Monday, October 6, 2025







শক্তিময়ী পর্ব-১৮+১৯

#শক্তিময়ী
পর্ব ১৮
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

ভাবীর আম্মা অর্থাৎ আমাদের প্রিয় রুবী খালাম্মা, সাথে দীদার খালু, তাঁদের ছোট মেয়ে তিথির কোনো রকম সাহায্য জীবনে নিবেন না বলে কঠিন শপথ নিয়েছিলেন। সাত দিনের মাথায় শপথ ভঙ্গ করতে হলো। খালাম্মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। টেষ্ট করে ধরা পড়লো লিউকেমিয়া। কি মর্মান্তিক সংবাদ! আমরা ভীষণ কষ্ট পেলাম। তিথি ভাবী এই আকষ্মিক দুঃসংবাদে একেবারে ভেঙে পড়লেন। বাবা-মা’কে তিনি অসম্ভব ভালোবাসেন। কিন্তু নিজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য ও সেই সাথে আনন্দ ভাইয়া সহ শ্বশুর কুলের সাপোর্ট ও ভালোবাসা পেয়ে তিনি দু’দিনেই শোক ও আশংকাকে জয় করে ফেললেন। পড়ে পড়ে না কেঁদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নিতে হবে। সময় নষ্ট করার সময় নেই।

ফুপা-ফুপু স্পষ্ট বলে দিলেন, “তিথি, আমাদের নিয়ে,সংসার নিয়ে এতোটুকু চিন্তা ভাবনা করবে না। বেয়ানের জন্য যা করার দরকার, করো।কোনো ত্রুটি অবহেলা কোরো না। আমাদের পক্ষ থেকে যে কোনো সাহায্যের দরকার হলে নিঃসংকোচে বলবে। আর আনন্দ, তুমি তাঁদের সন্তানসম। তোমাকে তাঁরা সন্তান স্নেহ দিয়েছেন। শ্বশুর -শাশুড়ির প্রতি দায়িত্ব পালনে যেন এতোটুকু অবহেলা না হয়।তিথি তোমার বাবা-মায়ের জন্য যা করেছে এতোদিন, সেই ঋণ শোধ আমরা কখনোই করতে পারবো না। এখন তিথির বাবা-মায়ের জন্য সাধ্যমতো করা তোমার অবশ্য কর্তব্য। ”

চিকিৎসা শুরু হলো মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হসপিটালে। আনন্দ ভাইয়া,তিথি ভাবী, খালু আর ভাবীর বড় বোন স্নিগ্ধা আপা গেলেন সাথে। ভাবীর ভাই আমেরিকায় থাকেন। তিনি টাকা পাঠাতে লাগলেন। কিন্তু নিজে আসতে পারলেন না। অফিস ছুটি দিবে না। আনন্দ ভাইয়াও কিছু দিন পরে ফিরে আসলেন। তাঁরও অফিসে বিরাট দায়িত্ব। ফুপা-ফুপু রাগ করলে বললেন,”টেনশনের কিছু নেই। তিথি একাই একশো। আমি আবার যাবো এদিকের কাজ সামলে নিয়ে।”

দেড় মাসের মধ্যে স্নিগ্ধা আপা আনন্দ ভাইয়াকে আসার অনুরোধ জানালেন। তাঁরও অফিসে সমস্যা। তাছাড়া সংসারছাড়া এতোদিন। আনন্দ ভাইয়ার তখন কাজের চাপ খুব। ফুপু বললেন,”তোর শাশুড়ির জায়গায় আমি থাকলে কি করতি?অফিসের কাজ করতি?”

