Monday, October 6, 2025







রঙ তুলির প্রেয়সী ২৩

রঙ তুলির প্রেয়সী
২৩.

সুন্দর করে গায়েহলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে ছাঁদে। ফাহি আর রিয়াদ বসে আছে। কিছুক্ষণ পর পর একে একে এসে ওদের পাশে বসছে, ফটো তুলছে, হলুদ দিয়ে যাচ্ছে। আদিয়া এদিক ওদিক হাঁটছে, এর ওর সাথে কথা বলছে। তার বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। একটু দূরে জাওয়াদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে নাহিদ আর রাকিব। কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে তিনজন। কথার ফাঁকে ফাঁকে আদিয়ার দিকে বারবার তাকাচ্ছে নাহিদ। জাওয়াদের পাশে দাঁড়িয়ে কোন সাহসে এভাবে তাকায় ভেবে পায়না আদিয়া। ভয়ে তার হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। সবার অগোচরে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে নিচে নেমে গেল সে। মুনতাহা বলেছেন তিথিকে নিয়ে আসতে। এতো মেহমানদের মাঝে হয়তো মেয়েটার অস্বস্তি হচ্ছে, তাই আসছেনা। নিচে নেমে তিথির ঘরে যেতে গিয়ে আদিয়া দেখলো, নুহা তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। আদিয়া এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘এই নুহাপু। সবুজ পরার কথা ছিলো তো!’
‘কেন এটায় কী সমস্যা?’, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো নুহা।
‘সমস্যা না, সুন্দর লাগছে তোমাকে খুব। তবে আমরা সবাই তো এক কালার পরার কথা ছিলো। আমি, তিথি, তুমি…’
হাত উঁচিয়ে আদিয়াকে চুপ করালো নুহা। তারপর হেসে বললো, ‘আদিয়া, তুই নিজের ক্লাস ভুলে গেলেও আমিতো ভুলতে পারবোনা। যদি শুধুই তোর সাথে মেলানোর হতো তাহলে অবশ্যই আমি সবুজ পরতাম। কিন্তু ফালতু কারো সাথে মেলানোর ইচ্ছা নেই।’
বলেই গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে প্রস্থান করলো নুহা। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আদিয়ার ভেতর থেকে। মেয়েটা কেমন উগ্র হয়ে গেছে। হবেই বা না কেন? ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত শাসন পায়নি। ভাবতে ভাবতে তিথির ঘরের দিকে গেল আদিয়া।

আয়নার সামনে বসে কানে ঝুমকো পরছিলো তিথি। আদিয়াকে আয়নায় দেখে পেছনে তাকালো। আদিয়া চোখ বড় বড় করে বললো, ‘এখনও রেডি হসনি?’
‘কই? হলাম তো।’
‘কই হলি? মেকাপ করিসনি এখনও।’
‘মেকাপ করবোনা।’
‘হ্যাঁ?’, কপাল কুঁচকে তাকালো আদিয়া।
‘মেকাপ করলে ব্রণ হয় আমার। লাল লিপস্টিক দেবো শুধু।’, বলে লিপস্টিক দিলো তিথি।
আদিয়া হেসে হেসে বললো, ‘তুই ধলা ডিম। মেকাপ ছাড়াও চোখে লাগে। আর এভাবে বুলবুলির পুটকি লাল করছো, এমনিতেই যে আজ মাথা ঘুরায় দিবি বুঝতেই পারছি।’
তিথি উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘কার মাথা?’
‘আমি বলবো?’ আদিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো।
তিথি হাসলো। তারপর বললো, ‘সুয়াইপ হয়ে গেল। তুই বেশরম হয়ে যাচ্ছিস, আর আমি শর্মিন্দা হয়ে যাচ্ছি।’
আদিয়া সেকথা কানে না নিয়ে বললো, ‘তোকে সুন্দর লাগছে তিথি। খুব বেশি। একটা অনুরোধ করি?’
‘কী?’
‘চুলগুলো ছেড়ে রাখ প্লিজ। বাঁধিস না।’
তিথি লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো, ‘রাখবো, ভেবেই রেখেছি।’

টুনি এসে তিথির ঘরে উঁকি দিয়ে বললো, ‘আফা, আপনারে উপরে ডাকতেছে।’
‘আমারে?’ জিজ্ঞেস করলো আদিয়া।
‘দুইজনরেই।’
‘তাহলে শুধু আপনেরে বললি কেন? আপনাদের বলবি।’
টুনি মাথা নাড়ালো। তারপর তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আপনেরে খুব গুর্জাস লাগতেছে আফা।’
‘কী? বুঝিনি, টুনি।’, জিজ্ঞেস করলো তিথি।
‘আরে আপা, গুর্জাস। মানে ঐযে, গুর্জাস।’
‘গর্জিয়াস।’, তিথির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো আদিয়া। তিথি হেসে দিলো। তারপর টুনির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘থ্যাঙ্কিউ, টুনি।’
‘ইউর অলকাম আফা।’, হেসে হেসে বললো টুনি।
‘ঠিক আছে চল চল।’, তাড়া দিলো আদিয়া।
________
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
নাজিম হোসেন আর মনিরা বেগম বসে আছেন কোনো এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের সাথে। এটা সেটা নিয়ে গল্প করছিলেন। এমন সময় নুহা এসে দাঁড়ালো ওদের পাশে। তারপর বললো, ‘মা, বাবা। আমার কিছু কথা আছে তোমাদের সাথে।’
‘বল না।’ বললেন মনিরা।
নুহা নাজিম হোসেনের পাশে বসা পুরুষের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘পারসোনাল।’
লোকটা হয়তো কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলো, আর নয়তো অপমানিত। সে ‘আচ্ছা, আমি আসছি’ বলেই চলে গেল সেখান থেকে। নাজিম হোসেন নুহাকে তার পাশে বসিয়ে আদুরে গলায় বললেন, ‘এভাবে বলতে নেই, মা। উনি কী মনে করলেন বলো তো?’
‘হোয়াটএভার। যায় আসে না কিছুই।’
‘এটা কেমন ব্যবহার, নুহা…’ মনিরা বেগম কিছু বলতে নিতেই নাজিম হোসেন হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলেন উনাকে। নুহা বললো, ‘আমার ব্যাপারটা কতটুকু দেখলে?’
নাজিম হোসেন আর মনিরা বেগম একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। মনিরা বেগম বললেন, ‘তার আগে বল তো, সত্যি তোদের মাঝে সম্পর্ক আছে?’
নুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, ‘না। তবে আমি ওকে পছন্দ করি।’
‘জাওয়াদ করে?’, জিজ্ঞেস করলেন নাজিম।
‘জানিনা। না করার কী আছে? তোমরা খালামণির সাথে কথা বলো।’, মাথা ঝাঁকিয়ে বললো নুহা।
‘আচ্ছা আচ্ছা। রিয়াদের বিয়েটা শেষ হতে দে।’, বললেন মনিরা।

চাঁনতারা বেগম পেছনে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন সব। তিনি এগিয়ে গিয়ে মনিরাকে বললেন, ‘একটু আমার সাথে আয় তো। নিচে ঘরে দিয়ে আসবি আমাকে। শরীরটা ভালো লাগছেনা।’
‘কেন মা? কী হয়েছে?’, চিন্তিত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন মনিরা। নাজিম হোসেন বললেন, ‘এসব লাইটিং, মিউজিক, এসবে হয়তো খারাপ লাগছে। যাও মাকে ঘরে নিয়ে যাও।’
মনিরা চাঁনতারা বেগমকে ধরে ধরে নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

সিঁড়ির কাছে যেতেই জাওয়াদের মুখোমুখি হয়ে গেলেন উনারা। জাওয়াদ চাঁনতারা বেগমের এক বাহুতে ধরে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী ব্যাপার? কী হয়েছে?’
‘কিছু না। এসব এতো লাইটিং, মিউজিকে হয়তো সমস্যা হচ্ছে। তাই নিচে নিয়ে যাচ্ছি।’, বললেন মনিরা।
‘নিচে তো কেউ নেই। নানু একা ওখানে কী করবেন?’
‘আমি আছি। আমারও এখানে খুব একটা ভালো লাগছেনা।’
জাওয়াদ কিছু বলতে যাবে তখনই দেখলো আদিয়ার সাথে তিথি সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসছে। গলার কথা যেনো গলাতেই আটকে গেল। সে ঢোঁক গিলে আস্তে আস্তে বললো, ‘আচ্ছা, যাও।’
কথাটা বলার সময় জাওয়াদের দৃষ্টি ছিলো তিথির দিকে। তিথি আদিয়ার সাথে গল্প করতে করতে আসছিলো। চাঁনতারা বেগম জাওয়াদের দৃষ্টি দেখে হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন কিছু। তিনি হাসতে হাসতে মনিরার সাথে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলেন। তিথির কাছে যেতেই তিথিকে ধরে দাঁড় করালেন। তারপর কপালে চুমু খেয়ে বললেন, ‘মিষ্টি, মিষ্টি লাগছে তোকে।’
‘আর আমাকে?’, কোমরে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো আদিয়া।
‘তোকেও।’ বলে হাসলেন চাঁনতারা বেগম। তিথিও হাসলো, লজ্জারাঙা হাসি। মনিরা বেগম কিছু বললেন না। একটা রঙহীন হাসি দিয়ে চাঁনতারা বেগমকে নিয়ে নিচে চলে গেলেন।

ঘরে গিয়ে আস্তে আস্তে বিছানায় শুয়ে পড়লেন চাঁনতারা বেগম। তারপর মনিরা বেগমকে আস্তে করে ডাকলেন, ‘মনিরা।’
‘হ্যাঁ, মা।’
‘চোখের সামনে যা কিছু দেখছিস, সবই সত্যি। দ্বিধা রাখিসনা ভেতরে। দু’বছর পর আমি আবার জাওয়াদের মুখে সেই হাসিটা দেখেছি। আমি চাইনা এই হাসি আবার ফিকে হোক।’
মনিরা বেগম কিছু বললেন না। চুপ করে বসে থাকলেন। চাঁনতারা আবার বললেন, ‘ছেলেমেয়েদের ছোট থেকে শাসন করতে হয়। ভালো মন্দ বুঝাতে হয়। সবসময় যা চায়, তাই দিয়ে দিতে হয়না। অবান্তর কিছু চাইলে সেটা যে বেদরকারি, এটা বুঝাতে হয়। মেয়েটাকে আহ্লাদে বড় করেছিস। যা চেয়েছে তাই দিয়েছিস। ভেবে দেখেছিস একবারো? যদি কোনোদিন চাওয়ার জিনিসটা না পায়, তাহলে কী করবে? তোর মেয়েটা অনেক জেদি মনিরা। আমার নাতি নাতনিদের মাঝে আমার নুহাটা খুব বেশিই জেদি। তাকে বুঝিয়ে দিস। সবকিছু জোর করে পাওয়া গেলেও, ভালোবাসা জোর করে পাওয়া যায়না। ওটা ভাগ্যের ব্যাপার। ভাগ্যে থাকলে তবেই পাওয়া যায়।’
মনিরা বেগমের বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। মনে পড়ে গেল নুহার ছোটবেলার কথা। ছোটবেলায়, যখন নুহা ক্লাস ফাইভে পড়তো তখন জেদ ধরেছিলো, তার মোবাইল চাই। মনিরা বেগম ধমক দিয়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর নুহার ঘর থেকে চিৎকারের শব্দ ভেসে এসেছিলো। দৌড়ে গিয়ে দেখলেন, নুহা দেয়ালে মাথা ঠুকছে আর জোরে জোরে চিৎকার করছে। একমাত্র মেয়ে, দু’চোখের মণিকে এই অবস্থায় দেখে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন তিনি সেদিন। এরপর থেকে নুহা যা চায়, তাই দিতেন। নাজিম হোসেন তো মেয়ে বলতেই অজ্ঞান। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মনিরা। কী করবেন বুঝতে পারছেন না কিছুই।
_________

তিথি ফাহি আর রিয়াদকে হলুদ লাগিয়ে স্টেজ থেকে নেমে আসার সময় জাওয়াদের চোখে চোখ পড়লো। জাওয়াদের চাহনি দেখে লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে মাথা নামিয়ে নিলো সে। জাওয়াদের পাশে রাকিব দাঁড়িয়ে ছিলো। সে তিথির দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো, ‘তোর ভাগ্য ভালো। নাহলে এইবার আমি এই মেয়েটাকেই পটাতাম।’
ঝট করে রাকিবের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকালো জাওয়াদ। রাকিব মিনমিনিয়ে বললো, ‘রিল্যাক্স, পটাচ্ছিনা তো।’
জাওয়াদ কিছু বললোনা। রাকিব আবার বললো, ‘তোর এক্সের মতো দেখতে।’
‘মাহি আমার এক্স না। আমি মাহিকে ভালোবাসতাম, ভালোবাসি। আর ভবিষ্যতেও বাসবো।’, শীতল কণ্ঠে বললো জাওয়াদ।
রাকিব অবাক হলো। বললো, ‘হ্যাঁ? কী বলিস? তাহলে বলছিস যে তিথিকে…’
‘তিথিকেও বাসি।’
‘মানে?’
‘আমি দুজনকেই ভালোবাসি। দুজনেই আমার ভালোবাসা।’, বলেই সেখান থেকে হেঁটে চলে গেল জাওয়াদ। রাকিব হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো।

জাওয়াদ হেঁটে এসে আঞ্জুমান আর মেহেরুনের পাশে দাঁড়ালো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘মামাদের দেখছিনা যে?’
‘তোর বাবার সাথে। কালকের জন্য সব ঠিক আছে কিনা দেখছেন।’, বললেন মেহেরুন।
‘ও, ছোট মামানি, সাহিল কোথায়? নাচবে বলেছিলো।’
‘জ্বর এসে গেছে ওর। ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসেছি। আর ওর কোন বন্ধুর আসার কথা ছিলো, আসেনি কী একটা সমস্যার কারণে।’, চিন্তিত মুখে বললেন আঞ্জুমান।
জাওয়াদ আফসোসের স্বরে বললো, ‘আহারে, কতো আশা করেছিলো নাচবে।’

মুনতাহা ব্যস্ত ভঙ্গিতে জাওয়াদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘তুই আংটি এনেছিস না? নিয়ে আয়, এনে আমার কাছে দে তো।’
‘এখন কী করবে? ওটার দরকার তো কালকে।’
‘এখন এনে আমার কাছে দে তো। কাল যখন দরকার তখন তোকে পাবো কি না।’
‘উফ, মা! দিচ্ছি। আগে আমার ভাইটারে হলুদ লাগিয়ে আসি।’, বলে স্টেজের দিকে গেল জাওয়াদ। মুনতাহা গিয়ে আদিয়া আর তিথির পাশে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘এই আদিয়া, যা তো টেবিলের ওপর থেকে হলুদের বড় বাটি টা সরিয়ে দে। নিচে রেখে আয়। গিজগিজ করছে টেবিলটা।’
‘তি-তিথি যাক? আমার এখানে থাকা দরকার। একটু পর পর ডাক পড়ে।’
‘যেকোনো একজন গেলেই হবে।’, বলে সেখান থেকে প্রস্থান করলেন মুনতাহা। তিথি আদিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। আদিয়া মুখ ভেংচি দিলো। তিথি বললো, ‘আহারে…’
‘বেশি মজা লাগছে না? আমার অবস্থায় থাকলে বুঝতি। একটাবার কথা বলারও সুযোগ নাই চোখে চোখে চাওয়া ছাড়া।’
তিথি খিলখিল করে হেসে উঠলো। আদিয়া চোখ কটমট করে তাকালো।

জাওয়াদ স্টেজের সামনে গিয়ে রাকিব আর নাহিদকে ইশারা দিলো তার কাছে আসার জন্য। তারা দুজনে এসে রিয়াদ আর ফাহির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো যাতে কেউ কিছু না দেখে। ক্যামেরাম্যান কিছু বলতেই জাওয়াদ বললো, ‘পাঁচ মিনিট।’ তারপর রিয়াদের গালে একটু হলুদ ছুঁইয়ে বললো, ‘রিয়াদ একটু ডানদিকে সরে আয় তো।’
‘কেন?’
‘প্রশ্ন করতে বলেছি? আর ফাহি বা’দিকে সর।’
ফাহি একটু অস্বস্তি বোধ করছিলো। শুরু থেকেই লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে সে। আস্তে আস্তে বা’দিকে সরলো। জাওয়াদ বিরক্তির স্বরে বললো, ‘এই এদের নিয়ে পারিনা। ধুর।’ বলেই রিয়াদ আর ফাহির মাথা ধরে হুট করে রিয়াদের গালের সাথে ফাহির গাল লাগিয়ে দিলো জাওয়াদ। রিয়াদের গাল থেকে হলুদ দিয়ে ফাহির গালে লাগলো। কিছুক্ষণের জন্য ফাহির মনে হলো সে বরফ হয়ে গেছে। লজ্জায় ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো কান। জাওয়াদ হেসে হেসে স্টেজ থেকে নামতে নামতে বললো, ‘জাওয়াদ স্টাইল হলুদ লাগিয়ে দিলাম।’
নাহিদ আর রাকবও হাসতে হাসতে নেমে গেল। রিয়াদ আড়চোখে একবার তাকালো ফাহির দিকে। তারপর ঠোঁট টিপে হাসলো। কোনোদিন তো খেয়াল করেনি, ফাহিকে লজ্জা পেলে দারুণ দেখায়।
_________

তিথি হলুদের বাটিটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলো, রেখে আসার জন্য। জাওয়াদের ঘরের সামনে আসতে কেউ একজন তাকে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ঘরের ভেতর নিয়ে নিলো। হাতের বাটিটা পড়ে যেতে গিয়েও পড়লোনা। ধাতস্থ হয়ে দেখলো তিথি, জাওয়াদ দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। দু’হাতে তার কোমর জড়িয়ে ধরেছে। তিথি বললো, ‘এভাবে কেউ টান দেয়?’
‘আমি দেই।’
‘ছাড়ুন। কেউ এসে পড়বে।’
‘আসলেই বা কী? দু’দিন পর তো বিয়েই করবো।’
তিথি লজ্জা পেলো। নিচের দিকে তাকালো। জাওয়াদ বললো, ‘দাওতো, হলুদ লাগিয়ে দাও একটু।’
তিথি হেসে জাওয়াদের গালের হলুদ লাগিয়ে দিলো। এতো হলুদ লাগালো যে জাওয়াদের ঠোঁটের মাঝেও লাগলো। জাওয়াদ হাসলো। বললো, ‘এবার? আমি দেবো?’
‘দিন।’
জাওয়াদ তিথির হাত থেকে হলুদের বাটি টা নিলো। তারপর সেটা টেবলের ওপর রেখে এলো। এসে তিথির দু’হাতের আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙুল রাখলো। তারপর দু’হাত দেয়ালের ওপর দু’দিকে চেপে ধরলো। তিথির খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তিথির হৃদপিণ্ড বন্ধ হওয়ার জোগাড়। সে থমকানো গলায় বললো, ‘ক-কী করছেন?’
‘হলুদ লাগাচ্ছি।’, বলে তিথির ডান গালে নিজের গাল লাগালো জাওয়াদ। তিথি শিউরে ওঠে। শক্ত করে জাওয়াদের হাত চেপে ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস নেয়। জাওয়াদ তিথির গালের নিজের গাল ঘষে আস্তে আস্তে তিথির গলায়ও নিজের গাল ঘষে। তিথি কেঁপে ওঠে জাওয়াদকে সরিয়ে দিতে চাইলে জাওয়াদ বলে, ‘এখনও শেষ হয়নি।’
তিথি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বললো, ‘যেতে দিন, এসে পড়বে কেউ।’
জাওয়াদ শুনলোনা। সে তিথির ঠোঁটের ওপর নিজের ঠোঁট ঘষলো। তিথি আঁতকে ওঠে মুখ ফিরিয়ে নিলো। লজ্জায় চোখ খুলতে পারছনা সে। জাওয়াদ হেসে বললো, ‘লিপস্টিক লেগে গেছে।’, বলেই তিথির গলায় আবার নিজের ঠোঁট ঘষলো। তিথি আর্তনাদ করে বললো, ‘মরেই যাবো। এমন করবেন না প্লিজ।’
জাওয়াদ একটা হাসি দিয়ে হাতের বাঁধন শিথিল করলো। তিথি দু’হাতে জাপটে ধরলো জাওয়াদকে। জাওয়াদ নাক ডোবায় প্রেয়সীর দিঘল চুলে। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়। তারপর অস্পষ্ট গলায় বলে, ‘আমার প্রেয়সী। কলিজা কাঁপিয়ে দিয়েছো। এতো রূপসী কেন তুমি?’
তিথি কিছু বললোনা। আরেকটু নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো জাওয়াদকে। এমন সময় জাওয়াদের ফোনে কল এলো। তিথিকে ছেড়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো, মুনতাহা কল করছেন। জাওয়াদের মনে পড়লো, আংটি নিতে এসেছে। সে কলটা কেটে দিয়ে তিথিকে বললো, ‘কাজ করবো। কামলা বানিয়ে দিলো গো আমাকে।’
তিথি হাসলো একথা শুনে। জাওয়াদ আলমারি থেকে একটা ছোট ব্যাগ বের করে হেসে বেরিয়ে গেল। তিথিও হেসে হলুদের বাটি হাতে বেরোতেই নুহার সামনাসামনি হয়ে গেল। নুহার শাড়িতে কেক পড়ে যাওয়ায় পরিষ্কার করতে এসে দেখলো জাওয়াদ বেরিয়ে যাচ্ছে। তিথিকেও জাওয়াদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে তার বুক ধক করে উঠলো। তিথি নুহাকে দেখে থতমত খেলো। ঢোঁক গিলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই নুহা বললো, ‘দাঁড়াও।’
তিথি দাঁড়ালো। তার বুক ধুকপুক করছে। নুহা তিথির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরখ করলো তিথিকে। তারপর বললো, ‘লিপস্টিক ছানা কেন এভাবে?’
তিথির হৃদপিণ্ড আরো জোরে ধুকপুক করতে লাগলো। সে আমতাআমতা করে বললো, ‘আস-আসলে… আসলে…’
‘এই ঘরে কী করছিলে?’
‘আ-আমি… এ-এক-এখানে…’
‘তোতলাচ্ছো কেন?’
তিথি চুপ হয়ে গেল। নুহা হাসলো, অদ্ভুত ভাবে হাসলো। তারপর তিথির হাতের বাটির দিকে তাকালো। সেখান থেকে এক মুঠো হলুদ নিলো। তিথির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘একটু হলুদ মাখিয়ে দেই।’, বলেই তিথির পুরো মুখে বাজেভাবে হলুদ লাগালো নুহা। তারপর একমুহূর্তও দাঁড়ালোনা, চলে গেল। তিথি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। ভাগ্যিস, চোখ বন্ধ ছিলো। নাহলে চোখের ভেতরে চলে যেতো। কোনোরকমে নিজের রুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে নিলো তিথি। কেন যেনো খুব কান্না পেলো তিথির। বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো সে।
_______
চলবে………
#ফারজানা_আহমেদ
একটা কারণে পেজের ম্যাসেজ অপশনটা বন্ধ করে রেখেছি। পেজে শুধুই গল্প ছাড়া আর কিছুই থাকবেনা। প্রিয় পাঠক, আপনারা গ্রুপে এড হয়ে নেবেন। আপনাদের কিছু জানার থাকলে অথবা আমার সাথে আড্ডা দেয়ার ইচ্ছা থাকলে গ্রুপে সচল থাকুন। আমি গ্রুপে আমার পাঠকদের সর্বোচ্চ রেসপন্স করি। ভালোবাসা নেবেন❤
গ্রুপ লিংক- https://www.facebook.com/groups/831432960641690/?ref=share

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