Monday, October 6, 2025







শীতল অনুভবে তুমি পর্ব-০৮

#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব_৮

পরদিন……

” হ্যালো!” ইশান কুহুর দিকে হাত নাঁড়াল।

” জ্বী!” কুহু দাঁড়িয়ে বলল।

” আমরা কি ফ্রেন্ডস হতে পারি?”

” সরি?” কুহু ভ্রু কুঁচকায়।

” না মানে…আমরা কি বন্ধু হতে পারি না?”

কুহু শান্ত গলায় বলল,

” আমি আপনাকে চিনি না।আর আমি অপরিচিত দের সাথে বন্ধুত্ব করি না।ধন্যবাদ।”

বলেই কুহু ক্যাম্পাসে চলে গেল।ইশান বাঁকা হেসে তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,

” আমার ফাঁদে পা-তো তোমাকে দিতেও হবে মিস এটিচিউড ওয়ালি।”
______________

এই ক’দিনে অনেক ঘুরেছে কুহুর পিছু পিছু।ফ্রেন্ডশিপের জন্য অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে তাকে।আর কুহুরও ভালো লাগতো তার এমন ব্যবহার গুলো।তাই একদিন বন্ধুত্বের প্রস্তাব গ্রহণ করে কুহু।তারপর থেকেই শুরু হয় তাদের মেলামেশা।এর মাঝে ইকরাও জেনে যায় তাদের ব্যাপারে।আর তারপরই ইদ্রানদের সাথে পরিচয় হয় তাদের এক’ই ভার্সিটিতেই।তবে ইশান তাদের সবারই সিনিয়র ছিল।সেইদিন কুহুর সাথে ইন্ট্রডিউস হওয়ার জন্যই তার ক্লাসে গিয়েছিল।যা কুহু আগে থেকেই জানতো তবে কিছু বলে নি শুধু তামাশা দেখেছে তার।
প্রায় অনেকদিন কেটে যায়।দেখতে দেখতে ২ বছর এভাবেই চলে যায়।আর কুহু দেখল কিছুদিন ধরে ইশান তাকে ইগনোর করছে।ফোন দিলে ব্যস্ততার বাহানা দেখিয়ে কেটে দেয়।দেখা করতে বললে ভার্সিটির আর তার বাবার অফিসের কাজের বাহানা দিয়ে কেটে পড়ে।একদিন সে নিজেই ফোন করে কুহুকে আসতে বলে।তারপরই বিয়ের কথা বলে।

কুহু সামনে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে এটুকু বলে থামল।আদ্র এতক্ষণ তার কথা শুনছিল আর বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিল।তারপর সে কুহুকে বলল,

” তুমি ওকে থামানোর চেষ্টা করলে না?”

কুহু তাচ্ছিল্য হেসে বলল,

” কেন থামাবো?আমি এতো সস্থা নাকি?তা-ছাড়া সে-ই তো আমার সাথে রিলেশন শুরু করেছিল।এখন সে-ই ভেঙে দিল।আবার ছ্যাঁচড়ার মতো আমার পিছনে পড়ে রয়েছে নিজে বিয়ে করে।আমাকে কারো সাথে দেখলেই এসে আমাকে টাচ করে আর উল্টাপাল্টা কথা শুরু করে।যেন এখনো তার সাথে আমার রিলেশন আছে।হাহ্!নির্লজ্জতার পরিচয়।বউ পেয়েছে।তা ছেড়ে আমার পেছনে পড়ে আছে।আর আপনার সাথে কথা বলি দেখে তার জ্বলে।”

আদ্র কষ্ট পায়।তার বেস্ট ফ্রেন্ড তার প্রতি জেলাস?

” ও হয়তো এখনো তোমাকে ভালোবাসে?তাই এমন করছে!”

