লাভ ম্যারেজ পর্বঃ ০৫

0
1846

লাভ ম্যারেজ পর্বঃ ০৫
– আবির খান

পর্বঃ ০৫

এভাবে নিরব আর প্রিয়ন্তির মাঝে ভালোবাসাটা দিন দিন অনেক বাড়তে থাকে। প্রিয়ন্তি এখন ভার্সিটিতে উঠেছে। আর নিরবেরও পরীক্ষা শেষ। শুধু রেজাল্টের অপেক্ষায়৷ সব কিছু খুব ভালোই যাচ্ছিলো কিন্তু একদিন হঠাৎ করে নিরবের মা অনেক অসুস্থ হয়ে পরে। নিরব তাড়াতাড়ি ওর মাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়। সারাদিন মায়ের সাথেই থাকে নিরব। প্রিয়ন্তির সাথে কথা হয়না এখন তেমন একটা। প্রিয়ন্তি সারাদিন বাসায় মন মরা হয়ে বসে থাকে। নিরবের ফোনটাও বন্ধ। প্রিয়ন্তি ছাদে দোলনায় বসে শুধু কান্না করছে। বাবা আর ভাইয়া চলে এসেছে প্রিয়ন্তির। এখন বাইরে বের হওয়া খুব কঠিন। কান্না করতে করতে প্রিয়ন্তি কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। প্রিয়ন্তি বিষন্ন মন নিয়ে ছাদে দোলনাতে বসে আছে। হঠাৎই কারো হাতের স্পর্শ পায় ওর কাধে। প্রিয়ন্তি চোখটা তাড়াতাড়ি মুছে তাকিয়ে দেখে প্রিয়ন্তির মা।

মাঃ কিরে এখানে একা বসে কাঁদছিস কেনো যাবি না??

প্রিয়ন্তিঃ কই যাবো?? অবাক হয়ে।

মাঃ তোর প্রেমিকের কাছে। মজা করে।

প্রিয়ন্তিঃ কি বলছো মা?? কিচ্ছুই তো বুঝছি না।

মাঃ আরে বোকা মেয়ে বলছি চল তোর নিরবের মাকে দেখে আসি।

প্রিয়ন্তির চোখে মুখে আনন্দ স্পষ্ট। অনেক খুশি হয়েছে প্রিয়ন্তি।

প্রিয়ন্তিঃ সত্যি মা?? আমরা যাচ্ছি?? অনেক খুশি হয়ে।

মাঃ হ্যাঁ মা। চল তাড়াতাড়ি।

প্রিয়ন্তিঃ আমি ২ মিনিটে আসছি।

হাসপাতালে,

নিরব ওর মায়ের পাশে বসে আছে আর ওর মায়ের সাথে কথা বলছে। এরমধ্যেই,

মাঃ কি আসতে পারি??

নিরবঃ আরে আন্টি আপনি?? আসুন আসুন।

নিরবের চোখ প্রিয়ন্তিকে খুজছে। প্রিয়ন্তির মা নিরবের কাছে এসে বলল,

মাঃ বাইরে আছে যাও। আমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলি।

নিরব হাসি দিয়ে মাকে বলে বাইরে চলে আসে। এসে দেখে প্রিয়ন্তির মুখটা কেমন শুকনো, চোখগুলোতে আর আগের মতো মায়া নাই কেমন জানি হয়ে গেছে। নিরব দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রিয়ন্তি নিরবের হাত ধরে টেনে একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে যায়। প্রিয়ন্তি নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরবও প্রিয়ন্তির দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পরই প্রিয়ন্তি বাচ্চাদের মতো কেঁদে দেয়। নিরব একদম বোকা হয়ে যায় প্রিয়ন্তির কান্না দেখে। নিরব আর কিছু না ভেবে প্রিয়ন্তিকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।

নিরবঃ এই বোকা মেয়ে এভাবে কাঁদছো কেনো?? কি হয়েছে আমার ময়নাপাখিটার হুম??

প্রিয়ন্তিঃ আজ ৫ দিন হলো তুমি আমার সাথে কথা বলো না। আমাকে ভালোবাসা না তুমি। তুমি আমাকে ভুলে গেছো। বাচ্চাদের মতো কাঁদো কণ্ঠে।

নিরবঃ ময়নারে আম্মু অনেক অসুস্থ ছিলো। তখন আমার মাথায় কিচ্ছু ছিলো না। সারাটাদিন আম্মুর কাছেই ছিলাম। তার যে আমি ছাড়া অার কেউ নাই। অাদুরে গলায়।

প্রিয়ন্তিঃ সবইতো বুঝলাম কিন্তু ফোনটাও অফ করে রাখছো। তুমি আমাকে ভুলে গেছো। আমাকে ভালোবাসো না। নিরবকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রিয়ন্তি।

নিরব ওর পকেট থেকে ফোনটা বের করে প্রিয়ন্তিকে দেখায়।

নিরবঃ দেখে আমার ফোন বাবা সেই কবে থেকে ঘুমাচ্ছে। চার্য নাই। আর চার্যারতো বাসায়। তাই চার্যও দিতে পারিনি।

প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা হইছে। তুমিও না বোকা। আমিতো এমনিই এসব বলছি। আমি তোমাকে বুঝি। আর এও জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো।

নিরবঃ তাহলে এখন কাঁদছো কেনো ময়না??

প্রিয়ন্তিঃ অনেকদিন তোমাকে দেখি না। তাই মনের অজান্তেই কাঁদছি। আমি ইচ্ছে করে কাঁদছি না। একা একাই কান্না আসছে।

নিরবঃ আমাকে অনেক ভালোবাসো তাইনা??

প্রিয়ন্তিঃ নাহ আমি কাউকে ভালোবাসি না। আমাকে কেউ ভালোবাসে না। মজা করে।

নিরব প্রিয়ন্তির মুখটা তুলে ওর কপালে একটা চুমু দিলো।

নিরবঃ কি এখন খুশিতো??

প্রিয়ন্তিঃ তুমি সব বুঝে যাও তাইনা।

নিরবঃ তুমি যেখানে চাচ্ছো সেখানে দিবো না। মজা করে।

প্রিয়ন্তিঃ আমি কিছুই চাওনি। লজ্জা পেয়ে।

নিরবঃ সত্যিই??

প্রিয়ন্তিঃ জ্বিইই।

নিরবঃ আচ্ছা।

প্রিয়ন্তিঃ তুমি অনেক পঁচা।

নিরবঃ আচ্ছা যাও অামি অনেক পঁচা।

প্রিয়ন্তিঃ না তুমি অনেক ভালো।

নিরবঃ না আমি অনেক পঁচা।

প্রিয়ন্তিঃ না না আমি বলছি না তুমি অনেক ভালো মানে ভালো।

বলেই নিরবের গালে একটা চুমু দিয়ে প্রিয়ন্তি কেবিনের দিকে চলে যায়। নিরবও হাসতে হাসতে প্রিয়ন্তির পিছনে চলে যায়।

আমার মতে প্রকৃত ভালোবাসা এটাই। একজন আরেকজনের খারাপ সময়ে সাথে থাকা। সে সময়ে তাকে একটু ভালোবাসা দিয়ে তাকে মেন্টালি সাপোর্ট দেওয়া। এটাই ভালোবাসা। এতে করে দুজনই খারাপ সময়টা পাড় করার সমান শক্ত পায়। ভালোবাসা এমনি।

কেবিনে,

প্রিয়ন্তির মাঃ বাবা নিরব, তোমার মায়ের অবস্থা এখন কেমন??

নিরবঃ আন্টি..

মাঃ আন্টি না মা বলো।

নিরব অনেক খুশি হয়ে যায়।

নিরবঃ মা, আম্মু এখন আপনাদের আর মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে অনেক ভালো আছে। কাল বাসায় নিয়ে যাবো।

মাঃ ও আচ্ছা তাহলেতো ভালো। আপা আজ তাহলে আসি অনেক কথা হলো। কাল বাসায় দেখা হবে নে।

নিরবের মাঃ আচ্ছা আপা।

পরদিন নিরব ওর মাকে বাসায় নিয়ে আসে। নিরবের সাথে প্রিয়ন্তিও আছে। প্রিয়ন্তি ঘরটা পরিষ্কার করে দিয়ে নিচ থেকে খাবার এনে দেয়। নিরব রাঁধতে চেলে রাঁধতে দেয়নি প্রিয়ন্তি। প্রিয়ন্তি নিজের সংসারের মতো করে সবটা গুছিয়ে দেয়। নিরবের মা অবাক চোখে শুধু প্রিয়ন্তিকে দেখছে।

মাঃ প্রিয়ন্তি মা এদিকে আসো মা।

প্রিয়ন্তি নিরবের মায়ের কাছে গিয়ে বসে।

মাঃ তুমি সত্যিই অনেক ভালো মেয়ে। তুমি কি আমার ছেলেটাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসো মা??

প্রিয়ন্তি লজ্জামাখা মুখ নিয়ে হ্যাঁ বলে।

মাঃ মাশাল্লাহ মা। আমি অনেক খুশি হয়েছি। তোমার মতো এত্তো ভালো একটা মেয়ে আমার ছেলের বউ হলে আমি অনেক খুশি হবো। কিন্তু মা..

প্রিয়ন্তিঃ কি মা??

মাঃ আমরাতো অনেক গরীব আর তোমরাতো অনেক ধনী। তোমার বাবা আমার ছেলের কাছে তোমাকে কি দিবে??

