রঙ তুলির প্রেয়সী
২১.
‘মামণি… মামণি…’ জোরে জোরে ডাকতে ডাকতে নিচে নেমে এলো তিথি। মুনতাহা তখন পা বাড়িয়েছিলেন রুমে যাওয়ার জন্য। তিথিকে এভাবে চেঁচিয়ে আসতে দেখে তিনি উদ্ধিগ্ন হয়ে বললেন, ‘কী হয়েছে? ক-কী হলো?’
তিথি কিছু বলতে যাবে আর তখনই ধমকের স্বরে নুহা বললো, ‘কী ব্যাপার? এভাবে চেচামেচি করছো কেন রাত-বিরেতে? এটা ভদ্রলোকের বাড়ি।’
নুহার ধমকে তিথির কী যে হলো, হুট করে সে মিয়িয়ে গেল। আস্তে আস্তে বললো, ‘আ-আস-আসলে…’
‘নুহা… এভাবে ধমক দিস কেন? ও ছোট মানুষ… এই তিথি কী হয়েছে আমাকে বল।’ মুনতাহা তিথির পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন।
‘ছোট মানুষ?’ তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো নুহা।
তিথি ঢোঁক গিলে বললো, ‘ম-মামণি… আমার ঘরে আমার কোনো জিনিসপত্র নেই।’
‘ওগুলো আমি টুনিকে দিয়ে পাশের রুমটায় রেখে দিয়েছি। তোমার কাপড়চোপড় সব টুনি গুছিয়ে রেখেছে। বারান্দা ওয়ালা ঘরে আমি থাকবো।’ অকপটে বললো নুহা।
তিথি আর কিছু বলতে পারলোনা। কান্না পাচ্ছে তার ভীষণ। সে উল্টো ঘুরে উপরে চলে যেতে লাগলো। ঐ ঘর থেকে জাওয়াদকে যেকোনো সময় ডাকা যেতো। যেকোনো সময় জাওয়াদের কাছেও যাওয়া যেতো, কেউ টের পেতো না। আর এখন… ঐ ঘরে তো বারান্দাও নেই। তিথির গাল বেয়ে এক ফোটা জল গড়ালো। গলায় কান্নারা দলা পাকাচ্ছে। অজানা ভয় কু ডাকছে বারংবার।
‘নুহা… মেয়েটা ঐ ঘরে থাকছে আসার পর থেকে। অভ্যাস বলেও তো একটা ব্যাপার আছে রে মা। তুই অন্য ঘরে থাকতে পারতি…’ তিথি যাওয়ার পর মুনতাহা বললেন।
‘মানে? তো তুমি আমাকে বলছো যে ঐ মেয়েটার জন্য আমি আমার ইচ্ছের জলাঞ্জলী দেবো? সিরিয়াসলি খালামণি?’ অবাক কণ্ঠে বললো নুহা।
মুনতাহা আদুরে গলায় বললেন, ‘আরে আমি এমনটা বলি নি তো। বলেছি মেয়েটার ঐ ঘরে হুট করে ঘুম নাও হতে পারে। আচ্ছা থাক, তুই-ই থাক। সমস্যা নেই।’ বলে নুহার মাথায় হাত বুলালেন মুনতাহা। তারপর আবার বললেন, ‘তোর মায়ের শরীর কেমন?’
‘ভালো। রিয়াদ আর খালুকে দেখছিনা। উনারা কই?’
‘সিলেটের বাইরে গেছেন। একটা কাজে। যা ঘুমা এবার। রাত হয়েছে।’
‘জাওয়াদ এখনও আসলোনা যে?’