” হাহ্!তার এসব থার্ড ক্লাস ভালোবাসার আর দরকার নেই।আমি তখন বোকা ছিলাম।আর কখনো এসব অবৈধতায় জড়াবো না।এখন বুঝতে পারছি কত বড় ফালতু কাজ করে নিজেকে কষ্ট দিয়েছি।”

আদ্র কুহুর কাঁধে হাত রাখে।অদ্ভুদ শিহরণ বয়ে যায় তার শরীরে।সে স্বান্তনার গলায় বলল,

” লাইফে এগিয়ে যাও!সে পেছনে পড়ে আছে,,,তাকে এভোয়েড করো।দরকার হলে বিয়ে করে নাও।যাতে সে আর তোমার পেছনে না ঘুরে।”

কুহু অবাক হয়ে আদ্রর দিকে তাকায়।খানিকটা হাসি পায়।বিয়ে করতে বলছে?
______________

সেই সকাল থেকেই একটা নোট খুজে যাচ্ছে কুহু।কিন্তু পাচ্ছেই না।তারপর ভাবল ইকরাকে কল দিবে।তাই মোবাইল খুলতেই দেখল গ্যালারিতে।তখন নিজের ছবি তুলে সেগুলো দেখতে দেখতে সেভাবেই স্ক্রিন অফ করে দিয়েছিল সে।তারপর গ্যালারি থেকে বেরুনোর আগেই একটা ছবিতে চোখ আটকে যায়।সেইদিন মাঠে তুলা আদ্রর ছবিটা।হাস্যজ্বল ছবি।ঘামার্ত্বক মুখ মন্ডল।ঘামের কারণে চুল গুলো ললাটে লেপ্টে আছে।গায়ে সাদা টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার।ব্যাট নিয়ে ইহানের সাথে হেসে কথা বলছিল।সেই সুযোগেই তাসনি তার মোবাইল নিয়ে তুলে ফেলেছে।তাসনি আবার ফটোগ্রাফিতে দক্ষ।একদম পারফেক্ট একটা ছবি।কুহু আনমনে সেদিকে চেয়ে থাকে।তারপর হুশ আসতেই ভাবল ডিলিট করে দেবে।এভাবে কারো ছবি তার মোবাইলে থাকবে এটা কেমন যেন দেখায়।কিন্তু করতে যেয়েও পারল না।কেন যেন মন চাইছে না।তাই আর ডিলিট না করে নিজের নোট খুজার কাজে মন দিল।তখনই ফোন এলো ইকরার।

” হ্যালো!” কুহু মোবাইল কানে লাগাল।

” আব্বে কই তুই?আসছিস না নাকি?” ইকরা বলল।

” আরে ইয়ার নোটগুলো খুজে পাচ্ছি না রে!”

” বলিস কি রে?”

” হুম ইয়ার!”

” কোন নোট?”

” তুই যে কাল দিয়েছিলি।”

” আরে আমি তোকে কবে দিলাম?”

” আরে আমি কাল বলেছিলাম প্র‍্যাক্টিকাল গুলো আমায় দিস তো তুই বললি আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিবি।তো?”

” আরে আমি তোকে দেই নি তো।ভুলে গিয়েছিলাম।”

” ধ্যাত বাঁদরনি কোথাকার।আমাকে শুধু শুধুই হয়রান করলি।”

ইকরা হেসে বলল,

” আচ্ছা আচ্ছা সরি সরি।”

” রাখ তোর সরি।ওটা এখন ব্যাগে নে।ক্লাসে আমায় দিবি।”

” ওকে ওকে আমি নিচ্ছি….আরে!”

” কি হলো?”

” আরে ওটাতো এখানে নেই।”

” নেই মানে?কই রেখেছিস?খুজে দেখ!”

” আরে এখানেই তো রেখেছিলাম কিন্তু….ইয়ার নেই তো।”

” তাহলে কই যাবে?ইকরা!ইকরা!!”

হঠাৎ উপাশ থেকে কিছুক্ষণ নিরবতার পর ইকরা চিল্লিয়ে বলল,

” কুহু!!!পেয়েছি দোস্ত!”

” নে তাহলে।”

” আরে এখানে পাই নি তো।ব্রেইনে পেয়েছি।”

” ধ্যাত বলিস কি?”

” আরে ইয়ার!কালকে প্র‍্যাক্টিকাল খাতা টা আর আর কিছু বই হাতে নিয়ে তোর কাছেই যাচ্ছিলাম।তখন আদ্র ভাইয়ার এক বন্ধু এসে ধাক্কা লাগলে সব পড়ে যায়।তাকে অনেক কথা শুনিয়ে দিই।সে রেগে গেলে পরে আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দৌড় দেয়।আর আমি তো কিছুই বুঝিনি।আমি বই গুলো তুলে নিয়ে আসি।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি ওই ব্যাটা প্র‍্যাক্টিকাল নোট টা নিয়ে পালিয়েছে রে।”

” গশ!কোন কাজটা তোর দ্বারা কোন দিন হয়েছে বলবি মহারাণী?”

” সরি রে!”

” তোর সরি ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখ!কেন বলতে গেলি এত সব।তাহলে আমি প্র‍্যাক্টিকাল টা পেতাম আর সব খালাস।”

” আচ্ছা প্লিজ বকিস না।”

” আচ্ছা!কোন ভাইয়া জানিস?”

” আরে কি নাম জানি…ভুলে গেছি।”

” চিনবি?”

” কেন চিনবো খাটাস টাকে?”

” উফ!ক্যাম্পাসে আয় আমি আসছি।”

কুহু রেডি হয়ে বেরিয়ে যায়।আর রাস্তায় ইকরা অপেক্ষা করছিল।কুহু গিয়ে চাপড় মেরে দিল।তারপর তাকে নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকল।আর ঢুকতেই নজরে পড়ে আদ্র,ইহান,আবিদ,রাহিন আর ফারাবীকে।সাথে আছে নিশি,ইরা আর অহনা।তারাও তাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের দুজন।ইকরা এবার রেগে বোম হয়ে কুহুর হাত ধরে টানতে টানতে তাদের কাছে গেল।আর গিয়েই ইহানকে আঙুল দেখিয়ে বলল,

” এই যে আপনি!গিভ মি মাই প্র‍্যাক্টিকাল।”

ইহান যেন কিছুই বুঝতে পারেনি।ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কি?কিসের কথা বলছো তুমি?”

” কিসের কথা মানে?আমার প্র‍্যাক্টিকাল খাতাটা ফেরত দিন।” চেঁচিয়ে বলে ইকরা।

” আরে…কোন প্র‍্যাক্টিকাল?”

” ড্রামা বন্ধ করুন গন্ডার কোথাকার!আদ্র ভাইয়া!একে আমার খাতা ফেরত দিতে বলুন।”

” কিসের প্র‍্যাক্টিক্যাল ইকরা?” আদ্র জিজ্ঞাস করল।

তারপর ইকরা সব ব্যক্ত করল।যা শুনে বাকিরা হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে ইতোমধ্যে।

” ইয়ার দিয়ে দে।বাচ্চা মেয়ে!” আদ্র বলল।

” বাচ্চা মেয়ে?আমি বাচ্চা?” মুখ ফুলিয়ে বলল ইকরা।

” আরে…আমার জন্য তো তুই বাচ্চাই!”

” আচ্ছা দিতে বলো!”

” ইহান দিয়ে দে না।”

” দেব!আমার স্টাইলে!” ইহান ভাব নিয়ে বলল।

” আপনার মতো হাবলার আবার কিসের স্টাইল?” মুখ বেঁকিয়ে বলে ইকরা।

ইহান জ্বলে উঠে।

” কিহ্!হাবলা তা-ও আমি?তো তুমি কি?পিচ্চি?”

” হোয়াট!আমি পিচ্চি?কোন এঙ্গেল থেকে আমাকে পিচ্চি মনে হয়?অনার্স সেকেন্ড এ আমি বুঝেছেন?”

” সে যাই-হোক পিচ্চি তো পিচ্চিই!”

” আপনি কি দিবেন?”