প্রিয়ন্তিঃ মা নিরব বলেছে ও নাকি ঠিক সবাইকে মানিয়ে নিবে।

মাঃ আমার ছেলেটা অনেক ভালো বুঝলি মা। ও যেহেতু বলেছে ও নিশ্চয়ই পারবে।

প্রিয়ন্তিঃ ইনশাআল্লাহ মা।

এর মধ্যে নিরবের আগমন।

নিরবঃ কি এতো কথা কিসের হুম??

প্রিয়ন্তিঃ শাশুড়ী আম্মার সাথে কথা বলছি। তোমাকে বলবো কেনো হ্যাঁ। মজা করে।

নিরবের মা হাসছে।

মাঃ নিরব, এই লক্ষ্ণী বউমা’টা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।

নিরবঃ আমারো। হাহা।

প্রিয়ন্তি অনেক লজ্জা পাচ্ছে।

প্রিয়ন্তিঃ মা আমি এখন যাই। পরে আবার আসবো। এখন থেকে আপনার সব খেয়াল আমিই রাখবো।

মাঃ আচ্ছা রেখো। আমারও ভালো লাগবে।

প্রিয়ন্তি বের হওয়ার সময় নিরবের হাতে একটা কাগজের টুকরো দিয়ে চলে গেলো। আর সাথে মনকারা হাসি।

নিরব কাগজটা পড়ে দেখে সেখানে লিখা, রাতে ছাদে এসো কথা আছে। নিরব পড়ে হাসছে। কারণ ও বুঝেছে গতকালকের পাওনাটা আজ রাতে নিবে। পাগলি মেয়ে হাহা।

রাত ১১.৪৩ মিনিট,

নিরব ছাদের দিকে যাচ্ছে। উপরে দরজা দিয়ে ঢুকতেই কে যেন আচমকা টান মেরে নিরবকে একপাশে নিয়ে নিলো। নিরব দেখে এ আর কেউ নয় প্রিয়ন্তি। প্রিয়ন্তি নিরবকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

নিরবঃ গতকালকের পাওনাটা উশুল করার জন্য বুঝি ডেকেছো হুম?? মজা করে।

প্রিয়ন্তিঃ বুঝেছো যখন তাহলে আবার জিজ্ঞেস করো কেন??

নিরবঃ বাবাহ। আমার ময়না দেখি রাগ করে আছে।

প্রিয়ন্তিঃ এখন তাড়াতাড়ি আমার মিষ্টি দেও।

নিরবঃ দিবো না। মজা করে।

প্রিয়ন্তিঃ কিইইইই…..

নিরবঃ কিছু না। আমি ভালো ছেলে। আমি কাউকে কিছু দি না। মজা করে।

প্রিয়ন্তিঃ কিইই আমি তাহলে পঁচা মেয়ে না। ঠিক আছে। আবার আইসো আমার কাছে। অভিমানী কণ্ঠে।

বলেই প্রিয়ন্তি চলে যেতে নিলেই নিরব ওকে টান দিয়ে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।

নিরবঃ ময়না রাগ করে না। দূষ্টমানি করছিলামতো।

প্রিয়ন্তিঃ নাহ কোনো দুষ্টমানি না। ছাড়ো আমাকে আমি চলে যাবো। তুমি অনেক পঁচা। অভিমানী কণ্ঠে।

নিরব প্রিয়ন্তিকে আরো শক্ত করে জড়িত ধরে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে তাকানিতে আছে অনেক মায়া আর ভালোবাসা। প্রিয়ন্তিও নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরবের ঘোরে পরে গিয়েছে প্রিয়ন্তি। নিরব আস্তে আস্তে প্রিয়ন্তির দিকে এগুচ্ছে। প্রিয়ন্তি হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। নিরব এগুচ্ছে। আর সামান্য একটু পথ বাকি সেই বহুল অপেক্ষিত মিষ্টি স্বাদ নেওয়ার জন্য। কিন্তু হঠাৎই সিড়িতে কারো আসার শব্দ পাওয়া গেলো।

প্রিয়ন্তি তাড়াতাড়ি নিরবকে ছেড়ে সিড়িতে গিয়ে উঁকি দেয়। প্রিয়ন্তি দেখে ওর ভাই আসছে।

প্রিয়ন্তিঃ নিরব কাজ হয়েছে ভাইয়া আসছেতো। এখন?? আল্লাহ..তোমাকে আর আমাকেতো এখন দেখে ফেলবে। তোমাকেতো জানে মেরে ফেলবে আমার সাথে দেখলে। এখন কি হবে?? কই যাবো?? আল্লাহ। প্রিয়ন্তি অস্থির হয়ে গিয়েছে। ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে।

নিরবঃ…..

চলবে….?

কোনো ভুল হলে জানাবেন।

সবার অনেক বেশি সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানিয়েন কিন্তু। ?

{গল্পের অবস্থা অনুযায়ী গল্প ছোট বড় হয়ে থাকে}

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে