শক্তিময়ী
৬ ষ্ঠ পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা
দুই বছর বড় অল্প সময়। কেমন প্লেনের গতিতে সময় কেটে গেলো। আর এই অল্প সময়েই ঘটে গেলো কতো পরিবর্তন। আনিলা আপা কিছুতেই ডিভোর্স নিতে চান নি। কান্নাকাটি, একবার শাশুড়ির পা ধরা, একবার শাশুড়ির ছেলের পা ধরা। ফুপু মেয়েকে কষে দুটো থাপ্পড় দিয়েছিলেন। “এমন মেরুদন্ডহীন কেঁচো হয়ে জন্মেছিস তুই?আমাদের দেওয়া এতো শিক্ষা, এতো এতো লেখাপড়া তোকে মানুষ বানাতে পারলো না?একটা অযোগ্য, অপদার্থ, স্বার্থপর, নারীলোভী অমানুষের জন্য এতো কান্না?কাঁদবি তো মানুষের জন্য। এখানে,এই বাড়িতে একটা মানুষ জাতীয় প্রাণী আছে?তুই বল্। এই হাবিয়া দোজখে কেমন করে ছিলি এতো দিন?”
“আপনি আমাকে নারীলোভী বললেন কেন?”
“তোমাকেতো সহজ সরল ভাষায় লুচ্চা বলা উচিৎ ছিলো।অসভ্য, লম্পট। যে ছেলে বিয়ের ৬ বছরের মাথায় বাচ্চা না হওয়াকে একটা বড় ইস্যু বানিয়ে নতুন বৌএর স্বাদ পেতে চায়, তাকে লুচ্চা,বদমাশ ছাড়া আর কি বলবো? ”
নানা বাদানুবাদের পরে অনেকটা জোর করে আনিলা আপাকে ঐ বাসা থেকে বের করে আনা হয়েছিলো। সবাই আপাকে আত্মসম্মানবোধহীন মনে করতে পারে, কিন্তু ভালোবাসা আসলে নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে চলে না। আনিলা আপার মতো বিদ্যাবতী,রূপবতী,গুণবতী, স্বনির্ভর, লক্ষী একটা মেয়ে কেমন করে যে একটা অভদ্র, মা-বোনের পোষা ভেড়াকে এতোটা ভালোবেসে ফেললেন,তা কারোরই বোধগম্য হচ্ছিল না।
আনিলা আপাকে ফুপা-ফুপু-আনন্দ ভাইয়া-তিথি ভাবী মাথায় তুলে রাখলেন। আমরা সবাই। কিন্তু গম্ভীর আপা গম্ভীরতর হয়ে গেলেন। খুব দরকার না হলে কারোর সাথে কোনো কথাই বলতেন না।এই যে দু’বছর কেটে গেছে,এখনও না। চাকরি আর বাসা।
আমরা কিন্তু গোপনে ঐ লোকটার খোঁজ রাখি। ডিভোর্স হতে না হতেই সে বিয়ে করেছে। এখনো বাচ্চা হয় নি।
ফুপা-ফুপুর মন খুব খারাপ থাকে আনিলা আপার জন্য। আনন্দ ভাই আপাকে প্রায়ই বলে,”এমন গুম হয়ে থাকিস কেন আনিলা? তুই জানিস না কতো বড় বাঁচা বেঁচে গেছিস। ওই ছেলে,তার মা-বোনরা কেউ মানুষ না।
বাবার বন্ধু ভালো, কিন্তু বন্ধুকে দিয়ে তার ভাইয়ের পরিবারকে জাজ করা উচিৎ হয়নি। দেখিস ওদের কপালে কি অপেক্ষা করছে। আল্লাহর মার,দুনিয়ার বার।”
আরও দুই বছর পার হলো। কিন্তু বাচ্চার নামগন্ধ নেই। ওই স্ত্রীর উপরেও নাকি জুলুম শুরু হয়েছে।
আনন্দ ভাইয়া বললেন,”আনিলা,তুই নতুন করে সংসার কর।অবশ্য তোর যদি আপত্তি না থাকে।”
“আমি বিয়ে করবো কি আবার ডিভার্সী হওয়ার জন্য? বিয়ের আগে আমি যে লোককে বলবো আমার গর্ভধারণের ক্ষমতা নাই,সেই আমাকে রিজেক্ট করবে। আর ডিভোর্সি, বিপত্নীক, বিবাহিত এসব লোকদের বিয়ে করার কথা আমি ভাবতেও পারি না। একা আছি, সেই ভালো।”
অদ্বিতীয়ার বয়স এখন সাড়ে সাত বছর। ভারি মিষ্টি চেহারা। তার চেয়ে ঢের মিষ্টি তার স্বভাব। তিথি ভাবী একটা স্কুলে চাকরি নিয়েছেন। অদ্বিতীয়া সেখানেই ক্লাস ফোরে পড়ে। মেয়েটা অসম্ভব মেধাবী।
যখন অদ্বিতীয়ার ঝলমলে, একদম সোজা সাপটা এক ঢাল চুলের দিকে তাকাই, তখন ভাবি ওর চুল কার মতো?বাপের না মায়ের মতো চুল পেয়েছে মেয়ে? ওর পানপাতার মতো মুখ, বড় বড় পাপড়ি ছাওয়া কথা বলা দুটি চোখ, ওর একটু বোঁচা নাক, বয়সের তুলনায় লম্বা, ছিপছিপে শরীর, সরু লম্বা আঙ্গুল কার কাছ থেকে পেয়েছে মেয়ে?
