#শক্তিময়ী
৫ম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা
“অদিতি সোনা, বলো তো,তোমার পুরো নাম কি?”
“অদ্বিতীয়া লহমান।”
“তোমার আব্বুর নাম কি?”
” আচিফ লহমান আনুন্দু।”
“আ-সি-ফ। আনুন্দু না মামনি,আনন্দ। বলো,আব্বুর নাম কি?”
“আচিফ লহমান আনন্দু।”
“দাদাভাইয়ের নাম?”
আশরাফুর রহমান উচ্চারণ করতে অদ্বিতীয়ার জানটা বের হয়ে যায়।
“আতলাফুল লহমান।”
“দাদির নাম কি?”
“ফলিদা লহমান।”
“আম্মুর নাম?”
“ছাম্মিন লহমান তিথি।”
প্রশ্নোত্তরের এই পর্যায়ে অদিতি মায়ের কোলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে গালে গাল ঘষে খানিকক্ষণ আহ্লাদ করে নেয়।
“তোমরা কয় ভাই বোন?”
” এত্তা ভাইয়া,এত্তা আমি, এত্তা পলি।”
“তোমার বয়স কতো?”
“ছালে তিন। ”
“সাড়ে তিন হয়নি এখনো। এইটা কি?”
“ছলে আ।”
“এইটা?”
“দিঘ্ঘি।”
অদ্বিতীয়া স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ, অ্যালফ্যাবেট, এক থেকে একশো, ওয়ান থেকে হান্ড্রেড সব পারে। অক্ষরগুলো চিনতে পারে। হাত-পা -নাক-মুখ সবকিছুর ইংরেজি পারে। ছড়া বলতে পারে অনেক। রিনরিনে গলায় আধো আধো উচ্চারণে এতো মিষ্টি করে গান গায় ! এতো মায়া লাগে শুনতে। ফুপা তো শোনেনই,ফুপুকেও লুকিয়ে শুনতে দেখেছি।
ছোট্ট একটা পুতুল আমাদের অদিতি। সেদিনের ঘটনার পর থেকে আর তেমন অশান্তি হয়নি। ভাবী দুই তিন দিন ভারি অসুস্থ ছিলেন। প্রেশার একদম লো, হিমোগ্লোবিন খুব কম। আনন্দ ভাইয়া ভাবীর দুই পা জড়িয়ে মাফ চেয়েছেন তাঁর সাথে দুর্ব্যবহার করার জন্য। আরও বলেছেন,বাচ্চাটার সাতে পাঁচে তিনি থাকবেন না। ভাবী ইচ্ছা মতো তাকে মানুষ করুক। যা টাকা পয়সা লাগে আলমারি থেকে নিক। বাচ্চার বাবা হিসাবে তাঁর নাম ব্যবহার করুক। কিন্তু বাচ্চাটাকে ভালোবাসা, আদর করা, সমুদ্র আর পরীর সাথে এক লেভেলে দেখা তাঁর পক্ষে কোনো ভাবে সম্ভব নয়।
অদিতির জ্বর ছিলো টানা সাতদিন। ভাবীও তখন অসুস্থ। কি যে একটা অবস্থা। আকাশ পাতাল জ্বর ওঠে। কিছুই খেতে চায়না।জোরজার করে খাওয়ালে বমি করে ফেলে। মাঝেমধ্যে আকুল চোখে ভাবীকে খোঁজে।
ফুপু তাও আসেন নি। ফুপা বরং এসেছেন। পাশে বসে থেকেছেন। প্রায় অচেতন অবস্থা যখন, ডাক্তারের কাছেও নিয়ে গেছেন। ভাবীর বাবা-মা মেয়েকে আর নিজেদের দুই নাতি নাতনিকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। অদ্বিতীয়ার দিকে ফিরেও তাকান নি। যতোটুকু করার,আমরা অবিবাহিত কাজিন সমাজ ই করেছি।
তিথি ভাবী সমুদ্রের খাওয়া,লেখাপড়া, আচার ব্যবহারের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন। অনেকটা পথে এসেছে সমুদ্র। কিন্তু অদ্বিতীয়াকে একদম সহ্য করতে পারে না। কেউ প্রশ্ন করলে বলে,”আমরা দুই ভাই বোন। আমি আর পরী।” আনন্দ ভাইয়ারও একই কথা, “আমার দুই ছেলে মেয়ে।সমুদ্র আর পরী।”
আনন্দ ভাইয়া অফিসের কাজে বিদেশে গিয়েছিলেন দিন দশেকের জন্য। মাঝেমধ্যে যাওয়া পড়ে। রাজ্যের জিনিস পত্র নিয়ে এসেছেন ভালোবাসার মানুষদের জন্য। পরীর জন্য কতো রকম পুতুল, কেউ নাচে,কেউ ড্রাম বাজায়, কেউ চাবি দিলে খলখলিয়ে হেসে উঠে, কেউবা আবার কাঁদে। পুতুল ছাড়াও আরও কতো খেলনা। সমুদ্র আর পরীর জন্য জামাকাপড় আর খেলনার পাহাড়।
ভাবী উঠে দাঁড়ালেন। অদ্বিতীয়ার হাত ধরে বললেন,”তোমরা এগুলো দেখতে থাকো। আমি একটু পরে আসছি।”
“আরে,কোথায় যাও। তোমার উপহার দেখবে না?”