‘কী একটা দরকারি জিনিস অফিসে ফেলে এসেছে। আমাদের সাথেই ছিলো। নামিয়ে দিয়ে আবার অফিসে গেছে। চলে আসবে।’
‘আচ্ছা। যাও ঘুমাও।’ বলে হাসলো নুহা। মুনতাহাও হেসে নিজের ঘরে চলে গেলেন। নুহা সিঁড়ি বেয়ে উপরে গিয়ে দেখলো তিথি নিজের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে অন্যমনস্ক হয়ে। নুহা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় শীতল কণ্ঠে বললো, ‘জাওয়াদের সংস্পর্শে আমি কাউকে থাকতে দেইনি, দেবোওনা।’ বলেই এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। চমকে উঠলো তিথি। দাঁড়িয়ে রইলো ওভাবেই। বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে। সে আর থাকতে পারলোনা। রুমে গিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
জাওয়াদের ফিরতে ফিরতে রাত প্রায় বারোটা বেজে গেল। ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর কিচেনে গেল। নিজে নিজে ব্লাক কফি করে খেলো। তারপর রোজকার মতো তিথির কাছে যাওয়ার জন্য তিথির রুমের সামনে গিয়ে অবাক হলো। দরজার নিচে ফাঁক গলে লাইটের আলো আসছে। লাইট জ্বালানো এখনও? তিথি তো এভাবে লাইট জ্বালিয়ে রাখে না। দরজা খুলতে গিয়ে জাওয়াদ আরো একবার অবাক হলো। দরজা লক! তিথি দরজা খোলা রাখে ওর জন্য প্রতিদিন। জাওয়াদ দরজায় দুটো টোকা দিলো আস্তে আস্তে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই নুহা দরজা খুললো হাসি মুখে। নুহাকে দেখে জাওয়াদ যারপরনাই অবাক। মুহূর্তেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। সে পিছু ফিরলো ফিরে যাওয়ার জন্য। নুহা আকুতির স্বরে বললো, ‘জাওয়াদ, প্লিজ শোন।’
জাওয়াদ ফিরে তাকিয়ে গমগমে গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘তিথি কোথায়?’
নুহার মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল। সে ভেবেছিলো জাওয়াদ তার সাথে দেখা করার জন্য এসেছে। নুহার বুকটা চিনচিন করে উঠলো। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ‘এতো রাতে ওকে খুঁজছিস কেন?’
‘সেটা তোর দেখার বিষয় না। তুই তিথির ঘরে কেন?’ দাঁতে দাঁত চেপে নিচু স্বরে বললো জাওয়াদ। প্রচুর রাগ হচ্ছে তার।
‘তিথির ঘর মানে? ওর নামে রেজিস্ট্রি করা নাকি?’ ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বললো নুহা।
ধক করে জ্বলে উঠলো জাওয়াদের দু’চোখ। সে কিছু বলতে যাবে আর তখনই খুট করে একটা আওয়াজ হলো। জাওয়াদ মাথা ঘুরিয়ে দেখলো পাশের রুমের দরজা খুলে তিথি উঁকি দিচ্ছে। জাওয়াদ আর এক মুহূর্তও দেরি না করে হনহন করে সেই রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। নুহা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। যেনো অনেক বড় ধাক্কা খেলো সে। দু’চোখ বাঁধ মানছেনা। দরজার লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো নুহা। নিশ্বাস নিলো বারকয়েক। নাহ, হবেনা৷ মরেই যাবে নুহা। এতো বছর থেকে সে ভালোবাসে জাওয়াদকে। ওকে পাওয়ার জন্য এতোকিছু করলো। এভাবে উড়ে এসে একজন ছিনিয়ে নেবে? এতো সোজা? নুহা হাসলো। বাঁকা হাসি। মনস্থির করলো। জিততেই হবে তাকে। সে হারতে শেখেনি। ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছে, পেয়েছে। ভালো বা মন্দ, যেটাই চেয়েছে তার বাবা সেটা হাতে এনে দিয়েছে। আর এবার সে পাবেনা? এবারও সে পাবে। যেকোন মূল্যে আদায় করে নেবে। এতে যদি তাকে মরতেও হয়, সে মরবে। দরকার পড়লে মারতেও হাত কাঁপবে না।
_________
জাওয়াদকে দু’হাতে আঁকড়ে ধরে জাওয়াদের বুকে মুখ গুঁজে একনাগাড়ে ফুঁপিয়েই যাচ্ছে তিথি। জাওয়াদ সময় দিলো তিথিকে স্বাভাবিক হওয়ার। প্রায় পাঁচ মিনিট কান্নাকাটির পর কিছুটা স্বাভাবিক হলো তিথি। তিথিকে বুকে নিয়েই হেঁটে হেঁটে বিছানায় গিয়ে বসলো জাওয়াদ, তিথিকে বসালো তার কোলে। তিথি উঠে সরতে চাইলে জাওয়াদ চাপা ধমক দিলো, ‘শসসস! চুপ করে বসে থাকো।’
তিথি মুখ তুলে জাওয়াদের দিকে তাকালো। তিথির চোখদুটো ফুলে আছে। নাকমুখ লাল হয়ে আছে। সে ঢোঁক গিলে জাওয়াদের গলা আঁকড়ে ধরলো দু’হাতে। তারপর ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো, ‘আপনি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেবেন? ছেড়ে চলে যাবেন?’
জাওয়াদ এক হাতে তিথির গাল ধরে বললো, ‘শসসস তিথি! এসব কে বলেছে তোমাকে?’
তিথি একবার নাক টানলো। তারপর বললো, ‘উফ, বলুন না! আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন? অন্য মেয়ের কাছে?’
‘একদম না, তিথি। এসব উল্টাপাল্টা কথা ভাবছো কেন তুমি?’
‘আমার খুব ভয় হচ্ছে। বুকের ভেতর কু ডাকছে। আপনাকে অন্য কারো সাথে আমি সহ্য করতে পারবোনা। মরেই যাবো।’
‘একটা থাপ্পড় দেবো বললাম। কিসব পাগলামি কথাবার্তা বলছো তুমি?’ ধমকে উঠলো জাওয়াদ। তিথি কেঁদে দিলো আবার ফুঁপিয়ে। জাওয়াদ এক হাতে তিথির কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আরেক হাত তিথির কানের নিজে চুলের মধ্যে রাখলো। তারপর তিথির চোখে চোখ রেখে হালকা কণ্ঠে ফিসফিস করে বললো,
‘আমার হৃদয় অনুনাদের একটাই কারণ-
তুমি, তুমি, তুমি।
আমার অশ্রু বিসর্জনের একটাই কারণ-
তুমি, তুমি, তুমি।
আমার অম্বর থমকে যাওয়ার একটাই কারণ-
তুমি, তুমি, তুমি।
ভীড়ের মাঝেও নিঃসঙ্গ লাগার একটাই কারণ-
তুমি, তুমি, তুমি।’
তারপর তিথির কপালে নিজের কপাল ঠেকালো জাওয়াদ। নাকে নাক ঘষে বললো, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, তিথি। তুমি আমার নেশা, তুমি আমার মাদক। আমি হচ্ছি তুমি নামক মাদকাসক্ত। এই আসক্ততা কাটবেনা। রয়ে যাবে আমৃত্যু। আর আমি এই মাদকতাই চাই, আমার শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত।’
তিথি দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো জাওয়াদকে। জাওয়াদ তিথিকে কোলে নিয়ে দাঁড়ালো। তারপর হেঁটে দরজার কাছে যেতেই তিথি নড়াচড়া শুরু করলো। জাওয়াদ বিরক্তির স্বরে বললো, ‘কী?’
‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন আমাকে এভাবে কোলে নিয়ে?’
‘বাইরে।’
‘এই না… কেউ দেখে ফেলবে। নামান, এক্ষুণি নামান।’ বলে নড়তে লাগলো তিথি।
‘একটা সারপ্রাইজ দেবো। দরজাটা খোলো। আমি তোমাকে কোলে নেয়া অবস্থায় খুলতে পারবোনা।’
‘আগে আমাকে নামান।’
‘শোনো, রাত দুটো বাজতে চললো। এখন আমাদেরকে দেখার জন্য কেউ জেগে থাকবেনা।’
তিথি আর কিছু না বলে দরজা খুললো। জাওয়াদ তিথিকে কোলে করে নিয়ে গেল তার রুমে। তারপর তিথিকে নামিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। তিথি কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘সারপ্রাইজ কই?’
জাওয়াদ হাসলো। তারপর বললো, ‘তুমি বারান্দায় যাও। আমি আসছি। আজকে চাঁদ খুব সুন্দর আলো দিচ্ছে।’
তিথি একগাল হেসে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। জাওয়াদ আলমারি থেকে সেই ছবি দুটো বের করলো। যে ছবিতে সে রঙ তুলির সাথে নিজের ঢের আবেগ আর ভালোবাসা মিশিয়ে এঁকেছিলো তিথিকে। সেগুলো নিয়ে বারান্দায় গিয়ে সে তিথির পেছনে দাঁড়ালো। তিথি পেছন ফিরে জাওয়াদকে দেখে ভারি মিষ্টি করে হাসলো। হাসলো জাওয়াদও। তারপর দু’হাত পেছন থেকে সামনে এনে দু’হাতের ছবিগুলো মেলে ধরলো তিথির সামনে। হতভম্ব, বিস্ময়, অবাক তিথি যেন কথা বলতে ভুলে গেল। নিজের এতো নিখুঁত তৈলচিত্র দেখে বুকের ভেতর কাঁপন শুরু হলো। সে বারান্দার রেলিং পেছনথেকে দু’হাতে শক্ত করে ধরলো। তিথির এই অবাক করা চাহনি জাওয়াদের খুব ভালো লাগলো। সে ছবি দুটো হাতে নিয়ে হাঁটুগেড়ে বসলো। তারপর তিথির দিকে তাকালো। তিথি এক দৃষ্টিতে জাওয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। জাওয়াদ আস্তে আস্তে বলতে লাগলো,
‘জোৎস্না রাতে গ্রহণ লাগাও
হৃদপিণ্ডে কাঁপন জাগাও
তোমার অবাক চাহনি-
মারছে আমায় এখনই।
চিত্ত আমার ক্ষণে ক্ষণে-
থেকে থেকে বলছে তোমায়-
ভালোবাসি ভালোবাসি
রঙ তুলির প্রেয়সী।’
ঝিরঝির হাওয়ার দাপটে মৃদুভাবে উড়ছে তিথির কপালের উপরে পড়ে থাকা চুলগুলো। সেগুলো একহাতে সরালো তিথি। তারপর হাঁটুগেড়ে বসে ছবি দুটো নিজের হাতে নিলো। কয়েক মুহূর্ত ছবিদুটো দেখলো মন দিয়ে। তারপর একপাশে সরিয়ে রাখলো। তাকালো জাওয়াদের দিকে, হাসছে জাওয়াদ। কী মায়াময় সে হাসি! তিথি খানিক এগিয়ে গেল জাওয়াদের দিকে। তারপর দু’হাত আলতো করে রাখলো জাওয়াদের কাঁধের ওপর। জাওয়াদও এগিয়ে এসে তিথির কোমর জড়িয়ে ধরলো দু’হাতে। তখনও জাওয়াদ হাসছে। তিথি ফিসফিস করে বললো,
‘ওমন করে হেসো না,
মুগ্ধ প্রেমিক বেশে।
প্রমত্ততায় ডুবে গেলে-
ফাঁসবে তুমি শেষে।’
শব্দ করে হেসে দিলো জাওয়াদ। তারপর তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ফাঁসিয়ে দাও, আমি ফাঁসতে চাই। এমনভাবে ডুবিয়ে দাও যেনো আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। মাদক হয়ে আমাকে মাদকতায় ডুবিয়ে দাও। ওষ্ঠযুগলের শুষ্কতা কাটিয়ে দাও।’
তিথি চোখ বন্ধ করলো। শিহরণ ছুঁয়ে যাচ্ছে তার মন, শরীর জুড়ে। জাওয়াদ এগিয়ে এসে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো তিথিকে। তারপর… দুজনে মেতে ওঠে একে ওপরের উত্তপ্ত নিশ্বাসে। উন্মাদনায় কেটে যেতে থাকে অনেকগুলো মুহূর্ত।
_______
চলবে……
#ফারজানা_আহমেদ
অনেকেই শাড়ি পরতে খুব পছন্দ করেন। আর মনিপুরী শাড়ি তো সবারই পছন্দের। একটা পেজের লিংক দিচ্ছি, এই পেজে মনিপুরী শাড়ি পাওয়া যায়। সবাই একবার ঘুরে আসবেন। ১০০% ট্রাস্টেড অনলাইন শপ। আশা করি ভালো লাগবে❤
লিংক- https://www.facebook.com/adrijaaaa/