“মা, আমি আমার জীবন দিয়ে তোমার জন্য করতাম, কিন্তু সবসময় পাশে থাকতে পারতাম না। চাকরি না থাকলে ভয়াবহ সমস্যা। তিথি সামলাচ্ছে, আব্বা আছেন। ওর ভাইয়ের অবশ্য ই কয়েকদিনের জন্য হলেও আসা উচিৎ মায়ের কাছে। তিথির মামা,চাচা, খালা,ফুপুরা আছেন,কাজিনরা আছে,আমি ছাড়াও আরেক জামাই আছেন। লোকের তো অভাব নেই, মা।দরকার পড়লেতো আমি আবার যাবো। যতোবার যেতে হয়,যাবো।”

স্নিগ্ধা আপা দেশে চলে আসলেন। আপাততঃ নাকি আর যাবেন না। এতো বড় চাকরি, দায়িত্ব কি কম? আর তিন তিনটা বাচ্চা। সংসার ফেলে এতোদিন থাকা যায় না। অন্যান্য স্বজনদেরও নানা অজুহাত। অসুস্থতা, চাকরির নাকাল অবস্থা, ব্যবসায় হাবুডুবু, ছেলের পাবলিক পরীক্ষা, সবারই বড় বড় সমস্যা। তাও কয়েকজন আত্মীয় গেলেন, দফায় দফায়। কয়েকদিন থেকে আবার ফিরে আসলেন। বাস্তব তো এটাই, সবাই ব্যস্ত। সবারই নানা অসুবিধা থাকে।

খালু আর তিথি ভাবী প্রথম থেকে মুম্বাইতেই আছেন। কেমোথেরাপির জন্য খালাম্মার খুব বমি হয়, মুখের ভেতরে অনেক ঘা, খাবারে যাচ্ছে তাই অরুচি। ডাক্তার নার্সরা খুব ভালো। আর তিথি ভাবী দিন রাত এক করে সেবা করেন। কিন্তু খালাম্মার অবস্থা দিনকে দিন খারাপের দিকে।

এতো দুশ্চিন্তা ও কষ্ট মাথায় নিয়ে, রাতদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও তিথি ভাবী দিনে দুই-তিনবার ভিডিও কল করে ফুপা-ফুপু, আনন্দ ভাইয়া, অদিতি,পরী,মাজেদা বু’র সাথে কথা বলেন।ওখানকার খবরাখবর জানান। খালুও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দুর্বল,বিষাদগ্রস্ত। প্রেশার প্রায়ই অস্বাভাবিক বেড়ে যায়।তিথি ভাবী বাবা-মা দু’জনেরই সেবাযত্ন করেন। কোনো ক্লান্তি নেই। এ কেন করছে না,ও কেন দেখছে না, এইসব নিকৃষ্ট মানের কথাবার্তা ও চিন্তা ভাবনা নেই।

অবশেষে মেডিকেল বোর্ডে সিদ্ধান্ত হলো,বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে। আর কোনো বিকল্প নেই।

স্বামী,ছেলেমেয়ে, ভাই বোন, দেবর ননদ কারোর সাথে খালাম্মার ম্যাচ হচ্ছে না। আনন্দ ভাইয়া প্রবল উৎসাহে টেস্ট করালেন। তাঁর সাথে ম্যাচ করলো না। আমাদের ভাই বোন, আত্মীয় স্বজনদের সাথেও না। অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হতে লাগলো। সমুদ্রকে খবর পাঠানো হলো মুম্বাই আসার জন্য। নানির সাথে ম্যাচ হয় কিনা।সমুদ্র কিছুতেই রাজি হলো না।সামনে তার পরীক্ষা। সে টপ করতে চায়। আর এইসব হাসপাতাল, অপারেশন তার কাছে মহা আতংকের বিষয়।

স্নিগ্ধা আপা আর তাঁর ভাই কমল ভাইয়ার একই কথা, নিজেদের সাথে ম্যাচ করলে ডোনার হতে তাঁরা ক্ষণিকের জন্য ভাববেন না, কিন্তু ছেলেমেয়েদের টানাটানির দরকার নেই। তিথি ভাবী বললেন,”বাচ্চাদের এতো ভালোবাসো, মা’কে বাসো না? ”

“খুব বাসি। তোর সমুদ্র -পরীও তো দিচ্ছে না।”

তিথি ভাবী পাঁচ মাসের মধ্যে দেশে আসেন নি। মায়ের জন্য যা যা করার, অকাতরে করছেন। এতোটুকু গাফিলতি রাখছেন না কোথাও।

