Monday, October 6, 2025







শক্তিময়ী পর্ব-১০+১১

#শক্তিময়ী
১০ম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

” মা, আমি তোমাদের কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চা, তাই না?”

“কি যা তা কথা বলো অদিতি? তোমার মতো একজন লক্ষী,বুদ্ধিমতী মেয়ে এমন আবোলতাবোল কেন বলবে? আবার কেউ কিছু বলেছে?”

“মা, অনেকেই অনেক সময়ে অনেক কিছু বলেছে। সেটা বড় ব্যাপার না। আরও তিন বছর আগে আমি শিওর হয়েছি আমি তোমার গর্ভজাত বা বাবার ঔরসজাত সন্তান না। আমি কোনো একজন লোকের আর কোনো একজন মহিলার অবৈধ সন্তান। ওঁরা আমাকে ফেলে দিয়েছিলেন, তুমি আমাকে কুড়িয়ে এনেছো।”

অদ্বিতীয়া এখন ক্লাস এইটে পড়ে। বেচারি অংক, বিজ্ঞান মাথায় ঢোকাতে পারে না সহজে। মোটামুটি ভালো ছাত্রী। আল্লাহ অনেক গুণ ওকে উপুড় করে দিয়েছেন। এতো নরম,ভদ্র, সহিষ্ণু, বুঝদার মেয়ে বিরল। গানের গলা দারুণ। ছবি আঁকার গুণও জন্ম থেকেই। সেই পিচ্চি কালেই গরু এঁকে
ফেলতো নিখুঁত ভাবে। ওকে ড্রইং শেখানোর দরকার পড়ে নি। এতো ভালো ছবি আঁকে অদিতি। হাতের লেখা মুক্তার মতো। ছোট্ট থেকেই রান্নার আগ্রহ। রান্নাঘরে ঢুকে মাজেদা বু’র বা ফুপুর রান্না মন দিয়ে দেখতো, তারপর তিথি ভাবীর অনুমতি নিয়ে সেই জিনিস রান্না করতো। খুবই সুস্বাদু হতো। এখন রান্নাটা তার নেশা। বাঙালি, চাইনিজ, থাই নানারকম রান্না রেঁধে আমাদের খাওয়ায় সে।বেকারির হাত দুর্দান্ত। পাকা বুড়ির মতো আচার বানায়, আমের,জলপাইয়ের, তেঁতুলের, মরিচের,রসুনের, সেগুলোর মধ্যেও কতো বৈচিত্র্য। তিথি ভাবী ভালো সেলাই পারেন,মেয়েকেও শিখিয়েছেন। মেয়ে মা’কে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে গুণে। তবে মাঝারি মানের ছাত্রী হওয়ায় তার সব গুণ মলিন দেখায় সবার কাছে। ছোট্ট বেলা থেকে নিষ্ঠার সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, তিরিশটা রোজা রাখা, অনুবাদ ও তাফসীর সহ কোরআন শরীফ পড়া লক্ষী মেয়েটার সব গুণ অনুজ্জ্বল হয়ে গেছে সমুদ্র আর পরীর তীক্ষ্ণ মেধা আর অসামান্য একাডেমিক পারফরম্যান্সের কাছে।

সমুদ্র দেশের সেরা ইংলিশ মিডিয়াম থেকে এ লেভেল শেষ করেছে। ও এবং এ লেভেলে তার তাক লাগিয়ে দেওয়া রেজাল্ট। সে ফুল স্কলারশিপ পেয়ে আমেরিকার খুব নামকরা ভার্সিটিতে পড়তে যাচ্ছে শিগগিরই। সুপার ব্রিলিয়ান্ট, সুপার হ্যান্ডসাম ছেলেকে নিয়ে পুরো পরিবারের গর্বের শেষ নেই।

পরী আসলেই পরী।শুধু ডানা দুটো নেই। সমুদ্রের স্কুলে সিক্সথ গ্রেডে পড়ে। টপার।

অদিতি পড়ে বাংলা মাধ্যমে, মধ্যম মানের একটি স্কুলে, যেখানে তিথি ভাবী পড়ান। ওর স্কুলিং নিয়ে ভাবী ছাড়া কেউই উৎসাহী ছিলেন না। ভাবীরও ইচ্ছা ছিলো না নিজের স্কুল ছাড়া মেয়েকে অন্য কোথাও দেওয়ার।মেয়ের লেখাপড়ার খরচ তিথি ভাবী বহন করেন। স্কুলের বেতন,টিউশন ফি,বইখাতার খরচ ইত্যাদি।

“মা,আমি যা বলছি তাতো ঠিক। শুধু তোমার মুখ থেকে একবার শুনতে চাই।”

ড্রইং রুমে কথা হচ্ছে। কাজেই সবাই উপস্থিত আছেন। তিথি ভাবী অঝোরে কাঁদছেন। ফুপা বললেন,” না অদিতি, তোমার চিন্তা ঠিক না। তুমি আনন্দ -তিথির মেয়ে। কি থেকে কি শোনো! ”

“দাদাভাই, আমি বাবা-মায়ের বায়োলজিক্যাল মেয়ে নই। এটা সত্যি। আমি জানি তো এটা। অনেক আগে থেকেই। আজকে একজন আমাকে একটা নোংরা কথা বলেছে আমার জন্ম নিয়ে। তাই আমি সরাসরি সব সত্য জানতে চাচ্ছি। কেউ বলে আমাকে ডাষ্টবিন থেকে তুলে আনা হয়েছে, কেউ বলে নর্দমায় পড়ে ছিলাম। আসলে কি হয়েছিল? আমার মা তো আমার মা-ই, মায়ের পেট থেকে জন্ম না নিলেও মা-ই আমার মা,আমার সবকিছু, কিন্তু আমার এই ঝুলে থাকা অবস্থাটা ভালো লাগছে না। মা,আমাকে পরিস্কার বলে দাও,আমাকে কোথায় পেয়েছো,কিভাবে পেয়েছো,আমার জন্মবৃত্তান্ত কিছু জানো কি না।প্লিজ, মা।”

আনন্দ ভাইয়া অসম্ভব কোমল গলায় বললেন, “কি সব অদ্ভুত কথা বলছো,অদিতি।আমরাই তোমার বাবা-মা। কে কি বলেছে আমাকে বলো তো?”

” আব্বু,আমি আপনার মেয়ে নই। কিন্তু কখনোই আমার বাবার স্হানে আপনাকে ছাড়া আর কাউকে ভাববো না। আব্বু, আপনি, দাদা দাদু, নানা নানু,ভাইয়া পরী কেউ আমাকে ভালোবাসেন না তা আমি বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে বুঝি,কিন্তু আমি আপনাদের অনেক অনেক ভালোবাসি। আজ আমি শুধু সত্যটা জানতে চাই। প্লিজ আব্বু, কেউ একজন বলেন।আমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। ”

এতো সরাসরি কথায় সবাই খুব অপ্রস্তুত হয়ে গেছেন। এতোদিন কেউ কন্যা বা নাতনি জ্ঞান করেন নি, ফুপা সামান্য যা একটু করেছেন, সমুদ্র প্রথম থেকেই এই মেয়েকে ঘৃণা করে এসেছে, আজ এই স্পষ্ট ভাষণে,সত্য কথনে সবাই বিব্রত ও লজ্জিত হয়ে গেছেন।

” অদিতি, মা, তুমি কেন বিশ্বাস করছো না আমাদের কথা? ”

তিথি ভাবী তাকালেন আনন্দ ভাইয়ের দিকে, ” জীবনে এই প্রথম মা ডাকলে মেয়েকে। জানি না, মন থেকেই বলেছো না আমার মন ভালো করার জন্য বলেছো। যাহোক অদিতি,আমি এখন সত্যি কথা ই বলবো তোমাকে।”

আমার অন্তরাত্মা চিৎকার করে উঠলো,”না, ভাবী, না। “কিন্তু গলা থেকে আওয়াজ বের হলো না।

অদিতির সোজা সাপটা কথা সবার বিবেককে কম বেশি নাড়া দিয়েছে। যার যার আচরণের কথা মনে করে অল্প হলেও অনুশোচনা হচ্ছে, অস্বস্তি তো হচ্ছেই। এমনই কপাল,ভাবীর বাবা-মাও উপস্থিত আছেন আজকে।

ভাবী বলা শুরু করলেন। আনন্দ ভাইয়া বাধা দিলেন,বাধা দিলেন ফুপা ফুপু।এমনকি সমুদ্র ও একবার ক্ষীণ স্বরে “মা” বলে বাধা দিলো।

ভাবী বলতে থাকলেন। মাজেদা বু এক কোণে বসে সমানে চোখ মুছতে লাগলেন।

ইতিহাস শেষ হলো। অদ্বিতীয়া ভাবীকে জড়িয়ে ধরলো।

” তাহলে সত্য কথাটা হলো আমি অজানা কারোর অবৈধ সন্তান। জারজ। আজকেও এই কথাটা আমাকে একজন সরাসরি বলেছে। বলেছে, তোমার মায়ের যদি সৎ সাহস থাকে,তাহলে সে যেন সত্যিটা স্বীকার করে। ছোট বেলা থেকে এজন্যই অনেকে আমাকে জারজ, বাস্টার্ড, বিচ,বেজন্মা, নর্দমার কীট এগুলো বলতো।”