ফুপা এখন অদ্বিতীয়ার কঠিন ভক্ত। এখন বলছি কেন,অনেক আগে থেকেই। যখন অদ্বিতীয়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় ফুপা -ফুপুর মাগরিবের নামাজের পরে একটা প্লাস্টিকের খেলনা ট্রে তে ছোট ছোট কাপ পিরিচে কল্পিত চা আর বিস্কিট নিয়ে যেতো উনাদের কাছে, ক্ষীণ ও ভীত কন্ঠে বলতো,” দাদাভাই, চা খাও। আমাল বানানো চা। অনেক মজা।” ফুপু কঠিন মুখে বসে থাকতেন। ফুপাও গম্ভীর মুখে বলতেন,”হুম, খেয়েছি। এখন এগুলো নিয়ে যাও।”
“বিস্কু খাও।”
“খেলাম। যাও।”
কিছুক্ষণ পরে আবার আগমন।
“নুদুস খাও।”
ফুপু তীব্র স্বরে বলতেন,”একটা সিরিয়াল শান্তি মতো দেখার উপায় নেই। এই মেয়ে, এখানে বকরবকর করবে না।যাও এখান থেকে।”
এদিকে সমুদ্র লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি করে তুফান করে তুললেও ফুপুর কোনো হোলদোল নেই। পরীর অনবরত কথা বলে যাওয়া ফুপা ফুপুর কাছে লাগে পাখির কিচিরমিচিরের মতোন। তারপরে প্রতি সন্ধ্যায় কাল্পনিক চা,বিস্কু,নুদুস, ফিন্নি, মিসতি খেতে খেতে ফুপার একসময় ভীষণ মায়া পড়ে গেলো সাড়ে তিন বছরের দত্তক নাতনির উপরে।
“দাদাভাই, চা নাও। ”
“চায়ের সাথে কি আছে অদ্বিতীয়া? ”
“বিস্কু”।
” রোজ বিস্কু খেতে পারবো না। আজ গরম গরম পরোটা আর নিহারি খাবো।”
অদ্বিতীয়া উদভ্রান্ত। নিহারি কি,সে জানে না।
“এই নাও তোমাল গলম গলম পতেরা আল ঐ তা।”
“ঐ তা কি?”
অদ্বিতীয়া লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়ে এদিক ওদিক করতে থাকে। নিহারির নাম মনে করতে পারে না। এভাবে আস্তে আস্তে কেমন করে যেন দাদা-নাতনির ভাব হয়ে গেলো।
অদ্বিতীয়া এখন সন্ধ্যায় নামাজ পড়ে পড়তে বসে। আরও পিচ্চি অবস্হা থেকে সে নামাজ শুরু করেছে। মায়ের সাথে পড়ে। এমনকি ফজরও।
দাদার সাথে সে মাঝেমধ্যে বেড়াতে যায়, বেশির ভাগই দাদার বন্ধুদের বাড়ি,শিশু পার্ক,রমনা পার্ক, দাদার আব্বার বাড়ি বিক্রমপুর। মোট কথা, যেসব জায়গায় দাদার সাথে কেউ যেতে চায়না,কিন্তু দাদা একজন সঙ্গী পেতে উদগ্রীব, সেখানে অদ্বিতীয়া যায়। ফুপা খাওয়ার টেবিলে এসে আগে অদ্বিতীয়ার খোঁজ করেন। ফুপু রাগী গলায় বলেন,”তোমার নিজের নাতি নাতনি নেই? তাদের ডেকেছো? পরগাছা পরগাছাই।এদের এতো লাই দিতে হয় না।”
সবাই একসাথে খেতে বসে রাতে,আনিলা আপা ছাড়া। আপার খাবার তার ঘরে পাঠিয়ে দিতে হয়। ফুপু আপাকে সঙ্গ দিতে চান, আপা রাজী হন না।
খেতে বসে সমুদ্র প্রথমেই মুরগির দুটো রান নিয়ে নেয়। বাঁধা ধরা রুটিন। পরী খাবে একটা কিন্তু নেবে দুইটা যেহেতু ভাইয়া দুইটা নিয়েছে।আনন্দ ভাইয়া এখন মুরগির সাথে গাদা খানেক রান কেনেন আলাদা করে। পরী একটা কোনোমতে খায়,আরেকটাতে একটা-দুটা কামড় দিয়ে ঠোঁট টিপে বসে থাকে। তিথি ভাবী অনেক বুঝিয়েছেন মেয়েকে,”আগে একটা খাও,তারপর পারলে আরেকটা নিবে। খাবার নষ্ট করতে হয় না সোনা। আল্লাহ রাগ করেন।”
ফুপু বলেন,”ও ছোট মানুষ, এতো কিছু কি বুঝে? নিক না।”
পরী যখন নষ্ট করে, তখন ফুপু বলেন, “ঐ তো সামান্য একটু কামড়েছে কি কামড়ায় নি। ওটা ওকে দিয়ে দিলেই হয়।”
ওকে মানে অদ্বিতীয়াকে।
তিথি ভাবী কখনোই তা দেন না।ফুপু এজন্য অসন্তুষ্ট।
খাবার টেবিলে অদ্বিতীয়া ভয়ে ভয়ে থাকে,বিশেষ করে দাদী আর বাবার জন্য। বেচারা খায় ধীরে, প্রায়ই সবার পরে তার খাওয়া শেষ হয়। আনন্দ ভাইয়া ধমক লাগান,” এতো আস্তে খাও কেন? তোমার খাওয়া হলে না মাজেদা বু টেবিল গোছাবে। তোমার জন্য কাজ কাম ফেলে সবাই বসে থাকবে নাকি?”
সাড়ে সাত বছরেই মেয়েটা মাছ বাছতে পারে। তিথি ভাবী শিখিয়েছেন। মেয়ে যতো তাড়াতাড়ি স্বাবলম্বী হয়, ততোই মেয়ের জন্য ভালো।
আনিলা আপা কয়েকদিন খুব ব্যস্ত ছিলেন। তারপরে ঘোষণা দিলেন,তাঁর অস্ট্রেলিয়ায় চলে যাওয়ার সব প্রসেস কমপ্লিট। তিনি একবারে সেখানে চলে যাবেন।
সবার বাধা,ফুপুর অঝোরে কান্নাকাটি কিছুই আনিলা আপাকে আটকাতে পারলো না। যাওয়ার আগে নিজের রুমটাকে ভারি সুন্দর করে গুছালেন। তারপরে সবার সামনে অদ্বিতীয়াকে কাছে টেনে বললেন,”আমি চলে গেলে এই ঘর তোমার। তোমাকে কোনোদিন আদর করিনি। কাছে আসো,আদর করে দিই। ভালো করে লেখাপড়া করবে, তারপরে অনেক ভালো একজন “দাত্তল” হবে?হবে তো?”
আরও কয়েকবছর আগে আমরা ছোট্ট অদিতিকে যতোবার জিজ্ঞেস করতাম,” তুমি বড় হয়ে কি হবে?”
উত্তর আসতো, “দাত্তল।”
“ডাক্তার হবে কেন? ”
“দাদাল অসুখ ছালি যাবি।”
অদ্বিতীয়ার প্রতি ফুপার টানের এটাও একটা বড় কারণ। আনিলা আপার ডিভোর্সের পরে ফুপা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েকদিনের জন্য। নিয়মিত পারিবারিক চিকিৎসক রাতে একবার এসে দেখে যেতেন। সেসময় ছোট্ট অদিতি দাদার খুব সেবাযত্নের চেষ্টা করতো প্রচুর বকাঝকা খেয়েও।
“ওসুদ খাইছো?”
“এখন এতা খেতে হবে।এই ওসুদতা।”
” তিতা? পানি খাও।” সত্যি সত্যি তার হাতে এক গ্লাস পানি থাকতো।
“বুমি কলবা?”
” পেতে ব্যথা?”
তার উপদ্রবের সীমা পরিসীমা ছিলো না।
সত্যি সে খাটের এক কোণে বসে দাদার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো ক্লান্তি হীন ভাবে।
প্রথম দিন ফুপু রেগে আগুন, “নামো আমার খাট থেকে। আর কখনো যেনো এই ঘরে না দেখি।”
ফুপা বলেছিলেন, “থাক্। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, বেশ আরাম লাগছে।”
“আমরা হাত বুলিয়ে দিতে পারি না? এই মেয়ে…..”
“থাক্ না। এখন চেঁচামেচি কোরো না।”
অতোটুকু বাচ্চা ঘন্টা খানিক ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো। কারোর নিষেধ শুনতো না। জ্বর আসলে মাথায় পানিপট্টি দিয়ে দিতো খুব যত্ন করে। ঐ সময়ই সে ঘোষণা দিয়েছিলো,সে “দাত্তল” হতে চায়।
কিন্তু আনিলা আপা যে এটা শুনেছেন এবং মনে রেখেছেন,তা আমরা ভাবতেও পারি নি।
আনিলা আপা আবার বললেন,”হবি তো ডাক্তার?ভালো করে পড়ালেখা করবি।তারপরে তোকে নিয়ে যাবো আমার কাছে।এই দেশে অনেক সমস্যা। যদি অনেক অনেক যোগ্যতাও থাকে, তবু সমাজের কাছে…….। এসব কথা থাক। তোকে কোনোদিন দিইনি কিছু। আজ অল্প কিছু উপহার এনেছি। নে।”
তিনটা অতি দামী এবং সুন্দর ফ্রক, দুই জোড়া ভালো জুতা, ভারি সুন্দর দুইটা সোয়েটার, দারুণ একটা পুতুল, একটা স্কুল ব্যাগ।
অদ্বিতীয়া অবাক হয়ে আনিলা আপার দিকে তাকিয়ে আছে।এই ভদ্রমহিলা তাকে অনাদর করেন নি, আদরও করেন নি কখনো।
“আমি তোর কি হই,জানিস?”
“ফুপি।”
ক্ষীণ স্বরে উত্তর এলো।
আনিলা আপা আনন্দ ভাইয়াকে বললেন,”ভাইয়া, এর আর অনাদর করিস না। একটা বাচ্চার অভাবে হাজার হাজার সংসার ধ্বংস হয়ে যায়,ও তো আল্লাহর রহমত। তুই কাগজ পত্রে সই সাবুদ করেই ওকে নিয়েছিলি,তাই না? পরীর কপাল তো ওর মতো হতে পারতো।”
“কি বলিস তুই? চুপ কর্। কোথায় পরী আর কোথায় অনুরোধে ঢেঁকি গেলা।”
” ঠিক আছে। তোর চিন্তা তোর। আমি কিন্তু অদিতিকে পরী বা সমুদ্রের থেকে আলাদা করে দেখি না। শুধু আবেগ প্রকাশে বড্ড দেরি হয়ে গেলো।অস্ট্রেলিয়ায় একটু সেটেল করে একটা মেয়ে বেবী অ্যাডপ্ট করবো। ”
“তোর কি মাথা খারাপ? ”
“মাথা খারাপ না। আমিও মা হতে চাই। পেটে না ধরেও মা হওয়া যায়।ভাবী তার প্রমাণ। তিন সন্তানকে এতোটুকু আলাদা করে দেখেনি। সেজ খালাও সত্যিকারের মায়ের উদাহরণ। ফুপার মৃত প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের কি আদর দিয়ে বড় করেছেন নিজের ছেলেদের পাশাপাশি, কোনো খাদ নেই এই ভালোবাসায়। এইসব মা’দের স্যালুট।”
কথাবার্তা অদ্বিতীয়ার অনুপস্থিতিতে হচ্ছে। ফুপু ভার গলায় বললেন,”আমি ভালো মা না,তাই না?”
