Sunday, October 5, 2025







লাভ ম্যারেজ  পর্বঃ ০৩

লাভ ম্যারেজ  পর্বঃ ০৩
– আবির খান

প্রিয়ন্তি একটু জোরেই চলে যাছিলো। লজ্জা পেয়েছে মনে হয়। কিন্তু হঠাৎই কি হলো প্রিয়ন্তির পায়ে প্রিয়ন্তি পরে যেতে নেয়। আর নিরব তাড়াতাড়ি দৌড়ে প্রিয়ন্তিকে গিয়ে ধরে। প্রিয়ন্তি নিরবের বাহুতে। ঠিক চাঁদটার পাশেই নিরবের মুখটা। প্রিয়ন্তি নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরবও চাঁদের আলোতে প্রিয়ন্তির মায়াবী মুখটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওরা অনেকদিনের পরিচিত।

প্রিয়ন্তির কাছে ব্যাপারটা খুব ভালো লাগছে। কারণ এর আগে কখনো কোনো ছেলেকে এতো কাছ থেকে দেখেনি প্রিয়ন্তি। নিরবের সুন্দর চোখগুলো ওকে ওর মায়ায় ফেলছে। নিরবের প্রতি কেমন এক ভালো লাগা কাজ করছে প্রিয়ন্তির।

নিরব আস্তে করে প্রিয়ন্তিকে দাঁড় করালেও প্রিয়ন্তি দাঁড়াতে না পেরে নিরবের বুকে পরে যায়। আর একরকম নিরবকে জড়িয়েই ধরে।

প্রিয়ন্তিঃ উফফফ। পায়ে মনে হয় ব্যাথা লেগেছে। দাঁড়াতেই পারছি না। উহহ। কাঁদো কণ্ঠে।

নিরবঃ আচ্ছা একটু দাঁড়ান আমি দেখছি।

নিরব একটু নিচে নেমে প্রিয়ন্তির বাম পা টা দেখে। একটু মচকে গিয়েছে মনে হচ্ছে৷

নিরব নিচে বসে প্রিয়ন্তিকে বলে,

নিরবঃ আপনি পা টা তুলে আমার হাতে দিন। আর আমার কাঁধটা শক্ত করে ধরুন। একটু ব্যাথা অনুভব হবে। কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।

প্রিয়ন্তিঃ কি বলছেন?? আমার তো অনেক ব্যাথা করছে। অসহায় কণ্ঠে।

নিরবঃ আর করবে না দেন পা টা। আমি দেখছি।

প্রিয়ন্তি নিরবের হাতে ওর বাম পা টা তুলে দেয়। নিরব পা টাকে দুটো মোচড় দেয়৷

প্রিয়ন্তিঃ উহহহহ। ব্যাথা পেয়ে।

নিরবঃ কি এখন ব্যাথা করে??

প্রিয়ন্তি আস্তে করে পা টা নামিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে। না এখন বিন্দুমাত্র ব্যাথাও নাই। প্রিয়ন্তি প্রচুর পরিমানে খুশি হয়ে যায়। লাফালাফি দৌড়াদৌড়ি করছে। হঠাৎ এসে নিরবকে জড়িয়ে ধরে আর বলে,

প্রিয়ন্তিঃ আপনারে অনেক থ্যাংকস। আমার পা টা ভালো করে দেওয়ার জন্য। অনেক খুশি।

নিরবের অনেক ভালো লাগছে প্রিয়ন্তির স্পর্শ। নিরব চুপ করে বুকে থাকা মানুষটাকে অনুভব করছে। নিরব জানে হয়তো কখনো ওকে পাওয়া হবে না। তাই না হয় একটু সময় ওকে অনুভব করা যাক।

এদিকে প্রিয়ন্তিও কোনো এক অজানা অনুভূতিতে নিরবকে জড়িয়ে আছে। ওর মধ্যে এটা কাজ করছে না যে এতো রাতে একটা অপরিচিত ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরা ঠিক না। কিন্তু প্রিয়ন্তির কেন যেন অনেক ভালো লাগছে নিরবের বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে। প্রিয়ন্তি চোখটা বন্ধ করে নিরবকে জড়িয়ে ধরে আছে। অন্যরকম ঘোরে আছে প্রিয়ন্তি। নিরব বুঝতে পেরে,

নিরবঃ প্রিয়ন্তি…

নিরবের মুখে প্রিয়ন্তি ডাকটা প্রিয়ন্তিকে নিরবের প্রতি আরো দূর্বল করে দিচ্ছে।

প্রিয়ন্তিঃ হুম??