” কিন্তু তুই তো এগুলো নস। যারা তোকে এসব কথা বলেছে তাদের জন্যই এই শব্দগুলো প্রযোজ্য। মা রে, তোর আঠারো বছর বয়স হলে আমি নিজেই তোকে সব সত্য বলতাম। সেই সত্য প্রকাশে আমার কোনো ভয় থাকতো না। কারণ, তুই অন্য কোনো মহিলার পেটে বড় হলেও তোর মা আমি। এটাই চরম সত্য। কিন্তু আফসোস, যে কথাটা আমি তোকে সহজ,সুন্দর করে খুলে বলতাম, সে-ই কথাগুলোই কতোগুলো অমানুষ তাদের নোংরা ভাষায় বলেছে তোকে,সেই শিশুকাল হতেই। ক্লাস ফাইভে তুই কনফার্ম হয়েছিস,কিন্তু টের পাওয়া শুরু করেছিস তো আরও অনেক অনেক আগের থেকে, তাই না মা? পরিবারের সবার এতো অনাদর, অবহেলা,ঘৃণা, অন্য বাচ্চাদের সাথে এতো বৈষম্য, কিছু একটা তো আন্দাজ করতিস নিশ্চয়ই, শুধু ছোট বলে গুছিয়ে চিন্তা করতে পারতিস না, তাই না অদিতি?”

ভাবী অনেকটা অপ্রকৃতস্থ আচরণ করছেন। অদিতি মা’কে জড়িয়ে ধরলো। তারপরে ফুপা-ফুপুর দিকে তাকিয়ে বললো,”আমি কিন্তু একদম কষ্ট পাচ্ছি না। জন্ম দিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের নিয়েও আমার এতোটুকু মাথাব্যথা নেই। নিজের জন্মের ইতিহাস নিয়েও আমার কোনো আক্ষেপ নেই, আমার ভাগ্য তো আমি নির্ধারণ করি নি। এই বাড়িটা দাদাভাই -দাদুমনির তৈরি। তাঁদেরকে আর আব্বুকে আমার সরাসরি প্রশ্ন, আমি এই বাড়িতে থাকলে আপনাদের কি অনেক বেশি খারাপ লাগে? সেক্ষেত্রে আমি এখানে আপনাদের চোখের সামনে থেকে আপনাদের কষ্ট দিবো না।আমি অন্য কোথাও চলে যাবো।”

ফুপু জিজ্ঞেস করলেন,”কোথায় যাবে?”

ফুপা বললেন,”আহ্,চুপ করো না। দিদিভাই, এটা তোমারও বাড়ি। তুমি কেন অন্য কোথাও যাবে?এসব কথা চিন্তাতেও এনো না।”

আনন্দ ভাইয়া বললেন,”অদিতি,তুমি সত্য জানতে চেয়েছিলে,তোমার মা তোমাকে সত্যটা বলেছেন। ব্যাস, ব্যাপারটা এখানেই শেষ। তুমি আমাদের সন্তান,আমার সন্তান। তিথি ও আমার তিন সন্তান, সমুদ্র, তুমি,পরী। এটাই এখন সবচেয়ে বড় সত্য, মা। Forget the past. বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করো। I’m really sorry. তোমার সাথে আমি খুবই জঘন্য ব্যবহার করেছি। আমি বাবা হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। Please,forgive me,maa. ”

সে ছিলো এক আশ্চর্য সন্ধ্যা, এক আশ্চর্য রাত। ড্রইং রুমের সোফায় ভাবী অদিতিকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলেন। সবার মধ্যে কেমন আড়ষ্ট, ইতস্তত ভাব। সবার চোখে লজ্জা আর অপরাধ বোধ।

অদিতি একদম স্বাভাবিক। আনন্দ ভাইয়া তিথি ভাবীকে অদিতির আড়ালে বললেন,” তুমি কয়েকটা দিন মেয়েটার সাথে ঘুমাও,আর চোখে চোখে রাখো।”

ভাবী বললেন,” সেই। সুইসাইড করলে এই বাড়ির বিরাট বদনাম হয়ে যাবে।”

সকাল হলো। অদিতি আগের মতোই। ফজরের নামাজ পড়ে আবার খানিকক্ষণ ঘুমালো। আনন্দ ভাইয়ার শার্ট -প্যান্ট ইস্ত্রী করে দিলো। গত এক বছর ধরে সে এই কাজটি পরম নিষ্ঠা ও আনন্দের সাথে করছে। আনন্দ ভাইয়া প্রথম দিকে একদম নারাজ ছিলেন যখন ভাবী অদিতির হয়ে তদবির করে ভাইয়াকে বলেছিলেন, “অদিতি বাপের শার্ট -প্যান্ট নিজের হাতে ইস্ত্রি করতে চায়। ” ভাইয়া উত্তর দিয়েছিলেন, ” প্লিজ তিথি, আমি ওইদিনের ঘটনার পর হতে তোমার সো কল্ড মেয়ের সাথে কোনোরকম ঝামেলায় যাই না, ভালো কথাও বলিনা,মন্দ কথাও বলিনা, আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।তুমি তাকে নিয়ে যতো খুশি আহলাদ করো,আমার সমস্যা নেই, সেটা তো সেদিনই আমি নাকে খত দিয়ে বলে দিয়েছি। কিন্তু আমার সাথে কোনো আদিখ্যেতা না। প্লিজ। ”