“উপহার পালিয়ে যাচ্ছে না। পরে দেখবো।”
“দশদিন পরে বাড়ি ফিরলাম আর তোমার মুড অফ?”
ফুপুও বললেন,”এ কেমন কথা তিথি? ও শখ করে তোমার জন্য গিফট নিয়ে এসেছে, সেই ইমোশনের কোনো দাম নেই তোমার কাছে?”
ভাবী ইংরেজিতে আনন্দ ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলেন উনি তাঁর দত্তক কন্যার জন্য কোনো গিফট এনেছেন কি না। ভাইয়া বাংলাতেই উত্তর দিলেন,”প্রশ্ন ই উঠে না। তার জন্য কেন আনবো?”
ভাবী ইংরেজিতেই বললেন,”এতো কিছু আনতে পেরেছো,মেয়েটার জন্য একটা ছোট্ট উপহারও আনলে না?তোনার ছেলেমেয়ে দুটোই বা কি শিখছে এ থেকে?”
“আমার ছেলেমেয়ে ভুল কি শিখছে?বাবা তাদের জন্য গিফট এনেছে, তাদের মায়ের জন্য গিফট এনেছে, নিজের বাপ মা ভাই বোন শ্বশুর শাশুড়ি শালী আরও অনেক আত্মীয়ের জন্য ভালোবেসে উপহার এনেছে, বাসার মেইডদের জন্যও দামী সাবান-শ্যাম্পু নিয়ে এসেছে। তাহলে ওরা কুশিক্ষা পেলো কোথায়?”
সমুদ্র বললো,”আমি সব ইংরেজি বুঝতে পারছি। বাবা ইজ রাইট।”
ফুপুও বললেন,”আর বাড়াবাড়ি কোরো না তো তিথি। বসো এখানে। আমরা সবাই গিফট নিয়ে আনন্দ করছি, তুমি শেয়ার করো আমাদের সাথে। তোমার স্বামীর, সন্তানদের শতভাগ হক আছে তোমাকে নিয়ে আনন্দ করার। এই মেয়ে, তুমি এখানে কেন? তুমি এখান থেকে যাও।মাজেদা,সরিয়ে নাও তো একে। সবসময় স্বামী-স্ত্রীর মাঝে হাইফেন হয়ে থাকে। নিত্যদিনের যন্ত্রণা। ”
মাজেদা বু অদ্বিতীয়াকে সরিয়ে নেওয়ার সময় সে করুণ চোখে মা আর নৃত্যরত পুতুলটার দিকে তাকালো।
চকলেট নিয়ে চলছে হুলুস্থুল। আনন্দ ভাইয়া ছোট্ট একটা চকলেটের বক্স ভাবীর হাতে দিয়ে বললেন,” ঐ মেয়েটাকে দিও। ”
ভাবী বললেন,” আমার মেয়ে এই চকলেট খাবে না। ওকে এই দয়া করার দরকার নেই। ”
“খুব ভালো কথা। কিন্তু ফ্রিজ খুলে যেন বক্সগুলো না হাতায়। ”
“অদ্বিতীয়া চোর না।”
আনন্দ ভাইয়া ভাবীকে আজ অদ্বিতীয়ার কাছে যাওয়ার সুযোগই দিলেন না।সারাক্ষণ মা-বাপ-ছেলে-মেয়েসহ আড্ডা মারলেন।
পরদিন ভাবী সুন্দর একটা পুতুল আর জামা কিনে অদ্বিতীয়াকে দিলেন। অদ্বিতীয়া আনন্দে অস্হির।
“আব্বু আনছে আমাল জন্য? ”
“মামনি, তোমাকে না বলেছি, যা কিছু আমরা পাই, তা আল্লাহ পাঠান। কালকে পরী যে পুতুল গুলো পেয়েছে, ওগুলোও আল্লাহর দেওয়া।”
“আল্লা পলি বাবুকে ছয়তা পুতুল দিছে, আমাকে একতা।”