নিরবঃ নিচে যাবেন না?? কেউ দেখে ফেললেতো অনেক বড় ক্ষতি হবে আপনার।

প্রিয়ন্তির এবার হুশ হয়। ও তাড়াতাড়ি করে নিরবকে ছেড়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। প্রিয়ন্তির প্রচুর লজ্জা লাগছে। ও এত্তোক্ষন কোন অজানা টানে নিরবকে জড়িয়ে ছিলো ও নিজেও জানে না। তাই লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে প্রিয়ন্তি।

প্রিয়ন্তিঃ সরি। ভুলে জড়িয়ে ধরেছি।

নিরবঃ কই?? কখন?? আমারতো খেয়াল নেই। মজা করে।

প্রিয়ন্তিঃ সত্যিই আপনার মনে নেই?? বিস্ময়মাখা চাহনি।

নিরব প্রিয়ন্তির কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,

নিরবঃ তুমি কি চাও আমি তা মনে রাখি?? দুষ্ট দৃষ্টিতে৷

প্রিয়ন্তি অনেক লজ্জা পেয়েছে নিরবের কথায়৷ লজ্জায় মুখটা একদম গোলাপি হয়ে গিয়েছে।

প্রিয়ন্তিঃ আমি যাই তাহলে।

বলেই যেতে নিলে,

নিরবঃ যাই না বলো আসি।

প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা আসি। মুচকি হাসি দিয়ে।

প্রিয়ন্তি চলে যায়। সেদিন রাতে না নিরব না প্রিয়ন্তি ঘুমিয়ে ছিলো। শুধু একে অপরের ভাবনায় ডুবে ছিলো দুজন।

এরপর কয়েকদিন চলে যায়। নিরব অনেক ব্যস্ত হয়ে পরে। প্রিয়ন্তির সাথে তেমন দেখাও হয়না। প্রিয়ন্তির মনটাও বিষন্ন থাকে। ও বুঝতে পারছে না এই বিষন্ন মনের কারণ। নিরবদের বাসার সামনে গিয়ে উঁকি মারে যে নিরব আছে কিনা। কিন্তু কাউকেই পায়না। কারণ নিরব সেই সকালে বের হয় আর আসে রাত ১১.০০ টায়। ক্লান্ত থাকার কারণে ছাদেও যেতে পারে না।। নিরব ভেবে নিয়েছে, সেদিনের রাতটা হয়তো একটা সুন্দর স্বপ্ন ছিলো। তাই ও নিজেও ইচ্ছা করে প্রিয়ন্তির সামনে যায়না। শত কষ্ট হলেও প্রিয়ন্তি ওর মতো গরীব ছেলেকে ভালোবাসবে না। এই ভাবনাই ওকে থামিয়ে দেয় প্রিয়ন্তির কাছে যেতে।

একদিন সকালে,

নিরব ভারসিটিতে আজ ৩টা ক্লাস করে ১২.৩৭ এর দিকে বাসার উদ্দেশ্য বের হয়। নিরব বাসের জন্য বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎই একটা রিকশাকে বাস এসে সজোরে ধাক্কা দেয়। রিকশায় থাকা একটা মেয়ে ছিটকে রাস্তা গিয়ে পরে। মেয়েটা মাথায় আঘাত পেয়ে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। কিন্তু রিকশাওয়ালা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় মারাত্মক আঘাত থেকে।

নিরব তাড়াতাড়ি এগিয়ে যায়। মেয়েটার অবস্থা অনেক খারাপ। মাথা থেকে প্রচুর রক্ত ঝরছে। নিরব মেয়েটির অবস্থার দেখে অবাক হওয়ার চেয়ে বেশি অবাক হয় পাবলিকদের দেখে। সবাই সমানে ছবি তুলছে। নিরবের গা জ্বলে যাচ্ছে রাগে আর কষ্টে। একটা লোক পর্যন্ত এসে মেয়েটাকে সাহায্য করছে না।

