#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১১
ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে ইকরাকে বিদায় দেওয়ার পর একা একাই পথ চলতে থাকে কুহু।হঠাৎই মনে হলো কেউ তার নাম ধরে ডাকল।একটু থেমে মনের ভুল ভেবে আবারো পথ চলতে থাকে।কিন্তু এবারের টা ভুল মনে হচ্ছে না।সত্যি কেউ তার নাম ধরে ডাকছে।
” কুহু!”
কুহু পেছন ফিরল।প্রতীয়মান ব্যাক্তিটাকে দেখে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলো।আহিল তার কাছে এসে বলল,
” কেমন আছো?”
কুহু বিরক্ত হয়ে বলল,
” ভালো আছি।”
” আমি কেমন আছি….”
আহিলকে থামিয়ে কুহু বলল,
” ওহ্ হ্যালো!আমি দেখতে পাচ্ছি আপনি কেমন আছেন।কি জন্যে ডেকেছেন?”
” আরে এত তাড়া কেন?বলব তো সব আস্তে আস্তে।”
” আস্তে আস্তে বলার দরকার নেই।এখন বললে বলুন নয়তো চললাম।”
পিছন মুড়তে নিলেই আহিল তার হাত ধরে নিল।কুহু ছাড়ানোর আগেই হঠাৎ কেউ হেঁচকা টান দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল তার।কুহু সামনে তাকিয়ে ব্যাক্তিটাকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল।ব্যাক্তিটি স্বয়ং ইশান।কুহু তার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।ইশান আহিলকে চিল্লিয়ে বলল,
” হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ হার?”
আহিল ইশানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তাতে তোমার কি শুনি?”
” আমার কি তা শুনে তোর কাজ কি?তুই ওকে ধরার সাহস কোত্থেকে পেলি?”
” কি সমস্যা?এভাবে তুই-তোকারি করার মানে টা কি?আর ওকে ধরলে তোমার কি?ওকে ধরি,ওর সাথে রিলেশন করি,বেড-পার্টনার করি তা-তে তোমার কি?”
ঠাস!চড়ের শব্দে কেঁপে উঠল চারদিক টা।কেঁপে উঠল কুহু।ইশান আহিলকে চড় মেরেছে।
” বিচ!সাহস তো কম নয় এসব বলিস?”
কুহু তাড়াতাড়ি ইশানকে থামাল।
” ইশান কি করছো?প্লিজ শান্ত হও।এখানে সিনক্রিয়েট করো না প্লিজ।”
আহিল রেগে তেড়ে আসতে নিলেই কেউ তাকে আটকিয়ে ফেলল।
” কি করছিস টা কি আহিল?মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?” আদ্র মুখ কুঁচকিয়ে বলল।
” আদ্র ছাড় ও আমাকে মেরেছে।”
” কে মেরেছে?”
বলতে বলতেই ইশানের দিকে চোখ গেল।কুহু ইশানের হাত আটকে দাঁড়িয়ে আছে।যা আদ্রর মোটেও পছন্দ হলো না।
” কি হয়েছে?”
” ও কুহুর গায়ে হাত দিয়েছে।ওকে বেড পার্টনার বানানোর কথা বলেছে।কুহু ছাড়ো আজ এর শেষ করেই ছাড়ব।” ইশান কুহুর থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু কুহু ছাড়ে না।
আদ্র এসব শুনে চোখ ঘুরিয়ে আহিলের দিকে তাকায়।
” তুই সত্যি এসব বলেছিস?”
” হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছি।কুহুকে আমার চাই তাই বলেছি।”
ঠাস!এবার আদ্রই মেরেছে আহিলকে।ইতোমধ্যে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে।আদ্র চিৎকার করে বলল,
” মুখের ভাষা কি লোপ পেয়েছে তোর?ভদ্র ফ্যামিলির পরিচয় তুই এভাবে দিবি?বল কথা বল!তোকে ওর থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম তবু তুই?”
” তোমার মানা করায় আমার কিছু যায় আসে না।কুহু শুধুই আমার।”
” বলি কি ভাইয়া!একটা মানুষ এত্ত ছ্যাঁঁচড়া কি করে হয় বলুন তো?”
হঠাৎ তাসনির গলা পায় সবাই।সকলের দৃষ্টি তাসনির দিকে যায়।তাসনি হাতে কিছু চকলেট নিয়ে এগিয়ে আসছে তাদের দিকেই।দেখে বুঝা যাচ্ছে দোকান থেকেই এসেছে।তাসনি কাছে এসে বলল,
” একটা মানুষ যে এত বড় ছ্যাঁচড়া হয় তা আপনাকে দেখেই বুঝলাম।”
আহিল রেগে দাঁড়িয়ে বলল,
” হোয়াট!কি বলতে চাও তুমি?”
তাসনি শান্তভাবেই বলল,
” আপনাকে তো বলেই ছিলাম।আপু বিবাহিত।তবু আপনি কু*ত্তার মতো তার পেছনে পড়ে আছেন কেন?”
” আচ্ছা?ও বিবাহিত?তাহলে কাল ও আদ্রর সাথে নাচছিল কেন?এতে তার স্বামী তাকে কিছু বলবে না?”
তাসনি চুপ করে গেল।কুহু আর আদ্রও কি বলবে ভেবে পায় না।তাসনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” বলবে না কারণ আদ্র ভাইয়াই কুহু আপুর স্বামী।”
ইশান,আহিল,কুহু আর আদ্র থমকে যায় ছোট্ট তাসনির কথা শুনে।কুহু আর আদ্র হা করে তাকিয়ে থাকে তার পানে।কি বলছে এ?
” হ,হোয়াট!?আ,,,আমি বিশ্বাস করি না।” আহিল অবিশ্বাস্যের সাথে বলল।
তাসনি হেসে বলল,
” মানতে না চাইলেও এটাই সত্য।ঘরোয়াভাবেই বিয়ে হয়েছে।কাউকে বলা হয় নি।পরে বড় করে অনুষ্টান করা হবে।”
এদিকে ইশান বাকরুদ্ধ।কুহুর দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
” তাসনি যা বলছে তা কি সত্য কুহু?”
কুহু সামনের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল,
” হ্যাঁ!”
” ম,মানে?”
” মানে আবার কি?আপনি সহজেই বিয়ে করে নিতে পারেন আমি পারি না?”
ইশান কিছু না বলে তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।সে এটা মেনে নিতে পারছে না।
” শুনেছেন আপনি?আপনার কি নূন্যতম লজ্জাবোধ নেই এভাবে একটা বিবাহিত মেয়ের পেছনে পড়ে থাকতে?” তাসনি বলল।
আহিল বাকরুদ্ধ।কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে।কিই বা বলার আছে?আদ্র এখনো চেয়ে আছে।এবার সে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বলল,
” আরো অপমান হওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি তোর?”
আহিল কিছু বলল না।নিজের রাগ টাকে সংযত করে ভীড় ঠেলে বেরিয়ে চলে গেল।ইশান একি জায়গায় ঠাই দাঁড়িয়ে আছে।সাথে আদ্র আর কুহুও।তারপর ইশান কিছু একটা ভেবে মূর্তির মতো হাটতে হাটতে চলে গেল।আদ্র সবার উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলল,
” নাটক শেষ আপনারা এখন যেতে পারেন।”
তারা বেশ অপমান বোধ করল তাই না দাঁড়িয়ে এক এক করে সবাই চলে গেল।সবাই যেতেই তাসনি আদ্র আর কুহুর সামনে গিয়ে বলল,
” সরি তখন পরিস্থিতি সামলাতে তোমাদের ব্যাপারে কথাটা বলতে হয়েছে।”
কুহু আর আদ্র একসাথেই বলল,
” ঠিক আছে ঠিক আছে।”
তারপর দুজন দুজনের দিকে তাকাল।আর হালকা হাসল।তাসনি তা দেখে ভ্রু কুঁচকায়।
” কিছু চলছে নাকি?” তাসনি ভ্রু কুঁচকে হেসে বলল।
আদ্র আর কুহু চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকায়।তাসনি হেসে ফেলল।তারপর কুহু তাসনির হাত ধরে আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” ওকে ভাইয়া!আসি তাহলে।নিজের খেয়াল রাখবেন।আর ধন্যবাদ এভাবে ডাল স্বরুপ আসার জন্য।”
আদ্র প্রতিউত্তরে মুচকি হাসে।কুহু ফিরে যেতে থাকে।যাওয়ার পথে তাসনিকে বলল,
” তুই কোত্থেকে উদয় হলি?”
