”
” আমি জানি ইকরা!লুকিয়ে লাভ নেই”
” পাগল হয়ে গেছিস তুই।কিসব পাগলের প্রলাপ বকছিস?”
” ঠিক আছে।আমি না হয় উল্টাপাল্টা বকছি।কিন্তু তোর চোখ তো বলে দিচ্ছে তুই কষ্ট পেয়েছিস।”
” কুহু!ফালতু কথা বলিস না।”
” ঠিক আছে।তোর ইচ্ছা।”
বলেই কুহু ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেল।ইকরা কি করবে ভেবে পায় না।আসলেই কি ইহানের প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে?
_______________
” রুইয়া!তোমার ব্যাংকে যে ৭ লক্ষ টাকা জমা দিয়েছি ওগুলো কোথায়?”
ইশান বিছানায় কানে ইয়ারফোন গুজে শুয়ে থাকা রমণীকে উদ্দেশ্য করে বলল।রুইয়া বলল,
” ভাইকে দিয়েছি।”
” কিহ্!এত টাকা তুমি তোমার ভাইকে দিয়েছো?”
” ২ লাখ টাকা ভাইয়ের শপিং এর জন্য দিয়েছি।আর ২ লাখ আম্মু আর আব্বুর জন্য।বাকিটা আমি নিজের কাছে রেখেছি।”
” এসব কি রুইয়া?টাকা গুলো কি তোমার ফ্যামিলিকে দেওয়ার জন্য জমা দিয়েছি?”
” টাকা গুলো আমার ব্যাংকে দিয়েছো ইশান।তোমার না।সো আমি যেমন খুশি তেমনই সেগুলো খরচ করব।পারলে আরো দিও কারণ একটা ট্যুর আছে।আমার ওখানে অবশ্যই যেতে হবে।”
” কিহ্!আমি পারব না।পারলে নিজের টাকা দিয়ে করো।এমনিতে এত টাকা খেয়ে দিয়েছো এখন আরো খুজছো কোন মুখে?”
” ইশান!তুমি এসব বলতে পারলে?তোমার কাছে কি আমার আবদার কিছুই না?এই তোমার ভালোবাসা?ইএ তোমার স্মার্টনেস?যে বউয়ের আবদার পূরণ করতে পারে না সে আবার কিসের স্মার্ট?”
” রুইয়া!” দাঁতে দাঁত চেপে বলল ইশান।
রুইয়া বলল,
” এভাবে চিল্লিয়ে লাভ নেই ইশান।থাকবো না আমি তোমার মতো কিপ্টের সাথে।যে কিনা নিজের বউয়ের ইচ্ছাই পূরণ করতে পারেনা।”
রুইয়া আর দাঁড়াল না।আলমিরা থেকে তার একটা ব্যাগ বের করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।ইশান তাকে থামানোর চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হলো।তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে পড়ল।
_________________
” হেই পিচ্চি কেমন আছো?”
ইকরা চমকে পেছনে তাকাল।বেঞ্চিতে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইহান।ইকরা দাঁড়িয়ে ‘ভালো’ বলেই উঠে চলে গেল।ইহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এমনটা প্রতিদিনই হয়ে আসছে।ইহান যতবারই তার সাথে কথা বলতে আসছে ততবারই সে ইগনোর করছে।ইহান হতাশ হয়।পিচ্চিটা এমন করছে কেন?
ইহান পেছন থেকে বলল,
” ইকরা কি হয়েছে?এমন করছো কেন?”
ইকরা থমকে দাঁড়াল।এই প্রথম তাকে নাম ধরে ডাকল ইহান।ঘাড় ঘুরিয়ে আঁড়চোখে ইহানকে একবার দেখল।তারপর ‘কিছুনা’ বলেই হাটা শুরু করল।ইহান ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।তারপর উল্টো পথ ধরে চলতে থাকল।
” পিচ্চিটার হলো টা কি?” ইহান চিন্তিত মুখে বলল।
আদ্র ভ্রু কুঁচকে বলল,
” কোন পিচ্চি?”
” আরে আমি পিচ্চি কাকে ডাকি?”
” ওহ্ ইকরা?কেন কি হয়েছে?”
” জানি না।কথা বলতে আসলে ইগনোর করে।আমি তার সামনে গেলেই সে প্রস্থান করে।কিছুই বুঝতে পারছিনা।”
” উসকে তো পুরি ডাল হি কালি হে!” ফারাবী হেসে বলল।
” কিহ্!” ধমক দিয়ে বলল ইহান।
” নো নো না-থিং ব্রো।”
ইহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল।তারপর সবাই একটা রহস্যজনক মুচকি হাসি দিল।
__________________
” ইকরা!তোর হয়েছে টা কি?চেহারার কি হাল হলো দেখ!” নাবিলা বলল।
ইকরা বলল,
” কই আমার চেহারা তো ঠিক’ই আছে।”
কুহু বলল,
” নাহ্ ঠিক নেই।চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে।চেহারাটাও শুকিয়ে গেছে।”
ইকরা কিছু বলল না।বুশরা বলল,
” তোর কি হয়েছে বলতো?আগের মতো কথা বলিস না,আগের মতো বকবক করিস না।আগের মতো ঝগড়াও করিস না।একচুয়ালি তোর হয়েছে টা কি ইয়ার?”
ইকরা নিজেও জানে না তার কি হয়েছে।
” কিছুই হয়নি।এমনি ভালো লাগছে না”
তিনজন বুঝতে পারল ইকরা কিছুতেই বলবে না।কুহু বলল,
” ইহান ভাইয়া আর ঐশিকা আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।”
ইকরা উঠে চলে গেল।তিনজন দীর্ঘশ্বাস ফেলল।আর তখনই ইহান আর আদ্র ক্যান্টিনে উপস্থিত হলো।তারা খালি চেয়ারে বসে পড়ল।কুহু বলল,
” ভাইয়া এসব ঠিক হচ্ছে না।একজনের মন যে পুড়ছে তা-ও খেয়াল রাখা উচিত।”
ইহান বলল,
” কার মন পুড়ছে?”
” ইকরা!ওর চেহারার অবস্থা দেখেছেন?”
” ও কেন পুড়বে?”
” ভাইয়া!”
” আচ্ছা আচ্ছা।তো কি যেন বলছিলাম?হ্যাঁ….”
________________
” ইকরার অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে।” সামনের দিকে তাকিয়ে বলল কুহু।
” হুম তা-তো দেখতেই পাচ্ছি।” আদ্র বলল।
” কিছু কি করার নেই?ইহান ভাইয়া কি এসব ঠিক করছে?আমার তো মনে হয় না।”
” কি জানি!সেটা তো ও-ই জানে।”
কুহু দীর্ঘশ্বাস ফেলল।আদ্র তার দিকে তাকিয়ে বলল,
” তো তুমি কি ভেবেছো?”
” কি ভেবেছি মানে?”
” মানে…জীবনে কি করবে ভেবেছো?”
” কি আর করব?”
” জীবনে এগিয়ে যাবে না?কাউকে কি আর আপন করে নেবে না?”
” ইশানই তো ছিল কিন্তু এখন তো আর কেউ নেই যে আপন করে নেব।”
” অনেকেই আছে।বেছে নাও।”
” চেষ্টা করব।”
” উহু!চেষ্টা নয়।অবশ্যই করতে হবে।এগিয়ে যাও কুহুতান।তোমাকে এগিয়ে যেতেই হবে।”
কুহু হাসল।
” কুহুতান?খুব সুন্দর নাম দিলেন তো!”
” পছন্দ হয়েছে?”
” হুম খুব!”
” তাহলে আজ থেকে এই নামেই ডাকি?”
” হুম।আচ্ছা চলুন দেরি হচ্ছে।আমায় আবার বাসায় ফিরে যেতে হবে।”
” আচ্ছা!”
দুজন পথ চলতে লাগল।
_________________
ঘাসের উপর বসে আছে ইহান বাদে সবাই।ইকরা এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।সবাইই কথা বলছে হাসাহাসি করছে।কিন্তু ইকরা এসবে নেই।তার ভেতরের চিৎকার গুলো কেউই শুনতে পাচ্ছে না।আর ইহানের উপস্থিতি টের পায় ইকরা।
” হেই গায়েস!”
” হ্যালো!”
” একটা কথা বলতে এসেছিলাম।”
” বলে ফেল!” রাহিন বলল।
” আরে ওয়েট লাফাচ্ছিস কেন?দম নিতে দে।”
ইকরা একবার মলিন চোখ ইহানের দিকে তাকাল।ইহান তারপর হেসে বলল,
” এ গুড নিউজ গায়েস!সামনের বুধবার আমার আর ঐশিকার অ্যাঙ্গেজমেন্ট।আসবি কিন্তু তোরা।”
ইকরার বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে উঠল।ঘনঘন চোখের পলক ফেলতে লাগল যাতে অশ্রুগুলো বের না হয়ে যায় অক্ষিকোটর থেকে।অধরযুগল কাঁপছে খুব।বাকিরা চিল্লিয়ে উঠে,
” ওয়াও!আমাদের আগেই ইহানের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।” অহনা বলল।
” আরে ধুর বেডি!রিং সিরেমনি হচ্ছে বিয়ে কোথায়?”
” আরে একিই তো!”
” হুম!”
ইকরা দাঁড়িয়ে চলে যেতে লাগল।এখানে কান্না আটকানো কোনমতেই পসিবল না।আর তখনই ইহান পেছন থেকে বলল,
” এসো কিন্তু পিচ্চি!”
ইকরা কোনমতে বলল,
” এই নামে ডাকবেন না প্লিজ।”
বলেই কোনমতে চলে গেল।বাকিরা হা হয়ে চেয়ে রইল তার পানে।
________________
” বলেই দে না।”
ইকরা ভ্রু কুঁচকে কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি বলবো?”
” ইহান ভাইয়াকে।”
” কি বলব উনাকে?”
” বল যে তুই তোর বুইড়াকে অনেক ভালোবাসিস।”
” কুহু!কি বলছিস এসব?”
” ঠিক’ই বলছি।”
” স্টপ ইট কুহু!”
” তুই কষ্টে মরবি আর আমি স্টপ করব?”
” কিসের কষ্ট?”
” ইকরা প্লিজ এক্সপোজ কর আল্লাহর দোহাই লাগে।”
” কুহু ফালতু কথা ছাড় তো।আমি উনাকে ভালোবাসি না।শুনেছিস তুই?”
” তাহলে তখন ইহান ভাইয়া কথাটা বলার পর তুই এভাবে চলে এলি কেন?ইকরা!তুই চাইলে থামাতে পারবি বিয়েটা।প্লিজ থামা!”
ইকরা এক দৃষ্টিতে কুহুর দিকে চেয়ে রইল।আজই সেই কাঙ্ক্ষিত দিন।ইহান আর ঐশিকার রিং সিরেমনি।কুহু রেডি হয়ে ইকরার কাছে এসেছে তাকে সাথে নেওয়ার জন্য।
” কি কিছু ভেবেছিস?”
ইকরা দাঁড়িয়ে বলল,
” না!আমি তাকে ভালোবাসি না সো এসব কথা ছাড়।”
” ঠিক আছে।রেডি হ!”
” রেডি হবো মানে?”
” মানে আবার কি রেডি হ?অনুষ্ঠানে যাবি না?”
ইকরা থেমে বলল,
” না!”
” কেন?সহ্য করতে পারবিনা?”
” কুহু!”
” যদি বলিস ভালোবাসি না তাহলে দেখিয়ে দে।যদি না যাস তাহলে বুঝবো সত্যিই তুই…”
” না না আমি যাব।ঠিক আছে?আমি যাব।”
” হুম!রেডি হ!সময় মাত্র ৩ মিনিট!”
” এহ্!”
” হ্যাঁ!যা!”
ইকরা নীল কামিজ পড়ে বেরিয়ে এলো।চুলগুলো বাঁধতেই কুহু খুলে দিল।
” এটুকুই থাক।”
” আরে…”
” উহু!”
দুজন বেরিয়ে পড়ল ইহানের বাসার উদ্দেশ্যে।ইকরার ভেতর উতালপাতাল শুরু হয়ে গেছে।অস্থিরতা বেড়েই চলেছে।কি হবে এখন?নিশ্চয়ই ঐশিকা কে ইহান আংটি পড়াবে।সবার সামনে পরিচয় দিবে ঐশিকা আমার উড বি ওয়াইফ।তখন কেমন লাগবে তার?
” তোমরা এসেছো?” আদ্র এগিয়ে এসে বলল।
” হ্যাঁ এসেছি!সাথে ব্রকেন হার্ট টাকেও নিয়ে এসেছি!” কুহু রিকশা থেকে নেমে বলল।
ইকরা যেন কিছুই শুনতে পায় নি।সে এখনো ঘোরের মাঝে আছে।শুধু এটাই ভাবছে তার কি সহ্য করার ক্ষমতা আছে?
” ইকরা!আর ইউ ওকে?” আদ্র বলল।
ইকরা চমকে গিয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বলল,
” ইয়াহ্!”
” তো চলো!”
তিনজন ভেতরে ঢুকল।ইতোমধ্যে প্রায় সবাইই চলে এসেছে।প্রতিবারের মতো শুধু কুহু আর ইকরাই দেরি করেছে।ইহান এগিয়ে এলো।ইকরার দিকে তাকিয়ে বলল,
” তো ফাইনালি এসেছো?”
” হ,হুম!”
” গুড পিচ্চি!”
” ডোন্ট কল মি পিচ্চি!”
” আচ্ছা?পিচ্চি!”
ইকরা অন্য পাশে চলে গেল।ইহানের এই ডাকটা তার সহ্য হচ্ছেনা।মিছে মায়া বাড়িয়ে কি লাভ?
আদ্র ইহানকে বলল,
” ইয়ার আর কত?প্লিজ স্টপ ইট এনাফ!”
” জাস্ট ওয়েট এ মিনিট!সব ঠিক হয়ে যাবে।”
” ইয়ার!মেয়েটার অবস্থা দেখ!”
” আই নো ব্রো!ওয়েট কর একটু!”
এনাউন্সমেন্ট করা হলো।একটু পরেই শুরু হবে রিং সিরেমনি।ইকরার বুকের ভেতর ঢাক-ঢোল পিটিতে শুরু করেছে।এই বুঝি ইহান অন্য কারো হয়ে গেল?ইহান স্টেজে দাঁড়াল।ইকরার চোখ ইহানের মাঝে আটকে গেল।কালো সাদা মিশ্রণের পাঞ্জাবি পড়া যুবকটার দিকে না তাকিয়ে উপায় নেই।এবার ডাকা হবে রিং এর আসল মালিককে।মানে ঐশিকা কে।ইকরা চোখ ফিরিয়ে নিল।সে এই দৃশ্য দেখতে পারবে না।
তারপর…….