নিরবঃ প্লিজ ভাইরা, কেউ ছবি না তুলে একটু সাহায্য করেন। মেয়েটাকে বাঁচাতে হবে। কেউ একটু ধরেন একটু সাহায্য করেন। মেয়েটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ভাই কেউ আসেন দয়া করে।

পাবলিক। মোদের শ্রদ্ধেও জনগণরা শুধু তাকিয়ে আছে নিরবের দিকে৷ কেউ এগিয়ে আসলো না। উল্টো হায় নিরবকে তারা ভিডিও করছে।

নিরবের চোখ থেকে অঝোরে পানি ঝরছে। নিরব সব ভুলে মেয়েটার কাছে এগিয়ে যায়। মেয়ে মানুষ, গায়ে হাত দেওয়া কি ঠিক হবে?? তাও ওকে বাঁচানোর জন্য সব লজ্জা রীতিনীতি সব ভুলে নিরব এগিয়ে যায়। নিরবের ব্যাগে একটা এক্সট্রা শার্ট সব সময়ই থাকে। সেটা বের করে তাড়াতাড়ি মেয়েটির মাথায় বাঁধে। এরপর আর কিছু না ভেবে মেয়েটার ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে মেয়েটাকে কোলে করে অনেক কষ্টে একটা রিকশা নিয়ে কাছেই একটা হাসপাতালে যায়।

নিরবঃ ডাক্তার প্লিজ ওনাকে একটু দেখেন। ওনার অবস্থা অনেক খারাপ। অস্থির হয়ে।

ডাক্তারঃ উনার কি হয়েছে আর উনি কে??

নিরব একটু ভেবে বলল,

নিরবঃ ও আমার বোনের মতো। রিকশা থেকে হঠাৎ পরে গিয়েছে।

ডাক্তারঃ আচ্ছা আমরা দেখছি। আপনি শান্ত হয়ে বসুন। নার্স ওনাকে তাড়াতাড়ি এমার্জেন্সিতে নিয়ে যাও।

নিরব এর মাঝে মেয়েটির ফোন থেকে নাম্বার নিয়ে ওর বাবা মাকে ফোন দেয়। তারা আসছে। আর নিরব ডাক্তারকে মিথ্যা বলেছে কারণ, নতুবা পুলিশ না আসা পর্যন্ত মেয়েটিকে তারা ট্রিটমেন্ট করতো না। ফলে হয়তো মেয়েটির অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো।

একটুপর,

নার্সঃ এই যে শুনুন।

নিরবঃ জ্বি??

নার্সঃ আপনিতো একটু আগের পেশেন্টের ভাই তাই না??

নিরবঃ জ্বি। কেনো??

নার্সঃ আসলে ওনার অনেক রক্ত পরেছে। তাই ওনার এখনই ১ ব্যাগ o+ রক্ত লাগবে। খুব তাড়াতাড়ি। নাহলে ওনাকে বাঁচাতে সমস্যা হবে৷ আমাদের হাসপাতালে এখন o+ রক্ত নেই। তাই আপনাকে যেভাবে হোক রক্ত ম্যানেজ করতে হবে।

নিরবঃ না্রস আমার o+ রক্ত। দয়াকরে আমার রক্ত ওকে দিন।

নিরবঃ আচ্ছা আসুন তাহলে।

এরপর নিরব প্রায় ২ ব্যাগ রক্তই দেয়। কারণ পরে ১ ব্যাগ রক্তের সর্ট পরেছিলো। এরই মধ্যে মেয়েটির পরিবারে লোকজনও এসে পরে। সবাই নিরবকে ধন্যবাদ দিতে দিতে ভরিয়ে দিচ্ছে। নিরব পাশের একটা কেবিনে শুয়ে আছে। স্যালাইন দেওয়া। ২ ব্যাগ রক্ত দেওয়ায় ডাক্তার ওকে স্যালাইন দিয়েছে।

মেয়েটির জ্ঞান এসেছে। মেয়েটি এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে শুধু মাত্র আল্লাহর রহমত আর নিরবের জন্য। এখন একটু ভালোই আছে মেয়েটি। নিরব চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। হঠাৎই একজন বলে উঠলো,

– আপনিইইই??? অবাক কণ্ঠে।

নিরব চোখ খুলে যাকে দেখে তাকে দেখার জন্য নিরব মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। এ আর কেউ নয় প্রিয়ন্তি।

নিরবঃ আপনি এখানে?? অবাক হয়ে।

প্রিয়ন্তিঃ আপনি যাকে বাঁচিয়েছেন ও আমার ছোট বেলার বান্ধবী। আপনি নাকি ওকে রক্তও দিয়েছেন??

নিরবঃ হুম। ওর প্রয়োজন ছিলো তাই।

প্রিয়ন্তিঃ আপনি সত্যিই অনেক ভালো একটা মানুষ। এই জামানায় কেউ কাউকে এতো সাহায্য করে না। আপনি থাকেন আমি ওকে বিদায় দিয়ে আসি। তারপর আমার সাথে বাসায় যাবেন।

নিরবঃ আরে সমস্যা নেই। আমি নিজেই যেতে পারবো।

প্রিয়ন্তিঃ না আমার সাথেই যাবেন। গাড়িতে একসাথে যাবো। আর কোনো কথা না। ঢাকায়া মেয়েদের রাগ কিন্তু অনেক বেশি।

নিরবঃ আচ্ছা যাবো।

প্রিয়ন্তিঃ হুম শুয়ে থাকেন আমি আসছি।

নিরবঃ আচ্ছা।

কিছুক্ষণ পর প্রিয়ন্তি এসে নিরবকে সাথে নিয়ে গাড়ির কাছে যায়।

প্রিয়ন্তিঃ উঠুন।

নিরবঃ না গেলে হয়না। আপনার পরিবারের কেউ দেখলে খারাপ মনে করবে৷ আমি বরং একাই যাই।

প্রিয়ন্তিঃ আপনি কিন্তু আমাকে রাগাচ্ছেন। গাড়িতে উঠুন নাহলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে। রাগী কণ্ঠে।

নিরবঃ আচ্ছা আচ্ছা উঠছি।

গাড়িতে,

প্রিয়ন্তি আর নিরব গাড়িতে একসাথেই বসেছে। প্রিয়ন্তি ফোন চালাচ্ছে। আর নিরব আড় চোখে একটু পর পর প্রিয়ন্তিকে দেখছে। নিরব ওকে দেখছে আর ভাবছে, মেয়েটার মধ্যে অনেক মায়া আছে, অনেক ভালো লাগা আছে। বিশেষ করে ওর কণ্ঠটা। ওর কণ্ঠটা এত্তো সুন্দর আর মধুর। যতই বলে ততই শুনতে ইচ্ছে করে। এই কণ্ঠটা যদি সারাজীবন শুনতে পারতাম। কিন্তু হয়তো হবে না শুনা। ওর আর আমার মাঝে অনেক দূরত্ব। অনেক কিছুর দূরত্ব। ওর মতো সুন্দরী, ভালো, মধুর কন্ঠী মেয়ে আমার কপালে নাই। হয়তো সারাজীবন ওর ছবি বুকে নিয়েই বাঁচতে হবে। ও হাসলে বুকের সব কষ্ট মুছে যায়। এতো সুন্দর ওর হাসি। নাহ আর ওকে না ভাবা যাবে না। ওর আর আমার দূরত্ব অনেক। অনেকটাই বেশি। হঠাৎ,

প্রিয়ন্তিঃ আপনি কি মানুষ নাকি অন্য কিছু বলেন তো??

নিরবঃ মানে?? কেনো?? অবাক হয়ে।

প্রিয়ন্তিঃ আপনিতো মানুষ না আপনি ফেরেস্তা। আমি একটু আগে আমার বান্ধবীকে আপনি যেভাবে বাচিঁয়েছেন তার ভিডিও দেখলাম। আপনি আসলেই অনেক ভালো। অনেক মহৎ। নিজের দু ব্যাগ রক্ত দিলেন। আপনি সত্যিই একজন ভালো মানুষ।

নিরবঃ মোটেও না। এটা আমার কর্তব্য ছিলো একজন মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের সাহায্য করা। তখন কতটা কষ্ট আর রাগ হয়েছে আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না। একটা মেয়ে এক্সিডেন্ট করেছে। মায়ের জাত আমাদের। একটা লোক একটিবারের জন্য এগিয়ে আসে নি। উল্টো ভিডিও করে লাইকস আর কমেন্টস কামিয়েছে। এরা আসলে মানুষ না। এরা অন্য কিছু। আরে একই সহদরের প্রাণীকুলের কেউ বিপদে পরলে তার মতো আরো ১০ জন তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যায় জীবনের পরোয়া না করে। আর আমরাতো মানুষ। তাই বলে একটা মেয়ে, মায়ের জাত। তাকে সাহায্য করতে একটা মানুষ পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি। ধিক্কার জানাই আমি এদের ধিক্কার। এসব ভিডিও একদিন হারিয়ে যাবে। কিন্তু ওই মেয়েটা যদি একটুও সাহায্য না পেয়ে মারা যেতো, তাহলে এই ভিডিও যারা বানিয়েছে বা দেখেছে তারাকি এর খেসারত দিতে পারতো???

প্রিয়ন্তি হতবাক হয়ে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরবের রক্ত রাগে আর দুঃখে টগবগ করছে।

প্রিয়ন্তি এই প্রথম নিরবের হাতে হাত রাখে৷ মুহূর্তেই নিরবের রাগ সব চলে যায়। নিরব স্থির চোখ নিয়ে প্রিয়ন্তির দিকে তাকায়।

প্রিয়ন্তিঃ আপনি এ সমাজের সবচেয়ে উত্তম পুরুষ। আমি একজন নারী হিসেবে আপনাকে স্যালুট করছি। আপনার মতো সাহসী আর এমন চিন্তা ধারার একজন পুরুষ বা মানুষকে জীবন সঙ্গি হিসেবে পাওয়া সব মেয়েরই স্বপ্ন।

নিরবঃ আরে না। আপনি বাড়িয়ে বলছেন। আসলে মানুষ হিসাবে এটা আমাদের কর্তব্য। এই যে দেখেন, পৃথিবী ফুসফুস মানে অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট যে প্রতি নিয়ত জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের কোনো মাথা ব্যাথা আছে?? আমরা আছি শুধু ভিডিও দেখে কিছু সময়ের জন্য হতাশ হওয়া। আরে কিছু না করতে পারি অন্তত মহান আল্লাহর কাছে সাহায্যতো চাইতে পারি। এই অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট যদি না থাকে তাহলে কত হাজার হাজার মানুষ অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কারো মনে কোনো ভয় নেই। সবাই আছে শুধু ভিডিও আর কাকে কিভাবে নিচে নামাবে তা নিয়ে। সত্যিই অনেক খারাপ লাগে এসব দেখলে।

প্রিয়ন্তিঃ আপনি শান্ত হোন। আপনি অনেক ভালো মানুষ আল্লাহ তায়ালা আপনাকে নিরাশ করবে না।

নিরবঃ ইনশাল্লাহ।

ড্রাইভারঃ আপু এসে পরেছি।

প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা।

নিরব আর প্রিয়ন্তি গাড়িতে থেকে নেমে বাসার ভিতরে যাচ্ছে। হঠাৎই নিরব মাথা ঘুরিয়ে পরে যেতে নেয়। স্যালাইনটুকু সব নেয় নি। বাসায় মা একা তাই চলে এসেছে। প্রিয়ন্তি এগিয়ে এসে নিরবকে ধরে।

প্রিয়ন্তিঃ আপনি মনে হয় দূর্বল হয়ে পরেছেন। তাই পরে যাচ্ছেন। চলুন আপনাকে উপরে পৌঁছে দিয়ে আসি।

নিরবঃ আরে না না থাক। আমি একাই যেতে পারবো এখন। আপনি যান।

প্রিয়ন্তিঃ আপনি পরে যাচ্ছেন তো। চুপচাপ হাতটা দেনতো।

নিরব আর কি করবে দূর্বল হাতটা প্রিয়ন্তির হাতে তুলে দেয়। ভালো লাগার মানুষটার কাছে নিরবের হাত। তার প্রতিটি স্পর্শে নিরবের মনে অন্যরকম এক অনূভুতি জাগাচ্ছে।

প্রিয়ন্তি নিরবকে নিয়ে বাসায় ঢুকলো। উপরের দিকে যেতে নিলেই,

প্রিয়ন্তির মাঃ প্রিয়ন্তি ওর কি হয়েছে রে??

