লাল নীল ঝাড়বাতি পর্ব-০৩

0
737

#লাল_নীল_ঝাড়বাতি(পর্ব:৩)
#নাফিসা_আনজুম

আপু আর ফাহিম ভাই সামনে এগোতেই উনি আমায় কোলে নিলেন।
এই আপনি কি করছেন

এতো কথা বলো কেনো, চুপচাপ থাকো না হলে আরো লজ্জায় পরতে হবে।

ওনার কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম, নয়তো যদি সত্যি কিছু করে বসে‌। বুঝলাম না এই গোমরামুখোটাকে এতো রোমান্টিক মনে হচ্ছে কেনো। আপু পেছনে আমার দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিয়ে আগে আগে চলে গেলো। সদর দরজায় আসতে না আসতে কয়েকজন ছেলে মেয়ে এসে হাজির হলো, ওদের দাবি টাকা ছাড়া ঘরে ঢুকতে দিবে না।আপু আর ফাহিম ভাই ও সাথে আছে। উনিও আমাকে কোল থেকে নামাচ্ছে না। কি একটা অবস্থা। ছেলে মেয়ে গুলা ওনার মামাতো ফুফাতো ভাই বোন। আমি আগেও দেখেছিলাম এদের।

উনি আমাকে বললো এক হাত দিয়ে যেনো ওনার প্যান্ট এর পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করি। আমি হা করে ওনার মুখের দিকে তাকালাম। উনি চোখ রাঙিয়ে ফিসফিস করে বললো তাড়াতাড়ি দাও নয়তো ফেলে দেবো‌। আমি আসতে আসতে ওনার পকেট খোঁজার চেষ্টা করছি‍, আসলে শেরওয়ানি পরা তাই পকেট খুঁজে পাচ্ছি না বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করে মানিব্যাগ বের করলাম তবুও লোকটা আমাকে নামিয়ে দিলো না।
তারপর ওদেরকে টাকা দিয়ে আমাকে ভেতরে নিয়ে গেলো। সোজা দোতলায় উঠে গেলো, এর মধ্যে একবারো নামায় নি আমাকে। তিনতলা এখনো কমপ্লিট হয় নি তাই নিচতলা আর দোতলায় সবাই থাকে। এক সাইডে আপু আর ফাহিম ভাইয়া বিপরিত পার্শে উনি থাকতো আজ থেকে আমিও। উনি ওনার রুমে এসে নামিয়ে দিলো। এ মা লাইট জ্বালায় না কেনো। এত্তো অন্ধকার রুম।

এই যে শুনছেন,,

বলেছো কিছু,

আমাকে নামিয়ে দিয়ে কোথায় গেলেন,আমি তো আপনার রুমে কোথায় কি আছে কিচ্ছু জানি না। একটু লাইট টা জ্বালাবেন।

অপেক্ষা করতে হবে,

মানে,

চুপচাপ থাকো একটু,

বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর বিরক্ত লাগতেছে, অনেকটা বিরক্ত হয়েই বললাম,,
আরে ভাই পাইছেন টা কি আপনি, কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি আমি কি করবেন করেন বারোটা পার হইছে ঘুমাবো আমি। বসতেও দিচ্ছেন না পা লাগে না বুঝি।
এই সময় লাইট জ্বলে উঠলো, আমি দুই হাত দিয়ে চোখ ধরলাম, অনেক্ষণ অন্ধকারে থাকার পর আলো আসছে তাই চোখে লাগছে,,

চোখ মেলে দেখি হালকা লাল নীল আলো জ্বলছে, ঘরের সমস্ত জিনিস চকচক করছে মনে হচ্ছে সব নতুন।সম্ভবত এগুলোই লাগাচ্ছিলেন উনি।আর বিছানাটা পুরোটাই ফুল দিয়ে সাজানো, আপু আর ফাহিম ভাইয়া যাওয়ার আগে সাজিয়ে দিয়ে গেছে।আমার সামনে লম্বা চওড়া উনি পকেটে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ফ্যানের বাতাসে ওনার চুলগুলো হালকা উরছে, আবারো মন চাচ্ছে ওনার মাথায় একবার হাত দেই। আর মনকে বাধা দিলাম না ডান হাতটা ওনার মাথায় দিয়ে চুলগুলো বুলিয়ে দিলাম। উনি চোখটা বন্ধ করে ফেললেন। আমি ভয়ে ভয়ে হাত সরিয়ে নিলাম। উনি চোখ মেলে তাকালেন।

আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি,

উনি খুব নম্র ভাবে ডাকলেন আমায়,,

ঝুমুর,,

আমি মাথা তুলে তাকালাম ওনার মুখের দিকে,,

ঝুমুর, আমি তোমাকে কয়েকটা কথা বলি মন দিয়ে শুনবা।

আমি মাথা নাড়ালাম। মানে শুনবো।

তুমি আমাকে চেনো আমি কেমন। আর আমি আজকেই তোমাকে কেনো বিয়ে করলাম এটা জানতে পারবা একসময়। আমি জানি তুমিও আমাকে পছন্দ করো, এটা না বুঝলে বিয়ে করতাম না আমি তোমায়। তুমি এতো দিন বাবার বাড়ির মেয়ে ছিলে তাই তোমার চঞ্চলতা শোভা পেয়েছে কিন্তু এখন একদম ,ওরকম করা যাবে না। তোমাকে গম্ভীর হতে হবে। বউদের যেমন মানায়।

