#শীতল অনুভবে তুমি
#লেখনীতে মারিয়া
#পর্ব ৬
” একটু শান্তিতে থাকতে চাইছি তা-ও দেবে না?কি চাও তুমি?জীবনসঙ্গী তো বেছেই নিয়েছো অন্য কাউকে তবে আমার কাছে কি?তুমি লাইফে এগুতে পারো আমি পারিনা?হ্যাঁ কেন পারিনা?অবশ্যই আমি পারি।দেখিয়ে দেব!আপনার চেয়েও এগিয়ে যাবো মি. অয়ন রশিদ ইশান!বাঁধা হয়ে আসলে তার স্টেপটা এমন ভাবে নেব যে আপনার জীবনটাই চুরমুর হয়ে যাবে মি. ইশান। ”
একা একাই বিড়বিড় করছিল কুহু।পড়ন্ত বিকেলের হালকা হলুদ লাল মেশানো হেলে যাওয়া রোদ্দুরে স্নিগ্ধ বাতাসে মনের কথা তার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করছিল।তার রোপণ করা প্রিয় বৃক্ষগুলোকেই সে তার নিজের সাথী ভাবে।এটা একটা ভালো পন্থা।মানুষদের সাথে শেয়ার করতে না পারলে রবের সৃষ্ট বৃক্ষের সাথে শেয়ার করাটা সবচেয়ে সুন্দর এবং ভালো উপায়।হঠাৎ কর্ণকুহরে একটা মিষ্টি ভোলা কণ্ঠ ভেসে আসে।
” একা একাই বিড়বিড় করবা নাকি আমাকেও কিছু শুনাবা? ”
তাসনি কুহুর পাশে এসে বসল।তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে ছুড়ে দিল উপরোক্ত বাণীটি।কুহু স্লান হাসল।
” কি শুনবি আর? ”
” কেন কি আবার শুনব?তুমি গাছেদের সাথে সব বলতে পারো আমায় বললে কি তোমার জামাই মরে যাবে? ”
” তাসনির বাচ্চা! ”
” উহু!এটা বললে ভুল হবে।তাসনির বাচ্চার মা হবে। ”
” আল্লাহ্ গো! ”
” হুম!তা কি বলছিলে? ”
” কি আর!ওই ইশান তো আমার পিছুই ছাড়ছে না। ”
” ওই কটবেল আবার এসেছে?কি করেছে? ”
কুহু সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা ব্যক্ত করল।
” কি ক্যারেক্টার লেস রে বইন!এর মতো ছ্যাঁচড়া দুনিয়ায় ৩ টা দেখিনি।কিন্তু ওর এসব করার কারণ টা কি?ওর তো আর তোমায় ভালো লাগে না।তাহলে? ”
” জানিনা কি চায় এ! ”
_________________
মন টাকে হালকা ফ্রেশ করা দরকার ভেবে আজ তাসনিকে নিয়ে ঘুরতে যাবে কুহু।রুবিনাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সে যাবে না।মোবাইল তো আছেই।নিরব আর শুভ যেতে চেয়েছিল কিন্তু টিউটর আসবে বিধায় যায় নি।
বিকেলের দিকে রেডি হয়ে বের হলো।একটা স্কুল মাঠে গেল।বিশাল বড় সুন্দর ঘাস যুক্ত মাঠ।এক প্রান্তে শহীদ মিনার।তার পাশে স্কুল কেম্পাস।আর সামনে ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার মাঠ।দুজন ঝালমুড়ি নিয়ে শহীদ মিনারের সিড়িতে বসে ক্রিকেট খেলা দেখতে থাকে।
” আপু!কি সুন্দর খেলছে!চলো আমরাও খেলি! ”
তাসনি একটু পর বলে উঠল।অবশ্য কুহুরও মন চাইছে কিন্তু এত বড় মেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে খেলাটা ভালো দেখাবে না ভেবে বলল,
” নারে!তুই যা!আমি খেললে লোকে কি বলবে? ”
তাসনি মুখ ফুলিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ধুর!যাও খেলবো না।তুমি আসো নাহলে যাবো না। ”
কুহু কি করবে বুঝতে পারে না।কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ তাসনি হালকা চিল্লিয়ে উঠে,
” এক্টর ভাইয়া! ”
তার বলাবলি কুহু সামনে তাকায়।তাকিয়েই হা!কারণ আদ্র আর তার বন্ধুরা স্কুলের মাঠে প্রবেশ করছে ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম নিয়ে।তারা কুহু আর তাসনিকে খেয়াল করেনি।
” এক্টর ভাইয়া খেলতে এসেছে!ওয়াও! ”
” চুপ!বেশি কথা বলিস না তো! ”
” আরে কয়েকটা ছবি তো নিয়ে নিই। ”
বলেই কুহুর মোবাইল টা নিয়ে তাদের কয়েকটা ছবি ক্যাপচার করে নিল।কুহু বেশ বিরক্ত হয়।এই মেয়েটা খালি আদ্রকে নিয়েই এক্সাইটেড বরাবরের মতো।তারপর দুজন তাদের খেলা দেখতে থাকে।তাদের দল বেশ ভালোই খেলছে বিপরীত দলের বিরুদ্ধে।হঠাৎ ঘটল বিচিত্র একটা ঘটনা।আদ্রর এক ছক্কায় বল টা গিয়ে পড়ল সোজা কুহু আর তাসনির মাঝখানে অবশিষ্ট ফাঁকা জায়গায়।তা-তে দুজনই বেশ ভয় পেয়ে যায়।আরেকটু হলেই দুজনের থেকে একজনের মাথা ফাটতো।এতে কুহু বেশ রেগে যায়।ওদিকে আদ্র তাদের চেহারা দেখতে পায় নি।দূর থেকে চিল্লিয়ে বলল,
” আপু লাগে নি তো?বল টা এদিকে পাস করুন। ”
কুহু আরো রেগে যায়।এদিকে তাসনি আদ্রর কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।কুহু এবার বল টা নিয়ে তাদের দিকে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে গেল।এগিয়ে যেতেই আদ্র কুহুকে দেখে তার ভ্রু আপনাআপনি কুঁচকে গেল।কুহু আদ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
” কি?খেলার সময় কি মন প্লুটোতে রেখে আসেন?প্রবলেম টা কি হ্যাঁ?আমার মাথা ফাঁটলে সেলাই আপনি করে দিতেন? ”
আদ্র চমকে গিয়ে কিছুক্ষণ থ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।তারপর আমতা আমতা করে বলল,
” আব…আমি কি জানতাম নাকি কোন পেত্নী ওখানে বসে আছে? ”
কুহু আরো বেশি রেগে যায়।চেঁচিয়ে বলল,
” হোয়াট!হোয়াট ডিড ইউ সেই?আমি পেত্নী?হাউ ডেয়ার ইউ হা?জার্ক! ”
আদ্র দেখল পরিস্থিতি ঠিক না।কুহু সবার সামনে হুদাই তাকে অপমান করে ছাড়বে।তাই বলে উঠল,
” ওকে ওকে সরি সরি আন্টি আই মিন আপু। ”
” আমি তোর আপু লাগি? ” দাঁতে দাঁত চেপে বলল কুহু।
” আন,,ন,না না আপু না আপু না।ত,তোমার নাম কি যেন..”
তাসনি বলে উঠে,
” কুহু! ”
আদ্র বলল,
” আহ্,,,হ্যাঁ হ্যাঁ কুহু!মাফ করে দাও কুহু!সরি ভেরি সরি।নাও গিভ ইট ব্যাক। ”
কুহু হাতের বলের দিকে তাকাল।তারপর হেসে বলল,
” নো ওয়ে!একটা গান শুনান।তারপর দিব। ”
আদ্র কি বলবে বুঝতে পারে না।তারপর মাথায় একটা শয়তানী বুদ্ধি খেলে গেল।বাঁকা হেসে কুহুর দিকে এগিয়ে গেল।তার দিকে ঝুঁকে বলল,
” আমার রাতের আকাশে
তুমি যেন সন্ধ্যাতারা
প্রভাত হিমেল বাতাসে
তুমি যেন রজনীগন্ধা সুবাস
আমার এ ভালোবাসা
মানে না যে কোনও বাঁধা
প্রেয়সী তুমি সবটুকু আমার। “❤️
এভাবে ঝুঁকে যাওয়াতে কুহু বেশ ভড়কে যায়।আর তার এমন গান শুনে আরো অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।এবার তার বন্ধুরা মানে ইহান,আবিদ,রাহিন আর ফারাবী আর এদিকে তাসনি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে থাকে।তারপর তারা তালি দিতে থাকে।আর তাসনি তালি দিতে দিতে বলে,
” ওয়াও ভাইয়া ওয়াও!জাস্ট ওয়াও!কি করে পারেন এমন এক্ট করতে?আমি বিলিভ করতে পারছি না। ”
এদিকে কুহু ভয়ে প্রায় শেষ।আদ্র তাদের কথা শুনে কুহুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে সরে আসে।কুহু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।আদ্র বলল,
” গান তো শুনালাম।এবার তো দাও। ”
কুহু ভ্রু কুঁচকে কিছু না বলে বলটা আদ্রের দিকে ছুড়ে মারে প্রকট রাগে।আদ্র দক্ষ হওয়ায় তা ঠিক’ই ধরে ফেলে।তাসনি বলে উঠে,
