“শপথ”(পর্ব-১)

0
2567

“শপথ”(পর্ব-১)

প্রচন্ড জ্বরের ঘোরে যখন অবনি ভুল বকছিল তখন তার রুমমেট মৌরি ভীষণ ভয় পেয়ে গেল। মাঝরাতে বাধ্য হলো তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে। সকালে যখন অবনি চোখ মেললো তখন দেখলো, মিষ্টি দেখতে একটা ছেলে তার হাত ধরে নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। অবনির মনে পড়ে গেল, দু’দিন আগে এই ছেলেটাকেই সে পাশের ছাদে এক ঝলক দেখেছিল। স্যামস্ অবনির দিকে না তাকিয়েই বললো-
–“এখন জ্বর নেই দেখছি, তো কেমন ফীল করছেন?”
কথাগুলো বলতে বলতে স্যামস্ অবনির ফাইল হাতে নিলো। ফাইল খুলে রোগীর নাম “অবনি” লেখা দেখে স্যামস্ হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো সে। এই প্রথম সে অবনির মুখের দিকে তাকালো। নামের মতো চেহারার সাথেও সামান্য কিছু মিল খুঁজে পেয়ে সে ভীষণ অবাক হলো।
অবনি বলল-
–“জ্বী আগের চেয়ে বেটার ফীল করছি।”

স্যামস নিজেকে স্বাভাবিক করে ফাইলের দিকে চোখ সরিয়ে নিলো। বললো-
–“কিছু টেস্ট লিখে দিচ্ছি, রিপোর্ট গুলো এলে আমি দেখবো।”
–“আসলে আমি আজকেই বাসায় ফিরতে চাই।”
–“কেন?”
–“আমি এখন বেটার আছি তাই হাসপাতালে থাকার আর দরকার নেই।”
–“আপনার দরকার আছে কি নেই সেটা ডাক্তার বুঝবেন, আপনি নন।”
–“আসলে আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি। এভাবে হাসপাতালে শুয়ে থাকলে আমার চলবে না। চাকরীটা না থাকলে আমি ভীষণ অসুবিধাতে পড়ে যাব।”
–“বাট আপনার রিপোর্ট গুলো তো আমাকে দেখতে হবে। আর আপনাকেও ভীষণ দূর্বল দেখাচ্ছে। আপনার ফ্যামিলির কেউ আসেনি?”
–“কেউ নেই, আমি একাই থাকি। অবশ্য আমার বান্ধবী আমার রুমমেট।”
–“ওহ আচ্ছা।”

রোগ সংক্রান্ত কথাগুলোর মধ্যে দু’জন যে, প্রতিবেশী তা সেখানে প্রকাশ পেলো না। অবনি মনে করলো হয়ত কম কথা বলা স্বভাবের ছেলেটা প্রতিবেশী হবার ব্যাপারটাকে তেমন গুরুত্ব সহকারে দেখছে না তাই অপরিচিতর মতোই কথা বলছে। কিন্তু স্যামস্ কখনও অবনিকে তাকিয়েই দেখেনি। তাই অবনিকে চেনার প্রশ্নই আসে না। অবনি এক রকম বাধ্য হয়েই বললো-
–“যদি আপনার আপত্তি না থাকে তবে রিপোর্ট গুলো আমি আপনার বাসায় গিয়ে দেখিয়ে আসবো।”
–“আমার বাসা আপনি চিনবেন কি করে?”
–“আমি তো আপনাদের বাসার পাশেই থাকি।”
স্যামস অবাক হয়ে বললো-
–“কোন বাসাটা?”
–“আমরা এই মাসেই আতিক উদ্দীন আঙ্কেলের বাসার তৃতীয় ফ্লোরে উঠেছি।”

“তৃতীয় ফ্লোর” শুনে চমকে উঠলো স্যামস্। মুহূর্তেই তার চোখমুখ শুকিয়ে গেল। তার মনে বেজে ওঠলো বিষাদের ভায়োলিন। কতশত স্মৃতি জানালা খুলে বেরিয়ে আসতে শুরু করলো। হুট করে তার চোখে ভেসে উঠলো হাসিতে মাখামাখি দুটো কাজল কালো মায়াবী চোখ। কানে ঘন্টার মতো বেজে উঠল একটা মেয়ের দুষ্টুমিতে ভেজা হাসির আওয়াজ। যে আওয়াজ শুনে একদিন সে বেহুশ হয়ে গেছিল।
স্যামসন বাসায় রোগী দেখে না কিন্তু পাশের বাসার তৃতীয় ফ্লোরের প্রতি তার গভীর দূর্বলতা আছে। আর সেই দূর্বলতার কারণেই সে অবনিকে নিষেধ করতে পারলো না। স্যামস নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো-
–“ওহ আচ্ছা। তাহলে তো কাছেই বাসা। আপনি সন্ধ্যায় আমাদের বাসায় এসে দেখা করে যাবেন।”
–“ওকে”