তারপরও বেহায়া মেয়েটা বাপ ঘুম থেকে ওঠার আগেই ইস্ত্রি করে সব পোশাক ফিটফাট করে রেখেছিলো। এতোটাই নিখুঁত ইস্ত্রি যে একদিন ভাইয়া তিথি ভাবীকে বলেছিলেন, ” লন্ড্রি চালায় এমন কোনো লোকের মেয়ে হবে হয় তো।”

ফুপু,সমুদ্র, পরী কাপড় আয়রন করতে দেয় আদেশ করার ভঙ্গিতে, “এই,এটা ইস্ত্রি করে দিও তো।”

তিথি ভাবী কঠিন ভাবে অদিতিকে নিষেধ করে দিয়েছেন সমুদ্র -পরীর কাপড় ইস্ত্রি করতে।

গতরাতে অদিতি বেঘোরে ঘুমালে কি হবে,অনেকের চোখেই ঘুম আসে নি। এতোটা খোলামেলা কথোপকথন, অদিতির দৃঢ় কিন্তু নম্র কথাবার্তা, ভাবসাব সবাইকে অতীতে নিয়ে গিয়েছিল। সবাই ভাবছিলো একেবারে নিম্নবিত্ত,অশিক্ষিত পরিবারের মায়ের পেটে থাকা সাত মাসের এক বাচ্চাকে বাঁচানোর জন্য ভাবীর আপ্রাণ লড়াইয়ের কথা, নবজাতক অদিতির কচি,মিষ্টি মুখের কথা, স্বজনহীন ঘরে তার করুণ কান্নার কথা, তার উপরে করা হাজারো অন্যায় অবিচারের কথা, শিশু অদিতির মিষ্টি মিষ্টি কথার কথা,

“আমাল নাম অতিদ্বীয়া”,

” অতিতি আম্মু সাথে ঘুমাবে, অতিতিল বাতিস দাও,”

“অতিতি ফিদাই কলে দুধ খাবে, ফিদাই দাও, কাপ না,অতিতি ছোতো, ফিদাই কলে দুধ খায়।”

“বাবা,বাবা, অতিতিকেও তোলে নাও,”

” দাদা,দাদা,দাদু,দাদু, কি তাবা? কি নান্না তলবো? পুলাউ তাবা? ”

“আমাল ভাইয়াল নাম থমুদ্দু। ”

আরও কতোশতো আধো আধো কথা, রাজ্যের মায়াভরা মিষ্টিমুখ ব্যথাতুর চোখ, ফ্রক পরা পুতুলের মতো শান্ত এক কিশোরী, দেখতে দেখতে কেমন বড় হয়ে গেলো। এখন আনন্দ ভাইয়া আর ফুপু অদিতির সাথে সহজ,স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

“অদ্বিতীয়া। ”

“জ্বী আব্বু।”

“তুমি ম্যাথ বুঝতে পারো না কেন?কোথায় সমস্যা হয় বলোতো দেখি? টিচারের পড়ানো বুঝো না? নাকি আগের থেকেই টেন্সড হয়ে থাকো,তাই বুঝতে পারো না।”

“জানি না আব্বু।”

“আনো তো তোমার অংক বইটা। আমি তোমাকে বুঝাতে পারি কিনা দেখি। ”

ফুপু হয়তো বললেন,”অদিতি, তুমিতো কোরআন শরীফের পুরো তাফসির পড়েছো। এই আয়াতগুলোতে কি বোঝাতে চেয়েছেন, একটু বলো দেখি।আমি আর তোমার দাদা বুঝতে পারছি না।”

যে গোপন ইতিহাসের জন্য মনে দুরন্ত রাগ, ঘৃণা জমা হয়ে থাকতো, খুব সরাসরি সেটা বলাও যেতো না,সহ্যও করা যেতো না, সেই আধা প্রকাশিত আর আধা গুপ্ত রাখা ইতিহাস যখন খুব আকষ্মিক ভাবে, খুব নগ্ন ভাবে অদ্বিতীয়া সবার সামনে নিঃসংকোচে প্রকাশ করলো, তখন কেমন করে যেন অবহেলা,ঘৃণা আর তাচ্ছিল্যের দেওয়ালটা ভেঙে পড়লো, হঠাৎ করে যেন সবার চৈতন্যোদয় হলো এবং তাদের উপলব্ধিতে এলো অদিতি কোনো নোংরা আবর্জনা না, কোনো পাপীতাপী চোর ডাকাত না, তাকেও ভালোবাসায় -স্নেহে-যত্নে -সম্মানের সাথে লালন পালন করা যায়।