“ছিঃ বাবু,তোমাকে না বলেছি,আল্লাহ যা দিবেন, তাতেই খুব খুশি হবে? আল্লাহ অল্প দিলেও খুব খুশি হবে,বেশি দিলেও খুব খুশি হবে। দেখোতো, কি সুন্দর পুতুল। এই দেখো চোখ খুললো।এই দেখো,চোখ বন্ধ করলো। এই যে সুইচ অন করবো,দেখো কি হয়। রেডি,ওয়ান,টু, থ্রি। ”
সুইচ অন করার সাথে সাথে পুতুল ঘুরে ঘুরে নাচতে লাগলো।সাথে মিউজিক। অদ্বিতীয়া পাগল হয়ে গেছে আনন্দে।
পুতুল পর্ব শেষ হওয়ার পরে ভাবী ফ্রকটা পরিয়ে দিলেন মেয়েকে। এতো সুন্দর ফ্রক। এতো মিষ্টি মেয়ে। ভাবী অদ্বিতীয়ার চুলে দুইটা ঝুঁটি বেঁধে দিলেন। নানারকম ক্লিপ লাগিয়ে দিলেন চুলে। কপালে একটা ছোট্ট টিপ দিয়ে দিলেন। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। আয়নাতে নিজেকে দেখে অদ্বিতীয়া দারুণ খুশি।
“ময়না পাখি,পুতুলটা পছন্দ হয়েছে? ”
“অনেক।”
“জামা?”
“অনেক পসন্দ হতিছে।”
“তুই ঠিক করে কথা বলা যে কবে শিখবি! আল্লাহ তোর জন্য যে এতো সুন্দর জিনিস পাঠালেন,বল্ আলহামদুলিল্লাহ। ”
“আলহামদুলিল্লাহ। ”
“আর শোন্, আল্লাহ যাকে বেশি ভালোবাসেন,তাকে অনেক কম উপহার দেন। উপহার মানে জামা,জুতা,খেলনা-পাতি এগুলো। এসব উপহার কম দিয়ে আল্লাহ তাদের ভালোবাসা, জ্ঞান, বুদ্ধি বেশি দেন। মনে থাকবে?”
“জ্বী।”
অদ্বিতীয়ার মুখে এই “জ্বি ” শব্দটা যে কি মধুর !
আনন্দ ভাই ভাবী আর অদ্বিতীয়াকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,”আমার দেওয়া চকলেট বক্স ঐ মেয়েকে ডাঁট দেখিয়ে দিলে না, এখনতো আমার টাকা দিয়ে কেনা জামা-পুতুল নিয়ে মাস্তি করছে,তোমার ভাব দেখানোর কি দরকার ছিলো? ”
” আমার ছোটবেলার যে চেইন ছিলো না,ওটা বিক্রি করে সেই টাকায় কিনেছি। ”
“খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছো না?”
“না।”
পরীর দ্বিতীয় জন্মদিন হলো বিশাল জাঁকজমকের সাথে। বিয়ের অনুষ্ঠানে যেমন হয়। প্রথম জন্মদিনও ধূমধামের সাথে হয়েছিল। তবে এবারের মতো নয়। সমুদ্রের প্রতিটা জন্মদিন খুব ভালো করে উদযাপন করা হয়েছে, কিন্তু এতোটা নয়।সমুদ্র তাই বিমর্ষ।
আনন্দ ভাইয়া সমুদ্রকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,” দেখো,তোমার পরের জন্মদিনটা আমি কিভাবে পালন করি! ”
অদ্বিতীয়া ক্ষীণ কন্ঠে মা’কে বললো,”আম্মু,জন্মদিন কি?”
ভাবী কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“আম্মু, আমার জন্মদিন হবে না? ”
” না মা। সবার জন্মদিন হয় না।তোমারও হবে না।”
এভাবেই চলতে লাগলো আমার ফুপা ফুপুর সংসার।
আনিলা আপুর বেবি হচ্ছে না। ডাক্তার দেখিয়েছেন। শারীরিক সমস্যা আপার। ডাক্তার দেখানো চলছে। আনিলা আপার শ্বশুর শাশুড়ি বাচ্চার জন্য পাগল হয়ে গেছেন। দুলাভাইও। সবচেয়ে ঝামেলা করছেন দুলাভাইয়ের তিন বোন। ঐ বাড়িতে সাংঘাতিক প্রতাপ তিন বোনের।
আনন্দ ভাইয়া বিরক্ত গলায় বললেন,”বিয়ের সবে ছয় বছর হলো,এখনই এতো হা-হুতাশ করলে চলবে কেন? আনিলাকে কেউ যদি একটা অড কথাও বলে, তাকে আমি দেখে নিবো।”
কিন্তু অড কথা প্রায় হচ্ছে। ইনফার্টিলিটি স্পেশালিষ্টরাও চেষ্টা চালাচ্ছেন দেশে-বিদেশে, আশার বাণী শোনাতে পারছেন না।
একদিন দুলাভাইদের বাড়িতে মিটিং বসলো দুই পক্ষের। আপার শাশুড়ি বললেন,” মেয়ে তো আপনাদের বাঁজা। আমার দশটা না,পাঁচটা না,একটা মাত্র ছেলে, কতো শখ একটা নাতি দেখার। সেই শখ বুঝি আর পূরণ হলো না। নাতি না দেখেই মরতে হবে।”
তিথি ভাবী বললেন,”খালাম্মা,আল্লাহ বহু বছর আপনাদের বাঁচিয়ে রাখুন। আনিলা আপার চিকিৎসা হচ্ছে। আল্লাহ চাইলে বেবি হবে। মাত্র তো ছয়টা বছর গেলো।কতোজনের তো বিয়ের তোরো-চৌদ্দ বছর পরেও সন্তান হয়।””
“তোমার ননদের মা বিয়ের চল্লিশ বছর পরেও বাচ্চা হবে না। ডাক্তার বলে দিয়েছে। একটা দুইটা না,হাজার রকমের সমস্যা তার। এখন তো রোজ একটা করে নতুন সমস্যা বের হচ্ছে। ”
ফুপু বললেন,”এমন করে কথাটা বললেন আপা,আমরা যেন মেয়ের সমস্যা সব জানতাম, সেগুলো গোপন করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।”
তিথি ভাবী বললেন,”সমস্যা কথাটাই একটা সমস্যা। একজন পুরুষ বা মহিলার বাচ্চা নাই হতে পারে। সেটাকে সমস্যা বলতে হবে কেন? হ্যাঁ, বাচ্চা সব দম্পতিই চায়, অনেক আকাঙ্ক্ষার, কিন্তু যদি না হয়,তাতেওতো এতো ভেঙে পড়ার কিছু নেই। স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনের একমাত্র সূত্র কি সন্তান?তাদের দুজনের প্রতি দুজনের ভালোবাসা নেই? সেই ভালোবাসা দিয়েই তো এক জনম পার করা যায়। আজ আমার নন্দাইয়ের কারণে যদি বাচ্চা না হতো, তাহলে কি এমন আয়োজন করে মিটিং হতো?”
“শোনো বাছা, আমি নাতি দেখতে চাই। এটা আমার শেষ কথা।”
“খালাম্মা, আপনার নাতি নাত্নির অভাব? তিন আপার ঘরে মাশাআল্লাহ সাত নাতি-নাতনি। কি ফুটফুটে বাবুগুলো।”
“আমার মেয়েরা তো বাঁজা না। আমার সাত নাতি-নাত্নি আছে,আমাকে সেটা মনে করিয়ে দেওয়া লাগবে না। ঐ সাতজন আমার সাত রাজার ধন। তারা আমার দৌহিত্র। এখন আমার পৌত্র বা পৌত্রির দরকার, বুঝেছো?মানে বুঝো এগুলোর? ”
“খালাম্মা,প্রথম থেকেই আপনি অফেন্সিভ কথাবার্তা বলছেন। এই মিটিং এর শেষে কি সিদ্ধান্ত হবে,সেটাও সম্ভবত ঠিক করে রেখেছেন। যা বলতে চান,স্পষ্ট বলুন।”
“স্পষ্ট ই তো বললাম। আমি আমার ছেলের বাচ্চা কাচ্চা দেখতে চাই।”
“দেখবেন। আল্লাহ যখন দেখাবেন,তখনই দেখবেন।”
“আল্লাহ দেখাবেন না। তোমার ননদ বাঁজা, তার বাচ্চা হবে না।”
” তারমানে আল্লাহ চাচ্ছেন না। ”
“আমি চাচ্ছি।”
“আপনি তিনবার আমাদের সামনে আমার ননদকে বাঁজা বলেছেন। আপনি নিজেই নিজের নিকৃষ্ট মানসিকতা ও আচার আচরণের পরিচয় দিয়েছেন। এখন আপনার ফাইনাল কথা বলেন।”
“এই বৌ আমি রাখবো না। আমার ছেলে ওকে ডিভোর্স দিবে। ”
মহিলা কি চাচ্ছিলেন অনেকদিন ধরে, তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। কিন্তু সামনাসামনি এতো খোলামেলা কথা শুনে সবার বুকেই জোর ধাক্কা লাগলো।
আনন্দ ভাই দুলাভাইকে বললেন,”এতোক্ষণ তোমার আম্মার বক্তব্য শুনছিলাম। তোমার বক্তব্য কি?”
“মায়ের কথাই আমার কথা।”
“এই ছয় বছরে আমার বোনের জন্য তোমার কোনো ফিলিংস তৈরি হয়নি?”
” এসব কথা পারসোনাল। আমিও বাচ্চা চাই। আপনার বোনের সেই ক্ষমতা নেই। কাজেই আমি আবার বিয়ে করতে চাই। ”
” বাচ্চা অ্যাডপ্ট করতে পারো। নিজের বাচ্চা আর দত্তক বাচ্চার মধ্যে পার্থক্য কি?”
“নিজের বাচ্চার জায়গায় দত্তক? দত্তক আপন হয় কখনো?আপনার মুখে এই কথা?আপনি তো আপনার দত্তক মেয়েকে সহ্য ই করতে পারেন না। আর ঠিকই তো, কোথাকার কোন বাচ্চা,তাকে নিজের বাচ্চা বলে ভাবা যায়?”
ফুপা বললেন,”আসলে দোষ আমাদের। কেন এতো কথা বলার সুযোগ দিলাম আপনাদের। আমার মেয়ের যোগ্য তো এই পরিবার না। সে নিজেই ডিভোর্স দিবে। সে ব্রিলিয়ান্ট, সে সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট, সে এই এঁদো পুকুরে পড়ে থাকবে কেন? এমন মানসিকতার লোকদের কাছে এতোদিন মেয়েকে রেখেছি, ভাবতে নিজের উপরই ঘেন্না হচ্ছে। ”
কিন্তু আনিলা আপা ডিভোর্সে রাজি নন। তিনি সমানে কাঁদছেন। দুলাভাইকে ছাড়া তাঁর বেঁচে থাকা অর্থহীন। স্বামীকে তিনি খুব ভালোবাসেন। ফুপুও চোখের পানি মুছছেন।
আনন্দ ভাইয়া বললেন,” আনিলা, এরা তোকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত ফাইনাল করেই আমাদের ডেকেছে। এদের মেন্টালিটি খারাপ, তোর বিয়ের পর হতেই বুঝতে পেরেছিলাম, এতোটা খারাপ তা বুঝিনি। এদের সাথে এক মুহূর্ত ও তোকে থাকতে দিবো না। তোর নিজেরই তো এদের ছেড়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো অনেক আগেই। ”
বাচ্চা না হওয়ার অপরাধে আনিলা আপাকে ডিভোর্স দেয়া হলো।
চলবে।