প্রিয়ন্তিঃ মা উনি আমার এক ফ্রেন্ডকে আজ বাচিঁয়েছেন প্লাস রক্তও দিয়েছেন। তাই একটু দূর্বল হয়ে গিয়েছেন।

মাঃ বলিস কি। বাবা আসো আসো আমাদের বাসায় আসো।

নিরবঃ না আন্টি আমি উপরেই যাই। মা অপেক্ষা করছে।

মাঃ আচ্ছা যাও।

নিরবঃ প্রিয়ন্তি, আমি এখন যেতে পারবো আপনি বরং যান।

প্রিয়ন্তিঃ এতোটা পথ একসাথে এসেছি আর একটু না হয় এগিয়ে দিয়ে আসি?? আস্তে করে বলল।

নিরবঃ আচ্ছা।

প্রিয়ন্তি এরপর নিরবকে নিয়ে উপরে চলে যায়।

নিরবের মাঃ নিরব…কি হইছে তোর?? ওর কি হয়েছে মা?? আর তুমি কে??

নিরবঃ মা আমি ঠিক আছি। কিছু হয়নি। শুধু একটু দূর্বল হয়ে পরেছি। আর উনি আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে।

মাঃ ও তাই। মা আসো বসো বসো। কিছু খাবে??

প্রিয়ন্তিঃ না আন্টি। শুধু একটু পানি খাবো।

মাঃ আচ্ছা বসো তোমাদের জন্য পানি নিয়ে আসছি।

নিরব খাটে বসে। খুব ক্লান্ত লাগছে। সকালে নাস্তাও খায়নি। তাই এতো দূর্বল। হঠাৎ,

প্রিয়ন্তিঃ আজ রাতে ছাদে অপেক্ষা করবো এসেন কিন্তু। এখন যাই ভালো থাকবেন। অপেক্ষায় থাকবো। কানে কানে বলেই তাড়াতাড়ি চলে গেলো।

নিরব অবাক হয়ে প্রিয়ন্তির যাওয়া দেখছে।

মাঃ কিরে কই গেলো মেয়েটা???

নিরবঃ চলে গিয়েছে। আনমনে বলল।

মাঃ পানি না খেয়েই চলে গেলো??

নিরবঃ ওনার আম্মু ডাক দিয়েছে। তাই চলে গিয়েছে।

মাঃ ওহ। আচ্ছা। তুই হাত মুখ ধুয়ে আস খাবার দি। সারাদিনে তো কিছুই খাস নি।

নিরবঃ আচ্ছা মা দেও।

নিরব এরপর খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নেয়। তারপর পড়াতে যায়।

রাত ১১.৫০,

নিরবের মা ঘুমিয়ে পরেছে। কিন্তু নিরব ঘুমাতে পারছে না। ওর মনটা ছাদে পরে আছে। প্রিয়ন্তির কথা মতো ছাদে যাবে কি যাবে না এই ভেবে অস্থির হয়ে আছে নিরব। প্রিয়ন্তিকে না দেখেও ভালো লাগে না। কিন্তু যদি কেউ দেখে তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হবে ওদের। নিরব আর পারছে না নিজের সাথে যুদ্ধ করতে। তাই সব ভুলে ছাদে চলে যায়।

নিরব আস্তে আস্তে ছাদে উঠে। ছাদের দরজা দিয়ে…
চলবে…?

>> অনেকের ঢাকায়া ভাষা বুঝতে সমস্যা হয় তাই চলতি ভাষায়ই লিখছি।

কোনো ভুল হলে জানাবেন।

সবার বেশি বেশি সাড়া চাই। আর মন্তব্য করে জানাবেন কেমন লেগেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