চলবে।

#শক্তিময়ী
একাদশ পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা

আর মাত্র পনেরো দিন বাকি। তারপরে সমুদ্র সাত সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউএসএ তে যাবে উচ্চ শিক্ষার্থে। বাড়ির সবাই একই সাথে সুখী ও দুঃখী। ফুপু সারাক্ষণ কাঁদছেন। তিথি ভাবীকেও আড়ালে আবডালে চোখ মুছতে দেখা যায়।চোখ দুটো ফুলে থাকে। সমুদ্র খুব হ্যান্ডসাম ও মেধাবী হলেও মায়ের কিছু ইচ্ছাকে সে মূল্য দেয় নি। ভাবীর হাজার অনুরোধ, রাগারাগি স্বত্বেও সে নামাজ পড়ে না,এমনকি জুমার নামাজও না। ভাবী জোরাজোরি করলে সবাই বাধা দিতো,”আহা,থাক্ না, ছোট মানুষ। বুদ্ধি হলে আপনি পড়বে।এটা নিয়ে এতো দুশ্চিন্তা করো না।” সমুদ্র রোজাও কখনো রাখে নি।ছোট বাচ্চারা শখ করেও তো দু’একটা রোজা রাখে,সমুদ্র এমনধারার শখ কখনো করে নি। একটু উন্নাসিকতা আছে ওর মধ্যে। সেটা কি অতি আদর,অতি ঐশ্চর্যের ফল নাকি তার জন্মগত অভ্যাস,কে জানে। নিজের মা’কে সে প্রায় বলতো,”মা, তোমার কি এই স্কুলে চাকরি করার দরকার আছে? ভালো কোনো ইংলিশ মিডিয়াম, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করলেই পারো?”

“ভালো কোনো জায়গায় আমাকে কে চাকরি দেবে? ছাত্রী হিসাবে আমি আহামরি কিছু ছিলাম না। পাসকোর্সে অনার্স, মাস্টার্স। তাও সাধারণ জায়গা থেকে। রেজাল্টও খুব একটা ভালো না।”

“কেন?নানাভাই-নানুমনি দু’জনেই এতো ভালো চাকরি করতেন, এতো টাকা পয়সা,তোমাকে কেন খুব ভালো কোনো ইনস্টিটিউটে ভর্তি করলেন না? ”

“ভালো জায়গায় ভর্তি করাতে চাইলেই কি হবে? আমার যোগ্যতা থাকা লাগবে না? ”

“একদম ছোটবেলাতে ভালো ডোনেশন দিয়ে ভর্তি করালেই তো পারতেন। আর বড় মামা, আম্মু, ছোট মামা তিনজনই এতো স্কলার,তুমি তাদের বোন হয়ে এমন হলে কেন? আর কি দরকার তোমার এমন একটা স্কুলে চাকরি করার? তুমি পাপার ওয়াইফ বলে কথা। তোমার বাবার বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ির যা স্ট্যাটাস, তাতে এমন চাকরি তোমাকে মানায় না মা।”

“আমার স্ট্যাটাস অনুযায়ী তো মানায় বাবু। তবে আমি আমার সাবজেক্টগুলো খুব ভালো করে পড়াই। ছাত্রীরা যেন ভালো করে বুঝে।পড়ে আনন্দ পায়।”

“তুমি ইংলিশ পড়াও,গ্রামার খুব ভালো বোঝাও,কিন্তু ইংরেজি তুমি গড়গড় করে বলতে পারো না। তুমি ভূগোল পড়াও। ওটা কোনো সাবজেক্ট নাকি? ইংলিশ,ম্যাথ,সায়েন্স এগুলো পড়ালেও না হলে হতো। আর এমন একটা স্কুল ! যারা এখানে পড়ে, তারাও লো মিডল ক্লাস।”

“ওদেরই তো ভালো করে পড়াতে হবে। আমি যেভাবে ওদের ইংলিশ, ভূগোল পড়াই, স্নিগ্ধা দিদি যেভাবে বিজ্ঞানের ক্লাস নেন, রওশন আপা অংক যেমন সহজ করে বুঝান,ওদেরতো আর প্রাইভেট পড়তে হয় না। আমরা ওদের বেজ শক্ত করে দিই। মুন্সি ভাই আর সঞ্জয় বাবু কম্পিউটার ক্লাস খুব ভালো করে নেন।উনাদের কাছ থেকে আমি কম্পিউটারের ব্যবহার ভালো শিখে গেছি। আমাদের স্কুলে গার্হস্থ বিজ্ঞান আর কৃষি স্পেশাল ভাবে পড়ানো হয়। একেবারে হাতে কলমে। আমরা স্কীলড ম্যানপাওয়ার তৈরি করতে চাই।”

“ওরা যে লেভেলের, পড়া কি বেশিদূর কন্টিনিউ করতে পারে?”