এদিকে ফুপুর সংসারের কর্ত্রী হলো আমাদের অদ্বিতীয়া। এতো খেয়াল তার চারিদিকে, এতো নিপুণ ভাবে সামলাতে পারে সবকিছু, যে দেখে সে-ই অবাক হয়ে যায়। ফুপা-ফুপু তার সেবার চোটে মাঝেমধ্যে অতিষ্ঠ হয়ে যান। “এইটা খাও, ওইটা তোমার খাওয়া দরকার, গোসল না করলে হবে না, এখন ঘুমাও, এতো রাতে টিভি দেখা যাবে না, হাঁটো, না হাঁটলে শরীর চলবে না,” তার শাসন চলছেই। পরীর ডায়েট,পড়ালেখার দিকেও খুব খেয়াল। অসম্ভব মায়া মাজেদা বু’র জন্য।

এক রাতে খাওয়ার টেবিলে অদিতি ফুপা,ফুপু আর আনন্দ ভাইয়াকে বললো,” আমার পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন আব্বু? যদি ম্যাচ করে,আমি নানুর ডোনার হতে চাই।”

“না অদিতি, এটা হয় না। তুমি মন দিয়ে লেখাপড়া করো। ওদিকে ঠিক ম্যানেজ হয়ে যাবে।”

“হচ্ছে না তো আব্বু। প্লিজ, আমার সাথে ম্যাচ করে কি না সেটা দেখার ব্যবস্থা করেন আব্বু,প্লিজ। ”

“অদিতি, মা, তুমি ছোটো।”

“মোটেও আমি ছোটো না।”

পরী বললো,”তোমাকে নানু দেখতেই পারে না।তার জন্য তুমি নিজের লাইফ রিস্ক নিবে? আমি আর ভাইয়া সোজা রিফিউজ করে দিয়েছি।”

“আমি দিতে চাই আব্বু, যদি আল্লাহর দয়ায় ম্যাচ করে।প্লিজ আব্বু, প্লিজ। ”

ফুপুর এখন অনেক ভালোবাসা অদিতির জন্য। ফুপারতো আগের থেকেই ছিলো।

ফুপু বললেন,”পাকামি করিস না অদিতি। ঠিকই কারোর না কারোর সাথে ম্যাচ করে যাবে। তোর এমনিতেই পাখির মতো পলকা শরীর, তোকে এসব ভাবনা ভাবতে হবে না।এগুলো ভাবার অনেক লোক আছে। ব্লাড ডোনেট করছিস,সেটাই কর। এ নিয়ে দ্বিতীয় কথা নয়।”

অদিতি কান্নাকাটি করে, বাপ-দাদা-দাদির পা ধরে বসে থেকে, ফোনে মা’কে ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করে সম্মতি আদায় করে ছাড়লো।

আনন্দ ভাইয়ার সাথে রওনা হওয়ার আগের দিন আমরা অনেকেই অদিতিকে বিদায় জানাতে আসলাম। মনে দৃঢ় আশা, অদিতির সাথে মিলবে না, মেয়েটা এই ফাঁকে একটু মুম্বাই ঘুরে আসুক।

কতো চিন্তা এতোটুকু মাথায়_

“পরী,লক্ষী আপু,কতো স্লিম হয়ে গেছো তুমি,আগের চেয়েও অনেক অনেক সুন্দর হয়েছো।লক্ষী বোন আমার,ডায়েট চার্ট মেনে চলো। ”

“দাদাভাই -দাদুমনি, প্লিজ, প্লিজ, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া কোরো। লুবনা ফুপি,আপনি প্লিজ সময় মতো দাদা-দাদুর ওষুধ দিবেন। নার্সতো আসবেনই, আপনারাও একটু খেয়াল রাখবেন।”

“মাজেদা খালা,সাবধানে থাকবেন খালা। কোনো ভারি কাজ করবেন না।”

আরও কতো চিন্তা। আপাততঃ একজন মালী ঠিক করা হয়েছে। গাছগুলোর যেন যত্ন হয়, পাখিগুলোকে যেন চারবেলা খাবার দেওয়া হয়। পাড়ার মোড়ের পাগল চাচাকে যেন ড্রাইভার চাচা তিন বেলা খাবার খাইয়ে আসেন।আরও কতো কি!

