#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ১০
এক জোড়া লাল আঁখি কুহু,আদ্রকে পরখ করছে।কেন যেন সেই চোখে না চাইতেও পানি জমা হচ্ছে।সেই চক্ষুর মালিক বার বার তা সংযত করার চেষ্টা করছে।কিন্তু কেন এমন হচ্ছে তা তার অজানা।সেই ব্যক্তিটি আর কেউ নয় স্বয়ং ইশান।তার আঁখি এই দৃশ্যটাকে মেনে নিতে পারছে না।যে কুহু আর আদে হাসাহাসি করছে তা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।কেন পারছে না?সে তো রুইয়াকে ভালোবাসে।তবে?আসলেই কি সে কাউকে ভালোবাসে?
কিছু একটা ভেবে এগিয়ে গেল তাদের দিকে।তারা ইশানকে দেখে হাসি থামিয়ে তার দিকে নজর দিল।আদ্র বলল,
” আরে তুই?ভাবীকে আনিস নি?”
ইশান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” আসলে এটাতো গ্রুপ পার্টি ভার্সিটির।ওকে কেন আনবো?”
কুহু হেসে বলল,
” ভাবী কেমন আছে ভাইয়া?”
ইশান কুহুর দিকে তাকাল।তারপর বলল,
” ভালো!”
আদ্র কুহুর দিকে তাকায়।সে ভালোই বুঝতে পারলো কুহু ইশানকে জ্বালানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছু বলল না।ইশানকে টানতে টানতে বলল,
” আয় চল চল আজ একটা ড্যান্স পার্টি আছে।নাঁঁচবি কিন্তু!”
” আরে আরে আমি নাঁচবো না।”
” উহু নাচতে হবে।”
আদ্র ইশানকে নিয়ে টানতে টানতে অন্য দিকে চলে গেল।তাসনি বলল,
” হোয়াট দ্যা ম্যাটার?এ আজ কিছুই বলল না?”
” হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।”
” হুম!আপু!” তাসনি কুহুর হাত ধরে ডাকল।
” হুম?”
” আজ বলছে ড্যান্স পার্টি হবে।তোমাকে নাঁচতে হবে।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
” আরে না।”
” উহু!প্লিজ প্লিজ আসো!”
তাসনি কুহুকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেল।কুহু ভেবেছিল আদ্র ইশানকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এমনটি বলেছে।কিন্তু দেখল সত্যি সত্যি ড্যান্স পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।সবাই মাঝখানের চেয়ার টেবিল গুলো সরিয়ে বড় একটা জায়গা খালি করে দিল।অনেকেই ড্যান্স শুরু করে দিল।কুহু কর্নারে একটা চেয়ারে বসে পড়ল।
তাসনি এখনো আগের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছে।তার হাবভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে সে কিছুক্ষণের মধ্যেই নাচ শুরু করে দেবে।
ইকরাও কুহুর পাশে এসে বসল।
” কিরে!এভাবে সবার থেকে দূরে কেন বসে আছিস?”
” কই?এমনি দেখছিলাম।আচ্ছা?ড্যান্স তো একটু আগেই হলো।এখন আবার কিসের?” কুহু বলল।
” আরে ওটা তো এমনি আমরা গানের তালে নেচেছিলাম পাগল।এটা এমনি ড্যান্স।”
কুহু ভ্রু কুঁচকে বলল,
” ওসব থার্ড ক্লাস গানের ড্যান্স নাকি?”
” আরে নাহ্!রোমান্টিক গানের ড্যান্স।”
” ওহ্!”
” হুম।নাচবি?”
” আরে নাহ্।তুই নাচ!”
” আরে আয় না।”
” ইকরা প্লিজ।”
” নোপ!আয়!”
” তোর ইচ্ছে হলে তুই নাচ না তোর বুইড়ার সাথে।”
” কিহ্!”
” তো আমাকে টানছিস যে?যাহ্!তুই যা!”
ইকরা আর না পেরে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।কুহু হেসে ফেলল।তারপর মনোযোগ দিল সবার দিকে।বাকিরা নাচছে তো নাচছেই সাথে ইকরাও শুরু করে দিয়েছে।সাথে রাহিনরাও।ইহান আর আদ্রকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।কুহু নজর ঘুরাল।কিন্তু হঠাৎ কেউ পেছন থেকে টেনে তাকে নাচার আসরে নিয়ে গেল।কুহু সামনে ফিরে দেখল ব্যাক্তিটি আর কেউ নয় স্বয়ং আদ্র।কুহু ভ্রু কুঁচকে বলল,
” কি ব্যাপার আপনি এভাবে…”
” ওখানে বসে বসে কি করছো?সবাই ড্যান্স করছে তুমিও করো!”
” আরে নাহ্!আমি এসব করি না।”
” কিন্তু এখন করবে।”
” মানে?আরে…”
বলতে না বলতেই আদ্র কুহুর হাত ধরে ঘুরিয়ে দিল।তারপর নাচা শুরু করে কুহুর সাথে।কুহু প্রথমে থামতে বললেও এখন তার ভালোই লাগছে।নাচের তালে সে বুঝতেই পারে নি সে কার সাথে নাচছে।আর এক জোড়া অক্ষি তাদের এই মুহুর্ত গুলোকে পরখ করছে।ইশান এক কোণে দাঁড়িয়ে দেখছে তাদের এই মুহুর্ত।সে আর পারছে না সহ্য করতে।কিন্তু কেন তার কারণ সে খুজে পেল না।এদিকে আহিল হা করে তাকিয়ে আছে তাদের পানে।কারণ তাসনি বলেছিল কুহু বিবাহিত।তাহলে কুহুর সাথে আদ্র এমন বিহেভ করছে কেন?আহিল দাঁতে দাঁত চেপে রাগ সংযত করল।তাসনি দেখল আদ্র আর কুহু একসাথে…এটা দেখে তার খুশির আস্ত রইল না।কারণ সে চায় তারা ঝগড়া না করে একটু নিজেদের বুঝুক।
” কি ব্যাপার এমন লাফালাফি করছো কেন?”
ইহানের এমন প্রশ্নে নাচা বন্ধ করে ইকরা চোখ গরম করে ইহানের দিকে ফিরল।
” কিহ্!আমি লাফালাফি করছি?কোন দিক থেকে মনে হচ্ছে আমি লাফালাফি করছি?”
” তো?এসব কে লাফালাফি না বলে কি বলব?”
” ইউ…!আমি লাফালাফি করছি না।আমি নাচছি দেখতে পাচ্ছেন না??”
” আচ্ছা?এভাবে কেউ নাচে?”
” মানে?তো কিভাবে নাচে?”
” নাচে তো এইভাবে!”
ইহান ইকরার হাত ধরে ঘুরিয়ে তার দিকে ঝুঁকল।ইকরা কিছুই বুঝল না।তার দিকে অপলক তাকিয়ে রইল।তারপর ইহান ইকরাকে তুলে নাচাতে লাগল।বলল,
” এই ভাবে নাচে বুঝেছো?”
‘হু হু’ করে হেসে দেয় ইকরা।যতই ঝগড়া করুক তার কিছু বিহেভ ইকরার ভালোই লাগে।
চলবে,,,,,,