“পারে। আমরা সবার খবর রাখি। যারা পারে না, তাদের হেল্প করা হয়,স্পন্সর যোগাড় করে দেওয়া হয়।ওরা ঝরে পড়ে না।”

“যেমন তুমি একজনের স্পন্সর।”

“যার কথা বলছো, আমি শুধু তার স্পন্সর ই না,আমি তার মা। ”

“তারপরও মা,আমার রিকোয়েস্ট, তুমি এই জব কুইট করো।আমার বন্ধুরা যখন জিজ্ঞেস করে তুমি কি করো, আই ফিল শাই।”

“বাবা, আই অ্যাম ফিলিং শাই অলসো, কারণটা ডিফারেন্ট। যাই হোক,এ নিয়ে আর কথা নয়। আমি এই স্কুলেই আছি। তোমার বেশি লজ্জা লাগলে আমার পরিচয় দিও না।”

এই হলো সমুদ্র। সমুদ্রের প্রাতি ভাবীর গাঢ় অভিমান ও রাগের আরেকটা কারণ,ছেলে অদ্বিতীয়াকে সহ্যই করতে পারে না। এতো কাউন্সেলিং, এতো আদরের পরেও একজন পাঁচ বছর বয়সী ছেলে তার দত্তক বোনকে কেন এতো হেয় করবে আর কেন এই ঘৃণা, তাচ্ছিল্য এতো বছর ধরে বহাল থাকবে?

ভাই চলে যাবে,অদ্বিতীয়ার মন খুব খারাপ। পরীর তেমন বিকার নেই। বাবা বলেছেন,আরও বড় হলে পরীও চলে যাবে বাইরে পড়তে। আর নামী ইংলিশ মিডিয়ামের লেখাপড়া, হাউস টিউটর, গান শেখা, বন্ধু, এতো কিছুর মধ্যে পরীর মন খারাপের সময় কোথায়?

অদিতি ফুপার সাথে মার্কেটে গিয়েছিল। সে নিজের টাকা দিয়ে ভাইয়ের জন্য দুইটা শার্ট আর একটা টি শার্ট কিনে এনেছে। তিনটাই অপূর্ব সুন্দর। ফুপা বললেন,”নাতনি আমাকে আজ এতো মার্কেট হাঁটিয়েছে, আমার পা ফুলে ঢোল।”

অদিতি তার দাদার পা মালিশ করতে গেলো।

“না,না,না বুবু,আমি তো ঠাট্টা করলাম। ”

এই তিন জিনিসের দাম আঠারো হাজার টাকা।গড়ে ছয় হাজার করে।

তিথি ভাবী বললেন,”সমুদ্রের এতো এতো শার্ট, তাও কিনলে কেন?আর আঠারো হাজার টাকার কাপড়?অদিতি, অপচয় করতে হয়না,শিখিয়েছি না তোমাকে?”

“কোনোদিন ভাইয়াকে কিছু দিইনি তো মা। আর দামী না হলে তো ভাইয়া পরবে না।”

অদিতি অনেকবারই ভাইকে উপহার দিয়েছে। সমুদ্র সেগুলো ছুঁয়েও দেখে নি। নিজের হাতে তৈরি করা কার্ড, নিজের লাগানো গাছের ফুল, বই,ডায়েরি, নিজের করা বাটিকের ফতুয়া। অদিতিকে যখন যে টাকা দেওয়া হয়, সে জমায়। আমাদের পরিবার বিশাল পরিবার। দুই ঈদে মুরুব্বি রা সালামি দেন, আনিলা আপা অদিতির নাম করে নিয়মিত টাকা পাঠান।
অদিতি সেই টাকা দিয়ে গাছ কিনে।ফুপুর বাসার সামনের ফাঁকা জায়গা, দোতলা বাড়ির বারান্দাগুলো, ছাদ নানারকম ফুল গাছ দিয়ে ভর্তি। অদিতির কান্ড। গাছের পরিচর্যা সে নিজের হাতে করে।

সমুদ্র তার উপহার দেখে মুগ্ধ। সে আরও দামি জামাকাপড় পরে, সে কিনে,বাবা কিনে দেন, অন্য আরও অনেকে উপহার দেন, সেগুলো এতো সুন্দর হয় না।

“ভাইয়া,আপনার পছন্দ হয়েছে?”

“হুঁ।”

“পরবেন কিন্তু। ”

“হুঁ।”

অদিতি পাকা গিন্নীর মতো ভাইয়ের পছন্দের খাবার তৈরি করে। মেয়েটার হাতে আসলেও যাদু আছে।

এরমধ্যে এক রাতে ফুপা-ফুপু ঘুমাচ্ছেন, ভাইয়া ঘুমিয়ে পড়েছেন প্রায়, রাত পৌণে বারোটার দিকে বাসায় অদিতির চাচা-ফুপুরা তাঁদের পরিবারসহ আসলেন। এই চাচা-ফুপুর দল গোড়া থেকে অদিতিকে মায়া করেছে। রাত দুপুরে জনসমুদ্র দেখে সবাই অবাক। বারোটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে সমুদ্র আনিলা আপাকে ভিডিও কল দিলো। বারোটা বাজার সাথে সাথে সমুদ্রের নেতৃত্বে চাচা-ফুপুদের অর্থাৎ আমাদের আর ভিডিও কলে আনিলা আপার একসাথে গগণ বিদারী চিৎকার, “হ্যাপি বার্থ ডে ডিয়ার অদ্বিতীয়া।হ্যাপি বার্থ ডে আওয়ার প্রিন্সেস।”