“যাদের কথা বললাম, তাদের মতো না। তুমি নিজের ছেলেমেয়ে দুটোকে প্রাণের চেয়ে ভালোবাসো, বোন পো-বোনঝিদের একজন আদর্শ খালার মতো ভালোবাসো,ভাইপো-ভাইঝিদের আদর্শ ফুপুর মতো ভালোবাসো। কিন্তু তুমি অদিতিকে ভালোবাসো না। সাড়ে সাত বছর ধরে বাচ্চাটা এ বাড়িতে আছে,তোমার চোখের সামনে একটু একটু করে বড় হয়েছে, হামা দিয়েছে, টলমল করে হাঁটতে শিখেছে, টুকটুক করে কথা বলতে শিখেছে, তোমাকে ভালোবেসে দাদুমনি বলে ডাকে,তাও কি ও তোমার এতোটুকু মায়া কাড়তে পেরেছে মা? আইনত তুমি তার দাদী।কিন্তু কতোটা বৈষম্য করো সমুদ্র -পরী আর অদ্বিতীয়ার মধ্যে? আমি অনেক ঠেকা খেয়ে এটাই শিখেছি, যে পরকে ভালোবাসতে পারে দ্বিধাহীন ভাবে, নিঃশর্ত ভাবে, নিঃস্বার্থ ভাবে,তার মধ্যেই আসল মা স্বত্বা লুকিয়ে আছে। নিজের বাচ্চাকে কে না ভালোবাসে?তাতে কৃতিত্ব কি?”
“নিজের বাচ্চাকে সবাই ভালোবাসে,তাই না? তাহলে অদ্বিতীয়া আজ নিজের বাপ-মায়ের কাছে নেই কেন?”
“এক্সেপশন কখনো উদাহরণ হতে পারে না।”
“মা রে,তুই একটা কাজ কর। শৈবাল তো বড্ড ভালো ছেলে। বৌ মারা গেছে দুই বছর হয়ে গেলো। ছেলেটার আড়াই বছর বয়স। ওকে বিয়ে করে ফেল মা। সংসারও পাবি,সন্তানও পাবি।”
“না মা,পুরুষদের উপর অরুচি ধরে গেছে।”
“তোর বাপ-ভাই কিন্তু পুরুষ। ”
“ভাইয়া তোমাদের ছেলে হিসাবে খুব ভালো,আমার ভাই হিসাবে একশোতে একশো, সমুদ্র -পরীর বাবা হিসাবে খুব ভালো বলবো না,ভাইয়ার আশকারায় ওরা একটু সেলফিস গোছের তৈরি হচ্ছে, স্বামী হিসাবে ভাইয়া শূন্য। ”
স্বামী হিসাবে আনন্দ ভাইয়া শূন্য? যে আনন্দ ভাইয়া তিথি ভাবীকে দেখে প্রেমে দেওয়ানা হয়ে গেলেন, অনেকটা অপহরণ করেই বিয়ে করলেন, ভাবী ছাড়া যার একদিন থাকতেও ভীষণ কষ্ট হয়,সেই আনন্দ ভাইয়া একশোতে শূন্য?
“একশোতে শূন্য নয়? ভাবী এতো শখ করে অদ্বিতীয়াকে ঘরে আনলো, তোর সই সাবুদ নিয়েই সবকিছু হয়েছে,ভাবীর আবদার পূর্ণ করতে নিজের ইচ্ছার চরম বিরুদ্ধে হলেও তুই রাজি হয়েছিস,কিন্তু রাজী হয়ে কি লাভ হলো? অদিতির সাথে করা তোর প্রতিটা ব্যবহার ভাবীকে কতোটা কষ্ট দিয়েছে, এখনো দিচ্ছে, সেটা বোঝার ক্ষমতা তো তোর আছে নিশ্চয়। ভাবী কোনো অন্যায়ও করেনি। একটা অসহায় বাচ্চাকে সে সুন্দর পারিবারিক জীবন দিতে চেয়েছে। আমরা সাধারণ, তাই আমরা এই কর্মকাণ্ডে বিরক্ত। কিন্তু ভাবীর মতো মানুষ আছে বলেই মানবতা বেঁচে আছে। সব ঘরে যদি একটা করে তিথি থাকতো,তাহলে পৃথিবীটা স্বর্গ হয়ে যেতো। ডাস্টবিনে,ড্রেইনে, পুকুরে,ঝোপেঝাড়ে নবজাতকের লাশ পড়ে থাকতো না। ‘
চলবে