” আরে দোকানে গিয়েছিলাম ক্যাটবেরি আনতে।দেখি ভীড় জমেছে।আর আদ্র ভাইয়ার গলার আওয়াজও পেলাম।ঢুকে দেখি ওই পঁচা আলুটা তোমার সাথে শুরু করেছে।”
” হুম!তুই তো একদম ফাঁটিয়ে দিলি রে।”
” হিহি!”
__________________
” তুই এখনো বসে আছিস?সব তো প্যাকিং শেষ আর ট্রান্সফার নেওয়াও শেষ।তাহলে বসে আছিস কেন?”
আদ্র বিছানায় বসে থাকার আহিলকে বলল।আহিল তার দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুই আরেকবার ভেবে দেখ তুই যা করছিস ঠিক করছিস কি-না?”
” হ্যাঁ আমি ঠিক’ই করছি।তোর মতো লম্পটের সাথে আর এক মুহূর্ত থাকাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
আহিল রেগে ব্যাগ গুলো নিয়ে বেরিয়ে গেল।আদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলল।কুহুকে ওসব বলাতে প্রচূর রাগ উঠে গিয়েছিল তার।কেন সে নিজেই জানে না।
______________
” এটা…এটা কিছুতেই হতে পারে না!কুহু এমন টা করতেই পারে না।ও…ও বলেছিল ও শুধু আমাকেই বিয়ে করবে।কিন্তু!কিন্তু ও আদ্রকে বিয়ে করে নিল?এটা কিছুতেই করতে পারে না ও।”
এসব বলতে বলতেই ভাঙচুর করতে শুরু করেছে ইশান।রুইয়া কান থেকে ইয়ারফোন নামিয়ে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাল।তার বাবা এবং মা ঘরে নেই এই মুহুর্তে।রুইয়া বিরক্ত হয়ে বলল,
” এসব কি বেবি?হোয়াট ইজ ইট?এমন করছো কেন?”
এই মুহুর্তে রুইয়াকেও তার প্রচুর বিরক্ত লাগছে।কিছু না বলে তার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বেরিয়ে গেল।রুইয়া কিছুই বুঝতে পারল না।কিন্তু যাওয়ার সময় ইশানের মোবাইল টা রেখে গেল।রুইয়ার সন্দেহ জাগে।কারণ সে কুহুর নাম টা শুনেছিল ইশানের মুখে।আর তার বিয়েতেও কুহুর সাথে ইশানকে অনেক বার দেখেছে।আর কয়েকদিন ধরেই দেখছে ইশান তার সাথে কথা বলে না।সারাটা দিন মোবাইলের মধ্যে কিছু একটা দেখে।আর রুইয়া কাছে আসলেই লুকিয়ে ফেলে।রুইয়ার সন্দেহ অনেক আগে থেকেই জেগেছে কিন্তু কিছু বলে নি।ভাবল আরো দেখতে হবে বিষয়টা।কিন্তু আজ তার ব্যবহার স্বাভাবীক মনে হচ্ছে না।তাই সন্দেহ টা তীব্র হলো।তাই ধীরে ধীরে গিয়ে তার মোবাইল টা হাতে নিল।কিন্তু এ-কি!লকড!রুইয়া কি করবে ভেবে পায় না।তারপর কিছু একটা ভেবে মোবাইলটা রেখে নিজের কাজে মন দিল।
_________________
” সত্যি করে বল তোর আর কুহুর বিয়ে হয়েছে?” ইশান আদ্রর কলার ধরে বলল।
আদ্র ছাড়ানো চেষ্টা করে বলল,
” কি করছিস ইশান ছাড়!”
কিন্তু ইশান ছাড়েনা।
” আগে আমার প্রশ্নের জবাব দে আদ্র।”
” হ্যাঁ কাল আপনি যা শুনেছেন সব’ই সত্য।শুনেছেন আপনি?এবার উনাকে ছাড়ুন।”
আকস্মিক এমন কথা শুনে দুজনই পেছনে তাকাল।কুহু দাঁড়িয়ে আছে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে।তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে।ইশান বলল,
” নাহ্ কুহু!তুমি কিছুতেই এমনটি করতে পারো না।”
” কেন পারিনা?”
” তুমি..তুমি বলেছিলে তুমি শুধু আমাকেই বিয়ে করবে।কিন্তু…কিন্তু তুমি আদ্রকে বিয়ে করে নিয়েছো?”
ইশানেফ কথা শুনে কুহু অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল।তারপর হাসি থামিয়ে বলল,
” লাইক সিরিয়াসলি মি. ইশান?হাস্যকর তো!আমি আপনাকে কেন বিয়ে করব?আর!আর আপনিও তো আমাকে বলেছিলেন শুধু আমাকেই বিয়ে করবেন।তাহলে?কেন আমাকে ছেড়ে আপনার মর্ডান বউকে বিয়ে করলেন?আপনি পারলে আমি কেন পারি না?আজকাল কোন প্রেম বিয়ে পর্যন্ত যায় না।যায়?তা-তো আপনিই বলেছিলেন তাই না?সো আমার পিছু ছাড়ুন।আর নিজের বউকে নিয়ে ভালো থাকুন।আর সহ্য হচ্ছে না আপনার মতো ক্যারেক্টার লেস কে।ছাড়ুন উনাকে।”
কিন্তু ইশান ছাড়ে না।কুহু আর উপায় না পেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে গেল।ধাক্কা দিয়ে ইশানকে সরিয়ে আদ্রের সামনে দাঁড়াল।
” দূর হন আমার সামনে থেকে।প্লিজ গো ওয়ে আই সেই গো এওয়ে!”
ইশান কিছু না বলে দাঁতে দাঁত চেপে চলে গেল।আদ্র এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের পানে।কুহু তার দিকে ফিরে বলল,
” সরি আবারো একি টাইটেল ইউজ করতে হলো।”
” নাহ্ নাহ্ কোন সমস্যা নেই।আত্মরক্ষার জন্য তো করাই যায়।”
” আপনার লেগেছে কোথাও?”
কুহু আদ্রের চারপাশটা দেখতে লাগল।আদ্র বলল,
” আরে না না।কিছু হয়নি।”
” চলুন!”
দুজন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।পৌছেই সম্মুখীন হলো পানি মারামারির।হ্যাঁ পানি মারামারি চলছে।আসলে কোন এক উৎসব চলছিল তাতেই তারা এসব শুরু করেছে।দুজনের গায়েই ফেলে দিয়েছে পানি।শুরুটা হয়েছিল ইকরা আর ইহানের দিয়ে।কুহু বিরক্ত হয়ে বলল,
” কি হচ্ছে এসব?পুরাই ভিজিয়ে দিলি তো?”
ইকরা বলল,
” আজকের দিন টা ভিজ সমস্যা নেই।প্রতিদিন তো ভিজিস না তাই না।”
” আরে ইকরা কি করছিস তোরা এসব?”
” আরে ভাইয়া একটু খেলছি আরকি।আজ শুধুই খেলা হবে।”
” তোরা শুধরাবি না।”
” উহু কখনো না।”
কুহু এক সাইডে গিয়ে কাপড় ঝাড়তে লাগল।কিন্তু আবারো কেউ পানি মারল তার উপর।সে মুখ উঠিয়ে কিছু বলতে গেলে দেখল আদ্র।কুহু চোখ পাকিয়ে বলল,
” আপনি!”
” হিহি!একটু মজা করাই যায়।”
” ইউ…!”
কুহু পানি নিয়ে তার পেছনে ছুট দেয়।আর আদ্রও ছুটে যায় আর ভীড়ের মাঝে হারিয়ে যায়।কুহু এদিক সেদিক খুজে বেড়াচ্ছে কিন্তু আদ্র কোথাও নেই।সে পানি নিয়ে এদিকে ওদিক ঘুরে ঘুরে খুজল।কিন্তু কোথাও আদ্রর ছিটেফোঁটা নেই।হঠাৎ সামনে সবাইকে এক জায়গায় জড়ো হতে দেখল।সবাই এক জায়গায় গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভীড় করে।কুহুর ভয় লাগতে শুরু হলো।আদ্রর কিছু হয় নি তো?কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেল তাদের পানে।ভীড় ঠেলে এগিয়ে যায়।তারপরই বুম!তার উপর আবারো পানি পড়েছে।উহু!সাধারণ পানি না।রঙ মেশানো পানি।এবার তার সাদা গোলাপি মিশ্রণের থ্রি-পিস টা মুহুর্তেই লাল রঙে রাঙিয়ে গেল।কুহু সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল।সামনেই আদ্র বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।বুঝতে পারল এসব তারই কাজ।ইচ্ছে করে কুহুকে এসব দেখিয়ে এদিকে আনিয়ে এসব মেরেছে।কুহু রেগে হাতের বালতিতে থাকা পানি গুলো নিয়ে আদ্রর দিকে তেড়ে গেল।আদ্র ছুটল।পেছনে কুহু।আর সামনেই ইকরা আর ইহান পানি হাতে দাঁড়িয়ে ছিল একে অপরকে মারার জন্য।একে অপরকে মারবে বলে ভয় দেখাচ্ছে।হঠাৎ আদ্র তাদের পাশে দৌড়ে গেল।তা দেখে তারা সেদিকে তাকাল।আর কুহু কোনদিক লক্ষ্য না করে আদ্রর পেছনে দৌড়াচ্ছে।দৌড়াতে দৌড়াতে খেল ইকরার সাথে ধাক্কা।আর ইকরা তার ধাক্কায় ইহানের গায়ের উপর পড়ল আর দুজনই নিচে পড়ে যায়।হাতে থাকা সব পানি দুজনের উপরেই পড়ে।আর কুহু একবার তাদের দিকে তাকিয়ে আবারো আদ্রের পেছনে ছুটল।
ইকরা কিছুক্ষণ ইহানের দিকে তাকিয়ে থাকে।ইহান তা দেখে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
” কি পিচ্চি কি দেখছো?”
এই কথা শুনে ইকরা ভ্রু কুঁচকে রেগে তার উপর থেকে উঠে বলল,
” বুইড়া!”
ইহান হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল।তারপর বলল,
” সত্যি!তুমি খুব’ই পাতলা।”
ইকরা চোখ গরম করে তার দিকে তাকায়।তারপর ‘বুইড়া’ বলে তার দিকে তেড়ে যায়।সুযোগ বুঝে ইহানও দেয় দৌড়।
” একবার দাঁড়ান দেখিয়ে দেব পানি কাকে বলে!”
কুহু চিৎকার করে বলল দৌড়াতে দৌড়াতে।আদ্র থামেই না।
” উহু!আমাকে দমানোর চেষ্টা করো না কুহুতান।নিজেই দমে দেখাও।হিহি!”
কুহু একটু থেমে যায়।কি বলল আদ্র?কুহুতান!?কিন্তু আদ্র দূরে চলে যাচ্ছে দেখে সে আবারো ছুটল।
” দাঁড়ান না একবার।আপনি আমায় দুইবার মেরেছেন আমি একবারও পারলাম না।”
আদ্র হাসল।কিন্তু থামল না।তা দেখে কুহু থেমে গেল।তারপর পাশের বেঞ্চিতে বসে পড়ল।মুখ টা কুঁচকে রাখল কপট রাগ আর বিরক্তিতে।আদ্র পেছন ফিরতেই দেখল কুহু আর দৌড়াচ্ছে না।এক পাশে বসে আছে।আদ্র কিছু বুঝল না।তাই আস্তে করে এগিয়ে গেল তার পানে।কুহু তার দিকে তাকাল না।আদ্র মুখটা বাচ্চাদের মতো করে বলল,
” কি হয়েছে?থেমে গেলে কেন?”
কুহু তার দিকে তাকিয়ে হাল্কা হাসল।তারপর পাশে থাকা বালতি নিয়ে তার উপর ছুড়ে মারতে নিলেই আদ্র ঘুরিয়ে দেয় বালতিটা।যাতে সব পানিই কুহুর উপর পরে।এবারো ফেল!কুহু বেশ রেগে যায় আদ্রর উপর।একটুও মারতে দিচ্ছে না।তাই মুখ ফুলিয়ে বেঞ্চির উপর বসে রইল।আদ্র হাসল।
” পানি মারতে পারো নি বলে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো বাচ্চাদের মতো।সত্যি বাচ্চা বাচ্চা লাগছে।” হেসে বলল আদ্র।
” হুহ্!” কুহু মুখ ফিরায়।
” আচ্ছা আচ্ছা সরি।মারো!”
” কোথায় পাবো?”
” আনছি!”
আদ্র পানি আনতে গেল।এই সুযোগে কুহু তার পিছু পিছু গিয়ে পাশে থাকা একটা মেয়ে থেকে পানি কেড়ে নিয়ে আদ্র ঘুরতেই দিল ঝাপ্টা।
” গশ!কে রে?”
আদ্র কুহুকে দেখল।বাচ্চাদের মতো হাসছে।আদ্র আনমনে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ।কুহু হাসি থামিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
” কি?”
আদ্র ইশারায় বলল,কিছুনা।কুহু বলল,
” তো এভাবে কি দেখছেন?”
” তোমাকে দেখছি।”
” আমাকে কেন দেখছেন?”
” ইচ্ছে হলো দেখার তাই দেখছি।পুরো বাচ্চা লাগছে।”
” আপনিও ইহান ভাইয়ার মতো শুরু করেছেন?”
হেসে দিল আদ্র।কুহু দেখল হাসলে আদ্রের এক গালে টোল পড়ে।অবশ্য কুহু হাসলে দু-গালেই পড়ে।কুহু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।আনমনে বলেই দিল,
” হাসলে আপনাকে খুব সুন্দর লাগে।”
আদ্র তার দিকে তাকাল।কুহুর মুখে লাল রঙ,নীল রঙ লেপ্টে আছে।চুলগুলোও মুখে কিছু কিছু লেপ্টে আছে।
” আচ্ছা?দেখি তুমি হাসো!”
কুহু ভ্রু কুঁচকে বলল,
” কেন?”
” তোমাকে কেমন লাগে দেখি।তারপর প্রশংসা করি।”
হেসে ফেলল কুহু না চাইতেই।আদ্র অপলক তাকিয়ে থাকে।যেন দিন দুনিয়া ভুলে তার দিকেই তাকিয়ে থাকুক।আদ্র বলল,
” সব সময় হাসবে।যাতে তোমার এই সৌন্দর্যটা দেখতে পাই।”
কুহু মুচকি হাসল।
” আপনিও!”
” ওই দাঁড়ান দাঁড়ান বলছি।স্টপ!”
আচমকা ইকরার গলায় দুজন তাদের দিকে ফিরল।আর দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এ দুজন আবারো দৌড়াদৌড়ি করছে একে অপরের সাথে।কুহু বলল,
” তোরা কি শুধরাবি না?”
” উহু কুহু!তোমার বান্ধবীকে বলো আমার পিছু ছাড়তে।আধা ঘন্টা ধরে শুধু দৌড়িয়েই যাচ্ছে।প্লিজ!”
কুহু আর আদ্র হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
” ভাইয়া দাঁড়িয়েই যান।দেখুন ও কি করে।”
ইহান হুট করে দাঁড়িয়ে পড়ল।আর ইকরা ধাক্কা খেল তার সাথে।ইহান আরেকটু হলেই পড়ে যেত।তারপর ইকরাকে তুলে বলল,
” তুমি আসলেই খুব পাতলা।পিচ্চি বলে কথা।”
ইকরা মুখ বেঁকিয়ে বলল,
” হুম!পাতলা তাই এই পাতলা পিচ্চির ধাক্কায় পড়ে যাচ্ছিলেন।”
” আরে ওটাতো…”
” হুম হয়েছে হয়েছে।বুইড়া!”