বার্থডে গার্ল ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। বুঝতে পারছে না,যা ঘটছে তা বাস্তব কি না। কখনো তার জন্মদিন পালন করা হয়নি। প্রথম প্রথম তিথি ভাবী লুকিয়ে কেক বানিয়ে রাত বারোটায় বাসার সবাইকে ডাকতেন।ফুপা আর মাজেদা খালা ছাড়া বাকি সবাই প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে চলে যেতেন।ছোট্ট অদিতি মায়ের কোলে বসে মোমবাতির শিখা দেখে নানাভাবে উল্লাস প্রকাশ করতো। ভাবী অদিতিকে কেক খাইয়ে ঘুম পাড়াতেন। পরী বা সমুদ্র টের পেয়ে যেতো মা পাশে নেই। তারা সুর ধরতো। আনন্দ ভাইয়া এসে ভাবীকে বলতেন,”নিজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তা নেই? আদিখ্যেতা বেশি করলে সেটা কমানোর ব্যবস্থা করবো। ” ভাবী মেয়েটার কোলে অদিতিকে দিয়ে ক্লান্ত পায়ে নিজের ঘরে চলে যেতেন। মায়ের কোল থেকে বিচ্যূত হয়ে অদিতি গলা ফাটিয়ে কাঁদতো। সেই কান্নায় ফুপু আর আনন্দ ভাইয়া ভীষণ ক্ষেপে যেতেন। মহা অশান্তি। অদিতির জন্মদিনের কেক বাসার কেউ ছুঁয়ে দেখতো না। ভাবী পোলাও কোরমা রাঁধতে গেলে ফুপু অস্বাভাবিক রেগে যেতেন,”কিসের এতো রান্নাবান্না?উপলক্ষ কি?আমার চল্লিশা? সেটাইতো চাও তুমি।” কাজেই ভাবী বাসায় অদিতির জন্মদিন উদযাপন বন্ধ করে দিলেন। অনেক বছর ধরে অদিতির জন্মদিনে ভাবী নিজের হাতে পায়েস রেঁধে রাত বারোটায় মেয়েকে মুখে তুলে খাওয়ান। দুইটা গল্পের বই দেন। গাছের একটা চারা দেন। আজকেও তাই-ই করতেন।

নিজের পরিবার বলে বলছি না, আমাদের বৃহত্তর পরিবারের সদস্যরা আসলেও খুব ভালো। বনেদি,অভিজাত। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু -বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী সবার সাথে আমাদের খুবই সদ্ভাব। আমাদের চাচা-ফুপারা বহু অনাথ,অসহায় মানুষকে অকাতরে সাহায্য করেছেন, স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন,এতিমখানা দিয়েছেন, মসজিদ বানিয়েছেন, বহু ছাত্র ছাত্রীকে লেখাপড়ায় সাহায্য করেছেন, শুধু অদ্বিতীয়ার বেলায় উদারতা ও মানবতা কোথায় যেন পালিয়ে গিয়েছিল।

সমুদ্র আর পরী মিলে বিশাল এক বাক্স অদ্বিতীয়ার হাতে দিলো।বোঝা যাচ্ছে, ফটোফ্রেম আছে ভিতরে। বের করে দেখা গেলো, অদিতির বিশাল এক ফটোগ্রাফ। খুবই সুন্দর। কোনো এক ফাঁকে গোপনে সমুদ্র তুলেছিলো। ফ্রেমের নিচের দিকে লেখা,”Our beloved sister Aditiya”.

অদিতি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। তিথি ভাবীরও চোখ থেকে অবিরাম পানি গড়াচ্ছে। সমুদ্র নিজেই টেবিলে কেক এনে রাখলো। বিশাল ও ভারি সুন্দর কেক। উপরে লেখা, “Happy birthday our fairy.”

তারপরে কেক কাটা এবং রাজ্যের মজার মজার খাবার খাওয়া। সব সমুদ্র এনে ওর ঘরে লুকিয়ে রেখেছিলো। মাজেদা বু ছিলেন সমুদ্রের সহচর।

হৈচৈ, খাওয়া দাওয়া। এরমধ্যে অদিতি আকুল হয়ে কেঁদেই যাচ্ছে, নিঃ শব্দে। সমুদ্র বললো,”কাঁদছিস কেনো এতো? তোর জন্য গিফট কিনি নি,তাই? আচ্ছা, আচ্ছা , কাল তোকে সাথে নিয়ে ড্রেস কিনে দিবো। এখন ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে প্রোগ্রামটা নষ্ট না করে হাসাহাসি কর, নিজে খা,সবাইকে খেতে দে।”

কতো গল্প,কতো স্মৃতিকথা। লাবণী আপা বললেন,”এই, তোমাদের সবার মনে আছে, অদিতিকে আমরা যখন জিজ্ঞেস করতাম, অদিতি,তোমরা কয় ভাই বোন?”
লাবণী আপার কথা শেষ না হতেই প্রায় দশটা গলা ছোট্ট অদিতির গলা নকল করে বললো,” এত্তা ভাইয়া,এত্তা আমি,এত্তা পলী।”