যাওয়ার দিন ফুপু ব্যাকুল হয়ে কাঁদতে লাগলেন। মাজেদা বু’র তো কথাই নেই। অদিতির তিন মাস বয়স হতে তিনি তাকে উজাড় করা ভালোবাসা, মমতা দিয়ে এসেছেন। ফুপা,ফুপু,মাজেদা বু তিনজনেই রোজা রেখেছেন।
কাছের একটা এতিম খানায় আজ তিনবেলা ভালো খাবার পরিবেশন করা হবে।

অদিতি মুম্বাই গেলো। এবং সব টেস্টের পরে দেখা গেলো, অদিতি খালাম্মার জন্য আদর্শ ডোনার হতে পারবে।

আনন্দ ভাইয়া গোপনে কান্নাভেজা গলায় অদিতিকে বললেন,”মামনি,আরও ডোনার পাওয়া যাবে। লক্ষী মা আমার, তুমি দেশে ফিরে যাও।”

“আব্বু, আপনি আমাকে একটা ভালো কাজ করার সুযোগ দিন। আমার কিচ্ছু হবে না আব্বু,আপনি দেখবেন।”

মেয়ের জেদের কাছে পরাজিত বাবা অনেকক্ষণ মেয়েকে নিবিড় ভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে থাকলেন। অদিতির প্রতি ভালোবাসা ও মমতায়, অতীতের আচরণের জন্য তীব্র অনুশোচনায় আনন্দ ভাইয়া রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন।

এরই মধ্যে তিথি ভাবী তাঁর চরম অসুস্থ মা’কে বলে বসলেন,”আম্মু,চিনতে পারছো একে? আমার মেয়ে। অদিতি। আমার মেয়ে নিজের ইচ্ছায় জোর করে তোমাকে বোন ম্যারো দিতে চলে এসেছে। তোমার আদরের কোনো নাতি নাতনি আসে নি। তুমি সুস্থ হয়ে যাবে আম্মু,ইনশাআল্লাহ। তখন খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবে, অদিতির প্রতি তুমি ও তোমরা অন্যায়-অত্যাচার করেছো কিনা,করলে তার পরিমাণ এভারেস্ট ছুঁয়েছে কিনা, অদিতি আমাদের সবার থেকে অনেক অনেক উঁচু দরের মানুষ কি না। জঘন্য অন্যায় করেছো আম্মু, আল্লাহর কাছে মাফ চাও।আর হুট করে যা মনে আসে তা বলতে নেই। কথা বুঝে শুনে বলতে হয়।আমার সেবা নাকি নিবে না আম্মু?”

অপারেশনের আগের দিন থেকে পরের একুশ দিন যা কাটলো আমাদের! আমরা প্রতিদিন রোজা রেখেছি,ফুপা-ফুপু -মাজেদা বু’ তো বটেই, দান সাদাকাহ চললো সমানে, পরীর মতো মানুষও নামাজ পড়া আরম্ভ করলো, মাঝেমধ্যে দেখতাম চোখ ফোলা আর লাল, সমুদ্র প্রতি দিন বাপ-মাকে ফোন করে প্রথমে অদিতি,তারপরে নানীর কথা জিজ্ঞেস করতো। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের অদিতি আর খালাম্মা দু’জনেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলো। অদিতির আরও অনেক আগেই সুস্থ হওয়ার কথা ছিলো, কিন্তু কোনোভাবে তার ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল, তাই ভুগতে হলো অনেক।

চলবে।

#শক্তিময়ী
পর্ব ১৯
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

” অ্যাডমিশন টেস্টগুলো অ্যাপিয়ার করতে পারলি না। করলে নিশ্চয় ভালো জায়গায় টিকতিস। ”