ওনার এই কথাটা আমার ঠিক পছন্দ হলো না,সবাইকেই কেনো গম্ভীর হতে হবে‌। আমার তো নিজের ইচ্ছে বলে কিছু একটা আছে, আমি একখানে চুপচাপ বসে থাকতে পারি না, সিরিয়াস মোমেন্ট এ হাঁসি আটকাতে পারি না। এসব না করলে আমার কেমন যেন দম বন্ধ লাগে। বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে ওনার কথাগুলা শুনলাম।

উনি বললো, এখন ফ্রেশ হয়ে আসো।

আমি অনেকক্ষন সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এসে দেখি উনিও চেন্জ করে নিয়েছে। হয়তো অন্য বাথরুমে গেছিলো। তারপর একসাথে দুই রাকাত নামাজ পরে নিলাম।
এরপর উনি একটা নেকলেস বের করে আমার সামনে ধরলো,
তারপর কিছু না বলে আমার গলায় পরিয়ে দিলো, ওনার স্পর্শে অজানা ভালোলাগা কাজ করছিলো। একদম কোনো ভয় লাগতেছিলো না। মনে হচ্ছিল এ স্পর্শে কোনো পাপ নেই, নেই কারো কথার ভয়।একদম হালাল সম্পর্ক। আর হালাল জিনিস সবারে ভালো লাগে। ওনাকে জড়িয়ে ধরার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল কিন্তু সাহস হলো না, যদি ভাবে যে কেমন মেয়ে একটু ধৈর্য ধরতে পারে না। তাই জড়িয়ে ধরলাম না। উনি এক হাত দিয়ে চুলগুলো ছেড়ে দিলো তারপর আমাকে ওনার দিকে ঘুরিয়ে নিলো, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,,

তুমি ছোট নেই ঝুমুর। সবকিছু বুঝতে পারো তুমি।আমি জানি আমি চাইলে তুমি বাধা দিতে পারবে না কিন্তু আমি চাচ্ছি না এইভাবে হটাৎ করে তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করতে। আমাদের একসাথে পথচলা আজ থেকে শুরু, আমরা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একসাথে থাকবো। তাই তাড়াহুড়ো করে কষ্ট দিবো না তোমায়। সময় নাও তুমি,তোমার যখন মনে হবে স্বামি হিসেবে পারফেক্ট আমি, সেদিনই কাছে আসবে। আমি আমার সবটা দিয়ে ভালোবাসবো তোমায়।
কোনো ছেলেমানুষ বিয়ে করে বউকে ছাড়া থাকতে পারে না, আমিও পারবো না কষ্ট হবে তাই সময় একটু কম করে নিও। বলে মুচকি হেঁসে বিছানার একপাশে শুয়ে পরলো।

ইশশশ,, এতো নির্লজ্জ এই লোকটা। কিভাবে গড়গড় করে সবকিছু বলে দিলো। ছিঃ লজ্জায় আমার মাথা কাঁটা যায়।
ধুর কি সব ভাবি আমি, আমি ওনার বউ আমাকে বলবে না কাকে বলবে। আর এতো সুন্দর একটা মানুষের বউ হওয়া ভাগের ব্যপার। তারপর আমিও চুপিচুপি ওনার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত কেটে গেলো, এমনিতেই আমি সবসময় নড়াচড়া করি বেশি, তার ওপর আজকে বিছানায় একটা ছেলে মানুষ। ঘুম আর হলো না আজকে, ফজরের আজান কানে আসতেই উঠে পরলাম, অজু করে বের হতেই দেখি উনিও উঠে পরেছে। নামাজ পরে নিচে গেলাম,এর আগেও যেহেতু এই বাড়িতে এসেছি তাই সবকিছুই চেনা আছে। নিচে গিয়ে আসতে আসতে সদর দরজা খুলে বাহিরে বের হলাম। বাড়িটার সামনটা পুরোটাই ফাঁকা, ছোট ছোট আম গাছ,লিচু গাছ, পেয়ারা গাছ আরো বিভিন্ন রকমের ফলের গাছ ফুলের গাছ। তবে সব সাড়িবদ্ধ আর ফাঁকা ফাঁকা করে গাড়া এজন্যই আরো বেশি ভালো লাগে। আমি আগে এই বাড়িতে আসলেও এতো সকালে উঠে বাহিরে আসি নি। গাছগুলোতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর সকালের শুভ্র বাতাস গায়ে লাগতেই যেনো মনটাও ফুরফুরে হয়ে গেলো।

ঝুম এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ওপর থেকে একজোড়া চোখ ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছে,,
মেয়েটা কি একটু চুপচাপ থাকতে পারে না। কালকে এতো করে বোঝালাম নতুন বউ বউয়ের মতো থাকতে। তা না সকালে উঠেই ধেই ধেই করে বাহিরে গেছে। আর কয়দিন, যতো খুশি নেচে বেড়াও এর পর থেকে তোমাকে বন্দি করে রাখবো।চাইলেও যখন তখন ইচ্ছেমতো ঘুরতে পারবা না মিসেস আয়ান চৌধুরী। যার জন্য তোমাকে বিয়ে করছি সেটা তো পুরন করতেই হবে। কারন আয়ান চৌধুরীর প্রয়োজন ছিলো তোমাকে। বড্ড বেশি প্রোয়োজন ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতে দেখে ঝুমকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আয়ান দ্রুত নিচে নেমে আসে।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে