Monday, October 6, 2025







লাজুকপাতা পর্ব-১৮

#লাজুকপাতা
#পর্ব-১৮
কক্সবাজারে চার দিন ভালোই কাটলো। বাড়ি থেকে একাধারে সবার ফোন, ম্যাসেজ এসেছে। আমরা কেউই সেগুলোর জবাব দেই নি। শুধু পরী আপাকে ফোন করে সমস্ত কাহিনী বললাম। চারদিন পর ঢাকায় ফিরে দেখি সবকিছু থেমে আছে। শাশুড়ী মা একা একা কাজ সামলাতে গিয়ে কোমড় ব্যথা নিয়ে বিছানায় চিতপটাং। মেয়ের বিয়ের সমস্ত কাজ একা সামলাতে গিয়ে বিপদে পড়েছেন। নাজমা ভাবী বলল, মুক্তার শ্বশুর বাড়ির লোকের সাথে বিরাট ক্যাচাল গেছে। সকালের নাস্তায় খিচুড়ি খেতে দিয়েছে আধফোটা চালের। মুক্তার চাচাশ্বশুর সেমাই খেতে গিয়ে বড় সাইজের চুল আবিষ্কার করে আব্বাসহ তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করেছে। বিয়েটা হয়েছে জুয়েল ভাইয়ের কারণে।

আমি ঘরে ঢুকে কারো সাথে কথা বললাম না। জামিল ভাই বললেন,

“খুব ভালো কাজ করছ। যেমন কুকুরের সাথে তেমন মুগুর হওয়া দরকার। ”

মুক্তা বাড়িতে নেই। ঘুরতে গেছে স্বামীর সঙ্গে। আম্মা আমার সঙ্গে কথা বললেন না। আমি নিজেই রান্নাবান্না করলাম। বাবা সেই খাবার নিয়ে তাকে দিলেন। খেয়েদেয়ে খানিকক্ষণ নিজের কপাল কে অভিশাপ দিলেন।

দুদিন পর ঘটলো বিশাল নাটকীয় ঘটনা। পরী আপা সবসময় আমাকে বলতেন বাড়িতে যেন আমার সংসারের কিছু না বলি। কিন্তু এইবারের ঘটনা সে নিজেই বলে দিলেন। সব শুনে মা, বাবা, চাচাজান এলেন। মা এসেই প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে ফেলল আমাকে। এতোকিছু হয়ে গেল তাও কেন আমি কিছু জানালাম না। এমন ছোটলোক ফ্যামিলি জানলে সে কিছুতেই এখানে বিয়ে দিতে রাজি হতেন না। এমনকি নাবিদকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো। অবস্থা এমন বেগতিক হবে আম্মা নিজেও বুঝতে পারেন নি। এই প্রথম আমি নাবিদের অসহায় চেহারা দেখলাম। বেচারা একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি পরী আপার উপর খুব বিরক্ত হলাম। আপাকে বললাম,

“এইটা কী ঠিক করলা আপা? নাবিদ যে এখন আমাকে ভুল বুঝতেছে৷”

“নাবিদ কে বল যে তুই কিছু বলিস নি, আমি বলেছি। ও তো জানে তুই কেমন। ”

“তুমি বা কেন বলতে গেছ আপা? তুমিই তো আমাকে সবসময় চুপ থাকতে বলতা। ”

“কিছু বিষয়ে চুপ থাকা যায় না। এবারের ঘটনা তেমন। সবসময় চুপ থাকলে দূর্বল ভেবে একের পর এক আঘাত আসতে থাকবে তোর দিকে। ”

আমি রাগ করে ফোন কেটে দেই। সিদ্ধান্ত নেই পরী আপাকে আর ফোন ই করব না।

মায়ের ঝগড়ার রুপ আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন দেখে ফেলে। শাশুড়ীর উদ্দেশ্য মায়ের প্রশ্নের ধরন দেখে সবাই ই নড়েচড়ে বসে। বোধহয় তারা বুঝে উঠতে পারে নি এমন আচরণ। এমন মায়ের মেয়ে হয়ে আমিই বা কিভাবে ঠান্ডা মেজাজ পেলাম এই ব্যাপারেও সবাই সন্দিহান। মামা বারবার চাচাজানের কাছে ক্ষমা চান। আম্মা গুছিয়ে কিছু বলতে পারেন না। শেষমেস বলেন যে গয়না তো সে মাত্র একদিনের জন্য নিছে। মুক্তার বিয়ের পর ফিরেই দিতো। এই কথার জের ধরে মামাও গয়না আমাকে দেবার ব্যবস্থা করেন।

মা আমাকে নিয়ে যেতে চায়। আমি রাজি হই না। মা নাবিদ কে বলে যায়,

“তোমার উপর আমার ভরসা আছে বাবা। কিন্তু তোমার ঘরের মানুষের যে কাহিনী শুনি তাতে তাদের উপর আমার ভরসা হয় না। ”

নাবিদ নত মস্তকে শোনে। মায়েরা থাকেন না। একবেলা আপ্যয়নের সুযোগ পর্যন্ত দেন না। তারা চলে যান। আম্মা তার কপাল চাপড়ান। তার কপালে পরের মেয়ে দিয়ে কোনো শান্তি নেই। আমি সেসব শুনেও চুপ করে থাকি। আমার চিন্তা নাবিদ কে নিয়ে। এতসব ঘটনায় নাবিদ আবার একটু একটু করে দূরে সরে যাবে না তো!

নাবিদ একদিন আমার উপর রেগে থাকে। পরদিন আবার আগের মতোই সহজ হয়। আমি নির্ভার হই। এই সংসারে আর কোনো মানুষ, কারোর থেকে কিছু চাওয়ার নেই। শুধু যার হাত ধরে পলাশবাড়ী ছেড়েছি সে আমার সঙ্গে থাকলেই হবে।

***
কলেজে একটা পরীক্ষা শেষ হয়। এই পরীক্ষার পর ক্লাশে কিছু লোকের নজরে আমি আসি। স্যার, ম্যাম রা ক্লাশে এসে আমাকে খোঁজে। কারণ টপ টেনের মধ্যে আমিই একমাত্র মেয়ে। পিছনের বেঞ্চে বসার বদলে আমাকে সামনের দিকে বসতে বলা হয়। ছেলেরাও আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলে টুকটাক। একদিন ক্যান্টিনে যাবার পথে রাজন নামে একটা ছেলে আমাকে বলল,

“জরী কেমন আছ? ”

আমি মাথা নেড়ে জবাব দেই ভালো। তারপর টুকটাক কথাবার্তা হয়। আমি কোথায় থাকি, পড়াশোনা ছাড়া আর কী করি এসব।

এরপর দেখা হলেই রাজন ছেলেটা কথা বলতো। কেমন আছি, কী করছি এসব। একদিন চা খাবার সময় আমার চায়ের বিলটাও দিলো। আমার খানিকটা অস্বস্তি হয়। নাবিদ কে এসব জানাই না।

***
ইদানীং মুক্তার চলাফেরায় খুব পরিবর্তন এসেছে। খুব টাকা, পয়সা খরচ করছে। সকালে সামনের হোটেল থেকে পরোটা আর চিকেন স্যুপ খায়। রুটি, ভাজি খেতে নাকি ভক্তি হয় না।

দুপুরে শোল মাছের ঝোল দেখে নাক শিটকায়। গলির মোড়ের স্পেশাল মোরগ পোলাও এনে খায় টাপুর টুপুর কে নিয়ে। আবার দেখলাম টাপুর টুপুর কে সস্তার আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে বকাঝকা করছে।

বাবাকে একদিন পাঁচশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল, ফকিন্নির মতো রং চা খাইয়ো না তো বাবা। বাবা সেই টাকা হাতে নিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে রইলেন।

জুয়েল ভাই ভদ্রলোক এখন পর্যন্ত মিশুক স্বভাবের। কথাবার্তা বলেন বেশী। এতো বয়স্ক একটা লোক ভাবী ভাবী করে! মাঝেমধ্যে বিরক্ত লাগে। টাপুর টুপুর কে আদর করে। উনি বাসায় আসলেই মুক্তার হাবভাব কথাবার্তা পাল্টে যায়। স্বামীর সঙ্গে কথা বলার সময় ন্যাকা স্বরে কথা বলে।

একদিন রাত ১ টার সময় জুয়েল ভাই এলেন। আমরা সবাই তখন ঘুমিয়েছি। মুক্তা এসে দরজায় ধাক্কা দিলো। নাবিদ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমি চোখ কচলাতে কচলাতে দরজা খুললাম। মুক্তা বলল,

“ভাবী তোমার দুলাভাই আসছে। রান্না করা লাগবে? ”

আমার মেজাজ খারাপ হলো। এতো রাতে কেউ এভাবে এসে বিরক্ত করে! তাও নতুন জামাই। আমি কিছু বললাম না। ফ্রিজে একটা বক্সে গরুর মাংস ছিলো আমি সেটা বের করছি। মুক্তা দেখে বলল,

“কী করো ভাবী, ওরে বাসী খাবার খাওয়াবা?”

“বাসী খাবার কোত্থেকে পেলে? এটা তো ডিপে ছিলো। ”

“এসব ফকিন্নি মার্কা খাবার ও খায় না। নতুন রান্না করো। একটু পোলাও কইরো, ডিমের কোর্মা কইরো। ডিমের কোর্মায় টমেটো দিও। ও টক পছন্দ করে। ”

আমি ঠান্ডা গলায় বললাম,

“রাত একটার সময় আমি তোমার ফরমায়েশ মতো কিছু রান্না করতে পারব না। এমনকি এক কাপ চাও না। তোমার জামাইকে তুমি খাওয়াও। ”

মুক্তা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো। আমি ঘরে চলে এলাম। শেষমেস সেই বাসী গরুর মাংস দিয়েই জুয়েল ভাই কে ভাত দিলো মুক্তা। পরদিন সকালে জুয়েল ভাই বলল,

“ভাবী আপনি তো ফাটাফাটি রান্দেন। গরুর মাংস তো সেই মজা ছিলো! ”

আমি হাসলাম। দুপুরে জুয়েল ভাই খেয়ে যাবেন। মুক্তা আবারও এসে আমাকে ফরমায়েশ দিয়ে গেল কী কী রাঁধতে হবে। আমি সব উল্টো করলাম। ও মুরগির ঝাল রোস্ট করতে বলেছিল আমি মিষ্টি রোস্ট করেছি। ইলিশ মাছ ভাজার বদলে বেগুন দিয়ে ঝোল করেছি। ডিমের আইটেম টোট্যালি বাদ দিয়েছি। ছোট মাছ দিয়ে টমেটোর টক করেছি।

জুয়েল ভাই খেতে বসে প্রশংসা করলেন। বললেন,

“ভাবী আপনার মায়ের কাছ থেকে রান্না শিখছেন? খুব ভালো রান্না। ”

তারপর মুক্তার উদ্দেশ্যে বললেন,

“তুমি আম্মার কাছ থেকে যা শিখছ সব ভুলে যাও। ভাবীর থেকে রান্না শিখবা৷ প্রতি সপ্তাহে তিনটা আইটেম শিখবা। তারপর একদিন পরীক্ষা দিবা। তোমার এই সপ্তাহের টাস্ক হইলো আজকে যা যা রান্না হইছে সেইগুলো। ”

মুক্তার চোখের দৃষ্টি চাইলেও এড়াতে পারিনি। বেচারির হেরে যাওয়া চোখ দেখে মনে মনে ভাবি, এতো সংসার নয়, যুদ্ধক্ষেত্র।

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