লাভ_ম্যারেজ পর্বঃ ০২
– আবির খান
– এই কে রে?? এত্তো বড় ছাহছ আমার দোলনায় বহছ। এই দেহিতো কেঠা??
নিরব তাড়াতাড়ি উঠতে নিলেই মেয়েটি নিরবের সামনে চলে আসে। নিরব চলে যাচ্ছিলো মাথা নিচু করে।
মেয়েঃ ওই ওই কুতাই যাইতাছোছ?? খাড়া, খাড়া কইতাছি খাড়া।
নিরব ভয়ে দাঁড়িয়ে যায়। নিরব মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েঃ আপনার ছাহছতো কম না। আপনি কেমতে আমার মানে প্রিয়ন্তির দোলনায় বহেন হ্যাঁ?? কেঠাই আপনি?? আর এহানেই বা ক্যা??
নিরবঃ আমি এ বাসার নতুন ভাড়াটিয়া। আজকেই উঠেছি।
প্রিয়ন্তিঃ ওওও….তাই বইলা প্রথমদিনেই আমার দোলনা দখল?? মজা করে।
নিরবঃ আসলে ভুল হয়ে গিয়েছে মাফ করবেন।
প্রিয়ন্তিঃ কোনো মাফ নাই। কান ধরেন। মজা করে।
এবার নিরব আর নিচে তাকিয়ে থাকতে পারে না। আস্তে করে মাথা তুলে প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়।
নিরব দেখে, দুধের মতো ফরসা একটা মুখ। তাতে আছে কাজলটানা বড় বড় পাপড়িসহ দুটো দুষ্ট চোখ, নাকটা চেহারার সাথে একদম পারফেক্ট। আর ঠোঁটের ঠিক উপরে মাঝ বরাবর একটা আর ঠিক ডান পাশে একটা ছোট্ট তিল আছে। আহ দেখলেই মনে কেমন এক সাড়া দেয়। আর ঠোঁটটা, মনে হয় নদীর ঢেউের মতো। চুলের কথা আর কি বলবো। মাথা থেকে বেনি হতে হতে একদম কোমর পাড় করেছে। বেশ ঘন কালো কেশ তার। নিরব ওর জীবনে প্রিয়ন্তির থেকে বহু সুন্দরী মেয়ে দেখেছে। কিন্তু প্রিয়ন্তির মধ্যে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে নিরবের। নিরবের মনে ঠিক এরকমই একটা মেয়েরই ছবি ছিল। নিরবের মনের সেই ছবি আজ বাস্তব রূপে তার সামনে। নিরব মুগ্ধ হয়ে তার নয়নজোড়া দিয়ে প্রিয়ন্তিকে দেখছে। নিজের কল্পনার মেয়েটি আজ তার সামনে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ওকে না দেখলেই ভালো হতো। কারণ ও হয়তো এ বাসার মালিকের মেয়ে। ওদের মাঝে বিশাল বড় এক দূরত্ব। হয়তো প্রিয়ন্তিও ওকে কখনো চাবে না। হবে না ওর কল্পনা থেকে বাস্তবের ভালোলাগা। সবই মনের গহীনে থাকবে। নিরবের মনটা খারাপ হয়ে যায় আর সে আবার নিচের তাকায়।
প্রিয়ন্তিঃ ওই মিয়া কি কইলাম ছুনেন নাই। কান ধরেন। আর মাইয়াগো মতো এতো লজ্জা পান ক্যা?? খালি নিচেই তাকায় থাকেন। এত্তো সুন্দরী একটা মায়া আপনার ছামনে খারায়া আচে আর আপনে দেহি নিচে মে তাকায় আচেন। বহুত ছারমিলা কিসাম কা তো আপনে। মজা করে।
নিরব আর কোনো রাস্তা না পেয়ে সত্যি সত্যিই কান ধরে।
প্রিয়ন্তিঃ আরে আরে রাখেন। আপনেতো ছত্যিই বহুত বোকা কিসামের। কানে ধরতে কইলাম আর ধইরা ফালাইলেন।
নিরবঃ…..
