Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"লজ্জাবতীলজ্জাবতী পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

লজ্জাবতী পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

#লজ্জাবতী
#লেখা_Bobita_Ray
শেষপর্ব

বেশকিছুদিন ধরে অনুপম, মাধুর সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করে। অনুপমের হঠাৎ বদলে যাওয়া আচরণ দেখে, মাধুর খুব কষ্ট হয়। প্রচণ্ড কান্না পায়। অনুপম সামান্য বিষয়ে কথা কাটাকাটি হলেও রেগে গিয়ে বলে,
-‘আমার সংসার ভাল না লাগলে তুমি চলে যেতে পারো।
এই মানুষটাকে ছেড়ে কোথায় যাবে মাধু? মানুষটা কেমন চোখের সামনে একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে। আবার রাগ পড়ে গেলে অনুপম, মাধুকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো আদর করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোলের মাঝে নিয়ে বসে থাকে। আদরে আদরে মাধুও, অনুপমের করা তিক্ত ব্যবহার ভুলে যায়। মলিন কণ্ঠে বলে,
-‘কী হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছো কেন?
অনুপম উত্তরে কিছুই বলে না। বাচ্চা দুটোকে বুকের মাঝে আগলে ধরে ঘুমায়। ইদানীং অনুপমের মুড মেজাজ প্রায় সময় খিটখিটে থাকে। ভাল কথাও গায়ে সয় না। বুকের ব্যথাটা বেড়েছে। কাশিও সারছে না। হাতে টাকা হলে একবার বড় ডাক্তার দেখাতে হবে।
অভির স্কুল বন্ধ। ছেলে বায়না ধরেছে। সে তার দাদু, ঠাম্মার কাছে বেড়াতে যাবে। মাধুও হাঁপিয়ে উঠেছে। কয়দিন দুরত্ব বজায় থাকলে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা বাড়ে, তিক্ততা কমে। অনুপমকে বলতেই সে একবাক্যে রাজি হয়ে গেল। বলল,
-‘আমার তো হাতে ছুটি নেই। আগামী বৃহস্পতিবার তোমাদের রেখে আসব কেমন?
-‘ আচ্ছা।
মাধু যেদিন এই বাসা ছেড়ে চলে গেল। অদ্ভুত কারণে সেদিন চলে যেতে মাধুর যেন কেমন লাগল। বড় শখের নিজের হাতে তিলে তিলে গড়া সংসার মাধুর। এই মায়ায় জড়ানো সংসার, ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়েও যে বেশিদিন মন টিকে না। সারাক্ষণ মাথায় কুটকুট করে। অনুপম একা একা কী করছে, কী খাচ্ছে, মানুষটা সুস্থ আছে তো! বাচ্চাদের জ্বালায় একান্তে ফোনে বেশিক্ষণ কথাও বলা যায় না। দুজন ফোন টানাটানি করে। কে আগে বাবার সাথে কথা বলবে! মাঝে মাঝে মাধুর এত বিরক্ত লাগে।
এবার গ্রামে এসে অনুপম খুব প্রাণবন্ত হয়ে গেল। বন্ধুবান্ধবদের সাথে পাল্লা দিয়ে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, মাধুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো৷ বাচ্চাদের সাথে ছোটাছুটি করা। যাওয়ার দিন রাতে মাধুকে দুচোখ জুড়িয়ে, মন ভরে দেখে নিল। মাধু লজ্জা পেয়ে বলল,
-‘এভাবে তাকিয়ে থেকো না তো। লজ্জা লাগে।
অনুপম ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল,
-‘লাগুক। বলেই মাধুর চিবুকে চুমু খেলো। মাধু, অনুপমের বুকে মাথা রাখল। অনুপম, শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আবেগী কণ্ঠে বলল,
-‘তোমার ছেড়ে আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। চলো না মাধুসোনা কাল আমার সাথে?
-‘অভি রাজি হবে না। দ্যাখো না ছেলেটা গ্রামে এলে একদম যেতে চায় না।
-‘অভি তাহলে থাকুক। তুমি মেয়েকে নিয়ে চলো?
-‘লোকে কী বলবে?
অনুপম বলল,
-‘তোমার মনে আছে মাধু। বিয়ের রাতে তুমি কী কান্ডটাই না করেছিলে। আমাদের প্রথম কাছে আসার রাতটাও আমি খুব খুব উপভোগ করেছি। মাঝে মাঝেই সেই সুন্দর রাতটার কথা মনে পড়ে আমার। অনুপম একটু বিরতি নিয়ে আবারও বলল,
-‘আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া তুমি মাধুসোনা। তুমি ইহজনমে শুধু আমার হয়েই থেকো কেমন?’
-‘আমি তো তোমারই।’
গভীর রাতে অনুপম আকুল ভাবে নিজের করে পেতে চাইল মাধুকে। মাধুও আপত্তি করল না। দূরে সরে গেল না। অনুপমের ভালোবাসার মোহময় ডাকে সারা দিল মাধু। নিজের সবটুকু উজার করে ভালোবাসল অনুপমকে। ইশ, তীব্র সুখের সময়টা যদি এখানেই চিরদিনের মতো আটকে দেওয়া যেত। তাহলে বোধহয় মন্দ হতো না।
বিকেলের দিকে অনুপম চলে গেল। যাওয়ার আগে মাধুকে অনেকক্ষণ বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রইল। ঠোঁটে ঠোঁট রাখল। গভীর চুমু এঁকে দিল। তারপর কী মনে করে মাধুর শাড়ির আঁচল সরিয়ে বুকের একটু গভীরে এত জোরে কামড় বসিয়ে দিল। ব্যথায় মাধু চিৎকার করে উঠল। চোখ দিয়ে জল পরছে। অনুপম হেসে দিয়ে বলল,
-‘ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেলাম মাধুসোনা। আমার অনুপস্থিতিতে এই চিহ্নটা তোমাকে সবসময় আমার কথা মনে করাবে। মাধু কেঁদে দিয়ে বলল,
-‘ইশ, মনে হয় সারা জীবনের জন্য আমাকে রেখে চলে যাচ্ছ? তুমি এত পাষাণ। এভাবে কেউ কামড় দেয়? দেখছ, এখনো রক্ত পরছে? এই দাগটা হয়ত সারাজীবনেও মিশবে না।
-‘কিছু কিছু দাগ সারাজীবন থাকায় শ্রেয়।
অভি, অনু দৌঁড়ে এলো। অনুপম হাঁটু মুড়ে বসে ছেলেমেয়ে দুটোকে খুব খুব আদর করে দিল। রেণুবালাকে ডেকে বলল,
-‘ওদের দেখে রেখো মা।
-‘রাখব বাবা।
-‘অনিকেত এইমাসে বাড়ি আসবে না?
রেণুবালা ব্যঙ্গ করে বলল,
-‘সে এখন সাহেব হয়েছে। বউ, জেঠু, জেঠী নিয়ে শহরে থাকছে। তাদের তো আপন মা-বাপ ভাল লাগে না।
-‘ওভাবে বলো না মা। জেঠু কত বড় চাকুরী পাইয়ে দিয়েছে ওকে। ও তো বাড়িতেও তোমাদের জন্য টাকা পাঠায়।
-‘সেই! তোমরা দুইভাই টাকা পাঠিয়েই বাপ-মায়ের সব দায়িত্ব শেষ করো।
-‘তোমার খুব ইচ্ছে করে..তাই না মা সবাইকে আগের মতো একসাথে নিয়ে থাকতে?
-‘সে করবে না? সারাজীবন একান্নবর্তী পরিবারে কাটিয়ে এসেছি। বুড়ো বয়সে একা একা ভাল লাগে না কী?
-‘একদিন তোমার মনের আশা পূরণ হবে মা।
-‘আর কবে পূরণ হবে! এক পা চিতেই তুলে দিয়ে রেখেছি!
-‘ওভাবে বলো না মা। শুনতে ভাল লাগে না। আসি কেমন? দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বাবা অনুপমকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে এলো। রাতে পৌঁছে গিয়ে ফোন দিল।
মাধু বলল,
-‘ভালো মতো পৌঁছেছো?
-‘হ্যাঁ।’
-‘খাবারগুলো গরম করে খেয়ে নাও?
-‘তুমি খেয়েছো?
মাধু বলল,
-‘তোমাকে রেখে আমি কখনো খেয়েছি?
-‘এই বদঅভ্যাস গুলো ছাড়ো মাধুসোনা। আমি যখন থাকব না। তখন খুব কষ্ট হবে।
-‘ওমা…এ কী অলক্ষুণে কথা?
-‘না মানে আমার বয়স বেশি। হিসেব মতো তোমার থেকে আগে তো আমারই মরার কথা।
-‘ছিঃ ছিঃ চুপ করো। রোজ ভগবানের কাছে বলি, আমি যেন শাঁখা, সিঁদুর নিয়ে মরতে পারি।
-‘এত ভালোবাসো আমায়?
-‘জানি না।”
-‘বলো না? কখনো তো ভালোবাসার কথা তোমার মুখ থেকে শোনা হলো না।
-‘ধেৎ..এগুলো আবার বলতে হয় না কী?
-‘একটিবার বলো প্লিজ?
অভি ঘরে এসে বলল,
-‘আমাকে ফোনটা দাও না মা? আমি বাবার সাথে কথা বলব?
মাধু ফোনটা ছেলেকে দিয়ে দিল। ছেলে বাপের সাথে কতক্ষণ গল্পগুজব করে ফোন রেখে দিল। মাধুর আর বলা হয়ে উঠল না। সে কতটা ভালোবাসে অনুপমকে। সদ্য কামড় দেওয়া বুকে মাধু হাত বুলাল। এত বয়স হলো। অথচ এখনো মানুষটার পাগলামি একবিন্দুও কমেনি।

পরদিন সকালের জলখাবার বানিয়ে, শ্বশুর শাশুড়িকে খেতে দিয়ে বাবুদেরও খেতে দিল। নিজেও এক ফাঁকে চট করে খেয়ে নিল। দুপুরের রান্নাটা সেরে পুকুরপাড় থেকে স্নান সেরে আসল মাধু। সবার দুপুরের খাওয়া হয়ে গেছে। শুধু মাধু বাদে। মাধু ভেজা কাপড় পাল্টে, মাথা ভর্তি সিঁদুর পরল। পায়ে আলতা পরার সময় আচমকা নীচ থেকে এত জোড়ে কান্নার শব্দ ভেসে এলো। মাধুর বুকের ভেতর ধক করে উঠল। ছেলেমেয়ে দুটো সাঁতার জানে না। ওদের কিছু হলো না তো? দূর আকাশে দুটো কাক কা..কা.. করতে করতে উঁড়ে গেল। মাধু তাড়াহুড়ো করে উঠতে গেল। পা লেগে আলতার শিশিখানা ভেঙে গেল। হাত ফস্কে সিঁদুরের কৌটাটা মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল। সিঁদুরের উপর দিয়ে পায়ের ছাপ ফেলে মাধু দৌঁড়ে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় শাড়ির আঁচল লুটিয়ে পরল। ঐ ওতটুকু পথ যেন ফুরায় না। দৌঁড়ে উঠানে গিয়ে দেখল। রেণুবালা চিৎকার করে কাঁদছে, বাড়িতে কত মানুষ জমে গেছে। মাধু, রেণুবালার মুখোমুখি দাঁড়াল। জলে চোখদুটো টলমল করছে। সবাই মাধুর দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে। খোলা চুল, মাথায় কাপড় নেই, সিঁথি ভর্তি সিঁদুর। পায়ে আলতা৷ এ যেন সাক্ষাৎ লক্ষ্মীপ্রতিমা। রেণুবালা আচমকা মাধুকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরল। মাধুর গালে, কপালে পাগলের মতো চুমু খেলো। কান্নার জন্য কোন কথাই বলতে পারল না। মাধুও ভয় পেয়ে ছেলেমেয়ে দুটোকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। রেণুবালা হেঁচকি তুলে সবচেয়ে ভয়ংকর খবরটা দিল। বলল,
-‘আমার বড়খোকা আর বেঁচে নেই গো বড়বৌমা…
মাধুর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল। মনে হয় কেউ বুকের ভেতরের আত্মাটা কামড়ে ধরেছে। এত ব্যথা করছে। মাধুর বিশ্বাসই হচ্ছে না। কাল রাতেও তো মানুষটার সাথে ফোনে কথা হলো। মাধু কী করবে বুঝতেই পারল না। অনুভূতি শূণ্যে হয়ে কত কষ্টে যে দমটা ছাড়ল! রেণুবালা, মাধুর সিঁথিতে হাত বুলিয়ে দিয়ে চিৎকার করে বলল,
-‘আজকের পর থেকে এই সিঁথিতে আমার বড়খোকার নামে আর কোনদিনও সিঁদুর উঠবে না বড়বৌমা। এই সিঁথিটা ধবধবে সাদাই রয়ে যাবে চিরকাল। মাধু স্তব্ধ হয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পরল। হাত-পা অসম্ভব কাঁপছে। বুকের ভেতর তীব্র ব্যথায় ভেঙে আসছে। এভাবে কতক্ষণ কাটল কে জানে। এ্যাম্বুলেন্সটা যখন লোহার গেইট পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকলো। তখন আর মাধুকে কিছুতেই ধরে রাখা গেল না। সদ্য স্বামী হারানো এক নারীর আত্মচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে গেল। মাধুকে কিছুতেই ধরে রাখা গেল না। মাধু, অনুপমকে হন্ন হয়ে খুঁজছে আর চিৎকার করে বলছে,
-‘কী হয়েছে আমার স্বামীর? আরে তোমরা কেউ কিছু বলছ না কেন?
শীতলপাটি বিছিয়ে উঠানে অনুপমের মরাদেহখানা নামানো হলো। সাদা কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকা, গলায় সাদা ফুলের মালা, বুকে গীতা, চোখে তুলসি, কপালে তিলকের ফোঁটা। মাধু, অনুপমের প্রাণহীন রক্তশূণ্য মুখখানায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিল। চোখ দিয়ে অনবরত জল পরছে। বিড়বিড় করে বলল,
-‘এরকম তো কথা ছিল না? তুমি আমায় কেন ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে? আমি এখন কী নিয়ে থাকব? শেষের কথাগুলো অনুপমের মরাদেহ জড়িয়ে ধরে বলল মাধু। সারা মুখ চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিল। কেউ টেনে হিঁচড়েও মাধুকে, অনুপমের উপর থেকে সরাতে পারছে না। মাধু কেমন পাগলামি করছে। অনুপমে গালে হাত রেখে বলল,
-‘এ্যাই তুমি উঠছ না কেন? উঠো বলছি? আমাদের ফাঁকি দিয়ে কোথায় যাবে তুমি? এবারও আমার কথা ভাববে না? বাচ্চাগুলোর কথা ভাববে না? তোমাকে ছাড়া আমি একা একা কী করে থাকব? আমাদের কার কাছে রেখে গেলা তুমি?
তোমাকে ছাড়া আমি কিন্তু একদম থাকতে পারব না। আমার কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে! বুকের ভেতর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। নিশ্বাস নিতে পারছি না।

খবর পেয়ে সব আত্মীয়-স্বজন একে একে আসতে শুরু করেছে। বড়দি এসে মাধুকে জাপ্টে ধরে হু হু করে কেঁদে দিল। মাধু কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-‘ও বড়দি…বড়দিরে মানুষটাকে উঠতে বল না? তোর কথা তো শুনে। ওকে এইভাবে শুয়ে থাকতে দেখে আমার কিন্তু একটুও ভাল লাগছে না বড়দি।
বড়দি কী বলবে? তার ছোট বোনের জীবনে এতবড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে। ভেবেই শিউরে উঠল। ঝর্ণারানী কাঁদতে কাঁদতে নাতনীকে কোলে তুলে নিল। ছোট অভিও বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাপুস নয়নে কাঁদছে। অনিকেত উঠানে গড়াগড়ি পেড়ে কাঁদছে। নিখিলেশবাবু খুব ভেঙে পরেছে। জয়ন্ত খবর পেয়ে রিধীকাকেও নিয়ে এসেছে। রিধীকা বড়দাভাইয়ের মরাদেহ দেখে ভয়ে গুটিয়ে গেল। জয়ন্ত জড়িয়ে ধরতেই কেঁদে বুক ভাসালো। এত কান্না, এত আহাজারি, এত হাহাকার যে মানুষটাকে কেন্দ্র করে। সেই মানুষটা আজ ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। শত ডাকলে বা মাথা ঠুকে মরে গেলেও মানুষটা আর সারা দেবে না, ফিরে আসবে না। অনুপমের অফিস কলিগদের কাছে এগিয়ে গেল জয়ন্ত। বলল,
-‘বড়দার কী হয়েছিল?
-‘সঠিক জানি না। তবে ওনার রিপোর্ট দেখে জানতে পেরেছি ওনি ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। ক্যান্সার পুরো মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়েছিল। আজ অফিসে গিয়েও বেশ কয়েকবার বমি করেছে। অনুপমের না কী প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছিল। হঠাৎ খিঁচুনি শুরু হয়। করুণ কণ্ঠে বলে, -‘আমার বাসার টেবিলের ড্রয়ারে রিপোর্টগুলো আছে। আমার যদি কিছু হয়ে যায়। ওগুলো আমার বাড়ির লোকদের দিয়ে দিয়েন। বলতে বলতে রাস্তায়ই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
জয়ন্ত বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই মাটির দেহখানা নিয়ে আমরা কত অহংকার করি, গর্ববোধ করি, অথচ দেহ থেকে দমটা ফুরিয়ে গেলেই সবশেষ।
জয়ন্ত, অনিকেতকে বলল,
-‘সবাই তো এসে পড়েছে। বড়দার মরাদেহ এভাবে তো ফেলে রাখা যাবে না। শ্মশাণে নিয়ে যেতে হবে।
অনিকেত চোখ মুছে উঠে পরল। কেন যে সুর করে দুটো লাইন বিড়বিড় করে গেয়ে উঠল,