অবনিকে সে রিলিজ দিয়ে দিলো। অনেক রোগীর ভীড় আর ব্যস্ততায় স্যামস্ ভাবনায় ডুব দেবার সুযোগ পায় না কিন্তু স্মৃতির জানালায় উঁকি দেবার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে উঠলো। তার হৃদয় বললো “একটু অবসর চাই প্রাণের মানুষটার জন্য কাঁদতে চাই।” অবশেষে সেই অবসরটুকুও তার মিললো না।

সন্ধ্যায় অবনি রিপোর্ট গুলো নিয়ে স্যামসদের বাড়িতে গেল। চেকআপ করানোর আগেই পরিচিত হলো স্যামসের মায়ের সাথে। শহুরে জীবনে কেউ পাড়া প্রতিবেশীদের চেনে না। কে কখন আসছে আর কে কখন যাচ্ছে তার খবর কারোর জানা নেই। শুধুমাত্র বাড়িওয়ালারাই ভাড়াটিয়াদের খবর রাখে, নেহায়েত বাসাটা ভাড়া দেয়া হয়েছে সেই সূত্রে। স্যামসের মা অমায়িক একজন মানুষ। খুব দ্রুত মানুষকে আপন করে নেবার অলৌকিক ক্ষমতা তাছে তার। প্রথম দেখাতেই অবনিকে তার ভালো লেগে গেল। চুপচাপ শান্ত স্বভাবের মেয়েটা দেখতে ভীষণ মিষ্টি। তার থেমে থেমে কথা বলা আর বারবার চোখের পলক ফেলার মধ্যে দারুণ এক মাধুর্য্যতা বিরাজিত। এই টুকুতেই আটকে যাওয়াই যায়।

স্যামসের মা ছেলের অতীত ভুলিয়ে দেবার জন্য এতটাই ব্যাকুল যে, তিনি তাড়াতাড়ি ছেলেকে বিয়ে দিয়ে সংসারী করতে চান। তিনি দিনরাত ছেলের ভাবনায় বিলিন হয়ে থাকেন। একটাই সন্তান তার অথচ সে বিবাহ বৈরাগী জীবনযাপন করছে। দিনরাত বুঝিয়েও কোনো লাভ হয় না। তবুও তিনি হাল ছাড়েন না।
–“আমাদের বয়স হয়েছে, আর কত বছর এ ভাবে চলবে বল তো বাবুসোনা? আমাদের কি ইচ্ছে করে না যে, সারা বাড়ি একটা ছোট বাচ্চা দৌড়ে বেড়াক?”
–“মামনি প্লিজ!”
–“দোহায় লাগে আর রিকুয়েস্ট করিস না বাবু!”
–“মামনি এ জীবনে এটা সম্ভব হবে না তাই তুমিও প্লিজ রিকুয়েস্ট করো না। বারবার তোমাকে ফিরিয়ে দিতে আমার কষ্ট হয় এটা কেন বুঝো না?”

ছেলের মুখ দেখেই সব মায়েরা বোধহয় মন পড়তে পারেন। তাই স্যামসের মাও জানেন যে, তার ছেলের গোটা হৃদয়টা “অবন্তিকা” নামের একটা মেয়ে দখল করে আছে। সে নেই, কোত্থাও নেই তবুও স্যামসের অস্তিত্ব জুড়ে তারই বসবাস। অনেক ইতস্ততা স্বত্বেও তিনি বলেই ফেললেন-
–“আর কত বছর অবন্তিকার স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকবি? নিজেকে নিয়ে ভাব একটু। তোর বাবার বয়স হয়েছে।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল স্যামস। মনে মনে বললো, “আমার এক জীবনে বয়ে যাওয়া সুখের ধারাপাত কি কখনও ভুলে যাওয়া যায় মামনি? কতশত বিরহের সুরে করুণ ভায়োলিন হয়ে বেজে ওঠে আমার অব্। আজও ঐ বারান্দার দিকে তাকানোর সাহস পাই না। মনে হয় এই বুঝি সে ডেকে উঠবে ‘এই যে ডাকাত ডাক্তার’।”
নিজেকে সামলে নিয়ে সে বললো-
–” অচেনা একটা মেয়ে এসে আমার সাথে সংসার করতে পারবে না। বউয়ের জন্য আমার সময় কোথায়?”
–“এর মধ্যেই হবে। তুই শুধু রাজি হয়ে যা বাকিটা আমি দেখবো।”