সবাই জোরে হেসে উঠলো। অনেকদিন পরে আমরা আমাদের পুরানো তিথি ভাবীকে দেখতে পাচ্ছি, হাসিখুশি, উচ্ছ্বল,উজ্জ্বল, প্রজাপতির মতো ছোটাছুটি করা, শুধু পাগলাটে ভাবটা আর নেই। ওই পাগল ভাবীকে আমরা আবার ফিরে পেতে চাই।

আনন্দ ভাইয়ার বিয়ের কয়েকদিন পরে আমরা কাজিনরা বাসে করে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার মেজ চাচার পরিবহন ব্যবসা। সেখান থেকে অতিকায় একটা বাস নিয়েছিলাম যেন সবাই একসাথে থাকতে পারি। সারাপথ হৈ চৈ, আড্ডা,খাওয়া দাওয়া। ভাবী শুরুতেই আমাদের হুঁশিয়ার করে দিলেন, ” খেয়ে টেয়ে একটা জিনিসও বাইরে ফেলবি না,খবরদার।হাত কেটে ফেলবো তাহলে। সব এই ব্যাগে রাখবি।” বিশাল এক চটের বস্তা। ভাবী পলিথিন ব্যবহার করেন না,আমাদেরকেও করতে দেন না। দিনের শেষে বস্তা ভরে উঠেছে বিরিয়ানির প্যাকেট , কমলার খোসা,বাদাম আর কলার খোসা দিয়ে।

উপচে পড়া বস্তা তখন একটা ঝামেলা। আরও নানারকম খাদ্য পানীয়ের ব্যবস্থা আছে, সেগুলোর প্যাকেট রাখা হবে কোথায়? ভাবী ড্রাইভার সাহেবকে ডাস্টবিন খুঁজতে বললেন। হাইওয়েতে ডাস্টবিন কোথায়? রাস্তার পাশে কোথাও ময়লা আবর্জনা দেখলে ড্রাইভার সাহেবের সাথে আমরাও বলছি,”ভাবী, বস্তাটা এখানে ফেলা যাক।” ভাবীর এক গোঁ। শেষে একটা ডাস্টবিনের সন্ধান মিললো। আনন্দ ভাই, ভাবী, আবীর ভাই মিলে বস্তাটা ডাস্টবিনে রেখে আসলেন সেটার মুখ বেঁধে, পরিপাটি করে। পানি আর কোল্ড ড্রিংকসের প্লাস্টিকের বোতলগুলো বাসায় নিয়ে এসে কেটে ভাবী টব বানালেন, ডেকোরেশন পিস বানালেন। এই হলেন তিথি ভাবী।

ঝুমুর আপা ছিলো অতিমাত্রায় ভীতু। ভাবী বললেন,”দুনিয়ায় এসেছিস কি ভীতুর ডিমের মতো ঘরের কোণে বসে থেকে ভয়ে ভয়ে আস্ত জীবন কাটিয়ে দিতে? বাস অ্যাকসিডেন্টের কথা শুনেছিস না?অনেক আহত কাতরাচ্ছে ঢাকা মেডিকেল আর পঙ্গু হাসপাতালে। প্রচুর ব্লাড দরকার। তোর বি পজিটিভ না? চল্ আমার সাথে।” ঝুমুর আপা তো যাবেই না। রীতিমতো হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি। আমাদেরও ভয়ে হাত -পা ঠান্ডা কিন্তু মুখে প্রকাশ করছি না।ভাবী কড়া গলায় বললেন,”একটা সূঁচ ফোটার ভয়ে এই অবস্থা, আর যে মানুষগুলো হাত পা ভেঙে কাতরাচ্ছে, তাদের কি অবস্থা শুনি? আজ যদি তোদের বাপ-মা-ভাই-বোন ঐ পরিস্থিতিতে থাকতেন,কি করতিস তোরা?এমনই জুজুর ভয়ে কাঁপতিস? একটা মানুষের জীবনের তুলনায় সামান্য একটা সূঁচের গুতা এতো ভয়ংকর তোদের কাছে? আচ্ছা স্বার্থপর তো! ”

ভাবীর ছিছিক্কারে আমরা গেলাম। ঝুমুর আপাকে প্রায় বয়ে নিয়ে যেতে হলো। আমরা রক্ত দিলাম। অসহায় অনেক রোগীকে দেখলাম। পিঁপড়ার কামড়ের থেকেও কম যে ব্যথা লেগেছিল, সেটা উধাও হয়ে গেলো রোগীদের দেখে। রোগীদের স্বজনেরা এসে যখন জড়িয়ে ধরে দোয়া করছিলেন, কি একটা অপার্থিব শান্তিতে মন ভরে গেলো। এখন আমরা সবাই স্বেচ্ছায় ব্লাড দিই, আর রক্ত দেওয়াটা ঝুমুর আপার নেশায় পরিণত হয়েছে।

চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