প্রিয়ন্তিঃ কি হইলো জবান লক কেন??
নিরবঃ আসলে আমার যেতে হবে আমি যাই??
প্রিয়ন্তি আরাম করে দোলনায় বসলো। আর বলছে,
প্রিয়ন্তিঃ দেখতে তো মাছাল্লাহ বহুত বালা। তা এত্তো লজ্জা পান ক্যা?? কি ছমছ্যা আচে নাকি কোনো?? হাহা।
নিরব আবার অবাক হয়ে প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়। প্রিয়ন্তি হাসছে। সে কি তার হাসি। যেনো মুক্তা ঝরছে সে হাসি থেকে।
নিরবঃ না না। কোনো সমস্যা নেই। আসলে আমি মেয়েদের দিকে তাকাই না।
প্রিয়ন্তিঃ তাইলে কি খালি পোলাগোই দেহেন?? কথাতো ওই একি হইলো। হাহাহা।
নিরবঃ না মানে…
প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা আচ্ছা হইছে। ছুনেন, এই দোলনাটা আমার। এটায় আর বইবেন না। বুজ্জেন?
নিরবঃ না না আর কখনো বসবো না।
প্রিয়ন্তিঃ হুম মনে থাকে যেন। আর ছুনেন, এত্তো লজ্জা পান ক্যা?? লজ্জা মায়ারা পাইবো। আপনে কি মায়া নাকি?? মজা করে।
নিরবঃ জ্বি আচ্ছা।
প্রিয়ন্তিঃ কি আপনে মায়া?? মজা করে।
নিরবঃ না না। বললাম আর লজ্জা পাবো না।
প্রিয়ন্তিঃ ওও। ঠিক আছে যান এহন।
নিরব এক প্রকার দৌড়ে চলে আসলো। পিছনে হাসির আওয়াজ পাচ্ছে নিরব। প্রিয়ন্তি, হেব্বি ডেঞ্জারাস মেয়ে।
রাতে ১০ টা,
খেতে খেতে,
নিরবঃ মা এখানে একটা টিউশনি নিতে হবে বুঝলা। কিন্তু কোথায় বা কিভাবে যে পাবো?? আল্লাহ জানে।
মাঃ চিন্তা করিস না হয়ে যাবে।
নিরবঃ হলেই ভালো। কারণ হাত খরচই থাকবে না নাহলে।
মাঃ আল্লাহ ভরসা হয়ে যাবে।
নিরবঃ হুম। মা রান্নাটা কিন্তু আজকে অনেক ভালো হয়েছে। খুশি মনে।
মাঃ পাগল ছেলে, কি আর রান্না করলাম। ডাল, আলু ভর্তা আর ডিম ভাজা। এতে আর মজা কি??
নিরবঃ মা জানো, তোমার হাতে এই তিনটা খাবার পৃথিবীর সবচেয়ে তৃপ্তিকর খাবার আমার কাছে।
মাঃ তোর বাবাও তাই বলতো আমাকে। একদম বাবার মতো হয়েছিস। কাঁদো কণ্ঠে।
নিরবঃ দেখো দেখি, একটু প্রশংসা করলাম আর সে কাঁদছে। আর করবোই না তোমার তারিফ।
মাঃ কি তারিফ!! তুইতো একদিনেই ঢাকাই ভাষা শিখে যাচ্ছিস।
নিরবঃ হাহা আর বলো না মা। এদের কথা শুনলে আমার অনেক হাসি পায়। শুনেন কে বলে ছুনেন হাহা।
মাঃ হা হা। আসলেই। আমিও ছুনছি।
নিরবঃ মা তুমিও। হাহা।
এভাবে মায়ের সাথে আনন্দ মজা করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিরব বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। বার বার প্রিয়ন্তি মেয়েটার কথা মনে পরছে।
আসলে প্রিয়ন্তির রূপ দেখে নিরবের মনে সাড়া দেয় নি। সাড়া দেওয়ার কারণ হলো, প্রতিটা ছেলের মনেই তার মনের মতো একটা মেয়ের ছবি থাকে। আসলে সে কিভাবে চায়। ঠিক সেই ছবির মানুষটা যখন সত্যিকারে চোখের সামনে এসে পরে তখন আবেগ টাকে কিংবা ভালো লাগাকে আটকানো যায় না।
নিরব এসব ভেবে ওর মনটা অস্থির অস্থির করছে। তাই নিরব ভাবলো একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসা যাক। এতো রাতে নিশ্চিত কেউ ছাদে থাকবেনা। তাই যা ভাবা সেই কাজ। নিরব দরজাটা লাগিয়ে ছাদে চলে যায়।
আজ আকাশটা একদম পরিষ্কার। তাই চাঁদের পাশে মিটমিট জ্বলন্ত তারা গুলো একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর সাথে আসা দক্ষিণা বাতাস। নিরব যেন হারিয়ে যাচ্ছে৷ খুব মন চাচ্ছে একটা গান গেতে। তাই নিরব আশেপাশে একটু দেখে ছাদে দোলনাটার পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে “বাবা” গানটা ধরে।
গান গেতে গেতে একসময় নিরবের মন অনেকটা বিষন্ন হয়ে পরে। চোখগুলো অশ্রুতে ভরে আসে গলা আটকে আসে। তাই নিরব থেমে যায়। কিন্তু হঠাৎই ওর পিছন থেকে কেউ বলে ওঠে,
– আরে থামলেন ক্যান?? ভালোই তো লাগছিল।
নিরব ভুত দেখার মতো ভয় পেয়ে যায়। আর চোখটা মুছে সাথে সাথে পিছনে ফিরে তাকায়। নিরব দেখে এ আর কেউ নয় প্রিয়ন্তি। তার বিশাল বড় কেশগুলো সামনে এনে ছেড়ে দিয়েছে। জ্যোৎস্নার সব আলোটুকু যেন প্রিয়ন্তির ফরসা মুখে এসে পরেছে। চারদিকটা কেমন আধার হয়ে গিয়েছে আর তার মাঝে এই পরীটা আলো ছড়াচ্ছে। নিরব যতটুকু ভয় পেয়েছে তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছে প্রিয়ন্তিকে দেখে। নিরবের চোখজোড়া অপলক দৃষ্টিতে প্রিয়ন্তিকে দেখছে।
প্রিয়ন্তিঃ থামলেন ক্যান?? গানটা গান আবার।
নিরবের ঘোর ভেঙে যায় প্রিয়ন্তির কথায়।
নিরবঃ আপনি এই রাতে এখানে?? আমি বরং চলে যাই তাড়াতাড়ি।
নিরব চলে যেতে নিলেই,
প্রিয়ন্তিঃ আরে খাড়ান, মানে দাড়ান। যেতে হবে না। ভয় নাই কেউ আসবে না।
নিরবঃ না না। আমার…একমিনিট আপনি আমাদের ভাষায় কথা বলছেন?? মানে আমরা যে ভাবে বলি শুদ্ধ ভাষায়। কিভাবে?? অবাক হয়ে।
প্রিয়ন্তিঃ কই কহন কইছি?? আমিতো ঢাকায়া বাছায়ই কইলাম। মজা করে।
নিরবঃ না না আমি শুনেছি। আপনি বলেছেন।
প্রিয়ন্তিঃ জ্বি বলছি। আমি দুটো ভাষায়ই পারি। শুদ্ধ আর ঢাকায়া।
নিরবঃ দেখেছেন বললাম না। আমি আপনাদের ভাষা বুঝি তবে মাঝে মাঝে কষ্ট হয়।
প্রিয়ন্তিঃ আসলেনই তো আজকে। এরমধ্যেই??
নিরবঃ না মানে সামনে হবে।
প্রিয়ন্তিঃ হইলে হবে। একটূ কষ্ট তো করতেই হইবো আমগো ভাছা বুঝবার লইগা।
নিরবঃ একটা ছোট্ট রিকুয়েষ্ট করতে পারি??প্লিজ??