” ভাইয়া ভাইয়া! ”
ইহান বলল,
” হ্যাঁ বলো পুঁচকি! ”
” পুঁচকি? ” তাসনি ভ্রু কুঁচকে বলে।তারপর সেটা আমলে না নিয়ে আবার বলল,
” আ..আমি আপনাদের সাথে খেলতে চাই।প্লিজ প্লিজ ভাইয়া। ”
ফারাবী বলল,
” তো কি হলো।ঠিক আছে।আসো। ”
” ইয়েস! ”
তাসনি খুশিতে আত্মহারা।আদ্র হেসে বলল,
” আচ্ছা তোমার নাম কি যেন? ”
” তাসনি! ”
” ওয়াও প্রেটি নেইম! ”
এদিকে কুহু কিছু না বলে দাঁতে দাঁত চেপে শহীদ মিনারের সিড়িতে আবার বসে পড়ল।আদ্র তা দেখে আবারো হাসল।এই মেয়েটার রাগী মুখটা তার খুব’ই ভালো লাগে।কুহু মুখ ফুলিয়ে বসে রইল।তারপর বাকিরা খেলা শুরু করল।তাসনির খুশি দেখে কে?কুহুর রাগ কিছুক্ষণের মধ্যেই উবে গেল।তাদের হাসাহাসি,খেলা দেখে পরক্ষণের মধ্যে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।তাদের দেখে খুব করে মন চাইছে খেলতে।কিন্তু সেই ইচ্ছাটা বলি দিল।কিন্তু দূর থেকে কিছুক্ষণ পর তাসনি তাকে ইশারা করে ডাকল,
” আপু!আসো না খেলতে! ”
কুহু ইশারা করে বলে,
” না!তোরা খেল। ”
তাসনি এবার কুহুর দিকে এগিয়ে এলো।তারপর তার হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
” কি হলো আপু আসো না প্লিজ! ”
” আ..আরে কি করছিস ছাড়!তোরা খেল! ”
” নাহ্ তুমিও আসো প্লিজ!আমি জানি তুমি খেলতে চাও কিন্তু পারছো না।প্লিজ আসো। ”
দূর থেকে আদ্র তাসনিকে ডাকল,
” তাসনি!এসো এখানে দাঁড়িয়ে যাও। ”
” আসছি! ”
বলেই কুহুকে মানাতে লাগল কিন্তু কুহু নারাজ।এদিকে অনেক্ষণ হয়ে যাওয়া তাসনির দিকে তাকিয়ে দেখল তাসনি কুহুকে টানছে।তাই আদ্র এগিয়ে তাদের দিকে এলো।
” কি হয়েছে? ” আদ্র প্রশ্ন ছুড়ে দিল।
তাসনি বলল,
” ভাইয়া দেখুন না।আপুকে খেলতে ডাকছি কিন্তু আসছেনা। ”
আদ্র কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,
” তো কি হলো আসো!ক্রিকেট খেলার তুলনা হয় নাকি?এসো ভালো লাগবে। ”
” আরে নাহ্ আপনারা খেলুন।আমি খেলবো না। ”
” আরে একবার খেলেই দেখো।যদি ভালো না লাগে তো আমাকে যা খুশি করো।এভাবে বসে বসে দেখে কি হবে?চলো! ”
তাদের কথা শুনে কুহু আর বসে থাকতে পারল না।এমনিতে খেলতে মন চাইছে তার উপর তাদের জোর করা দেখে আগ্রহ আর দমাতে না পেরে উঠে দাঁড়াল।কিন্তু কুহু খেলতে পারছে না।তা দেখে তাসনি বলল,
” আপু তুমি তো পারছো না? ”
” হ্যাঁ একচুয়ালি প্রায় ৭-৮ বছর ধরেই তো খেলছি না।তাই পারছি না। ”
” এখন কি করবে? ”
আদ্র বলল,
” আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।এসো! ”
” আপনি? ”
” হ্যাঁ সমস্যা আছে?ঠিক আছে যাও! ”
” আরে না না।শিখবো শিখবো। ”
তারপর আর কি!কুহু ব্যাট ধরলে আদ্র তাকে বাচ্চার মতো ব্যাটিং শিখাতে থাকে।তাসনি যা দেখে মুখ টিপে জাসে সাথে বাকিরাও।কিছুক্ষণের মধ্যেই কুহু ব্যাটিং শিখে যায়।আর লাফাতে লাফাতে খেলতে থাকে।আদ্র তার বাচ্চামো দেখে ফটাফট কিছু ছবি তুলে ফেলে যা দিয়ে পরে তাকে জ্বালাতে পারে।
এই দিন’টা সত্যিই কুহুর জন্য স্মরনীয়।বেশ ভালোই কেটেছে যা সে কখনোই ভুলবে না।অনেক আনন্দ পেয়েছে।তারপর ফিরে যাওয়ার সময় আদ্রকে একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে বলল,
” ধন্যবাদ!আজ আপনার জন্য অনেক আনন্দ করতে পারলাম। ”
প্রতিউত্তরে আদ্রও একটা মোহনীয় হাসি উপহার দেয়।
চলবে,,,,