গল্পঃ #রাঙা_বউ ( দ্বিতীয় পর্ব )
নিলয় ঘরে ঢুকতেই পেছন থেকে তিথি ঝাপটে ধরলো শায়েস্তা করার জন্য। উল্টো নিলয় বিদ্যুৎ গতিতে দরজার কপাটের সাথে চেপে ধরে আবারও তিথির ঠোঁটে লম্বা একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দিয়ে বললো– খুব খিদে পেয়েছে তাই আপাতত তোর চুমু খেয়ে নিলাম, একদম কোনো সাউন্ড করবিনা।
তিথি নিলয়ের পিঠে খামচি মেরে বললো– কুত্তা তোরে আমি খুন করবো বলে দিলাম। আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।
নিলয় শান্ত মেজাজে বললো,– মাথার স্ক্রু কি সব ঢিলা হইয়া গেছে নাকি তিথি?! এখন তো রাত, তোর কাছে দিন মনে হয় কোন হিসেবে, বুঝছি তোরে পাবনা পাঠাতে হবে।
তিথি ক্ষেপে গিয়ে বললো,– আজ যদি তোর ঘাড় না মটকাই আমি, তাইলে আমি তিথি না।
নিলয় মুচকি হেসে বললো,– তুই যে ডাইনি, ঝগড়াটি, তা তো জানতাম, পেত্নীর খাতায় নাম লেখালি কবে আবার।
নিলয়ের কথা শেষ হতে না হতেই নিলয়ের পিঠে ধড়াম করে কিল বসিয়ে দিলো তিথি।
নিলয় নিজের পিঠ ডলতে ডলতে বললো,– ভাবছিলাম তোর আব্বার যেহেতু কামাই খাই, কৃতজ্ঞ থাকমু, কিন্তু যা খাই তার চেয়ে বেশী উসুল করিস তুই কিল থাপ্পড় দিয়ে। এজনমে আর কৃতজ্ঞ থাকা হইলো না আমার। সবকিছু জেনেশুনে তুই কোনদিন অকৃতজ্ঞ বলিস না আবার।
তিথি ভ্রু কুঁচকে বললো,– কথার প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করিসনা নিলয়, তুই এখন দশবার কান ধরে ওঠবস করবি, নাইলে তোর খবর আছে।
নিলয় শান্ত মেজাজে বললো,– আচ্ছা আমার সামনে এসে দাড়া, আমি ওঠবস করবো তাহলে।
তিথি ঘুরে সামনে এসে দাড়ালো, নিলয় তিথির কানদুটো ধরে বললো,– চল এবার আমার সাথে সাথে ওঠবস কর।
তিথি ক্ষেপে গিয়ে বললো,– শয়তান আমি আমার কান ধরতে বলিনি, তোর কান ধরে তুই ওঠবস করবি হারামি।
: সেটা তো আগে বলিসনি যে কার কান ধরে ওঠবস করবো। এখন চিল্লাস ক্যান?
: ও তুমি তো ফিডার খাওয়া বাবু, তোমাকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে আমার, বুঝেশুনে না বোঝার ভান।
: আমি ফিডার খাবো ক্যান, বিয়ে করলে এতদিনে আমার বাচ্চাকাচ্চা ফিডার খাইতো। কিন্তু তোর যে অবস্থা, আমার মনে হয় তোরে ফিডার খাওয়ানো উচিৎ।
: বেশি বুঝবি না নিলয়ের বাচ্চা, তোরে কান ধরতে বলছি তুই কান ধরবি।
: আমার মনে চায় কি জানিস তিথি?
: তোর কি মনে চায় আমি কিকরে জানবো, আমি কি জ্যোতিষী নাকি?!
: মনে চায় তোর কানের নিচে একটা দিতে।
কানের নিচে একটা দেবার কথা শুনে তিথি আরও রেগে গিয়ে দুই হাতে নিলয়ের গলা চেপে দিয়ে বললো,– কানের নিচে একটা দিবি মানে, আমি তোর কানের নিচে দুইটা থাপ্পড় দিমু।
নিলয় হেসে ফেলে বললো,– কানের নিচে মানে গালে, গালে কি শুধু থাপ্পড়ই দেয়া যায়, অন্য কিছু দেয়া যায়না?
তিথি অবাক হয়ে বললো,– মানে! অন্যকিছু কি?
নিলয় বিরক্তির ভাব ধরে বললো,– তিথি সর যা, রুমে গিয়ে ফিডার খা, আমার ক্ষুধা লাগছে ভাত খামু।
তিথি সামনে এগিয়ে নিলয়ের দুই পায়ের ওপর পা রেখে দাড়িয়ে নিলয়ের চোখে চোখ রেখে বললো,– কানে না ধরা পর্যন্ত এক পা ও সামনে যাওয়া হবেনা, খাওয়া হবেনা, ঘুম হবেনা। কিচ্ছু হবেনা।
নিলয় মুচকি হেসে পাঁজাকোলা করে তিথিকে কোলে তুলে বললো,– এবার কি করবি? এবার তোর মন না যাইতে চাইলেও দেহ যাবে আমি যেদিকে যাবো সেদিকে।
তিথি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। আজকের এই অনুভূতি জীবনে আর কোনদিন অনুভব হয়নি তিথির। অন্য রকম এক ভয় ও আনন্দের মিশ্র অনুভুতিতে খেই হারিয়ে ফেলেছে তিথি।
তিথি কোলে থাকা অবস্থায় নিলয় বললো,– দাড়া, আজকে তোর এক রাত কি আমার এক রাত।
তিথি অবাক হয়ে বললো,– মানে?
: মানে আবার কী, সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে?
: হুম।
: খুব ভালো, আজকে আমার হাত থেকে কেউ তোকে বাচাতে পারবে না তিথি, আজ একটা কিছু করেই ছাড়বো।
: একটা কিছু মানে?
: একটু পরেই টের পাবি।
নিলয়ের হাবভাব দেখে তিথির কেমন ভয় ভয় লাগছে। এরকম তো আগে কখনও করেনি নিলয়, আজ হঠাৎ কি হলো!
নিলয়ের কোলে থাকা অবস্থায় তিথি মোড়ামুড়ি শুরু করে দিয়ে বললো,– ভাইয়া ছাড় আমারে বলছি, জলদি ছেড়ে দে।
নিলয় খিলখিল করে হেসে বললো,– চুপ থাক, হাতির মতো ভারী, সারাদিন শুধু মুখ চলতেই থাকে, কখনও খাবার সময়, কখনও ঝগড়া করার সময়।
: ভাইয়া তুই ছাড়বি আমারে, নাকি সবাইকে ডেকে তুলবো?
: তোল, তুই এখনও এখানে কেন, ঘুমাসনি কেন সেই জবাব কে দেবে সবার কাছে?
: ভাইয়া ভালো হবেনা কিন্তু।
: ভালো যে হবেনা সেটা তো আগেই বলছি, চুপ একদম চুপ।
নিলয় তিথিকে সেভাবে কোলে করে ডাইনিং রুমে এসে কোল থেকে নামিয়ে চেয়ারে বসিয়ে বললো,– নে এবার ভাত বেড়ে দে, ক্ষুধা লাগছে খুব।
তিথি বললো,– এহ, আমি যেন ওনার বিয়ে করা বউ, ভাত বেড়ে দেবো! আর একটু আগে কিসব আবোলতাবোল বলছিলি বল, নইলে কালকে সবার কাছে বলে দেবো।
নিলয় শান্ত মেজাজে বললো,– তিথি এখন তুই ছোট নেই, এতটা কাছাকাছি আসা ঠিক না, সংযত হয়ে চলা উচিৎ। ওগুলো তোকে ভয় দেখানোর জন্য বলছি যাতে আমার ধারেকাছে কম আসিস।
তিথি বললো,– ভাই এতকিছু বুঝিনা, কান ধরতে বলছি কান ধরো।
নিলয় বললো– ধরবোনা কান, যায়ও যদি প্রাণ।
তিথি ভ্রু কুঁচকে বললো– তাহলে আর ভাত খেতে দিবনা আমার এক কথা।
নিলয় উঠে দাড়িয়ে আচ্ছা খাবনা বলে খপকরে থিতিকে পাজাকোলা করে কোলে তুলে সোজা নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তিথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে। নিলয় তিথির ওড়না দিয়ে তিথির দুই হাত বেঁধে তিথিকে নিলয়ের খাটে শুইয়ে তারপর গামছা দিয়ে তিথির দুই পা বাঁধলো।
তিথি রাগে গজগজ করতে করতে বললো– ভাইয়া বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু, আমি এখন চিৎকার করে সবাইকে ডাকবো কিন্তু।
নিলয় বললো– ডাক এক্ষুনি ডাক, এই অবস্থায় দেখলে আমাকে তোদের বাড়ি থেকে চিরবিদায় করবে। আর কোনদিনও এ বাড়িতে ঢুকতে পারবোনা। তুই তো সেটাই চাচ্ছিস। ডাক তাহলে।
তিথি একদম চুপ।
কিক মেরে বিছানার উপর থেকে কোলবালিশ ফেলে দিয়ে তিথির গায়ে পা রেখে শুয়ে নিলয় বললো– আজ রাতে তুই আমার কোলবালিশ আমার ভবিষ্যত রাঙা বউ। চুপচাপ কোলবালিশের মতো পড়ে থাক।
রাগে তিথির শরীর গজগজ করছে, হাতের বাঁধন খোলার জন্য খুব মোড়ামুড়ি করছে। এটা দেখে নিলয় তিথিকে টেনে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে বললো– কোলবালিশ কিন্তু এভাবেও বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি, হবি আমার কোলবালিশ?
এই প্রথম বুকে বুক রাখা অবস্থায় তিথি কারো হৃৎস্পন্দন অনুভব করছে। তিথির শরীর চাইছে নিলয় এভাবেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখুক বুকের মাঝে। কিন্ত সেটা প্রকাশ করছে না লজ্জায়।
নিলয় তিথির ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে বললো– কি হবি আমার কোলবালিশ বলনা?
নিলয়ের ঠোঁটের কম্পন তিথির ঠোঁট ছুয়ে শরীরে অন্যরকম এক ভালোলাগার অনুভূতির বন্য বইয়ে দিচ্ছে। অন্যরকম এক ভালোলাগার উত্তেজনায় তিথির শরীর কাঁপছে।
তিথি নিলয়কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো– ভাইয়া সরো, আর না। খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে। আমি এক্ষুনি গিয়ে সবাইকে বলে দিবো, অনেক সহ্য করছি।
নিলয় তিথির হাতে পায়ের বাধন খুলে দিয়ে বললো– যা গিয়ে সবাইকে বল, আমিও আমার কাপড়চোপড় গোচাচ্ছি।
কথা শেষে নিলয় আলনা থেকে দুটো শার্ট নামিয়ে ভাজ করতে শুরু করলো।
তিথি কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে দাঁত কটমট করে বললো– তোর অনেক নাটক সহ্য করছি নিলয়ের বাচ্চা, নাটক বন্ধ করে জলদি ভাত খেতে চল।
নিলয়ের খাওয়াদাওয়া শেষে মিষ্টি হেসে তিথি বললো– এবার অন্তত কান ধরে উঠবস কর, আমার জেদটা পুরণ হোক।
নিলয় বিরক্ত হয়ে বললো,– তিথি একই কথা বারবার, তুই আসলেই একটা ঘাড়ত্যাড়া।
‘কি আমি ঘাড়ত্যাড়া’ বলে তিথি উঠে গিয়ে নিলয়ের গলা চেপে ধরতেই ধাক্কা লেগে নিলয়ের চেয়ারের পায়া স্লিপ করে চিৎ হয়ে পড়লো নিলয়, তিথিও ব্যালেন্স হারিয়ে নিলয়ের বুকের ওপর পড়লো।
হঠাৎ দরজার দিকে চোখ পড়তেই নিলয়ের বুকটা ধক করে উঠলো, রুমের দরজায় দাড়িয়ে আছে তিথির দাদী। নিলয় চিন্তায় পড়ে গেল দাদী আবার অন্য কিছু মনে করেনি তো…
চলবে…
নিলয় আহমেদ।