প্রিয়ন্তিঃ বাহ প্রথম দিনেই রিকুয়েষ্ট!! কইরা লান। ছুনি।
নিরবঃ আপনি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবেন?? তাহলে অনেক ভালো লাগে আপনাকে।
প্রিয়ন্তিঃ বাবাহ, আমারে আবার আপনার ভালোও লাগে দেখি।
নিরবঃ না মানে আপনার কথা।
প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা আচ্ছা যান বলবো। তবে শুদু আপনার সাথে। আমিও বেশি একটা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারি না। আব্বা আম্মার আড়ালে শিখি।
নিরবঃ তাহলে একটা কাজ করলে কেমন হয়??
প্রিয়ন্তিঃ কি??
নিরবঃ আপনি আমাকে আপনার ভাষা শিখাবেন আমি আপনাকে আপনার ভাষা শিখাবো।
প্রিয়ন্তিঃ ও এই কাহানি। উমমম, কথাডা মন্দ কন নাই। করন যাইবো।
নিরবঃ উহুম এভাবে বলো, কথাটা মন্দ হয় নি। করা যাবে।
প্রিয়ন্তিঃ কথাটা মন্দ..
নিরবঃ হয় নি…
প্রিয়ন্তিঃ হয় নি..
নিরবঃ করা যাবে।
প্রিয়ন্তিঃ করন যাইবো।
নিরবঃ আহহা বলো, করা যাবে।
প্রিয়ন্তিঃ করা যাবে।
নিরবঃ হ্যাঁ ঠিক আছে।
প্রিয়ন্তিঃ বাহ আপনে ত ভালাই পড়ান।
নিরবঃ হ্যাঁ আমি ছাত্রদের পড়াই। এখানে একটা ছাত্রও পড়াতে হবে। কিভাবে যে পাবো।
প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা বুজলাম।
নিরবঃ আহা, বুজলাম না বুঝলাম হবে।
প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা।
নিরবঃ আপনি অনেক মিশুক। আমার মতো অপরিচিত ছেলের সাথে বেশ ভালোই মিশে গেলেন।
প্রিয়ন্তিঃ আমার মাও ভি আমরে তাই কয়। তয় আমার যারে ভালো লাগে আমি তার ছাতে মিছি।
নিরবঃ ও..আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে আপনি এখন চলে যান। অন্যথায় সমস্যা হবে।
প্রিয়ন্তিঃ কিহ!! কিছের থায়??
নিরবঃ অন্যথায় মানে নাহলে। কিঞ্চিৎ হেসে।
প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা যাইতাছি। আপনিও ভি যান।
নিরবঃ আপনি যান আমি একটু পরই যাবো৷
প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা তাইলে তাকেন। আমি যাইগা।
নিরবঃ আহা…তাকেন না..আচ্ছা বাদ দেন। শুভ রাত্রি।
প্রিয়ন্তিঃ এরা আবার কেডা??
নিরবঃ হা হা এরা কেউ না।
প্রিয়ন্তিঃ ও। আচ্ছা।
প্রিয়ন্তি যেতে নিলে নিরব ডাক দেয়।
নিরবঃ প্রিয়ন্তি…
প্রিয়ন্তি ফিরে তাকায়।
প্রিয়ন্তিঃ কিছু বলবেন??
নিরবঃ আপনাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে খোলা চুলে।
প্রিয়ন্তি মনে হয় লজ্জা পেলো। একটা মন মুগ্ধকর হাসি দিলো। আর বললো,
প্রিয়ন্তিঃ আপনারে ছুন্দর লাগতাছে।
নিরবঃ হাসি দিয়ে। গুড নাইট।
প্রিয়ন্তিঃ ওকে। গুড নাইট।
প্রিয়ন্তি একটু জোরেই চলে যাচ্ছে। লজ্জা পেয়েছে মনে হয়। কিন্তু হঠাৎই কি হলো প্রিয়ন্তির পায়ে প্রিয়ন্তি পরে যেতে নেয়। আর নিরব তাড়াতাড়ি দৌড়ে….
চলবে…?
কোনো ভুল হলে জানাবেন।
সবার বেশি বেশি সাড়া চাই। আর মন্তব্য করে জানাবেন কেমন লেগেছে।