” আগে কান ধরে সরি বলতে হবে।কালকের জন্য আর আজকের জন্য।”

ইকরা দিশেহারা হয়ে পড়ে।এতক্ষণ হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে কুহু সব দেখছিল চুপচাপ।এবার পরিস্থিতি ঠিক না দেখে এগিয়ে এসে ইহানকে বলল,

” ইহান ভাইয়া!প্র‍্যাক্টিকাল টা আমার ভীষণ জরুরী!সকাল থেকেই খুজে যাচ্ছি কিন্তু পাচ্ছিনা।প্লিজ দিন।”

” তুমি ওর সাইড নিচ্ছো না তো?”

” না ভাইয়া!কখনোই না।”

ইহান কিছু একটা ভেবে লাইব্রেরি রুমে গেল।তারপর খাতাটা নিয়ে ইকরাকে দেওয়ার ভান করে কুহুর দিকে এগিয়ে দিল।যা দেখে ইকরা বেশ অপমান বোধ করে।আবিদ বলল,

” ইহান!স্টপ ইয়ার!ইকরা তুমি যাও।”

ইকরা কিছু না বলে কুহুকে টেনে ক্লাসের দিকে এগুতে থাকে।আবার পেছন থেকে ইহান বলে উঠল,

” হুম হুম যাও পিচ্চি!”

ইকরা দাঁতে দাঁত চেঁপে ক্লাসে চলে যায়।ইহান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।বাকিদের মুখও থেমে নেই।
___________

পরদিন…….
লাইব্রেরি থেকে বেরুতেই হঠাৎ কেউ ইহানের উপর পানি ছুড়ে মারল।মুহুর্তেই শুভ্র সাদা শার্টটা ভিজে একাকার হয়ে যায়।কালো চুলগুলো ভিজে ললাটের সাথে লেপ্টে যায়।সাথে আদ্র আর রাহিনও ছিল।প্রথমে তারা থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর শুরু করে মাটি কাঁপানো হাসি।ইহান হাত পা ঝেড়ে রেগে গিয়ে সামনে তাকাল।সামনে ইকরা বালতি হাতে মুখে চেঁপে হাসছে।পাশে বুশরা,নাবিলা,ইদ্রান আর নিহান দাঁড়িয়ে আছে।তারা হাবা হয়ে চেয়ে আছে ইহান আর ইকরার পানে।ইকরা এত বড় সাহস করবে তা তাদের ধারণার বাইরে ছিল।ইকরা হাসতে হাসতে বেহাল অবস্থা।ওদিকে আদ্র আর রাহিনের কথা নাই বললাম।ইহান রেগে ধমক দিয়ে বলল,

” ইউ!আমাকে পানি মারার সাহস কি করে পেলে হ্যাঁ!”

ইকরা ব্যাঙ্গ করে বলল,

” বা-রে!আমার সাহসের এখনো কি দেখেছেন?এটা নমুনা মাত্র।হুহ্!”

” আমাকে পানি মারলে কেন?” চিল্লিয়ে বলল ইহান।

” আমায় পিচ্চি বলে অপমান করেছেন তাই।”

” তো পিচ্চিকে পিচ্চি না বলে কি বলব হ্যাঁ?”

” আমাকে কোন দিক দিয়ে পিচ্চি মনে হয় আপনার বলুন তো!” রেগে গিয়ে বলল ইকরা।

ততক্ষণে কুহুও চলে এসেছে।সে এদিক দিয়েই যাচ্ছিল ইকরাদের খোজে হঠাৎ দেখল ইকরা,নাবিলা,বুশরা,ইদ্রান আর নিহান এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।তা দেখে তাদের দিকে এগিয়ে আসতেই দেখল ইকরা ছোট একটা বালতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর কার সাথে ঝগড়া করছে।আর একটু এগুতেই দেখে ইহান কাঁক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।যা দেখে কুহু ঠিক’ই অনুমান করতে পারল।সে দ্রুত গিয়ে ইকরার মুখ চেঁপে ধরল।

” চুপ চুপ ইকরা!ভাইয়া এই পিচ্চিটাকে মাফ করে দিন।আমার তরফ থেকে মাফ চাইছি।”

ইহান কিছু বলার আগেই ইকরা কুহুর হাত সরিয়ে বলল,

” কিসের মাফ হুম?কোন মাফ চাইতে হবে না।এটা তার পাপের সাজা।”

” হোয়াট!সিনিয়রদের সাথে কীভাবে বিহেভ করতে হয় তা-ও জানো না?সাধে কি আর পিচ্চি বলি?”