“মা, অ্যাডমিশন টেস্টের থেকে একজন মানুষের জীবন অনেক অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ”

“তা তো বটেই। কয়জন বোঝে এটা? তবু তোর একটা ইয়ার লস হলো। আমার ইচ্ছা ছিল, তুই মেডিকেলে ভর্তি হবি। অবশ্য কি পড়বি এ বিষয়ে তোর সিদ্ধান্ত ই চূড়ান্ত। মা হিসাবে একটা গাইড লাইন দিলাম, আর কি।”

“অদিতি ইয়ার লস করবে কেন? ও দেশের সবচেয়ে ভালো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়বে। কোন সাবজেক্টে পড়বে, সেটা ওর ডিসিশন, তবে বাবা-মা হিসাবে আমরা তো একটা গাইড লাইন দিবোই। অদিতি নিশ্চয় ওখানে কোয়ালিফাই করবে, ইনশাআল্লাহ। ”

” আব্বু, আসলে লেখাপড়া নিয়ে আমার কোনো উচ্চাকাঙ্খা নেই। পড়তে হয়, সার্টিফিকেট ছাড়া কিছু হয় না, আর আপনারা আমাকে অনেক দূর পড়াতে চান, তাই আমার লেখাপড়া করা। তবে যে বিষয়ে পড়বো,খুব ভালো করে জেনে বুঝে পড়বো। এর আগেও তাই করেছি। কিন্তু আমার খুব বড় জায়গায় পড়ার দরকার নেই । কোনো কলেজে অনার্স নিয়ে পড়বো।”

“কি কথা এগুলো,অদিতি? তোমার এতো ভালো রেজাল্ট, তোমাকে অনেক উপরে উঠতে হবে। ”

“উপরে ওঠার সংজ্ঞাটা আমি ভালো জানি না,আব্বু। আসলে আমার একটা এইম আছে।”

“কি এইম,জানতে পারি?”

“আব্বু,আমি এখন থেকেই আমার কাপড়ের আর খাবারের বিজনেস বড় করতে চাই। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাবলম্বী হতে চাই।”

“তুমি তো অনেক ছোট থেকেই স্বাবলম্বী, মা। ছাত্রজীবনে লেখাপড়ার দিকে ফোকাস করো।”

“আমি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়বো না,আব্বু। অনেক খরচ।”

“খরচ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে কেন?আমি মরে গেছি? সমুদ্রের জন্য এর তিন গুণ বেশি খরচ করছি না?পরীর পড়ার জন্য খরচ হচ্ছে না?আমার টাকা-পয়সা কার জন্য? তোমাদের জন্যই তো। কোন সাবজেক্টে পড়বে, মা-দাদা-দাদুর সাথে আলাপ করে নাও। তুমি চাইলে আমিও পরামর্শ দিতে পারি। লেখাপড়া শেষ করে তারপরে না হয় তোমার বিজনেস বড় করো।”

“আব্বু,আমি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়বো না। ”

তিথি ভাবী বললেন,”আচ্ছা, এসব কথা এখন থাকুক। অদিতি, তোর ইচ্ছা তাহলে বড় ব্যবসায়ী হওয়ার?”

“মা,আমি ব্যবসা বড় করতে চাই যেন আমি অনেক টাকা আয় করতে পারি।তারপরে ঐ টাকা দিয়ে আমি একটা হোম বানাতে চাই। ওখানে আনওয়ান্টেড চিলড্রেন থাকবে। আমি সব ক্লিনিকে বলে আসবো, কেউ যদি তার বাচ্চাকে মেরে ফেলতে চায়, তাহলে ক্লিনিকের লোকজন যেন তাকে বুঝিয়ে আমার কাছে পাঠায়। আমি তাকে কনভিন্স করবো যেন সে ডেলিভারির পরে বাচ্চাটা আমার হোমে দিয়ে মুক্তি পায়। হোমে বাচ্চারা খুব সুন্দর ভাবে বড় হবে। কেউ তাদের ঘৃণা করবে না, তাদের নোংরা কথা বলবে না, এতোটুকু অনাদর করবে না। এরজন্য আমার টাকার দরকার।অনেক টাকার দরকার।”

