Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"রোমান্টিক ডাক্তাররোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৮

রোমান্টিক_ডাক্তার পার্ট: ২৮

রোমান্টিক_ডাক্তার
পার্ট: ২৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

ঝাপসা চোখ দুটু মুছে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলাম কিন্তু কাব্য দরজায় দাঁড়িয়ে আছে বেরুতেই দিচ্ছে না। কাব্য’র দিকে রাগি চোখে তাকালাম ও আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো। ইচ্ছে হচ্ছে ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই কিন্তু তাল সামলাতে না পেরে যদি পরে গিয়ে ব্যথা পায়।
কাব্য: আমার ফোন ফ্লোরে কেন?
আমি: দরজা থেকে সরো।
কাব্য: আমি কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছি।
আমি: ফোনটা হাতে নাও তাহলেই বুঝতে পারবে সরো এখন দরজা থেকে।
কাব্য: কোথায় যাবে তুমি?
আমি: যেখানে খুশি।
কাব্য: আমিও যাবো তোমার সাথে।
আমি: তুমি তোমার আরশির কাছে যাও।
কাব্য: আর যদি কখনো আমার আরশি বলেছ তাহলে কিন্তু…
আমি: কি করবে হ্যাঁ? আরশির হাত ধরে রাখতে পারো দোষ হয় না, আরশি তোমার বুকে মাথা রাখলে দোষ হয় না, আরশিকে লিপ কিস করো দোষ হয় না আর আমি তোমার আরশি বললেই দোষ?
কাব্য: একটা কথা মনে রেখো সবসময় চোখে যা দেখা যায় সেটা কিন্তু সবসময় সত্যি হয় না মাঝে মাঝে মিথ্যেও হয়।
আমি: তাই বুঝি? তাহলে কি পিক গুলোও মিথ্যে?
কাব্য: কোন পিক?
আমি: নিজের ফোনে গিয়ে দেখো। (ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম এসব আর সহ্য হচ্ছে না)

ভাবির রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ালাম, কে কাঁদছে এভাবে ভাবি নয়তো? দরজা খুলাই ছিল রুমে এসে দেখি ভাবি বিছানায় শুয়ে কাঁদছে আর ভাইয়া মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে।
আমি: ভাইয়া কি হয়েছে?
ভাইয়া: কিছু নাতো।
আমি: ভাবি কাঁদছে কেন?
ভাইয়া: (নিশ্চুপ)
আমি: ভাবি কাঁদছ কেন? (ভাইয়া চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো তাহলে কি ভাবি আপু আসাতে ভয়ে কাঁদছে)
আমি: ভাবি…(জোরে ধাক্কা দেওয়াতে ভাবি আমার দিকে তাকিয়ে আমার একটা হাত চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো)
ভাবি: আমি তো সব কষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম তাহলে আরশি কেন আবার ফিরে আসলো? কি চায় ও?
আমি: ওর পাপ গুলো ওকে এখানে টেনে নিয়ে এসেছে ভাবি। চিন্তা করোনা ওর করা পাপের শাস্তি ও পাবে। (ভাবি চুপচাপ কেঁদে যাচ্ছে)
আমি: ভাবি খাবে চলো। কাল হিয়ার বিয়ে এখন আমরা যদি এভাবে যে যার মতো মন খারাপ করে থাকি তাহলে তো হিয়া কষ্ট পাবে তাই না?
ভাবি: হ্যাঁ চল।
আমি: তুমি যাও আমি আসছি।

শুভ্রার সাথে কথা বলা প্রয়োজন, যেভাবেই হউক শুভ্রাকে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আনতে হবে।
কাব্য: উফফ দেখে চলতে পারো না? (আমি রুমে ঢুকছিলাম আর কাব্য বের হচ্ছিল কিভাবে যে ধাক্কা খেলাম দুজনে)
কাব্য: মন কোথায় থাকে চোখে দেখো না? (আশ্চর্য সামান্য বিষয় নিয়ে ও এতো রেগে যাচ্ছে কেন)
আমি: আমি নাহয় দেখিনি কিন্তু তুমি দেখোনি কেন? তোমার মন কোথায় থাকে আরশির কাছে?
কাব্য: হ্যাঁ আরশির কাছেই থাকে। (ও হঠাৎ এভাবে কথা বলছে কেন? চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে কি যেন এড়িয়ে যেতে চাইছে)
কাব্য: এভাবে তাকিয়ে আছ কেন সরো আমি বেরুবো।
আমি: দাড়াও। (কাব্য চলে যাচ্ছিল হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসলাম)
কাব্য: তিলো আমার হাত ছাড়ো।
আমি: কি লুকাচ্ছ আমার থেকে?
কাব্য: কি লুকা…
আমি: এই তুমি পিক গুলো দেখনি? পিক দেখার পর তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ লজ্জা করছে না তোমার? নাকি পিক নিয়ে কথা বলতে চাও না বলেই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছ?
কাব্য: (নিশ্চুপ)
আমি: এখনো তুমি আমার থেকে লুকিয়ে রাখবে? আমি তো সব জেনেই গেছি তারপরও…
কাব্য: তিলো আমার হাতটা ছাড়ো।
আমি: এতোকিছু জানার পরও যে আমি তোমার হাত ধরে আছি এটাই তো অনেক। (কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না আমি যে ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছি)
আমি: ভালোবাসি তো তোমাকে তাই আর একটা সুযোগ দিতে চাই, আজ রাতটা তোমাকে সময় দিলাম ভাবো কি করবে তুমি। আমাকে সবকিছু বলে ওই আরশিকে নিজের জীবন থেকে বিদায় করবে নাকি আমাকে তোমার জীবন থেকে বিদায় করবে।
কাব্য: তোমাকে বিদায় করবো মানে?
আমি: দিনের পর দিন অন্য একটা মেয়ের সাথে নোংরামি করবে এসব দেখে তো আর আমি তোমার কাছে থাকতে পারবো না, হয় তুমি আরশিকে ছাড়ো নাহয় আমাকে ছাড়ো। আর হ্যাঁ আরশিকে ছাড়লেই শুধু হবে না ওকে তুমি নিজ হাতে পুলিশের কাছে তুলে দিবে নাহয় আমি তোমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো। মনে রেখো সময় মাত্র আজ রাতটুকু। (কাব্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম)

কাব্য’কে আজ একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে নাহলে আমি ওকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো, আর পারছি না এসব সহ্য করতে। একের পর এক কাহিনী ও আমার থেকে লুকিয়েই যাচ্ছে। এতো বুঝিয়েছি যে আমার থেকে কিছু লুকিয়ে রেখো না কিন্তু ও যেন অবুঝ আমার কথা বুঝেই না। আর পারছি না ইচ্ছে হচ্ছে ওই আরশিকে খুন করে নিজেই জেলে চলে যাই।
আরশি: কি ভাবছিস আমাকে খুন করবি। (সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম হুট করে আপু সামনে এসে দাঁড়ালো, আমি যে ওকে খুন করবো ভাবছি ও বুঝলো কিভাবে)
আরশি: তোর চোখে তো এতো রাগ যে মনে হচ্ছে আমাকে এখনি কাঁচা চিবিয়ে খাবি। দেখ চাইলে তুই আমাকে খুন করতেই পারিস কিন্তু আমি মারা গেলে তো তোর কাব্য বাঁচবে না।
আমি: হু…
আরশি: অবাক হচ্ছিস কেন? কাব্য আমায় ভালোবাসে তো আমি মারা গেলে কাব্য কি নিয়ে বাঁচবে তুই বল।
আমি: (নিশ্চুপ)
আরশি: দেখ আমি তোর বড় বোন তাই একটা ভালো বুদ্ধি দিচ্ছি কাব্য’কে ডিভোর্স দিয়ে আমাদের জীবন থেকে চলে যা।
আমি: তোমাকে বোন বলতে এখন আমার ঘৃণা হয় বুঝেছ। কেন যে নষ্টা মেয়েদের মতো অন্য মেয়ের স্বামীকে নিয়ে টানাটানি করছ বুঝি না। আর কি যেন বললে কাব্য’কে যেন ডিভোর্স দিয়ে চলে যাই, হাসালে শুভ্রাও এই চেষ্টা করেছিল পারেনি কারণ স্বামী স্ত্রীর বন্ধন একটি পবিত্র বন্ধন, এ বন্ধন কোনো নষ্টা মেয়ে ছিঁড়তে পারবে না। আর রইলো কাব্য কাকে বেশি ভালোবাসে, প্রমান চাও কাব্য তোমাকে নাকি আমাকে বেশি ভালোবাসে?
আরশি: হুম প্রমান হয়ে যাক।
আমি: চলো আমার সাথে।

আপুর হাত ধরে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে আসলাম। অনেক রাত হয়েছে বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে তাই প্রমাণ করাটা খুব একটা কঠিন হবে না।
আরশি: রান্নাঘরে কি করতে চাইছিস?
আমি: তুমি তোমার হাত কাটবে আমি আমার হাত কাটবো দেখবো কাব্য আমাদের চেঁচামেচি শুনে কার কাছে ছুটে আসে।
আরশি: হাহাহা এই কথা, কাব্য তো আমার কাছেই আসবে।
আমি: কাব্য তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আমি তোমাদের জীবন থেকে চলে যাবো কথা দিচ্ছি আর…
আরশি: আর কাব্য তোকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে আমি তোদের জীবন থেকে চলে যাবো কথা দিচ্ছি। (মুচকি হাসলাম কারণ আমি জানি আপু নিজের কথা রাখবে না)

আমি হাত কাটার আগেই আপু হাত কেটে কাব্য কাব্য বলে চেঁচাতে শুরু করলো। ওর নাটক দেখে আমি হাত কাটবো কি আমার তো হাসি পাচ্ছে।
আরশি: হাত কাটছিস না কেন নাকি হেরে যাবি বলে ভয় পেয়েছিস? (ফল কাটার চাকুটা নিয়ে হাতের তালুতে আস্তে একটা টান দিলাম, হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে যন্ত্রণায় চোখ দুটু বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলাম)
কাব্য: আরশি কি হয়েছে এভাবে চেঁচাচ্ছ কেন?
আরশি: দেখো না আমার হাত কেটে গেছে। (ওদের থেকে একটু দূরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ আমার হাতে কাব্য’র হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম)
কাব্য: তিলো তোমার হাত কেটেছে কিভাবে?
আমি: সামান্য কেটেছে কিছু হবে না ছাড়ো।
আরশি: কাব্য আমারো তো হাত কেটে গেছে তুমি আমাকে রেখে…
কাব্য: ব্যান্ডেজ করে নাও নাহয় আদনানকে ডেকে দিচ্ছি ও তো ডক্টর তো…
আরশি: লাগবে না আমি চাই তুমি আমার হাত ব্যান্ডেজ করে দাও। (কাব্য কিছু না বলে আমাকে কোলে তুলে নিলো। এক হাত দিয়ে কাব্য’র গলা জরিয়ে ধরে আরশির দিকে তাকিয়ে একটা চোখ টিপ দিলাম। রাগে গজগজ করা আরশির মুখটা এখন দেখার মতো হয়েছে)

কাব্য যত্ন করে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে আর আমি বসে বসে ওকে এক দৃষ্টিতে দেখছি। কাব্য আমাকে এতো ভালোবাসে তারপরও কেন যে আমার কথা শুনে না…
কাব্য: এখন বলতো হাত কাটলো কিভাবে?
আমি: কাটেনি তো আমি কেটেছি।
কাব্য: মানে?
আমি: আরশি বলেছিল তুমি নাকি ওকে বেশি ভালোবাস তাই প্রমাণ করে দিলাম তুমি যে আরশিকে নয় আমাকে বেশি ভালোবাস। (কাব্য রেগে গিয়ে আমাকে থাপ্পড় দিতে চাইলো কিন্তু হাতটা আবার নামিয়ে নিলো। আমার দুগালে ওর হাত দিয়ে চেপে ধরে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
কাব্য: আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি এইটা তোর হাত কেটে রক্ত ঝরিয়ে প্রমাণ করতে হয় নাকি আমি তো তোকে আমার নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি। শুধুমাত্র তোকে হারানোর ভয়ে আমি এতো মিথ্যে বলি আরশির কথামতো চলি। (কাব্য’র হাত দুটু জোড় করে আমার গাল থেকে সরিয়ে দিলাম। এতো শক্ত করে ধরেছিল যে এখন কথা বলতে পারছি না)
আমি: আরশির কথামতো চলো মানে? (কাব্য আমার হাপানো দেখে পানি এনে দিলো)
আমি: খাবো না পানি আগে বলো আরশির কথা মতো চ…
কাব্য: তোমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে পানিটা খেয়ে নাও। (পানি না খেলে কিছু বলবে না তাই গ্লাসটা ওর হাত থেকে এনে পানি খেয়ে নিলাম। বিছানা থেকে উঠে কাব্য’র সামনে এসে দাঁড়ালাম)
আমি: এখন বলো তুমি আরশির কথা মতো চলো কেন? আরশি কি তোমাকে কোনো কিছু নিয়ে ভয় দেখায়?
কাব্য: না এমনি বলেছি তুমি বসো এখানে। (কাব্য আমাকে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলো, ও ফ্লোরে বসে আমার কোলে মাথা রাখলো। আমার কাটা হাতটা ধরে ব্যান্ডেজ এর উপর একের পর এক চুমু খাচ্ছে)
আমি: বলবে নাতো তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
কাব্য: বলবো না কখন বললাম? সকালে বলবো এখন ঘুমিয়ে পড়ো দেখো রাত দুইটা বাজে, সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে তো।
আমি: আবার এড়িয়ে যাচ্ছ?
কাব্য: কি শুনতে চাও আমি কাকে ভালোবাসি তোমাকে নাকি আরশিকে? আমার সবটুকু ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য আর আরশির জন্য আমার মনে শুধু ঘৃণা আছে। ছাদে আমি আরশির হাত ধরিনি আরশিই আমার হাত ধরেছিল, আমি ওকে কিস করিনি ও জোর করে কিস করেছিল আর ইচ্ছে করেই আমার শার্টে লিপস্টিক লাগিয়েছিল যেন তুমি আমাকে ভুল বুঝো।
আমি: তাহলে ও যখন তোমার বুকে মাথা রেখেছিল তখন ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দাওনি কেন?
কাব্য: কারণ আরশি…(কাব্য’র ফোন বেজে উঠলো নিশ্চয় আরশি নাহয় শুভ্রা)
আমি: ফোন রিসিভ করো না আমার কাছে দাও।
কাব্য: জরুরি ফোন হতে পারে।
আমি: রিসিভ করোনা। (কাব্য আমার কথা না শুনে একটু দূরে গিয়ে ফোন রিসিভ করলো। মনে তো হচ্ছে কোনো সমস্যা হয়েছে)
কাব্য: তিলো আমাকে হসপিটালে যেতে হবে।
আমি: মানে কি তুমি তো ছুটিতে আছ।
কাব্য: ডক্টরদের কোনো ছুটি নেই বুঝেছ? ইমারজেন্সি থেকে ফোন এসেছে যেতেই হবে।
আমি: আদনানকে পাঠিয়ে দাও। (কাব্য আমার কথা না শুনেই চলে গেলো, সত্যি কি হসপিটাল থেকে ফোন এসেছিল নাকি অন্য কেউ ফোন করেছিল)

এতো রাতে কাব্য বেরিয়ে গেলো খুব টেনশন হচ্ছে, ফোন করছি ফোনটাও তো রিসিভ করছে না। আচ্ছা একবার কি শুভ্রাকে ফোন করে দেখবো হয়তো এইটা ওর কোনো ছাল। ফোনটা হাতে নিতেই দেখি আরশি ফোন করেছে, ও তো বাসায় আছে তাহলে ফোন করছে কেন?
আমি: হ্যালো।
আরশি: শুভ্রাকে ফোন করে লাভ নেই মেয়েটা নিজের মাকে হারানোর ভয়ে ভালো হয়ে গেছে।
আমি: মানে কি করেছ তুমি শুভ্রার আম্মুর সাথে?
আরশি: তেমন কিছুনা শুধু ভয় দেখিয়েছি আশা করি শুভ্রা ভয় পেয়ে কাব্য’কে ভুলে গেছে।
আমি: আর কতো নিচে নামবে তুমি?
আরশি: এখনো তো অনেক কিছু বাকি। শহরের বাইরে কাব্য’র যে বাড়িটা আছে ওখানে চলে আয় তাহলে বুঝতে পারবি কাব্য কার ফোন পেয়ে ছুটে এসেছে।
আমি: কাব্য তো হসপিটালে…
আরশি: বোকা মেয়ে কাব্য তো আমার কাছে আছে। তোর সামনে কাব্য আমাকে আদর করতে পারছে না আমি হাত কেটে ফেলেছি তাও আমার সেবা করতে পারছে না তাইতো তোকে মিথ্যে বলে এই বাসায় চলে এসেছে বিশ্বাস নাহলে আমার রুমে গিয়ে দেখ আমি নেই।
আমি: বিশ্বাস করিনা আমি।
আরশি: তুই চেঁচালেই তো আর আমার প্রতি কাব্য’র ভালোবাসা মিথ্যে হয়ে যাবে না। (ফোনটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেললাম। দৌড়ে আপুর রুমের দিকে আসলাম)

আপু তো রুমে নেই তাহলে কি সত্যি ওরা ওই বাসায় আছে? এতো রাতে আমি যাবো কিভাবে? অয়নের রুমে এসে ওকে ডেকে তুললাম আমাকে ওই বাসায় যেতেই হবে।

গাড়িতে বসে আছি অয়ন ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালাচ্ছে।
আমি: একটু তাড়াতাড়ি চালাও না।
অয়ন: কোথায় যাবো সেটাই তো বলনি।
আমি: শহরের বাইরে যে তোমাদের বাড়িটা আছে ওখানে।
অয়ন: এতো রাতে ওই বাসায় যাবে কেন?
আমি: চুপচাপ চলো তো।
অয়ন: ঠিক আছে।

বাসার মেইন দরজা তো খুলা তাহলে কি সত্যি… কাব্য’র রুমটা তো আমি চিনি এই বাসায়ই তো আমি প্রথম এসেছিলাম, কাব্য’র রুমের দিকে দৌড়ে আসলাম। রুমের দরজাটা খুলাই ছিল ভিতরে একনজর তাকিয়ে অয়নের দিকে তাকালাম, ও লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেছে।
আরশি মিথ্যে বলেনি কাব্য’ই আমাকে মিথ্যে বলে এখানে এসেছে আর আরশির সাথে আবারো নোংরামিতে মেতে উঠেছে।
আমি: অয়ন তোমার ফোনটা দাও।
অয়ন: এখান থেকে চলো ভাবি।
আমি: কেন নিজের ভাইকে অন্য মেয়ের সাথে বিছানায় দেখতে লজ্জা লাগছে? আগেও তো ওদের সম্পর্ক এমন ছিল আর সেটা তোমরা জানতে কিন্তু আমার থেকে সবাই লুকিয়ে রেখেছ।
অয়ন: আমরা ভেবেছিলাম ভাইয়া তোমাকে পেয়ে ভালো হয়ে গেছে কিন্তু…
আমি: ফোনটা দাও।
অয়ন: ফোন দিয়ে কি করবে?
আমি: ফোনটা দাও বলছি। (আমি চেঁচিয়ে উঠাতে অয়ন মাথা নিচু করে ফোনটা আমার হাতে দিলো। কিছু পিক তুলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম)

গাড়িতে বসে আছি, দূরের মসজিদ থেকে আযানের সূর ভেসে আসছে। এখন আর কান্নাও পাচ্ছে না, কাব্য’র একের পর এক মিথ্যে আমাকে পাথর বানিয়ে দিয়েছে। অয়ন অপরাধীর মতো চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে।
আমি: অয়ন এর পরও কি তুমি চাইবে আমি এই বাসায় থাকি?
অয়ন: ভাবি আমাদের ক্ষমা করে দিও, আমরা ভেবেছিলাম ভাইয়া ভালো হয়ে গেছে তাই সবকিছু লুকিয়ে রেখেছিলাম।
আমি: ছোট ভাই হিসেবে একটা হেল্প করবে বোনকে?
অয়ন: বলো কি করতে হবে।
আমি: বাসায় আর ফিরে যেতে চাই না আমাকে এখানেই নামিয়ে দাও।
অয়ন: ভাবি সকাল হলে চলে যেও আটকাবো না প্লিজ এখন পাগলামি করো না।
আমি: ভোরের আলো ফুটতে বেশি সময় নেই আমি ঠিক চলে যেতে পারবো।
অয়ন: কিন্তু তুমি যাবে কোথায়?
আমি: তাতো জানিনা কিন্তু ওই বাসায় আর ফিরে যেতে চাই না।
অয়ন: আমিও চাই না ভাইয়ার মতো মানুষের সাথে তুমি আর থাকো কিন্তু তাই বলে…
আমি: বাসায় সবাই তোমাকে অনেক প্রশ্ন করবে কিন্তু তোমার কোনো উত্তর দিতে হবে না শুধু ফোনে থাকা পিক গুলো ওদের দেখিয়ে দিও। গাড়ি থামাও এখন।
অয়ন: হুম কিন্তু আমিও যাবো তোমার সাথে।
আমি: না আজ হিয়ার বিয়ে আমি চাই বিয়েটা ভালোভাবে মিটে যাক আর সে দায়িত্ব আমি তোমাকে দিলাম।
অয়ন: কিন্তু ভাবি…
আমি: তোমার সাথে আমি যোগাযোগ করবো চলি। (অয়নকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাটা শুরু করলাম। জানিনা কোথায় যাবো কিন্তু পিছন ফিরে আর তাকাতে চাই না)

চারদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে, হাটতে হাটতে কোথায় চলে এসেছি জানিনা। কাব্য আমাকে এভাবে ঠকালো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। রাতেও তো ও আমাকেই শুধু ভালোবাসে বললো আর কিছুক্ষণ পর আরশির সাথে ছিঃ… যদি নিজেকে শেষ করে দিতে পারতাম তাহলেই হয়তো ভালো হতো।

রাস্তার মাঝখান দিয়ে এলোমেলো পায়ে হাটছিলাম হঠাৎ কোথা থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আমাকে। নিজেকে শেষ করে দেয়ার ইচ্ছাটা হয়তো পূরণ হওয়ার সময় হয়ে গেছে। চারপাশে রক্তের ছড়াছড়ি দেখে মাথা ঘুরতে শুরু করলো। চোখে সবকিছু অন্ধকার দেখছি, কাব্য’র মুখটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সাথে ভেসে উঠছে আরশির অর্ধনগ্ন চেহারাটা…

চলবে?

 

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