” তো আপনি কি বুড়ো?আমি পিচ্চি হলে আপনার চোদ্দগুষ্টি পিচ্চি আপনার বউ পিচ্চি।হ্যাবলা কোথাকার!”

” আমি হ্যাবলা তাই না?দেখিয়ে দিচ্ছি!”

বলেই দৌড়ে গেল ইকরার দিকে।ইকরা পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বালতি ঠাস করে নিচে ফেলে দিয়ে ছুট লাগায়।তাদের এসব দেখে বাকিরা হা হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল।

” আরে পালাচ্ছো কেন?আমি হ্যাবলা এর প্রমাণ দেখবে না?” পিছন থেকে চেঁচিয়ে বলল ইহান।

ইকরা দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছে থামার নাম নেই।এদিকে ইহান প্রায় কাছেই চলে এসেছে।এমন সময় ইকরা হয়রান হয়ে থেমে যেতেই ইহান তার সাথে খায় এক ধাক্কা।ইকরা ক্লান্ত হওয়ায় তার বুকে ঢলে পড়ে।ইহান দ্রুত ইকরাকে ধরে নেয়।তাকে তাড়া করার উদ্দেশ্য থাকলেও তাকে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য ইহানের মোটেও ছিল না।তাই না চাইতেও ধরে নেয় ইকরাকে।হঠাৎ চোখ পড়ে ইকরার বাদামী চোখ দুটির দিকে।গাঢ় বাদামী।ইহান না চাইতেও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আর ইকরা এভাবে পড়ে যাওয়াতে ইহানের রিয়েকশন দেখতে তার দিকে তাকাতেই দেখে ইহান এক দৃষ্টিতে তাকে পরখ করছে।এক মোহনীয় তার দৃষ্টি।ইকরা তার নজর বুঝার চেষ্টা করতে থাকে।কিন্তু সে ব্যার্থ হয়।
এদিকে তাদের এমন ধাক্কা দেখে সবাই মুখে হাত চেঁপে দাঁড়িয়ে আছে।এবার তারা ব্যাপারটা বুঝতে পারল।বুশরা হেসে ভ্রু কুঁচকে বলল,

” গায়েস!সামথিং রোমান্টিক রোমান্টিক।”

” অবিয়াসলি!!!” নিহান বলল।

ইদ্রান ভ্রু কুঁচকে বলে,

” এখানে কি বিনা টিকিটে বিনা পয়সায় চিপস পপকর্ন ছাড়াই রোমান্টিক ড্রামা দেখানো হচ্ছে?”

এদিকে রাহিন আদ্রকে বলল,

” হোয়াট ইজ ইট ব্রো!”

আদ্র বলল,

” আই ডোন্ট নো!বাট সামথিং ওয়েট ক্র‍্যাজি।”

” এন্ড রোমান্টিক!” হেসে বলল রাহিন।

এদিকে ইকরার হুশ ফিরে এলো।একি!এ এর কাছে কি করছে এভাবে?দ্রুত ইহান কে ধাক্কা দিয়ে সরে এলো ইকরা।সাথে ইহানও নিজেকে সামলে নেয়।ইকরা কি বলবে না বলবে ভাবতে ভাবতেই চেঁচিয়ে বলে উঠে,

” হোয়াট ইজ ইট?এভাবে ধাক্কা দেওয়ার মানে টা কি?পিচ্চি বলে যখন তখন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবেন?”

ইহান গা জ্বলানো বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলে,

” ওহহো!স্বীকার করলে তো যে,তুমি পিচ্চি!”