” এই আমার মুখে কি ভাঁজ পড়েছে?বয়স বেড়েছে আমার?”
” হুহ্!আর আমার শরীর কি ছোট রয়ে গেছে?বয়স কমেছে?”
ইহান কি বলবে ভেবে পায় না।তারপর আদ্র আর কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি?এত ভেটকাচ্ছিস কেন?মনে রঙ লেগেছে?”
কুহু হাসি থামিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,
” মনে রঙ লেগেছে মানে?”
” মানে বুঝো না?হয়ে গেছে তোমাদের?”
” আহ্!” বিরক্ত হয়ে কুহু ভীড়ের মাঝে বাকি বন্ধুদের কাছে চলে গেল।আদ্র তার পানে চেয়ে রইল।ইহান তার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
” মন খারাপ করিস না ইয়ার!একদিন হয়েই যাবে দেখিস।” (চোখ টিপ মেরে বলল)
আদ্র চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকাল।
” কিহ্!”
” না-থিং!”
__________________
” লকটা খুলার চেষ্টা করুন।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।সময় মাত্র ১০ মিনিট।এর মাঝে খুলতে পারলে রেহাই পাবে।”
রুইয়া তাড়া দিয়ে ম্যাকানিককে বলল।ছেলেটা বলল,
” আপু এমন করলে তো খুলা সম্ভব না।ওয়েট করুন একটু।”
” আর ওয়েট করতে পারছি না জলদি খুলো!” হালকা চেঁচিয়ে বলল।
ছেলেটা কিছু না বলে নিজের কাজ করতে লাগল।আর কিছুক্ষণ পরেই লক খুলতে সক্ষম হলো।রুইয়া হাতে যেন চাঁদ পেল।তাড়াতাড়ি মোবাইল নিয়ে টাকা না দিয়েই বেরিয়ে যাচ্ছিল।পেছন থেকে ছেলেটা বলল,
” আরে আপু কি করছেন?টাকা না দিয়েই চলে যাচ্ছেন?দেখে তো বড়লোক মনে হচ্ছে।তাহলে টাকা দিতে এত সমস্যা কেন?”
রুইয়া চোখ মুখ কিঞ্চিত কুঁচকিয়ে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিল।তারপর দ্রুত বেরিয়ে পড়ল।বাসায় পৌছেই মোবাইল নিয়ে বসল।ইশান নেই।আজও রাগারাগি করে বেরিয়ে গেছে ভাঙচুর করে।কারণ আদ্রকে আর কুহুকে একসাথে খেলা-ধুলা,পানি মারামারি,হাসাহাসি,দৌড়াদৌড়ি করতে দেখেছে যা সে কোন মতে মেনে নিতে পারছে না।তাই এসেই ভাঙচুর করে বেরিয়ে পড়েছে।আর রুইয়ার সন্দেহ আরো তীব্র হয়েছে।তাই কোন কিছু না ভেবেই ইশানের মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
এদিক সেদিক ঘাটাঘাটি করে কিছুই পেল না সে।তারপর বিছানায় মোবাইলটা ছুড়ার আগেই গ্যালারিতে চাঁপ পড়ল।যার দরুন গ্যালারির রিসেন্ট ছবি গুলো দেখতে পায় সে।ছুড়তে গিয়েও ছুড়ে না।তারপর তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল।আর তার বেশ রাগ উঠে যায়।রাগে গজগজ করছে আর বড় নিশ্বাস ফেলছে।কারণ বেশ অর্ধেক’ই কুহুর হাস্যজ্বল ছবি দিয়ে ভরপুর।আর ইশান কুহুরই ছবিগুলো দেখে।রুইয়া রাগে ফেঁটে পড়ে।নাহ্!কিছু তো করতেই হবে।যেই উদ্দেশ্যে এসেছে তা-তো পূরণ করতেই হবে।
চলবে,,,,,,