অবনিকে যে, তার পছন্দ হয়েছে সেটা তিনি প্রকাশ করলেন না। এই অবস্থায় হুট করে বললে ছেলে যে রেগে যাবে তা তিনি বুঝেন।
বিয়েতে স্যামসের মন সায় দেয় না কিন্তু বাবা মায়ের দিকটাও তো তাকেই দেখতে হবে। কারণ সে ছাড়া তাদের কথা ভাববার মতো কেউ নেই। স্যামসের মা তার ছেলের মনটা পড়তে পারেন। কম কথা বলা ছেলেটার কি কি দরকার তা তার মা খুব ভালো করেই বুঝতে পারেন। এমন কি ছেলে যে অবন্তিকার মধ্যে বিলিন হয়ে আছে গত তিনবছর ধরে সেটাও তিনি খুব ভালো করেই উপলব্ধি করতে পারেন। তিনি মনে করেন ছেলেকে বিয়ে দিলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু স্যামস্ মনে করে, অবন্তিকার যায়গা পৃথিবীর আর কোনো নারী পাবার যোগ্যতা রাখে না।

অবনি আর স্যামসের রুমের বারান্দাটা মুখোমুখি। অবনি প্রায়ই রাতের কিছুটা সময় সেখানে কাটালেও স্যামসের দেখা সেখানে কখনোই মেলেনি। স্যামস্ বেলকোণ বারান্দাতে যাবার দরজা কখনোই খোলে না। এমন কি বারান্দার পাশের জানালাটাও নয়। এই বারান্দায় অবন্তিকার কতশত স্মৃতি লেপ্টে আছে যার হদিস সে ছাড়া আর কেউ জানে না।
অবনির মুখের আদলের সাথে অবন্তিকার মুখের আদলের অনেক মিল আছে। এই বিষয়টা স্যামসকে ভাবিয়ে তুলে। অবনি যদি অবন্তিকার আত্মীয় হতো তবে সে অবশ্যই জানতো। কিন্তু এই নাম না কখনও সে শুনেছে, না কখনও এই মেয়েকে সে দেখেছে। তাহলে কে এই অবনি? এমন হাজারটা প্রশ্ন এসে স্যামসের মনে ঝড় তুললো।

ইদানিং ভোরবেলা ছাদে গেলে গান শোনা যায়। তবে সেটা গুনগুনের চেয়ে কিঞ্চিত জোরে। স্যামস্ প্রায়ই ভোরে উঠে ছাদে যায়। তবে ছাদে আসার আগ্রহটা তার তীব্র ভাবে নেই। ছাদটাও তো তার অতীত জীবনের স্মৃতির পট। সেই স্মৃতিপটে দাঁড়িয়ে আরেকটা মেয়ে ভোরবেলা গান গায়। স্যামসের ভালো লাগে না। তার মনে হয় অব্ ছাড়া এই ছাদে কারোর আসার রাইট নেই।
সে দিনরাত হাসপাতালে পড়ে থাকে। সহস্র ব্যস্ততার মধ্যে ঢুবে থাকে শুধুমাত্র একটা মানুষকে ভুলে থাকার জন্য। কিন্তু শত ব্যস্ততার ভীড়েও কিছু স্মৃতি এসে তাকে উঁকি দিয়ে যায়। তখন অসহায়ের মতো সেই স্মৃতির পানে চেয়ে থাকে সে। কখনও কোনো কারণেও সে ভুলে যেতে পারে না কিছুতেই। সেই মানুষটার টানেই ভোরবেলা সে ছাদে যায় কারণ এই সময় পাশের ছাদে কেউ থাকে না। সে পাশের ছাদে কাউকে দেখতে চায় না। ইভেন অবনিকেও নয়। সে শূন্যতার মাঝেই তার অতীত খুঁজে ফেরে। হৃদয় হাহাকার করে বলে উঠে, “আর একটিবার ফিরে এসো অবন্তিকা!”

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

(পরের পর্ব আসছে….)
Written by- Sazia Afrin Sapna

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে