Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"শত্রু শত্রু খেলাশত্রু শত্রু খেলা পর্ব-৩২+৩৩

শত্রু শত্রু খেলা পর্ব-৩২+৩৩

#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_৩২
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)

নাজমা ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে গেলো রাগ ঝাড়লো মাসুদের উপর। আনোয়ারের উপর তো সে আগে থেকেই ক্রোধে ফেটে পড়ছে। কিন্তু এখন নিজের জামাইয়ের উপরও অতিষ্ঠ সে। রেগে গর্জে উঠলো মাসুদের উপর।

তুমি বাবা হয়ে কিভাবে চুপ আছো বলো তো? সৌরভ প্রিয়া বিবাহিত। তারা দু’জন ধর্মীয়-আইনি ভাবেও স্বামী-স্ত্রী। তাহলে এভাবে অপরিচিতদের মত এরা বিছিন্ন থাকবে কেনো? আমাকে বুঝাও।

মাসুদ বউয়ের কথায় কিঞ্চিৎ হাসলো। সে বাবা হয়ে কি করবে? যেখানে তার ছেলেই এই প্রস্তাবেই রাজি হয়েছে। তাছাড়া মেয়েটা সদ্য আটারোতে পা’ দিয়েছে। কলেজ শেষ হয়নি এখনো। তাই হয়তো আনোয়ার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টা অন্যদিক থেকে খারাপ নয়। আবার একজন ছেলের দিক থেকে ভাবতে গেলে অনেক কিছু। যাই হোক এটা এখন ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাদের নাক না গলানোই ভালো।

নাজমা মাসুদের নিশ্চুপতা দেখে কর্কশ গলায় চেঁচালো।

তুমি কি মুখে কুলুপ এঁটেছো। কোনো জবাব দাও না কেনো?

মাসুদ বউয়ের আচরণে বিরক্ত হলেন। তার বউ একটু না পুরোই বেশি বুঝে। তার ছেলের সমস্যা না হলে তাদের কিসের সমস্যা। কিন্তু এই মহীয়সী নারীকে কে বোঝাবে? তিনি মনে মনে হা-হুতাশ করলেন। কিঞ্চিৎ সাহস সঞ্চার করে বললেন,

একটা বছরেরই তো ব্যাপার। দেখবে চোখের পলকে চলে গেছে। এটা নিয়ে মাথা ঘামিয়েও না’তো আর। কথাগুলো বলে মাসুদ নিজের জান বাঁচাতে জলদি রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

পিছন থেকে নাজমা চেঁচালো। কিন্তু মাসুদ তার কথাকে আর পাত্তা দিলো না। সে ড্রয়িং রুমে বসে টিভির ভলিউম বাড়িয়ে খবর দেখছে। আরাভ গুটি গুটি পায়ে দাদার কাছে আসলো। মাসুদ তাকে কোলে তুলে নিলো। কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

দাদাভাই তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে যাও। তারপর দু’জন মিলে এই বুড়িকে শায়েস্তা করবো। ঠিক আছে।

আরাভ দাদার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠল। তারপর আধো আধো বুলিতে আওড়ালো,

তাততা,,,ভুত,,ভুত।

দাদা নাতি দুইজনে খুঁনশুটিতে মেতে উঠলেন। আচমকা গৌরব বাসায় প্রবেশ করতেই তার আর মাসুদের চোখাচোখি হয়ে গেলো। মাসুদ নিজেই চোখ নামিয়ে নিলেন। এ বেয়াদব ছেলের দিকে তিনি তাকাতেই নারাজ আর কথা তো অনেক দূরের বিষয়। গৌরব তার বাবার রাগের কারণ বুঝতে পারে। কিন্তু মনোঃক্ষুন্ন হলেও অন্যদিক থেকে তার মন তৃপ্তিতে ভরে আছে।

মাসুদ আলিশবাকে ডাকলেন,

মা’ আমাকে এককাপ চা’ দাও তো। আমার দাদু ভাইয়ের জন্যও কিছু নিয়ে আসো। দুইজনে মিলে খাবো।

আলিশবা শ্বশুরের জন্য চা নিয়ে আসলেন। মাসুদ হাসি-মুখে নিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলেন। মা’ তোমার বাড়িতে কথা হয়েছে? তারা কবে আসবেন? আলিশবা শ্বশুরের কথায় কিঞ্চিৎ হাসলো। হাসি-মুখেই বললো,

তারা আগামী কাল রওনা দিবেন। কাল দুপুর দু’টোয় ফ্লাইট।

মাসুদ নিশ্চিন্ত হলেন। এবার আলিশবার রিসিপশান সেরে নিবেন। তার বেয়াড়া ছেলের জন্য মা’ ছেলে দুইজনে এসব কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তার ছেলের কান্ডের কথা ভাবলে এখনো গা শিউরে ওঠে তার।

______________________________

প্রিয়া গত দুই’দিন সৌরভকে দেখার জন্য চড়ুই পাখির মত ছটপট করলেও এখন সে একদম শান্ত। মনে হচ্ছে সে এই সৌরভকে চিনেই না। লজ্জায় আর জড়োতায় সে একবারও সৌরভের দিকে তাকায়নি। চুপচাপ সে নিজের ম্যাথ করে যাচ্ছে।

সৌরভও নিজের গাম্ভীর্য বজায় রেখেছে। সে আগের মতই গম্ভীর হয়ে প্রিয়াকে পড়াচ্ছে। তাদের মাঝে যে একটা স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক আছে কেউ দেখলে বলতেই পারবে না। দুইজনে চুপচাপ। পড়ার ব্যাপার ছাড়া টুঁশব্দও তাদের মাঝে নেই। প্রিয়া নিজেকে মনোযোগী দেখালে সে আধোতে কোনো মনোযোগ দিতেই পারছে না। তার তো পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। নাহ, পড়ার জন্য না বরং লজ্জায়। সে একের পর এক ভুল ম্যাথ করেই যাচ্ছে। কিন্তু সৌরভকে বলতেও পারছে না। সে হাজার ভেবেও কূল কিনারা খুঁজে পেলো না সৌরভকে কি নামে ডাকবে এখন?

স্যার, ভাইয়া, না’কি এই যে শুনছেন। উফফ্! কিছুই মানসম্মত নয় তার কাছেই। সেই থেকেই তার শরীর থরথর করে কাঁপছে।

সৌরভ প্রিয়ার খাতা দেখে অবাক। এই মেয়ে কি ভুলের ফ্যাক্টরি নিয়ে বসে আছে। সে একটা ধমক দিলো।

কি ব্যাপার প্রিয়া! কি সমস্যা তোমার? আমি কি এখানে তোমার সাথে রোমান্স করতে আসছি। এরকম কাঁপছো কেনো? এতগুলো ভুল ম্যাথ হলো কিভাবে তোমার? এই ম্যাথ কিন্তু তোমাকে আগেও করা হয়েছে। ভুল হওয়ার তো কথা না প্রিয়া।

প্রিয়া ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল। সে গাইগুই করছিল কি উত্তর দিবে এখন?

অস্থির হয়ে সৌরভ নিজের কপালে নিজের বাম হাত ঠেকালো। এই মূহুর্তে তার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুষ্কর কাজ নিজের বউয়ের সামনে নিজেকে সংযত রাখা। কিন্তু তাকে যে এই কাজ করতেই হবে। নয়তো এই মেয়ের পড়াশোনা সব লাটে উঠবে। কিয়ৎক্ষন সে চুপচাপ প্রিয়াকে পর্যবেক্ষণ করলো। তারপর সে কোমল গলায় বললো,

প্রিয়া আমি কি তোমার জন্য নতুন টীচার নিয়ে আসবো? আমার কাছে পড়তে তোমার অসুবিধা হচ্ছে মেইবি।

প্রিয়ার বক্ষস্থল কেঁপে উঠলো সৌরভের এমন কথায়। সত্যি সৌরভ তাকে আর পড়াবে না। তার অক্ষিদ্বয় জলে টইটম্বুর হয়ে উঠলো। প্রথমদিন সৌরভ পড়াতে আসলো সেদিন সে প্রত্যাখ্যান করেছিল পড়বে না বলে তবুও সৌরভ তাকে পড়িয়েছে। আর এখন সে পড়তে চাইছে কিন্তু সৌরভ চলে যেতে চাইছে।

প্রিয়ার বড্ড অভিমান হলো। সে উত্তর দিলো না, না একবারের জন্য সৌরভের দিকে তাকালো। নিজের হৃদগহীনের কষ্টগুলো সে আড়াল করে রাখলো সৌরভ থেকে। নৈশব্দে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে।

সৌরভ প্রিয়ার যথাযথ উত্তর পেলো না। তার মনটা বড্ড আকুপাকু করছে প্রিয়ার মুখ নিঃসৃত একটা বাক্যে শুনতে। এই মেয়েটাকে সে বুঝতেই পারে না। তার তো খুব ইচ্ছে করে বউটাকে নিজের কাছে রাখতে। সারাক্ষণ অপলক ঐ অক্ষিদ্বয়ের মাঝে নিজেকে হারাতে। কিন্তু সে তো অপারগ চাইলেও সব কিছু করতে পারবে না। সে যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নিজের সাথে। এর হেরফের হলে তার ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে। আর যাই হোক সে নিজেকে এতটা ছোট করতে পারবে না। সৌরভ প্রিয়াকে ফের প্রশ্ন করলো,

তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে আমার কাছে পড়তে?

প্রিয়ার যেনো এবার রাগ থরথর করে বাড়লো। সে কি একবারও বলেছে তার সমস্যা হচ্ছে। এই সৌরবিদ্যুত এত বেশি বুঝে কেনো? কই এসে তো একবারও জিজ্ঞেস করেনি প্রিয়া কেমন আছো? এই যে তার সামনে আস্ত একটা মানুষ বসে আছি সেই খবর তার নেই। অথচ সে যা চিন্তা করেনি সেটা তো ঠিকই তিনি দার্শনিকের মত ভেবে নিয়েছে। এবারও উত্তর দেয়ার ইচ্ছে হলো না তার। টিউশন শেষে উঠে দাঁড়ালো প্রিয়া। তবে যাবার আগেই সৌরভকে ধীর কন্ঠে বলল,

কালকে নতুন টীচার পাঠিয়ে দিবেন। আমি আর আপনার কাছে পড়বো না।

ছোট্ট দু’লাইনের বাক্য সৌরভের কর্ণকুহরে যেনো বজ্রপাতের সৃষ্টি করলো। মস্তিষ্কে তার র*ক্তক্ষরণ হতে লাগলো। একটা বছরের জন্য বউ থেকে সে এমনিতেই দূরে আছে। চাইলেও না ছোঁয়া যাবে, না ধরা যাবে। কিন্তু মন ভরে দেখার জন্য টিউশনটাই হচ্ছে একমাত্র উপায়। যদি দিন শেষে টিউশনটাও না থাকে তাহলে সে বাঁচবে কিভাবে? পিছন থেকে সে প্রিয়ার হাতটা খপ করে ধরলো। ত্বরিত টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।

প্রিয়া সৌরভের এহেন আচরণে হতচকিত হয়ে গেলো। মনে মনে উত্তরের বহর সাজালেও মুখে কোনো বাক্য উচ্চারিত হলো না।

সৌরভ প্রিয়াকে নিজের মুখের সামনে নিয়ে এসেই তার চক্ষুদ্বয়ে অগ্নিদৃষ্টি ফেললো। প্রিয়ার মুখে ফুঁ দিয়ে তার এক ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

এত শখ কেনো নতুন টীচারের? কিন্তু প্রিয়ারানী আপনার জন্য বড্ড আফসোস হচ্ছে আমার। অন্তত আপনার জামাই বেঁচে থাকতে নতুন টীচারের কথা তো ভুলেই যান।

প্রিয়া সৌরভের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না। সে চাইছে ছুটে পালাতে। কিন্তু সে হাঁসফাস করলেও সৌরভ থেকে সে পালাতে পারলো না। সৌরভও সুযোগ বুঝে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত কাজ করে ফেললো। প্রিয়া লজ্জায় মিইয়ে গেলো। সৌরভ তাকে লজ্জা দিতে আবারও একি কাজ করলো। পরে ধস্তাধস্তি করে সৌরভ থেকে ছাড়া পেতেই ছুটে পালালো। যাওয়ার আগেই কিন্তু সৌরভকে সে গালি দিতে দিতে পালালো।

অসভ্য বেয়াদব সারাক্ষণ খালি চুমু খাওয়া।

সৌরভ মিট মিট করে হাসলো। সে কখন সারাক্ষণ চুমু খেলো। বউকে তো সে কাছেই পাই না। তার বউয়ের সাথে দূরত্ব শুধু একটা দেয়ালের মাত্র। কিন্তু দেয়ালের অপর পাশেই তার বউ থাকলেও তাকে সে কাছেই পাই না। বউ তার পাশে থাকলেও সাথে নেই। চাপা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো তার।

এখনো ৩৬২ দিন তাকে অপেক্ষা করতে হবে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,

#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_৩৩
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)

পরীক্ষা শেষে প্রিয়া, রাঢ়ী আড্ডা দিচ্ছে। নীল, শ্রাবণ দুইজনেই এদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এই দুইজন বিবাহিত মহিলার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই। তারা এদেরকে চিনে না। নীল তো ভীষণ ক্ষেপে আছে রাঢ়ী, প্রিয়ার উপর। রাঢ়ীর বিয়ে হলো সেও তাদের ইনবাইট করলো না। এখন প্রিয়া সেও তাদের কে ধোঁকা দিলো। এরা বেষ্টফেন্ড হতেই পারে না।

শ্রাবণের চোখে জল ছলছল করছে। সে পারছে না মেয়েদের মত ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে। কত নিষ্টুর বান্ধুবী তাদের একটু দাওয়াতও দিলো না। সে একটু না হয় বেশীই খায় তাই বলে বিয়ের দাওয়াতে যেতে বলবে না। আরে সে’কি গ্রিফট ছাড়া যেতো না’কি। মেয়েরা সত্যিই হারামি হয়। এদের দিলে দয়া-মায়া হয় না।

কিন্তু নীলের চোখে জল না হলেও সে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়া, রাঢ়ীর উপর। তার ইচ্ছে করছে এই দু’জনকে একসাথে উঠিয়ে রাজাঝির দিঘিতে চুবাইতে। লুবনা তাদের পাশে বসে ফ্যাচ ফ্যাচ করে চোখের জল ফেলছে। তাকে তো সৌরভের মা দেখতে যাওয়ার কথা ছিলো। বিয়ের কথা অনেকটাই পাকা হয়ে গিয়েছিলো। শুধু সৌরভের মা’ গেলেই তাকে আংটি পরাতো। কিন্তু সেদিন বিকেলে আচমকাই সৌরভের মা’ ফোনকল দিয়ে বললো তাদের ছেলের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। পরেরদিন না’কি বিয়ে হবে মেয়েদের গ্রামের বাড়িতে। মেয়ে হিসেবে প্রিয়ার নাম শুনে লুবনায় ঠাঁই বসে পড়েছিলো। প্রিয়া বলেছিলো তার আর সৌরভের বিয়ে কখনই হবে না। তাহলে এখন কিভাবে হয়ে গেলো এই ভেবে লুবনার চোখের জল ক্রমাগত স্রোতের ন্যায় উপচে পড়ছে। সৌরভ তাকে এভাবে রিজেক্ট করলো। সে দেখতে কি এতই খারাপ। প্রিয়ার থেকে তো দ্বিগুণ সুন্দরী সে। তাহলে সৌরভ কেনো তাকে পছন্দ করলো না। এই দুঃখ তার কখনো যাবে না।

প্রিয়া অনেক সাহস সঞ্চার করে নীল, শ্রাবণের পাশে বসে। মুখে কিঞ্চিৎ হাসি তার। নীল, শ্রাবণ ভাবলেশহীন বসে আছে। প্রিয়া আমতা আমতা করছিলো প্রথমে। পরে নিজেকে স্থির করে বললো,

বিশ্বাস কর। এই বিয়ে নিয়ে আমি অনেক দো’টানায় ছিলাম। সৌরভকে স্বামী হিসেবে মানতে আমার অনেক সময় লেগেছে। আর সত্যি বলতে কি আমার প্রচুর লজ্জা লাগছিল। তোদের দাওয়াত দেওয়া তো পরের কথা আমি নিজেই নিজের সাথে চোখ মিলাতে পারছিলাম না। কিভাবে সৌরভকে বিয়ে করবো তাকে কিভাবে স্বামী মানবো। এসব দোটানায় থাকতে গিয়ে আমি তোদের যে দাওয়াত দিই নাই তা নয় কিন্তু। আসলে লজ্জায় তোদেরকে দাওয়াত দিই নাই। তোরা যদি জানতি তাহলে আমাকে প্রচুর পঁচাইতি। কিন্তু রাঢ়ীকে তো আমি দাওয়াত দিই নাই। সে তো পরশ ভাইয়ার স্ত্রী হিসেবে দাওয়াত পেয়েছে। আমি তো কাউকে দাওয়াত দিই নাই।

পরশের কথা শুনে নীল, শ্রাবণ বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো রাঢ়ীর দিকে। শ্রাবণ কটমট করে রাঢ়ীকে বললো,

কত বড়ো হারা’মি দেখছো। নিজের জামাইয়ের নাম পর্যন্ত বলে নাই আমাদের। কত ধুরন্ধর ভাইরে ভাই।

রাঢ়ীর ছেড়ে দে মা’ কেঁদে বাঁচি অবস্থা এখন। এই ভয়ে সে পরশের নাম বলেনি। সে জানতো এই হারা’মি দোস্তগুলা তার ইজ্জতের ফালুদা বানাবে। তাই বলতে গিয়েও সে পরশের নাম মুখে আনেনি। তার মুখে কিঞ্চিৎ মেকি হাসি। সে শ্রাবণকে বললো বিশ্বাস কর আমি জানতামই না আমার বিয়ে পরশের সাথে হচ্ছে। বিয়ের পর আমি ওর মুখ দেখেছি। আমি দাওয়াত দেয়নি ভাইয়াদের উপর রাগ করে। কিন্তু পরশের নাম বলেনি লজ্জায়। তোরা সবগুলা মিলে আমাকে পঁচাইবি তাই।

লুবনা আচমকা কান্না থামিয়ে বললো,

তোরা দু’জন কি সুন্দর জা’ হয়ে গেলি। আর আমার পোড়া কপাল। আচ্ছা সৌরভের আর কোনো দোস্ত নাই যে আমাকে বিয়ে করবে? তাহলে আমিও তোদের জা’ হয়ে যাবো।

প্রিয়া লুবনার কথা শুনে চমকে উঠে। আরে সে তো একবারও খেয়াল করেনি রাঢ়ী তার একদিক থেকে জা’ হয়। রাঢ়ী প্রিয়ার দিকে তাকালো দুজনে চোখাচোখি হয়ে লাজুক হাসলো। তবে লুবনার কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো।

আহারে! বেচারির জন্য সৌরভের একজন বন্ধুকে পাত্র হিসেবে খুঁজতে হবে তাহলে।

__________________

দীর্ঘক্ষণ কলেজ ফটকে অপেক্ষা করেও যখন সৌরভের দেখা পেলো না প্রিয়া অবাক হলো। তাকে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবে বলেছিল। তাহলে এই সৌরবিদ্যুত এখন কোথায়? সেই আধাঘন্টা ধরেই সে অপেক্ষা করে যাচ্ছে। কিন্তু এই সৌরবিদ্যুত এর আসার নামগন্ধও নাই। ভারী অদ্ভুত তো। তার রাগ বাড়ছে ধীরে ধীরে। পরে সে অগত্যা হাঁটা ধরলো বাড়ির দিকে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর তার চোখ পড়লো
রেষ্টুরেন্টের কাঁচের জানালা ভেদ করে ভেসে আসা এক পুরুষ অবয়বের দিকে। তার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো। সৌরভ আনতে যাবে বলে যাইনি। কিন্তু রেষ্টুরেন্টে বসে অন্য মেয়ের সাথে গল্প করছে। তার কাছে কি আমার একটুও মূল্য নাই। অন্য মেয়ের সঙ্গ পেয়ে নিজের বউকেই ভুলে গেছে। এটাই কি তার দায়িত্ব? প্রিয়ার শীতল দৃষ্টি মূহুর্তে রক্তবর্ণ ধারণ করলো। অনেক হয়েছে। সে কেনো সহ্য করবে তার স্বামী অন্য মেয়ে নিয়ে ডেট করবে? দরকার হলে তার সাথে ডেট করবে। তার সাথে ঘুরবে কিন্তু অন্যমেয়েকে নিয়ে সে ঘুরতে দিবে না।

প্রিয়া চোয়াল শক্ত করে সে সৌরভের দিকে এগিয়ে গেলো। কাঁচের দরজা খুলে সোজা সৌরভের গা ঘেঁষে এক হাত সৌরভের কাঁধ ধরে সে বসলো।

সামনে বসা পিউ মূহুর্তে হতবিহ্বল হয়ে গেছে প্রিয়ার কান্ডে। তার চক্ষুদ্বয় কোটর থেকে বের হবার উপক্রম। এই মেয়ে নাকি সৌরভকে পছন্দই করে না শুনেছে। কিন্তু এখন তো চোখের সামনে যা দেখছে তাতে তো তার চক্ষু ছানাবড়া।

বাপ্রে! সৌরভ নিজেও প্রিয়ার কান্ডে হতবাক। কিন্তু এভাবে তার বউ এসে তার কাজ সহজ করে দিবে সে ভাবতেই পারিনি। সে তো এতক্ষণ বউয়ের কাল্পনিক প্রশংসা করছিল পিউর কাছে। তার বউ তাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। সারাক্ষণ তাকে ফোনকল করে, সারারাত তার সাথে কথা বলার জন্য বায়না করে, একটু দেখা না হলেই সে বিচলিত হয়ে পড়ে। তাকে পাগলের মত ভালোবাসে তার বউটা। কিন্তু এখন তো সত্যিই দেখছে তার বউটা তাকে কিভাবে ধরে রেখেছে। সে নিজেও তার হাত প্রিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনমনে মিট মিট করে হাসছে সে। যাক অবশেষে তার বউ তাকে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরেছে। নয়তো সে একটু ধরলে বলবে অসভ্য, বেয়াদব আরও কতকিছু। সে তো ভয়েই বউয়ের কাছেই ঘেঁষে না।

প্রিয়া মুচকি হেসে সৌরভের দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

আমার আসতে একটু লেইট হয়ে গেলো। সর‍্যিই জামাইটা। তুমি অনেক আগে আসছো, তাই না? এবারের মত ক্ষমা করে দাও, পরের বার আর ভুল হবে না। একদম সময় মত আমি হাজির হয়ে যাবো।

প্রিয়া আলগোছে সৌরভের হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিজের হাতের আঙ্গুল ঢুকিয়ে পুরো হাত নিজের দখলে করে নেয়। তারপর দু’জনের হাত পিউকে দেখিয়ে টেবিলের উপরে রাখে। সে পিউর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দেয়। তারপর রগড় গলায় বললো,

পিউ আপু ভালো আছো। তোমার সাথে আমাদের বিয়ের পরে এই প্রথমবার দেখা হলো। তা দিনকাল কেমন যাচ্ছে তোমার। কিন্তু আমাদের কথা একদমই জিজ্ঞেস করো না। আমার জামাই তো আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না। সারাক্ষণই মুখের কোণে লেগেই থাকে বউ’ বউ’। একটু না দেখলে পাগল হয়ে যায়। আমার বউটা কোথায় রে? আমার প্রিয়ারানী, আমার বেগমটা কোথায়? আরও কতকিছু যে ডাকে সব তো তোমাকে বলা যাবে না। আমার লজ্জা লাগে না বুঝি?

সৌরভ যারপরনাই অবাক প্রিয়ার মুখ নিঃসৃত এমন বাক্যে শুনে। যে মেয়ে লজ্জায় তার সামনে মাথা তুলতে পারে না। আর এখন দিব্যি কিভাবে পিউর সামনে কথা বলে যাচ্ছে। তার উপর তার বাহু ধরে নিজের হাতটা কত সুন্দর করে ধরে আছে। এই না হলে তার রণচণ্ডী বউ। জামাইকে অন্য মেয়ের সাথে দেখে জেলাস ফিল করছে। ভালোই হয়েছে তার জন্য।

পিউ দু’জনের দিকে তাকিয়ে আত্মগ্লানির একটা নিশ্বাস ছাড়লো। হয়তো তার জন্য সৌরভ ছিলই না। প্রিয়া আসবে বলেই তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তবে দিন শেষে তার নিজের কাছে একটু হতাশ লাগছে সৌরভ তার সাথে এভাবে কখনই কথা বলেনি যতটা প্রিয়ার সাথে বলছে। তার মুখে বিতৃষ্ণার হাসি। বেদানার্ত নয়ন দুটি তার। মলিন মুখে সে সৌরভের দিকে তাকিয়ে তার ব্যাগ থেকে চকচকে নতুন একটা খাম বের করলো।

প্রিয়া পিউর গতিবিধি খেয়াল করছে। এত বড়ো খাম দেখে প্রথমে সে চমকালো। কিন্তু পরক্ষণেই পিউর বলা কথায় তার অস্থির বদন শান্ত হল। তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললো,

‘আলহামদুলিল্লাহ’ আপু শাদী মোবারক আপনাকে। সৌরভ আর আমি অবশ্যই যাবো। তারপর সে সৌরভের দিকে তাকিয়ে তার থুতনিতে হাত দিয়ে বললো, এ্যাই’ বলো না আপুকে, আমরা যাবো।

সৌরভ ভূত দেখার মত চমকে উঠলো। প্রিয়ার এভাবে তার থুতনিতে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে এভাবে আদুরে ভাবে কথা বলতে দেখে। সে অবিশ্বাস্য নজরে তাকিয়ে আছে এটা তার বউ তো!

প্রিয়া সৌরভের তাকানো দেখে চোখ সরিয়ে নিলো তাড়াতাড়ি। কিন্তু সৌরভ সরাতে দিলো না। সে প্রিয়ার কানে ফিসফিস করে বলল,

আজকে আমার প্রিয়ারানীকে একদম বউ বউ লাগছে। পুরাই মিসেস সৌরভ লাগছে গো বউ।

পিউ আর বেশিক্ষণ বসলো না। তার কাছে অস্থির লাগছে। দুই নব দম্পতির মাঝে নিজেকে কেমন অসহায় লাগছিল। সে দ্রুতই বের হয়ে গেলো তার বেদানার্ত আর তৃষার্ত বদন নিয়ে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