খাবার টেবিলে সবাই কিছুক্ষণ চুপচাপ। বাকরুদ্ধ যাকে বলে।

সামলে নিয়ে আনন্দ ভাইয়া বললেন,” তোমার যা টাকা দরকার, তার জন্য তোমার বাবা আছে, মামনি। আমি তোমার সব স্বপ্নপূরণের জন্য পাশে আছি। যতোদিন বেঁচে আছি, তোমার যে কোনো দরকারে আমাকে পাশে পাবে,মা। এখন ভালো জায়গায় লেখাপড়াটা করো। এটা আমার রিকোয়েস্ট তোমার কাছে।”

” আব্বু,আমাকে মাফ করবেন,এতো টাকা দিয়ে পড়তে আমার খুব লজ্জা হবে,কষ্ট হবে।আপনার ঋণ শোধ করা কোনো ভাবে সম্ভব নয়। কিন্তু আপনার কাছ থেকে এতো টাকা আমি নিবো না আব্বু,আমি ছোটবেলা থেকেই ঠিক করে রেখেছি।”

“মা রে,তুমি এখনো আমাকে মাফ করতে পারলে না? ক্ষমা করার কথাও না অবশ্য। তবু আমি তোমার সামনে হাতজোড় করে বলছি, আমি ভীষণ অন্যায় করেছি তোমার সাথে, রীতিমতো পাপ করেছি। তোমার মাকেও অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি যে কি অনুশোচনায় ভুগি,তা আমিই জানি।আর এই অনুশোচনা সারাজীবন থাকবে। তোমার সাথে যা যা করেছি,তা ভেবে আমি খুব, খুউব কষ্ট পাই, আম্মু। আমাকে মাফ করে দাও। একজন তীব্র অনুতপ্ত মানুষকে ক্ষমা করতে হয় মা।”

“আব্বু,এমন করে বলবেন না।” অদিতি কেঁদে ফেললো।

তিথি ভাবী বললেন,”এখন মন দিয়ে পড়্। তারপরে যখন হোম করবি, আমাকে তোর উপদেষ্টা বানিয়ে নিস। ”

” অদিতি, দিদিভাই, আমি আর তোর দাদা অনেক আগেই ঠিক করেছি প্রপার্টির একটা বড় অংশ তোকে দিবো। তোর হোম করতে আর চালাতে কোনো অসুবিধা হবে না, বুবু।”

অদিতি ঢাকার সেরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেলো। বিবিএ তে।

তিথি ভাবী প্রতিদিন তাঁর মাকে দেখতে যান। বাসায় রান্না নানারকম খাবার নিয়ে। কখনো একা যান,কখনো আনন্দ ভাইকে নিয়ে, প্রায়ই ফুপা ফুপুও যান। নানা-নানু মুম্বাই থেকে ফেরত আসার পরে পরী একবার স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে গিয়েছিলো, আরেকবার ভাবী জোরজার করে নিয়ে গিয়েছিলেন। অদিতি একবারও যায়নি, তাকে যাওয়ার কথাও কেউ বলে নি।

ভাবীর বাবা বললেন,”হ্যাঁ রে তিথি,অদিতি যে একবারও এলো না?”

তিথি ভাবী বললেন,” ওকে আমি আসতে বলি না। যদি ও নিজের থেকে বলে,তাহলে নিশ্চয় নিয়ে আসবো।”

ভাবীর মা-বোন যে খুব কৃতজ্ঞ, তা না।

স্নিগ্ধা আপা উপস্থিত ছিলেন। বললেন, “তোর অদিতির নিজেরই উচিৎ ছিলো আসা।”

“কেন?”

“কেন মানে? আম্মুকে দেখতে সবাই এসেছে, লতায় পাতায় জড়ানো আত্মীয়রাও বাদ নেই, সেখানে সে আসবে না? কার্টসি বলেও একটা কথা আছে।”

“অদিতি দরকারের সময় ঠিকই উপস্থিত ছিলো। তখন আবার লতায় পাতায় জড়ানো আত্মীয়তো দূরের কথা,আব্বু-আম্মুর নিজের ছেলেমেয়েদেরও পাওয়া যায় নি।”

খালাম্মা ক্ষীণ গলায় বললেন,” এসব কথা থাক। তবে একটা কথা তিথি মা, রাগ করিস না,তোর তো আবার কথায় কথায় রাগ, বেয়াই-বেয়াইন, আপনারা আছেন,আপনাদেরও বলি, এই যে মেয়েটাকে এতো দামী একটা ভার্সিটিতে দিলেন, বেশি বেশি হয়ে গেলো না?”

ফুপা গম্ভীর গলায় বললেন,” অদিতির জন্য যা ই করা হোক, কম করা হবে।”

আরেকদিনের কথা। ভাবীর ভাই পনেরো দিনের জন্য দেশে এসেছেন। কথায় কথায় এক ঘর লোকের সামনে তিথি ভাবীকে বললেন,” যে মেয়েটা আম্মুকে বোন ম্যারো ডোনেট করলো, তাকে জিজ্ঞেস করিস তো, সে এর জন্য কত চায়? নাকি অন্য ডোনাররা যা চায়, সেই অ্যামাউন্টই আব্বু আর আমি মিলে দিয়ে দিবো।এটা ক্লিয়ার কর। আমি চাই না, আম্মুকে কেউ দয়া করুক। সে বোন ম্যারো দিয়েছে, we must pay for that. ”

“তাহলে ওর জীবনের কয়েকটা মাস ফিরিয়ে দে। আমার বড় শখ ছিলো,ও ডাক্তারি পড়ুক। পরীক্ষা দিলে ভালো জায়গায় চান্স পেতো। সেই সময়টা ওকে ফিরিয়ে দে।”

ভাবীর আম্মা বললেন,” ওর তো আরও পোয়া বারো হয়েছে। এতো দামী ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। কি পরিমাণ খরচ প্রতি সেমিস্টারে। ”

“আম্মু, যে মেয়েটা সেধে পড়ে তোমার জন্য নিজের জান বাজি রেখে অপারেশন টেবিলে শুলো, তার প্রতি তোমার সামান্য কৃতজ্ঞতাটুকুও নেই? ”

“হায় রে, পেটের মেয়ে আমাকে অকৃতজ্ঞ বলছে বাইরের একটা মেয়ের জন্য। কমল, টাকাটা মেয়েটার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে জমা রাখিস বাপ। ঋণ রাখতে চাই না। ঋণ থাকলে অনেক কথা হজম করতে হয়।”

“টাকা দিয়ে এই ঋণ শোধ হবে?”

কমল ভাইয়া বললেন,”তিথি, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে ডোনারের কোনো রিস্ক থাকে না। তবে হ্যাঁ, Thanks to Allah, মেয়েটার সাথে আমমুর বোন ম্যারো ম্যাচ করেছে।নইলে ডোনার পেতে আরেকটু দেরি হতো। কিন্তু ডোনার পাওয়া যেতোই। দুদিন আগে আর পরে। কাজেই মেয়েটাকে হিরোইন বানানোর কিছু নেই। আর কাল-পরশুর মধ্যে টাকাটা দিয়ে দিবো, শোধবোধ হয়ে যাবে। ”

আমি সেদিন ভাবীর সাথে ছিলাম। ভাবী উঠে দাঁড়ালেন। হৈ হৈ রব উঠলো_”কোথায় যাচ্ছিস? বস্। কথায় কথায় রাগ করিস কেন এতো? তিথি,যাস না” ইত্যাদি। ভাবী আমাকে নীচু স্বরে বললেন,”আয়।”

আমারও ঐ পরিবেশ অসহ্য লাগছিলো। খালু-খালাম্মাদের প্রতি যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ছিলো, তা অনেকদিন ধরেই ফিকে হয়ে আসছিলো। অদিতিকে তাঁদের পরিবারের একটা মানুষ সহ্য করতে পারেন না।কেন?কি ক্ষতি করেছে অদিতি উনাদের?

ভাবীও ঠিক এই কথা গুলো আমাকে বললেন, রাগে কাঁপতে কাঁপতে, নির্জন পার্কের এক বেঞ্চে বসে জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে, ” কি ক্ষতি করেছে আমার অদিতি এই মানুষগুলোর? আমার মেয়েকে তাদের ভালোবাসার দরকার নেই । আমিও এখন সেটা চাই না। কিন্তু সারাক্ষণ আমার মেয়েটাকে এতো তুচ্ছ তাচ্ছিল্য কেন করবে? কোন সাহসে?ছিঃ! আমার ফ্যামিলি মেম্বাররা এতো নীচু মনের! এতো অকৃতজ্ঞ! ছি! ”

ভাবী সেদিন অনেকক্ষণ ধরে কাঁদলেন। আস্তে আস্তে শান্ত হলে আমরা বাড়ি ফিরলাম।

ফুপু বললেন,”কি ব্যাপার তিথি? তোমাকে এমন লাগছে কেন? কোথায় গিয়েছিলি তোরা? কি হয়েছে তোর ভাবীর?”

আমি ফুপা-ফুপুর ঘরে বসে খুব নীচু গলায় সব বলে দিলাম। ফুপা-ফুপু ভাবীর কাছে গেলেন,মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক কথা বললেন, আদর করে আমাদের খেতে বসালেন। অদিতি মা’কে দেখে চমকে উঠলো-

“কি হয়েছে মা? ”
“কিছু না।অদিতি, তুই যে বোন ম্যারো ডোনেট করলি, এর জন্য কিন্তু পেশেন্ট পার্টির কাছ থেকে তোর অনেক বড় একটা অ্যামাউন্ট প্রাপ্য। ”

অদিতি আস্তে করে বললো,”আমি কি পেশেন্ট পার্টির মধ্যে পড়ি না?”

“সেটা পরের কথা। কিন্তু একটা হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্ট ওই বাড়ির লোকেরা তোকে দিতে চায়। তুই নিয়ে নে। তোন নামে আমিও অ্যাকাউন্ট খুলেছি, তোর বাবাও। যে কোনো একটা অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠিয়ে দিই।”

“মা,কি বলো তুমি! নানুর জন্য ডোনেট করেছি, কতো ভালো লেগেছে আমার, আমি কিনা নানা-নানুর কাছ থেকে টাকা নিব?”

“হ্যাঁ, নিবি। পৃথিবী খুব কঠিন জায়গা। মায়া থাকা ভালো, কিন্তু অপাত্রে মায়া,ভালোবাসা দান করা ঠিক না। এখন একটু বড় হয়েছিস, বুঝতে শিখেছিস। যারা তোকে অকারণে কষ্ট দেবে, অপমান করবে, তাদেরকে কখনো হুজুর হুজুর করবি না। তুই কারোর দয়ার পাত্র না। ওরা টাকার অফার করেছে, তুই নিয়ে নিবি। তোর চিলড্রেন হোমের জন্য তো মেলা টাকার দরকার পড়বে। এখন থেকেই জমানো শুরু কর্। একজন ভদ্রমহিলার জীবন রক্ষায় তুই নিজের জীবনের রিস্ক নিয়ে সাহায্য করেছিস, তারা যদি সাহায্যের প্রতিদান দিতে চায়,তুই কেন নিবি না?”

“এটা আমি নিবো না মা। কারণ উনি তোমার মা। দ্বিতীয় কথা, এই কাজটা করে আমি ভীষণ শান্তি পেয়েছি। আমার এই শান্তিটুকু কেড়ে নিও না মা,প্লিজ। বুঝতে পারছি, তুমি খুব রেগে আছো।কারণটাও আন্দাজ করতে পারছি। যার যা খুশি বলুক না মা।তুমি কেন আমার জন্য এতো কষ্ট পাও? তুমিই তো আমাকে শিখিয়েছো,মানুষের কথা গায়ে মেখে সময় নষ্ট করতে নেই?”

চলবে

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