ইকরা নিজের কাজে নিজেই মাথায় বারি দিল।আমতা আমতা করে বলল,

” আব……একচুয়ালি…” ইকরাকে থামিয়ে ইহান বলল,

” এনিওয়ে!তুমি খুব’ই পাতলা।তোমাকে উঠাতে আমার এক হাত’ই যথেষ্ঠ।সাধে কি আর পিচ্চি বলি।”

ইকরা রেগে গিয়েও কিছু বলতে পারেনা।মুখ ফুলিয়ে ইহানের পিঠে কিল বসিয়ে দেয় দৌড়।ইহান কিছু না বলে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে।তারপর আদ্রদের কাছে ফিরে আসে।ইদ্রান,নিহান,নাবিলা,কুহু আর বুশরা ইহানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।তারা কিছুই বুঝতে পারছে না যেন।ইহান যেতেই রাহিন বলল,

” কি দোস্ত!চলছে নাকি?”

ইহান ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কি চলছে?”

” আরে বুঝো না?হয়ে গেছে?”

” আরে ডুড কি হয়ে গেছে?”

রাহিন কিছু বলার আগেই আদ্র থামিয়ে দেয়,

” আরে চুপ কর।এসব ড্রামা দেখতে দেখতে ক্লাস টাই মিস গেল।ধ্যাত!”

” সব ওই তোর বোনের জন্য!” ইহান বলল।
_______________

এভাবেই প্রায় ১ মাস চলে যায়।ইশানকে তেমন দেখা যায় নি।কুহু সেইদিন এসব বলার পর থেকে তার মধ্যে একটা অনুশোচনা কাজ করতে থাকে।তার তো বউ আছে তবু সে কুহুর কাছে কেন যাবে?আর তার তো কুহুকে ভালো লাগে না তাহলে কুহুকে আদ্র বা অন্য কারো সাথে দেখলে এমন কেন করবে?তাই আর তেমন আসে নি।আড়ালেই দেখে গেছে কুহু কি করেছে না করেছে সব।তার মধ্যে সে বেশিরভাগই কুহুকে আদ্রর সাথে দেখেছে।অবশ্য এই কয়দিনে কুহু আদ্রর সাথে একটু ফ্রেন্ডলি ক্লোজ হয়েছে।বলতে গেলে কিছুটা ফ্রেন্ডের মতই।আজকাল অল্পই ঝগড়া করে।নিজেদের মাঝে কথাবার্তা শেয়ার করে।আগে যেমন ঝগড়া করতো।ঝাড়ি দিয়ে রাগানো কথাবার্তা বলতো সেটা এখন নেই।এখন শান্তভাবেই ফ্রেন্ডলি কথাবার্তা হয়।আর এই কয়দিনে কুহু,নিহান,বুশরা,নাবিলা,আবির,ইদ্রান,ইকরা আবিদ,ফারাবী,রাহিন,নিশি ওদের সাথে অনেক টা ক্লোজ হয়ে গেছে।তবে ইকরা আর ইহান এসবের কিছুই না।তারা দুজন আগে যেমন ছিল তার থেকেও আপডেট হয়েছে।প্রতিদিনই কোন না কোন কারণে ঝগড়া হয়।একটা মূখ্য কারণ হচ্ছে,’পিচ্চি’।ইহান পিচ্চি বলে বলেই ইকরাকে ক্ষেপায়।যা তার খুব’ই ভালো লাগে।
_____________

কেমিস্ট্রি ল্যাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোমড়,পা ধরে গেছে কুহুর।কাজ প্রায় শেষের দিকে।তারপর একটু বাহিরে গেল হাটাহাটি করতে।হঠাৎই ধাক্কা…….

” উফ!আদ্র ভাইয়া আপনি……”

বলতেই কুহু থেমে যায়।কারণ ওটা আদ্র ছিল না।অন্য একজন ছিল।ছেলেটা ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।এমনিতে ধাক্কা তার উপর এভাবে তাকিয়ে থাকাতে কুহু আরো রেগে যায়।

” হোয়াট দ্যা হেল?একে তো ধাক্কা দিয়েছেন তার উপর এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে টা কি হ্যাঁ!”

কুহুর এমন চেঁচামেচিতে ছেলেটা চমকে যায়।তারপর বলে,

” সরি মিস!আমি আপনাকে ধাক্কা দেয় নি বরং আপনি দিয়েছেন।”

কুহু আরো বেশি রেগে যায়।চোখ পাকিয়ে বলল,

” আমি দিয়েছি?লাইক সিরিয়াসলি?তো আপনাকে ধাক্কা দিয়ে আমার লাভ টা কি শুনি?”

ছেলেটা কি বলবে বুঝতে পারে না।আর কিছু বলার আগেই কুহু এক সুপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পায়।

” কুহু!”

কুহু পেছব ফেরে।আদ্র দাঁড়িয়ে আছে।আদ্র ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এলো। তারপর ছেলেটার পাশে গিয়ে দাঁড়াল।

” আরে আহিল তুই এখানে কি করছিস?”

আহিল নামের ছেলেটা বলল,

” আরে ইয়ার কিছু না।ঘুরছিলাম তখনই এই ডাইনির সাথে ধাক্কা খেয়েছি।আর এতেই শুরু হয়ে গেল এর পেকপেক!”

” কিহ্!জার্কফেস!আমি ডাইনি?শালা তুই কি?”

আদ্র এবার কুহুকে থামিয়ে বলল,

” আরে আরে!কুহু থামো!আহিল এভাবে বলিস না ওকে ও এমনি!আমার সাথেও এমন হয়েছে তুই কিছু বলিস না ইয়ার তোর ঘর উড়িয়ে দেবে।”

আহিল হেসে দেয়।কুহু রাগে ফেটে পড়ছে।আদ্র জোরপূর্বক হেসে বলল,

” আসলে ও আমার মামাতো ভাই আহিল।ও আসলে অন্য ভার্সিটিতে পড়ে
নতুন তাই ভার্সিটিতে ঘুরাতে নিয়ে এলাম।”

” ভাইয়া এই বাম্বেল টাকে সামলে রাখবেন।দ্বিতীয় বার যেন কারো সাথে ধাক্কা না খায়।” কুহু বলল।

তারপর আর কিছু না বলেই মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।আদ্র এবার কুহু যেতেই আহিলের মাথায় বারি দিয়ে বলল,

” কি সমস্যা?এত লাফালাফি করিস কেন?”

” আরে ভাই ওই তো….” আহিলকে থামিয়ে আদ্র বলল,

” হয়েছে চুপ!চল এবার।”

আহিল যেতে যেতে বলল,

” ভাই আর যাই বলিস!মেয়েটা কিন্তু সেই!কিউট একদম।আমায় একটু লাইন করে দে না।”

আদ্রর কথাটা মনে হয় একদম ভালো লাগলো না।সে বলল,

” চুপ বেশি কথা বলিস না।ওর দিকে নজর দিস না ও খুব ডেঞ্জারাস।”

” ভাই প্লিজ!”

” আহিল!” ধমক দিয়ে বলল আদ্র।

আহিল আর কিছু না বলে হাটতে থাকে।
________________

আহিলের মন মানছে না।কিউট পরিটাকে আবারো দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।রাগী মুখ টি খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।মায়ায় পড়ে গেছে তার।
আহিল আহমেদ।আদ্রর মামাতো ভাই।আর আদ্ররই রুমমেট।নতুন শিফট হয়েছে।তবে সে অন্য ভার্সিটিতে ট্রান্সফার হয়েছে।আর আজ সে যায় নি তাই আদ্রর কাছে আবদার করলো তার ভার্সিটি ঘুরে দেখার।আদ্র না চাইতেও তাকে নিয়ে গেল।আর আদ্রর সাথেই ঘুরছিল তখন আদ্রকে ইহান একটা জরুরি কাজে ডাকলে সে সেদিকে চলে গেলে আহিল অন্যদিকে চলে যায়।আর সেখানেই অসাবধানতার কারণে ধাক্কা লাগে কুহুর সাথে।সেখানেই দেখা কুহুর সাথে।তারপর থেকেই সে কুহুর ফেস টা ভুলতে পারছে না।মনে মনে একটা পণ করল,

” সুন্দরি!তোমাকে যে আমার চাইই চাই!”

চলবে,,,,,

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