“কাঁচা বাঁশের পালকিটা আজ সাজারে তোরা”
”এই রাত পোহালে হয়ে যাবে বাঁশি মরা”
”যতই ডাকো নাম ধরিয়া আর দেবে না সারা”
”এই রাত পোহালে হয়ে যাবে বাঁশি মরা”

একদিকে অনুপমের মরাদেহ জলন্ত আগুনে মটমটিয়ে পুড়ছে। অভি প্রথম বাবার মুখে নিয়ম মেনে আগুন দিল। তারপর অনুপমের শীতল হাত-পা ভেঙে দিতেই পুরো শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কয়েকজন বিধবা মহিলা মিলে মাধুর শাঁখা, পলা, সিঁথির সিঁদুর মুছে দিল। পায়ের আলতা ঘষে ঘষে উঠিয়ে দিল। ঠান্ডা জলে জোর করে চেপে ধরে একডুব দেওয়াল। তারপর গা থেকে রঙিন শাড়ি খুলে সাদা শাড়ি পরিয়ে দিল। মাত্র সাতাশ বছর বয়সে মাধু বৈধব্য বরণ করে নিল। রেণুবালাও মনে মনে পণ করল, ‘আজকের পর থেকে সে আর কোনদিনও মাধুর সামনে সিঁথিতে সিঁদুর পরবে না। চোখের সামনে সদ্য স্বামী হারানো বিধবা বউটা ঘুরে বেড়াবে আর সে তার সামনে মাথাভর্তি সিঁদুর পরে ঘুরবে। খারাপ শাশুড়ী হলেও এতটা খারাপ মা তিনি এখনো হতে পারেননি। পনেরোদিন পর অনুপমের শ্রাদ্ধ করে মাধুকে মাধুর বাবা-মা নিয়ে যেতে চাইল। মাধু স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিল। সে এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবে না। বাকিটা জীবন অনুপমের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে, বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ীর সাথে ছেলেমেয়েদুটোকে নিয়ে এই বাড়িতেই কাটিয়ে দেবে। মাধু যে মানুষটাকে কথা দিয়েছিল, ইহজনম মাধু শুধু ঐ পাষাণ, হৃদয়হীন, নিষ্ঠুর মানুষটার হয়েই থাকবে।’

(সমাপ্ত)

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